৫৫।
সবাই রাশেদ সাহেবকে নিয়ে মোটামুটি হাসি তামাশা হৈ চৈ গালা গালি যার যখন যা ইচ্ছা চালিয়ে যাচ্ছিল কিন্তু রাশেদ সাহেব কোন প্রতিবাদ করছে না। আরে এইটা করতে এতক্ষণ লাগে নাকি, ওইটা কোথায় থাকে জানেন না, একটু দেখে নিলেই তো হয়, হা করে কি দেখেন এই ধরনের সব কথার প্রতিবাদ করবেই বা কী। নীরবে শুনে যাওয়াই ভালো। বোবার নাকি শত্রু থাকে না। ঘড়ি দেখার কথা মনে নেই। মারুফ বললো
-ওরে বাবা সারে বারোটা বেজে গেছে? তাড়াতাড়ি কর সবাই। নয়া ভাই সাহেব আপনি মপের বালতি ভরে চুলায় দেন।
মপের পানি গরম হলে বললো-
-ওই যে ওই খানে ব্রাশ আছে ওটা নিয়ে আসেন। পারবেন তো ব্রাশ করতে? দেন আমি দেখিয়ে দেই
বলে বালতিতে গুড়া সাবান, ব্লিচ, এনটি ব্যাকটেরিয়াল সুগন্ধি মিশিয়ে বললো-
-দেখেন কি ভাবে ব্রাশ করবেন।
দেখিয়ে দেয়ার পর রাশেদ সাহেব পুরো কিচেন আর তার পাশের স্টোরে মপ মেরে জিজ্ঞেস করলো-
-এই পানি কোথায় ফেলব?
দেলোয়ার বাইরে নিয়ে গিয়ে একটা ড্রেনের মুখ দেখিয়ে বললো-
-এই খানে ফেলবেন সবসময়। আর ওই বালতি ব্রাশ এই যে এইখানে রাখবেন সবসময়। একই ভাবে করবেন যাতে করে আপনে যেদিন না থাকবেন সেদিন যেন আমাদের কারো খুঁজে পেতে অসুবিধা না হয়।
ফিরে এসে দেখে কাজ কর্ম সব শেষ। কিচেন দেখে মনেই হবে না এখানে এতক্ষণ মহাযজ্ঞ চলেছে। সমস্ত কিচেন চক চক করছে।
-এই যে ভাই সাহেব হাত মুখ ধুয়ে আসেন।
-কেন?
-খাইবেন না?
-ও আচ্ছা, তা হলে আমি কাপর গুলিও বদলে আসি। সিংক থেকে নোংরা পানি ছিটে এসেছে কেমন লাগছে এই কাপর গায়ে খেতে পারবো না।
বলেই রাশেদ সাহেব আর দেরি করলেন না। সারা দিনের এই নতুন ধরনের শারীরিক পরিশ্রম যাতে সে অভ্যস্ত নয়, এর পর বিষণ্ণ মন, অবসাদ আর ক্লান্তিতে সমস্ত শরীর যেন আর চলতে চাইছিলো না। কোন রকম টেনেটুনে তিন তলায় এসে কাপর বদলে বিছানায় একটু বসে মনে হলো কতদিন যেন বসতে পারেনি। মুখে হাত দিয়ে দেখে ঘাম শুকিয়ে লবণ কিচ কিচ করছে। সেই সাড়ে পাঁচটার পর একটা সিগারেট ও টানার সুযোগ পায়নি। আগে একটা সিগারেট বানিয়ে তাড়াতাড়ি দুটো টান দিয়ে এ্যাশট্রেতে ফেলে দিলেন। বেশি দেরি হলে আবার কি বলে এমনিতেই নতুনের দোষ বেশি।
বাথরুমে গিয়ে সাবানের কথা মনে হলো, আগে একেবারে মনেই হয়নি এখন আর অত দূরে সাবান আনতে যেতে ইচ্ছা হলো না। সাবান ছাড়াই মুখ হাত ভাল করে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিচে এসে দেখে সবাই যার যার মত কিচেনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই খাচ্ছে। মালিকদের অন্য এক অংশীদার ওসমান বললো-
-নেন নেন ভাই তাড়াতাড়ি একটা প্লেট নেন।
রাশেদ সাহেব দেখলেন সে যেখানে প্লেট গুলি ধুয়ে রেখেছে এগুলি সেই প্লেট। সে নিজেও একটা হাতে নিয়ে নিলেন। আসাদ সাহেব ভাতের ডেকচি আর তরকারির হাড়ি দেখিয়ে দিল। মারুফ বললো-
-নিজেই নিয়ে নেন কেও দিয়ে দিবে না।
-ও আচ্ছা, ঠিক আছে নিচ্ছি।
কাস্টমারের জন্যে যে প্লেইন রাইস সেই একই রাইস, তরকারির হাড়িতে দেখে কিসের মাংস যেন।
-এটা কি গরুর মাংস?
-না না এ হলো ল্যাম্ব মানে ভেড়া। কেন খান না নাকি?
-না না সেরকম কিছু না সবই খাই।
-ঠিক আছে, নিয়ে নিবেন যা লাগে।
ওসমান বললো-
-ভাই সাবের সাথে তো কথা বলার সময় পাইলাম না, ঠিক আছে আছেন তো পরে আলাপ করবো।
এর মধ্যে তার খাওয়া শেষ। কোন রকম হাতটা ধুয়ে বললো আচ্ছা আমি আসি, সালামালেকুম বলেই দৌড়।
রাশেদ সাহেব খেতে শুরু করেছেন। আসাদ বললো-
-কি, ঠিক আছে? চলবে তো! না কি?
-হা ভাই চলবে মানে কি চালাতে হবে এছাড়া তো উপায় নেই।
-আচ্ছা আপনি এই কাজ নিলেন কেন? আপনার তো এই কাজের বয়স না। দেশ থেকে কবে এসেছেন, দেশের খবর কেমন, ওখানে কি করতেন ইত্যাদিসহ নানা প্রশ্ন যা এখন রাশেদ সাহেবের কাছে যন্ত্রণার মতো মনে হচ্ছিল। এমনিতেই কথা বলতে ভাল লাগছিলো না তার মধ্যে একই প্যাঁচাল বার বার আর কত! কেন, মানুষের এতো কৌতূহল কেন? আমি কি করতাম তা জানার কি এমন দরকার? কি হবে জেনে? যাই হোক কিছু বুঝতে দিলো না। অবলীলায় তার সব কথার জবাব দিয়ে গে্লেন।
যদিও সে বুঝতে পারছিলো এটা হলো আলাপ করার একটা পদ্ধতি। প্রথম আলাপ আর কি ভাবে শুরু করে তাই এই সব অবান্তর প্রসঙ্গ। তবে যাই হোক লোকটাকে ভালোই লাগলো। নতুন এসেছে এতো বিরক্ত হলে তো চলবে না কিন্তু তার মনের অবস্থা তো তার জানার কথা নয় তাই এই প্রসঙ্গ। কি আর করা যাবে এই ভাবেই তাল মিলিয়ে চলতে হবে। সবার কাছ থেকেই ভাল আশা করা সম্ভব নয়। রান্না খারাপ ভালো দেখার অবস্থা নেই। কোন ফাঁকে যে রান্না করেছে কে করেছে তা রাশেদ সাহেব খেয়াল করতে পারেনি। আর করবেই কখন এক সাথে দুই তিন জনে হুকুম করেছে। কোথায় কি থাকে, কি আছে, কাকে কি বলে এগুলি তো কিছুই জানা নেই। তারপর কিভাবে কি করবে তাও কিছু জানা নেই। কেও যে দেখিয়ে দিবে সে উপায়ও নেই। সবাই যার যার মত ব্যস্ত। আর এক সমস্যা ভাষা। কথাটা শুনেছে কিন্তু বুঝতে পারছেনা, জিজ্ঞেস করেছিলো দুএক বার। জবাব শুনে আর করতে ইচ্ছা হয়নি। যেমন বাংলাটাও শিখে আসেন নাই!! একবার বলেছিলো এটা তো -বাংলার একটা আঞ্চলিক রূপ সে তো আমার সব বোঝার কথা নয়।
-কি বললেন আমরা বাঙ্গালি না?
-না না তা হবে কেন?
-ও! উনি শুদ্ধ ভাষা ছাড়া বুঝেন না তা জানেন না? এখানে সবাই এই রকম কথা বলে তো আপনে এখানে আসলেন কেন?
উপন্যাসের রাশেদ সাহেব এর সাথে রাত ভোর সকাল সন্ধ্যা সব-সময় আছি বন্ধু।
রাসেদ সাহেব বড়ই একাকী দিন কাটাচ্ছেন তাকে একটু সংগ দেয়া অতি উত্তম কাজ।
ভালোবাসায় থাকুন প্রিয় খালিদ ভাই।
ভালবাসা ভালভাসার কাংাল।
পড়েছি ভাই।
ধন্যবাদ প্রিয়।
* শুভরাত্রি….
শুভরাত্রি শুভরাত্রি।
শুভেচ্ছা কবি খালিদ উমর ভাই।
কবি এবং উপন্যাস!
অনেক অনেক শুভেচ্ছা প্রিয় কবি দা।
দিদি, আমি কিন্তু এখন আর কবিতা লিখিনা। সাথে থাকার জন্য অনন্ত শুভকামনা।