অর্ক এর সকল পোস্ট

অরিত্রির জন্য কবিতা

ঈশ্বরের কাছে আমি কি চেয়েছিলাম সেদিন সান্ধ্য প্রার্থনায়- মনে আছে। জাদুঘরের কাঁচ ঘেরা সুপ্রাচীন পুথি কখনও বড্ড ইচ্ছে হতো হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখি, পড়ি; একাকী বিষণ্ণ কোনও বিকেলে পারতাম যদি হাওয়ায় ভেসে উড়ে যেতে দূরের কোনও দেশে; আহা, সভেৎলানা খরকিনার মতো দীর্ঘকায় সুন্দরী সহপাঠী আমার ছিল না!

পুরোনো আসবাবের জং ধরা জীর্ণ কীলক তুমি কখনও দেখেছ অরিত্রি? জানি, দেখোনি। কিন্তু আমি দেখেছি। তাই পৃথিবীর কাছে আজ আমি কোনও স্মারক চাই না। পৃথিবী কাওকে স্মারক দেয় না। দেয়নি কোনওদিন।

আজ থেকে অনেকদিন পর তুমিও ঠিক জেনে যাবে, পৃথিবীর কাছে স্মারক চাইতে নেই। পৃথিবী স্মারক দেয় না। বিশ্বাস কর, তুমিও কোনও স্মারক পাবে না সেদিন।

শিশু তো শিশুই

এই তো মাসখানেক আগের একটি ঘটনা। রাত আটটা বেজে থাকবে। ঢাকার কোথাও সরু একটি গলি পেরচ্ছিলাম। এ সময় দেখলাম, বাঁ দিকে একটা সাইকেল হঠাৎ তীব্র গতিতে সড়কের মোর ঘুরে আমার দিকে আসতে লাগলো। সাইকেল আরোহী এগারো বারো বছরের শিশু। বেশ খানিকটা দূরেই ছিল, তারপরও অস্বাভাবিক দ্রুত গতি দেখে আতঙ্কিত হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়লাম। চেয়েছিলাম, ও ওর মতো পাশ দিয়ে সাইকেল চালিয়ে নিয়ে যাক। দেখলাম, ও আরে আরে করতে করতে বেসামাল হয়ে সবেগে সাইকেলটা আমার ঠিক উরুতে লাগিয়ে দিলো। আমি উপস্থিত মুহূর্তে কিঞ্চিত প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম, এরকম কিছু একটা হতে পারে, এ জন্য পা যথাসম্ভব দৃঢ় করে রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলাম। আর যা ভেবেছিলাম ঠিক তাই হলো। ওর অসাবধানী বেপরোয়া সাইকেল চালানোর কারণে সরাসরি দুর্ঘটনার স্বীকার হলাম। ব্যায়াম করা শক্তিশালী পা হবার দরুণ খুব বড় কোনও বিপদ হয়নি যদিও, তারপরও অতো গতিসম্পন্ন সাইকেলের ধাক্কা, সমস্ত পা ব্যথা করতে লাগলো। সামনে কাচুমাচু মলিন পাণ্ডুর মুখে দাঁড়ানো এগারো বারো বর্ষীয় শিশু সাইকেল আরোহী। আমি ওকে বললাম, ‘পুরো রাস্তার দুদিকে সম্পূর্ণ খালি আর আমি একা এখানে একজন মানুষ দাঁড়ানো। সাইকেলটা কি না লাগিয়ে নিয়ে যেতে পারতে না? আর তোমার সাইকেলে কি ব্রেকও নাই নাকি? যথেষ্ট সময় পেয়েছিলে ব্রেক করার।’ ও সম্পূর্ণরূপে নির্বিকার। ভীত শীতল মুখে হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। দেখলাম, পাশের দুয়েকজন লোক হইহই করে ছেলেটিকে ভর্ৎসনা করতে লাগলো। পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠতে পারে ভেবে আমি বললাম, ‘যাও। সাবধানে দেখে শুনে সাইকেল চালাও। মোরে টোরে একটু স্লো চালিয়ো।’ ও সাইকেলে উঠতে লাগলো। এ পর্যন্ত কিন্তু একবারের জন্যে আমাকে সরিও বলেনি পিচ্চি! হা হা হা। আবার বললাম, ‘সাবধানে চালিয়ো। ঢাকা শহর, সবখানেই মানুষ।’ এবার দেখলাম ও উল্টো আমার ওপরই বিরক্তিসহকারে ‘উহ্’ শব্দ করলো। তারপর সা সা করে আগের থেকেও আরও দ্রুত বেগে সাইকেল চালিয়ে মুহূর্তেই অনেকটা দূরে চলে গেল। আমি কিঞ্চিত আহত পা’য়ে খুরিয়ে খুরিয়ে নিজের মতো সড়কে হাঁটতে লাগলাম। এ সময় পাশের একজন পথচারী বললো, ‘থাবরাইলেন না কেন?’
‘না না একদম বাচ্চা মানুষ। কী করবো!’ বললাম আমি।
‘ধুর মিয়া, কীয়ের পোলাপাইন মিয়া। জানেন ওইগুলার মইধ্যে শয়তানি দিয়া ভরা। বাইরাইয়া সোজা করন লাগতো।’ রাজ্যের বিরক্তি ও উষ্মা নিয়ে আবার বললো ভদ্রলোক। আমি আর কথা বাড়ালাম না, নীরবে হাঁটতে লাগলাম।

নারী

নারী,
আমি ভালবাসি তোমাকে
এই সত্য কখনও যাবে না ক্ষয়ে
তুমি জননী সহোদরা প্রেমিকা স্ত্রী কন্যা
কতো রূপে প্রতিনিয়ত ঋদ্ধ করে চলেছ জীবন
অফিস আদালত বাস ট্রাম রাজপথ
সর্বত্রই তুমি আছো- গৌরবে দৃপ্ত, ভাস্বর
কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলেছ সহচারী
যেখানেই যাই, দাঁড়াই, করি যাত্রা বিরতি …

নারী,
আমি ভালবাসি তোমাকে
আমি ভালবাসি আমার স্নেহময়ী মাকে
প্রাণের সহোদরাকে, প্রিয়তমা প্রেয়সীকে
হৃদয়সম আত্মজাকে- প্রাণাধিক ভালবাসি
আর এই ভালবাসা কখনও যাবে না ক্ষয়ে
কারণ তুমি নারী; তুমিই শুধু পারো ভালবাসতে
নিঃস্বার্থ, অকৃত্রিম- সারাটি জীবন ধরে কিন্তু
পুরুষ পারে না, পুরুষ পারেনি কোনওদিন …

নারীর জন্য নিরপদ্রুপ হোক রাষ্ট্র, কিন্তু ওরা তা হতে দিবে না

সত্যি, যারপরনাই বিস্ময়কর ও ভীতিজনক ব্যাপার, আজকে ২০১৮ সালে, এদেশের কতিপয় মানুষ (হয়তো সংখ্যাটা আমি যা ভাবছি তারচে’ও বড়, দেশের সর্বত্রই এ ধরণের মন মানসিকতার মানুষ রয়েছে) সমস্ত প্রচার মাধ্যমে এখনও দিব্যি প্রচার করে বেড়াচ্ছে যে, এ দেশে ধর্ষণ, নারীর ওপর সহিংসতা বেড়ে যাবার জন্য নারীর বেশভূষা, চালচলন, আধুনিকতা দায়ী! তাদের কথাবার্তা শুনলে মনে হয়, আমরা ২০১৮ তে নয় ১৯১৮ তে আছি। এ ধরণের কথা যারা বলে থাকে, তারা সন্দেহাতীতভাবে অসুস্থ ও ভীষণরকম বিকৃত রুচি’র মানুষ। সত্যিই দারুণ অনুতাপের বিষয় যে, শুধু পুরুষই নয় অনেক নারীও আছে তাদের দলে। এগুলো একেবারেই ডাহা মিথ্যা ও যারপরনাই হাস্যকর। পাশাপাশি এসব বলা প্রকারান্তরে দেশের অগ্রসরমান নারী সমাজকে নির্লজ্জভাবে তিরস্কার, অবজ্ঞা ও লাঞ্ছনা করার সামিল। সত্যি, এ ধরনের মন মানসিকতা’র মানুষদের সঙ্গে সহাবস্থান বা একই সমাজে বাস করতেও আমার ঘেন্না হয়। তাদের বক্তব্য মেনে নিলে ব্যাপারটা এরকম দাঁড়াচ্ছে, যে বা যে পুরুষেরা যে নারীটির খারাপ বেশভূষা ও আধুনিকতা দেখেও মওকা মতো তাকে ধর্ষণ করেনি, তারা সবাই পুরুষ নামের কলঙ্ক, তারা ক্লীব নয়তো নপুংসক। আর যারা তাকে ধর্ষণ করেছে তারাই প্রকৃত পুরুষ, তারাই বীরপুরুষ!

তাদের মনোভাব এরকম যে, আমাদের দেশে ধর্ষণ নারী নির্যাতন বেড়ে যাবার জন্য নারী যেন নিজেই দায়ী। সে নিজেই প্রলুব্ধ করছে তার চারপাশের পুরুষদের তাকে ধর্ষণের জন্য। কোথাও তারা ধর্ষকের কোনও দোষ খুজে পান না। ধর্ষক তাদের দৃষ্টিতে নিরপরাধ। সমস্ত দোষ ওই বেহায়া নারীর। সে কেন সর্বত্র তার অঙ্গ প্রদর্শন করে চলাফেরা করে? সে কেন বোরখা পরে না, হিজাব পরে না, পর্দা করে না? তাই সে ধর্ষিত হয় বারবার। তাই সে ধর্ষিত হবেও বারবার। ধর্ষকের কোনও দোষ নেই, ধর্ষক তো নেহায়েত পরিস্থিতির স্বীকার! সত্যি, এতো অসভ্য অসুস্থ ভয়াবহরকমের বিকৃত রুচি’র মানুষদের সঙ্গে আদৌ কি কোনও যুক্তিতর্ক চলে? না, চলে না। এ ধরণের বক্তব্য বা মনোভাব জনসমক্ষে যারা প্রকাশ করছে, তাদেরকে শাস্তি দেয়া হোক, সামাজিকভাবে সম্পূর্ণ বয়কট করা হোক।

তবে আমি সবচেয়ে আতঙ্কিত, তাদের সংখ্যা নিয়ে। তারা কি আমাদের দেশের দশভাগ, পনেরো ভাগ, বিশ ভাগ, নাকি আরও বেশি? সত্যি, এসব দেখেশুনে আজ আমি যারপরনাই হতাশ। তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। নারীত্বকে সম্মান দিতে শিখুক তারা। পৃথিবীর সমস্ত নারীর শরীর আমার আপনার মতোই একটি শরীর। পথেঘাটে অফিস আদালতে নারীর পোষাক আষাক বেশভূষা, হাঁটাচলায় মনোযোগ না দিয়ে প্রকৃতি দেখুন, আকাশ দেখুন, চারপাশের জনসমাগম দেখুন, সা সা ছুটে চলা যানবাহন দেখুন, ফুল দেখুন, পাখি দেখুন, চাঁদ দেখুন, তারা দেখুন, ল্যাম্পপোস্টের ঝলমলানো রঙিন বাতিগুলো দেখুন। এই পৃথিবী, প্রকৃতি, জীবন, বেঁচে থাকা ঢের বৈচিত্র্যময়, ঢের রমণীয় এইসব সাধারণ রমণীদের থেকে। নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গিকে আপনারা উন্নত করুন। নারীকে মানুষ ভাবতে শিখুন।

অপেক্ষা

রুমা, আমি কি আরও কিছুক্ষণ বসবো
নাকি চলে যাবো
একটু পরেই বন্ধ হয়ে যাবে তোমাদের ক্যাফেটেরিয়া
দশটা বাজতে আর মিনিট কুড়ির মতো বাকি
রুমা, যদি কিছু বলার থাকে- নিঃসঙ্কোচে বলে দাও
কিম্বা চুপিচুপি একটি নোটও রেখে যেতে পারো…
আর মাত্র দশ মিনিট তোমার হাতে।
রুমা, আমি চলে যাবো। হয়তো আর আসবো না
হয়তো আর কোনওদিন দেখা হবে না।

রুমা, এখনই সময়- যদি কিছু বলার থাকে
তবে তা নিঃসঙ্কোচে জানাও আমাকে
কাছে এসে ফিসফিস করে বলো
কিম্বা একটি নোট রেখে যাও টেবিলে…
আর মাত্র পাঁচ মিনিট তোমার হাতে।

শিরোনামহীন

তোমাদের ফ্ল্যাটের ঝুল বারান্দার সারিবদ্ধ টবগুলোতে একদিন
বাহারি ফুল ছিল বেশুমার (নির্ঘাত অনেক সুঘ্রাণও ছিল); আমি
কোনওদিন যাইনি, নিচের সড়ক থেকে দাঁড়িয়ে দেখতাম, সেই
বহুতল ভবনে সেই বিশেষ ফ্ল্যাটের ঝুল বারান্দার টবগুলোতে
থরেথরে ফুটে আছে, রঙবেরঙের সুদৃশ্য সব ফুল। আমার বড্ড
ভালো লাগতো। কিন্তু আজ অনেকদিন পর আবার সেই সড়কে
হাঁটতে গিয়ে দেখলাম, এখন আর একটিও ফুল নেই। ফুলের
বদলে তীক্ষ্ণ কাঁটাওয়ালা যুদ্ধংদেহী থুকথুকে একদল ক্যাকটাস
দাঁড়িয়ে আছে উদ্ধত ভঙ্গিতে। বিন্দুমাত্র কোনও সৌন্দর্য কিংবা
স্নিগ্ধতা নেই ওগুলোর, আর আমি হলফ ক’রে বলতে পারি,
বাঙময় ফুলের মতো সুঘ্রাণও ছড়াতে পারে না; নির্গুণ থুকথুকে
কুৎসিত কতিপয় ক্যাকটাস। কেন যে তোমরা ক্যাকটাস দিয়ে
ভ’রিয়ে রেখেছ আজ ঝুল বারান্দা! এরপর কোনওদিন ওই
সড়ক দিয়ে গেলে ভুল ক’রেও আর মাথা উঁচিয়ে তাকাবো না।

শিরোনামহীন

ভোরের আলো ফুটছে। আজও জেগেই ছিলাম। পাশের অলিন্দে কেউ একজন আজও চুপিচুপি হেঁটেছিল রাতভর। অনবরত খসখসে শব্দ তার হাঁটার- আমাকে জাগিয়েই রাখে হায়! যদি বৃষ্টি হতো, বড় ভালো হতো। বৃষ্টির রুমঝুম শব্দ মুছে দিতো সেই অচেনা আগন্তুকের একটানা পথ চলার বিরক্তিকর খসখসে শব্দ আর আমিও দিব্যি ঘুমোতাম মহাসুখে।
কাল সারা রাত বৃষ্টি থাক শহরে। সেই আগন্তুক যদি বা আসে- হাঁটেও রাতভর অলিন্দে, কিন্তু আমি তা টেরটিও পাবো না। বেমালুম নিঢাল শুয়ে ঘুমোবো এক মাথা বৃষ্টি নিয়ে।
সে আসে তো আসুক, সঙ্গে বৃষ্টিও নামুক মুষলধারে। সে হাঁটুক প্রতিদিনের মতো। সে শব্দ মুছে দিক ততোধিক উচ্চকিত বৃষ্টিধারা। আহা, সে হাঁটবে ঝুম বৃষ্টি হবে আর আমি ঘুমোবো!

শিরোনামহীন

এই চৌকো আয়নার কী কোনও গল্প আছে
একদিন নিভৃতে শুনিয়েছিল আমাকে
কোথা থেকে এসেছে- বাড়িঘর স্থাবর অস্থাবর
আর নিজস্ব দুয়েকটি গভীর দুঃখের স্মৃতি?
ঠিক যেন বলেছিল কোনওদিন
ভুলোমন আমার- ভুলে গেছি!

শহরে কাদের যেন বিরাট মিছিল সমাবেশ ছিল
ফুটপাতে বাহারি পণ্যের ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলো
আজ আর বসেনি, উলের একটা কানটুপি
ক্রয়ের জন্য বেশ ঘুরলাম ইতিউতি
আগেরটা দারুণ পুরনো হয়ে গেছে-
এক যুগ বা তারও কিছু আগে
আমার ভগ্নীপতি দিয়েছিল উপহার
আর বাবার জন্যে ছিল একটা মাফলার
ওটার কী হয়েছে জানি না।

আমি অপলক তাকিয়ে আছি আয়নার দিকে
স্বচ্ছ কাঁচের চকচকে চতুষ্কোণ ফ্রেমে
আমার বেঢপ বিসদৃশ চেহারা দৃশ্যমান
ঠিক মনে হচ্ছে একদিন যেন এই আয়না
ওর নিজস্ব কিছু গল্প বলেছিল আমাকে
কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছি না।

ভালো হতো শহরে কিছুক্ষণ বৃষ্টি হলে
শীতের দেখা নেই- এই মধ্য নভেম্বরেও!

এখন কোনও গান গেয়ো না

এখন আর কোনও গান গেয়ো না রুমা,
সব গান গাওয়া শেষ হয়ে গেছে
সকল অভ্যাগত দর্শকশ্রোতা ফিরে গেছে তৃপ্তিভরে
যন্ত্রশিল্পীরাও সরঞ্জামাদি নিয়ে চলে গেছে যার যার মতো;
এই গানের আসর শেষ হয়ে গেছে রুমা,
তবু কেন শূন্য মঞ্চে একাকী দাঁড়িয়ে আছো- এই মধ্যরাতে
এতক্ষণে নির্ঘাত ঘুমিয়ে পড়েছে শহরের নাগরিকগণও
তাদের শান্তিতে ঘুমোতে দাও

এই গানের আসর শেষ হয়ে গেছে রুমা,
সমস্ত কুশীলব অভ্যাগতরা ফিরে গেছে তৃপ্তিভরে
তবু কীসের টানে শূন্য মঞ্চে পড়ে আছো শিল্পী
ফিরে যাও চেনা সড়ক ধরে- নিশ্চিত গন্তব্যে

পৃথিবীর গোলাপ বন্ধ্যাত্বের কারণ ও প্রতিকার

রৌদ্রত্রপা, কেউ না জানুক আমি তো জানি, পৃথিবীর সমস্ত গোলাপ সেদিন শুকিয়ে গিয়েছিল তোমার জল টলমলে আনত চোখে! এখন আর তাই গোলাপ নেই কোথাও। কোথ্থাও পাবে না আর একটি গোলাপও, যতো দামই দিতে চাও। এ পৃথিবী আজ সম্পূর্ণরূপে গোলাপ শূন্য।

আমার বাড়ির নিকটবর্তী সড়কে রাজ্যের রকমারি ফুল নিয়ে বসা ফুল বিক্রেতার কাছে আমি সেদিন একটি গোলাপ চেয়েছিলাম। সাফ জানিয়ে দিল, ‘একটি গোলাপও আজ আর অবশিষ্ট নেই কোথাও। হঠাৎ একদিন কোনও অজ্ঞাত কারণে পৃথিবীর সমস্ত গোলাপ বাগান নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, শুকিয়ে গিয়েছিল সব ফুলও। সেই থেকেই পৃথিবীর গোলাপ বন্ধ্যাত্ব। সুমেরু থেকে দক্ষিণমেরু, যেখানেই যাও শুধু খুঁজে ফেরাই হবে সার, কিন্তু একটি গোলাপও কোত্থাও পাবে না আজ আর। তুমি অন্য কোনও ফুল নাও সাহেব, যতো ইচ্ছে, গাদা টগর বেলি শিউলি যা খুশি। দেশি বিদেশি হরেক রকমের বহু দুর্লভ মহামূল্যবান ফুলও আছে আমার সংগ্রহে, পানির দামে ছেড়ে দেবো। হিবাস্কাস কোকি, স্ট্রঙ্গিলোডোন ম্যাক্রোবোট্রিস, সুদূর মেক্সিকো থেকে নিয়ে আসা চকোলেট কসমস, সব দিয়ে দেবো পানির দামে। শুধু তুমি গোলাপ চেয়ো না সাহেব। এখন আর গোলাপ ফোটে না পৃথিবীতে। এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা চলছে চারিদিকে আজও, কিন্তু দুর্ভেদ্যই রয়ে গেছে এ রহস্য!’

সত্যিই, আজ আর পৃথিবীতে গোলাপ নেই রৌদ্রত্রপা। অনেক খুঁজেছি হন্যে হয়ে। পাইনি। জানি, সে সম্ভাবনাও ক্ষীণ। কারণ পৃথিবীর সব গোলাপ সেদিন শুকিয়ে গিয়েছিল তোমার জল টলমলে আনত চোখে। মরে গিয়েছিল সমস্ত গাছ। তারপর থেকেই পৃথিবীতে গোলাপ বন্ধ্যাত্ব। আজও রুদ্ধশ্বাসে গোলাপ খুঁজে ফিরছি সবখানে। দৈবাৎ যদি পেয়ে যাই একটি বা দুটি। যতো দামই হোক তার, আমি তা এনে পরিয়ে দিবো তোমার কবরীতে, তবেই পৃথিবীর এ গোলাপ বন্ধ্যাত্ব ঘুচবে।