সাইদুর রহমান এর সকল পোস্ট

সাইদুর রহমান সম্পর্কে

এ যাবত ২টি কাব্যগ্রন্থ (একক) এবং যৌথ ১৬টি কবিতা ও গল্পের বই প্রকাশিত হয়েছে।

তিন শূন্যের পৃথিবী

তিন শূন্যের পৃথিবী
সাইদুর রহমান.

সবুজ শ্যামল সোনার বাংলার
এত উর্বর মাটি,
গরিব কৃষান ভাবে দেশটি
যেন শস্যের ঘাঁটি।।

তবুও হায় রে দারিদ্রতা
ছাড়ে না তার পিছু,
কখনো হায় উপোষ কাটায়
জুটে নাকো কিছু।

মোদের সকল ছেলে মেয়ে
শিক্ষা নিয়ে শেষে,
কাজের খোঁজে সকল দ্বারে
ঘুরে চাতক বেশে।

বাবা মায়ের বুকের স্বপ্ন
ভেঙে হয় গো চুরমার,
বেকারত্বের সে কি জ্বালা
কে শুনে সে চিৎকার ?

আজ কী শুধু শব্দ দূষণ
খাদ্যে ভেজাল চারপাশ,
হেথা হোথা কার্বন দূষণ
বিষে ভরে নিঃশ্বাস।

ছড়ায় ক্যানসার আয়ু কমে
প্রাণ স্পন্দন যায় থেমে
পাই পরম সুখ কার্বন দৃষণ
শূন্যে যেই যায় নেমে।

দেশে বেকার আর দারিদ্র
যদি আর না থাকে,
এই পৃথিবীর সবাই ভাববে
তখন স্বর্গ তাকে।

মূলঃ নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড.মোহাম্মদ ইউনূস
ছন্দ মাত্রা স্বরবৃত্তঃ ৪+৪/৪+২

চাঁদের মত তুমি

x167

ওই যে দেখ আকাশের চাঁদ
কী মধুময় হাসি তার,
মায়ের কোলে অবুঝ শিশুও
চোখ ফিরায় না আর।

বন্ধু তোমার মুখখান সদাই
হাসি হাসি মুখ,
মন চায় দেখি সারাক্ষণ তা
পাই যে হৃদে সুখ।

কতোবার চাই ‘ভালোবাসি’
বলেই ফেলি আজ,
তবু কোথায় পারলাম নাতো
পাই গো খুবই লাজ।

অমাবস্যার রাত হয় যখন
চারদিক ঘন ঘোর,
হই মন মরা তাই সবাই কয়
কী হয়েছে ‘তোর’ ?

আবার যখন হবো একসাথ
বলব আমার সাধ,
তুমি যে মোর হৃদাকাশের
ওই সে সুন্দর চাঁদ।

.
স্বরবৃঞ্জঃ ৪+৪/৪+১

জীবন পথে

eo

জীবন চলে ঘড়ির মত
কখনো যেই থামে,
জীবন তাই দুঃখে ডুবে
চোখে অশ্রু নামে।

অসৎ পথে ঘোড়ার মত
মানুষ দ্রুত চলে,
সময় শেষে কষ্টে মরে
হৃদয় দাহে জ্বলে।

হৃদয়ে যেন সতত রয়
প্রেম-মমতা মায়া,
না পায় কেহ কষ্ট মনে
থাকে শান্তি ছায়া।

পরের তরে সাধ্যে যত
বাড়িয়ে দাও হাত,
মানুষজনে হিংসা নহে
না দিও কভু ঘাত।

মনে রাখবে ধরার বুকে
এসেছি মোরা কেন ?
এই সমাজে গরিব দুখী
কুশলে রহে যেন।

মাত্রাবৃত্তঃ ৫+৫/৫+২

বাংলা ভাষা

ভাষার লড়াই

বাংলা ভাষা আমার মায়ের
ভালোবাসি খুবই,
কথা কই বা কাব্য লিখতে
ছন্দ মালায় ডুবি।

বীর বাঙালি রক্ত ঢেলে
আনল বাংলা ভাষা,
জনগণ তাই বেজায় খুশি
পূর্ণ মায়ের আশা।

সালাম রফিক বরকত জব্বার
বাংলা ভাষার তরে,
রক্ত স্রোতে ভাসিয়ে প্রাণ
আনে বাংলা ঘরে।

ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ
বছরে যেই আসে,
বাংলার মানুষ আনন্দেতে
জয় উল্লাসে হাসে।

ফুল দেয় সবাই স্মৃতিসৌধে
অনেক দোয়া মাগে,
ভুলে না কেউ ভাষা পেলাম
তাঁদের প্রাণের ত্যাগে।

স্বরবৃত্তঃ ৪+৪/৪+২

নববর্ষ ২০২৩ তুমি

2023a

স্বাগতম হে নববর্ষ
বিদায় নিল বাইশ সাল,
নতুন বছর এলে তুমি
বদলে দিও সবার হাল।

হৃদিবনে লাগল দোলা
খুশি অতি সবাই আজ,
চারিদিকে বাদ্য বাজে
নর-নারীর রঙিন সাজ।

গত সালের যন্ত্রণা সব
ভুলে গেছে, নেই মনে,
বহু স্থানে প্রভাত ফেরি
কত উচ্ছ্বাস লোকজনে।

আলোর উদয় কর তুমি
হিংসা ভুলে প্রেম গানে.
ছোট-বড় রহে মিলমিশ
দিয়ো শান্তি সব প্রাণে।

গরিব-দুখী যতো মানুষ
না খেয়ে রয় কভু আর,
শান্তি বহে সকল দেশে
স্বর্গ-সুখের খোলে দ্বার।

স্বরবৃত্তঃ ৪+৪/৪+৩

সুখ মেলে শ্রমে ঘামে

may

সুখের রজনী পাবে গো সজনী
শ্রম-ঘাম ফেলে যাও,
কখনো না তবে বিফল না হবে
ফল হাতে হাতে নাও।

তব ঘামখানি দিয়ে হাতছানি
বলে ‘নিয়ে যাও সুখ’.
অলসতা জেনো দুখ দেয় মেনো
তারি দাহে পুড়ে বুক।

ঘাম ঝরে বলে সুফল যে ফলে
সুখের প্লাবন নামে,
শ্রমের বদলে দুখ যায় চলে
সুখের বারি না থামে।

ধরার এ রীতি শ্রমে যার ভীতি
পায় না শান্তি তারা,
নিয়তি তো চায় মানুষ না পায়
হোক সব কিছু হারা।

শুধু থেকো সৎ পাবে তবে পথ
হবে ভবে জয়ী শেষে,
বাজে সুর বীণ কেটে যাবে দিন
কাটেও জীবন হেসে।

ফেলে যারা ঘাম পাবে ধরাধাম
আর নেই কোন ভয়,
জুড়ায় ক্লান্তি সেই তো শান্তি
শেষে জয়কার জয়।

মাত্রাবৃত্তঃ ৬+৬/৬+২

আমাদের এ জীবনটা

kyu

আসলে যেন আমাদের এ জীবনটা
পথিকের সে বিরাম স্থল
যেন ভূতল অসমতল;
যেন মানুষের কৌতূহল
যেন এ কচু পাতার জল
যেন সস্তা সে এক খেলনা সাদামাটা।

আসলে জীবনটা অকূল সে সমুদ্র
গল্প কাহিনীর চিত্র ছায়া
কখনো এ অন্ধ স্নেহ মায়া;
কখনো মেলে না মায়া দয়া
কখনো নেই মানুষে হায়া
কখনো অশান্ত কখনো আবার রুদ্র।

আসলে জীবনে ঘটেও অনেক কিছু
চুপিসারে শুনি প্রেম ডাক
শুনি সে শয়তানের হাঁক;
শুনি কান্না হই যে নির্বাক
শুনি গর্জন হই অবাক
সবাই ঘোরে মরীচিকার পিছু পিছু।

আসলে কই আর হাসি, কাঁদিই বেশী
বারুদের ধোঁয়া চারিদিকে
কেউ যে ডাকে না হাসিমুখে;
কেউ নেই ভালোবাসি তাকে
কেউ নেই সদা পাশে থাকে
মনে হয় এ পৃথিবী যেন মঞ্চ ফাঁসি।

আসলে জীবনটা বুঝি এক জটিলতা
সারা পথ শুধু দুঃখ গাঁথা
শুধু অকারণ পাই ব্যথা;
শুধু মাথায় শত দুশ্চিন্তা
শুধুই সর্বত্র বিফলতা
নেই কোথা আশা কিরণ শুধু শূন্যতা।

আসলে জীবনটা একটা কালো রাত্রি
দেখি বহু সে মিলন ক্ষণ
বহু বিদায়, অভিনন্দন;
বহু ধোঁকা ও মিথ্যে ভাষণ
বহু শোষণ, পদ দলন
অতৃপ্ত পথিক যেন সে সমাধি যাত্রী।

পরিযায়ীর গল্প

পরিযায়ীর গল্প
সাইদুর রহমান

অতিথি পাখি আসতে পারে
ষড়ঋতুর দেশে,
দেশের পাখি ‘স্বাগত’ বলে
বরাবরই হেসে।

দূরের দেশে বাস করেও
প্রিয় বাংলা ভূমি,
আদর স্নেহ দেয় যে ঢেলে
কাছে টানে যে চুমি।

শীতেরকালে মোদের দেশে
পায় আরাম খুর,
সাগর পাড়ে খেয়ে বেড়ায়
দেয় আমোদে ডুব।

অতিথি সেবা বাংলাদেশে
বিশ্বে করেছে নাম,
ছাড়ে তাই যে সাইবেরিয়া
ছাড়ে তাদের ধাম।

অনায়াসেই খাল-বিলেতে
পোকা-মাকড় খায়,
সাগর বুকে নানা মাছের
স্বাদ যে খুঁজে পায়।

পরিযায়ীর ভিড়ের মাঝে
জন্মে প্রেম প্রীতি,
তাই যে আসে প্রতি বছর
ভুলা যায় কী স্মৃতি ?

লিমেরিক

পাথরের কান্নায় তাঁর হৃদয়ে দ্যাখি মমতার ঢেউ
তাই তো ফুটায় ধুতুরা ফুল তার বুকে হাসে সেও;
আমরা মানুষ, পেয়েছি অমূল্য হৃদয়
গলা কাটি মানুষের, কি পাষণ্ড নির্দয়
রক্ত চুষে হিংসা ঢেলে জান্নাত খুঁজি কেউ কেউ।

দূর্গার বিদায় ক্ষণে

050438

পূজার দিনে চলছে আজি
সিঁদুর নিয়ে খেলা,
দেখে সকলে বহু প্রতিমা
কাটায় সারা বেলা।

মায়ের পায়ে সিঁদুর দিয়ে
মাখে এয়োর গালে।
মা খুশি যদি তবেই মেলে
ভালো সবার ভালে।

দুর্গা মার বিদায় আজ
যাবে বাপের বাড়ি,
সকলে তাই আঁখির জলে
দুঃখ পায় ভারী।

এই পূজোতে ধনী গরিব
খুব আমোদ করে,
ধুনুচি নাচে ও ঢাকঢোলে
নৃত্যে প্রাণ ভরে।

রঙিন শাড়ি নতুন জামা
সবার গায়ে গায়ে,
পাড়ায় দেখি মেয়েরা সব
আলতা রঙে পায়ে।

মাত্রাবৃত্তঃ ৫+৫ / ৫+২

কিসের টানে

রাতের বেলা করছে খেলা
আকাশ তলে তারা,
দিনটা হলে যায় যে চলে
না মেলে আর সাড়া।

জোনাক দলে সন্ধ্যা হলে
আলো জ্বেলে জ্বেলে,
কেনো তারা পাগলপারা
ঘোরে ডানা মেলে ?

সুরুজ মামা তার নেই থামা
সাতসকালে জাগে,
তাও প্রতিদিন কী বিরামহীন
ভারি অবাক লাগে !

ধরার বাগে শশী জাগে
কী সুন্দর তার হাসি,
ওই আসমান মাটি তার প্রাণ
ছোঁয় তাই নিচে আসি।

ছুটছে নদী নিরবধি
অথৈ সাগর পানে,
আমরা মানুষ হারিয়ে হুঁশ
ছুটছি কই কি টানে ?

মাত্রাবিন্যাস : স্বরবৃত্ত – ৪+৪/৪+২

হোক বিশ্বটা এক বাড়িতে

বন্ধু দিবসে আমার মনের কোণায়
উঁকি মারে কত প্রিয় মুখ;
কত বছর পরে কে যে তবে কোথায়
পেল সুখ নাকি শুধু দুখ।

নিয়ত মনে পড়ে এখনো তোমাদের
কাঁদি, বসি যখন একাকী;
পালিয়ে গেলে আকাশে ফেলে আমাদের
কি অপরাধে দিলে গো ফাঁকি।

আগে না হতো এ মোবাইল ফোনে কথা
কই টুইটার ফেসবুক;
ছিল তবু অটুট বন্ধন, মধুরতা
হত ভাগ সব দুঃখ সুখ।

আগে হতো ভাইয়ের হাতে এই রাখি
বোনকে দেখেছি তা পড়াতে;
সময় গিয়েছে পাল্টে আজ তবে দেখি
সখা বাঁধে তা বন্ধুর হাতে।

যান্ত্রিকতার এ যুগে বাড়ুক বন্ধুত্ব
বিশ্বের সব নরনারীতে;
হোক বন্ধুত্ব আর বাড়ুক এ মমত্ব
হোক বিশ্বটা এক বাড়িতে।

পরিচয়

এখনো আছে বহু বিভেদ সমাজে
শিক্ষিত যারা পায় না মান
মূর্খেরা আজ পাচ্ছে সম্মান
অসৎ করছে সুবিধা ভোগ রাজে।

রক্ত তবে সবার একই, ওই লাল
হৃদয় হয়ত বা একই নয়
কেউ শক্ত কেউ নরম হয়
অন্তরে কারো, শুধু প্যাঁচের জাল।

হিন্দু আর মুসলিমে ভেদ ঐ ধর্মে
মানুষের রক্ত, তবে এক
পৃথক শুধু মন ও বিবেক
কেউ মুচি মেথর প্রভেদ শুধু কর্মে।

আল্লাহ বা ঈশ্বর সব এক জিনিস
আমি বলি, ‘আল্লাহ’ যারে
তুমি ‘ঈশ্বর’ ডাকো তারে
প্রভু সে এক, হয় না ঊনিশ বিশ।

বৌদ্ধ বা খৃষ্টান, কেউ আলাদা নয়
মানুষ উপরে, সত্য জেনো
মানব ধর্ম এক, সে মেনো
আমরা মানুষ এই মোদের পরিচয়।

আবারো হাসে

আবারো হাসে

আসলে যেন আমাদের এই জীবনটা
অসমতল ভূমি এক খণ্ড;
এক মুহুর্তে সকলই পণ্ড
যেথা তুফান উঠে আসে ঝড়-ঝাপটা

হাহাকার ও রক্তারক্তি খেলা অনাবিল
কত তিক্ত দুর্ভোগ জীবনের
সুখ ও প্রশান্তি নেই হৃদয়ের
আকাশের মুখখানি তাই দেখায় নীল।

দুর্বিসহ জীবনে অসংখ্য ঝড়ের শেষে
বন্দী সুখেরা নিয়তির কারাগারে
ফিরে আসে আবার হৃদয় ঘরে
থামে জীবনের কান্না,,আবারো হাসে।

গগনের বুকে অভ্ররা কত অস্থির চঞ্চল
কি ছুটাছুটি জানো কেন করে
সুখ সন্ধানে বাদল হয়ে ঝরে
মিলে পরিশেষে শান্তি, সাগরের আঁচল।

প্রতীক্ষায় তখন আসমুদ্রহিমাচল

সেদিন ১৯৭২-এর ১০ই জানুয়ারী
প্রতীক্ষায় তখন আসমুদ্রহিমাচল
কোটি মানুষের স্বপ্ন হলো উচ্ছ্বল
বাংলার মাটি কলরবে গেল ভরি।

অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ
সাত কোটি মানুষ হলো শান্ত তৃপ্ত
আনন্দ-গুঞ্জনে চারিদিক মুখরিত
জনতার ঢল যেন এক বিস্ফোরণ।

বিমান ছুঁলো বাংলার মাটি ; আর
বেড়িয়ে আসেন কিংবদন্তি নেতা
প্রতিষ্ঠাতা, বাঙালি জাতির পিতা
খুশিতে আকাশ বাতাস, বাংলার।

ছিলেন যে কারাগারের অন্ধকারে
পাকিস্তানীদের কি নির্দয় আচরণ
ভাঙতে পারেনি আত্ম বিশ্বাস মন
বাংলার চিন্তা যে তাঁর হৃদয়জুড়ে।

মঞ্চে তিনি সন্মুখে লাখো জনতা
এত প্রেম মানুষে, হলে অশ্রুসিক্ত
ভাবলে, আমাকে ভালোবাস এত
তুমিই তো এনে দিলে স্বাধীনতা।

হাত নাড়ালে তুমি, মানুষের প্রতি
বাংলার বিজয় পেলো যেন পূর্ণতা
হৃদ-স্পন্দন ফিরে পেলো জনতা
ফিরে পেলো বন্ধ, বাংলার স্থপতি।

১০ ই জানুয়ারি, ২০২০