বন্ধু তোরা ভাল থাকিস

আমার সাথে তোরা আর দাঁড়াতে পারিস না এক কাতারে
একদম পারিস না!
অপরায়গ হয়ে যদি কখনো বাধ্যগত দাড়িয়েও যাস-
আমি বুঝি, তোদের ভেতরে তখন খুব উসখুস করে!
অস্থির হয়ে যাস- কতক্ষণে কেটে পড়বি, সরে যাবি দূরে…

এখন তোরা বেশ অভ্যস্ত মাপ-ঝোপের জীবনে
সিড়ির উচ্চতা , গাড়ী, বাড়ী কত কি-
যোগ্যতার হিসেব মেনে চলতে হয় তোদের; দিনে দিনে
সূক্ষ হয়েছে বন্ধুতার বাচ-বিচার!

জানিস?
এই সুবিশাল দূরত্বে যে টুকু দীর্ঘশ্বাস জমে থাকে
আমি তার সব টুকু বুকে ধারণ করে সুগম করে দিই তোদের অহংকারের পথ।
যদিও আমার সেই নির্বাক ভালোবাসা তেমন কোন গুরুত্ব বহন করেনা,
তবুও আমি তো জানি বন্ধুত্ব কা-কে বলে!

তোরা একেক জন পৌঁছে গেছিস আকাশ ছোঁয়া গিরিশৃঙের শিখরে
আমি এতেই তৃপ্ত
তাই, তোদের যখন দেখতে ইচ্ছে করে আমি নিশ্চিন্তে আকাশের দিকে তাকাই
মেঘপুঞ্জের কানে কানে ফিসফিস করে সুধীয়ে নিই তোদের হালচাল,
পাখিদের কলতানে কান পেতে শুনে নিই তোদের না বলা গল্প; সাঁওতাল কবির মত
ঝর্ণা আর নদীর সঙ্গে ইতিমধ্যে আমার বেশ ভাব জমেছে-
জানিস? আমার আর ঝর্ণার মধ্যে খুব একটা তফাত নাই
আমিও ঝরি সেও ঝরে; আসলে দুজনেই কেঁদে মরি অহোরাত- নিরবধি…

আমাদের বন্ধুদের মধ্যে সবচেয়ে লাজুক ছেলেটা এখন সবার চেয়ে অধিক ধনী,
আমি যে টুকু জানি-
খুব বেশী ভালো আছে সে- যে ছিলো আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী হাড় কিপটে;
হাহাহা হাহাহা
দিনের পর দিন প্রেমিক হয়ে ঘুরতো যে বন্ধু টা
প্রেমের বারোটা বাজিয়ে এখন দিব্যি মজে আছে সংসারে, অথচ দুঃখে আছে সেই মেয়েটা।
বাপ দাদার রমরমা ব্যবসা আর বিত্ত ভৈববের অভাব ছিলোনা যার
এখন নাকি সে-ও ছড়াচ্ছে জৌলুস, কাড়ি কাড়ি কামাচ্ছে ডলার।
যে বন্ধুটি মেয়ে পটানোয় ছিলো ওস্তাদ- অবাক হই!
এখন সে বৌ ছাড়া কারো দিকে চোখ তুলে তাকায় না আর।

সারা পৃথিবী জানতো, পাখির দলের মত এক ঝাঁক বন্ধু- মুক্ত বিহঙ্গ হয়ে উড়তাম
মুহূর্তের জন্য কেউ একজন দৃষ্টির অগোচর হলে- মরিয়া হয়ে খুঁজতাম,
একজনের ঘাম ঝরলে, ঝরতে উদ্যত হতো অন্য সবার রক্ত; কি ঝড়- কি ঝঞ্ঝাট
সন্ধ্যা টা ঠিকই কাটাতাম একসঙ্গে ফেরিয়ে শত বাঁধা- বিভ্রাট।

এখন ব্যস্ত সবাই সবার মত,
ধনে দৌলতে – শাণে শওকতে আমি বিনে প্রায় সবাই হয়েছে মস্ত,
এক আমিই কেবল হামাগুড়ি দিচ্ছি দৈন্যগ্রস্থ অভাবের সংসারে
দু চার লাইন কবিতা আর মিথ্যে সান্ত্বনা পুঁজি করে কাটাচ্ছি আস্ত-জীবন;
লড়তে লড়তে হাঁপিয়ে উঠা ঊর্ধ্ব শ্বাস!
যন্ত্রণায় –ব্যঞ্জনায় আরক্ত চোখ উদাস হয়ে প্রতিদিন ঘুরে আসে বিস্মৃতির অতীত,
তোরা বিশ্বাস করিস বা নাই করিস; গভীর রাতের নির্জনতা ভেঙ্গে –
একটি পরিব্রাজক আত্মা সোঁদা কণ্ঠে শুনিয়ে যায় আমারই কবিতার আবৃত্তি।

জানিস-?
রোজ সকালে উষালি দিগন্ততের পাণে চেয়ে বলি- বন্ধু তোরা ভাল থাকিস!

দাউদুল ইসলাম

দাউদুল ইসলাম সম্পর্কে

সব সময় নিজেকে বলি- মানুষ হবি যদি- অন্ধকার ঘরে যখন একা থাকবি তখন নিজেকে জিজ্ঞেস করে নিস তুই কতটা মানুষ। কতটা তোর সভ্যতা কতটা তোর ভদ্রতা! স্নান ঘরে যখন একা শাওয়ারের নিচে দাঁড়াস- তখন নিজেকে জিজ্ঞেস করিস কত টা আছে তোর মনুষত্বের রুচি! জিজ্ঞেস করিস কতটা তুই ভদ্র, সভ্য!

3 thoughts on “বন্ধু তোরা ভাল থাকিস

  1. সাঁওতাল কবির মত
    ঝর্ণা আর নদীর সঙ্গে ইতিমধ্যে আমার বেশ ভাব জমেছে-
    জানিস? আমার আর ঝর্ণার মধ্যে খুব একটা তফাত নাই
    আমিও ঝরি সেও ঝরে; আসলে দুজনেই কেঁদে মরি অহোরাত- নিরবধি…
    *নদী আর ঝর্নার প্রতি যার ভালোবাসা, তাকেতো ছাড়তেই হবে সব মোহ মায়া । ক’জন পারে এই জৌলুসের বোঝা বহন করতে কবি ! বরাবরের মতোই অশেষ ভালোলাগা ও ভালোবাসা !

  2. বন্ধু তোরা ভাল থাকিস! ____ চমৎকার মানের লিখা উপহার স্যার। সালাম। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

  3. সুন্দর লেখার জন্য ধন্যবাদ।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।