ট্যাগ আর্কাইভঃ নীতিশ রায়ের কবিতা সমগ্র

তুমি আসবে

তোমার আশায় বুক বেঁধে আছি
আমি জানি তুমি আসবে,
সকল বাধা পিছে পড়ে রবে
বিজয়ের হাসি হাসবে।
চলার পথে বাধা জানি আছে
আছে হারাবার মত ভয়,
যার মনে আছে সাহস অসীম
করবে সে বিশ্ব জয়।
বিপদ যখন আসে নিজ পানে
কেউ নাহি থাকে পাশে,
সুখের সময় যে ছিল আপন
দুরে তখন সে হাসে।
সম্মুখে তোমার যে অতি ব্যাকুল
পরনিন্দায় বাড়াবাড়ি,
অপরের সাথে করে জেনে রেখো
তোমার নিন্দা সরাসরি।
কথার মালা যে করে দান
কাজে দেয় মহা ফাঁকি,
তার সাথে আর নেই কোন ভাব
তার থেকে দুরে থাকি।
সময়ের সাথে নয় কোন আড়ি
সময় দেবে দু’হাত ভরি,
ধৈর্য্য ধরে কাজে দিই ডুব
অলসতাকে বলি সরি।
নিষ্ঠার সাথে শ্রম দিয়ে যাই
আমি জানি তুমি আসবে,
আজ নয় কাল কিংবা পরশু
সফলতা ঠিক তুমি আসবে।

তাং-১১-১১-২০২২ ইং

স্বপ্ন

আমি স্বপ্ন দেখি সংগোপনে
রাতের আলোয় ঘুরছি একা,
নীরবতা সেথায় শুধু
স্বপ্ন ছাড়া সবই ফাঁকা।
স্বপ্ন দেখি মানুষ হবার
অমানুষদের যত বাধা,
যতই আসুক দুঃখ ব্যাথা
জীবন হবে স্বপ্ন গাঁথা।

আমি স্বপ্ন দেখি নতুন দিনে
উঠবে ফুটে নতুন আলো,
আঁধার নেবে মুখ লুকিয়ে
হোক না যত নিকষ কালো।
স্বপ্ন দেখি মানুষ নামে
আছে যত জন্তু যারা,
চিহ্ন তাদের হয়ে বিলীন
ধরা হবে মুক্তধারা।

আমি স্বপ্ন দেখি বিভেদ ভুলে
মানুষ সবাই মিলবে মনে,
সবাই সবার হবে সাথী
শান্তি পাবে জনে জনে।
স্বপ্ন দেখি পিতা-মাতা
হবে সবার নয়ন মনি,
বৃদ্ধাশ্রম হয়ে ফাঁকা
সংসার হবে সুখের খনি।

আমি স্বপ্ন দেখি জীবন দশায়
কর্মগুনে সমাদ্দৃত,
ভালো কাজে হাসবে রবি
ফুটবে ফুল অবিরত।
স্বপ্ন দেখি আমার নামে
শ্রদ্ধায় সবার নত মাথা,
হাসব আমি শেষ যাত্রায়
কাঁদবে তখন আম-জনতা।

তাং-০৬/১০/২০২২ ইং

হারিয়ে খুঁজি

নজরুলের বঙ্গমাতা রবি’র সোনার বাংলা,
এসব এখন কথার কথা বলার জন্য বলা।
গোয়াল ভরা গরু আর গোলা ভরা ধান,
পুকুর ভরা মাছের কথা ভারী করে কান।
নববর্ষে পান্তা মেলে ইলিশ মেলা ভার,
বিদেশীদের নজর এখন চোখে দেখাই সার।
নবান্নের পিঠা-পুলি ক্ষয়ে গেছে কালে,
এসব এখন আটক আছে পিৎজা স্যুপের জালে।
ষড়ঋতুর এদেশ আমার ঋতু এখন দেখি তিন,
গ্রীষ্ম বর্ষা শীত আছে বাকী সব প্রায় বিলীন।
সময় স্রোতে হারিয়ে গেছে সাধের সেই কলেরগান,
টিভি সিডি মোবাইলে শুনি এখন ওয়েস্টার্ন ।
গীটার ড্রামের ভীড়ে আজ একতারা বেশ বেকায়দায়,
দু’দিন পরে দেখতে হবে জাদুঘরের আস্তানায়।
আউল বাউল লালন ছেড়ে সবাই রকে মেলায় সুর,
চিনল না কেউ আসল সোনা কোন টা বেশি সুমধুর।
ডিস্কো ড্যান্সের তালে দেখি দোলায় সবাই নিজের দেহ,
দেশীয় নৃত্যে আছে জাদু বোঝে না আর এখন কেহ।
সচেতনতায় রুখতে পারে হৃদয় দিয়ে যদি বুঝি,
মনের টানে অনুভবে হারিয়ে তাই আবার খুঁজি।

স্বপ্ন ১

53bec

চলছে কি! হচ্ছেটা কি?
কোথায় যাচ্ছে দেশ।
নিজের কাছে ভালো সবাই
যেন সুফি দরবেশ।

কালো এখন বেশী ভালো
বাঁকি সবই মিছে,
মন্দ কাজে আগে সবাই
ভালো কাজে পিছে।

স্বার্থের কাছে মাথা নত
এটাই এখন ধর্ম,
কালো টাকার পাহাড় গড়া
নিত্য যেন কর্ম।

অর্থে যে পাহাড় সম
মান্য করি তারে,
জ্ঞানীর জ্ঞানে মূল্য নেই
অজ্ঞের কাছে হারে।

চাতুকারিতায় যে এগিয়ে
সেই এখন বেশ,
সহজ সরল জীবন যাপন
হাসায় তারে দেশ।

দুর্নীতির কালো থাবা
সবার মনের ঘরে,
শিক্ষাঙ্গনে চলছে এসব
মানুষ যেথায় গড়ে।

যেদিক তাকায় সেদিক আঁধার
মনটা তাই ভারী,
একটি স্বপ্ন মনের মাঝে
সোনার দেশ গড়ি।

প্রতিদিনের একটি ভালো’য়
বদলে যাবে দেশ,
এসো সবাই স্বপথ করি
গড়ি সোনার বাংলাদেশ।

প্রত্যাশা

বছর ঘুরে এল ফিরে নতুন শুভক্ষণ,
সবাই নাচে আপন ধাঁচে নাচে সবার মন।
নতুন রবি নতুন ছবি নতুন পথে চলা,
পিছে ফেলা কথার মেলা নতুন ভাবে বলা।
যত ব্যথা দুঃখ কথা ছিল না যা বলা,
দুরে ঠেলে সবই ভূলে নতুন পথে চলা।
স্বপ্নে দেখা আলোর রেখা মিলায় যদি রাতি,
নতুন দিনে নতুন ক্ষনে জ্বালাই আশার বাতি।
জুলুম লোভ হিংসা ক্ষোভ সবই আজ ভূলে,
নতুন পথে আপন রথে সবই পিছে ফেলে।
আর্তি ভরা জীর্ণ ধরা সাজাই নতুন রঙে,
প্রত্যাশা আজি করে আরজি সাজাও নতুন ঢঙে।

ফিরে যেতে চাই

ফিরে যেতে চাই আমি পল্লী মায়ের কোলে,
সেথায় আমার বেড়ে ওঠার স্বপ্ন গুলো দোলে।
ঘুম ভাঙে পাখির ডাকে কাক ডাকা ভোরে,
রাতের আঁধার যায় লুকিয়ে রবির বাহুডোরে।
শিশির ভেজা ঘাসের ডগায় সোনা বরণ আভা,
নয়ন জুড়ায় দৃশ্যপটে দেখে রুপের শোভা।
সবুজ বনের ছায়া সেথায় সিক্ত করে মন,
রাখাল সেথায় বাজায় বাঁশি সুরের বৃন্দাবন।
কৈশরময় দিনগুলি মোর স্বর্গ থেকে ও বেশ,
সারাদিনের দুরন্তপনায় কাটতোনা এর রেশ।
সকাল থেকে সাঁঝের মাঝে উদাম দুপুর বেলা,
হই হুল্লোড় মাতামাতি হরেক পদের খেলা।
বর্ষা এলে বাঁধ ছিড়ে যেতাম ছুটে বিলে,
উদ্মাদনায় নাচতো মন এক সাথে মিলে।
বছর জুড়ে পার্বনগুলোর জুড়ি মেলা ভার,
অভাব বুঝে আজকে মন করে হাহাকার।
অতীত মাঝে আছে সুখ ভালবাসা পাই,
স্বপ্ন যেথায় বাসা বাঁধে সেথা ফিরে যেতে চাই।

গাঁয়ের বধু

চলছে একা গাঁয়ের বধু আনতে ঘাটে জল,
কলস কাঁখে নদীর বাঁকে বাজছে পায়ের মল।
নদীর ঢেউয়ে উথাল-পাতাল হৃদয় আনচান,
ভেজা পায়ে ছলছলানি গাইছে সুরে গান।
পাল তোলা ঐ নৌকা গুলি চলছে ছুটে দুরে,
আনমনা মন হয় যে উদাস বাড়ির কথা ভুলে।

রাখাল ছেলের বাঁশির সুরে পাগল করে মন,
কাজল চোখে দৃষ্টি খোঁজে দুরের কাশবন।
উদাস করা দুপুর বেলা শাড়ীর আঁচল উড়ে,
হাতের বালা গলের মালা গাঁথা বেলি ফুলে।
আকাশ জুড়ে মেঘের ভেলা চলছে করে খেলা,
কালো কেশে এলোবেশে হাজার রঙের মেলা।

গাছের শাখায় পাখি বাসায় করে কিচিমিচি,
কানের দুল নাকের ফুল রোদে ঝিকিমিকি।
চলনে আজি এমন গতি দৃষ্টি রাখে বেঁধে,
দিচ্ছে দোল করছে খেলা যেন ধানের শীষে।
আলতা পায়ের আলতো ছোঁয়ায় ধন্য মেঠো পথ,
বাঁকা ঠোঁটে মিষ্টি হাসি হৃদয় করে বধ।

মনে পড়ে একাত্তর

আজও মনে পড়ে একাত্তর,
সেই ভয়ানক দিনগুলি।
যে দিন দেখেছি দানবের হিংস্র থাবায়
ছিন্নভিন্ন হয়েছে বোনের শরীর,
কামানের গোলায় ঝাঁঝরা হয়েছে ভাইয়ের বুক।
দেখেছি, সবুজ ঘাসের বুকে
তাজা রক্তের স্রোত।
যে রক্তের প্রতিটি কনা বলছে,
তোমরা স্বাধীন হও, তোমরা স্বাধীন হও।

আজও মনে পড়ে একাত্তর,
সেই অশ্রুসিক্ত দিন গুলি।
যেদিন দেখেছি দানবের ছোবল থেকে
রক্ষা পায়নি দুধের শিশু,
মায়ের চোখের সামনে বুটের চাপে
পিষ্ট হয়েছে কোমল তনু।
দেখেছি, মায়ের চোখ থেকে
ঝরছে প্রতিহিংসার অশ্রু।
যে অশ্রু’র প্রতিটি কনা বলছে,
ওদের ক্ষমা করোনা, ওদের ক্ষমা করোনা।

আজও মনে পড়ে একাত্তর,
সেই দুর্বিষহ দিনগুলি।
যেদিন দেখেছি হানাদার বাহিনী
পুড়িয়ে মেরেছে বৃদ্ধ পিতা কে,
চোখের সামনে বেয়নেট খুঁচিয়ে
মেরেছে আদরের সন্তান কে।
দেখেছি সন্তান হারা পিতার
আর্তনাদ আর করুন চিৎকার,
যে চিৎকারে ধ্বনিত হচ্ছে,
ওদের ধ্বংস করো, ওদের ধ্বংস করো।
ওদের কে শেষ করে দাও।

অন্তর্যামী

হঠাৎ আজিকে কালো মেঘে
সারা আকাশ বব্বর,
ডেকে বলে মা যাসনে কোথাও
এখুনি আসিবে ঝড়।
কে শোনে কথা মানিবে না বাধা
যেতে হবে ঐ দুরে,
ফুলে ফুলে সাদা বকুল তলা
আসিব এখুনি ফিরে।
কালো আর ও গাঢ় হলো
আঁধার হলো যে ধরা,
মন পাখি আর থাকে না ঘরে
যেতে চায় বকুল তলা।
দেখে আসি মা কো’থা আছে
দিতে হবে ফাঁকি তারে,
দেরি হলে আজ ফিরতে হবে
শুন্য হস্তে ঘরে।
মা আছে বসে উননের পাশে
পিছে যেন নাহি ফেরে,
জানতে পারলে উপায় নেই
সাজা দেবে আজ মোরে।
কি বুঝে মা দিল এক হাঁক
বাইরে দিয়েছি যখন পা,
যেতে নেই কোথাও বুঝলি বাচা
মা দেয় যদি বাঁধা।

পবন দেবতা রুষ্ট অতি
ক্ষেপেছে দারুন ভাবে,
সারা পৃথিবী করিবে শ্বশান
কেহ নাহি ক্ষমা পাবে।
প্রলয়ের তালে নাচিছে ধরা
নেই কোন কলরব,
ডাক দিয়ে জীবন দিলে
নাহলে পেতে মোর শব।
সন্তানের জন্য মায়ের মন
চিরকাল দিশেহারা,
বিপদ আসলে বুঝতে পারো
হয়ে যাও পাগলপারা।
সত্যিই তুমি বিশ্ব বিধাতা
এ ভবের অধিশ্বরী,
তোমার নামে মাথা নত হয়
তোমারে প্রনাম করি।

ফিরে দেখা

বিশ বছর পর দেখা হল সার
আমার পল্লী গ্রামখানি,
না পারিলাম কিছু হটিলাম পিছু
রয়ে গেলাম চির ঋনী।
কি যে হল ফল চোখে এল জল
দেখে মানবের দুর্দশা,
বেদনা আঁধার শুধু হাহাকার
নিত্য তাদের আশা।
সুখের ঘরে কেঁদে কেঁদে মরে
দীনতা একা বসে,
পায় না খেতে দিনে বা রাতে
দুঃখ থাকে যে পিছে।
সোনার মাটি আর নেই খাঁটি
ফলে না তেমন সোনা,
এক মুঠে দানা কেবলি বাসনা
বাজেনা সুখের বীনা।
যদি কিছু পায় তিনে দুই নাই
চলে যায় তা ও সুদে,
কত শত কথা জমানো ব্যথা
রেখেছে বুকে বেঁধে।
ছেলে গুলোর মুখ দেখে হয় দুখ
কেমনে সহো তাহা,
মুছে আঁখি জল মনে আনো বল
রেখোনা কোন দ্বিধা।
তুলে দু’হাত করো মোনাজাত
কেঁদে বলো বিধাতারে,
যদি কোন ভুল ফুটে হয় ফুল
দিও তুমি ক্ষমা করে।
করে বিভেদ দুর মিশে করো চুর
অভাব নামের গিরি,
এছাড়া আর নেই খোলা দ্বার
বলে আমি ঘরে ফিরি।

শান্তনা

প্রিয় বন্ধুবর মনে নিয়ে ছল লুকায়েছ কতদুর,
আজি গহিন নিশিতে মনের বাঁশিতে বিরহের বাজে সুর।
ছিল কত স্মৃতি ছায়া বনবিথি হাজার রঙের ভিড়ে,
রাত ফিরে আসে হুল্লোড় শেষে ফিরেছি নিজের নীড়ে।
না হলে দেখা রক্তিম শিখা অনল জ¦লেছে মনে,
দিবা হলে পার বেদনা আঁধার ভেঙেছে হৃদয় বানে।
নিয়ে করে তুলি আলতো রঙের বুলি ফুলে পূর্ণ বাগান,
আর ও কত ছবি নদী শশী রবি বর্নী ছিলে মহান।
দেখা হল পরে একাবিংশ ঘরে বয়স তখন সতের,
হল বুঝি ভুল গননায় গুল পেরিয়েছি কেবল তের।
খাওয়া থেকে ঘুম দুষ্টমির ধুম মাতেয়েছি সারা পাড়া,
হয়েছে অবাক মনের কি ভাব যুগলে দেখেছে যারা।
নানা রঙের মেলা কাটে সারা বেলা সন্ধ্যা হল সারা,
সমাগত জন বুঝিনি তখন কিসের এত তাড়া।
বেলা বয়ে যায় তাড়াতাড়ি আয় নতুন জামা পরে ’নে,
ধূপ দীপ জ্বালা কাজ হল সারা বন্ধু আজ দুজনে।
সুখে দুখে পাশে মনের আকাশে হাজার তারার মেলা,
সুরের ধারায দিন কেটে যায় হরষে কাটে যে বেলা।
কৈশর শেষে যৌবন আসে শিহরিত তনু মন,
রাগ-অনুরাগে মনে প্রেম জাগে ভালবাসায় সারাক্ষন।
সব ফেলে পিছে অবলা আজ কাছে গেয়ে ওঠে প্রেমগীত,
সুক্ষ্ন কি নাম বিধি নয় বাম হেমন্ত সে নয় শীত।
কিছু কিছু ভুল ফুটে হয় ফুল হৃদয় এলযে কাছে,
আর নয় দেরি কর তাড়াতাড়ি কিছু লোক বলে কথা পিছে।
একেএকে আজি প্রজাপতি রাজি সাতপাকে হল যে বাঁধা,
দুইয়ে দুই চার এক বছর পার কৃষ্ণরা পেল তার রাধা।
সময়ের পথ ধরে বয়ে চলে অতি ধীরে জীবনের জয় রথ,
দিন কেটে যায় সুখের ভেলায় ধরেছ অন্য পথ।
ললনা পেয়ে কাছে ভুলেছ কি পিছে জীবনে এসেছ ফেলে,
কৈশরের স্মৃতি নানা সুরের গীতি সব দিয়েছ জলে।
মন আমায় বলে সব যাও ভুলে ভষ্মে ঢেলো না ঘি,
লাভ নেই ভেবে যা হবার হবে দ্বারে হৃদয়ের ভাগী।
সুখে থেকো তুমি এই মিনতি করজোড়ে প্রার্থনা,
আজ ও আমি স্বরি বন্ধু তোমারি এই আমার শান্তনা।

এইতো জীবন

এইতো মাত্র আর কটা দিন,
হয়তো জয়ি বন্যাকে মনে রাখবে না কেউ!
মনে পড়বে কালে ভদ্রে,
বিশেষ কোন সময়ে,নতুবা বিশেষ দিনে।
জাগ্রত হবে না আর কারো বিবেক।
কাঁদতে কাঁদতে চোখের জল ও
শুকিয়ে যাবে এক দিন।
কেবল শুকাবেনা মায়ের শাড়ির-
আঁচলের প্রান্ত ভাগ।
দিগন্তের মেঘমালা উড়ে যাবে,
পাখির কুজনে মুখরিত হবে
সবুজে ঘেরা বন বিথী।
রবি সম্পাদন করবে আপন কর্ম।
তিমির রজনীতে জেগে রবে তারা গুলোন,
সাথে হয়তো মা।
বিচারের দাবিতে কাঁপবে না রাজপথ,
স্থিমিত হবে জনরোষ,
সবাই নিজের কাজে আবারও ডুব।
ব্যানার গুলো কারো দরজায়,
অথবা কারো টেবিল আচ্ছাদনে।
শ্লোগান সেতো অতীত,
বন্ধ হবে ফেসবুক লিখন।
মিডিয়া লম্বা…. ছুটিতে।
আদালত চত্বরে ইনজামামের মুচকি
হাসি প্রসারিত হবে আরো;
আন্দলিত হবে শিরা উপশিরায়।
হয়ত স্বাক্ষীর অভাবে-
আইনের ফাঁক গলে লাল দালান হতে
সোজা বাড়ির নরম বিছানায়।
এক সময় অট্টহাসি।
আবার ও কারো ছত্রছায়ায়….
জয়ি, বন্যা নয়তো অন্য কেউ।
কি আর চাই….
এই তো জীবন!
বেশ ভালোই তো চলছে….
চলুক না।

আমি জয়ি বলছি

আমি জয়ি বলছি,
ওদের তোমরা ক্ষমা করো না।
যাদের উদ্মাত্ত রক্তের নেশায়
বলি হতে হল আমায়,
বিদায় বলতে হল-
প্রিয় মা,মাটি, মানুষকে।
বিদায় বলতে হল সহপাঠি ও
প্রিয় শিক্ষকদের কে।
ওদের তোমরা ক্ষমা করো না।

মা-বাবা,
আমায় ক্ষমা করে দিও।
আমি চাইনি তোমাদের ছেড়ে,
তোমাদের কাঁদিয়ে চলে আসতে।
আমি কি কষ্ট পাইনি?
অনেক কেঁদেছি মা।
তবু আমি পারিনি,
আমি পারিনি ঐ নরপশুর হিংস্র
থাবা থেকে নিজেকে বাঁচাতে,
পারিনি নিজের সম্ভ্রম বাঁচাতে।
তোমাদের ভালবাসার মূল্য
দিতে পারলাম না।
আমাকে ক্ষমা করে দিও।

প্রিয় সহপাঠিনী,
তোরা আমাকে ক্ষমা করে দিস।
কাছে থেকেও তোদের বলে আসতে
পারলাম না।
নিজের অসম্মানের কথা কি করে
তোদের বলতাম বল।
বলার ক্ষমতাটাও ঐ মানুষ রুপী জানোয়ার
কেড়ে নিয়োছিল আমার কাছ থেকে।
কেড়ে নিয়েছিল আমার
সকল হিতাহিত জ্ঞান কে।
পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিস।

প্রিয় এলাকাবাসি,
তোমাদের সজাগ দৃষ্টিও
আমাকে রক্ষা করতে পারলাে না,
পারলো না ঐ কালপিট কে দমিয়ে রাখতে।
কষ্ট নিয়ে এসেছি এতে
আমার কোন দুঃখ নেই।
শুধু দুঃখ পাই এ জন্য-
এখনো ওরা সমাজের বুকে
মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
এখনো ওরা অট্টহাসি হেসে বলছে,
জয়ি তোরা মর।
আমাদের হাতে মরার জন্য
তোদের জন্ম হয়েছে।

তাই বলছি,
আর চোখের জল নয়।
ঐ চোখে দেখতে চাই
প্রতিবাদের অগ্নি স্ফুলিঙ্গ।
যে আগুনে ভস্মিভূত হবে-
ঐ মানুষরুপী কুলাঙ্গার,
ওদের সকল আস্তানা।

ফরিয়াদ

হে প্রভু ক্ষমা কর তুমি, আমি অপরাধী,
তোমারে ভজিতে নাহি পারি।
অন্তরে মোর সহস্র ব্যথা ,
মালা করে গলে গাঁথি।
মলিন বদনে চেয়ে থাকি আমি,
তুচ্ছ করি তোমারে।
কেমনে ডাকিব জানিনা আমি
ব্যথা ভরা এ হৃদয়ে।
চারিদিকে শুধু দুঃখের সাগর,
কষ্টে গড়া পাহাড়।
হৃদয়ের কপাট খোলনি তুমি,
দিয়েছ অমার আঁধার।
জীর্ণ বস্ত্র শীর্ণ আহার
চুম্বিছে আমার প্রান।
হিংসার আগুনে ভস্মি হয়ে
পৃথিবী হয়েছে শ্বশান।
ফরিয়াদ তুমি মঞ্জুর কর
মুছে দাও ভেদাভেদ,
সবার তুমি ভূল ভেঙে দাও,
দুর কর সকল ক্লেশ।

জীবনের বাঁকে

সেদিন দুপুরে পথের ধারে ছোট্ট এক ভীড়ে,
দেখিল বিশু এক পথশিশু বিদ্ধ কথার তীরে।
চোখে তার জল গা থরথর ভয়ে সে জড়োসড়ো,
কম্পিত স্বরে বলছে বারে বারে মার্জনা মোরে করো।

ক্ষুধার জ্বালায় প্রান চলে যায় ভুল করেছি তাই,
আমি যে অনাথ কষ্ট অগাধ বাবা মা বেঁচে নাই।
কাকে দেব দোষ করেছি উপোস পরশু থেকে আজ,
ঘুরেছি দ্বারে ঘরে বাহিরে জুটেনি তবুও কাজ।
খেয়েছি তাই ডাস্টবিনে পাই গায়ে লাগেনি দাগ,
গত দু’দিন হঠাৎ আসিন কুকুর বসিয়েছে তাতে ভাগ।

প্রান বাঁচাতে আজ নিজ হাতে নিয়েছি এই রুটি,
বুঝিনি তখন বাঁচাতে জীবন ধরবো চেপে টুটি।
মনে প্রানে মানি নিজ থেকে জানি চুরি করা মহাপাপ,
অনাহারি মন জানিনা কখন করেছে সেই কাজ।
আমি নই শুধু দেখে মরু ধূধূ হাজার পথশিশু,
পথের ধারে জীবন বাড়ে সম্বল নেই কিছু।

বাঁচার জন্য পথ অন্য তৈরি করে নিজে,
হয়ে অপরাধী করে চাঁদাবাজী এ সমাজের মাঝে।
শুনে তব কথা মনে লাগে ব্যাথা চোখে নামে বরষা,
অঝোর ধারায় বারি বয়ে যায় মেঘ কাটে সহসা।
ভাবিল বিশু সব পথশিশু নয় সে অপরাধী,
সমাজের জন্য ভাগ্য শুন্য তারা অন্য নাওয়ের মাঝি।

আজ থেকে তার কষ্টের প্রহর সাঙ্গ হল ভবে,
নতুন আশায় আলোর দিশায় চোখের তারায় রবে।
পরম মমতায় স্নেহ ছায়ায় জীবন বাড়িল তার,
জীবনের বাঁকে শত ছবি আঁকে আজ সে বড় ডাক্তার।