তুমি রিয়েলিটি মেনে নাও
ফকির আবদুল মালেক
আমি আমার কথা বলি, রাজনীতি থেকে কোন ফয়দা খোঁজার কোন অভিপ্রায় সারা জীবনে ছিল না।
সময় যাই যাই করতে করতে পঞ্চাশ উর্ধে এসে পৌঁছেছি। আলহামদুলিল্লাহ, ভালই হায়াত পেয়েছি এবং বাড়তি পাওনা হিসাবে সুস্থ সবল সুচিন্তিত সর্বাত্মক বিচার বিশ্লেষণের ক্ষমতা আছে এখনও। কখনও রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলতে যা বুঝায় তা ছিলাম না। কিন্তু রাজনীতি মুক্ত থাকা কোন নাগরিকদের পক্ষে সম্ভব নয়। অন্য সবার মত আড্ডায়, সামাজিক ওখান বৈঠকে নিজের মতামত দিয়েছি। এটা খুবই মামুলি ব্যাপার কিন্তু এতেও অনেকে ধরে নিয়েছে এই লোকটা এই পন্থী। এছাড়া নির্বাচনের সময় সবার মত কোন না দলের পক্ষে বিপক্ষে তর্ক বিতর্ক করেছি। এতেই অন্য অনেকের মত আমার একটা রাজনৈতিক পরিচয় গড়ে উঠে। আবার অনেক সময় এমন হয় রাজনীতির নেতৃস্থানীয় কেউ আমার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়, মহল্লাবাসী। সেই হিসাবে তাদের সাথে কখনও কোথাও গিয়াছি, হয়ত কোন বিয়ের দাওয়াত, কিম্বা কোন পারবারিক বা সামাজিক বা শালিসি বৈঠকে উপস্থিত থেকেছি। এতে কেউ কেউ ধরে নিয়েছে, আমি ঐ নেতার দলে আছি।
আমার বাবা ছিলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ের একজন ঘোর বিএনপি নেতা। অনেকে তখন আমাকে বিএনপির লোক হিসাবে জানত।
এখন ফেসবুকের যুগ। এমন কি একটি ফেসবুকের স্ট্যাটাস ঘিরে বিভিন্ন রকমের গোলযোগ হতেও দেখেছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে একটা পোষ্টের কারনে পদস্ত দায়িত্বশীল লোক কতৃক ধমক খেয়েছি, আবার ফেসবুকে এক পোস্টের কারণে এলাকার চেয়ারম্যান ফোন করে বাবা মা তুলে গালাগালিও করেছে। ফেসবুককে এখনে আড্ডার অবস্থা বলা যায় না। বরং এটা এখন একটা মিডিয়ায় পরিনত হয়েছে। ইদানীং কয়েকটি স্ট্যাটাস দিয়েছি। আমি ভাবছিলাম মাত্র ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ / ১০০ টা লাইক পাই, আমি এই মাধ্যমেটিকে তেমন গুরুত্বপূর্ণ ভাবছিলাম না। কিন্ত কয়েকজন বন্ধু ও ঘনিষ্ঠ জন বলল, তোমার লেখাগুলি বিএনপির বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। বাদ দাও কি দরকার। সারা দেশের বেশিরভাগ মানুষ বিএনপির পক্ষে, তো এখন এই অবস্থায় বিএনপির বিরুদ্ধে লেখালেখি করার দরকারটা কি?
৫ আগস্ট শুধু আওয়ামী লীগকে বিতারত করেনি, জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব স্থানীয় ছাত্র নেতৃত্ব একটি নতুন দল গঠন করেছে, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা বলছে। তারা মুটামুটি মিডিয়াতে বেশ আলোচিত। বেশ কভারেজ পাচ্ছে তারা। এদিকে ডক্টর ইউনুস সরকার এতদিন ব্যর্থ হতে হতে সফলাতার দিকে পা বাড়াইতাছে। তারা আন্তর্জাতিক বেশ কারিসমা দেখাইলেন, জিনিস পত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছেন এমনকি রমজানে। অবাক বিস্ময়ে দেখছি দাবী দাওয়ার হিরিক পড়েছে এই সরকারের দিকে, মথাচড়া দিয়ে উঠতে চাইছে গার্মেন্টস সেক্টর, ছাত্র, শ্রমজীবী, চাকুরীজীবি, ডাক্তার নার্স মোট কথা এমন কোন সেক্টর নাই যারা দাবী নিয়ে রাজপথ অবরোধ করে সরকারকে আলটিমেটাম দিতাছে দাবী নিতে। এখন পর্যন্ত ৭ মাসে প্রায় ২০০ রাজপথের আন্দোলনকে মোকাবিলা করেছে, একটাতেও তেমন কোন বিশৃঙ্খলা হতে পারে নাই, পুলিশ সেনাবাহিনী প্রতিরোধমূলক সামান্য বল প্রয়োগের মাধ্যমে এসব আন্দোলন থামানো গেছে। এইসব আন্দোলনের মাঝে কিছু ছিল মামা বাড়ির আবদার, অটোপ্রমোশন, বেতন বৃদ্ধি, প্রতিষ্ঠানকে সরকারিকরন ইত্যাকার দাবি ছিল। এসবকিছু মোকাবিলা করে সরকার এগাইয়া যাইতাছে। চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি সচিত্র ভিডিও ফুটেজ প্রচার করে এমনভাবে প্রচার করা হইতাছে যেন দেশে এখন গৃহযুদ্ধ অবস্থা। আলোচিত ধর্ষণের ঘটনায় সরকার পক্ষ থেকে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া সত্ত্বেও, এমনকি আইন সংশোধন করে নিলেও প্রায় সকল মহল থেকে সরকারকে চাপ দেয়া হইতাছে। এমনকি বামপন্থীরা ব্যাপক গনজায়াতের পরিকল্পনা নিয়ে এগাইয়া যাইতাছে।
এসবের মাঝেই সরকারের সংস্কার কমিশন গুলো কাজ গুছিয়ে আনছে। কিন্তু তাদেরকে সহযোগিতা না করে বারবার বলা হইতাছে নির্বচিত সংসদে গিয়ে সংস্কার করবে। দীর্ঘ ৩৫ বছরের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকে সবার কাছে এটা স্পষ্ট হইছে যে যদি রাজনীতিবিদদের কোন সিস্টেমের মাঝে আটকানো না যায় তবে তারা বারবার বেপরোয়া হয়ে উঠবে। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ে একক ব্যক্তির শাসন ঘুরে ফির আসবে। অর্থাৎ ফ্যাসিবাদ ঘুরে ফিরে আসবে। এই সিস্টেম ডেভেলপ করার জন্য সংস্কার কমিশনগুলি কাজ করেছেন। এখন এই সংস্কারতো রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে একটা সিস্টেম ডেভেলপ করার জন্য।
আমাদের সংসদ আমাদেরকে তার কাজ সম্পর্কে কি ধারণা দেয়? আমরা দেখেছি গত ৩৫ বছরে সংসদ অকার্যকর ছিল। বিরোধীদল বেশিরভাগই সংসদ বর্জন করে রাজপথে থেকেছে। এমনকি সরকারি দলের কোন সদস্যও নিজের মতে ভোট দিতে পারেনি যখন তা দলের মতের বিরুদ্ধে যায়। এমনই অকার্যকর সংসদে ব্যর্থ লোভী পেশিশক্তির প্রয়োগকারী ব্যবসায়ী দ্বারা ভরপুর সংসদ সদস্যরা নিজেদের অবস্থার উন্নয়ন করা ছাড়া দেশের সামগ্রিক কল্যানের জন্য কোন ভুমিকাই রাখে না। এই ঐতিহাসিক সত্যের আলোকে একথা স্পষ্ট ভাবেই বলা যায় সংসদে সদস্য হয়ে যারা আসেন তারা স্থানীয় সরকারের মেম্বার চেয়ারম্যানের ভুমিকা ছাড়া কিছুই ভুমিকা রাখতে পারেন না। এটাই এখানকার সিস্টেম। এই সিস্টেম কে সংসদ সদস্যরা পাল্টাবে? না আছে তাদের ইচ্ছে আর না আছে তাদের যোগ্যতা। তাই রাজনৈতিক সংস্কারগুলি এই ইউনুস স্যারের নিয়োগকৃত সংস্কার কমিশনের মাধ্যমেই মিটাতে হবে।
যারা এই সংস্কারের বিরোধিতা করবে তদের বলে দেওয়ার সময় এসেছে- তোমার বারটা বেজে গেছে, তুমি রিয়েলিটি মেনে নাও। ব্যক্তিকেন্দ্রীক রাজনীতি পরিহার করে সিস্টেমের রাজনীতিতে আসো। টাকা কামাইতে চাইলে ব্যবসা কর, কিন্তু রাজনীতিকে নাও দায়িত্ব পালন হিসাবে, দেশ ও জাতিকে মেধা ভিত্তিক সেবা দান হিসাবে।