নারায়ণগঞ্জ টু চিটাগাং রোডে মারাত্মক দুর্ঘটনা


আটক করা জরুরী রপ্তানি কাজে নিয়োজিত ঘাতক কাভার্ডভ্যান।

বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ টু চিটাগাং রোড হলো এক ব্যস্ততম রোড। নারায়ণগঞ্জ থেকে চিটাগাং রোডের দূরত্ব প্রায় ১৪ কিলোমিটার। আছে অনেকগুলো মোড়। এসব মোড়গুলোর মধ্যে একমাত্র সিদ্ধিরগঞ্জ পুলের মোড়েই ট্রাফিকপুলিশ দেখা যায়। অন্যসব মোড়গুলোতে কোনও ট্রাফিকপুলিশ নেই। আছে একমিনিট পুলিশ নামের কিছু গঞ্জিকা সেবনকারী আর কিছু হিরোইঞ্চি। সড়কের দুইপাশে রয়েছে বর্তমান সময়ে গড়ে ওঠা ছোটবড় নীট গার্মেন্টস, ডাইং সহ নানারকম রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানগুলো এই ব্যস্ততম সড়ক ঘেঁষা। প্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে সকাল থেকে শুরু হয় কর্মরত শ্রমিক কর্মচারীদের আনাগোনা। চা-নাস্তা খাওয়ার জন্য রাস্তার এপার থেকে ওপারে আসাযাওয়া।

রিকশাচালক বাবুল মিয়ার ৫০০০০টাকার নতুন রিকশা।

এরকম পরিস্থিতি দেখে ব্যস্ততম সড়কে চলাচলকারী ছোটবড় যাত্রীবাহী যানবাহন সহ মালবাহী ট্রাক, কন্টিনারগুলো খুবই সতর্কতা অবলম্বন করে গাড়ি চালানোরই কথা। কিন্তু ড্রাইভাররা তেমন একটা সতর্কতা অবলম্ব করে গাড়ি চালায় না। চালায় নিজেদের ইচ্ছেমত। কার আগে কে যাবে এমন অবস্থা।

ঘটনাস্থলে নিহত রিকশাচালক বাবুল মিয়া।

এভাবেই আচমকা ঘটে যায় অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৪ নভেম্বর ২০১৮ইং সকাল ১১টায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন নারায়ণগঞ্জ টু চিটাগাং রোডের মাঝপথে, পাঠানটুলি বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ঘটে গেল এক অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনা সূত্রপাত একটি কাভার্ডভ্যানের সাথে একটি অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ। রিকশায় যাত্রী ছিল দুইজন। কভার্ডভ্যানের ধাক্কায় চলন্ত অটোরিকশাটি সাথে সাথেই ধুমড়ে মুচড়ে হয়ে যায় একাকার। দু’জন যাত্রী সহ রিকশাচালক ছিটকে পড়ে রাস্তার উপর।

আহত হওয়া রিকশার যাত্রী দুইজনের মধ্যে একজন।

তখন রাস্তায় পড়ে থাকা তিনজনের উপর দিয়েই কভার্ডভ্যান দ্রুতগতিতে চালিয়ে যায়। সাথে সাথেই রিকশাচাল বাবুল মিয়া ঘটনাস্থলেই মারা যায়। যাত্রী দু’জন রকি ও সবুজ মারাত্মক আহত হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার উপরে পড়ে আছে রিকশাচালক সহ দুইজন। এরপর উপস্থিত জনতা ও এলাকাবাসীর সহায়তায় তাদের নিকটস্থ নারায়ণগঞ্জ ৩০০শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর জানা যায় যে, হাসপাতালে নেওয়া আহত দুইজনের মধ্যে একজনের অবস্থা আশংকাজনক দেখে নারায়ণগঞ্জ ৩০০শয্যা হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। হাসপাতালে ভর্তি হবার কিছুক্ষণ পরই মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে। এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালো দুইজন। যিনি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে, তাঁর অবস্থাও আশংকাজনক।

নিরাপদ সড়ক চাই শ্লোগানে মানুষের রক্তে রক্তাক্ত সড়ক। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মানুষের নাড়িভুঁড়ি।

জানা যায় রিকশাচালক বাবুল মিয়া তল্লা আইসক্রিম ফ্যাক্টরি এলাকার বাসিন্দা। আর রকি ও সবুজ পাঠানটুলি আইলপাড়া এলাকার বাসিন্দা। এরা নিকটস্থ ইব্রাহীম নিট গার্মেন্টসের শ্রমিক ছিল। অবশেষে রাস্তার দুইপাশে থাকা জনতার বুদ্ধিমত্তার কারণে কাভার্ডভ্যান্টি ধরা পড়ে। কিন্তু পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় কাভার্টভ্যানটির ড্রাইভার হেলপার। পর মুহূর্তেই শুরু হয় এক হৃদয়বিদারক আর্তনাদ। বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। এর কিছুক্ষণ পরই সিদ্ধিরগঞ্জ থানা থেকে পুলিশবাহিনী এসে জনতার ভিড় সামাল দিয়ে রাস্তার যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ ঘটনাস্থলে থেকে জনতার আটক করা কাভার্ডভ্যানটি নিয়ে যায় থানায়। এরপর বিস্তারিত আর কিছু জানা যায়নি। জানা যাবে কেইস-মামলা আর এটা সেটা। কিন্তু সড়ক নিরাপদ আর মানুষের জানের নিরাপত্তার জন্য কোনও কিছুই করা হবে না। মোড়গূলোও থেকে যাবে ট্রাফিক শূন্য। ড্রাইভারাও তাদের গাড়ি চালাবে বেপরোয়াভাবে। এমনভাবে প্রতিনিয়তই ঘটবে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা। আমরা শুধু দেখেই যাবো।

ছবি ঘটনাস্থল থেকে নিজের মোবাইল ফোন দিয়ে তোলা।

নিতাই বাবু সম্পর্কে

নিতাই বাবু ২০১৫ সালে তিনি শখের বশে একটা ব্লগে রেজিষ্ট্রেশন করে লেখালেখি শুরু করেন।তিনি লিখতেন নারায়ণগঞ্জ শহরের কথা। লিখতেন নগরবাসীর কথা। একসময় ২০১৭ সালে সেই ব্লগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ব্লগ কর্তৃক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জনাব সাঈদ খোকন সাহেবের হাত থেকে ২০১৬ সালের সেরা লেখক সম্মাননা গ্রহণ করেন। সাথে নগর কথক উপাধিও পেয়ে যান। এরপর সেই ব্লগে লেখালেখির পাশাপাশি ২০১৮ সালের জুলাই মাসে তিনি শব্দনীড় ব্লগে রেজিষ্ট্রেশন করেন। শব্দনীড় ব্লগে উনার প্রথম লেখা "আমি রাত জাগা পাখি" শিরোনামে একটা কবিতা। তিনি চাকরির পাশাপাশি অবসর সময়ে লেখালেখি পছন্দ করেন এবং নিয়মিত শব্দনীড় ব্লগে লিখে যাচ্ছেন।

11 thoughts on “নারায়ণগঞ্জ টু চিটাগাং রোডে মারাত্মক দুর্ঘটনা

  1. অহরহ কথাটি নৈমিত্তিক বোঝালেও প্রতি ঘন্টা যদি বলি তাহলে সমীকরণটি ভালো মিলবে। সেটা হচ্ছে আমাদের দেশের দূর্ঘটনা। সড়ক দূর্ঘটনা। যে কোন প্রান্তেই ঘটছে। :(

    1. স্বচক্ষে সেদিন দেখেছি এক হৃদয়বিদারক আর্তনাদ। শরীর শিউরে ওঠার মতো। কিন্তু কিছুই বলার ছিল না।

  2. এই ধরনের ছবিগুলি আমি কখনোই দেখতে চাই না।

    1. এই ছবিটা লেখার মাঝে আপলোড করতে চাইনি শ্রদ্ধেয় দাদা। নিজের অজান্তেই  হাতখানা চলে গেল রিকশাচালকের মরা ছবিটার দিকে। দেখে নিজের কাছেও খারাপ লাগে দাদা।

    1. সত্যিই খুব দুঃখজনক শ্রদ্ধেয় রিয়া দিদি। কষ্ট পেয়েছি খুব।

  3. * ট্রাজেডি হচ্ছে, আমাদের মহাসড়কগুলো যেন একটি মরণফাঁদ … https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Rant.gif.gif 

    একটি দুঃসহ এই মর্মান্তিক দৃশ্য।

    1. সেদিন এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা দেখে ভাষা হারিয়ে ফেলেছি শ্রদ্ধেয় দাদা। যেখানে আমরা চাই নিরাপদ সড়ক। সেখানে দেখি মানুষের রক্তে রক্তাক্ত সড়ক। 

  4. দুঃখজনক।কাভার্ড ভেনটি ছিল সম্ভবত সিদ্ধিরগঞ্জ পুলের মজিব ফ্যাশনের।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।