ভাদুগান ও ভাদু উত্সব- 2020 (পঞ্চম পর্ব)
ভাদুর কাহিনী, আলোচনা ও গীত সংকলন
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
ভাদুর রাত জাগরণ এই উৎসবের অন্যতম আকর্ষণীয় অংশ।ত্রিশ দিন ধরে ভাদুকে পুজো করার পর কাল ভাদুকে বিদায়ের দিন।তাই পাড়ায় পাড়ায় চলে নিশি জাগরণ।ভাদুর উপাসক মেয়েদের কাছে ভাদু হয়ে ওঠে কখনও মা,কখনও মেয়ে আবার কখনও দেবী।তাই গানের মাধ্যমে তাদের আদরের ভাদুর কাছে নিবেদন করে তাদের সুখ-দুঃখ,অভাব-অভিযোগ।
অবিচ্ছিন্ন ভাবে সারারাত ধরে চলতে থাকে ভাদু গানের ফোয়ারা।রাত কেটে হয় ভোর,ভোর থেকে সকাল এগিয়ে আসে ভাদুকে বিদায়ের মুহূর্ত।
সারারাত ব্যাপী রাতজাগরণের পর বাড়ির মেয়েরা সকালে ভাদুকে বিসর্জন দেয়ার জন্য তৈরি হয়।এই সময় তা বড় আবেগঘন মুহুর্ত তাদের কাছে।তাই আবেগরুদ্ধ কন্ঠে গেয়ে ওঠে ভাদুর বিদায় সঙ্গীত।
“তিরিশ দিন রাইখলাম ভাদু তিরিশ টিফুল দিয়ে
আর ত রাইখতে লাইরবঅ ভাদু চাতা হইলঅ বাদী গো।”
ভাদু কে বিসর্জন দেওয়ার আগে ভাদু র মৃন্ময় মূর্তিকে বাড়ির ও গ্রামের সবাই বরণ করে। একে বলা হয় চুমানো। এরপর ভাদু কে মাথায় করে সারাগ্রাম ঘুরে ভাদু কে কোনও নদীতে বিসর্জনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। জলাশয়ে আদরের কন্যাকে বিদায় দিয়ে সমস্ত গ্রামের মহিলারা সমবেতভাবে আবেগঘন কন্ঠে গেয়ে ওঠে-
আন্যেছি শখের ভাদু,রাখ্যেছি ঘরে।
পুরাব মনের আশা,ভাঁসাব জলে।।
ভাদুকে জলে বিসর্জন দেওয়ার পর চিড়া-গুড়-ঘি-মধু-বাতাসা মাখানো প্রসাদ বিতরণ করা হয় সকল গ্রামবাসীদের। ভাদু পুজোয় ভাদুকে ভোগ নিবেদন।
ভাদুর মূল প্রসাদই হল প্রমাণ সাইজের জিলিপি এবং মিষ্টি খাজা।
এই ভাদু পরবের ও মূল সম্পদ এই ভাদু গানগুলো।এই ভাদুর গানগুলো বেশিরভাগই প্রচলিত। একসময় একমাসব্যাপী ভাদু গানের আসর বসত কাশীপুর রাজবাড়িতে।এই গানগুলোর মধ্যে বাড়ির মেয়েদের সাংসারিক,সামাজিক,গার্হস্থ্য জীবনের না সুখ-দুঃখ,হাসি-কান্না,আশা-নিরাশার কথা খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়।
https://www.youtube.com/watch?v=vdQE4RiU-xI&list=RDvdQE4RiU-xI&start_radio=1&t=24
শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী। শুভ সন্ধ্যা।