ভিনসেন্ট ভ্যান গঘের জন্মদিনে আমাদের গভীর শ্রদ্ধা…

আমার ভীষণ প্রিয় শিল্পী তথা, সমকালীন ও আধুনিক চিত্রকলার প্রাণ-পুরুষ ভিনসেন্ট ভ্যান গঘের জন্মদিনে, তাঁর প্রতি রইলো আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।

“ছবি এঁকে কিছু বলতে চাই আমি, আর তাতেই সঙ্গীত যেমন সান্ত্বনা দেয় তেমনি সান্ত্বনা পাবো “ বলেছিলেন ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ।

পৃথিবীর মহান শিল্পীদের একজন, জন্মেছিলেন হল্যান্ডে ১৮৫৩ সালে। সেজান, গঁগা এবং ভ্যান গঘ, স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে ভাস্কর এই তিন শিল্পীই আধুনিক শিল্পের পূর্বসূরী হিসেবে চিহ্নিত। সাতাশ বছর বয়সে শিল্পকর্মে নিবেদিত হয়েছিলেন ভ্যান গঘ। অতীত এবং সমকালীন শিল্প সাহিত্য জগত সম্বন্ধে ভিনসেন্ট এর প্রচুর জ্ঞান ছিলো; নিজের মননে সব কিছুর সম্মিলন ঘটিয়ে শিল্প জগতে এক নতুন পথের সন্ধান দিয়ে গেছেন।

“কখনো কখনো অনির্বচনীয় অনেক কিছু থাকে, সমস্ত প্রকৃতিটা যেন মনে হয় কথা বলতে চায়; এ জিনিসটা সবাই দেখতে পায় না, অনুভব করতে পারেনা। যার চোখ আছে, কান আছে, হৃদয় আছে তার জন্যেই ঈশ্বর এ সৌন্দর্য করে রেখেছেন। এ কারণেই আমার মনে হয় একজন শিল্পী সুখী, সে যা দেখে তার একটুখানিও প্রকাশ করতে পারলে প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে যায়।
আমি আমার কাজের মধ্যে এমন কিছু খুঁজে পেয়েছি যার ভেতর আমার হৃদয় ও আত্মা সম্পূর্ণ ভাবে নিবেদিত থাকতে পারি এবং যা আমার বেঁচে থাকা অর্থময় করে, অনুপ্রাণিত করে।“
(ছোট ভাই ও জীবনের একমাত্র সহযোগী থিও-কে লেখা চিঠি-তে)।

হল্যান্ডের গ্রোট জুনডার্টে ১৮৫৩ সালে আজকের এই দিনে, ৩০ মার্চ জন্মেছিলেন পোস্ট ইম্প্রেশনিস্ট চিত্রকর ভিনসেন্ট উইলিয়াম ভ্যান গঘ। পাদ্রী থিওডর ভ্যান গঘ ও তার পত্নী কর্নেলিয়ার দ্বিতীয় সন্তান ছিলেন তিনি। ছোট বেলায় একা একা ঘুরে বেড়ানো আর নদীর তীরে বসে থাকতেন। ১২-১৩ বছর বয়সে মূলত পেন্সিলে আঁকতে শুরু করেন গঘ। মাত্র ১৬ বছর বয়সে প্যারিসের বিখ্যাত চিত্র ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান গোপিল অ্যান্ড কোম্পানিতে যোগ দিয়ে ৪ বছর চাকরি করেন। ১৮৭৬ সালে একটি স্কুলে অবৈতনিক সহকারী পদ নিয়ে ইংল্যান্ডে আসেন তিনি। শহরের দরিদ্র ছাত্রদের কাছ থেকে বকেয়া আদায় করতে না পারায় চাকুরীচ্যুত হন কয়েকমাস পরই। পিতার মতো পাদ্রী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে লন্ডন ছেড়ে যান হল্যান্ডে। এক বছরের মাথায় পাদ্রী হবার পড়াশুনাও ছাড়েন। ২৫ বছর বয়সে বেলজিয়ামের এক কয়লা খনিতে পাদ্রী হিসেবে যোগ দেন গঘ। গরীব শ্রমিকদের প্রতি তাঁর আবেগ কর্তৃপক্ষের পছন্দ না হওয়ায় আবারো চাকরি হারান। কিন্তু চাকরিহারা অবস্থাতেই এখানকার শ্রমিকদের সঙ্গী হয়ে দু’বছর কাটান অবর্ণনীয় কষ্টে। কিন্তু এই সময়ই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শিল্পী হবার। আঁকতে শুরু করেন খনি শ্রমিকদের ছবি।

ভ্যান গঘ সম্বন্ধে বলা হয় …His paintings are characterized by thick brush strokes, brilliant colors, and jagged lines, through which Van Gogh expressed his emotional response to his subjects rather than providing an accurate description of them. As a result he became a leader in the development of expressionism in painting.

বেলজিয়ামে গিয়ে এন্টর্প একাডেমিতে ভর্তি হন পদ্ধতিগতভাবে ছবি আঁকার নিয়ম-কানুন শিখতে। কিন্তু নিয়মে বেঁধে থাকা তাঁর পক্ষে ছিল অসহনীয়। ফলে ফার্স্ট টার্ম শেষ হওয়ার আগেই আর্ট একাডেমি ছাড়লেন।

ভ্যান গঘ তার জন্মের সময়ই মস্তিষ্কে আঘাত পেয়েছিলেন। সেই সঙ্গে ছিলো মৃগী রোগ… এর সঙ্গে যুক্ত হয় তীব্র মানসিক অস্থিরতা… ফলে উম্মাদ-প্রায় দশা হয় তার… সেন্ট রেমি-র এক মানসিক চিকিৎসা-কেন্দ্রে ভর্তি-ও হন এ-জন্য। কিন্তু তবু থেমে থাকে-নি শিল্প-চর্চা… মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে বসে-ও ২০০ ক্যানভাস আঁকেন!!!

প্যারিসে এসে ফানার্ড করমনের স্টুডিওতে কাজ করতে শুরু করেন। কোন এক ঘটনায় জড়িয়ে পরায় নিজেই তার কান কেটে উপহার পাঠান। এ ঘটনার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন গঘ। রক্তাল্পতা এবং হ্যালুসিনেসনে ভূগতে থাকেন। আর্লেসের হাসপাতালে দু’সপ্তাহ চিকিৎসা শেষে ঘরে ফিরে দিনরাত অবিরাম ছবি আঁকতে থাকেন অদ্ভূত উন্মাদের মতো। এক পর্যায়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত গঘকে ‘পাগল’ আখ্যা দিয়ে আর্লেস থেকে বিতাড়িত করে নগর কর্তৃপক্ষ। গঘ নিজেই গিয়ে ভর্তি হন সেন্ট রেমি’র মানসিক চিকিৎসাকেন্দ্রে। সেখানে গিয়ে সুস্থ না হয়ে বরং বিষন্নতায় ভুগে ভুগে পূর্ণ পাগলই হয়ে যান গঘ। এতো অসুস্থতার মধ্যেও বন্ধ করেননি ছবি আঁকা। মানসিক চিকিৎসাকেন্দ্রে বসেও ২০০ ক্যানভাস ছবি আঁকেন। ছোট ভাই থিও তাঁকে নিয়ে এলেন প্যারিসে। কিন্তু কিছুদিন পরই গঘ চলে গেলেন অভঁরো। ১৮৯০ সালের ২৭ জুলাই রাতে তাঁর ভীষণ প্রিয় সেই হলুদ রঙের ক্ষেতে নিজের বুকে গুলি করে শুয়ে থাকলেন আর ঐ অবস্থাতেও খালি পাইপ টেনে গেলেন। ধীরে ধীরে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন পৃথিবীর দুঃখীতম এই চিত্রকর।

সেজান, গঁগা আর গঘ… স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল এই তিন শিল্পিই আধুনিক চিত্রশিল্পের পূর্বসূরী হিসেবে চিহ্নিত। সাতাশ বছর বয়সে শিল্পকর্মে নিবেদিত হয়েছিলেন ভ্যান গঘ শিল্পী জীবন পেয়েছিলেন মাত্র ১০ বছরের। অতীত এবং সমকালীন শিল্প ও সাহিত্য জগত সম্বন্ধে প্রচুর জ্ঞান ছিলো তার। নিজের মননের সাথে এ-সব কিছুর সম্মিলন ঘটিয়ে শিল্প জগতে এক নতুন পথের সন্ধান দিয়ে গেছেন। বন্ধুহীন, নিঃস্ব আর দূর্ব্যবহারের মধ্য দিয়ে জীবন কাটালে-ও সমকালীন চিত্রকলায় তাকেই মনে করা হয় সবচেয়ে সার্থক শিল্পী হিসেবে। বর্তমান বিশ্বের সব-চেয়ে দামী ১০ টি চিত্রকর্মের মধ্যে একক-ভাবে তাঁর-ই অঙ্কিত রয়েছে ৪ টি!!!

আমার নড়বড়ে আঁকায় ভ্যান গঘ…
ভিনসেন্ট ভ্যান গঘের জন্মদিনে আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।

15 thoughts on “ভিনসেন্ট ভ্যান গঘের জন্মদিনে আমাদের গভীর শ্রদ্ধা…

  1. ভিনসেন্ট ভ্যান গঘের জন্মদিনে আমাদেরও গভীর শ্রদ্ধা।
    অসাধারণ আপনার চিত্রকর্ম। আপনি একজন আঁকিয়ে এই গুণটিও জানা হলো তবে। :)

    1. আপনার দেয়া লিঙ্কে বেশ কিছু সংগ্রহ দেখলাম। :)

      1. আসসালামু আলাইকুম @ দীলখুশ মিঞা।

        আশা করি ভালা আছেন। পর সমাচার এই যে আপনার হাতে একটা চুম্মা খাইতে চাই যে আপনি চোর ধরিয়া দিয়াছেন। অন্যের আকা ছবি ফটোশপেরমাধ্যমে কেবল মাত্র ব্যাকগ্রাউন্ড পরিবর্তন করিয়া নিজের নামে চালিয়ে দিচ্ছিল।

        আপনার আরো মেধা প্রয়োগের জায়গা তৈরি হোক। আমিন। আল্লাহ হাফেজ।

    2. ধন্যবাদ বন্ধু ..এটা ভ্যানগঘের সেলফ প্রোট্রেইট দেখে করা.. এই একটা কাজই মন দিয়ে শিখেছি

  2. বলা হয়ে থাকে চিত্রশিল্পীদের মধ্যে সবচেয়ে হতভাগ্য চিত্রশিল্পী হলেন ভিনসেন্ট ভ্যান গগ। তিনি তার জীবন কালে তার আঁকা একটি ছবিও বিক্রি করে যেতে পারেন নি। তিনি যখন তীব্র অর্থ কষ্টে পড়েছিলেন তখন এক জমিদার কন্যা তার কানের প্রশংসা করেছিলেন। মানসিক ভাবেও তিনি সে সময় ভেঙ্গে পড়েছিলেন। তিনি তার কান কেটে সেই জমিদার কন্যাকে উপহার হিসাবে পাঠিয়েছিলেন। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে দামি চিত্রকর্ম গুলোর মাঝে ভিনসেন্ট ভ্যান গগের কাজ গুলোকে বিবেচনা করা হয়। রুক্ষ সৌন্দর্যের এবং আবেগময় সততার প্রকাশ, সপ্রতিভ রং এর ব্যবহারের কারণে তাঁর কাজ বিখ্যাত ছিল যা বিংশ শতাব্দীর শিল্পকলায় সুদূরপ্রসারি প্রভাব রেখেছিলো। তিনি পেইন্টিংএ প্রথম জল রংয়ের সার্থক ব্যবহার করেন। তার সব শিল্পকর্ম জল রংএ করা। দীর্ঘ বিষন্নতা ও মানসিক অসুস্থতার ফলে তিনি মাত্র ৩৭ বছর বয়সে আত্নহত্যা করেন।

    আপনার আকা ছবিটি বোধ হয় সেই কান কাটা ছবি। ছবিটি দেখে কানে ভ্যান্ডেজ করা মনে হচ্ছে।

    https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_PC Hack.gif.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_PC Hack.gif.gif

    1. বহুদিনের লালিত এক স্বপ্নকে বাস্তবায়নের কথা ভাবলেন ভ্যান গগ। তিনি বহুদিন ধরেই ভাবছিলেন, শিল্পীদের একটা নিজস্ব কলোনি হবে, যেখানে শিল্পীরা একসাথে থাকবে, গল্প করবে, ছবি আঁকবে..। মনের মতো হলুদ বাড়ি পেয়ে সে স্বপ্ন পুরণে নজর দিলেন ভ্যান গগ। প্রথমেই তিনি আমšত্রণ জানালেন পল গগ্যাঁকে। তার ধারণা ছিলো, গগ্যাঁ এলে তার দেখাদেখি অন্য শিল্পীরাও আসতে শুরু করবেন। কিন্তু গগ্যাঁ আসতে চাইলেন না। অবশেষে থিও তাকে যাতায়তের খরচ দেবেন বলায় গগ্যাঁ আসতে রাজী হলেন।

      ১৮৮৮ সালের অক্টোবরে গগ্যাঁ আর্লেসে এলেন। কিন্তু আর্লেসে পা দিয়েই বিরক্ত হলেন গঁগ্যা। আর্লেস তো তার পছন্দ হলোই না, সেইসঙ্গে পছন্দ হলো না ভিনসেন্টের ‘হলুদ বাড়ি’ এবং স্বয়ং ভিনসেন্ট ভ্যান গগকেও। ভ্যান গগও ক্রমশ অপছন্দ করতে লাগলেন গগ্যাঁকে। ভ্যান গগের পছন্দ করা এক পতিতা-মডেলের দিকে নজর পড়লো গঁগ্যা। সেই পতিতাও গঁগ্যাকে প্রশ্রয় দিতে লাগলেন। ক্রমশ ভ্যান গঁগ ও গঁগ্যার বন্ধুত্ব তিক্ততায় পরিণত হলো। ভ্যান গগ তার ধৈর্যের বাঁধ হারিয়ে ফেললেন। ভাই থিওকে চিঠিতে অনুরোধ করলেন, গঁগ্যাকে এখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সে রাতেই [১৮৮৮ সালে ক্রিসমাসের রাত] ভ্যান গগ একটা মদের গ্লাস ছুঁড়ে মারলেন গঁগ্যার দিকে। অল্পের জন্যে বেঁচে গেলেন গঁগ্যা।
      ভ্যান গগ থামলেন না। ক্ষুর হাতে নিয়ে বন্ধুকে তাড়া করলেন। গঁগ্যা সে রাতে একটা হোটেলে ঠাঁই নিলেন এবং ভ্যান গগকে শান্ত হওয়ার সুযোগ দিলেন। ভ্যান গগ শান্ত হলেন না। হাতের ক্ষুরটি দিয়ে নিজের ডান লতির কানটি কেটে ফেললেন ভ্যান গগ। কাটা কানটি সেই পতিতার কাছে ক্রিসমাসের উপহার হিসেবে পাঠিয়ে দিলেন, কারণ সে একবার ভ্যান গগকে উপহাস করে তার কানদুটো সুন্দর বলেছিলো।

  3. ভাগ্যিস ভ্যান গঘের কানের প্রসংসা করেছিলেন, যদি তাঁর নাকের প্রসংসা করতেন তবে আরও বড় বিপদ হয়ে যেত।
    তবুও ভ্যান গঘের জন্মদিনে শ্রদ্ধা থাকল।

    1. এইসব মহান শিল্পীদের নিয়ে মজা না করাই ভালো

  4. ভিনসেন্ট ভ্যান গঘের জন্মদিনে আমাদেরও গভীর শ্রদ্ধা।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।