পরের রবিবারেও যথারীতি শুরু হল ছড়াদাদুর পাঠশালা। আজ একজন নতুন ছাত্র ভর্তি হয়েছে। মামুন মালিতা।
ছড়াদাদু বললেন- তাহলে ছড়ার কি কি বৈশিষ্ট্য থাকে সে বিষয়ে একটু বলি-
ওরা একসাথেই বলে ওঠে- হ্যাঁ, বলুন।
দাদু গলাটা একটু পরিস্কার করে নিয়ে শুরু করেন-
আধুনিক ছড়া’র কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন ধরো-
প্রথমতঃ ছড়ায় যুক্তিসঙ্গত কোনো বিশেষ ভাব বা ভাবের ধারাবাহিকতা থাকে না।
দ্বিতীয়তঃ ছড়া ধ্বনি প্রধান, সুরাশ্রয়ী এবং নিটোল রস ও চিত্রাত্মক হলেও তত্ত্ব বা উপদেশ সরাসরি থাকেনা। একটি তীর্যকভাবে সেটা ফুটে ওঠে মাত্র।
তৃতীয়তঃ ছড়ার ছন্দ প্রধানতম শ্বাসাঘাত প্রধান স্বরবৃত্তেই হয়ে থাকে। তবে মাত্রাবৃত্তেও লেখা যেতে পারে।
চতূর্থতঃ ছড়া মেদহীন দৃঢ় সংক্ষিপ্ত এবং সহজ সরল। ভাষা লঘু আর চটুলতাময় স্নিগ্ধ সরসতায় ভরা।
এছাড়া ছড়া সর্বদাই আবৃত্তিযোগ্য।
চারপাশে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ঘটা অসংগতিগুলোর ব্যঙ্গ বিদ্রুপ কৌতুক বা কটাক্ষের মাধ্যমে উদ্ভট এবং নাটকীয় উপস্থাপিত ছড়ায়।
আসলে অর্থ নয় সুরময়ী শব্দই হল ছড়ার প্রাণ।
দাদু একটু থামলেন।
মামুন কাঁচুমাচু করে বলে -ছড়াদাদু আমার একটা প্রশ্ন আছে।
– বলে ফেল। তোমাদের সব প্রশ্নের উত্তর দিতেই তো এই পাঠশালা। অবশ্য মনে রেখো আলোচনার সব কথাই কিন্তু আমার ছড়াভাবনাজাত। এযাবৎ ছড়া লিখে লিখে যেটুকু বুঝেছি, তাইই তোমাদের জানাচ্ছি মাত্র।
মামুন বলে – আচ্ছা, ছড়া আর ছোটদের কবিতার মুল পার্থক্যটা কোথায়? এটা আমার বড্ড গুলিয়ে যায়।
-ছড়া আর ছোটদের কবিতার মধ্যে প্রভেদ হল- ছড়ার বিষয়বস্তু উদ্ভট, অসঙ্গত আর শিশু কবিতা বা ছোটদের কবিতার বিষয়বস্তু সাধারণত সুসঙ্গত হয়ে থাকে।
শিশু-কবিতায় বর্ণনা প্রাধান্য পায় বলে আকার অনেকসময় ছড়ার থেকেও দীর্ঘ হয়ে যায়।
ছড়া প্রধানত স্বরবৃত্তে লেখা হয় কিন্তু ছোটদের কবিতা যে কোনো ছন্দে লেখা হয়ে থাকে।
ছড়ার পরিণতি আকস্মিক। অন্যদিকে শিশু-কবিতার পরিণতি সুষ্ঠু ও পরিকল্পিত।
অনিক বলে – এবার তাহলে ছড়ার প্রকারভেদ সম্পর্কে বলুন ছড়াদাদু।
-একদম ঠিক বলেছ তুমি। ছড়া দু ‘ রকমের। লোকছড়া আর আধুনিক ছড়া।
এই লোকছড়া বা লৌকিক ছড়ার রচয়িতার নাম জানা যায় না। সময় এবং মেধার বিবর্তনের ভেতর দিয়ে এ’ছড়া আজও মানুষের মুখে মুখে ঘুরে চলেছে। যেমন- ছেলেভুলানো ছড়া, ঘুমপাড়ানি ছড়া এইসব।
আর কোনো লেখকের লেখা ছড়াই হল আধুনিক বা সাহিত্যিক ছড়া। উপযোগিতার বিচারে এছড়াকে দুভাগে ভাগ করা যায়- ছোটদের ছড়া ও বড়দের ছড়া।
আবার অর্থ ও ভাবগত দিক দিয়ে আধুনিক ছড়াকে নানাভাগে ভাগ করা যায়। যেমন – ব্যঙ্গাত্মক ছড়া, রাজনৈতিক ছড়া, সমকালীন ছড়া, ভূতের ছড়া, শিশুতোষ ছড়া, পুজোর ছড়া, বিজ্ঞানের ছড়া, আজগুবি ছড়া, ইত্যাদি ইত্যাদি।
আবার আঙ্গিকগত ভাবে লিমেরিক ছড়া, ষটপদী ছড়া, ছড়াক্কা চতুষ্পদী ছড়া প্রভৃতিও হতে পারে।
দাদু একটু ঢোক গিলে বললেন – এছাড়া রয়েছে আবোলতাবোল বা ননসেন্স ছড়া।
দীপেন বলে – সুকুমার রায় তো বাংলায় এই ননসেন্স ছড়া লিখেছেন।
– হ্যাঁ, ঠিকই বলেছ।
অরণি বলে – ছড়াদাদু, ছড়ার বিষয়-আশয় সম্বন্ধে এবার একটু বলুন।
দাদু বলেন- চারপাশের সবকিছুই ছড়ার বিষয় হতে পারে। সেটা কতটা ছড়া হয়ে উঠবে সেটা নির্ভর করে যিনি লিখবেন তার প্রাজ্ঞতার উপর।ব্যক্তি সামাজ প্রকৃতি বিজ্ঞান ধর্ম রাজনীতি মন সবকিছুর মধ্যেই ছড়ার বিষয় লুকিয়ে রয়েছে। ছড়াকারকে সেটা সুচারুরূপে প্রকাশ করতে পারলেই হল। মানবমনের আনন্দ, মজা, ক্ষোভ, কষ্ট বা অন্য কোন তীব্র অনুভূতি সবই ছড়ার বিষয়।
আদৃতা উশখুশ করছিল। দাদু বুঝতে পেরে বলেন – সন্ধে কিন্তু হয় হয়। আজকে পাঠশালা বন্ধ করলে বোধহয় ভাল হয়।
আদৃতা বলে – হ্যাঁ। আগামি রবিবার আবার হবে।
অনিক বলে – ছড়াদাদু, এরপর কোন বিষয়ে পাঠ দিতে চান?
-ছন্দ ও অলঙ্কার। ( চলবে)
'ছড়া আর ছোটদের কবিতার মধ্যে প্রভেদ হল- ছড়ার বিষয়বস্তু উদ্ভট, অসঙ্গত আর শিশু কবিতা বা ছোটদের কবিতার বিষয়বস্তু সাধারণত সুসঙ্গত হয়ে থাকে।
শিশু-কবিতায় বর্ণনা প্রাধান্য পায় বলে আকার অনেকসময় ছড়ার থেকেও দীর্ঘ হয়ে যায়।
ছড়া প্রধানত স্বরবৃত্তে লেখা হয় কিন্তু ছোটদের কবিতা যে কোনো ছন্দে লেখা হয়ে থাকে। ছড়ার পরিণতি আকস্মিক। অন্যদিকে শিশু-কবিতার পরিণতি সুষ্ঠু ও পরিকল্পিত।'
__ মানুষের জানার শেষ নেই। ছড়াদাদু'র পাঠশালায় শিক্ষণীয় উপকরণ পেলাম।
ধন্যবাদ দাদা
শুভ কামনা রইল দাদা———–
ধন্যবাদ
ছড়াদাদুর পাঠশালা-১ এ বলেছিলাম, দীপেন, আদৃতা আর অরুণিমাদের সাথে আরও একজন আছে।
দুটো ক্লাস সে মনযোগের সাথে শুনেছে এবং যেটার জন্য সে অপেক্ষা করছিলো তার কিছুটা ছড়াদাদুর পাঠশালা-৩ এ পেয়ে এ বিষয়ে ছড়াদাদুকে জিজ্ঞেস না করে জিজ্ঞেস করেছে দীপেনকে।
দীপেন উত্তর দিয়েছে ছড়াদাদু্র কাছে জানতে চাও নইলে আরও অপেক্ষা করো।
সে অপেক্ষা করছে আর ভাবছে মূলতঃ স্বরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত এবং অক্ষরবৃত্ত এর মধ্যে পার্থক্য কি?
ছড়াদাদু কোন ক্লাসে বলে তার জন্য অপেক্ষা করাই বরং ভালো।
এরকম প্রশ্ন তো ছড়াদাদু প্রত্যাশা করে। তবে এবিষয়ে যাবার আগে ছন্দগুলোর বর্নণা দিতে হবে যে। তার তিন ছন্দের ব্যবধান।
ধন্যবাদ
পাঠশালায় আজও কিছু শেখা হলো।
ধন্যবাদ দিদিভাই
আজকেও ক্লাস করলাম শংকর দা।
ধন্য হলাম সৌমিত্রদা
* কথায় কথায় ছড়ার আদ্যপ্রান্ত ফুটে উঠল …
শুভ কামনা সবসময়।
ধন্যবাদ