ওমর আবাবিল এর সকল পোস্ট

নামাজের সাথে সংসার

ব্যাক্তিসত্তায় আকিব সাহেব একজন ভালো মানুষ। উনি উনার স্ত্রীকে বললেন, আবদুল্লাহর মা, তুমি একজন জান্নাতি মানুষের সাথে সংসার করছো! এই কথা আমি এই জন্য বলছি যে, আমার মনে হয় আমি যখন কোন ভালো কাজ করি তখন আমি বেহেস্তে আছি। আবার যখন খারাপ কাজ করি তখন মনে হয় জান্নাতের দায়োয়ান রেদওয়ানের সাথে ঝগড়া করে জাহান্নামে জ্বলতে বের হয়ে হয়েছি। আবদুল্লাহর মা, যখনই আমি এই যাত্রায় বের হবো তখনই তুমি আমাকে মায়া দিও, মায়ার জালে আটকে রাখিও। আমার শরীয়তকে ভুলে তোমার শরীয়ত মেনে চলিও।

আবদুল্লাহর মা মুচকি হেসে বলে, “মা অধ্ধায়াকা রাব্বুকা ওমা ক্বালা” ১

আকিব সাহেব লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে বলে উঠলেন, “লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাযযলীমিন” ২

হঠাৎ আকিব সাহেবের মেয়ে এসে বললো, বাবা তোমার আগামীকালের জন্য তৈরী করা রুটিনটা খুব সুন্দর। সব কাজ নামাজের আগে পরে। আকিব সাহেব তার মেয়েকে বুকে টেনে নিয়ে বলল, ”আম্মাজান, এই রুটিনটা আমার জীবনের রাস্তা জান্নাতের দিকে করে দিয়েছে। আম্মাজান, আমি আপনারে যেমন পচন্দ করি এই রুটিনটাকেও তেমন পচন্দ করি।” আকিব সাহেবের রুটিনটা ছিলো এমনঃ

১. ফজরের আগে তাহাজ্জুদ পড়া।
২. ফজরের পরে সূরা ক্বাফ এর ৩৪-৩৭ আয়াতের তাফসীর।
নয়টার আগে পাক সাফ হয়ে বাড়ী থেকে বের হওয়া। ১০টায় আজাদ চেয়ারম্যানের সাথে বৈঠক।
৩. যোহরের আগে ’বিদায় হজ্বের ভাষণ’ পড়া।
৪. যোহরের পর খাওয়া দাওয়া ও আরাম করা।
৫. আসরের আগে ব্যাবসা বানিজ্যের খোজ খবর নেওয়া।
৬. আসরের পর হক সাহেবের সাথে হাটাহাটি করা।
৭. মাগরিবের পর মাদ্রাসার খোজ খবর নেওয়া।
৮. ইশার আগে জাবের সাহেবকে দেখতে যাওয়া।
৯. ইশার পর আবদুল্লাহর মায়ের সাথে ঝগড়াঝাঁটি করা।
রাতের খাবার শেষে লেখালেখিতে বসা। ”বিদায় হজ্বের ভাষণ – একটি মোজেযা” সিরিজের ১০ম পর্ব লিখে শেষ করা।
১০. অযু করে ঘুমিয়ে পড়া।

ভালো থাকুক আকিব সাহেবের সংসার।

১. সূরা দোহা-৩
২. সূরা আমবিয়া-৮৭

বিবেকের গর্ভপাত

না আমার বিবেক মোটেও আমার মত নয়
সে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি!
দোষওয়ালা স্বপ্নে আগত নারীর মত,
কুকুরের হোটেলে পড়ে থাকা ১২৩ মিনিট বয়সের মানুষের মত,
যে হোটেলে কিছু মানুষকেও এটা ওটা খেতে দেখা যায়!
বিবেক এটাই , এটাই সমাজ, এটাই সাহিত্য
অথচ আমাদের সাহিত্য হওয়ার কথা ছিলো এমন,

“কবিতা- সে তো মৃত্যুদন্ড পাওয়া যৌবন।
যে যৌবন,
চেনা এই জগতের সূত্র ধরে,
অচেনা এক জগতের যৌক্তিকতা মিলায়।
যে যৌবন,
আবেগকে ঘুম পাড়িয়ে
সবক দিতো- ‘কেন’র!
যে যৌবন তন্ত্র-মন্ত্র, ধর্ম-কর্ম পুড়িয়ে,
আলো জ্বালাতে গিয়ে দন্ডপ্রাপ্ত”।

এখন আমরা সামাজিক;
এখন আমরা দোষওয়ালা স্বপ্নের
ফলাফলে থাকা বীজ।

আমরা গর্বিত!

__________
02.10.17

মৃত্যু

আর সবার মত আমার শরীরের মৃত্যু হবে.
দাদা, পরদাদাদের মত আমারও আর ফজরের আযান শোনা হবে না।

আমার মৃত্যুর সংবাদ একদিন তোমাদের কানে পৌঁছে যাবে।
তোমরা বলবে, “লোকটা ভালো ছিলো, তবে…”।

‘ও’ গরম পানিতে আমার হাসিমুখ শেষবারের মত ধুয়ে দিবে,
কিছু প্রিয়মুখ সেদিন কাঁদতে গিয়ে হাসবে।

মাগরিবের একটু আগে মসজিদ ঘাটলা’র পাশে বেলীর বাগানে,
দাদা-দাদি, মা-বাবা’র সাথে যোগ দিলে বন্দুকওয়ালারা চলে যাবে।

সেদিন তিন টুকরো কাপড়ের সাথে তোমরা আর কিইবা দিবে?
যদি দিতেই চাও, তবে একটি মূল্যহীন কবর দিও!

প্রশ্ন!

আসুন গল্প করি, আমাদের পৃথিবীর গল্প।
অস্ত যাওয়া সূর্যের গল্প এখানে অচল,
সচল কেবল নারী নামে এক মুদ্রা!

আসুন গল্প করি, আমাদের সমাজের গল্প।
যেখানে পাঠ দান হয় না, চড়া দামে বিক্রি হয়,
তাও সেটা “নগ্নতাই সভ্যতা” বাক্যের সম্প্রসারিত ভাবের চেয়ে বেশী নয়!

আসুন গল্প করি, আমাদের শিল্পের গল্প।
যেখানে, যুদ্ধ হলো পদ্য, হিজড়া বনে যাওয়া হলো গদ্য,
চটি সাহিত্য হিসেবে “গনতন্ত্র” এর নামই কেবল লোকমুখে শুনা যায়!

আসুন গল্প করি, আমাদের ধর্মের গল্প।
যে গল্পের শেষ করতে কেবল মৃত্যুই বাধা,
আচ্ছা, আমার মত আপনিও কি অমর?

‘দ্যা প্রোপেট’ দিয়ে কাহলিল জিবরান ভোজ!

আলমিত্রা জানতে চেয়েছিল তিনটে বিষয়। ভালোবাসা, বিবাহ এবং মৃত্যু। আগমন ও প্রস্থান ছাড়া বিষয় ছিল ২৬টি। ওরফেলিস নগরে ৮ বছর থেকে মোস্তাফা ভাগ্যবান কারণ এই নগরীর বাসিন্দারা শুনতে ভালোবাসে।
কিছু বইয়ের স্বাধ সারা জীবন জিহবায় লেগে থাকে। ”দ্যা প্রোপেট” বইটাও এমন। জমজম কূপের মত। যত নিই শেষ হয় না। কি রান্নারে,
“বলো না, আমি সত্যের সন্ধান পেয়েছি। বল, আমি একটি সত্য পেয়েছি।”
“বলো না, আমি আত্মার সন্ধান পেয়েছি। বল, আমি চলার পথে আত্মার সাক্ষাত পেয়েছি।”
আত্মা বসবাস করে ছন্দিত নীরবতায়। ছন্দিত নীবর তারা যারা সামনে যেতে ব্যস্ত, বলাতে নয়। আলমিত্রাকে মোস্তাফা বলেছিলো, “তুমি ভালোবাসার পথ নির্দেশ করবে এ চিন্তা তুমি কর না, বরং ভালোবাসা যদি তোমাকে তার যোগ্য মনে করে তবে সে-ই তোমার পথনির্দেশ করবে। আলমিত্রা এই কথা শুনে মোটেও কেপে উঠে নাই, যেমনটা আমি উঠেছিলাম। “তোমরা হৃদয় বিনিময় কর, কিন্তু একে অপরের হাতে তা সঁপে দিও না। কারণ একমাত্র মহাজীবন তার হাতে তোমাদের হৃদয় ধারণ করতে পারে।” শিশুদের দেহকে আমরা ঘরে রাখতে পারি, কিন্তু তাদের আত্মার বসবাস ভবিষ্যতের গৃহে। সুতরাং তাদেরকে আমাদের ভাবনা দিয়ে লাভ নাই। বাহ! অসাধারণ…
মোস্তাফা পান্থশালার বৃদ্ধাকে বলেছিলেন, “তুমি যখন কনো প্রাণীকে হত্যা কর তখন তুমি মনে মনে তার উদ্দেশে বলো, যে ক্ষমতা আজ তোমাকে হত্যা করছে সেই ক্ষমতায় আমিও নিহত হচ্ছি এবং আমিও নিঃশেষ হব। তোমার রক্ত এবং আমার রক্ত স্বর্গবৃক্ষের প্রাণরস ব্যতীত আর কিছু নয়।”
কৃষক জেনে গেছে, কাজ দিয়ে জীবনকে ভালোবাসতে পারাই জীবনের অন্তরতম রহস্যের সঙ্গে অন্তরঙ্গ হওয়া। শালীনতা অসচ্চরিত্র মানুষের দৃষ্টি প্রতিহত করার এক ঢাল মাত্র। পোষাক সে তো উত্তরের বাতাস।
যাযিকা জানে, যুক্তি ও আবেগ গৃহে দুই প্রিয় অতিথির মত। একজন থেকে অন্যকে বেশী সম্মান করা যাবে না। একজনের প্রতি বেশি যত্নশীল হলে, উভয়ের ভালোবাসা ও বিশ্বাস হারাতে হয়।
জিবরানকে ধন্যবাদ এমন ভোজনে নিমন্ত্রন জানানোর জন্য। শেষবার নিমন্ত্রন জানিয়েছিলেন মুন্সী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ।
[বিঃদ্রঃ খাওয়ার সময় পাচকের ভুল ধরতে নাই ]

মুক্ত হওয়ার খাঁচা

আলোচনা, সমালোচনা, সমন, মিলন,
মুক্তির কত কত যুক্তি, নুয়ে না পড়ায়
আমি বন্দি!

সুখী মানুষের হাসি দিয়ে সাজানো আকাশ
তারাদের কানামাছি খেলার মায়াবী মাঠে
আমি বন্দি!

দুই নদী এই স্বর্গে, দুই নদী ওই স্বর্গে
মধ্যে থাকা “সিদরাতুল মুনতাহা”র পাতায়
আমি বন্দি!

মায়ের গর্ভের কোমল নৌকায় ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে
১০ নম্বর বন্দরের ১০ নম্বর ঘাটে এসে দেখি
আমি বন্দি!

ধর্ম” ও নারী” নামক দুই দরজাওয়ালা সমাজে
আসার আগ থেকেই এলান শুনছি
বন্ধি, বন্ধি, সবাই বন্ধি!

স্বেচ্ছায় বন্দি হয়ে গেলাম, নিজের ভেতর।
আওয়াজ আসলো, “মুক্তি পেয়েই গেলেন!”
অত:পর তোমরা আর আমরা শব্দ দুটো
দুটো জগতে রূপ নিলো!

পীর মুরিদী

তোমরা যারা আমার পীর,
আমার স্বপ্নকে ক্ষমা কর
অথবা
এটা নাই, ওটা নাই ওয়ালা
এতিমি বয়ান বন্ধ কর।
আমার আত্মা লুকিয়ে আছে
পরমাত্মার হাজতখানায়!
যেখানে বন্ধি হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে
বড় হয়েছি আত্মা পর্যন্ত!

তোমরা যারা আমার মুরীদ,
সফর কর সিজদা দিতে
অথবা
বৃষ্টির কারিগর লিখিত ডায়েরী,
“নারী” পড়, পড়াও, লিখ, লিখাও।
উদয় অস্ত নিয়ে ব্যস্ত হওয়া
মোটেও তোমার কাজ নয়,
তোমার আলো দিয়ে
রাস্তাগুলো বিপদমুক্ত করে দাও।
ওপথ দিয়ে আমার পীর মুর্শিদরা হাটবে
স্বপ্ন নিয়ে, আত্মা হতে।

নুতফা’র চিঠি

একটা কবিতা লিখো, নারীর মত,
তোমায় আমি স্রষ্টা বলবো!
সভ্য হতে, এই কবিতার বিশুদ্ধ পাঠ আবশ্যক।
সব সময় সব কিছুর সহজ ব্যাখ্যা এই কবিতা।
মৃত্যু কষ্টকর কারণ এই কবিতা আর পড়া হবে না!
কবিতা পাঠ উৎসবমুখর করতে মিকাইল দায়িত্বপ্রাপ্ত
যথাসময়ে ধুয়ে মুচে তোমায় সাফ করবেই।
অত:পর তুমি লম্ব সময় লুটায়ে পড়ার সুযোগ পাবে
ঠিক তখনই,
কবি থেকে কবিতা উপহার চেয়ে একখানা চিঠি লিখো!
ইতি
স্রষ্টা হতে চেয়ে কবিতার গোলাম বনে যাওয়া “নুতফা”!

………..
12.03.17

সবকিছু বাদ দাও

মেঘলা আকাশ, বৃষ্টিহীন বাতাস, জোছনাভরা রাত, আরো কত কি?
অসীম জ্ঞান জবর কেটে উল্লাস কর, অত:পর ঘুমাও
মুচকি হেসে হেরে যাও, জয়ী হয়ে গর্ব করো
এটা ওটা মিলিয়ে ধার্মিক হও
৪২৮১ মাইল হেটে দীক্ষা নাও!
মাথায় হাত বুলিয়ে তায়াম্মুম কর
বার্নিশ করা ঘড়ির চাবি খুজো
হকের সাথে বকবক করে নিজেকে নিরীক্ষা করে নাও
পাঞ্জেরী হও, মাদল বাজাও!
সবাই জয়ী হওয়ার যুদ্ধে সেনাপতি হও!
দিয়ে ফকির হওয়ার চেষ্টা কর
মৃত্যুকে উপভোগ করতে বই পড়
লেজ বাকা ও নখ বড় হওয়াকে অন্যায় ভাবো
ক্ষমতাকে মেঘ বানিয়ে বর্ষন কর
কড়া স্বাদের চা’য়ে চুমুক দাও
সবকিছু বাদ দিয়ে, ভালোবাসো!
.
ওমর আবাবিল
৯ই মার্চ ২০১৭