অণুগল্প নিয়ে কিছু কথা
____________________
অণুগল্প আসলে পাঠককে লেখক বানানোর কিছু হিন্টস সমৃদ্ধ লিখনি- যা পাঠককে ভাবনা চিন্তার অবকাশ দেয়। অণুগল্প নিয়ে আমার ক্ষুদ্রজ্ঞানে আমি অনেক চিন্তা-ভাবনা করেছি। বেশ কিছু অণুগল্প লিখবার ইচ্ছে রয়েছে এবং কিছু লিখেছিও। আজ দেখাবো অণুগল্প নিয়ে যে আসল উদ্দেশ্য সে ক্ষেত্রে কাজটি একজন পাঠক তাঁর মন্তব্যে কিভাবে করে একজন লেখকে পরিণত হনঃ-
নিচের গল্পটি একজন অণুগল্পকারের (আমার নিজের)। এই গল্পটিতে লেখকের নেগেটিভ মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
জ্বলে উঠা (নেগেটিভ মানসিকতা)
>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>
সারা রাত কলেজের পরীক্ষার খাতা কেটে সেই ভোর চারটায় ঘুমাতে গেছে মাহতাব। কাল শুক্রবার। ভেবেছে বারটা পর্যন্ত একটানা ঘুমাবে। ঘন্টা দুই ঘুমিয়েছে কেবল, তখনি কণা ওকে ডাকতে থাকে।
: অ্যাই, ওঠতো। দেখ মা কি পাঠিয়েছে!
প্রচন্ড রাগ নিয়ে বউয়ের দিকে তাকায়। ঘুমজড়ানো লাল চোখ পিটপিট করে বউয়ের হাসিমুখ দেখে। আরো রাগ বাড়ে। বিছানার সামনের মেঝেতে পড়ে আছে জিনিসগুলো। বেশ বড়সড় একটি প্লাষ্টিকের ম্যাট, সাদা পলিথিনে ভর্তি আতপ চাল, কোরবানির গরুর গোশত- কিছু কাঁচা, হাড়িতে রান্না করাও দেখল বেশ খানিক। চোখ পুরোটা মেলে এগুলোর সাথে আচারের ডিব্বার পাশে মুড়ি এবং খইয়ের টিন দেখতে পেলো।
অবশেষে খুব ঠান্ডা স্বরে কণাকে জিজ্ঞেস করে,
: এগুলোর সাথে আমার জন্য তোমার বাবার পুরনো দু’ একটা জামাও দেয় নাই?
মাহতাবের অতি শীতল কথাগুলো কণার ভিতরে কোথায় যেন ওলটপালট করে দেয়। সে মুহুর্তে জ্বলে উঠে।
আগুন জ্বলে দু’দিকেই।
… …
প্রিয় পাঠক!
এখন একজন পাঠক পড়া শেষে মন্তব্যে এই গল্পটিকে পজিটিভলি এভাবেও দেখাতে পারেন-
জ্বলে উঠা (একজনের নেগেটিভ এবং অন্যজনের পজিটিভ মানসিকতা)
>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>
সারা রাত কলেজের পরীক্ষার খাতা কেটে সেই ভোর চারটায় ঘুমাতে গেছে মাহতাব। কাল শুক্রবার। ভেবেছে বারটা পর্যন্ত একটানা ঘুমাবে। ঘন্টা দুই ঘুমিয়েছে কেবল, তখনি কণা ওকে ডাকতে থাকে।
: অ্যাই, ওঠতো। দেখ মা কি পাঠিয়েছে!
প্রচন্ড রাগ নিয়ে বউয়ের দিকে তাকায়। ঘুমজড়ানো লাল চোখ পিটপিট করে বউয়ের হাসিমুখ দেখে। আরো রাগ বাড়ে। বিছানার সামনের মেঝেতে পড়ে আছে জিনিসগুলো। বেশ বড়সড় একটি প্লাষ্টিকের ম্যাট, সাদা পলিথিনে ভর্তি আতপ চাল, কোরবানির গরুর গোশত- কিছু কাঁচা, হাড়িতে রান্না করাও দেখল বেশ খানিক। চোখ পুরোটা মেলে এগুলোর সাথে আচারের ডিব্বার পাশে মুড়ি এবং খইয়ের টিন দেখতে পেলো।
অবশেষে খুব ঠান্ডা স্বরে কণাকে জিজ্ঞেস করে,
: এগুলোর সাথে আমার জন্য তোমার বাবার পুরনো দু’ একটা জামাও দেয় নাই?
মাহতাবের অতি শীতল কথাগুলো কণার ভিতরে কোথায় যেন ওলটপালট করে দেয়। সে মনের ভেতরে মুহুর্তেই জ্বলে উঠে, আবার দপ করেই নিভে যায়।
ভাবে, আহারে বেচারা, কাজের চাপে কী দশা!
আবেগে কান্ডজ্ঞান ভুলে যাওয়ায় নিজেকে শাসায় কণা,
বড় অন্যায় হয়ে গেছে!
উঠে যায় মাহতাবের দিকে-
কপালে হাত রেখে আস্তে করে বলে- স্যরি!
বাইরে তখন সকালের মিষ্টি রোদের সাথে শরতের মেঘের খুনসুটি!!
>> এখানে বউয়ের দিক থেকে পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গী দেখানো হয়েছে।
এবার অন্য একজন পাঠক মন্তব্যে করতে গিয়েএকই গল্পটিকে দুজনের দিক থেকে পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গীটি কেমন হতে পারে সেটা দেখাতে পারেন-
জ্বলে উঠা (স্বামী স্ত্রী উভয়ের পজিটিভ মনোভাব)
>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>
সারা রাত কলেজের পরীক্ষার খাতা কেটে সেই ভোর চারটায় ঘুমাতে গেছে মাহতাব। কাল শুক্রবার। ভেবেছে বারটা পর্যন্ত একটানা ঘুমাবে। ঘন্টা দুই ঘুমিয়েছে কেবল, তখনি কণা ওকে ডাকতে থাকে।
: অ্যাই, ওঠতো। দেখ মা কি পাঠিয়েছে!
প্রচন্ড রাগ নিয়ে বউয়ের দিকে তাকায়। ঘুমজড়ানো লাল চোখ পিটপিট করে বউয়ের হাসিমুখ দেখে। আরো রাগ বাড়ে। বিছানার সামনের মেঝেতে পড়ে আছে জিনিসগুলো। বেশ বড়সড় একটি প্লাষ্টিকের ম্যাট, সাদা পলিথিনে ভর্তি আতপ চাল, কোরবানির গরুর গোশত- কিছু কাঁচা, হাড়িতে রান্না করাও দেখল বেশ খানিক। চোখ পুরোটা মেলে এগুলোর সাথে আচারের ডিব্বার পাশে মুড়ি এবং খইয়ের টিন দেখতে পেলো।
স্ত্রীর উচ্ছ্বসিত হাসিমুখ দেখে রাগটা গিলে ফেলল মাহতাব। কণার এলোমেলো চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, ‘আমাদের বিয়ে হয়েছে কত বছর বল তো? মা কি এখনো বোঝেন না তোমাকে ভালবাসার জন্য আমার কোন উপঢৌকনের প্রয়োজন নেই?’ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে বলে, ‘যাক, এসেই যখন গিয়েছে, তুমি বরং মাংসটা চাপিয়ে দাও। সারারাত ঘুমাইনি লক্ষ্মীটি, একটু ঘুমাই, আমি উঠে মাকে ফোন করে থ্যাঙ্ক ইউ জানাব’।
খুশি হয়ে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ায় কণা। আসলেই খুশিতে মাহতাবের ঘুমের কথাটা একদম মনে ছিলোনা, ভীষণ ভুল হয়ে গিয়েছে! দুপুর তিনটা পর্যন্ত আর বাচ্চাদেরও ঐদিকে যেতে দেবেনা সে। ততক্ষণে মাহতাবের প্রিয় কাচ্চি বিরিয়ানী রান্না হয়ে যাবে। ঘুম থেকে উঠে কি সারপ্রাইজড’ইনা হবে সে!
ওদিকে স্ত্রীকে হাসিমুখে যেতে দেখে মাহতাবের মনটাও ভাল হয়ে যায়। আজ ঈদের দিন বকা দিলে মনটা খারাপ হত বেচারীর। শাশুড়ি যতই মনে করুন তাঁর উপহার উপঢৌকন তাঁর আহ্লাদী মেয়ের সংসার টিকিয়ে রেখেছে, সহজ সরল বৌটাকে সে আসলেই অনেক ভালোবাসে। একটু বোকা মেয়েটা, কিন্তু সে আসলেই মাহতাবকে অনেক ভালোবাসে। নিশ্চিত সে বাচ্চাদেরও আর দুপুর তিনটা পর্যন্ত এমুখো হতে দেবেনা। ভালোই হোল, এখন বারোটার পরিবর্তে তিনটা পর্যন্ত ঘুমোনো যাবে!
… …
প্রিয় পাঠক!
তিন লাইনের এক নতুন ফরম্যাটে লিখে চলেছি অণুগল্প। একজন সফল অণুগল্পকারের খেতাব নেবার জন্য নয়। যারা পড়তে ভালোবাসেন, নিজের মায়ের ভাষাকে ভালোবাসেন, যারা অনুভবক্ষম সেই সব পাঠকদেরকে এভাবেই এক একটি অণুগল্প নিয়ে নিজেদের ভাবনা চিন্তায় বিলীন করে এক একজনকে লেখকে পরিণত করতেই আমার এই প্রয়াস। ফেসবুকে পড়ার সময় কম। তাই নিজের দীর্ঘ লিখার (উপন্যাস ও ধারাবাহিক বড় গল্পের কথা প্রযোজ্য নয়) গলা টিপে ধরে কেবল মাত্র পাঠক-লেখকের ভেতরকার মিথস্ক্রিয়া ঘটানোর জন্যই আমার এতো কিছু লিখে যাওয়া।
আমি অক্ষরপ্রেমী! আমি চাই আমার মায়ের ভাষার প্রতিটি অক্ষরের প্রতি সকল পাঠকও মমতা অনুভব করবেন। নিজেরা লেখকে পরিণত হবেন। বাংলা ভাষাকে আরো সমৃদ্ধ করে তুলবেন।
লিখতে লিখতে দেখুন, এই লিখাটিও বড় হয়ে গেলো। তবে এই লিখাটির শেষে, তিন লাইনের অণুগল্পগুলি পড়ুন পাঠক। পড়ুন এবং অনুভবে-কল্পনায় লিখালিখিতে বিলীন হয়ে উঠুন! অক্ষরের উল্লাসে মেতে উঠুন!!
_________________________
★
পাতা ঝরার দিনের প্রথম অণুক্ষণে, দু’জনে সিদ্ধান্ত নিলাম, ‘নাহ, এভাবে সম্পর্কটিকে আর ঝুলিয়ে রাখব না।’ প্রায় বছরখানিক হলো ওর সাথে আমার এফেয়ার, দু’জনে নিজেদেরকে এই সময়ের ভিতরে জেনে-বুঝে অনুভবে হ্যা-বোধক অনুভূতির অনুরণনে বিলীন করে দিয়ে ফাইনাল সিদ্ধান্ত নিলাম।
তাই কোনো এক পাতাঝরার দিনের বিষন্ন বেলায়, সম্পর্কটিকে ‘দু’জনময়’ করে তুলতেই আমরা জীবনের মহাশূণ্যে ঝাপ দিলাম.. সেই থেকে ভেসে বেড়াচ্ছি দু’জনে.. পাশাপাশি!
#ঝরা_পাতার_কাব্য
★★
দশ ঘন্টার গোলামির জোয়াল কাধ থেকে পিছনে ফেলে রেখে, নিজের মেসের সিঁড়ি ভেংগে উঠতে উঠতে তৃতীয় তলা পার হতে গিয়েই মুরগির মাংসের রান্নার ঘ্রাণ পায় রেজওয়ান।
বাবা বলতেন ‘কুড়ার গোশত’, সেই দু:সহ সময়গুলিতে এভাবে আক্ষেপ করতেন- ‘কতদিন কুড়ার গোশত খাই না রে রিজু..তোর খালু ও তো এক দু’দিন দাওয়াত দিয়ে খাওয়াতে পারে?’
সক্ষম-অক্ষমের গোলকধাঁধায় বাবার জীবন কেটেছিলো, অক্ষম সময়ে কাছের সক্ষমেরা এই ছোট ছোট ইচ্ছেগুলি চাইলেই পূরণ করতে পারতেন, কেন জানি করলেন না ওনারা.. কিছু একটা অপূর্ণতা জীবনে রেখেই চলে যেতে হয় অনেককে।।
#কুড়ার_গোশত
★★★
সে সম্পুর্ণ নগ্ন হয়ে এলো আমার সামনে। আমি তাকে প্রেমের চাদর পরিয়ে দিলাম।
ভালবাসা পুড়ে পুড়ে প্রেম হতে শরীর লাগে না কারোর।।
#অভিসার
★★★★
আমি আর তুমি এক হলাম।
সে এলো।
অনেকগুলি বছর পার করে যাবার বেলায় আমাদেরকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে গেলো।
#আমি_তুমি_সে
★★★★★
অনেক রাতে রুমা টের পায় আরমান গেট খুলে বাইরে যায়.. কিছুক্ষণ পর ফিরেও আসে। বেসিনের সামনে পানির ট্যাপ থেকে দীর্ঘক্ষণ পানি পড়ার আওয়াজ শুনতে পায়.. কিন্তু ইচ্ছে করেই সে উঠে না।
আরো অনেক পরে নিজের পাশে পরিচিত মানুষটির স্পর্শ পায়, ওর গালে আরমানের হাত… ধীরে ধীরে অবাধ্য হয়ে উঠতে চায়… একসময় সময় আর সময়ের ভিতরে থাকে না.. প্রিয় মানুষটির শরীর অন্য কারো ঘ্রাণে মাখামাখি… বড্ড অপরিচিত লাগে.. দূরের মানুষটি বড্ড কাছে চলে এসেও কিভাবে যেন আরো দূরে সরে যায়!!
#কাছের_মানুষ_দূরের_মানুষ
