ট্যাগ আর্কাইভঃ মামুনের অণুগল্প

অণুগল্পগুচ্ছ

15951927_953729938091100_2921326241902608781_n
অণুগল্পগুচ্ছ
___________

গ ল আর প – তিন ভাই একদিন জীবনবোধের সন্ধানে পথের শেষে এসে পৌঁছায়। সামনে নদী। বড় ভাই গ মেজ ভাই প কে সাঁতার শিখিয়েছিলো তাদের বাবার জীবদ্দশায়-ই। কিন্তু ল জানতো না। পানিকে ভীষণ ভয় ছিলো ওর।

শেষে গ নেতৃত্ব দেয়। ল কে প পিঠে নিয়ে তিনভাই ওপারে আসে। জীবন নামের এক্কা গাড়ি ওপারে বিষম বিষন্নতায় ধুঁকছিলো। কোনো বোধ ছিলো না। তিনভাই জীবনের এক্কা গাড়িতে আরোহণ করে।

গাড়িতে ছিলো হারিয়ে যাওয়া সেই প্যান্ডোরার বাক্স। গ ল আর প প্যান্ডোরার বাক্সকে সাথে নিয়ে পথহীন পথে জীবনের এক্কা গাড়িতে পথ তৈরী করে চলে। ধীরে ধীরে জীবনের গাড়ি পথে পথে চলে.. ক্রমশ: বোধ লাভ করে। ওদের ফেলে আসা পথে ছোট ছোট প্ল্যাটফরম তৈরী হয়.. ছোট গাড়ি -মাঝারি- বড়- ধারাবাহিক এভাবে ধীরে ধীরে সমগ্র জীবন। বোধের পরতে পরতে গল্প গলপ আর গল্পে ভরে যেতে থাকে। জীবনের বিস্তার ঘটে.. তার বোধোদয় ঘটে। জীবনবোধকে উপলব্ধি করে তিনভাই ও খুশী হয়।

আমি ওদের ফেলে আশা ছোট্ট একটি প্ল্যাটফর্মের একজন ছোট স্টেশনমাস্টার। ওদের ক্লোন অতি ক্ষুদ্র এক প্যান্ডোরার বাক্স থেকে, আশায় জড়ানো সুখ-দু:খের অণুমুহূর্তকে সাথে নিয়ে ক্ষুদ্র এক ভাবনার বাতিঘর!

#গল্পের_গল্প

★★
পঞ্চম দিনের মতো চেয়ারম্যানের সদর দরোজায় দাঁড়িয়ে থেকে অপেক্ষার প্রহর গোনে বৃদ্ধ কফিল, ঠায় ঘন্টাখানিক দাঁড়িয়ে থাকে তবুও ক্ষমতাধর মানুষটির সময় হয় না বের হবার। বয়স্ক ভাতা পাচ্ছে না এই পঁয়ষট্টি উর্ধ বৃদ্ধটি তাই এই ইচ্ছেকৃত অবহেলা সয়েও, হেলায় অবহেলায় সয়ে যায় কষ্টকর ক্ষণগুলি… দিন দিন প্রতিদিন।

আগুন…বারুদ… আর্তনাদ…রক্ত…বিচ্ছেদ …অশ্রু … হাহাকার… ক্ষোভ … ঘৃণা … আক্রোশ … জেদ … প্রত্যয় … প্রতিজ্ঞা … যুদ্ধ … বিজয়… সৃষ্টির প্রেরণা … সবকিছু মিলেমিশে এই বৃদ্ধ সার্টিফিকেটহীন মুক্তিযোদ্ধা, তাঁর হৃদয়ে বাংলাদেশ নিয়ে অপেক্ষার মুহুর্তগুলিতে ভেবে ভেবে উদাস হয়, ‘এই জন্যই কি যুদ্ধ করেছিলাম…’ লাখো শহীদের আত্মারাও দেখে আর তাদের নির্দিষ্ট জায়গায় বসে ভাবে, ‘এই জন্যই কি…?’

#এই_জন্যই_কি?

★★★
‘ঈদের দিন তোমার মেয়েকে নিয়ে সারাদিন আমার বাসায় বেড়াও’…হঠাৎ তরকারি কুটা থামিয়ে দিয়ে ফাতুর মা বাড়িওয়ালির দিকে তাকালে তিনি আবার বলেন- ‘বলছিলাম ঈদের দিনে তোমার বাসায় রান্না-বান্নার আর আয়োজন করো না, মেয়েকে নিয়ে সকালে এখানে চলে এসো।’

কিছুই না বলে চুপ থাকে ফাতুর মা এবং কল্পনায় ওর ভেসে উঠে ঈদের একটি দিনে সে এবং তার মেয়ে ফাতু দিনভর এই বাসায় কোরবানির গোশত নিয়ে বাড়িওয়ালির ফরমাশ মত কাজ করে যাচ্ছে।

বাহ! কি সুন্দর বেড়ানোর দাওয়াত… গরীবের ভিতরে ওরা আরো গরীব বলেই নিজেদের একান্ত একটি দিন ও যেন ওদের থাকতে নেই.. তাইতো বাড়িওয়ালির এই আগাম দাওয়াত!

#আগাম_দাওয়াত

★★★★
তৃতীয়বারের মত পাত্রপক্ষ এসে লায়লাকে যখন নাকচ করে চলে গেল, কাছের আত্মীয়স্বজন আর দূরের পড়শিদের অদৃশ্য হুলের সাথে সাথে এলাকার লোলুপ কিছু চোখের লালা ঝরানো ধারালো ফলায় রক্তাক্ত হয়ে সে প্রসূনদের বুড়ো আমগাছটির নিচে এসে দাঁড়ায়।
কালো মেয়ের আলো ঝরানো হাসির ঝলকে গাছের পাতায় পাতায় আন্দোলনের ঢেউ জাগে, একটু একটু ছুঁয়ে যায় লায়লার হৃদয়.. নারীর রং এবং দেহ কে কেন্দ্র করে বেঁচে থাকা এই পুরুষশাসিত সমাজের বর্ণিল মানুষগুলোর প্রতি এক তীব্র করুণা অনুভব করে সে।

এক কালো নারীর বুকের গভীর থেকে বের হয়ে আসা উষ্ণ প্রশ্বাসে এই শীতের সকালে গাছের পাতারা আরো উষ্ণতায় বুঁদ হয়.. কালো মেয়ের দ্বন্দ্ব ঘুচাতে এই জীবনে বুঝি আর কেউ এলো না.. ঘুণেধরা সমাজের দোদুল্যমান শেকড়ের গভীর থেকে জীবনবোধের পলেস্তারা সেই উষ্ণতায় ক্ষয়ে ক্ষয়ে পড়ে… খোকলা বানায়.. ধীরে ধীরে।।

#দীপ_জ্বেলে_যাও

★ ছবি: নেট থেকে নেয়া।

অণুগল্প নিয়ে কিছু কথা

অণুগল্প নিয়ে কিছু কথা
____________________
অণুগল্প আসলে পাঠককে লেখক বানানোর কিছু হিন্টস সমৃদ্ধ লিখনি- যা পাঠককে ভাবনা চিন্তার অবকাশ দেয়। অণুগল্প নিয়ে আমার ক্ষুদ্রজ্ঞানে আমি অনেক চিন্তা-ভাবনা করেছি। বেশ কিছু অণুগল্প লিখবার ইচ্ছে রয়েছে এবং কিছু লিখেছিও। আজ দেখাবো অণুগল্প নিয়ে যে আসল উদ্দেশ্য সে ক্ষেত্রে কাজটি একজন পাঠক তাঁর মন্তব্যে কিভাবে করে একজন লেখকে পরিণত হনঃ-

নিচের গল্পটি একজন অণুগল্পকারের (আমার নিজের)। এই গল্পটিতে লেখকের নেগেটিভ মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

জ্বলে উঠা (নেগেটিভ মানসিকতা)
>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>
সারা রাত কলেজের পরীক্ষার খাতা কেটে সেই ভোর চারটায় ঘুমাতে গেছে মাহতাব। কাল শুক্রবার। ভেবেছে বারটা পর্যন্ত একটানা ঘুমাবে। ঘন্টা দুই ঘুমিয়েছে কেবল, তখনি কণা ওকে ডাকতে থাকে।

: অ্যাই, ওঠতো। দেখ মা কি পাঠিয়েছে!

প্রচন্ড রাগ নিয়ে বউয়ের দিকে তাকায়। ঘুমজড়ানো লাল চোখ পিটপিট করে বউয়ের হাসিমুখ দেখে। আরো রাগ বাড়ে। বিছানার সামনের মেঝেতে পড়ে আছে জিনিসগুলো। বেশ বড়সড় একটি প্লাষ্টিকের ম্যাট, সাদা পলিথিনে ভর্তি আতপ চাল, কোরবানির গরুর গোশত- কিছু কাঁচা, হাড়িতে রান্না করাও দেখল বেশ খানিক। চোখ পুরোটা মেলে এগুলোর সাথে আচারের ডিব্বার পাশে মুড়ি এবং খইয়ের টিন দেখতে পেলো।

অবশেষে খুব ঠান্ডা স্বরে কণাকে জিজ্ঞেস করে,

: এগুলোর সাথে আমার জন্য তোমার বাবার পুরনো দু’ একটা জামাও দেয় নাই?

মাহতাবের অতি শীতল কথাগুলো কণার ভিতরে কোথায় যেন ওলটপালট করে দেয়। সে মুহুর্তে জ্বলে উঠে।

আগুন জ্বলে দু’দিকেই।
… …
প্রিয় পাঠক!
এখন একজন পাঠক পড়া শেষে মন্তব্যে এই গল্পটিকে পজিটিভলি এভাবেও দেখাতে পারেন-

জ্বলে উঠা (একজনের নেগেটিভ এবং অন্যজনের পজিটিভ মানসিকতা)
>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>
সারা রাত কলেজের পরীক্ষার খাতা কেটে সেই ভোর চারটায় ঘুমাতে গেছে মাহতাব। কাল শুক্রবার। ভেবেছে বারটা পর্যন্ত একটানা ঘুমাবে। ঘন্টা দুই ঘুমিয়েছে কেবল, তখনি কণা ওকে ডাকতে থাকে।

: অ্যাই, ওঠতো। দেখ মা কি পাঠিয়েছে!

প্রচন্ড রাগ নিয়ে বউয়ের দিকে তাকায়। ঘুমজড়ানো লাল চোখ পিটপিট করে বউয়ের হাসিমুখ দেখে। আরো রাগ বাড়ে। বিছানার সামনের মেঝেতে পড়ে আছে জিনিসগুলো। বেশ বড়সড় একটি প্লাষ্টিকের ম্যাট, সাদা পলিথিনে ভর্তি আতপ চাল, কোরবানির গরুর গোশত- কিছু কাঁচা, হাড়িতে রান্না করাও দেখল বেশ খানিক। চোখ পুরোটা মেলে এগুলোর সাথে আচারের ডিব্বার পাশে মুড়ি এবং খইয়ের টিন দেখতে পেলো।

অবশেষে খুব ঠান্ডা স্বরে কণাকে জিজ্ঞেস করে,

: এগুলোর সাথে আমার জন্য তোমার বাবার পুরনো দু’ একটা জামাও দেয় নাই?

মাহতাবের অতি শীতল কথাগুলো কণার ভিতরে কোথায় যেন ওলটপালট করে দেয়। সে মনের ভেতরে মুহুর্তেই জ্বলে উঠে, আবার দপ করেই নিভে যায়।

ভাবে, আহারে বেচারা, কাজের চাপে কী দশা!

আবেগে কান্ডজ্ঞান ভুলে যাওয়ায় নিজেকে শাসায় কণা,
বড় অন্যায় হয়ে গেছে!

উঠে যায় মাহতাবের দিকে-
কপালে হাত রেখে আস্তে করে বলে- স্যরি!

বাইরে তখন সকালের মিষ্টি রোদের সাথে শরতের মেঘের খুনসুটি!!

>> এখানে বউয়ের দিক থেকে পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গী দেখানো হয়েছে।

এবার অন্য একজন পাঠক মন্তব্যে করতে গিয়েএকই গল্পটিকে দুজনের দিক থেকে পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গীটি কেমন হতে পারে সেটা দেখাতে পারেন-

জ্বলে উঠা (স্বামী স্ত্রী উভয়ের পজিটিভ মনোভাব)
>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>
সারা রাত কলেজের পরীক্ষার খাতা কেটে সেই ভোর চারটায় ঘুমাতে গেছে মাহতাব। কাল শুক্রবার। ভেবেছে বারটা পর্যন্ত একটানা ঘুমাবে। ঘন্টা দুই ঘুমিয়েছে কেবল, তখনি কণা ওকে ডাকতে থাকে।

: অ্যাই, ওঠতো। দেখ মা কি পাঠিয়েছে!

প্রচন্ড রাগ নিয়ে বউয়ের দিকে তাকায়। ঘুমজড়ানো লাল চোখ পিটপিট করে বউয়ের হাসিমুখ দেখে। আরো রাগ বাড়ে। বিছানার সামনের মেঝেতে পড়ে আছে জিনিসগুলো। বেশ বড়সড় একটি প্লাষ্টিকের ম্যাট, সাদা পলিথিনে ভর্তি আতপ চাল, কোরবানির গরুর গোশত- কিছু কাঁচা, হাড়িতে রান্না করাও দেখল বেশ খানিক। চোখ পুরোটা মেলে এগুলোর সাথে আচারের ডিব্বার পাশে মুড়ি এবং খইয়ের টিন দেখতে পেলো।

স্ত্রীর উচ্ছ্বসিত হাসিমুখ দেখে রাগটা গিলে ফেলল মাহতাব। কণার এলোমেলো চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, ‘আমাদের বিয়ে হয়েছে কত বছর বল তো? মা কি এখনো বোঝেন না তোমাকে ভালবাসার জন্য আমার কোন উপঢৌকনের প্রয়োজন নেই?’ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে বলে, ‘যাক, এসেই যখন গিয়েছে, তুমি বরং মাংসটা চাপিয়ে দাও। সারারাত ঘুমাইনি লক্ষ্মীটি, একটু ঘুমাই, আমি উঠে মাকে ফোন করে থ্যাঙ্ক ইউ জানাব’।

খুশি হয়ে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ায় কণা। আসলেই খুশিতে মাহতাবের ঘুমের কথাটা একদম মনে ছিলোনা, ভীষণ ভুল হয়ে গিয়েছে! দুপুর তিনটা পর্যন্ত আর বাচ্চাদেরও ঐদিকে যেতে দেবেনা সে। ততক্ষণে মাহতাবের প্রিয় কাচ্চি বিরিয়ানী রান্না হয়ে যাবে। ঘুম থেকে উঠে কি সারপ্রাইজড’ইনা হবে সে!

ওদিকে স্ত্রীকে হাসিমুখে যেতে দেখে মাহতাবের মনটাও ভাল হয়ে যায়। আজ ঈদের দিন বকা দিলে মনটা খারাপ হত বেচারীর। শাশুড়ি যতই মনে করুন তাঁর উপহার উপঢৌকন তাঁর আহ্লাদী মেয়ের সংসার টিকিয়ে রেখেছে, সহজ সরল বৌটাকে সে আসলেই অনেক ভালোবাসে। একটু বোকা মেয়েটা, কিন্তু সে আসলেই মাহতাবকে অনেক ভালোবাসে। নিশ্চিত সে বাচ্চাদেরও আর দুপুর তিনটা পর্যন্ত এমুখো হতে দেবেনা। ভালোই হোল, এখন বারোটার পরিবর্তে তিনটা পর্যন্ত ঘুমোনো যাবে!
… …

প্রিয় পাঠক!
তিন লাইনের এক নতুন ফরম্যাটে লিখে চলেছি অণুগল্প। একজন সফল অণুগল্পকারের খেতাব নেবার জন্য নয়। যারা পড়তে ভালোবাসেন, নিজের মায়ের ভাষাকে ভালোবাসেন, যারা অনুভবক্ষম সেই সব পাঠকদেরকে এভাবেই এক একটি অণুগল্প নিয়ে নিজেদের ভাবনা চিন্তায় বিলীন করে এক একজনকে লেখকে পরিণত করতেই আমার এই প্রয়াস। ফেসবুকে পড়ার সময় কম। তাই নিজের দীর্ঘ লিখার (উপন্যাস ও ধারাবাহিক বড় গল্পের কথা প্রযোজ্য নয়) গলা টিপে ধরে কেবল মাত্র পাঠক-লেখকের ভেতরকার মিথস্ক্রিয়া ঘটানোর জন্যই আমার এতো কিছু লিখে যাওয়া।
আমি অক্ষরপ্রেমী! আমি চাই আমার মায়ের ভাষার প্রতিটি অক্ষরের প্রতি সকল পাঠকও মমতা অনুভব করবেন। নিজেরা লেখকে পরিণত হবেন। বাংলা ভাষাকে আরো সমৃদ্ধ করে তুলবেন।

লিখতে লিখতে দেখুন, এই লিখাটিও বড় হয়ে গেলো। তবে এই লিখাটির শেষে, তিন লাইনের অণুগল্পগুলি পড়ুন পাঠক। পড়ুন এবং অনুভবে-কল্পনায় লিখালিখিতে বিলীন হয়ে উঠুন! অক্ষরের উল্লাসে মেতে উঠুন!!
_________________________

পাতা ঝরার দিনের প্রথম অণুক্ষণে, দু’জনে সিদ্ধান্ত নিলাম, ‘নাহ, এভাবে সম্পর্কটিকে আর ঝুলিয়ে রাখব না।’ প্রায় বছরখানিক হলো ওর সাথে আমার এফেয়ার, দু’জনে নিজেদেরকে এই সময়ের ভিতরে জেনে-বুঝে অনুভবে হ্যা-বোধক অনুভূতির অনুরণনে বিলীন করে দিয়ে ফাইনাল সিদ্ধান্ত নিলাম।

তাই কোনো এক পাতাঝরার দিনের বিষন্ন বেলায়, সম্পর্কটিকে ‘দু’জনময়’ করে তুলতেই আমরা জীবনের মহাশূণ্যে ঝাপ দিলাম.. সেই থেকে ভেসে বেড়াচ্ছি দু’জনে.. পাশাপাশি!

#ঝরা_পাতার_কাব্য

★★
দশ ঘন্টার গোলামির জোয়াল কাধ থেকে পিছনে ফেলে রেখে, নিজের মেসের সিঁড়ি ভেংগে উঠতে উঠতে তৃতীয় তলা পার হতে গিয়েই মুরগির মাংসের রান্নার ঘ্রাণ পায় রেজওয়ান।

বাবা বলতেন ‘কুড়ার গোশত’, সেই দু:সহ সময়গুলিতে এভাবে আক্ষেপ করতেন- ‘কতদিন কুড়ার গোশত খাই না রে রিজু..তোর খালু ও তো এক দু’দিন দাওয়াত দিয়ে খাওয়াতে পারে?’

সক্ষম-অক্ষমের গোলকধাঁধায় বাবার জীবন কেটেছিলো, অক্ষম সময়ে কাছের সক্ষমেরা এই ছোট ছোট ইচ্ছেগুলি চাইলেই পূরণ করতে পারতেন, কেন জানি করলেন না ওনারা.. কিছু একটা অপূর্ণতা জীবনে রেখেই চলে যেতে হয় অনেককে।।

#কুড়ার_গোশত

★★★
সে সম্পুর্ণ নগ্ন হয়ে এলো আমার সামনে। আমি তাকে প্রেমের চাদর পরিয়ে দিলাম।

ভালবাসা পুড়ে পুড়ে প্রেম হতে শরীর লাগে না কারোর।।

#অভিসার

★★★★
আমি আর তুমি এক হলাম।
সে এলো।

অনেকগুলি বছর পার করে যাবার বেলায় আমাদেরকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে গেলো।

#আমি_তুমি_সে

★★★★★
অনেক রাতে রুমা টের পায় আরমান গেট খুলে বাইরে যায়.. কিছুক্ষণ পর ফিরেও আসে। বেসিনের সামনে পানির ট্যাপ থেকে দীর্ঘক্ষণ পানি পড়ার আওয়াজ শুনতে পায়.. কিন্তু ইচ্ছে করেই সে উঠে না।

আরো অনেক পরে নিজের পাশে পরিচিত মানুষটির স্পর্শ পায়, ওর গালে আরমানের হাত… ধীরে ধীরে অবাধ্য হয়ে উঠতে চায়… একসময় সময় আর সময়ের ভিতরে থাকে না.. প্রিয় মানুষটির শরীর অন্য কারো ঘ্রাণে মাখামাখি… বড্ড অপরিচিত লাগে.. দূরের মানুষটি বড্ড কাছে চলে এসেও কিভাবে যেন আরো দূরে সরে যায়!!

#কাছের_মানুষ_দূরের_মানুষ

Screenshot_2017-01-18-12-02-59

তিন লাইনের তিনটি অণুগল্প

FB_IMG_1484679782730

রেল ষ্টেশনে প্রচন্ড ভীড় এমনই একদিন আমাদের তিনজনের প্রথম পরিচয়। সময় একদিন আমার হৃদয় মাড়িয়ে তুমিকে সে’র সাথে ফিরতি ট্রেনের বন্ধ কম্পার্টমেন্টে পাশাপাশি বসিয়ে দেয়।

সেই থেকে একাকী এক নিরব প্ল্যাটফর্মে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হয়ে চলন্ত ট্রেনগুলোতে ওদের খুঁজে বেড়াই।

#আমি_তুমি_সে

★★
জৈষ্ঠ্য মাসের মাঠফাটা গরমে, কাকের হা করা উষ্ণতর অনুভবে চারপাশটা তখন ঝাঁ ঝাঁ আগুনে বাতাসে উদ্দীপ্ত।

কাঁধের ঝোলার স্ট্রাপ আরেকটু ‘এডজাস্ট’ করে নিয়ে বৃদ্ধাশ্রমের গেটের সামনে একটু থমকে, পেছনের ফেলে আসা খা খা শুন্য পথের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকেন বৃদ্ধটি।

প্রিয়জনেরা বাকি আলোটুকু নিভে যাবার জন্য তাকে এই ‘ডেড-এন্ডে’ পাঠিয়ে দিয়েছে।

#অগস্ত্যযাত্রা

★★★
মদ্যপ বাবাটা যখন মাকে ছেড়ে বস্তির আরেক মহিলার হাত ধরে চলে গেলো, তখন কতটুকুই আর বড় ছিল শিউলি!

সেই থেকে মা আর সে… সে আর মা.. কখনো কখনো কেবলি মা আর মা… কিন্তু কখনো সে আর সে হতে দেননি মা।

বছরগুলি ঘুরে ফিরে মায়ের চলে যাবার পাঁচ বছর পূর্ণ করালেও, এখনো মায়ের আঁচলের নরম আদরটুকু শিউলি অনুভব করে বরাবরের মতই।

#আদর

# ছবি: নেট থেকে কপি করা।

চোর …

প্রতিদিনের মতো অফিস ফেরত একজন বাবার ভূমিকায় শিহাব। ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘর থেকে ঘুরে এসে নিজের বেডরুমে। কণা কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। ঘুমিয়ে গেছে। স্বাভাবিক নি:শ্বাস পতনের শব্দ এবং কিছু অংগের উত্থানপতনে বুঝা যায় সে গভীর ঘুমে।

ঘুমের ভান নয়।
ভান শব্দটা এজন্যই শিহাবের মনে এসেছিলো রুমে প্রবেশের মুখে। কণা প্রায়ই এমন দুষ্টুমি করে ওদের ছোট বাবুটাকে সাথে নিয়ে। হঠাত করে নৈশব্দের নিঝুম নিমগ্ন ক্ষণে, একাকী বিচরণরত শিহাবকে চমকে দেয় কণা। কখনো ছোট বাবুটা। এভাবেই চলে নাগরিক জীবনে বেমানান কিছু বাবাদের সংসার সংসার খেলার মাঝে, কিছুটা আনন্দঘণ মুহুর্ত! কাছের মানুষদের থেকে পাওয়া। রিফ্রেশমেন্ট?
কণা ইচ্ছাকৃত করে?

সম্পর্কগুলি নিত্য নতুন টানাপোড়ণে ভোগে। দগ্ধ হয়। ক্ষয় হয়। তাই অনবরত এর পরিচর্যা প্রয়োজন হয়। কণা বুঝে? তাই সহজ করতে এমন করে? বিবাহিত জীবনের কুড়ি বছর পার করে এসে ও কি সেই প্রথম দিকের অনুভবকে জাগিয়ে তুলতে চায়?

শিহাব কি বুঝে?
কখনো কি নিজে কণার মতো সম্পর্কগুলির ক্ষতের মলম হতে চেয়েছে? সম্পর্কের মাঝের ক্ষয় রোধে তুমি নিজে কি ভূমিকা নিয়েছো? আদৌ নিয়েছো কি?

নিজের কাছ থেকে এমন প্রশ্নে বিব্রত শিহাব হাসে। নি:শব্দে। এটা নিজের মনে হাসা। ইদানিং এভাবেই হাসে অনেকে। নিজের থেকে লুকোতেই অনেক বাবারা ও এমন করেন।

ছোট্ট বাবুটা ঘুমন্ত মায়ের পাশে বসে হোমওয়ার্ক করছে। শিহাব নিরবে পাশে বসে। একটু দেখে। এটা মেয়ে বাবু। তবে পুরোদস্তুর ছেলেদের পোশাক পরে আছে। কান টুপি ও পরেছে একটা। দুষ্ট এক ছেলের পোশাকে দুষ্টু মেয়েটি স্কুলের কাজে মগ্ন। তার ভিতরেও বাবার পাশে বসাটা অনুভব করে। সে ও বাবার দিকে না তাকিয়ে নিজের মনে হাসে। ওর হাসি নিজের থেকে নিজেকে লুকোতে নয়। নিজেকে জাহির করতে। বাবার অনুপ্রবেশ তার ব্যস্ততার ভিতরেও অনুভবের নোটিফিকেশন এক্সিকিউট হয়েছে, ধরা দিয়েছে ঐ নিরব হাসির দ্বারা।

শিহাব মোবাইলে পাওয়ার ব্যাংকের সংযোগ দিতে দিতে স্বগতোক্তি করে,
– তরকারি চুরি করে খেয়ে এলাম।
বাবুটা এবার বাবার দিকে তাকায়। হাত কাজ করে চলে। ইরেজার দিয়ে পেন্সিলের লেখা মুছছে। সে প্রশ্ন করে,
– তুমি তো এমনিতেই খেতে পারো। চুরি করা লাগে কেনো?

মোবাইলে চোখ, কী’র উপর আংগুল, শিহাব প্রশ্নের উত্তর দেয়,
– আমার চুরি করে খেতেই ভালো লাগে। আমার ভিতরের চোরটা এই কাজ করে।

পাশের রুমে বড় কন্যাকে হাউস টিউটর পড়াচ্ছে। ইউনিভার্সিটির ছাত্র। ছোট বাবুটা হেসে হেসে অল্প আওয়াজে বাবাকে বলে,
– আস্তে বলো পাপা, স্যার শুনবে।
– শুনুক। সবার ভিতরেই একটা করে চোর থাকে।
– সবার ভিতরে? স্যারের ভিতরে ও চোর আছে?

ছোট বাবুটার প্রশ্নের উত্তরে শিহাব একটু থামে। ভাবে? উত্তর দেয়,
– হ্যা। আছে।
– সে কি চুরি করে?
– ধরো, সে নিজের পাপাকে ফোন করে বললো যে বই কিনতে হবে, হাজারখানিক টাকা পাঠাও। তার বাবা টাকা পাঠিয়ে দিবে। সে আড়াইশো টাকা বইয়ের পিছনে খরচ করলে বাকী সাড়ে সাতশো’ টাকা বন্ধুদের কে নিয়ে বিড়ি ফুঁকে শেষ করবে। এটা তার ভিতরের চোরটা করে।
– এটা তো স্যারের বাবাকে মিথ্যে বলা হলো, তাই না পাপা? এই চোরটা তোমার চোরের চেয়েও খারাপ।
– হ্যা বাবা।

বাবুটার পরবর্তী প্রশ্নে শিহাব বিব্রত হয়,
– পাপা, তুমি কি কখনো দাদা ভাইয়ের সাথে এমন করেছো?

কি উত্তর দেবে ভাবতে সময় নেয় শিহাব। তবে বাবুটাই ওকে উদ্ধার করে। সে হোমওয়ার্ক করা অবস্থায় লজ্জিত হেসে বলে,
– আমার ভিতরেও একটা চোর আছে পাপা! :)
– হ্যা আছে। :) তোমার চোরটা কি করে?
– আমার চোরটা অনেক কিছু করে। তুমি ঘুমিয়ে গেলে তোমার মোবাইল দিয়ে গেমস ডাউনলোড করে। আপুর ভিতরের চোরটা ও আম্মুর মোবাইল দিয়ে ফেসবুকে ঢুকে ঘুরে ফিরে আবার তার একাউন্ট ডি-এক্টিভেট করে রাখে। ও মাই গড! আমি তো অনেকের ভিতরের চোরকে দেখতে পাচ্ছি পাপা! জান্নাতি, আমেনা, মিতু- ওদের ভিতরের চোরগুলি ক্লাসে কি করে আমি এখন জানি পাপা :)

শিহাব ছোট বাবুটার উচ্ছ্বাসিত অনুভবে ধীরে ধীরে ভালোলাগায় কোমল হতে থাকে। সময় বয়ে চলে। নিরুদ্বেগ সময়। আবারো প্রশ্ন বাবুটার,
– পাপা, সব চেয়ে বড় চোর কাদের ভিতরে থাকে?

উত্তর দিতে গিয়ে থামতে হয়। বাবাদের কখনো কখনো ভেবে চিন্তেও উত্তর দিতে হয়। শিহাবও দেয়,
– যারা একসাথে অনেক মানুষকে মিথ্যে বলে, কথা দিয়ে কথা রাখে না-তাদের ভিতরের চোরগুলি সবচেয়ে বড়।
– তারা কারা? আমি কি চিনি তাদের?

ছোট্ট বাবুটার মাথার চুল নেড়ে আদর করে শিহাব। মুখে বলে,
– আরেকটু বড় হলে তুমি নিজেই তাদেরকে চিনে নেবে। এটা মনে করো তোমার একটা এসাইনমেন্ট।

শিহাবের মন তখন নিরবে ভাবে, ওর বসবাসের ভূ-খন্ডে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদান্তে, নির্দিষ্ট কিছু মানুষ, একসাথে অনেক মানুষকে মিথ্যে বলে, সময় হলে কথা দিয়ে কথা রাখে না। এখন এটা একটা ‘ট্রেন্ডে’ পরিণত হয়েছে। এই নির্দিষ্ট মানুষগুলিকে ‘রাণী মৌমাছি’র মতো ঘিরে আমজনতার প্রদক্ষিণ, এই ‘ট্রেন্ড’কে ‘সিস্টেমে’ পরিণত করেছে।

সিস্টেমেটিক পদ্ধতিতে নিত্য নতুন বড় চোরেরা শূণ্য জায়গাগুলি দ্রুত দখল করে নিচ্ছে ভেবে ব্যথিত হন একজন বাবা। উত্তরপুরুষের জন্য এমন চোরসমৃদ্ধ একটি ভূ-খন্ড রেখে যেতে হচ্ছে!

আচ্ছা, সিস্টেম পাল্টানো যায় না? শুরুর শুরুটা অন্ততো করে যাই আসুন।।

15390714_928501633947264_3506954364452344525_n

কয়েকটি অণুগল্প …


এক নারী তার কষ্ট গুলো শেয়ার করতে চাইলো এক মধ্যরাতে। যখন চারিধার নিশ্চুপ। নৈশব্দের তীব্র একাকীত্ব মাঝে নিজের দেহের উষ্ণতা ধার দিতে চাইলো সে।

আমি দুটার একটাও নিলাম না। শীতের রাতে যে নারীরা বোধের অবোধ্য অনুভবে উষ্ণতর সোপানে আরোহন করতে চায় তাদের যন্ত্রণা আমাকে প্রলুব্ধ করে না। আমি উষ্ণতা এবং কষ্ট ধার নেই না। আমি সমবন্টনে বিশ্বাসী। কষ্ট আমার ও অঢেল আছে। তবে কেন আরো বাড়ানো।

সেই নারী- অচেনা এক মধ্যরাতের কোমল অনুভবে প্রহরের পর প্রহর প্রলুব্ধ করেই যায়।
শরীর দেহের খোঁজে ব্যকূল। মন অন্তরের। তবে নারীর উষ্ণতা কি সুপেয় হ্রদের অনন্ত গভীরতায় তৃষিত দেহের আজনম মেঘবতী হবার অনুরণন জাগায়? রক্তকণিকাদের সৃষ্টি সুখের উল্লাসে প্রহ্লাদে মেতে উঠবার এক চিরায়ত নতজানু অনুভবে প্রচন্ড গতিতে কোষে কোষে তরিৎপ্রবাহ!
জ্বালা ধরায়- জ্বালায়- নেভায় কিন্তু তৃপ্তি মেটায় না।

মধ্যরাতের নারীরা নিজেদের চোখের আগুনে নিজে ও জ্বলে.. পুরুষকে ও জ্বালায়। ভালোবাসাহীন একটা দেহ কামনার উষ্ণতায় থেকে থেকে কেঁপে উঠে..
অন্যকে ও কাঁপায়!

#মধ্যরাতের_নারী

★★

শাহেদ তখন চিটাগং ভার্সিটির অনার্স প্রথম বর্ষের স্টুডেন্ট।
শহরের বাসা থেকে প্রতিদিন যাতায়াত করে।
চরম একটা সময় কাটাচ্ছে… বন্ধুরা … শাটল ট্রেন… সবুজ ক্যাম্পাস…আর গান!
সোলস-ফিডব্যাক-মাইলস-আর এবি’র এল আর বি… ওদেরকে মাতিয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছিলো।

কিন্তু আজ শাহেদের অন্য একটা ব্যান্ড এর গানের কথা মনে পড়লো। গানের কয়েকটা লাইন মনে আছে, ব্যান্ডটা মে বি ‘লেসন ওয়ান’।
“… রাজা আসে রাজা যায় আসে না সুদিন
বাংলাদেশ…।”

আসলেই তাই… জীবনের তিনভাগ পেরিয়ে শেষ ভাগে এসে শাহেদ, এতো বছর পরে সেই গানটির প্রয়োগ বাস্তবে দেখছে নিজের চোখের সামনে।

সেই এরশাদ পতনের পর থেকে অদ্যবধি রাজাদের আসা-যাওয়াই কেবল সার হয়েছে- এদেশে সুদিন কি আদৌ এসেছে???

#রাজা_আসে_রাজা_যায়

★★★
আমার প্রভুকে মনের চোখে দেখলাম।

তাকে জিজ্ঞাসিলাম, ‘কে তুমি?’

উত্তর দিলেন প্রভু, ‘তুমি-ই আমি!’

#তুমিই_আমি

★★★★
সুর্য ডুবে ডুবে এমন সময় বাস থেকে নেমে পারুল লঞ্চ ঘাটে এসে দেখে, আকাশ মেঘলা, আর শেষ লঞ্চটা ও মাঝ নদীতে।

দীর্ঘশ্বাসগুলো বাতাসে পাক খেতে খেতে দূরে অপসৃয়মান লঞ্চের ট্রেইল ধরে ছুটে চলে। ম্লান হেসে এক সদ্য ‘ডিভোর্সি যুবতী ভাবে, একটা আক্ষেপ জীবনভর থেকেই যায়!

আলোছায়ায় মাখামাখি জীবনটায় আর কতটুকু আঁধার? পিছনের আলোর জীবনের প্রখরতায় তো সে ঝলসে এসেছে। আলো ফেলে এসেছে। তাই এখন কেবলি কি ওর গোপন আঁধার?
আপন আঁধার!

#মেঘলা_আকাশ