সত্যি, যারপরনাই বিস্ময়কর ও ভীতিজনক ব্যাপার, আজকে ২০১৮ সালে, এদেশের কতিপয় মানুষ (হয়তো সংখ্যাটা আমি যা ভাবছি তারচে’ও বড়, দেশের সর্বত্রই এ ধরণের মন মানসিকতার মানুষ রয়েছে) সমস্ত প্রচার মাধ্যমে এখনও দিব্যি প্রচার করে বেড়াচ্ছে যে, এ দেশে ধর্ষণ, নারীর ওপর সহিংসতা বেড়ে যাবার জন্য নারীর বেশভূষা, চালচলন, আধুনিকতা দায়ী! তাদের কথাবার্তা শুনলে মনে হয়, আমরা ২০১৮ তে নয় ১৯১৮ তে আছি। এ ধরণের কথা যারা বলে থাকে, তারা সন্দেহাতীতভাবে অসুস্থ ও ভীষণরকম বিকৃত রুচি’র মানুষ। সত্যিই দারুণ অনুতাপের বিষয় যে, শুধু পুরুষই নয় অনেক নারীও আছে তাদের দলে। এগুলো একেবারেই ডাহা মিথ্যা ও যারপরনাই হাস্যকর। পাশাপাশি এসব বলা প্রকারান্তরে দেশের অগ্রসরমান নারী সমাজকে নির্লজ্জভাবে তিরস্কার, অবজ্ঞা ও লাঞ্ছনা করার সামিল। সত্যি, এ ধরনের মন মানসিকতা’র মানুষদের সঙ্গে সহাবস্থান বা একই সমাজে বাস করতেও আমার ঘেন্না হয়। তাদের বক্তব্য মেনে নিলে ব্যাপারটা এরকম দাঁড়াচ্ছে, যে বা যে পুরুষেরা যে নারীটির খারাপ বেশভূষা ও আধুনিকতা দেখেও মওকা মতো তাকে ধর্ষণ করেনি, তারা সবাই পুরুষ নামের কলঙ্ক, তারা ক্লীব নয়তো নপুংসক। আর যারা তাকে ধর্ষণ করেছে তারাই প্রকৃত পুরুষ, তারাই বীরপুরুষ!
তাদের মনোভাব এরকম যে, আমাদের দেশে ধর্ষণ নারী নির্যাতন বেড়ে যাবার জন্য নারী যেন নিজেই দায়ী। সে নিজেই প্রলুব্ধ করছে তার চারপাশের পুরুষদের তাকে ধর্ষণের জন্য। কোথাও তারা ধর্ষকের কোনও দোষ খুজে পান না। ধর্ষক তাদের দৃষ্টিতে নিরপরাধ। সমস্ত দোষ ওই বেহায়া নারীর। সে কেন সর্বত্র তার অঙ্গ প্রদর্শন করে চলাফেরা করে? সে কেন বোরখা পরে না, হিজাব পরে না, পর্দা করে না? তাই সে ধর্ষিত হয় বারবার। তাই সে ধর্ষিত হবেও বারবার। ধর্ষকের কোনও দোষ নেই, ধর্ষক তো নেহায়েত পরিস্থিতির স্বীকার! সত্যি, এতো অসভ্য অসুস্থ ভয়াবহরকমের বিকৃত রুচি’র মানুষদের সঙ্গে আদৌ কি কোনও যুক্তিতর্ক চলে? না, চলে না। এ ধরণের বক্তব্য বা মনোভাব জনসমক্ষে যারা প্রকাশ করছে, তাদেরকে শাস্তি দেয়া হোক, সামাজিকভাবে সম্পূর্ণ বয়কট করা হোক।
তবে আমি সবচেয়ে আতঙ্কিত, তাদের সংখ্যা নিয়ে। তারা কি আমাদের দেশের দশভাগ, পনেরো ভাগ, বিশ ভাগ, নাকি আরও বেশি? সত্যি, এসব দেখেশুনে আজ আমি যারপরনাই হতাশ। তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। নারীত্বকে সম্মান দিতে শিখুক তারা। পৃথিবীর সমস্ত নারীর শরীর আমার আপনার মতোই একটি শরীর। পথেঘাটে অফিস আদালতে নারীর পোষাক আষাক বেশভূষা, হাঁটাচলায় মনোযোগ না দিয়ে প্রকৃতি দেখুন, আকাশ দেখুন, চারপাশের জনসমাগম দেখুন, সা সা ছুটে চলা যানবাহন দেখুন, ফুল দেখুন, পাখি দেখুন, চাঁদ দেখুন, তারা দেখুন, ল্যাম্পপোস্টের ঝলমলানো রঙিন বাতিগুলো দেখুন। এই পৃথিবী, প্রকৃতি, জীবন, বেঁচে থাকা ঢের বৈচিত্র্যময়, ঢের রমণীয় এইসব সাধারণ রমণীদের থেকে। নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গিকে আপনারা উন্নত করুন। নারীকে মানুষ ভাবতে শিখুন।