কবিতার জন্ম হলেই জন্ম নেয় কবি

হাটতে গিয়ে পিছলে পড়েছিলাম। উঠে – দাঁড়াবার সময় পাইনি। অবিরাম দৌড়চ্ছি অনন্ত এক কুহকের মোহে, হোঁচট খাচ্ছি অসংখ্য বার, হুমড়ে পড়ছি , ফের এগুচ্ছি হামাগুড়িতে…
প্রাণান্ত এক সাঁতারে!…
না, কোন গন্তব্যের জন্য নয়। গন্তব্য মানুষ কে ক্লান্তি চাপিয়ে দেয়, আর কবিকে মেরে ফেলে! যদিও আমি কবি নই, কিন্তু আমি তো মানুষও নই! আমি কবির মতো, মানুষের মতো। তবে কবিরা আমার মতো নয়, মানুষ গুলো আমার মত নয়। জানিনা এ আমার দুর্ভাগ্য, না কি সৌভাগ্য? জানি না-
আর যা জানি, তা প্রবর নয়। ধ্রুব নয়। আবার অলীকও নয়!
যেমন মানুষ সম্পূর্ণ ভাবে লৌকিক বা অলৌকিক নয়। এরা নিজেদের ভৌগোলিক দাবী করে। অথচ এটি অ-সঠিক। মানুষের জৈবিক জীবন ভৌগোলিক। তাদের জাত, জাতীয়তা, তাদের ধর্ম, কর্ম, তাদের বর্ণ ভৌগলিক। তারা আর সব বস্তুর মতন নিজেদের দাঁড় করায়, সাজায়। বস্তুর মতন ক্ষয়ে যায়।এর বাহিরে তারা ভাবেন না। ভাবতে চান না। যে জন্য
তারা ডুবে থাকে সাধ আর সাধ্যের লড়াইয়ে, ধন অর্জনে, দৌলত নির্মাণে, চাওয়া- পাওয়ায়… তারা মান খোঁজে যা নিতান্তই অর্থ বোধক! সুখ খুঁজে বস্তু নির্ভর! তারা তৃপ্ত হয় ভোগে- বিলাসে। ক্ষুধায় তৃষ্ণায় বিচলিত হয়। অথচ তারা এসবের জন্য নয়, এসব তাদের জন্য পাথেয় হতে পারে বড়জোর। তাদের উচিত বস্তুবাদ থেকে মুক্ত হওয়া, যেমনটি তারা সৃষ্টি তে ছিলো- জন্মের পূর্বে, অভৌগোলিক। যেমনটি তারা পুনরায় জন্মাবে।

আমি বলি আমি এক শুদ্ধস্বর। একটি তরঙ্গ। আদিম তথ্য কোষ। আমি যা লিখি, যা বলি, যা ভাবি এসব কিছুই আমার নয়, এসবিই আদি সূত্র। পূর্ব চিন্তা।আমার ভাবনা তো ইউনিক নয়! এই ভাবে আরো কেউ ভেবেছিলো, এই কথা, সুর, ছন্দ আরো কেউ লালন করেছিলো।
খুঁজলেই মিলবে সেই আদি মনন।
তাহলে আমার ভাবনা কি?
কি আমার মনন, কি আমার বচন, কি আমার … একান্তই আমার?
আমি তার খোঁজে দৌড়াচ্ছি, সাঁতারাচ্ছি, হামাগুড়ি দিচ্ছি!…

যারা নদী পাড়ের মানুষ- তারা জোয়ার চিনে, ভাটা চিনে। তারা জানে কোন চান্দে কোন মাছের ঢল নামে। তারা জানে- কোন স্রোতে ভাসা যায়, কোন স্রোত ভাসিয়ে নেয়…
সবাই বলে এসব নদীর ভাষা। নদীর চরিত্র। অথচ এই জল নদীর নয়। জল বইতে বইতে নদীকে নির্মাণ করে নিজের মতন। যদি “জলের নদী” বলা হয়, তবেই তা শুদ্ধ হবে। নির্মাণ পরিপূর্ণ হলে নদী আপন গতি প্রকাশ করে। অথচ নদীর পূর্বে জন্মেছে নদীর জল, জোয়ার, যার পদার্পণে , যার গতি, ছন্দে জন্ম নেয় নদী। এটি অলৌকিক নয়। এটি ভৌগলিক ।

বৃক্ষ তার শেকড়ে আঁকড়ে ধরে মাটিকে। মাটি তাকে করুণা দেয়, শক্তি দেয়, রস, রূপ, গন্ধ দেয়, এভাবে বৃক্ষ পরিচয় পায়, জীবন পায়। আবার একদিন মরে শুকিয়ে যায়। তখন সে নির্জীব বস্তু।
মানুষও আঁকড়ে ধরে শেকড়। শৌর্যে -বীর্যে পল্লবিত হয় নিজের স্বার্থে। বাঁচার জন্য পৃথিবীর সর্ব সুযোগ ধারণ করে… এসব অলৌকিক নয়, এর সবটাই ভৌগলিক, বস্তু-বিক। তবু তাকে মরতে হয়, এক টুকরো ভৌগলিক অধিকারে ঘুমিয়ে পড়ে অন্তিম শয্যায়…
আমার বেলায়ও তাই হবে, না হবার আশংকাও রয়েছে!
এর পর আমি বলছি আমি কোন ভাবেই ভৌগলিক নই। লৌকিক বা অলৌকিক নই।
এর চেয়ে বড় সত্য এসব ভাবনা আমার নয়।
আমার আগেও এস ভেবেছে কেউ না কেউ…
আমি জানি একদিন আমিও ভাববো- ভৌগলিক ভাবে থাকি বা না থাকি; একদিন আমার ভাবনাও রচিত হবে শব্দ চয়নে-
সেটাই হবে কবিতা! আমার কবিতা।
…তারপর আমি জন্ম নেবো কবি পরিচয়ে
কারণ- কবিতার জন্ম হলেই জন্ম নেয় কবি…।

দা উ দু ল ই স লা ম

দাউদুল ইসলাম সম্পর্কে

সব সময় নিজেকে বলি- মানুষ হবি যদি- অন্ধকার ঘরে যখন একা থাকবি তখন নিজেকে জিজ্ঞেস করে নিস তুই কতটা মানুষ। কতটা তোর সভ্যতা কতটা তোর ভদ্রতা! স্নান ঘরে যখন একা শাওয়ারের নিচে দাঁড়াস- তখন নিজেকে জিজ্ঞেস করিস কত টা আছে তোর মনুষত্বের রুচি! জিজ্ঞেস করিস কতটা তুই ভদ্র, সভ্য!

3 thoughts on “কবিতার জন্ম হলেই জন্ম নেয় কবি

  1. শেষ প্যারায় লিখাটিকে যে অনেক উঁচুতে নিয়ে গেছেন। আই আ্যাপ্রিশিয়েট স্যার। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।