নাম তাঁর ধলু। তবে ধলু জীবের সেরা মানুষ নয়! ধলু একটি অবহেলিত প্রাণী কুকুরের নাম। এই ধলুর সাথে আমার সখ্যতা, ২০১৬ইং সালের মাঝামাঝি থেকে। ধলু তখন খুবই ছোট ছিল। বয়স ছিল আনুষ্ঠানিক দেড়মাস। গায়ের রং ছিল ধবধবে সাদার মাঝে কালো লাল-খয়েরি ছাপ। তাই ওর নাম রেখেছিলাম ধলু। ধলুকে দেখতে হুবহু বিদেশি কুকুরের মতো দেখা যেতো। কিন্তু ধলু কোনও বিদেশি কুকুরের জন্মের ছিল না। ধলুর জন্ম হয়েছিল, এদেশের এক নামীদামী শহরের এক মহল্লার খোলা ডাস্টবিনের পাশে। ধলুর জন্মদাতার পরিচয় ছিল না বলে ধলু বেজন্মা বেওয়ারিশ কুকুর ছানা। যার কারণে ধলুর কোনও মালিকানাও ছিল না। ধলুর মালিকানা নিয়ে কেউ কখনো দাবিও তুলেনি। তাই রাস্তাই ছিল ধলুর একমাত্র ঠিকানা। ধলুর থাকা, খাওয়া, খেলাধুলা চলতো, আমার অফিসের সামনের মহল্লার এক রাস্তার পাশে। অবুঝ ধলুকে নিয়ে ওর মা-ও সেখানেই থাকতো।
সেই রাস্তা দিয়েই আমার প্রতিদিন অফিসে যাওয়া আসা হতো। যা এখনো একই রাস্তা দিয়ে আমি অফিসে যাওয়া আসা করি। একসময় যাওয়া আসার মাঝে সুন্দর ফুটফুটে এতিম ধলুকে দেখে আদর করতাম। দোকান থেকে বিস্কুট কিনে খাওয়াতাম। এভাবে ধলুর প্রতি আমি মায়ায় জড়িয়ে পড়লাম। ধলুও আমাকে ভালোবাসতে লাগলো, আমিও ধলুকে ভালোবেসে ফেললাম। এরপর নিজের বাসায় নিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম। অথচ রাস্তায় থাকা অবহেলিত প্রাণী ধলুর মতোই আমার অবহেলিত জীবন। বাড়ি নেই। বিত্তশালীদের মতো টাকা নেই। নিজের ঘরদোর নেই। পরের বাড়িতে থাকি ভাড়া। যেই শহরে ধলুর জন্ম, সেই শহরের এক মহল্লার ভাড়াটিয়া আমি। তবুও একদিন ধলুকে কোলে করে নিয়ে গেলাম ভাড়া বাসায়। যেই বাড়িতে আমি ভাড়া থাকি, সেই বাড়িতে।
বাড়ির মালিক সম্মানিত ব্যক্তি আমার খুবই পরিচিত ছিলেন। কোনো এক সময় এই মালিকের টেক্সটাইল মিল ছিল। আমি সেই মিলেরই শ্রমিক ছিলাম। সেই থেকে বাড়ির মালিক আমাকে খুবই ভালো ভালোবাসতো এবং ভালোও জানতো। বাড়ির মালিক ছিলেন মুসলমান। আমি হিন্দু। বাড়ির সব ভাড়াটিয়াও ছিল হিন্দু। বাড়িতে মোট ভাড়াটিয়ার সংখ্যা ছিল, ১৪ টি। এই ১৪ টি ভাড়াটিয়া সবই ছিল হিন্দু ফ্যামিলি। মুখে ছিছিছি, রামরাম বলা যাঁদের অন্যতম বুলি।
আমি যেই বাড়িতে ভাড়া থাকতাম, সেই বাড়িতে এমন টাইপের কিছু হিন্দু ফ্যামিলি ছিল। তাঁরা নিজ ধর্মের গুণকীর্তনের যা-ই করতো, তারচেয়ে বেশি কুসংস্কারে বিশ্বাসী। তাঁরা কিছুতেই স্রষ্টার সৃষ্টির প্রাণী কুকুর বিড়াল দুই চোখের লীলায় সহ্য করতে পারতো না। আমার অবস্থান আর বাসস্থানও ছিল সেসব মানুষের মাঝেই। তারপরও কুসংস্কারাচ্ছন্ন আচার আচরণ আমাকে গ্রাস করতে পারবে না ভেবে একদিন প্রাণীজগতের অবহেলিত প্রাণী ছোট্ট ধলুকে নিয়ে গেলাম বাসায়।
ধলুকে দেখে প্রথমেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো নিজের সহধর্মিণী। সেও ধর্মের নামে কুসংস্কারাছন্ন হয়ে নিত্যদিন জপের মালা জপে। এরপর জ্বলতে শুরু করলো বাড়ি অন্যান্য ভাড়াটিয়ারা। ছিছিছি, রামরাম, দুরদুর, যা যা, সরসর! এসব পেঁনপেঁনানি সহ্য করেও চলছিল আমার ধলুর প্রতি সেবাযত্ন। নিজের সন্তানের মতো করে শ্যাম্পু দিয়ে ধলুকে স্নান করাতাম। খাওয়াতাম। আদর করতাম। এরপর গলায় বেল্ট পড়ালাম। বেল্টের সাথে লোহার চেইন লাগালাম। ধলুও আমাকে আস্তে আস্তে ভালো করে চিনতে শুরু করলো। একসময় পুরোপুরি চিনেও ফেললো। এখন আর আমাকে না দেখলে ধলুর ভালো লাগতো না। আমাকে না দেখলেই ধলু কেঁউকেঁউ শুরু করে দিত। আমার গলার আওয়াজ পেলেই ধলুর শান্ত হয়ে যেতো।
আমি যতক্ষণ বাসায় থাকতাম, ততক্ষণ রাখতাম বাসার সামনে। বাসার সামনে কুকুর থাকলে নাকি কিছু ধার্মিক হিন্দুদের জাত যায়! তাই কুকুর দেখলে তাঁদের ছিছিছি, আর রামরাম বলা শুরু হয়ে যেতো। এসব দেখে আর শুনে আমি বাসা থেকে অফিসে যাওয়ার সময় ধলুকে বেধে রাখতাম বাড়ির নির্জন আউট সাইডের একটা কলা বাগানে। ধলুর সামনে থেকে আমি চলে আসার পরপরই ধলু শুরু করে দিতো কান্নাকাটি, হাউমাউ কেঁউকেঁউ। অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে ধলুর সামনে যেতেই, ধলু শান্ত! হাউমাউ নেই! কেঁউকেঁউ নেই! চিল্লাচিল্লি নেই! বাধ খুলে নিয়ে আসতাম বাসার সামনে। রান্না করা মাছ দিয়ে ভাত মেখে দিতাম, ধলু লেজ নেড়ে মনের অানন্দে খেত। আবার নিয়ে বেধে রাখতাম কলা বাগানে। এভাবে মাত্র ৭ দিন ধলুকে ভাড়াটিয়া বাসায় কোনরকমভাবে রাখলাম।
এরপর ধলুকে আর রাখতে পারলাম না, ছিছিছি রামরাম আর সহ্য হলো না। যেখানে জীবের সেরা মানুষের আচার ব্যবহার থাকার কথা উৎকৃষ্ট বন্ধুসুলভ! সেখানে কিছু মানুষের নিকৃষ্ট আচরণের কাছে আমি হেরে গেলাম। শেষমেশ বাধ্য হলাম ধলুকে ওর মায়ের কাছে নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমার সিদ্ধান্ত বাড়ির মালিক জানতে পেরে তিনি দুঃখপ্রকাশ করে বললেন, ‘ধলুর জন্য আমি এই বাড়িতেই একটা সুন্দর ব্যবস্থা করে দেই, তুমি ধলুকে এখানে রেখে দাও!’ সম্মানিত বাড়ির মালিকের কথায় আমি রাজি না হয়ে বললাম, ‘না স্যার, আমি ও-কে যেখান থেকে এনেছি, ঠিক সেখানে নিয়েই ছেড়ে দিবো। এই বাড়িতে ধলুকে রেখে বাড়তি কোনও ঝামেলায় জড়াতে চাই না।’ সম্মানিত বাড়ির মালিক আর কোনও কথা বলেনি, আমি আমার সিদ্ধান্তেই অটল থাকলাম।
যেদিন ধলুকে ওর মায়ের কাছে নিয়ে যাবো, সেদিন সকালবেলা ধলুকে কয়েকটা টোস বিস্কুট সামনের দিয়ে বললাম, ‘খা ধলু, খা। এই বাড়িতে এটাই তোর শেষ খাওয়া। তোকে এখনই তোর মায়ের কাছে নিয়ে যাবো। আজ থেকে তুই মুক্ত। তোর গলায় আর শিকল বাধা থাকবে না। তোকে দেখে কেউ ছিছিছি রামরামও বলবে না। তোর কারণে কারোর উপাসনাও নষ্ট হবে না। আজ থেকে তুই তোর মায়ের সাথেই থাকবি। স্বাধীনভাবে ঘুরবি। ইচ্ছেমতো খেলবি। মনের আনন্দে দৌড়াবি।’
এসব আমি যখন বলছিলাম, ছোট্ট ধলু তখন আমার দিকে বারবার তাকাচ্ছিল! আমার বলা কথাগুলো শুনছিল। কিন্তু একটা বিস্কিটের বেশি আর সেদিন ধলু খেলো না। ধলুকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে একটা রিকশায় চড়ে রওনা হলাম অফিসের দিকে। পথিমধ্যেই ধলুর মা কয়েকদিন যাবত ছোট্ট ধলুকে হারিয়ে পাগলের মতো হয়ে বসে আছে রাস্তার পাশে। ধলুর মায়ের দুটো চোখ শুধু এদিক-সেদিক খুঁজাখুঁজি। আমিও যাচ্ছিলাম একই রাস্তা দিয়ে। ধলু আমার সাথে রিকশায়। ধলু দূর থেকেই ওর মাকে দেখে কেঁউকেঁউ শুরু করে দিলো। ধলুর গলার কেঁউকেঁউ আওয়াজ ধলুর মায়ের কানে যেতেই, ধলুর মা এক দৌড়ে আমার রিকশার সামনে। হারানো সন্তানকে গর্ভধারিণী মা কাছে পেয়ে কি যে করবে, তার কোনও দিশামিশা নেই। এক লাফে আমার রিকশায় উঠে ধলুকে আদর করতে লাগলো। ধলুও গত ৭দিন পর মাকে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা। আমি ধলুর গলায় বাধা বেল্টের সাথে লোহার শিকল খুলে দিয়ে ধলুকে রিকশা থেকে নামিয়ে দিলাম। ধলু মায়ের সাথে নাচতে নাচতে মহল্লার এক বাড়ির চিপায় চলে গেল। আমি আমার চোখের জল মুছতে মুছতে চলে গেলাম নিজের অফিসে।
এরপর অফিসে যাওয়া আসার সময় মাঝে মাঝে ধলুর মায়ের সাথে ধলুকে দেখতাম। ধলু বলে ডাক দিলেই এক দৌড়ে আমার সামনে চলে আসতো। আমার পা ওর জিহবা দিয়ে চাটত। ওর সামনের দুই পা দিয়ে আমার পায়ে ঘষা দিতো। কেঁউকেঁউ করে খাবার চাইতো। সাধ্যমত খাবার কিনে দিতাম, মা ছেলে বসে বসে মনের আনন্দে খেতো। আবার কয়েকদিন ধলুকে দেখা যেত না। তখন নিজের কাছেও ভালো লাগতো না। মনো হতো, অনেকদিন ধরে কোনোএক প্রিয়জনকে দেখছি না। অফিসে যাওয়া আসার মাঝেই শুধু ধলুকে খুঁজতাম। পেতাম না! আবার হঠাৎ করে একসময় দেখা হয়ে যেতো। তখন ধলুর সাথে অল্প কিছুক্ষণ চলতো কথাবার্তা, ভালোবাসা আদানপ্রদান।
আমার সেই ধলু। যেই ধলুকে খুব ছোট থাকতে আমার বাসায় ৭ দিন রেখেছিলাম। আজ কয়েকদিন ধরে ও আর আমার পিছু ছাড়ছে না। মাত্র ৭দিনের ভালোবাসা ধলু আজও ভুলতে পারছে না। কিন্তু জীবের সেরা অনেক মানুষেই তা মনে রাখে না।
এভাবে ধলু আস্তে আস্তে বড় হতে লাগলো। একসময় ধলুর মা’কে কে বা কারা মেরে ফেললো। ধলু হয়ে গেল এতিম, আর ঠিকানাবিহীন পথের কাঙ্গাল। এখানে ক’দিন, সেখানে ক’দিন। বাপ ছাড়া, আর মা মরা ধলু তখন কোথাও গিয়ে শান্তি পায় না। ধলু যেখানেই যায়, সেখানকার দায়িত্বে থাকা অন্যসব কুকুরের আক্রমণের শিকার হতে হয়। তখন ধলুর কাছে আমার বাসা ছিল অচেনা। ছোটবেলার চেনা বাসা এখন আর ধলু চেনে না। ধলু শুধু আমাকেই খুঁজে বেড়ায়। সমতে আমাকে পায়, সমতে পায় না। ধলুর সাথে আমার দেখা হয়ে গেলে প্রথমেই এক লাফে আমার বুকের উপর ওর সামনের দুটি পা রেখে আমাকে চুমু দিতে চাইবে। এমন কয়েকবার চেষ্টা করবে। তারপর আমার পা ওর মুখের ভেতরে নিয়ে কামড়ানোর অভিনয় করবে। আমার হাতে কামড়ানোর ভাব করবে। অথচ ওর মুখের ভেতরে থাকা একটা দাঁতের আঁচড়ও লাগাবে না। ওর এরকম অভিনয় দেখে মানুষের ভয়ে হায় হায় করতে থাকে। কিন্তু ওর প্রতি আমার কোনও ভয় ছিল না। আমি জানি, ওর এরকম ভাব হলো আমাকে আহ্লাদ করা।
অনেকক্ষণ এমন অভিনয় করার পর পাউরুটি, নাহয় বিস্কুট ওকে দিতেই হবে। তাও আবার মাটিতে দিলে ধলু রাগ করে অনেকক্ষণ ঝিম ধরে বসে থাকে। তখন আমি বুঝতে পারতাম ঝিম ধরার মানে কী? ঝিম ধরার মানে হলো, খাবার সরাসরি ওর মুখে ফিকে না দিয়ে মাটিতে দিলাম কেন! তাই ওর ঝিম ধরা। তারপর একটু একটু করে ওর মুখ বরাবর ফিকে দিলে খপ খপ করে ক্যাচ ধরে খেতে থাকে। এভাবেই ধলুর সাথে প্রায় দুইবছর রাস্তা-ঘাটে, পাড়া-মহল্লায় দেখাশোনা, আর ভালোবাসার লেনাদেনা। কিন্তু ধলুকে একদিনও সাথে করে বাসায় নেই না। কারণ, ধলু বাসা চিনে গেলেই ও আর বাসা ছাড়তে চাইবে না। এতে নতুন করে সৃষ্টি হবে আরেক জ্বালা। যেই জ্বালা গত হয়েছে অনেক আগেই। সেটা আবার নতুন করে না জ্বালাতে চেয়ে ধলুকে আমি বাসায় নেই না।
একদিন দুপুরবেলা অফিস থেকে আমি বাসায় ফিরছিলাম। পথিমধ্যে ধলুর সাথে আমার দেখা। দোকান থেকে পাউরুটি কিনে খাওয়ালাম। বললাম, ‘তুই এখন অন্যদিকে চলে যা, আমি বাসায় যাবো।’ না, আমি কিছুতেই ধলুকে আড়ালে রেখে বাসায় আসতে পারছি না। উপায়ান্তর না দেখে ইচ্ছা না থাকা সত্বেও ধলুকে সাথে করে নিয়ে আসলাম বাসায়। বাসায় তখন নিজের ধার্মিক গিন্নী ভাত খাচ্ছিল। গিন্নী ধলুকে দেখে জিজ্ঞেস করলো, ‘এইডা আবার লগে কইরা কারে নিয়া আইলা?’ বললাম, ‘এইডা আমার সেই ধলু! যেই ধলুকে তগো জ্বালায় বাইত তুনে খেদাইয়া দিছি, হেই ধলু। দেখ, আমার ধলু অহনে কত বড় অইয়া গেছে গা।’
আমার কথা শুনে গিন্নী কিছু না বলে চুপচাপ খাওয়াদাওয়া করে আমাকে খাবার দিলো। আমি আমার খাবার থেকে দুমুঠো ভাত একচিমটি লবণ, আর অল্প একটু মাছ দিয়ে মেখে ধলুকে দিলাম। ধলু মনের অনন্দে খেলো। আমিও খাওয়া-দাওয়া সেরে বিছানায় বিশ্রাম নিতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। দেড় থেকে দুই ঘণ্টা পরে ঘুম থেকে উঠে দেখি ধলু নেই। ধলু কোথায় যেন চলে গেছে। ধলুকে না পেয়ে চিন্তামুক্ত হলাম, আবার চিন্তাও করতে লাগলাম! চিন্ত হলো, কোথায় গিয়ে আবার কোন কুকুরের সাথে ঘেউঘেউ করে লেগে যায়, সেই চিন্তা। কিন্তু না, ধলু ওর নিজের ধান্ধায়ই, অন্য কোথাও চলে গেছে। সেই যাওয়ার কয়েকদিন আর ধলুর সাথে আমার দেখা হয়নি। তবে আমি রাস্তায় হাঁটাচলার মাঝে ধলুকেই শুধু খুঁজি। কিন্তু ধলুর দেখা নেই।
আজ কয়েকদিন ধরে আমার ভাড়া বাসার সামনে ধলু এভাবেই সারা রাত শুয়ে থাকে। ছবিটি ৯/১১/২০১৯ ইং তারিখ রাতে তোলা।
ইদানীং কয়েকদিন ধরে ধলু আমার অবস্থান করা জায়গাগুলোতে চুপ করে বসে থাকে। আমাকে দেখা মাত্রই হাউমাউ করে আমাকে ঝাপটে ধরে। চুমু দিতে চায়। রুটি বিস্কুট খায়। আমার আগে-পরে বাসায় গিয়ে চুপ করে বসে থাকে। এখন আর ধলুকে কিছুতেই বাড়ি থেকে বিদায় করতে পারছি না। ধলুও বাসা ছাড়ছে না। এখন ঝামেলাটা হয়ে গেল বাড়তি ঝামেলা। দুইদিন আগে খুব ভোরবেলা একটা রিকশা করে ধলুকে নিয়ে গেলাম বাসা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে, কিল্লার পুল নামক স্থানে। সেখানে ধলুকে নামালাম। দোকান থেকে একটা পাউরুটি কিনে ওর সামনে দিলাম। আমি আবার রিকশা চড়ে যখন বাসায় ফিরছিলাম, ধলু আমার রিকশা ফলো করে রিকশার পেছনে পেছনে দৌড়াতে লাগলো। আমার রিকশা যেদিকে, ধলুও সেদিকে দৌড়াচ্ছে। এভাবে প্রায় দেড় কিলোমিটার দৌড়ে পাঠানটুলি রেললাইন দিয়ে আসার সময় সেখানকার চার-পাঁচটি কুকুর ধলুকে অ্যাটাক করে ফেললো। আমি বাসায় চলে এলাম। কিন্তু ভালো লাগছিল না। ধলুর জন্য মনটা খুবই খারাপ লাগছিল। কয়েক ঘণ্টা পর ভাবলাম, ধলু আর ফিরবে না। আমি আপাতত জ্বালা মুক্ত হলাম।
কিন্তু না, জ্বালা মুক্ত আর হতে পারিনি! যেই জ্বালা, সেই জ্বালাই কপালে রয়ে গেল। ধলু সন্ধ্যাবেলা বাসায় হাজির হলো। আমি তখন অফিসের কাজে মার্কেটে। বাসা থেকে ফোন আসলো, ‘হ্যালো, আম্নের কুত্তা ধলু বাসায় আইয়া বইয়া রইছে। যদি বাড়ির মাইনষের পোলাপানগো সমস্যা অয়, তয়লে মাইনষের লগে কি কাইজ্জা করুম?’ তাততাড়ি কইরা আইয়া কুত্তা সামলান।’ কাজ ফেলে রেখেই বাসায় আসলাম। আমাকে দেখেই ধলু লাফ দিয়ে আমার বুকের পর উঠে আমাকে চুমু দিতে চাইল। আমি ওর প্রতি রাগ হয়ে আমার সাথে বাড়ির বাইরে নিয়ে আসলাম। দোকান থেকে পাউরুটি কিনে খাওয়ালাম।ধলুকে দোকানে রেখেই, আমি আবার চলে গেলাম অফিসের কাজে।
রাত দশটার সময় বাসায় এসে দেখি, আমার বাসার সামনে ধলু শুয়ে ঘুমাচ্ছে। ধলুকে দেখে বাড়ির ফ্যামিলি বাসার মানুষের পেঁনপেঁনানি শুরু হয়ে গেছে। এসব দেখে শুনে এখন সিদ্ধান্ত নিলাম দুই একদিনের মধ্যে নৌকা করে শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্বপাড়ে নিয়ে রেখে আসবো। এছাড়া আর কোনও উপায় খুঁজে পাচ্ছি না। কারণ, আমি নিরুপায়! শহরে ভাড়া বাসায় ধলুকে কিছুতেই রাখতে পারছি না!
আহারে ! কুকুরের কয়েকটি গুণ মানুষেরমাঝে থাকলে মানুষ নিশ্চয়ই উত্তম চরিত্রের হতে পারতো ।
ধলুকে নিয়ে আমি খুবই বিপদে আছে দিদি। ওকে কিছুতেই ফেরাতে পারছি না৷ তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামীকাল অথবা পরশু ধলুকে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপাড়ে রেখে আসবো। এতে অন্তত কয়েকদিন ঝামেলা মুক্ত হয়ে থাকতে পারবো।
মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি শ্রদ্ধেয় কবি দিদি।
অবলা এই প্রাণীও আমাদের সাংসারিক জীবনে কখনও কখনও ভারী হয়ে যায়।
ধলুকে নিয়ে আমি খুবই বিপদে আছে দিদি। ওকে কিছুতেই ফেরাতে পারছি না৷ তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামীকাল অথবা পরশু ধলুকে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপাড়ে রেখে আসবো। এতে অন্তত কয়েকদিন ঝামেলা মুক্ত হয়ে থাকতে পারবো।
মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি শ্রদ্ধেয় কবি দিদি।
যেদিন ধলুকে ওর মায়ের কাছে নিয়ে যাবো, সেদিন সকালবেলা ধলুকে কয়েকটা টোস বিস্কুট সামনের দিয়ে বললাম, ‘খা ধলু, খা। এই বাড়িতে এটাই তোর শেষ খাওয়া।
তখনকার সেই ধারনাটা দুইবছর বলবৎ ছিল। ইদানীং শুরু ধলু আবার আমার বাসায় নতুন করে খাওয়াদাওয়া-সহ রাত যাপনও করতে শুরু করেছে, শ্রদ্ধেয় কবি সুমন দাদা৷ সমস্যা এখন ঘনীভূত হচ্ছে।
দেখি আর দুই একটা দিন! তারপর শীতলক্ষ্যা নদীর ওপাড়ে হবে ধলুর নতুন ঠিকানা।
ধলুদের অভাব ধলুদের ভালোবাসা আমার ভীষণ পরিচিত। প্রত্যহ ওদের প্রায় জনা ছ'য়েক আমার বাড়ির গেটের আশেপাশেই থাকে। বরাদ্দ পাউরুটি বিস্কুট অথবা হোটেলের পরোটা। বাজেট ৩০-৫০ টাকা। হিরো কিসিমের একজনকে বাসায় তুলতে চেয়েছিলাম। ছেলেমেয়েদের সম্মতি থাকলেও গিন্নীর ঘোর আপত্তি। চোখ রাঙানী, রুটির বেলুন দেখানো পর্যন্ত সব নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে।
তারপরও ধলুদের আমি ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি। শুভেচ্ছা মি. নিতাই বাবু।
ধলুকে নিয়ে নিজের ঘরেই অনেক ঝগড়াঝাটি হয়েছে, দাদা। এখন ইদানীং দেখছি ধলুর প্রতি কেমন যেন মায়া মায়া ভাব দেখাচ্ছে। কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছি। কাল অথবা পরশু ধলুকে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপাড়ে রেখে আসবো। ওখানেই হবে ধলুর নতুন ঠিকানা।
মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি, শ্রদ্ধেয় দাদা।
মাত্র ৭দিনের ভালোবাসা ধলু ভুলতে পারছে না। কিন্তু অনেক জীবের সেরা অনেক মানুষেই তা মনে রাখে না।
বর্তমানে ধলুকে নিয়ে আমি মহাবিপদে আছি, দাদা। মানুষের কথা আর সহ্য হচ্ছে না। তারপরও দেখি, কী করা যায়।
অনেক ভালোবেসে দেখেছি। শেষ পর্যন্ত কষ্টটাকেই বাড়িয়েছি।
আমার অবস্থাও ঠিক এমনই হয়েছে, কবি দাদা। না পারছি রাখতে, না পারছি তাড়িয়ে দিতে।
মনটা বিষণ্ন হলো নিতাই দা। এই কারণে মায়া আমার কখনই ভাল লাগে না।
শ্রদ্ধেয় কবি রিয়া দিদি, ধলুর মায়া ভরা চোখ দুটোর দিকে চাইলে আমার আর ভালো লাগে না। ও যেন আমার কত আপন! কিন্তু তা আর অন্য কেউ বুঝে না দিদি। দেখি, কী করা যায়!
বর্তমানে ধলুকে নিয়ে খুবই সমস্যায় আছি, শ্রদ্ধেয় কবি দিদি।
* শুভ কামনা সবসময়….
আপনার জন্যও শুভেচ্ছা সহ শুভকামনা থাকলো শ্রদ্ধেয় কবি দাদা।
কিছু বলার নাই।
আমিও ভাড়াটিয়া।
দুর্বিষহ জীবন আমার। তার উপর আবার বর্তমানে ধলুর আনাগোনা।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি, শ্রদ্ধেয় দাদা।