জীবনের গল্প-২৩ এর শেষাংশ: কিন্তু তা আর হল না কানাইর জন্য। ও আমাকে সিনেমা দেখাবে, তাই তাড়াতাড়ি করে ট্রামে ওঠল। যাবে টালিগঞ্জ। সেখানে গিয়ে শাহরুখ খান অভিনীত “বাজিগার” ছায়াছবি দেখাবে।
যেই কথা সেই কাজ! হাওড়া থেকে ট্রামে চড়ে গেলাম ধর্মতলা। সেখান থেকে বাসে চড়ে গেলাম টালিগঞ্জ। ছায়াছবি দেখা হবে, মেনকা সিনেমা-হলে। সিনেমা দেখবো রাত্রিকালীন শো। শো আরম্ভ হবে রাত ৯ টায়, শেষ হবে রাত ১২টায়। ছায়াছবি ‘বাজিগার’ নায়ক শাহরুখ খান, নায়িকা কাজল অভিনীত। দেখলাম, ভারতের সিনেমাহলে বড় পর্দায় সিনেমা। খেয়াল করলাম, সেখানকার মানুষ খুবই সংস্কৃতি প্রিয়। অনেকেই একবেলা খাবার না খেয়েও সেই টাকা দিয়ে তারা সিনেমা দেখে। এমনও পরিবার দেখেছি, তাদের রান্না-বান্না চলে পাথর-কয়লা দিয়ে। সেই পাথর-কয়লা থেকে একটি-দুইটি করে কাঁচ-কয়লা প্রতিদিন রেখে দেয়। যখন একদিন রান্না করার মত কয়লা জমা হয়ে যায়, তখন গৃহিণী তার স্বামীর কাছ থেকে সেই টাকা আদায় করে নেয়। পরে সেই টাকা দিয়ে তারা স্বামী-স্ত্রী দুইজনে গিয়ে সিনেমা দেখে। যেদিন সিনেমা দেখবে, সেদিন ঘরে ফিরে আর রান্না-বান্না করবে না। সিনেমা দেখে আসার সময় কিছু চানাচুর বা বিস্কুট সাথে নিয়ে এসে তা-ই খেয়ে থাকবে। তবু সিনেমা দেখা চাই-ই-চাই। এ ছাড়াও যেকোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে দলে-দলে যোগদান করে থাকে। যেমন- যাত্রাপালা, লোকনাট্য, থিয়েটার, কবিগান সহ নানারকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। আর আমাদের দেশে বর্তমানে সিনেমা হলে তো কেউ যায়-ই না। অনেক স্থানে দর্শক সংকটে সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
যাক সে কথা। সেদিন টালিগঞ্জ মণিকা সিনেমাহলে সিনেমা দেখে বাসায় ফিরতে রাত হয়েছিল প্রায় দেড়টা। কানাই আগেই জানত যে, এত রাতে বাসায় গেলে বাড়িওয়ালার ঘর বন্ধ থাকবে। তাই সিনেমা দেখে আসার সময়ই দুইটা পাউরুটি কিনেছিল। বাসায় গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে একটা পাউরুটি খেয়ে বিছানায় গিয়ে শুলাম। কিন্তু কিছুতেই আমার ঘুম আসছে না, মনটা কেমন যেন ছটফট করছে। মনে পড়ছে স্ত্রী ও সন্তানদের কথা, আর দাদা বৌদির কথা। আবার ভাবছি নিজের পকেটের কথাও! আবার ভাবছি যেখানে যাব সেখানকার কথা। এই ঘুরা-ঘুরির মধ্যে নিজের বেশকিছু টাকা খরচও হয়ে গেল। পকেট শূন্য হয়ে গেলে কানাই যদি সহযোগিতা না করে? হয়ত করবে। তা-ও ক’দিন করবে? ওরও তো এখানে একটা সংসারের মতো আছে। যদিও বিয়েশাদী এখনও করেনি, তাতে কী হয়েছে? দুইটা বোন তো সাথে আছে! আমাকে একা বাসায় রেখে কানাইও কোনও কাজে কর্মে যেতে পারছে না। এসব কিছু ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম, তা নিজেও জানিনা।
এভাবে এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করতে করতে কেটে গেলো প্রায় পাঁচ দিনের মতোন। ছয় দিনের মাথায় কানাই বলল, ‘তাড়াতাড়ি জামাকাপড় নিয়ে রেডি হয়ে নে, ফুলিয়া যাবো।’ কানাইর কথা শুনে আমি জামাকাপড় ব্যাগের ভেতরে ভরে প্রস্তুত হলাম। বাড়িওয়ালার ঘরে গিয়ে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিলাম। কানাইর দু’বোনকে বললাম, ‘এক দেশ থেকে আরেক দেশে এসেছিস, ভালোভাবে চলাফেরা করবি। এমনভাবে চলবি, যাতে অন্য কেহ কোনও খারাপ মন্তব্য না করতে পারে।’ এরমধেই কানাই রেডি হয়ে আমাকে ডাকল! আমি কানাইর সামনে এসে বললাম, ‘আমি রেডি আছি, চল বাইর হই!’
কানাইর ভাড়া বাসা থেকে শিয়ালদা রেলস্টেশন অনেকদূর। এতদূর রিকশা যাবে না, তাই একটা অটোরিকশা রিজার্ভ নিলাম। তবুও শিয়ালদা যেতে বেজে গেল সকাল ১০টা। শিয়ালদা থেকে ফুলিয়া যেতে সময় লাগল, ২ ঘণ্টার মতো। ফুলিয়া হলো পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার একটা থানা এলাকা। ফুলিয়া রেলস্টেশনের একটু পূর্বদিকে গেলেই রতন চক্রবর্তীর বাড়ি। কানাই আমাকে নিয়ে গেল রতনদার বাড়িতে। আসলে রতনদার কোনও বাড়ি নেই! আছে শুধু বাড়ি করার মতো একটুখানি জায়গা। বর্তমানে যেই লোকটা রতনদার জায়গা দেখাশুনা করে তার নাম গৌরাঙ্গ। একসময় এই গৌরাঙ্গ দাদা আমার খুবই কাছের মানুষ ছিলো। আগে বাংলাদেশে থাকতে একই মহল্লায় আমরা বসবাস করতাম। তিনি যে রতনদার জায়গা দেখাশোনা করছে, তা আর আমার জানা ছিল না।
গৌরাঙ্গ দাদা আমাকে দেখেই বলল, ‘কী রে নিতাই কেমন আছিস? কীভাবে এলি। বাসার সবাই কেমন আছে।’ আমি বললাম, ‘হ্যাঁ দাদা, আমি ভালো আছি, আর বাসার সবাই ভালো আছে। এখানে এসেছি কানাইর সাথে। তো আপনি কেমন আছেন? বৌদি কোথায়?’ গৌরাঙ্গদা বললো, সবাই ভালো আছি।’ কথা বলতে বলতে ঘর থেকে পিঁড়ি এনে দিয়ে বলল, ‘বস।’ তখন গৌরাঙ্গদা’র বউ (বৌদি) বাসায় ছিল না। বৌদি গেছে কোনও এক জায়গায় বেড়াতে। এরপর কানাই গৌরাঙ্গ দাদাকে বিস্তারিত খুলে বলল। গৌরাঙ্গ দাদা শুনলেন। কানাইর কথা শুনে গৌরাঙ্গ দাদা বললো, বেশতো, ভালো করেছিস। এবার ওকে রতনের জায়গায় একটা ঘর তৈরি করে দে, ও থাকুক।
কানাই কোনও কথা বলছে না, চুপ করে বসে আছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী হয়েছে রে? আমি তো কিছু বুঝে ওঠতে পারছি না।’ কানাই আমাকে বললো, ‘কিছু একটা তো হয়েছে রে। খেলা দেখাব, রতন না হয় রতনের বউকে।’ আমার আর বুঝতে অসুবিধা হলো না। তারপরেও আমি বললাম, ‘রতনদা’র ঘর কোনটা গৌরাঙ্গ দাদা? রতনদার ঘরে গিয়ে একটু বসি। এখানে থাকি বা না থাকি, রতনদার ঘরটা দেখেই যাই।’ গৌরাঙ্গদা বললো, ‘রতনের ঘর তো তার জমিতে পরে আছে, ঠেলে ওঠাতে হবে। কানাইকে বল ঘরখানা ওঠানোর ব্যবস্থা করতে।’ গৌরাঙ্গদা’র কথা শুনে কানাই বললো, ‘হয়েছে আর ঘর দেখতে হবে না, দেখবো এবার রতনকে।’ আমি কানাইকে বললাম, ‘কানাই তুই এখানে থাকিস, অথচ তুই কিছুই জানিস না! এটা কী বিশ্বাসযোগ্য?’ আমার কথা শুনে কানাই বললো, ‘বিশ্বাস কর আমি জানি না যে, রতন চক্রবর্তীর বাড়ি নেই। যদি জানতাম, তা হলে অন্তত আমি তোকে আমার সাথে আনতাম না।’
কানাইর কথা শুনে আমি বললাম, ‘যা হবার হয়েছে এখন তোর বাসায় চল। আগামীকাল একটু কষ্ট করে দেখবি, কোনও মিলে সিট খালি আছে কি না। যদি এখানে কোনও কাপড়ের মিলে চাকরি না পাই, তা হলে আমি চলে যাবো দিদির বাড়িতে।’ আমার কথা শুনে কানাই কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলো। হয়ত আমার কথায় ওর একটু লজ্জাবোধ হচ্ছিল। লজ্জা তো পাবার কথাই, কারণ ও-ই-তো আমাকে এখানে আনলো। আর রতন চক্রবর্তীর সাথে ও-ই কথা পাকাপাকি করেছিল। এখন আমার কথায় ওর একটু লজ্জা লাগা স্বাভাবিক।
কিছুক্ষণ পর কানাই আমাকে বললো, ‘শুন, কষ্ট করে যখন এখানে এসেছিস, তো একটা কিছু করতেই হবে। দরকার হয় ট্রেনে, বাসে, ট্রামে ফেরি করে বাদাম বিক্রি করবি। একটু কষ্ট আর ধৈর্য ধরে থাকতে পারলেই, এখানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে নিতে পারবি। কানাইর কথা শুনে আমি বললাম, ‘তা পরে দেখা যাবে, এখন অন্তত এখান থেকে চলে যাই।
কানাই বললো, ‘যাব, আগে তোকে নিয়ে ফুলিয়া এলাকাটা একটু দেখাই। এখানে ছোট ছোট অনেক টেক্সটাইল মিল আছে। যদি কপাল ভালো হয়, আর যদি একটা মিলে কাজ হয়ে যায় ক্ষতি কী? তাহলে রতন চক্রবর্তীর আর দরকার হবে না।’ আমি বললাম, ‘চল তাহলে। বেলা অনেক হয়েছে, আবার তো বাসায় ফিরতে হবে।’ আমার কথা শুনে কানাই বললো, ‘আচ্ছা ঠিক আছে চল। এরপর কানাই আর আমি গৌরাঙ্গ দাদার কাছ থেকে বলে-কয়ে বিদায় নিলাম।
আসলাম ফুলিয়া রেলস্টেশন। তখন দুপুর গড়িয়ে বিকাল হবার পালা। ক্ষিদে পেয়েছিল খুব! কানাইকে কিছু না বলার আগেই, কানাই বুঝতে পেরেছে। কানাই আমাকে বললো, ‘দেখ, এটা ভারত। এখানে মানুষ খুবই হিসাব করে চলে। গৌরাঙ্গ দাদা আমাদের খুবই কাছের লোক হয়েও দুপুরের খাবারের কথা কিছু বলল না। আর আমাদের বাংলাদেশ হলে কী হতো? নিজেরা না খেয়েও অতিথিকে খেতে দিতো।’ আমি বললাম, ‘যা হবার হয়েছে, এখন চল একটা হোটেলে যাই। আগে কিছু খেয়ে নেই।’
গেলাম ফুলিয়া রেলস্টেশনের বাইরে! খাবারের কোনও হোটেল নেই। ফুলিয়া হলো মফস্বল এলাকা। এখানে বহিরাগত মানুষের বসবাস কম। হোটেলে কেউ খাবার খেতে আসে না। তাই হোটেলের ব্যবসাও কেউ করে না। অথচ এই ফুলিয়া রেলস্টেশনের একটু পশ্চিমে কোলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গ যাওয়ার মেইন রোড। আছে বাসস্টপ আর অনেক বড় বাজার। তবু একটা খাবারের হোটেল নেই। আছে দুই একটা চা দোকান আর কয়টা মিষ্টির দোকান। হোটেল খুঁজে না পেয়ে একটা চা দোকানে গেলাম। চা দোকান থেকে দুইটা পাউরুটি কিনে গেলাম মিষ্টির দোকানে। মিষ্টির দোকান থেকে দুইজনে চারটে মিষ্টি নিয়ে পাউরুটি দিয়ে খেলাম।
এরপর কানাই আমাকে নিয়ে গেল একটা টেক্সটাইল মিলে। এই কাপড়ের মিলে তৈরি হয় ৬০ কাউন্টের সুতার গ্রে মার্কিন কাপড়। এই কাপড়গুলো ডাইং ও প্রিন্ট করে প্রস্তুত করা হয় শাড়ি। মিলে গিয়ে কানাই কর্তব্যরত সুপারভাইজারের সাথে আমার ব্যাপারে আলাপ করলো। সুপারভাইজার আমাকে একটা চালু তাঁতের সামনে নিয়ে গেলো। সাথে কানাইও আছে। সুপারভাইজার আমাকে বললো, ‘মেশিনটা বন্ধ করুন তো!’ আমি সাথে সাথে মেশিনের হেন্ডেল ধরে চালু মেশিনটা বন্ধ করলাম। মেশিনটা বন্ধ করে পাঁচ মিনিট পর আবার চালু করে দিলাম। মেশিন চলছে। আমার মেশিনে হেন্ডেল ধরা দেখেই সুপারভাইজার বললো, ‘এই তো দেখছি তাঁতের ওস্তাদ। আগে কোথায় কাজ করেছে?’ কানাই বললো, ‘আপনাকে তো আগেই বলেছি, ও বাংলাদেশ থেকে এসেছে। এখন আপনাদের মিলে কি কাজ করা যাবে?’ সুপারভাইজার বললো, ‘বর্তমানে আমাদের এখানে কোনও সিট খালি নেই। সিট খালি হতে আরও মাসেকখানি দেরি হতে পারে।’
আমি সুপারভাইজার বাবুকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনাদের এখানে ‘ব’ গাঁথার কোনও লোক লাগবে কি না?’ সুপারভাইজার বাবু বললো, ‘আমি আপনার কথা বুঝে উঠতে পারছি না যে, ‘ব’ গাঁথা কাকে বলে?’ আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘শানা এবং বয়ার ভেতর দিয়ে সুতা ভরার কাজটাকে আপনারা কী বলেন?’ আমার কথা শুনে সুপারভাইজার বাবু বললো, ‘ওহ! বুঝেছি বুঝেছি, ওটাকে আমরা রেসিং বলি। আর যিনি এই কাজটা করে থাকে, তাকে বলি রেসিংম্যান।’ আমি বললাম, ‘আমার এই কাজটাও জানা আছে। যদি আপনার এখানে এই কাজের লোক না থাকে, তাহলে আমাকে এই কাজটা দিতে পারেন।’
সুপারভাইজার বাবু হেসে বললো, ‘দুঃখিত! এই কাজটা এলাকার একজন লোকে করে। আর আপনি তো এই কাজ এখানে করতে পারবেন না। কেননা, আপনার তো হেলপার নেই। এই কাজ করতে হলে আগে দরকার হেলপার। কিন্তু আপনার তো তা নেই! তাহলে কাজটা করবেন কী করে?’ আমি আরও জিজ্ঞেস করলাম, ‘থাক এই কাজও আমার দরকার নেই! এখন শুনি আপনাদের এখানে তাঁতিদের মজুরি দিয়ে থাকেন কীভাবে?’ সুপারভাইজার বাবু বললো, প্রতি এক গজ কাপড় বুননকারিকে ৬০ পয়সা মজুরি দিয়ে থাকি।’ আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, ‘একজন তাঁতিকে কয়টা করে মেশিন চালাতে দেন?’ সুপারভাইজার বাবু বললো, ‘দুইটার বেশি মেশিন কেউ কি চালাতে পারে? আর পারলেও আমরা দেই না। কারণ, বেশি মেশিন দিলে বুননের সময় কাপড় খারাপ করে ফেলে, তাই।’ আমি সুপারভাইজার বাবুকে বললাম, আমাদের বাংলাদেশে একজন তাঁতি অন্তত ৬ থেকে ৮ টা করে মেশিন চালায়।’
আমার কথা শুনে সুপারভাইজার বাবু মাথায় হাত দিয়ে চেয়ারে বসে পরলো! চেয়ারে বসে বসে আমার দিকে আর কানাইর দিকে শুধু তাকাচ্ছে। এমনভাবে তাকাচ্ছে, যেন সুপারভাইজার বাবু বোবা হয়ে গেছে। সুপারভাইজার বাবুর এই অবস্থা দেখে কানাই বললো, ‘কি স্যার কিছু বলছেন না যে? আমারা তাহলে এবার আসি?’ সুপারভাইজার বাবু বললো, ‘দেখুন, আপনারা দিল্লি চলে যান। অনেক টাকা কামাতে পারবেন। ওখানে অনেক উন্নতমানের কাপড় তৈরির মেশিন আছে। সেসব মেশিন আপনাদের জন্যই দরকার। এখানে কাজ করে আপনাদের কখনোই পোষাবে না। এখানে যারা তাঁত চালায়, তাদের সকলের বাড়িই মিলের আশেপাশে। তাদের কোনরকম বাজার করার টাকা হলেই হলো। সেটা তো আপনাদের বেলায় চলবে না দাদা। আপনাদের চাই ভালো টাকা বেতনের চাকরি।’ সুপারভাইজার বাবুর কথা শুনে আমি বললাম, ‘আচ্ছা ঠিক আছে, দেখি কী করা যায়!’
এরপর মিল থেকে কানাই আর আমি চলে এলাম বাইরে। তখন রাত প্রায় ৮ টার মতো বাজে। কানাই বললো, সর্বনাশ হয়েছে রে। এতো রাত হয়ে গেল, একটু টেরও পেলাম না। চল শিগগির ফুলিয়া রেলস্টেশনে। রাত ৯টায় একটা ট্রেন আছে, সেটা না ধরতে পারলে বিপদই হবে।’ এরপর কানাই আর আমি তাড়াতাড়ি হাঁটতে লাগলাম। আসবো কোলকাতা-টু-শিলিগুড়ি মেইন রোডে। হাইওয়ে পার হয়ে গেলাম ফুলিয়া রেলস্টেশনের সামনে। তখন রাত ৯ টা বাজতে ৩০/৩৫ মিনিট বাকি আছে। আমার খুব ক্ষিদেও পেয়েছে। কিন্তু কানাইকে কিছু বলতেও পারছি না যে, কানাই আমার ক্ষিদে পেয়েছে। আমার অবস্থা দেখে কানাই বুঝতে পেরেছে যে, আমার ভীষণ ক্ষিদে পেয়েছে। কানাই আমাকে বললো, ‘ট্রেন আসতে এখনও সময় আছে, চল কিছু খেয়ে নিই।’ কানাইর কথা শুনে আমি খুবই খুশি হয়ে বললাম, ‘আমিই তোকে বলতাম যে, আমার খুব ক্ষিদে লেগেছে! তার আগেই তুই বলে ফেললি? এখন চল একটা চা দোকানে যাই, ঝটপট কিছু খেয়ে নিই।’
গেলাম একটা চা দোকানে। আবারও নিলাম দুইটা পাউরুটি আর দুই কাপ চা। চা খেতে না খেতেই শোনা যাচ্ছে ট্রেনের হুইসেল। আমি কেবল পাউরুটিটা অর্ধেক খেয়েছিলাম। হুইসেল শোনার পর আর খেতে পারিনি। তাড়াতাড়ি করে চা টা গিলে রুটিটা পকেটে ভরলাম। দোকানদারকে চা-রুটির টাকা দিয়ে দে দৌড়। আমার মতো কানাইরও একইরকম অবস্থা ছিলো! দুইজনেই স্টেশনের দিকে দৌড়াচ্ছি। আসলাম স্টেশনে। কানাই বুকিং-এ গিয়ে শিয়ালদার টিকিট নিল দুইটা। ওঠলাম ট্রেনে। রাত ১১টার সময় পৌঁছলাম শিয়ালদা স্টেশনে। এদিন বাসায় যেতে রাত হয়েছিল প্রায় ১ টা।
চলবে…
খুবই ভালো লাগলো
শুভকমনা থাকলো দাদা।
অসাধারণ লিখেছেন
শুভকামনা থাকলো দাদা।
আহা জীবন !!! এভাবেই কত শত স্মৃতি আমাদের মানসপটে আজীবনই জড়ো হয়ে থাকে। কেমন আছেন মি. নিতাই বাবু। বহুদিন আপনাকে ব্লগে দেখলাম না। সব ভালো তো?
এখন থেকে নিয়মিতই থাকতে পারবো। শুভকামনা রইলো থাকলো দাদা।
সুন্দর সোনালি দিনের কথাগুলো কবি নিতাই দা
শুভকামনা থাকলো দাদা।