ট্যাগ আর্কাইভঃ অকবিতা

ক্যামোফ্লাজ

নিজেকে ভস্ম করার আগে
আত্মাকে দিও ছুটি
আত্মায় যে আছে তার যেনো না লাগে আঁচ।

যে হারিয়ে যাবে
তাকে হারাতে দাও
তার পালকে লেগে আছে পিছুটানের অভিশাপ।

গোপন ষড়যন্ত্রের মত
নিজের ভেতর গড়ে উঠছে যে প্রাচীর
তার ইটে ইটে এইমাত্র লিখে এলাম-
প্রজাপতি পাখার কারুকাজ বস্তুত ক্যামোফ্লাজ।

#অকবিতা

সহযাত্রী

নাম তার জানিনা
একই বাসে আসি
সকাল বেলা আমার অফিস নয়টায়, তারো
আমি ভাবি, আহা! আমাদের মাঝে কত মিল

সে বাসস্টপে আসে ঠিক আটটায় কিংবা আরো আগে
আর আমি ঘুম থেকেই উঠতাম আটটায়
সময়ের সাথে মেয়েদের একটা বিপরীত
সম্পর্ক থাকলেও এইখানে তার ব্যাতিক্রম

এখন আমিও উঠে যাই সাতটায়
আটটার পাঁচ মিনিট আগেই টিকিট কাটি
টিকেট কাটতে না কাটতেই
তার টিকেটের অর্ডার পরে।

সাগ্রহে জিজ্ঞেস করি কেমন আছেন
তার মুচকি হাসির জন্য আমার
সারা রাজ্যের সমান সকাল বেলাকার ঘুম
বিক্রি করে দিয়েছি

টেবিলে ফাইলের স্তুপ শেষ হয় না
আমি তবু ঠিক ছয়টায় বের হয়ে যাই
উপরে নিচে সবাই ভাবে
ব্যাপার খানা কি

এই ভাবে সে আমার সহ যাত্রিনি
আস্তে আস্তে পার্শ্ববর্তিনী
মনে মনে স্বপ্নের জাল বুনি
রাতে ঘুম আসে না
সকালে সাতটাই উঠি

টুকটাক কথা হয়
রাজনীতি বাজার দর
ভারত পাকিস্তানের ক্রিকেটের খবর

আমার স্বপনের জাল বড় হতে
বুকের মোচড়ানি বেড়ে যায়
খাবারে অরুচি ধরেছে
চোখের নিচে কালি।

আমার গায়ের গন্ধে টের পেয়েছিল বোধহয়
বললে স্মোক করেন?
বললাম আজই ছেড়ে দেব
মনে ভাবি, শুধু সিগারেট কেন
আমার জন্ম জন্মান্তরের সব ছেড়ে দেব

কিন্তু এইভাবে তো আর চলে না
কত কথা হয়
আসল কথা বলতে গেলে
আমার গলার জল শুকিয়ে যায়

যা থাকে কপালে-
বলতেই হবে
চলুন যাই কোন রেস্তোরাঁয়
কত কাজেই তো লেট হয়
আজকে বুঝি আমার জন্য
এইটুকু হতে পারে না
জানা সব কবিতা সব গান
মাথার মধ্যে ঘুর ঘুর করে

আজ তার দেখা নাই
কাল তার দেখা নাই
পরদিন দেখা নাই

আর কোন দিন তার দেখা পাই নাই
–সহযাত্রী
–আন্‌ওয়ার এম হুসাইন

প্রিয় ব্লগার, বইমেলা ২০২১ উপলক্ষ্যে আসছে আমার গল্পগ্রন্থ ‘প্রত্যুষের গল্প’ প্রকাশিত হচ্ছে পেন্সিল পাবলিকেশন্স থেকে।

আমরা সবাই কবি আমাদের এই নেটের রাজত্বে …

না কেউ কেউ কবি নয়! সকলেই কবি! বিশেষত যদি বাঙালি হন, আর লগইন করেন ফেসবুকে! তবে স্ট্যাটাসে কীপ্যাড ওপেন করলেই কাব্যসরস্বতী আপনার অধীনস্ত! অক্ষর জুড়ে অক্ষরবৃত্ত, স্বরবৃত্ত, দলবৃত্ত তছনছ হতে পারে! ধর্ষিত হতে পারে ছন্দ অনুপ্রাস কাব্যমাত্রা! কিন্তু কবিতাদেবীর শরীরের বিভঙ্গে শব্দযোজনা করলেই আপনি কবি! সম্পাদকের কাঁচি নেই! প্রকাশের জন্য অপেক্ষা নেই! বন্ধুবৃত্ত যত জোরালো তত লাইক! কমেন্টের হুল্লোর আছড়ে পড়বে আপনার পোস্টের মার্চপাস্টে, ট্যাগের মিসাইলে অধিকৃত করতে পারবেন যত বেশি বন্ধু দেওয়াল! শেয়ার বাটনে সৌরভ ছড়াবে আপনার কবিখ্যাতির নতুন দিগন্তে! শুধু একটা লগইনেই বঙ্গলক্ষ্মীর কাব্যভাঁড়ারের চাবি আপনার হাতে!

সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বহু যুগ পূর্বেই বলে গিয়েছিলেন, বঙ্গসন্তান যৌবনে কাব্যচর্চা করবে না, এ হয় না! বঙ্গজীবনে বাঙালির কাব্যচর্চার ধারার বিবর্তন হয়েছে নানান ভাবে, যুগ পরিবর্তনের নানা পর্বে! কিন্তু পরাধীন জাতির- বৃটিশের স্কুলে প্রবেশ করে কাব্যচর্চায় ঘটে গিয়েছিল এক বৈপ্লবিক বিস্ফোরণ! বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী আর কবিকৃতী যেন সমান্তরাল পদধ্বনী করে এগিয়ে চলছিল বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের আধুনিক পর্বে! হয়ত সেই কারণেই কবি জীবনানন্দ দাশকে উচ্চারণ করতে হয়েছিল সেই ঐতিহাসিক সাবধানবাণী; “সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি” কবি যশ প্রার্থী বাঙালি অবশ্য তাতে কান দেবার পাত্র নয়! দেয়ও নি তাই কোনোদিন!

ছাপাখানার চৌহদ্দীর সেই যুগে জীবনানন্দ কল্পনাও করে যেতে পারেন নি- আজকের লগইন অনলাইনের এই যুগের কাব্যসুনামীর প্রলয়ের বর্তমান চিত্রটি! ইনটারনেট পত্তনের আগে, পত্রিকায় লেখা পাঠিয়ে অপেক্ষার সেই যুগেই কবি অস্থির হয়েছিলেন অকবির সংখ্যাধিক্যে! আর আজ তিনি জীবিত থাকলে হয়ত দমবন্ধ হয়েই মমি হয়ে যেতেন আমাদের দাপাদাপিতে! কিন্তু আমরা বাঙালিরা কাঁটাতারের কী এপাড়ে, কী ওপাড়ে সেকথা ভেবে দমার পাত্র নই! আমাদের অফুড়ন্ত দম! সেই দমেই দমদমাদম কবিতার বৃষ্টি হয়ে চলেছে অনলাইনে! কিন্তু কি লিখছি আমরা? কেন কবিতা! কবিতাই তো? কোনটা কবিতা আর কোনটা কবিতা নয়, সেই সীমারেখাটা কি ধুয়ে যায় নি ইনটারনেটের পক্ষ বিস্তারে? কবিতা আর অকবিতার মধ্যে যে মৌলিক পার্থক্যের ইঙ্গিত দিয়ে গিয়েছিলেন কবি; ইনটারনেটে কাব্যচর্চার যুগে সে পার্থক্যের বিষয়ে আমরা কজনই বা আর খেয়াল রাখি? জীবনবোধের পরতে পরতে, অভিজ্ঞতা আর সজ্ঞান কালচেতনার যুগলবন্দীতে- সমাজ সভ্যতা ও ইতিহাস জ্ঞানের বিস্তারে; প্রাত্যহিক জীবনের পরিধিতে- শাশ্বত জীবনবোধের সুস্পষ্ট মায়াবী উদ্ভাসনের যে প্রবল সংঘটনের অন্যতম অভিমুখই হলো কবিতা; সে কথা আজকের এই লগইন সভ্যতায় কজনই বা আর অনুভব করি আমরা? কতগুলি মনের ভাবনা বা বক্তব্যের পরিস্ফূটনে আপাত অসংলগ্ন কিছু শব্দ বিন্যাসের মাধ্যমে একটি ধারাবাহিক ছবির উদঘাটনকেই কবিতা বলে ভুল করে বসি অধিকাংশ সময়েই! জীবনযাপনের চর্চার মধ্যে নান্দনিক প্রত্যয় এবং ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার সম্বন্ধে দায়িত্ব ও কর্তব্য সচেতনতা ও দেশ আর জাতীয়তার শিকড়ের সাথে নিবিড় সংযোগ না থাকলে, যে কবিতা লেখা সম্ভব নয়, ভুলে যাই আমরা সেই মূল সত্যটাকেই! অনেক সময়! তাই বর্তমানে কাব্যচর্চার ক্ষেত্রে বিশেষ করে অনলাইনে- মূলত শব্দ বিন্যাসের কারিকুরিকেই কাব্যচর্চা বলে ভেবে বসি! কারণ জীবনযাপনের পরিসরে আমরা সাধারণত ভাসমান কচুরীপানার মতোই জীবনের উপরিতলে ভেসে বেড়াই! ফলে কোনো গভীর জীবনবোধের সামনাসামনি হতে আগ্রহী হই না আমরা!সেখানেই আমাদের কাব্যচর্চার পরিসর জীবন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে! আর জীবন বিচ্ছিন্ন লেখা কখনোই হয়ে ওঠে না কবিতা!

জীবনবোধের অগভীর তল থেকে এই যে আমাদের প্রাত্যহিকতা, এই কারণেই সমস্ত কিছুর সাথেই আমদের সংলগ্নতা বড়োই আলগা হয়ে পড়ছে ক্রমশ! ক্রমশই আমরা নিজেদের জীবন প্রক্রিয়ার চারপাশে কখনো তৃপ্তি কখনো বা অতৃপ্তির আত্মগত একটি সংকীর্ণ বলয় তৈরী করে ফেলছি! যার মধ্যে থেকে সমগ্র জীবনবোধের গভীরে পৌঁছাতে পারছি না আমরা কিছুতেই! হারিয়ে ফেলছি বৃহৎ মানবজীবনের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তিজীবনের মূল প্রেক্ষিতটাকেই! আর ঠিক সেই কারণেই বিস্তৃতভাবে বাংলা কাব্যচর্চা আজ আর ঠিক সাহিত্যের সামগ্রী হয়ে উঠতে পারছে না! হয়ে উঠতে পারছে না আমাদের জীবনযাপনেরই মূল অনুষঙ্গ! এর সাথেই যোগ হয়েছে নেটদুনিয়ায় “আমরা সবাই কবি, আমাদের এই লগ-ইনের দৌলতে!”-মানসিকতা! তাই তো আজ নেট দুনিয়ায় বাংলা কাব্যসাহিত্যে ঘটে গেছে কবিদের বিপুল বিস্ফোরণ! লক্ষ্য করার মতো বিষয় হল, যে পরিমাণে কবিতার সুনামি আছড়ে পড়ছে প্রতিদিন নেটের দেওয়ালে, তার সিকি ভাগও কিন্তু সৃষ্টি হচ্ছে না সাহিত্যের অন্যান্য ধারাগুলিতে! একটু ভাবলেই কিন্তু কারণটা স্পষ্টতর হয়ে উঠবে আমাদের মানস পটে! গল্প প্রবন্ধ নাটক উপন্যাস লিখতে যে পরিমাণ সাহিত্যবোধ, পরিশ্রম, আর ধৈর্য্যের প্রয়োজন; আমাদের ধারণায়- কবিতা লিখতে গেলে সেই পরিমাণ সাধনার প্রয়োজন নেই! আমরা দেখেছি কবিতার আকারে কিছু বিশৃঙ্খল শব্দের সাময়িক বিন্যাসেই কবি বলে বাহবা পাওয়া যায় বেশ সহজেই! যে লেখা যত বেশি অবোদ্ধ, প্রিয় বন্ধুদের প্রীতিতে তাই তত বড়ো কবিতা!

আর এই ছবিটি দ্রুত উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে জুকেরবার্গের ফেসবুকের দৌলতে! কী এক আশ্চর্য্য আলাদীনের প্রদীপ কবি যশ প্রার্থী বাঙালির হাতে তুলে দিয়েছে কলেজ ড্রপআউট প্রতিভাধর এই ছেলেটি! হয়ত সে নিজেও সে বিষয়ে আদৌও অবহিত নয়! কবিতার ঢেউ আছড়ে পড়ছে ব্যক্তিগত ওয়াল থেকে নোটের ভল্টে! না তাতেও রক্ষা নেই! ফেসবুক গ্রুপ আর পেজের সৃষ্টিতে বাঙালি যেন কাব্যসরস্বতীর বরপূত্র আজ! লক্ষ্য করার মত বিষয়, প্রায় প্রতি জনেরই এক বা একাধিক গ্রুপ রয়েছে আমাদের! যার বেশির ভাগটাই কবিতা কেন্দ্রিক! আর যার বন্ধুবৃত্ত যত প্রসারিত, এবং জনপ্রিয়তা যত বেশি, তার কবিতায় তত বেশি লাইক আর বাহবা দিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি আমরা! ফেসবুকের এই বন্ধুত্বের অলীক জগতে বাঙালি বিনা কাব্যচর্চায় কবি হয়ে ওঠার এক চমৎকার সুষোগ হাতে পেয়ে গেল! বন্ধুদের বাহবা পেলেই তার কবি খ্যাতির প্রসারে সে তৃপ্ত! ট্যাঁকে বাজে খরচের রেস্ত থাকলে তো কথাই নেই! “আপন হাত জগন্নাথ!” নিজের বা স্বামীর পয়সায় প্রকাশক ধরে বই ছাপিয়ে বইমেলায় একবার পৌঁছে গেলেই হল! বিক্রী হোক বা না হোক আত্মীয় বন্ধুদেরকে নিজের নাম স্বাক্ষর করে বই উপহার পাঠাতে পারলেই “আমি কবি!” বিভিন্ন কাব্যপাঠের আসর থেকে কবিতা প্রতিযোগিতার অনলাইন বিচারকের আসনটি পাকা! আর এদিকে ফ্রীতে বই উপহার পেতে তথাকথিত কবির বইয়ের প্রচ্ছদ ছাপানো স্ট্যাটাসে কমেন্টের লম্বা মিছিল! বাঙালির কাব্যপ্রীতির নমুনা ঐ অব্দিই! ফেসের পার্সোনাল ওয়াল থেকে গ্রুপের ওয়ালগুলি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে অধিকাংশ কবিতারই কোনো পাঠক নেই! ব্যক্তিগত ওয়ালে নিজের লেখা যারা বন্ধুদের ট্যাগ করেন নিয়মিত , সেখানেও অধিকাংশ সময়েই মাত্র তিরিশ শতাংশ মত বন্ধুরাই তাতে সাড়া দেন! এবং চুপি চুপি বলে রাখা ভালো তার মধ্যেও অধিকাংশই কবিতাটি না পড়েই লাইক ও কমেন্ট করে বন্ধুকৃত্য সারেন! সেটা তাদের কমেন্টের বহর দেখলেই অনুধাবন করা যায়! অসাধারন, অনবদ্য, অপূর্ব, চমৎকার, খুব ভালো লাগল, দরুণ লিখেছ- এর থেকে আর বেশি কিছু লিখে, নিজের মনের ভাব প্রকাশ করার মত ভাষা খুঁজে পান না অধিকাংশ প্রিয় বন্ধুরাই! তাই কবিও জনে জনে ধন্যবাদ জানিয়ে পোস্টের কমেন্ট সংখ্যা বাড়িয়ে যান! এবং বন্ধুর লেখা কবিতা পড়ে ভালো না লাগলেও কিংবা নিজের কাব্যবোধের অভাবজনিত কারণে মাথা মুণ্ডু কিছু বুঝতে না পারলেও আমরা লেখা ও লেখককে অভিনন্দনে ভাসিয়ে দিতেই ভালোবাসি! কিন্তু অপরিচিত লেখক- যিনি আমার বন্ধুবৃত্তে নেই; তাঁর লেখা ভালো না মন্দ তা পড়ে দেখতেও যাই না, যদি না গ্রুপ এডমিন হই! অন্যের লেখা পড়ার থেকে নিজের লেখা সবাইকে পড়ানোর জন্যেই আমাদের তৎপরতা অনেক বেশি! তাই ফেসের পাতায়, সত্যি কথা বলতে কি, কবিতার পাঠকের থেকে লেখকের সংখ্যা অনেক অনেক বেশি! আর ঠিক এই কারণেই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনো কবিতা নিয়েই যথার্থ সাহিত্য সমালোচনার কোনো পরিসরই গড়ে ওঠে না অনলাইনের এই আত্মপ্রচারের জগতে!

ফলে আত্মপ্রচারের এই নেট দুনিয়ায়, যেখানে সম্পাদকের নির্বাচন প্রক্রিয়ার কাঁচি নেই, প্রকাশের সীমাবদ্ধতাও নেই, যেখানে আমিই আমার সম্পাদক ও প্রকাশক; সেখানে যা লিখব তাই কবিতা, যদি আমার বন্ধুবৃত্ত বেশ শক্তিশালী হয়! আর তখনই ভাষা ও ভাবের উচ্ছৃঙ্খলতা দেখা দেওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থেকে যায়! যে কোনো ভাষার কাব্যচর্চার প্রেক্ষিতে যা সত্যিই অশনিসংকেত! তবুও এর বাইরেও এই কাব্য তিমিরের বলয়েও কবি ও কবিতার জন্ম হবেই! বাংলার মাটির শিকড় থেকেই পুষ্ট হয়ে উঠবে আগামীদিনের কবি প্রতিভা! অকবিদের মিছিলের পদধ্বনি ছাপিয়েও শোনা যাবে কবিকন্ঠে জীবনের বাণী, শাশ্বত মানবকন্ঠের বাঁশিতে! সেদিনের অভিমুখেই এগোতে হবে আমাদের তলায় তলায়!

শ্রীশুভ্র

দুচোখে আমার চৈত্রের খরা, নামে না আষাঢ় শ্রাবণ……

আষাঢ়ের শুভেচ্ছা সবাইকে…আমার প্রিয় ঋতু (যদিও সব ঋতুই আমার পছন্দ)

©কাজী ফাতেমা ছবি

আষাঢ়ে বৃষ্টি নামবে সেতো চিরাচরিত নিয়মে
আর মনে যে নামছে হর হামেশা বৃষ্টি, সে খেয়াল কেউ রাখে!
অগোচরে ঝরে যায় ব্যথা হৃদয় চুয়ে চুয়ে
রেখে যায় ক্ষত চিহ্ন…….
বুকের ভিতর ঢেউয়ের পর ঢেউ
আঁচড় কাটে ব্যথার নদী ছলাৎ ছলাৎ ঢেউয়ে আহ্
তবু হাসছি ভাসছি সুখে,
সুখের খেয়ায় পা রাখি হরদম।

কেউ কি জানে ব্যথার মূল্য কত,
বিকিয়ে দিতে গিয়েও ফিরে আসি
মিথ্যার বেসাতি বসেছে সর্বত্র।

ভালবেসে কাছে টেনে নিয়েও বলে বিনিময়ে আমারও কিছু চাই
নির্ভেজাল মন ভেঙ্গে টুকরো হতে হতে আবার জোড়া লেগে যায়,
মোহের ধরায় আমি শুধু মোহ থেকে বাঁচতে চাই,
তবু টেনে ধরে হায়!

তোমরা জানো কি চোখ দুটো আমার আষাঢ় আর শ্রাবণ!
তবু লেগে থাকে সেথা চৈত্রের খরা,
ঝরে না অঝোর কষ্টের জল
চোখের বর্ষন বর্ষে সেতো গোপনে নিশাকরকে সাথে নিয়ে।

দীর্ঘশ্বাসের বর্ষন তোমরা কখনো টের পেয়েছো!
নিজেকে নিয়ে ভেবেছো কখনো……
বৃষ্টি ঝরে অগোচরে!
ভিতর বাড়ির সকল বাঁকে বাঁকে ব্যথার মোচড় শুধু বর্ষাই ঝরায়।

প্রতিটি হৃদয়ে আছে একেকটা ব্যথার আষাঢ় আর শ্রাবণ
ঝরে নিরবে নিভৃতে শুধু নিজের মাঝে বর্ষন ক্ষণে ক্ষণে
একাকিত্বের জীবনে শুধু আমি নই প্রতিটি প্রাণীই একা
সবারই থাকে কিছু আশা, প্রাপ্তি, অনুভূতি, অনুভব
কিন্তু মেলেনা অংকটা, কারো মনের সাথেই মিল নেই মনের
যার যার এক এক নিজস্ব ভূবনে বাস করে একাকিত্বে কাটায়
শুধু আষাঢ় শ্রাবণে অঝোর জল বর্ষে যায় অন্তরালে,
দুচোখ রয়ে যায় তবু চৈত্রের নদী হয়ে।
June 15, 2016 at 3:37pm • Dhaka

জীবন-ভাবনা-সম্মান……


১।
#জীবন_বড়_অদ্ভুত

জীবন বড়ই অদ্ভুত
অদ্ভুত মানুষের মন
অদ্ভুত মানুষের চলাফেরা
আচার আচরণ।
জীবনের মানে কেউ বুঝে
বুঝে উঠতে পারে না কেউ হয়তো।
বুঝে উঠতে উঠতেই সহসা
ডাকে এসে যায় শেষ চিঠি
মানুষ শুধুই অদ্ভূত হা হুতাশ করে
জীবনের কাছে মানুষ প্রয়োজনের বেশীই চায় বুঝি
এজন্য হতে হয় হতাশ,
এক রাশ হতাশা আর অপূর্ণতা নিয়ে মানুষ পাড়ি জমায়
অজানায় অচেনায় গোর গন্তব্যে।
ভাল থাকুক সব ভাল মানুষ ।
May 22, 2014 at 5:43pm

২।
#ভাবনার_অতলে_ডুব
অজানতেই কখনো হেঁটে যাই পরিচিত কারো পাশ দিয়ে
আনমনা আমি ঠেরই পাই না
কেউ একজন ছিল পাশে যাকে আমি চিনি
খুব করে চিনি, খুব কাছের মানুষ ছিলো।
ভুল হয় একবার
আনমনা থাকে মানুষ কখনো সখনো
কিন্তু আমি এমন কেন?
মিলিয়ে যাই মিশে যাই কোথায় যেন
যার কোন অস্তিত্ব নাই
ভাবনার কোন সীমানা নাই
এ আবার কেমন রোগ?
আমি আমাতেই হারাই বারবার
তাই খুঁজে পাই না গন্তব্য।
May 22, 2014 at 3:19pm

৩।
#নেতা_হতে_চাইনা
কি জীবন পেলে আর
কী জীবন নিয়েই ফিরে গেলে অনন্ত আঁধারে
শুয়ে আছ নিরবে দুয়ার খিড়কি বিহীন ঘরে
শান্তিতে অথবা অশান্তিতে।
অথচ তাবৎ দুনিয়ার মানুষ
তোমার মুর্তি বানিয়ে পুষ্পাঞ্জলি দিচ্ছে তোমার পায়ে
অথবা নিথর গলায়।
তুমিতো জানতে আমাদের ধর্মে মুর্তিপূজা নিষিদ্ধ!
আর পুষ্প অঞ্জলিও!
তুমি নেতা তাই তোমাকে ওরা পূজা করে,
আর সেদিকে তোমাকে নিশ্চয়ই শাস্তি পেতে হচ্ছে,
অবশেষে তুমি কিছু মুসলিমদের দেবতা হয়ে গেল;
ওরা তোমাকে শান্তিতে শুতেও দিবে না।
আমি মাটির মানুষ,
আমি কখনো নেতা হতে চাইনা বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিও না
আমি চাইনে কেউ আমায় এভাবে কষ্ট দিয়ে স্মরণ করুক ভালবাসুক।
আমি চলে যাবো নিরবে কেউ জানবে না।
নেতা তুমি অভিশপ্ত জীবন বয়ে বেড়াও এভাবেই,
ফুলে ফুলে ভরে উঠুক তুমিমূর্তি পায়ে….
সেখানে তুমি মুহুর্মুহু আজাবে ভেঙ্গেছুঁড়ে যেতে থাক তাতে কি!
সম্মান স্মরণে তো তোমাকে ওরা মাথায় তুলে রাখছে।
তুমি নিজেকে গর্বিত অনুভব করো… ঠিক আছে!

খাবো নাকো পান্তা ইলিশ

©কাজী ফাতেমা ছবি

এই মৌসুমে খাব নাকো – ইলিশ মাছের টুকরা ভাজা
জাটকা ইলিশ ফরমালিনে- ইলিশগুলো নয়কো তাজা
পান্তা ভাতের পাতে রেখো – শুকনো মরিচ শুটকির ভর্তা
স্বাধে জিহবায় পানি নিয়ে-খাবেন সুখে ঘরের কর্তা।
ইলিশ ভাজা পান্তা ভাতে- মানায় নাতো পানসে লাগে
তবে কেনো ইলিশ দিয়ে- পান্তা খেতে ইচ্ছা জাগে!
থাকুক ইলিশ জলের তলে- ইলিশ কি আর যায় পালিয়ে
সোনার দামে ইলিশ কিনলে- যাবে সদা মন জ্বালিয়ে।
বাঁচাই ইলিশ চলো মিলে- বয়কট করি ইলিশ খাওয়া
জাটকা ইলিশ হবে বড়- খাবো কিনে এটাই চাওয়া।

কি সব নিয়ম করছো চালু- পান্তা ভাতে বছর শুরু
আমার মতে খাবে সবাই- কুরমা পোলাও মাছের মুড়ু!
নতুন বছর গরীব খানা- উপহাসের হায় নামান্তর!
সারা বছর দারিদ্রতায়- ভরা যাদের দুঃখের প্রান্তর!
তারাও কিন্তু একটি দিবস- পোলাও ভাতের ঘ্রাণে মাতাল
মাংস ডিমের ঝুলে ঝালে- বাসে ভরায় মনের চাতাল!
পান্তা ভাতে কাঁচা মরিচ- বৈশাখ মাসের প্রথম প্রহর
ঢাকঢোল বাজনা, শাঁখ বাজিয়ে- মেতে থাকবে আমার শহর!
গরম ভাতে পানি ঢেলে- বড়লোকির বিসর্জনে
মাতবে তারা সুখ উল্লাসে- হিন্দি গানের সুর গর্জনে!
বাঙালিদের ষোল আনা- পালন শুধু একটি দিবস
জিন্স টাইস, ছেড়ে শাড়ি- দেখলে লাগে মন’টা বিবশ!
মাটির থালায় পান্তা খাবে- ইলিশ ভেজে লোক দেখানো
পান্তা দেখলে সারা বছর- ঠোঁট উল্টিয়ে মুখ বেঁকানো!
ঠেলা ধাক্কায় গরম মাথায়- পান্তা ভাতের থালা হাতে
সেল্ফি দেখবো নিউজফিডে- ইলিশ সাথে পান্তা ভাতে
লাগাম ছাড়া জীবন মোদের- যেমন খুশি উৎসব সাজাই
গানের তালে মন ডুবিয়ে- আহ্ আনন্দের বাজনা বাজাই।
বৈশাখ তুমি চরম খারাপ- ধনী বানাও মিসকিন বাপু
গাপুস গুপুস পান্তা খাবে- ঠিক বলেছি ভাইয়া-আপু?
খাবো না তাই ইলিশ পান্তা- কুরমা পোলাও মাংস খাবো
এমনি করে পয়লা বৈশাখ – পান্তা ভাতের যুগ বদলাবো!

তোরা এমন হয়ে গেলি কেন রে?

কতদিন বন্ধুদের ফোন পাইনা
দু:খ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে থাকি অপেক্ষায়
একটা ফোনের জন্য!
মুঠোফোনে বাজে না এখন আর সেই সুরেলা রিংটোন!
তোরা এমন হয়ে গেলি কেন রে?

আগে হঠাৎ করে যখন তোদের ফোন আসত
ভিড় করতো এসে কামরাঙা দুপুর
মনের মাঝে বেজে উঠত …
রিনিঝিনি বেগুনি জারুল ফুলের শুকনো নূপুর,
বৈকালের পুকুরপাড়ের শুভ্র মেঘমালা
খোয়াই নদীর শুকনো চিকচিক বালুচর;
বুকের জমিন খালি করে নেমে যেত বয়সের ভার
কপালের ভাজ করা রেখায় ভর করত টানটান উত্তেজনা
চোখের কোণের নদীর ধারা,
মনের কোণে পুষে রাখা বিষন্নতা,
চাপা কষ্ট,রক্ত ছুপ আর্তনাদ
আর অনেক অনেক দীর্ঘশ্বাসগুলো হয়ে যেত নিমিষেই উধাও।

শুন্‌ না -হঠাৎ-ই যদি কখনো তোদের ফোন আসত
বাঁধাধরা সব নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে
আমি যেন জলতরঙ্গের নতুন সুরবাহার,
স্বামী,শাশুড়ি-সন্তানদের জোড়া জোড়া নির্বাক চোখ এড়িয়ে
মাঠ-ঘাট, ব্রিজ-সাঁকো, শহর-নগর, বাস-ট্রেন, নদী-খাল ভেঙ্গে,
পাকদণ্ডী পথ পেরিয়ে পৌঁছে যেতাম সেই উপত্যকায়।
যে উপত্যকায় রঙধনু বৃষ্টি ঝরতো
সেখানে বাস করতো আমার একান্ত মেয়েবেলা
ফুটে আছে ফুলের মতন,মেলে আছে পাখা পাখির মতন
যেখানে ছলাৎ ছলাৎ উপছে পরতো উচ্ছ্বাসের ঢেউ
সেই ঢেউ এই শহরে নেই রে-তোরা জানিস?
০৩ জানুয়ারী ২০১৫

শব্দার্থ
(পাকদণ্ডী-যে পথ ঘুরে ঘুরে পাহাড়ে উঠে গেছে-এমন পথ)

তুমি আমার অভ্র হবে?

তুমি আমার কাব্য হবে? — হয়ে যাওনা!
বুকের মাঝ লুকিয়ে রবে?– রয়ে যাওনা!
কানে কানে কথা কবে? — কয়ে যাওনা!

ছন্দ হবে,হবে মাত্রা?
একই পথে শুরু যাত্রা
এলোমেলো ঝড়ো হাওয়া
জানলায় করবে আসা যাওয়া?

তুমি আমার হবে নি:শ্বাস? –হতে পারো
জীবন পথে করবে বিশ্বাস?? –করতে পারো?
দাওনা তুমি আমায় আশ্বাস?? –দিতে পারো!

নদী হয়ে চোখে বসো
ডিঙি নিয়ে একাই চষো
ডাকলে আমায় হাতটি ধরে
সকল দিব তোমার তরে।

হয়ে যাওনা চশমা চোখের??–হবে নাকি!
ধুরুধুরু কাঁপন বুকের??–দিবে ফাঁকি?
অধরের তিল হবে সুখের?? –নেইতো বাকি!

নিদ্রা হয়ে চোখে আসো
স্বপ্ন নিয়ে মনে ভাসো
ছুঁয়ে দাওনা আমার অধর
বুঝবে তখন প্রেমের কদর!!

নীলাকাশের হবে-অভ্র?–আমার জন্য?
কালো নয় শুধু নীল শুভ্র?–হবো ধন্য!
রাত আকাশে হবে ধ্রুব??–বা অরণ্য?

ঘুড়ি হবে নাটাই বিহীন?
হারাবে কি বুকের গহীন
উড়তে পারো বুক আকাশে
কিংবা মনের আশেপাশে।

তুমি আমার ভালবাসা!–স্বপ্ন হবে?
তুমি আমার আলো আশা!!–জেগে রবে?
অথৈ প্রেমের সর্বনাশা!!–তাই হও তবে?

হতে পারো প্রজাপতি
করবো নাকো কোনো ক্ষতি
উড়ে বসো চোখের পাতায়
কাব্য হয়ো মনের খাতায়।

পাখি হবে আমার তুমি?-নরম পালক!
ছুঁয়ে দিবে পালক ঠোঁটে?-অবুঝ বালক!
হও না বাপু আমার তুমি-প্রেমের চালক।

মেয়ে আমি হারাতে না জানলেও-হারিনি কখনো……

রাত্রির গা বেয়ে নেমে আসে নিশাবিহার আয়াস

মৌন ইশারায় হাত বাড়িয়ে ডাকে নিশাকর
দীর্ঘশ্বাসের প্রহরে দুই-ই একা; আমি-নিশাকর
ইচ্ছা-অনিচ্ছার ভিড়ে হারিয়ে গেছি, হেরেছে স্বপ্ন
যা বয়ে গেলো- নিয়ে গেলো সময়ের স্রোত
যে বুঝে সে উপভোগ করে আর যে বুঝে না
সে রয়ে যায় দীর্ঘশ্বাস প্রহরেই!
আগ-পাছ ভাবিনা আর, তাইতো
নিশাকরের ডাকে সারা দেই; হই কাব্যে মশগুল
শুনাই তারে জীবনের ধাপে ধাপে মরিচা পড়া
সকাল দুপুর বিকেলের সুর অনুরণন।
নিশাকর শুনায় বিরহী সুরের সেই বাঁশুরী সুর……
ফিরে ফিরে যাই, ঘুরে আসি আঁধারের বুক চিরে
সেই সেই দিনের নিরুপম পলে পলে।
মেয়ে আমি হারাতে না জানলেও হারিনি এখনো
বিষাদগ্রস্থ মুহুর্তেও হইনি ম্রিয়মান;
জীবনজুড়ে তাই কাব্যগাঁথা সুগন্ধি লোবাণে
করে রেখেছি ম্রক্ষণ।

২০ নভেম্বর ২০১৪

স্বাধীনতা তোর বুকেই হোক নির্ভয়ে স্বপ্ন আঁকা…..

©কাজী ফাতেমা ছবি

স্বাধীনতা মানে কি তবে এই-জঙ্গীর কবলে বাংলাদেশ
স্বাধীনতা মানে কি তবে এই-সর্বত্র কেবল আতংকের রেশ!
স্বাধীনতা বুঝি- নেতাদের মুখের হড়বড় মিথ্যে বুলি
স্বাধীনতা মানে কি- দেশজুড়ে সন্ত্রাসীরা খেলে রক্তের হুলি!
স্বাধীনতা বলতে কি – সত্যের পথগুলো হয়ে গেলো রুদ্ধ
স্বাধীনতা হায়- দূর্নীতির কবলে পড়ে হলো ফের অশুদ্ধ!
স্বাধীনতা তোর জন্মদিনে-টিভিতে দেখি শংকার লাইভ
স্বাধীনতা কি তবে থাকবে নিভৃত্তে চুপচাপ মনের আর্কাইভ!
স্বাধীনতা এখন যেনো- তিলকে মুহুর্তেই বানানো তাল
স্বাধীনতার আঁচলে মাথা রেখে কারা চালায় দেশ ধ্বংসের কূটচাল?
স্বাধীনতা তুই সাতচল্লিশের মধ্য বয়স্ক এক বুড়ো জুজু
স্বাধীনতা তুই যেনো আজ নত দাঁড়িয়েছিস রুগ্ন কুঁজো!
স্বাধীনতা তোর বুক যেনো আজ অশুভ শক্তির বিচরণক্ষেত্র
স্বাধীনতা, হারানো স্মৃতি বুকে আজো মা বোনদের ভেজা নেত্র!
স্বাধীনতা তোর পিঠে এখনো পতপত ওড়ে লাল সবুজের পতাকা
স্বাধীনতা মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে তোর বুকেই ছিল স্বপ্ন রাখা!
স্বাধীনতা তোর জন্মদিনে কেনো তবে – রক্তে ভাসে দেশ আমার
স্বাধীনতা তুই বুঝি হলি আত্মঘাতি – এ দেশ কি তবে জঙ্গীদের খামার!
স্বাধীনতা তুই তো আজ সাংবাদিকদের মুখের মিছে কথার ফুলঝুড়ি
স্বাধীনতা তুই স্বেচ্চাচারীদের আকাশে ওড়া নাটাই ছেঁড়া ঘুড়ি।
স্বাধীনতা তুই জঙ্গী জঙ্গী নাটক-আইএস বুঝি তোর নায়ক
স্বাধীনতা তুই টক শো, রিয়েলিটি শো, লাইভে হেঁড়েগলার গায়ক।
স্বাধীনতা এখন তুই প্রশ্নপত্র ফাঁস নামের মেধার কলংক
স্বাধীনতা তুই রাজনীতির প্যাঁচ খেলানো এক জঠিল অংক।
স্বাধীনতা তুই আধাবুড়ো যুবক, পড়েছিস আজ মাটিতে নেতিয়ে
স্বাধীনতা আর ধরবি না দেশের হাল টগবগ রক্তে বুক’টা চেতিয়ে?
স্বাধীনতা তোর জন্মদিনে কেক কাটা হলো জঙ্গীর আতশ ফুটল
স্বাধীনতা তোর জন্মদিনে স্টবেরি রক্ত রঙ কেক কিছু মানুষের জীবনে জুটল।
স্বাধীনতা জানিস আবারো চাই সন্ত্রাসীদের কবল হতে দেশের স্বাধীনতা
স্বাধীনতা চাই সকল অশুভ শক্তি ওড়ে যাক বৈশাখী ঝড়ে, ঘুচে যাক সব দৈন্যতা।
স্বাধীনতা তোর আঁচলেই হোক আবার নির্ভয়ে বেঁচে থাকা
স্বাধীনতা তোর বুকেই হোক আপামর জনতার নির্ভয়ে স্বপ্ন আঁকা!

(২৬-০৩-২০১৭ রাত)

কোন এক কবিকে….


১।
কাঁধেতে ঝুলানো ব্যাগ-মুখে ছড়ানো আবেগ
ক্যামেরা ঝুলানো গলায় -হেঁটে চলে বেলা অবেলায়
চেহারায় ক্লান্তির নেই ছাপ-
থেমে নেই,মাথায় তীক্ষ্ণ উত্তাপ।
ক্যামেরা হাতে,ফুটপাতে দু’চোখ-
চেয়ে থাকে অপলক,কতক মলিন মুখ।
ক্লিক ক্লিক অজানতেই জীর্ণ চেহারায়
কবির চোখে মুখে ছাপ পুর্ণ হতাশায়।
পার্কের বেঞ্চে খানিকটা সে বসে
জীবনের মূল্য কোথায়? অংক কষে,
কলমের খোঁচা পড়ে ব্যাগের ডাইরি’টায়
কবিতার পঙ্খতি লিখে মুখে আওড়ায়।
খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে,ভাবুক
মানবতা ঘুমায় ফুটপাতে,পিঠেতে চাবুক।
দুনিয়ার ভাবনা নিয়ে হেঁটে চলে সে
ভ্রুক্ষেপ নেই চলায়,ফুটপাত ঘেঁষে।
কি যেনো কবির চোখ খুঁজে ফিরে
সময় কাটে তার দুখীদের ঘিরে…
কবি কবি ভাব, পিছনে বাঁধা চুল
একি! কবির চেইন খোলা
ব্যাগে ভর্তি নাগলিঙ্গম ফুল।

২।
এমন পাগল পাগল কবি ভাব যার
ইচ্ছে হয়,পিছন পিছন ছুটি তার।
পিছন ফিরলে,দিব একটা ভেংচি কেটে
ইচ্ছে করে,ক্ষেপিয়ে তারে যাই পিছু হেঁটে।
ইচ্ছে জাগে, উদাস ভাবটা ছাড়িয়ে দিয়ে
ঠোঙ্গা ভরা বাদাম ধরি সামনে গিয়ে।
উদ্ভট ইচ্ছা মাথায় আসে -চুপি চুপি পিছু এসে,
চুল ধরে,কাঁচি হাতে ঘ্যাচাং ঘ্যাচ
কেটে দেই চুল ক্যাচাং ক্যাচ।
ইচ্ছা আরো মনে মনে-মাথাচারা ক্ষনে ক্ষনে,
ছিনিয়ে নিয়ে ক্যামেরাটা,ফটো তুলি,দাঁড়া ব্যাটা।
এই ইচ্ছেটাও মনে আসে-হেঁটে তার পাশে পাশে,
কবিতার ডায়রী নিয়ে,নদীর পাড়ে
তার কবিতা,আবৃত্তি করে শুনাই তারে।
আবোল তাবোল ইচ্ছা যত-পুরণ করব মনের মতো।
ছুটতে থাকব তার পিছু পিছু-যে যাই মনে করুক কিছু।
কবি কবি ভাব ছুটিয়ে-বিরক্তি ছাপ মুখে দিব ফুটিয়ে,
কবির ব্যাটা কবি, থাকবি কি আর উদাসীন?
ছন্নছাড়া জীবন নিয়ে পাতবি কি আর ফুটপাতে আসীন?
ইচ্ছাগুলো আমার এমনই-পাগল কবি রাস্তায় দেখব যখনই
ভাব নিয়ে হাঁটবে যে কবি-উদাস ভাবটা তার, ছাড়াবে ছবি।
22 October 2013

কোথাও দূরে যাচ্ছো! ব্যাগে ভরে দেই সব ইচ্ছে………

ইচ্ছের কথা বলে আর লাভ নেই জান তো
ইচ্ছেরা সময় অসময় পাখনা মেলে
কত কিছুই করতে ইচ্ছে করে
ইচ্ছেদের কোন শেষ নেই সীমাও নেই।

কোথাও দূরে যাচ্ছো! বাক্স গুছিয়ে দিচ্ছি আমি
ইচ্ছেরাও খেলছে এলোমেলো খেলা।
এই মুহুর্তে ইচ্ছে করছে আমার সব ব্যাকুলতা
তোমার বহন করা বাক্সে ভরে দিতে,
বেলীর ঘ্রাণ,শিউলীর মালা আর
এক শিশি শিশিরও দিতে ইচ্ছে করছে।
আর নিরবে চোখের জলের গাঢ় ফোয়ারা
আমার সকল অস্থিরতা, অবজ্ঞা, বিষন্নতা
চোখের জল মুছা রুমালটাও।

খুব মনোযোগে তোমার বাক্সটা আমি গুছিয়ে দিব আজ
খুব ইচ্ছে করছে সাজিয়ে গুজিয়ে দিয়ে চেইন টানার
দেখি কতটুকু কি করতে পারি তোমার জন্য আজ।
পলিথিন মুড়িয়ে সবুজ দিতে পারি নতুবা
একঝাঁক ছোট নীল প্রজাপতি আর
শরতের মেঘ, কাশফুলের উড়ে যাওয়া পাঁপড়ি।

কষ্টের প্রতিটি মুহুর্ত,অবহেলাগুলো অথবা উপেক্ষা
না বলে চলে যাওয়া কিংবা কথা দিয়ে কথা না রাখার মুহুর্ত।
খুব যত্ন করে আজ তোমার বাক্সে এসব ভরে দিতে ইচ্ছে করছে,
আর তুমি যখন বাক্সের ডালা খুলবে তখন নির্বাক চোখে দেখবে
কি সুন্দর নীল প্রজাপতিরা তোমার রুমে উড়াউড়ি করছে,
বেলী আর শিউলী তোমাকে নিয়ে যাবে পিছনে।

শিশিরের শিশি যখন খুলবে সিক্ত হয়ে যাবে মুহুর্তেই
বুকে হাত দিয়ে অনুধাবন করবে অবহেলা অবজ্ঞা আর উপেক্ষা
বিষন্ন চোখে ভাববে আরে প্রয়োজনীয় জিনিস না ভরে এগুলো
কে সাজিয়ে দিলো? অপ্রয়োজনীয় জিনিসে বাক্স টইটুম্বুর।

যখন রুমালটা হাতে নিবে ভেজা অনুভূতি তোমাকে নাড়িয়ে দিবে
শরতের শুভ্র মেঘে ভেসে ভেসে তুমি ভাববে চলে আসতে আবার,
কাশফুলের পাঁপড়ি তোমাকে নরম পরশ বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিবে।
যখন জেগে উঠবে বিহবল হয়ে উঠবে আর ভাববে এসব কি!!

আবার বাক্স খুলতে বসে যাবে,
নিজের জিনিসগুলো খুঁজবে আকূলতায়
হঠাৎ দেখবে বাক্সের চেইন পকেটে গুনগুন করা মৌমাছির কান্নাসুর
আমার সব কান্না আজ তোমার বাক্সে ভরে দিয়েছি গো
ভালবাসা খুঁজতে গিয়ে ভুল করবে তুমি,
বাক্সের পকেটে পকেট তোলা আছে শুধু বেদনা কাব্যের ঘুনপোকা।

যা তোমার অযত্নে এতদিন আমার কাছে ছিল
আজ সব ফিরিয়ে দিলাম প্রিয়, নিঁখুতভাবে ভাজে ভাজে
দিয়ে দিয়েছি আমার সব পাওয়া না পাওয়া ব্যাকুলতা।
ভাববে বসে শুধু এসব দিয়ে তুমি কি করবে।
যা ইচ্ছা করো গিয়ে, শরবত বানিয়ে খাও
মাথায় দিয়ে ঘুমাও নতুবা চোখে বসিয়ে নাও।
জেনে রাখ আমি এখন তোমা হতে অনেক দূরে
কিছুই আর ফিরিয়ে দিতে পারবেনা ।
বুঝলে কিছু উদাসীন কবি! হাহাহাহাহা!
(২০ ডিসেম্বর ২০১৪)

» নারীই পারে সব সয়ে নিতে……

শত যন্ত্রণার ঢেউ ডিঙিয়ে,দিন করে পার সে নারী
ধৈর্য্যের সীমানা ছেড়ে নারী দেয়, কষ্টের পাহাড় পাড়ি
বিশ্বাসে অটুট নারী আগায় ধীরে, ফুটো নায়ে পা দিয়ে
ডুবে ভেসে অবশেষে, সাঁতরে কূল খুঁজে আনে ছিনিয়ে।

নারী সেতো, মা বাবার রাজকন্যা ছিল একদা জানি
রাজকন্যার কপালে অবশেষে, কেনো বিষাদের গ্লানি!
সেতো ছিলো বোন খুব আদরের, সেই বড় ভাইয়ের
ফুটফুটে কন্যা তার রূপ পুড়ে, রঙ শেষে ছাইয়ের!

সে মায়ের মমতার আঁচলে লুকানো, ছিল আদরিণী
বাঁশের ঝাড়ে রোদ্দুর হয়ে, লুকোচুরি চঞ্চল হরিণী
উচ্ছ্বল পরিবারের ছিলো সে, সবার আদরের মধ্যমণি
দাদাদাদীর খেলার সাথী সেতো- মমতায় অথৈ খনি।

পঁচিশটি বসন্ত শেষে, অজানার পথিক হলো সে মেয়ে
ছিঁড়ে মমতার জাল, আগায় সে বিষাদের গান গেয়ে
সমুদ্র চুরা**িতে, পা রাখতে মেয়ে শেষে হয় নারী
চঞ্চলতা মুগ্ধতার সমাপ্তির ইতিতে টেনেছে দাড়ি!

অচেনা পরিবেশের মাঝে, নারী গুঁটিসুঁটি বিছানায়
ভাসে ভাবনার জলে ছলোচ্ছল, উঠেছে যে মিছা নায়
মোমের পুতুল গলে গলে পড়ে, সামনে অথৈ আঁধার
স্বাধীনতার দুয়ারে খিল আঁটবে, পথ হবে বাঁধার।

উচ্ছ্বাসের প্রহরটা পেরিয়ে, নারী হয় একদা মাতা
ব্যথার খুঁনসুঁটিতে মুগ্ধ সে, তবু জীবনে ফাঁদ পাতা
সমাজ সন্তান ভেবে কষ্ট সহনে, নারী হয় পাথর
সয়ে সয়ে নারী স্থির অবিচল, হয়না আর কাতর!

নারী কাঁদে একা পড়ে নিথর, ফেটে যায় বুক ব্যথায়
নারীর যে ঘর নেই, অথৈ সমুদ্রে ভেসে যাবে কোথায়!
একদা ছিল বাপের বাড়ি- মেয়ে, নিজের বাড়ি তো নয়
স্বামীর ঘরের চাবী হাতে তার, হারানোর সেও ভয়!

নারীর আবাস শেষে, ছেলের ঘরে বোঝা হবে মাথায়
শক্ত হাতে তবু বাঁধে সংসার, মায়ার বন্ধন সূতায়
চারিদিক সামলিয়ে নারী সামনে আগায় দৃঢ়তায়
সব মমতার জালে আটকাতে পারে নারী, স্থিরতায়!