» জীবন গদ্য (ফেলে আসা দিনগুলো)

কাপড়ের পুতুল কালো সুতোর চুল। রঙবেরঙের শাড়িতে সাজিয়ে গুছিয়ে পুতুল কন্যা শুইয়ে রাখতাম কাগজের বাক্সে। কাপড়ের কিংবা মাটির পুতুলেই আমাদের আনন্দ ছিল। আমরা তাই নিয়ে সুখি ছিলাম, উচ্ছ্বল ছিলাম। পুতুলের কাঁথা বালিশ সুতো তুলো দিয়ে সেলাই করা প্রহর আর এখানে নেই। আমাদের বিকেল কেটে যেতো খেলনা রান্নাবাটি খেলে কিংবা পুতুল বিয়ে বিয়ে খেলায়। লাল ইট বাটা মশলা আর বালির ভাতের প্রহরগুলো নাগালের বাইরে এখন,অতীত ঘাটলে রোমাঞ্চিত হই আর ভাবি তোমাদের প্লাস্টিকের পুতুল, টেডি বিয়ারের যুগে তোমরা ঘরে বন্দি থেকেই সুখ কুঁড়াচ্ছ। তোমরা ন্যাকা ভাব ধরে টেডি জড়িয়ে শোও, তোমাদের সাক্ষাৎকার নিলে তোমরা টেডি কোলে বসিয়ে কথা বলো। তোমাদের যুগ বড্ড ন্যাকা যুগ।

মুঠোফোনের পর্দায় চোখ যেটুকু সময় পাচ্ছো, কিংবা টিভির পর্দায়। তোমরা শুদ্ধ হাওয়ায় উড়তে জানো না, শিখো নি কিভাবে উচ্ছ্বাস কুঁড়াতে হয়। হাতে গোনা কয়েক বন্ধু নিয়ে গড়ে নিয়েছো তোমাদের পৃথিবী। আমাদের মন ছিল দোয়েল পাখি। চঞ্চলতার অপর নাম খঞ্জন পাখি ছিল আমাদের যুগ। আমরা প্রেম শিখিনি যে বয়সে সে বয়সে তোমরা আই লাভ ইউ আই লাভ ইউ মুখে ফেনা তুলে ফেলো। তোমাদের মুখে অশ্লীল কথাগুলো হড়বড় করিয়ে বেরিয়ে পড়ে, তোমাদের লজ্জাহীন পৃথিবীতে বড্ড লজ্জা পাই।

পথে হাঁটলেই কানে গরম শিশা গালানোর মত কিছু শব্দ উড়ে এসে কান ঝাঁঝাঁ জ্বালিয়ে দেয়। তোমাদের ভাষা শুনে আতংকে কেঁপে উঠি। তোমরা সিক্স সেভেন এইটে পড়া বাচ্চা, তোমাদের ঠোঁট হতে ঝরে পড়ে মুহুর্মুহু অশালীন ভাষা। তোমরা বলো জায়গা মতো ফেললে চার পাঁচ বাচ্চার বাপ হয়ে যেতে উহ্,কি বীভৎস তোমাদের যুগ। তোমাদের কচি ঠোঁটে নিকোটিনের ধোঁয়ার কুণ্ডুলি। তোমাদের আদব কায়দা কিছুই নেই অবশিষ্ট। পথে হাত ধরে হাঁটো প্রেমিকার। তোমাদের ভয় নেই অথচ আমাদের মায়ের বকুনির ভয় ছিল, সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিরতে হতো। আমাদের কাপড়ের পুতুল যুগ ঢের ভাল ছিল।

সময়ের হাত ধরে পথে আগাই,ফুলেল সময় যায় চলে যায়, ফাঁকি সব ফাঁকি। রঙ বেরঙের প্রজাপতি রঙ চোখে,ঠোঁটে কানে গলায় আর দুটো হাতে ঝুলে থাকে, আহা সাজন পাতন, মনে বেড়ে যায় উচ্ছ্বাস, সুখে থাকার উচ্ছ্বাস। রঙধনু রঙ চুড়িগুলো রিনিঝিনি বেজে উঠলেই মনে কেমন সুখ সুর অনুরণন বেজে উঠে!

এই মেলা সেই মেলা, ফুটপাত কি পথের বাঁকে, সাজানো কাঁচের চুড়ির প্রহরগুলো যেনো মনাকাশে নাটাইয়ের সূতো ছেঁড়া ঘুড়ি, এটা দিন ওটা দিন লাল নীল সবুজ সব দিন সব দিন, হাতে পড়িয়ে দিন, এই যে বাড়ালাম দু’হাত-চুড়িওয়ালী পরম মমতায় চুড়ি পরাতে পরাতে বকবক করে বলতেই থাকে আহা এই রঙে মানায় গো বুজি আপনার হাতে এইগুলি নিন এগুলোও নিন, প্রয়োজন অপ্রয়োজনে কেনা হয়ে যায়, হয়ে যেতো শত সহস্র চুড়ি। জমে জমে পাহাড়!

চুড়ি চুড়ি চুড়ি ড্রেসিং টেবিলের কাঁচের আয়নার ফাঁকে উঁকি দিয়ে দেখলেই বুকে হাহাকার উড়ে। সেই হাত চুড়ি ভরা হাত সময়ের ফেরে পড়ে আজ শূন্য! সময় বড় ব্যস্ত করে ফেলেছে আমায়। কিছুই আর করা হয়ে উঠেনা, সাজগুজ খাওয়া বিশ্রাম সবই যেনো ছুটে যাচ্ছে আমায় ছেড়ে। হাত বাড়ালেই ছুঁতে পারি না উচ্ছ্বাস সময়, মুগ্ধতা হারায়, যায় হারিয়ে ফিরে দেখি আয়নায় আবছা আলোয় আমি ফুরিয়ে গেছি। আর ভাল্লাগে না। চুড়িগুলো আজ অবহেলায় পড়ে আছে কাঁচের বাক্সে কিংবা রঙ বাহারি ঝুড়িতে। স্মৃতি হবে ওরা, স্থান হবে একদিন ময়লার ঝুড়িতে। কষ্ট হয় বড়, বড় কষ্ট মনে আজ।

12 thoughts on “» জীবন গদ্য (ফেলে আসা দিনগুলো)

  1. এই দিন দিন নয় আরও দিন আছে এই মেঘ এই রোদ্দুর। মনের দুঃখ জমা দিয়ে দিন আকাশের গায়। … ভীষণ ভালো লাগছে আপনার উপস্থিতি। ভেবেছিলাম ভুলেই গেছেন। :)

    1. জাজাকাল্লাহ খাইরান ভাইয়া। সুন্দর মন্তব্যে অনুপ্রাণিত। এখানে আসার কথা ভুলে যাই আজব কারবার :(

  2. ছবির মতো সুন্দর আপনার লিখা। শব্দনীড় আপনাকে মিস করেছে। করেছি আমরাও।

    1. জাজাকাল্লাহ খাইরান ভাইয়া ইনশাআল্লাহ আবার নিয়মিত হবো আশা রাখছি ভালো থাকুন

  3. আপনার লিখা আগেও পড়েছি। অসাধারণ লিখেন আপনি বোন রোদ্দুর। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

    1. অনেক ধন্যবাদ সৌমিত্র দা। নিয়মিত হবো আশা রাখছি

      ভালো থাকুন

  4. আমার মনে আছে এক সময় আপনার লেখা নিয়মিত পাওয়া যেতো। নিয়মিত লিখবেন দিদি ভাই। শুভকামনা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    1. জি আপি। কখন যে এখান থেকে উধাও হয়ে গেলাম ভাবতেই পারিনি । ইনশাআল্লাহ নিয়মিত হওয়ার চেষ্টা করবো 

      ভালো থাকুন আপি

  5. আপনি বেশ ভালো লিখেন। আপনার লিখা আমি পড়ি। 

    1. আপনার মন্তব্যে অনুপ্রাণিত আপি। জাজাকিল্লাহ খাইরান ভালো থাকুন

      ইনশাআল্লাহ নিয়মিত হবো

       

       

  6. স্মৃতি হলেও খুব ভালো লিখেছেন আপা।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।