অর্ক এর সকল পোস্ট

বসন্ত এসেছে, তাই

অরিত্রিকা,
দেখো, বসন্ত এসেছে
পাখিদের কানাকানি ডালে ডালে পাতার আড়ালে
মধুলোভী ভ্রমরের আনন্দে কাটছে দিন বেশ
বসন্ত এসেছে, তাই কোকিলের ঘুম নেই চোখে
(অলক্ষ্যে দারুণ রেওয়াজ চলে রাত-দিন)
মধুর পরাগ লেগেছে ফুলে-ফুলে
বৃন্তে-বৃন্তে ধূম রঙিন বসন্তের,
তোমার বড়ির সড়কের পাশে বয়েসী কৃষ্ণচূড়াটা-
দেখো, ফুলে-ফুলে-লালে-লালে সয়লাব আজ
তুমি কী দেখো না!

অরিত্রিকা,
বসন্ত এসেছে, তাই ফেলে সব কাজ
আমি লিখছি তোমাকে নিয়ে-
আমার প্রেমের কবিতা।

অনুবাদ কবিতা: কোট

কোট
সর্বেশ্বর দয়াল সাক্সেনা

খুঁটিতে কোটের মতো
দীর্ঘকাল ধরে আমি টাঙানো
কোথায় চলে গেছে
আমাকে গা’য়ে চাপিয়ে সার্থক করা ব্যক্তি?
ধূলোর পর ধূলো
এমনভাবে জমে চলেছে যে
আজ আমি নিজেই
নিজের রঙ ভুলে গেছি।
ঝুলে পড়েছে বাহু
কুচকেছে ছাতি
আর ওতে যুক্ত হয়েছে এক তাপ
এক সম্পূর্ণ শরীর হবার আত্মবিশ্বাস
এখন আমার মাঝে আর নেই।
খোলা জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকি,
বাইরে এক গাছ
রঙ বদলে চলা
পাখিদের সাথে ঝনঝনাচ্ছে
আর হাওয়ায় নৃত্যরত:
আমিও নড়াচড়া করি
ব্যস নড়াচড়াই করি
দেয়ালের সাথে ধাক্কা খাবার জন্য।
দীর্ঘ সময় চলে গেছে
হ্যা, এক দীর্ঘ সময়
যখন ও চুপচাপ দরজা বন্ধ করেছিলো
আর আমার দিকে না তাকিয়ে, কোনওকিছু না বলে
বাইরে ভারি পা ফেলে চলে গিয়েছিলো-
‘এখন তুমি মুক্ত
একা কামরায় মুক্ত
কারও শোভা কিম্বা রক্ষক
হওয়া থেকে মুক্ত
শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা, তুষারপাতের
ঝঞ্ঝাট থেকে মুক্ত
অন্যের জন্যে সম্পাদন করা হয়ে থাকে
এরকম প্রত্যেক যাত্রা থেকে মুক্ত
নিজের পকেট ও নিজের শরীরের
নিজের কলার ও নিজের আস্তিনের
মালিক তুমি নিজে
এখন তুমি মুক্ত, স্বাধীন-
পূর্ণরূপে স্বাধীন- নিজের জন্য।’

খুঁটিতে দীর্ঘকাল ধরে টাঙানো
কামরার নীরবতার এই সঙ্গীত
আমি প্রতিটি মুহূর্তেই শুনি
আর এক নিদারুণ বন্দিত্বের অনুভব
করতে করতে সংজ্ঞাহীন হয়ে চলেছি
যে ক্রুশবিদ্ধের শাস্তি নিজেই নিজের নখ দিয়ে লিখছি।
না, আমার এই মুক্তি চাই না
নিজের জন্য স্বাধীন হয়ে বাঁচার থেকে ভালো
আপনজনের জন্যে গোলাম হয়ে থাকা
আমার একটি ছাতি চাই
দুটি সুডৌল বাহু
যাতে আমার ছাতি ও বাহু জুড়ে দিয়ে
আমি সার্থক হতে পারি
বাইরে বেরোতে পারি
নিজের ও ওর ইচ্ছেকে এক করতে পারি
এক-ই লড়াই লড়তে পারি
আর জোড়াতালি ও কাপড়ের টুকরোকে অঙ্গীকার করে
একদিন জরাজীর্ণ হয়ে
সমাপ্ত হতে পারি।

ওর প্রতিটি আঘাত আমার
ওর প্রত্যেক ক্ষত প্রথম ভুগবো আমি
ওর প্রতিটি লড়াই আমার
আমি ওর জন্যে কাঁদি
এটুকুই আমার প্রাপ্য।

খুঁটিতে দীর্ঘকাল ধরে ঝুলে ঝুলে
আমি কোট থেকে
নিজের কাফন বানিয়ে চলেছি
কোথায় প্রলয়ঙ্কর ঝর?
সবকিছু তছনছ করে দেয়া
ভূমিকম্প কোথায়?
আমি এই দেয়াল, এই খুঁটি থেকে
মুক্ত হতে চাই
আর প্রচণ্ড ঝরে উড়তে উড়তে
নিজের বাহু প্রসারিত করে
ছাতি চওড়া করে
ওকে খুঁজে বের করতে চাই-

যে চুপচাপ একদিন দরজা বন্ধ করে
আমার দিকে একবারও না তাকিয়ে কোনওকিছু না বলে
বাইরে ভারি পা ফেলে চলে গিয়েছিলো।

আমি জানি
ওকে কেউ ডাকছিলো
ওর কিছু প্রয়োজন হয়েছিলো
ওকে এক বিরাট ঝর ও ভূমিকম্প
নিয়ে আসা শক্তির খোঁজ করার ছিলো
ওর এখান থেকে যাবারই ছিলো
কিন্তু কোথায়?
আমিও ওর সঙ্গে যেতে চেয়েছিলাম।
দীর্ঘকাল ধরে খুঁটিতে ঝুলে ঝুলে
আমিও
এক ভীষন ঝর
এক বিরাট ভূমিকম্পের প্রয়োজন
অনুভব করতে লেগেছি।
তবে কি সেও
আমার মতো
কোনও খুঁটিতে ঝুলে ঝুলে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলো?
কোট ছিলো?

আশা বার

সস্তা মদের জন্য এই বারটা সবচেয়ে ভালো
পরিবেশটা নোংরা যদিও
পাশের টয়লেট থেকে দুর্গন্ধ আসছে অনবরত
মেঝে অপরিষ্কার- স্যাঁতস্যাঁতে
রোয়াওঠা পুরনো সোফা ছারপোকার আস্তানা
গা চুলকোতে চুলকোতে জেরবার
কিন্তু এসব মদ্যপান উপভোগে বিঘ্ন ঘটায় না মোটেও
অভ্যস্ত হয়ে গেছি
আমার ভালো লাগে এখানে এলে
সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারবো না- কেন
ভালো লাগে বরফ চামচের দ্যোতনাময় টুংটাং
মৃদু নীল আলো
টিভি পর্দায় রুবেলের মারদাঙ্গার ঢাকাই সিনেমা

বিকেলের পর দারুণ ভিড় হয়
আমি অনিয়মিত আসি
সবচে’ সস্তা বিয়ারের ক্যান নিয়ে বসি
৩৩০ মিলিলিটারের ক্যান এন্তার বরফ মিশিয়ে
তিন পেগে শেষ করি
গলায় সুই হয়ে ফোটে বরফ মেশানো ঠান্ডা বিয়ার
‘আহা, কী শান্তি কী শান্তি’
কদাপি শব্দেও ব্যক্ত করি এ সুখ
তিন পেগ শেষে
আর সে দিন আমার দিন

একদিন এক দাঁতালো ক্রেন…

এখানে মানুষের বেশকিছু বাড়িঘর ছিল। কয়েকজন ভ্রাম্যমাণ বাহারি পণ্য বিক্রেতার নিত্য আনাগোনা। বেশ কয়েকটি ছোটো বড় সারিবদ্ধ চায়ের দোকান। অনবরত ‘টুং টাং’ শব্দ চামচ পেয়ালার। দুর্দান্ত আড্ডা, গল্পের সরস আসর। হালফিল রাজনীতি সমাজ ক্রীড়া বিনোদন ইত্যাদি এন্তার বিষয় নিয়ে দিনরাত সরগরম আলোচনা মানুষের। এ সব নিয়ে এক কথা দু’কথায় কখনও মতভেদ চরমে উঠলে তিক্ততা, তপ্ত বাক্য বিনিময় ও এক পর্যায়ে অকথ্য গালিগালাজ; এমনকি হাতাহাতিতেও জড়িয়ে পড়তো অতি উৎসাহী দুয়েকজন। যথারীতি উৎসুক শ্রোতা দর্শকের ভিড় জমে যেতো ঘটনাস্থল ঘিরে (পরবর্তীতে বিচার শালিস পর্যন্ত গড়িয়ে থাকবে দুয়েকটি ঘটনা)।

স্মিতমুখ একদল আলুথালু শিশু খেলা করতো চারপাশে- ফুটবল ক্রিকেট কানামাছি ওপেন্টি বায়োস্কোপ ছু কুতকুত; কখনও ওড়াতো ঘুড়ি। ওদের খিলখিল হাসির শব্দ আন্দোলিত হতো বাতাসে। ওদেরও ঝগড়াঝাঁটি হতো, মারামারিও বেধে যেতো কদাচিত। কিন্তু সে সব বেশিদূর গড়াতো না বড়দের মতো। ওরা নিজেরাই সেগুলো মিটিয়ে মেতে উঠতো খেলায়।

অপরাহ্ণে গৃহবধূরা সেজেগুজে আড্ডা জমাতো এখানে; সালোয়ার কামিজ পরা দুয়েকজন কিশোরীও থাকতো। তারা মজা করে গল্প করতো, কথা বলতো হেসে হেসে। জানি না, কি ছিল সে সব হর্ষোৎফুল্ল আড্ডার বিষয়, শুধু দেখতাম মাঝেমাঝে হাসির গমক বেড়ে গেলে আহ্লাদে ঢলে পড়তো পরস্পরের গা’য়ে! তারপর সন্ধ্যা ঘনালে যথারীতি ফিরে যেতো যার যার ঘরে।

এভাবে সুখেদুখে ভালোই কাটছিলো তাদের দিনগুলো। কিন্তু অকস্মাৎ একদিন ভীষণ কুৎসিত অতিকায় এক দাঁতালো ক্রেন এসে সব ভেঙ্গেচুরে গুড়িয়ে দিয়ে গেল। আর কী প্রচণ্ড শক্তি থুকথুকে ন্যাংটো ক্রেনটার। তিলতিল করে গড়া মানুষের এইসব সাধের ঘরবাড়ি আসবাবপত্র সারিবদ্ধ পরিপাটি দোকানগুলো কী অবলীলায় মাত্র ক’মিনিটেই কামড়ে আঁচড়ে চিবিয়ে ভেঙেচুরে গুড়ো গুড়ো করে রেখে গেল আবর্জনার স্তুপাকারে- যত্রতত্র। সহস্র মানুষের ক্রন্দন বিলাপ মিলালো শূন্যতায়।

সত্যি, একটা কিম্ভুতকিমাকার নগন্য দাঁতালো ক্রেনের কাছে মানুষ তো ছাড়ো, ঈশ্বরও বড্ড অসহায়।

একদিন জুহুতে নিনা গুপ্তা

উপরের ছবিতে টি শার্ট শর্টস পরিহিতা, এক হাতে পানির লম্বা একটি ফ্লাস্ক নিয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে হেঁটে চলেছেন যে ভদ্রমহিলা, তিনি সত্তর আশির দশকের হিন্দি সিনেমার নায়িকা নিনা গুপ্তা। না, খুব বিখ্যাত বা জনপ্রিয় নায়িকা ছিলেন না। চলচিত্রে তেমন উল্লেখযোগ্য কোনও সাফল্য পাননি। এখন হয়তো টিভি নাটকে টুকটাক অভিনয় করেন, ঠিক জানা নেই। তিনি মূলত সে সময়ের বিখ্যাত ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটার ভিভ রিচার্ডসের সাথে বিশেষ একটি ঘটনার জন্য দুনিয়াজুড়ে ব্যাপক চর্চিত হন। উহু, থাক সেসব কথা। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ঘাটাঘাটি করা আমার লেখায় বিন্দুমাত্র প্রাসঙ্গিক নয়।

যাই হোক, সেদিন জুহু বিচ থেকে ফেরার পথে হঠাৎ আবিষ্কার করলাম নিনা গুপ্তাকে, হাঁটছেন একাকী। নির্ঘাত সে সময় তিনি ব্যায়াম করতে যাচ্ছিলেন। হাতে পানির ফ্লাস্ক, পায়ে কেডস, পরনে শর্টস টি শার্ট দেখে অনেকটাই নিশ্চিত হই। সত্যি বলতে কি তাঁকে দেখে আমি দারুণ মুগ্ধ হয়েছিলাম। এখনও, এ বয়সেও তিনি অবিশ্বাস্য তারুণ্য ধরে রেখেছেন। মধ্য ষাটেও তাকে ঢের কমবয়সী দেখাচ্ছিল। বিস্মিত হয়েছিলাম। নির্ঘাত তিনি নিয়মিত শরীর চর্চা করে থাকেন নিজেকে এরকম ফিট রাখার জন্য। এখনও হালফিল বলিউড নায়িকাদের মতো জিরো সাইজের লিনথিন ফিগার, একবিন্দুও মেদ জমেনি শরীরের কোথাও। টানটান ক্ষুরধার শরীরে তাঁকে লাগছিল ঠিক যেন বছর পঁয়ত্রিশের কোনও তরুণী। যৌবন ঠিকরে বেরোচ্ছে শরীর থেকে। কে বলবে তাঁর বয়স পয়ষট্টি! যাই হোক তখন পড়ন্ত বিকেলে জুহুর সেই সুনির্জন সড়কে সামান্য কয়েকজন পথচারী ছিলো। ভাবলাম, মুখোমুখি তাঁর কিছু ছবি তুলে রাখি স্মার্টফোনে, কিন্তু সাহস হলো না। কে জানে, কি থেকে আবার কি হয়ে যায়, পাছে তিনি আবার না সিনক্রিয়েট করে বসেন, লাঞ্ছিত না হতে হয়! হা হা হা। সামনে থেকে না হলেও আমাকে অতিক্রম করার পর শখ করে তাঁর কয়েকটি ছবি তুলে রেখেছিলাম স্মার্টফোনের ক্যামেরায়। তারই একটি উপরে দেখতে পাচ্ছেন। আর এই নিনা গুপ্তাই একমাত্র সেলেব্রিটি যাকে আমি আমার পনেরো দিনের মুম্বাই ভ্রমণে দেখেছিলাম।

মুম্বাইয়ে ঝুম বৃষ্টির এক বিকেলে

মুম্বাইয়ে আন্ধেরির একটি হোটেলে বৃষ্টিতে আটকা পড়েছি। বিকেলবেলা। ঝুম বৃষ্টি। থামবার আর নাম নেই। কী বিড়ম্বনা! দুই গ্লাস কোকোম জুস খাওয়া হলো। মুম্বাইয়ে যেয়ে এই একটি জিনিসের প্রেমে পড়েছিলাম বললে ভুল হবে না, কোকোম জুস। খেয়েছিও প্রাণভরে। ওই বিশেষ হোটেলটা তো আছেই। এছাড়াও স্টেশনের প্লাটফর্ম, বিভিন্ন ছোটো রেস্টুরেন্ট, ফুটপাতের ভ্রাম্যমাণ দোকান যখন যেখানে পেয়েছি, প্রাণভরে পান করেছি। প্রতিদিন গড়ে আনুমানিক দুই লিটার কোকোম জুস খেতাম। ওখানে খুব প্রচলিত এই জুস। সর্বত্র পাওয়া যায়। খেতে কেমন যেন ঝাল ঝাল, দারুণ ভালো লাগে। ওই হোটেলে বিশ রুপি ছিলো দাম। অল্প কদিনেই হোটেলটা আমার খুব প্রিয় হয়ে উঠেছিল। আন্ধেরি রেল স্টেশনের পাশেই। খুব সম্ভবত বাড়ির উঠোনকে হোটেল বানানো হয়েছে। একেবারেই নিরিবিলি শান্ত ঘরোয়া পরিবেশ। অনেকটা ছোটো একটি খোলা মাঠের মতো। মুম্বাই থাকাকালীন খুব গিয়েছিলাম। প্রত্যেকদিন একবার হলেও যেতাম। জুস, কফি, পোহা, বড়া পাও ইত্যাদি খেতাম। সুন্দর কিছু সময় কেটেছে। আর সে সব আজ আনন্দদায়ক স্মৃতি হয়ে আছে। থাকবেও জীবনভর।

যাই হোক প্রায় ঘন্টা খানেকের মতো বৃষ্টি চললো একটানা। তারপর কিছুটা কমে এলে বেরিয়ে এলাম সেখান থেকে। এ সময় আন্ধেরি স্টেশনে যাবার পথে কিছুক্ষণ হেঁটেছি মাত্র, আবার বৃষ্টি শুরু হলো। ঝুম বৃষ্টি। কী যে বিড়ম্বনা! কয়েকজন মানুষের সাথে পাশের একটি দোকানের ছাদের নিচে কোনও রকমে দাঁড়ালাম। কিছুকাল কেটে গেলো। বৃষ্টি পড়ছে তো পড়ছেই। থামবার আর নাম নেই। বিরক্তি চরমে পৌছেছে। এ সময় পাশের একজন মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোককে দেখলাম, কনুই দিয়ে আমার কোমরে গুতো দিল।
‘কী ব্যাপার?’ বিরক্তির সাথে জিজ্ঞেস করলাম। ‘ওরকম করলেন কেন?’
‘ওই যে দেখুন।’ জবাবে বললো সে।

তার ইশারার নির্দেশীত স্থানে দেখলাম, একজন মধ্যবয়স্ক লোক ডান্ডা বিহীন অদ্ভুত একটি ছাতা হাতে নিয়ে বেশ বেকায়দায় ছোটাছুটি করছে সড়কে। হয়তো সুনির্দিষ্ট কিছু খুঁজছিল। হা হা হা। সশব্দে হেসে উঠলাম দৃশ্যটা দেখে। লোকটার ছাতায় ছাতা ধরার লম্বা যে ডান্ডা থাকে, সেটা নেই। বৃষ্টিতে মেলে দেয়া ছাতার একেবারে গোড়ায়, সামান্য অবলম্বন কোনও রকমে কষ্টেসৃষ্টে ধরে আছে। ওতেই বেশ কাজ চলে যাচ্ছে। ছাতাটা দিব্যি কাজ করছে। বৃষ্টি পড়ছে না গা’য়ে। কিন্তু ছাতাটা সামলাতে তাকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিলো। বাতাসের তোড়ে উড়ে যাবার মতো অবস্থা। ওরকম একটা নষ্ট ছাতা নিয়ে ভদ্রলোক রাস্তায় নেমেছে কেন, মাথায় এলো না কিছু। হতে পারে, চলার পথে হঠাৎ এভাবে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, বিপদে পড়েছিল বেচারা।

হা হা হা। আমাদের হাসির সাথে আরও কয়কেজন যোগ দিল উদ্ভূত মজাদার পরিস্থিতি দেখে। যে লোকটি আমাকে দৃশ্যটি দেখিয়েছিল, তার তো দেখলাম তর্জনী নাচিয়ে হাসতে হাসতে একেবারে সেখানে গড়াগড়ি খাবার মতো অবস্থা! সত্যি, দারুণ মজা পেয়েছিলাম দৃশ্যটা দেখে (ব্যাপারটা কিছুতেই মজাদার নয় যদিও)। আমি নিজেও নিজেকে সংবরণ করতে পারিনি, সশব্দে হেসেছিলাম। কী করবো, মানুষ তো! চেয়ার থেকে কাউকে ‘ধপাস’ চিৎপটাং পড়তে দেখলে আমরা যেমন আনন্দ পাই, কিছুতেই না হেসে পারি না, মুখ টিপে হলেও হাসি। অনেকটাই সেখানে ওরকম পরিস্থিতি আমাদের সবার। সবাই যে যার মতো হাসছি।
সত্যি, দারুণ মজার একটি স্মৃতি। আজ মনে পড়লে নির্মল আনন্দে প্রাণ ভরে ওঠে। ভালো থাক মুম্বাইয়ের বৃষ্টিস্নাত সেই বিকেলের সেই হাসি খুশি সহজ সরল মানুষগুলো। মুম্বাইয়ে এরকম আরও বহু মধুর স্মৃতি আছে। অনেক ভালো সজ্জন মানুষের সাথে পরিচিত হয়েছি, তাদের সান্নিধ্য পেয়েছি। আগামীতে সেগুলোও কখনও লিখবো এই আশা ব্যক্ত করছি।

(ছবি: সংগ্রহ)

কিছু গল্প কিছু স্বগোতক্তি

শীত একেবারেই বিদায় নিলো। ঝা চকচকে রৌদ্রময় দিন আজ। দাবদাহ। চারপাশ গাঢ় হলুদ রঙের রোদ্দুরে ভরে আছে। মানুষের গল্প যথারীতি এগিয়ে চলেছে অবিরাম। এখানে সর্বত্র কোলাহল, এন্তার যানবাহনের আনাগোনা অহর্নিশ। কানের কাছ দিয়ে শিষ কেটে একের পর এক গাড়িঘোড়া ছুটে চলেছে। দাঁড়িয়ে আছি বাড়ির কাছের এক গলির মুখে। পৃথিবী এগিয়ে চলেছে আপন গতিতে, নিজের খেয়ালখুশি মতো। কখনও অতিকায় ডাইনোসর এই মর্ত্যলোকে দাপিয়ে বেড়াতো। তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ তীব্র আন্দোলন সৃষ্টি করতো মাটিতে। কিন্ত তারা টিকতে পারেনি, নিঃশেষ হয়ে গেছে। বিরূপ প্রকৃতির কাছে পরাজিত হয়ে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
আচ্ছা, পৃথিবীর বয়স কতো হলো? এর সর্বজনগৃহীত কোনও উত্তর নেই। বিভিন্ন ধারণা প্রচলিত। প্রতিষ্ঠিত বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীদের এ ব্যাপারে মতভিন্নতা আছে। সত্যি, মাঝেমাঝে বড্ড জানতে ইচ্ছে করে কোথায় শুরু? কোথায় শেষ? আমি কোথায় দাঁড়িয়ে আছি? এরপর?

***
আমার দারুণ প্রিয় একটি দেশাত্মবোধক গান, “আমায় যদি প্রশ্ন করে/আলো নদীর এক দেশ/বলবো আমি বাংলাদেশ…”। চমৎকার একটি গান। শাহনাজ রহমতুল্লাহ গেয়েছেন। শাহনাজ রহমতুল্লাহ আমার খুবই প্রিয় শিল্পী। ছোটোবেলা থেকে তার গান শুনে আসছি৷ আমি তখন খুবই ছোটো। প্রাইমারি স্কুলে সবে ভর্তি হয়েছি। এ সময় আমার বড় বোনকে দেখতাম, তাঁর বেশ কয়েকটি গান নিয়মিত গাইতো; “যে ছিলো দৃষ্টির সীমানায়/যে ছিলো হৃদয়ের আঙ্গিনায়/সে হারালো কোথায় কোন দূর অজানায়…”, ও আরও দুয়েকটি গান (এ মুহূর্তে ঠিক মনে পড়ছে না)। তাঁর আরেকটি অসামান্য দেশাত্মবোধক গান, “একবার যেতে দে না/আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়/যেথায় কোকিল ডাকে কুহু/দোয়েল ডাকে মুহূর্মুহু…”।
সত্যি, অসাধারণ গায়িকা! সাবিনা ইয়াসমিন বা রুনা লায়লা’র থেকে প্রতিভা, দক্ষতা কোনও অংশেই তিনি কম নন। অনেক জনপ্রিয় গানও গেয়েছেন। যেমন সুমধুর তাঁর কণ্ঠ, তেমনি সাবলীল গায়কী। অত্যন্ত আবেদনময়ী কণ্ঠের অধিকারিণী তিনি। তবু্ও জানি না কেন, কোনও অজ্ঞাত, রহস্যবৃত কারণে আমাদের দেশের মিডিয়া কখনওই সাবিনা ইয়াসমিন বা রুনা লায়লা’র মতো তাঁকে মূল্যায়ন করেনি। কোনও একটি পত্রিকায় সাক্ষাৎকারেও তাঁকে এটা নিয়ে প্রকারান্তরে খেদ প্রকাশ করতে দেখেছিলাম। উক্ত দুই শিল্পীর কাতারে কখনওই আমরা তাঁকে রাখিনি বা বিবেচনা করিনি! অথচ তাঁর সঙ্গীত ক্যারিয়ার, যোগ্যতা, দক্ষতা কোনও বিবেচনাতেই রুনা লায়লা বা সাবিনা ইয়াসমিন’র থেকে কম নয় কিছুতেই।
আমি তাঁর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘ জীবন কামনা করছি। এখন বোধহয় তিনি আর গান করেন না। এরকম পড়েছিও কোথাও যে, তিনি আর গান গাইবেন না। আমি আশা করি, তিনি তাঁর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে আবার গান গাইবেন আমার, আমার বড় বোন ও এরকম আরও অগণিত ভক্ত অনুরাগীর জন্য।

ভারত বাংলাদেশ বন্ধুত্ব চিরজীবী হোক

সাম্প্রতিক সময়ে ভারত পাকিস্তান সমস্যা নিয়ে এদেশের প্রচার মাধ্যমে অনেকেরই অন্ধ ভারত বিদ্বেষ এবং একই সঙ্গে অন্ধ পাকিস্তান প্রেম দেখে লেখাটি কাল রাতে হুট করে লিখে ফেললাম।


মনে পড়ছে, খুব সম্ভবত ২০০৬ সালে সিডর পরবর্তী বাংলাদেশে দারুণ খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছিল। একেবারে ‘মন্বন্তর’র দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিলাম আমরা। দারুণ সঙ্কট দেখা দিয়েছিল চালের। রাতারাতি অস্বাভাবিক দাম বেড়ে গিয়েছিল। অন্যান্য খাবারও পর্যাপ্ত ছিলো না। শাকসবজি কিংবা অন্যান্য খাদ্য দ্রব্যের অপ্রতুলতার থেকেও চালের সঙ্কট মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছিল আমাদের। ভাত না খেলে আমরা বাঁচবো কী করে! ইতোমধ্যেই চালের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গিয়েছিলো। পঞ্চাশ টাকা কেজিতে এক কেজি চাল বিক্রি হতে দেখেছিলাম সে সময়। কেবল ধনী লোকেরাই ক্রয় করতে পারতো। পরিষ্কার মনে পড়ছে, কী যে শ্বাস রূদ্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল সারা দেশে। তখন বাংলাদেশে ভারতের রাষ্ট্রদূত ছিলেন পিনাক রঞ্জণ চক্রবর্তী। তার কাছে সহায়তা চাওয়া হয়। অনুরোধ করা হয়, বাংলাদেশে চাল রপ্তানির। এ সময় ভারত নামক বিশাল প্রতিবেশী রাষ্ট্রটি আরেকবার আমাদের ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। দুর্যোগ কবলিত বাংলাদেশে বিরাট পরিমাণের চাল অত্যন্ত স্বল্প মূল্যে রপ্তানি করে এ দেশের অগণিত দরিদ্র মানুষের মুখে ভাত তুলে দিয়ে তাদের জীবন রক্ষা করেছিল ভারত। হ্যা এই তো পরিষ্কার মনে করতে পারছি, ভ্রাম্যমান চালের গাড়িতে চালের বস্তায় গোটা গোটা হরফে লেখা কৃষ্ণনগর, নদীয়া, পশ্চিম বাংলা, ভারত। আমি একাত্তর দেখিনি, ২০০৬ দেখেছি। নিশ্চিত দুর্ভিক্ষ মন্বন্তরের হাত থেকে এ দেশকে বাঁচিয়েছিল আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রটি। আমি ভুলে যাইনি। আমি ভুলতে পারি না। কারণ আমার রক্ত অকৃতজ্ঞের রক্ত নয়, প্রতারকের রক্ত নয়, কৃতঘ্নের তো নয়ই। ভারতের কাছে আমার, আমাদের ঋণ, রক্তের ঋণ। প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে হলেও আমি এই ঋণের প্রতিদান দিতে পারি। ভারতের যদি দরকার হয়, তাহলে আমি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে তাদের হয়ে শত্রু দেশের সঙ্গে যুদ্ধ করতেও প্রস্তুত। সেটা পাকিস্তান বা চিন যেই হোক।

অরিত্রিকা, একটি সুগন্ধি ফুলের নাম বলো

অরিত্রিকা,
বড্ড মনে পড়ছে তোমাকে
কোথা থেকে যে কী হয়ে গেল
সহসা হারিয়ে গেলাম দুজন গঞ্জের মেলায়
ব্যস্ত মানুষের বিরাট কোলাহলে
হারিয়ে গেল পৃথিবীর তাবৎ ফুলের ঘ্রাণ
তোমার অশ্রু টলমল আনত চোখের প্রথম পলকেই;
বাড়তি সময়ের শেষ মিনিটের বেমক্কা এক গোলে
যেন হেরেই বসলাম ম্যাচ নিশ্চিত গোলশূন্য সমতা
ও শেষের কাছে এসে। জানি, তবুও হাসতে হবে
করমর্দনে সহাস্যমুখ বাড়াতে হবে হাত বিজয়ী প্রতিপক্ষকে
অগুনিত দর্শকের বিপুল করতালি ও হর্ষ ধ্বণির মাঝে।

অরিত্রিকা,
বস্তুত আমরা একত্রে ছিলামই না কোনওদিন
শরীরে কিংবা পোষাকে
কিন্তু দুজন দুজনাতে মিশেছিলাম অন্তরাত্মায়
কিংবা এভাবেও বলা যেতে পারে:
আমরা দুজন শূন্যে উড়েছিলাম কিছুকাল পাশাপাশি
সাদা কাগজের পলকা এ্যারোপ্লেন হয়ে
তারপর কে যে কোথায় উড়ে চলে গেছি…
পরস্পর সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন আজ;
আমাদের কোনও টার্মিনাল নেই
এ্যারিয়ালে ধ্বনিত যান্ত্রিক সঙ্কেত
লাল সবুজ উজ্জ্বল সিগনাল বাতি
যাবার আসবার, আবার উড়বার
দুজনাতে পাশাপাশি।

শিরোনামহীন

ফুলদানিতে কেমন বীভৎসভাবে শুকিয়ে নুয়ে পড়েছে বাসি ফুলগুলো
আজ আর কোনও সুঘ্রাণ নেই সৌন্দর্য নেই
সব রঙ হারিয়ে হাসপাতালের মরনাপন্ন রোগীর চোখের মতো পাণ্ডুর পড়ে আছে।
সত্যি বলতে, ওগুলোকে ফুল বলে সম্বোধনেও আজ আমার দ্বিধা হয়-
আদৌ কি ফুল- নোংরা থুকথুকে নাম না জানা জাড্য বস্তু কতিপয়!

আহা, কখনও সতেজ ছিল ফুলগুলো- রঙিন বাঙময় সদ্যফোটা
কেউ একজন ভালবেসে দিয়েছিল প্রীতি উপহার
আমি তা সযত্নে এনে সাজিয়ে রেখেছিলাম ফুলদানিতে;
শুরুতে কতোই না শোভাবর্ধন করেছিল আমার ছোট্ট ঘরখানির
আর কী যে মন মাতানো সুঘ্রাণে ভরে থাকতো চারপাশ- সারাবেলা
যেন বসন্তরাগ অবিরাম ঝঙ্কৃত হতো মধুর ঘ্রাণে ভরা ইথারে ইথারে!
অভ্যাগতদের অকৃপণ বেশুমার প্রশংসা ফুলের ও আমার সৌন্দর্যবোধেরও
স্ফীত করেছিল বুক অফুরন্ত গৌরবে (কিঞ্চিৎ অহমিকাতেও বৈকি)।

অথচ আজ জীর্ণ থুকথুকে বাসি ফুলগুলোর দিকে তাকালে আমি শিউরে উঠি-
মনে পড়ে যায় বিগত দিনগুলি- একগুচ্ছ সতেজ সুরভিত ফুল ফুলদানিতে
আর কেমন যেন একধরণের শূন্যতা, আতঙ্ক অদ্যন্ত গ্রাস করে-
আমার কণ্ঠনালি শুকিয়ে আসে, শ্বাস নিতে অব্দি কষ্ট হয়…
শুকনো বেরঙ বাসি ফুল এতোটা ভীতিকর হতে পারে!

তুমি এমন কিছু কেন দিলে না যা নিত্য ব্যবহার্য অথচ জীবনভর রয়ে যায়-
পিতলের খসখসে চা চামচ সিগারেট কেস কিম্বা আস্তিনের সামান্য বোতাম;
আর ফুলই যদি দেবার ছিলো তবে দিতে কাগজ কিম্বা প্লাস্টিকের ফুল-
সুঘ্রাণ না ছড়ালেও সময়ে শুকিয়ে বাসি হয়ে এরকম ভীতিপ্রদ হতো না।

ছবি ব্লগঃ আহা, কোথায় যে হারিয়ে গেল সেই শৈশব


ঢাকার কোথাও। কাছাকাছি সময়েই তোলা। মাস দুয়েক আগে সম্ভবত।


কলেজ স্ট্রিট, কোলকাতা, ২০১৬। সত্যি দারুণ মধুর ভ্রমণ স্মৃতি। ওদের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলবার সৌভাগ্য হয়েছিল। খুবই আন্তরিক, যেমন হয় শিশুরা, ফুলের মতো শিশিরের মতো সহজ, কোমল।


বেশ কবছর আগে তোলা। ঢাকার কোথাও। খুব সম্ভবত ২০১৩ সাল বা ১৪। আহা, সময় বহতা পানি। পরিষ্কার মনে করতে পারছি স্মৃতিগুলো। একটা ছবি মুহূর্তেই ফিরিয়ে নিয়ে গেল ফেলে আসা সেই দিনে।


ছবিটা ফ্রান্সের, আমার নয়, আমার এক বন্ধুর ফ্লিকার একাউন্ট থেকে নেয়া। দারুণ একটা ছবি। শেয়ার করলাম। ওকে সম্ভব হলে একটা লিঙ্ক পাঠাবো মেইলে।


দুই বা তিন বছর আগের ছবি। বৃষ্টির দিন ছিল। ওরা খেলছিল ছোটো একটি মাঠে। ঢাকার কোনওখানে।


এটা বেশ কবছর আগে তোলা, ২০১৩/১৪। সত্যি দারুণ স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ছি ওর ছবিটা নিয়ে লিখতে গিয়ে। খুব চমৎকার সম্পর্ক ছিল আমাদের। বহুবার আমার ক্যামেরার সামনে মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আহা, আজ নির্ঘাত অনেক বড় হয়ে গেছে!

শিরোনামহীন

মানুষ খুঁজে ফিরছি আমি এ শহরে
নেই
চারিদিকে বাহারি মুখোশ পরা দুপেয়ে একদল প্রাণী নিজেদের মানুষ বলে দাবী করছে
কিন্তু আমি জানি, আলবৎ মিথ্যে বলছে ওরা…
ওরা কিছুতেই মানুষ হতে পারে না
কারণ ওদের সমস্ত মুখ ঢাকা বিচিত্র সব মুখোশে
ওদের পকেটেও রঙবেরঙের বিভিন্ন মুখোশ
মুখোশের শেষ নেই- একটা খসে গেলে পলক পরার দ্রুততায় আরেকটা
সেটাও খসে গেলে একইভাবে আরেকটা-
এভাবে একটার পর একটা মুখোশ অনবরত বদলেই চলেছে মাইম শিল্পীর মতো…
কিন্তু একটি শহরে তো আর এতো মাইম শিল্পী বাস করতে পারে না
তাই সহযেই নিশ্চিত হতে পারি যে, ওরা মাইম শিল্পী নয়
তাহলে!
আমি জানি না ওই বাহারি মুখোশ পরা দুপেয়ে প্রাণীগুলো কে বা কারা
হয়তো ওদের মাঝে কেউ বানর কেউ হনুমান গরিলা ওরাংওটাং শিম্পাঞ্জি
কিন্তু মানুষ নয় কিছুতেই
কোনও উপলক্ষ্য ছাড়া মানুষ এতো দীর্ঘসময় টানা মুখোশ পরে থাকতে পারে না।

ঈর্ষা

আমি সুখী হই, যখন দেখি কোনও কাক এক টুকরো মাংস ঠোঁটে নিয়ে অজানায় উড়ে চলেছে। আমি ঈর্ষান্বিতও হই; উহু, ওই মাংসের টুকরোর জন্যে নয়- এটা এই ভেবে যে, ওই নগণ্য কাকের মতো আমি ছিনিয়ে নিতে পারি না- এক মুঠো ভাত।

জাহাজ ডুবির পর

তুমি যাকে ঈশ্বর বলো। আমি তাকে আল্লাহ বলি। সে ভগবান বলে। সে মহামতি বুদ্ধকেই তাঁর প্রতিভূ মনে করে। সে সূর্যকে। সে শাপকে। সে গাছকে। আর আমরা সবাই সেদিন শুদ্ধ বিশ্বাসী ছিলাম সেই জাহাজে। আমরা মনেপ্রাণে তীব্র ঘৃণা করতাম পৃথিবীর সমস্ত শাপগ্রস্ত নির্বোধ অবিশ্বাসীদের। কিন্তু আচানক মাঝ সমুদ্রে আমাদের জাহাজটা বেমক্কা ঝরের কবলে ডুবে গেল আর আমরা কোনওরকমে ছোটো একটি বাঁশের ভেলায় চেপে প্রাণ বাঁচালাম। আমরা ভীষণ ক্লান্ত ক্ষুধার্ত ও তৃষিত ছিলাম। বেঁচে থাকার জন্য রসদ ও সুপেয় জল অনিবার্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু চারিদিকে তখন সমুদ্রের নিঃসীম নোনা জল ছাড়া আর কিছু নেই।
এভাবেই তিন তিনটি দিন কেটে গেল অনাহারে। তারপর চতুর্থ দিনে এসে সবাই উপলব্ধি করলাম যে, আমরা যারপরনাই ক্ষুধার্ত ও তৃষিত হয়ে পড়েছি। রাজ্যের ক্ষুধা তৃষ্ণা ক্লান্তিতে আমরা মৃতপ্রায়। সত্যি আমাদের বড্ড দুর্ভাগ্য যে, সেদিন একজনও অবিশ্বাসী ছিল না আমাদের মাঝে। কিন্তু আমাদের তো বাঁচতেই হতো। আমাদের মতো শুদ্ধ বিশ্বাসীরা এভাবে মরতে পারে না। মরে যাক পৃথিবীর সমস্ত কূপমণ্ডূক অভিশপ্ত অবিশ্বাসীরা।
কিন্তু ভাবাবেগের সময় সেটা ছিল না। বাঁচার জন্য তখন আমাদের অনিবার্য সুপেয় জল ও রসদ চাই। আর এভাবে এক পর্যায়ে আমরা পরস্পরের দিকে লোভাতুর চোখে তাকালাম। সত্যি বড্ড পরিতাপের বিষয় যে, সেদিন আমাদের মাঝে একজনও অবিশ্বাসী ছিল না। কিন্তু আমাদের তো বাঁচতেই হতো। আমাদের মতো শুদ্ধ বিশ্বাসীরা এভাবে মরতে পারে না। সূর্যের ঝা চকচকে উজ্জ্বল আলোয় আমাদের রক্তাভ, লোলুপ চোখগুলো ততোধিক ঔজ্জ্বল্য নিয়ে ঝলমলাতে লাগলো খাবার ও জলের ঘ্রাণে। আমরা একে অন্যের দিকে তাকালাম লোভাতুর চোখে।