ট্রিপটা নিয়ে অনেকদিন ধরেই জল্পনা-কল্পনা হচ্ছিল, যাবো কি যাবো না সে দোলায় দুলতে দুলতে ঢাকা থেকে আমরা নয়জন বের হয়ে গেলাম ক্যাম্পিং এর উদ্দেশ্যে, বারোজন যাবার কথা থাকলেও অনাকাঙ্খিত কারনে তিনজন আমাদের সাথে আসতে পারেনি। রাতের বাসে ঘুমঘুম আরামেই পৌছে গেছি চট্টগ্রাম, ঠিক ভোরে ঠান্ডা হাওয়ায় চোখ মেলেই দেখলাম কর্ণফুলী ব্রীজ থেকে নদীটিকে, মুহুর্তেই মন চনমনে হয়ে গেল।
কক্সবাজার থেকে চল্লিশ কিলোমিটার ভেতরে একটা জায়গায় নেমে গেলাম আমরা। মাঝপথে নেমে যাওয়ায় দু একজন অবাক হয়ে জিজ্ঞাসাই করে ফেললেন এখানে নামবেন আপনারা!
বাস থেকে নেমে কিছুদূর এগিয়েই আমরা আমাদের অস্থায়ী বিশ্রামের জায়গায় পৌছে গেলাম, কিছুটা উপরে উঠেই দেখতে পেলাম পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য কিছু ট্রি এক্টিভিটিস তৈরি করা হয়েছে। কিছুটা বিশ্রামের পরই বুঝতে পারলাম আমরা একটা ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছি! কারন আমরাই প্রথম দল যারা এখানে ক্যাম্পিং করবো। উঠে গেলাম ট্রি এক্টিভিটিস উপভোগের জন্য।
একে একে আমরা সবাই এক ভিন্ন মাত্রার অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলাম, ভালোই লাগল, নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ভাল ছিল, সেখানকার মানুষজনও বেশ ভাল মনে হল, আমার জন্য তারা তাদের গাছের কাঁঠাল, লিচু পাঠাল, আমরা তাদের আতিথেয়তা দেখে যারপরনাই মুগ্ধ হলাম। দুপুরে বের হলাম আশেপাশের জায়গা দেখতে যাতে আমরা ভাল একটি জায়গায় আমাদের ক্যাম্প স্থাপন করতে পারি।
চারপাশের শতবর্ষী গাছগুলো যেন আমাদের দেখে আনন্দিত, আর আমাদের কথা নাইবা বললাম।
মুগ্ধ হয়ে চারপাশ দেখছিলাম আমরা।
দুপুরের খাবারের পর আমাদের মধ্যে থেকে তিনজনকে ক্যাম্পে রেখে বাকিরা বের হলাম ট্রেইল ধরে হাঁটতে, ঝোপঝাড় বনবাদাড় হাঁটছি তো হাঁটছি, এ যেন অদ্ভুত নেশা।
সাথে একজন গাইড থাকাতে বেশ ভাল হয়েছে নয়ত তিনঘন্টার পথ আমাদের ন ঘন্টায় শেষ হতো কিনা কে জানে।
অনেক পরে কিছু বাড়িঘরের দেখা মিলল। সন্ধ্যায় ক্যাম্পে ফিরে এলাম।
ক্যাম্পফায়ারের সাথে চলল বারবিকিউ, গান, আনন্দ উচ্ছাস, কথোপকথন। সব মিলিয়ে একটা মোহময় আবেশ।
দিনে প্রায় তিনঘন্টা ট্রেইল ধরে হাটার সময় আমরা বুনো হাতি দেখতে পাইনি, কিছু হাতি দারা আক্রান্ত পরিত্যাক্ত বাড়িঘর দেখেছি। যাহোক আড্ডা চলছিল, রাত প্রায় দুইটা কিংবা আড়াইটা, তিনজন তাবুর ভেতরে আর বাকিরা বাইরে আড্ডা দিচ্ছিলাম। চলছিল হাতি নিয়ে হাসাহাসি, হঠাৎ মটমট শব্দে আমরা চমকে উঠলাম, আমাদের পাশ দিয়ে চলে গেল হাতির পাল, আমরা মোটামুটি ভয়ই পেলাম। হঠাৎ দুটো ফাঁকা গুলির আওয়াজ শুনলাম, হাতিরা কোথায় যেন মিলিয়ে গেল, পরে জানতে পারলাম আমাদের নিরাপত্তার জন্য আগে থেকেই কয়েকজন নিরাপত্তারক্ষী সেখানে ছিলেন, রাতটা কিভাবে পার হয়ে গেল বুঝতেই পারিনি, সকালে বন বিভাগের কর্মকর্তারা এলেন সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য। কুশল বিনিময়ের পর সব গুছিয়ে আমরা রওনা হয়ে গেলাম কক্সবাজারের উদ্যেশ্যে।
কক্সবাজারে হোটেলে পৌছে কিছুক্ষণ সুইমিং পুলে দাঁড়িয়ে দূর থেকে দেখলাম পাহাড় ও সমুদ্র, মনটা অত্যাধিক শান্ত হয়ে গেল। আকাশ হঠাৎ কাল হয়ে গেল, সমুদ্রের রুপটাই যেন বদলে গেল, আমরাও কাছ থেকে সমুদ্রের এমন বিরল রুপ দেখার লোভে বিচে নেমে ধুলোর ঝড়ের মুখোমুখি হলাম।
বৃষ্টিতে ভিজলাম, আস্তে আস্তে সমুদ্র শান্ত হয়ে গেল।
অবাক হয়ে সমুদ্রের সৌন্দর্য দেখলাম।
গোধূলি বেলায় শান্ত সমুদ্রের পাড়ে বসে উপভোগ করলাম স্মরণীয় কিছু সময়।
সন্ধায়, গেলাম জীবন্ত মাছ দেখতে।
তারপর রাতে দশটার দিকে আমরা প্রবল আত্মতৃপ্তি নিয়ে ঢাকার উদ্যেশ্যে রওনা হয়ে গেলাম। হলফ করে বলতে পারি এটা সত্যিই আমার জীবনের একটা না ভোলার মতন ট্রিপ ছিল।
অদ্ভুত এবং নয়নাভিরাম সব ছবি আর বর্ণনায় মুগ্ধ হলাম। মনে হলো আপনাদের সাথে আমিও ছিলাম। অনেকদিন ভ্রমণ পোস্ট পড়িনি। তৃপ্ত হলাম। ধন্যবাদ মি. নিশাদ।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। গুছিয়ে লিখতে পারিনি।
যথেষ্ঠ হয়েছে মি. একজন নিশাদ।
ভ্রমণের পোস্ট পেলে আমার আর কিছু লাগে না। বুঁদ হয়ে পড়ি। খুব ভাল হয়েছে।
কৃতজ্ঞতা জানুন, আপনাদের ভাললাগাতেই প্রাপ্তি।
দারুন উপভোগ করলাম সম্মানিত লেখক।
ধন্যবাদ জানুন প্রিয় সাইদুর রহমান ভাই
নাইস। চমৎকার ডকুমেন্টেশন।
ধন্যবাদ মাহবুব আলী ভাই
আপনার সঙ্গে অপূর্ব এক অজানা জায়গায় বেড়িয়ে এলাম। মনোগ্রাহী ভ্রমণ কলম।অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
একদিন স্ব শরীরে যাবেন নিশ্চই।
চলছিল হাতি নিয়ে হাসাহাসি, হঠাৎ মটমট শব্দে আমরা চমকে উঠলাম, আমাদের পাশ দিয়ে চলে গেল হাতির পাল, আমরা মোটামুটি ভয়ই পেলাম…/এই জায়গায় এসে আমিও একটু ভয় পেলাম।
চমতকার ভ্রমন-কাহিনী্র প্রকাশ
আসলে ভয় পাওয়ার মতই ছিল ব্যাপারটা।
* অনেক সুন্দর…
আপনাকে ধন্যবাদ