হাওয়া- পরিবার

হাওয়া- পরিবার

তিন পুরুষ ও নারী মিলে হাওয়ারা মোট ছ’ জন। ঠান্ডা পশ্চিমা হাওয়া “ঘিগের ঘিগের” ওয়ান্ নামের এক কাকের পাহারায় কাঠের ঘরে বন্দি থাকতো। চন্ডমূর্তী স্বভাবের এই নারী হাওয়াটি মাঝে মাঝে ফাঁকতাল বুঝে পালালে, সঙ্গে সঙ্গে ওয়ান্ তাকে জবরদস্তি ফিরিয়ে আনতো। কিন্তু কালক্রমে কাঠের আবাসটি ক্ষয়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেলে অবাধ্য পশ্চিমা হাওয়া বিশাল ঝড়ে গোটা পৃথিবীতে হালচাল মচিয়ে দিল।

দক্ষিণা হাওয়াবিবি “গুরুনডিলবে” বাস করতো “মুলিয়ান” নামে এক ঈগলের তত্ত্বাবধানে। মুলিয়ান “গুরুনডুডিলবে”র পিঠে চেপে আকাশে সফর করে বিশালাকায় মেঘস্তম্ভের নির্মাণ করতো।

দক্ষিনপূর্ববাতাস”ইয়েরাগে”র আবার তিন বৌ। যখন সে তার বৌদের সঙ্গে প্রেমে লিপ্ত হতো, “বাডথা”, “বিবিল” আর “বাম্বল” গাছেরা ফুলে- ফলে সমৃদ্ধ হয়ে উঠতো। বস্তুত ইয়েরাগে হ’ল বসন্তের প্রতীক।

উত্তর বাতাস “ডোরানডোরান”ও ছিল প্রকৃত প্রেমিক স্বভাবের। তার চুম্বন থেকে প্রস্ফুটিত হয়ে পুষ্প সাজে সেজে উঠতো কুলা, নুনগাহ্ আর কুরাজং গাছেরা। পূর্ববাতাসের নাম ছিল” গিনিয়াহমু”। সেও তার সাধ্যমতো পৃথিবীতে বিভিন্ন গাছে ফুল- ফল উৎপাদন করতো। তিন বাতাসের বৈধ তিন হাওয়া বৌরা এমন চন্ডমূর্তি ছিল যে তারা বৌদের মুখদর্শন করতোনা।

বছরে দুবার বিখ্যাত করোবরি উৎসবের সময় প্রত্যেক স্ত্রী – হাওয়া মুক্তি পেতো, কারন উৎসবে সবার উপস্থিতি ছিল বাধ্যতামূলক। ছাড়া পেয়েই ওই বন্য- উগ্রচণ্ডা হাওয়ারা অপরিসীম ক্রোধে সমস্ত গাছপালা ভেঙ্গে চুরে লণ্ডভণ্ড করে দিত, কারন গাছেরা তাদের স্বামীর কাছ থেকে প্রেম চুরি করে পুষ্পবতী- ফলবতী হয়েছে। এই চন্ডমুন্ডাদের স্বভাবের একদমই বিপরীতে পুরুষবায়ুূূরা ছিল অত্যন্ত ভদ্র- সভ্য। তাদের প্রেমস্পর্শেই পৃথিবী জুড়ে গাছে গাছে কচিপাতা, ফুল,ফল আসে। পৃথিবী মোহময়ী রূপে সেজে উঠতে পারে। রক্ষা পায় প্রাণীকুল।
_________________________________

A.W.REED. “Aboriginal Myths,Legends& Fables” থেকে অনুদিত।

11 thoughts on “হাওয়া- পরিবার

  1. তিন বাতাসের বৈধ তিন হাওয়া বৌরা এমন চন্ডমূর্তি ছিল যে তারা বৌদের মুখদর্শন করতোনা। ____ দারুণ অনুবাদ উপস্থাপনা প্রিয় শব্দ বন্ধু। অভিনন্দন। :)

  2. ধন্যবাদ প্রিয় কবি অনুবাদটি পোষ্ট দেয়ার জন্য।

    আমার জানা মতে, এ ডব্লিউ রিড একজন অস্ট্রেলিয়ান হলেও উনি নিউজিল্যান্ডের অরিজিন। উনার নিজের প্রকাশনা ছিলো এবং উনি নিজেও লিখতেন। উনি বিখ্যাত ছিলেন কাল্পনিক এবং রহস্যময় আদিবাসীদের কালচার সামগ্রী লেখার জন্য।

    শুভেচ্ছা প্রিয় কবি রত্না রশীদ ব্যানার্জীকেhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

    1. একদম ঠিক বলেছেন আপনি। আমি অস্ট্রেলিয়া গিয়ে ওখানকার এ্যবরিজিনিদের নিয়ে পড়াশোনা করার সময় বইটির সংস্পর্শে আসি, ও মুগ্ধ হয়ে অনুবাদে হাত দিই।

      অনেক অনেক সম্মান জানাই।

  3. অনুবাদ খুব ভালো হয়েছে প্রিয় কবি।

    আপনার প্রতিও রইলো আমার বিনম্র শ্রদ্ধা!https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

  4. আপনার ক্ষুরধার মেধা আর বিষয়বস্তুর নির্বাচন সাথে নিজ শব্দ-প্রসূত কথা গুলোন কার না ভাল লাগবে দিদি ভাই। হোক সে অনুবাদ। অপূর্ব। :)

    1. কী যে বলো ! এতো প্রশংসা আমার প্রাপ্য নয়। তোমাদের ভাল লাগলেই আমি কৃতার্থ ।

  5. দক্ষিনপূর্ববাতাস;ইয়েরাগে;র আবার তিন বৌ। যখন সে তার বৌদের সঙ্গে প্রেমে লিপ্ত হতো;বাডথা;বিবিল; ;বাম্বল; গাছেরা ফুলে- ফলে সমৃদ্ধ হয়ে উঠতো। বস্তুত ইয়েরাগে হল বসন্তের প্রতীক।

    লেখনীর দারুণ শক্তি।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।