চারু মান্নান এর সকল পোস্ট

পাখিদের নিশি কাব্য

______পাখিদের নিশি কাব্য

আজ পৌষ পার্বণ;
তুমি ফিরে এলে না! বাতাস কানে, আজ না তোমার কথা শুনলুম
সবুজ পাতার শিশির ভেজা ঘ্রাণে
আমলকী বন।
পৌষ হাওয়া বয় উত্তরের
কদাচিৎ সজনে ডাল কেঁপে উঠে, শিশির জমানো ফোটা
মাকড়ষার জালে গেঁথে রয়।

তুমি ফিরবে বলে;
ঝিরঝির বাতাসে লাউ ফুলে কস্তরি হলুদ পোকাটা পাখনা মেলে উড়ে
ধুলো গায়ে শিশির মাখে অপরাহ্ণে
পৌষ সাঁঝে উনুনের ধুঁয়া
কুয়াশার আবির ঢালে সন্ধ্যাবতীর গাও পেরিয়ে দিগন্তে ছুটে
কুয়াশা পথে, পাখিদের নিশি কাব্য, গায়
বিরহী দল ছুট ডাহুকী; তুমি ফিরবে বলে।

তুমি ফিরবে বলে
পৌষ রাত; হিমেল জোছনায় ঝিরঝির তুষার লজ্জাবতীর শরীর ঢাকে
শিশির ভেজা ওমে দুরন্ত কাঠবিড়ালী
তোমার পথের নিশানা আঁকে।

১৪২৬/পৌষ/শীতকাল।

আমাকে ক্ষমা কর মা

____আমাকে ক্ষমা কর মা

আমাকে ক্ষমা কর মা! আমরা পারিনি,
তোমার রক্তের ঋণ করিতে শোধ!
রক্ত দানে; যে স্বাধীনতা কেনা! স্বপ্ন সম্ভার মুক্তির,
ফিরে ফিরে মূল্য খুঁজি তার!!

আজও কৃষকের লাঙ্গলের ফলায় গেঁথে উঠে
বীর শহিদের করোটি;
অস্থি মজ্জায় সোদা রক্তের ঘ্রাণ, অমানিশায়
বিলিয়ে দিয়েছে জীবন; ৭১ এর রনাঙ্গণে।
ওদেরকে ভুলি কেমনে মা!
পারিজাত লক্ষ কোটি লাল ছালাম,দোয়া মাঙ্গি!
দিয়েছে প্রাণ দেশের তরে! মুক্তির স্বপ্ন বানে
ধন্য ওদের জীবন;
ধন্য ওদের প্রাণ।

[30 লক্ষ, শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনায়]
১৪২৬/ বিষয়শ্রেণী: জীবনমুখী/দেশাত্মবোধক কবিতা

প্রেম, নির্লজ্জ বেহায়া লজ্জাবতী

_____প্রেম, নির্লজ্জ বেহায়া লজ্জাবতী

এই তো বেশ আছি,
তোমায় ছেড়ে; অথচ দ্যাখো তুমিই শেখালে
অতীতের সিকা ছিঁড়ে
নন্দন প্রেম তোমার! ঠিক তোমার হয়েই রইল।
যত্ন আত্তির মোহ নয়
ঠিক জীবন গুছিয়ে বেঁচে রইলে; কালের পিরামিড
স্বপ্ন ভুলে। অতঃপর কাল তোমারই;
আমিত্বের চিহ্ন আজ বিবর্ণ।

খেড়ো খাতায়, টুক টাক যা কিছু অতীত মোহ
ফাঙ্গাস কাগজের পীতবর্ণে; আহম্মকের মতো
বেঁচে রয়। যদিও সবটুকু অতীত তোমারই;
তবুও আমারই সব! অধিকার গুনে।

ইতিহাস কথা বলে, প্রেমহীন মানুষ বাঁচে
যাতনা টুকু সাথে লয়ে; মৃত‌্যু নামের আঁধারে ডুবে
কেউ কেউ। কেউ ভেসে ভেসে তীরে উঠে! নতুন স্বপ্ন বুননে
বাসনা লয়ে; প্রেম সে কি? নির্লজ্জ বেহায়া লজ্জাবতী!

হেমন্তকাল/অগ্রাহয়ণ/১৪২৬/বিষয়শ্রেণী: প্রেম, বিরহের কবিতা

প্রেম যে কস্তুরী ঘ্রাণ

প্রেম যে কস্তুরী ঘ্রাণ

যেতে দাও আজ তোমার অবরুদ্ধ নগরীতে
বন্ধ দ্বার এবার খুলে দাও, নন্দন
কোলাহলে।
আর কত দিন রইবে অবরুদ্ধ, বন্দি অভিমানে
দ্যাখো হেমন্তের নবান্ন সুবাস, তোমার দ্বারে
খিড়কি খুলো!
কালের বার্নিশ দ্যাখো চির ধরেছে, নোনা ধরা
দেয়াল দ্যাখো পড়ছে খসে, নন্দন বাগে ঝরছে
হলুদ পাতা।

গহন লাগা প্রাচীরে আর কত ডাকবে খাঁচায়?
এবার পতঙ্গ বুনে যাও; প্রেম যে কস্তুরী ঘ্রাণ, যদি মিলে
সর্বনাশে।
বেলা শেষে ডাহুক ডাহুকির ডাক খুনসুটি বির্নিমানে
দেখলে না হেমন্তের পথে হেঁটে হেঁটে; ঝরা মাদার ফুলের
পাপড়ি তোমারে ডাকে।

১৪২৬/হেমন্তকাল/বিষয়শ্রেণী: প্রেমের কবিতা, রূপক কবিতা

বিন্দুতে ঐ শূন্য টেনে শূন্য পথে একলা হাঁটা

—–বিন্দুতে ঐ শূন্য টেনে শূন্য পথে একলা হাঁটা

ঐ চেয়ে দ্যাখো
ঘুরছে পৃথিবী; আমি তুমিও সাথে সাথে
পাঁজর ভেঙ্গে পড়ছে খসে
নক্ষত্রের ঐ পেন্ডুলাম বুনে!
যাতনা সুখের গোলাক ধাঁধা
বুদ্ধি গিলে পণ্ডিত হই।

আমি তুমি ঘুরছি বেকার পৃথিবী নামের
সমতলে; বিন্দুতে যে বিন্দু মিশে
সবাই তাই সস্থি খুঁজে!
অমানিশা আর মোহনেশা
সবই তো ঐ বিন্দুতেই
কারুকার্য্যে জোঁকার সেজে অভিনয়ের
পাল্লা ধরে।

বোধের কাঙ্গাল ছলচাতুরি
পাপপূণ্যের হিসাব দ্যাখো; আমি তুমি রইব একা
বিন্দুতে ঐ শূন্য টেনে শূন্য পথে একলা হাঁটা।

১৪২৬/কার্তিক/ শরতকাল/বিষয়শ্রেণী: জীবনমুখী কবিতা, রূপক কবিতা

তোমার বিলাসী অন্তর্ধান

————তোমার বিলাসী অন্তর্ধান

আশ্বিনের আকাশ, সাদা মুর্চ্ছনায় মেঘমালা সাজে
যেন অপরাহ্ণে নন্দিনী তুমি!

বিষাদের মেঘ দূরে সরে যায় শূন্য বলয় হতে দূর বহু দূর
কবিতার অঙ্গন জুড়ে এখন শুধু তুমি আর তুমি;
বিরহী আঁচল ছুঁয়ে আছে কত কাল, কে জানে? খেই হারিয়ে ফেলেছে
বিদগ্ধ নাবিক! সাগর গভীরে নিত্য তারই মৃদঙ্গ বাজে।

জলের ব্যবচ্ছেদে! বিন্দু বিন্দু জলরাশি তোমারই গহন লাগা
বিরহ ঘোর আঁটে; যেন সব দিকেই তুমি স্বচ্ছ প্রতিবিম্বে
একলা দাঁড়িয়ে।

যেতে যেতে কালের প্রান্তে তুমি দাঁড়িয়ে
মননে পোড়া বালুরাশির তলে, পিরামিডের স্বপ্ন মৌনতায়
আবেগী গলায় ডাক দিয়ে যায় হিম লাগা সুরে মহুয়া নেশায়
মরীচিকা আঁধারে বিপন্ন এক! তোমার বিলাসী অন্তর্ধান

১৪২৬/আশ্বিন/ শরৎকাল।বিষয়শ্রেণী: প্রেমের কবিতা

রাত দিনের সাথে কাল জিইয়ে রয়

——–রাত দিনের সাথে কাল জিইয়ে রয়

পথিক এখন পিচ ঢালা পথে হাঁটে
সেই কবে সোদা মাটির গন্ধমাখা মেঠোপথ ছেড়ে এসেছে?
মনে পরে পথিকের রাতে ঘোর লাগা তন্দ্রায়
স্মৃতির খিরকিতে খলবলিয়ে উঠে;
যেন আষাঢ়ে মাছের পোনার ঝাঁক।

অথচ, ক্ষুধার তন্দ্রায়
পথের বাঁকে; রাত দিনের সাথে কাল জিইয়ে রয়।
সেথায় বসে পঙক্তিমালা সমেত,
কত বিদ্রোহ মিছিল? অধিকার সমীপে
পাপ-পুণ্য, ভোগ-লালসার তীব্র বাসনা জাগ্রত
পিচ ঢালা পথে পথে হেঁটে বেড়ায় পথিকের পিছে পিছে
নিঃশ্চুপ, পথিক আজ বড়ই বেমানান
পিচ ঢালা এই পাকা সড়কে।

আপ্লুত করে না আর! লজ্জাবতীর মতো ভয়ে লুকিয়ে থাকে
সয়ে যায়, নিবৃত যাতনার প্রদাহ; আবার
কাঠবিড়ালীর মতো ছুটে বেড়ায় শুধু এদিক ওদিক চেয়ে চেয়ে।

১৪২৬/ শরৎকাল/ আশ্বিন।
বিষয়শ্রেণী: জীবনমুখী/ রূপক কবিতা

সন্ধ্যাবতীর নবান্ন ঘ্রাণ

______ সন্ধ্যাবতীর নবান্ন ঘ্রাণ

সবে বান সরে গেছে, নরম মৃত্তিকায় শেওলা শুকায়
পলি কাদায় সবুজ ঘাসের বিন্যাস তুলতুলে হেমন্তের
মহনীয় সাজ।
শালুক ফোটা বিলের টলটলে স্থির স্বচ্ছ জলে শেওলা বাগিচায়
দারকিনা মাছের ঝাঁক; দল ছুট হাঁসের ছানার দল
ডুব সাঁতারে মাতে জল ভরন সুখে।

প্রণামী লাজে তুমি; সন্ধ্যাবতীর নবান্ন ঘ্রাণ!
লজ্জাবতী চুপ্‌সে যায় পানকৌড়ি ছন্নছাড়া
যাতনায়।
ডাহুক ডাহুকী নবান্ন মাখা ঘ্রাণে জল ডুবা নাড়ার ক্ষেতে
সুরম্য ধানের ঝাড়ে বেঁধেছে বাসা সুবোধ সারাল্য সুখে
প্রেম অভিসারে।

খেয়া জাল ধরে বসে আছে ঠাঁই অভাজন, সাঁঝ লালীমায়
উড়ে উড়ে পাখির ঝাঁক দিগন্তে মিলায়
লাউ মাঁচায় সাদা ফুলে এখনো লাল ফড়িং দোল খায়
মৌনতায়।

১৪২৬/হেমন্তকাল/ কার্তিক।
বিষয়শ্রেণী: প্রকৃতির/ প্রেম/ রূপক কবিতা

ক্ষণজন্মা বৈভব

——-ক্ষণজন্মা বৈভব

কোথায় যাবে তুমি?
পা বাড়ালেই পথ। পথের সমুখে পথ
অন্তহীন পথের নিশানায় পথ বয়ে চলে।
বয়ে চলা জলের প্রবাহ নদীর মতো
এঁকে বেঁকে সমুদ্র মোহনায়;
যেন পথের সিদ্ধ আকর।
জীবন পথ, পথের পথ, মরন পথ
একই সূত্রে গাঁথা যেন সুবর্ণ সাঁঝ লালিমা
ক্ষণ কালেই ক্ষয়ে যায়।
খসে পড়া যাতনায় মেইয়ে যায় যে পথ
তাঁকে আন্ধার অসীম শূন্যতায়, মাদকতার পথ;
অসীম কালের সসীম সীমা শেষ বলে কিছু নেই
সেখানে শুধু বিপন্নতা।

পথেই যে অবনী ডুবে যায়;
জোছনা সাথে জেগে উঠে সহসা, ক্ষণজন্মা বৈভব
মৃত্তিকা পথের ধুলায়, বিবর্ণ অসহায়
সুবর্ণ দেহ অনন্তকালের দ্বারে!

১৪২৬/ভাদ্র/ শরতকাল/
বিষয়শ্রেণী: জীবনমুখী কবিতা, রূপক কবিতা

সেদিন ছিলাম না আমি, সেটাই সত্য

———-সেদিন ছিলাম না আমি, সেটাই সত্য

একদিন তোমার দিন ছিল
সে দিন আমি ছিলাম না; হয়তো জাগতে হয়তো না
আমি ছিলাম না সেটাই সত্য।
যদিও সে থাকা, না থাকার মিছিলে
শুধুই ছিল প্রত্যাশা অভিমান; যাতনা বিরহ ছিল কি?
সেদিন ছিলাম না আমি সেটাই সত্য।

এত যুগ পরে, সে কথা কেন?
হটাৎ অভিমানের সুর
কত বার ঝরেছে করম্‌চা গাছের পাতা? সজনে পাতা,
তাতে কি? উঠানে দাঁড়িয়ে সেই তোমার দেখা!
বিবর্তনের ইতিহাস টেনে; তোমার মেয়েটার আঙ্গুল
টেনে চেনালে! পৃথিবী বেঁচে থাকার জন্য!

প্রেম বিরহে পুড়ে, সময় পুড়ে না
সেদিন ছিলাম না আমি, সেটাই সত্য।

১৪২৬/আশ্বিন/ শরৎকাল/
বিষয়শ্রেণী: প্রেমের কবিতা/ রূপক কবিতা

মৃত্যু অভিশাপ

——মৃত্যু অভিশাপ

জীবন আর স্বপ্ন চরাচরে, মৃত্যু অভিশাপ
কি অপরিসীম ক্ষমতা তার? প্রাণেই যে তার সহ-বসবাস
মৃত্যু অভিশাপ।

স্বপ্ন বৈভব আশা নিরাশা যত সব!
অতীত গুহায় হারিয়ে যায় নিমেষেই
মৃত্যু ক্ষণ, বড়ই বেমানান! মুহূর্তেই সব অতীত হয়ে যায়
স্বপ্ন বাসনা যত খন্ডাংশের জালে গাঁথে
মৃত্যু অভিশাপ।
তাকে ফিরাইবে কে? এমন সাধ্য কার?
প্রাণে প্রাণ সংহার! যে করেছে সৃষ্টি মহান তারই কারুকাজ
এমনি শতকোটি অতীত দাঁড়িয়ে সমুখে
তারেই রেখেছে গেঁথে রঙ্গিন সুতোয়! জল টলমল ঘ্রাণে
মৃত্যু অভিশাপ।

ক্ষণ বদলেই ফিরে না সে;
হারিয়ে যায় তারই প্রকৃতি ছেড়ে, মায়া মমতা সব অভিমানে
কি যাতনায় ভুলে সে এমন কোলাহলে?
পৃথিবীর এদিক ওদিক উপর নিচ খুঁজিও না মিলে
মৃত্যু অভিশাপ।

১৪২৬/ ভাদ্র/ শরতকাল/ জীবনমুখী কবিতা, রূপক কবিতা/

কালে কালে মানুষ সর্বহারা

——-কালে কালে মানুষ সর্বহারা

অফিস, বাসা, বেড়াবার সময় কই?
অফিস তো ছুঁয়ে থাকে পিচ ঢালা পথে, হরিহর ফুটপাত
আম জনতার পদভার, পদ শব্দে মুখরিত।
পথের পাঁচিলে সবুজ পাতা, ফুল
কড়ই গাছের পাতার ফাঁকে নীলাকাশ,সাদা মেঘ উড়ে যায়।
কতক সময় পিচ ঢালা পথ
টেম্পু, বাস, ধরাধরি ঠেলাঠেলি
ঘামের চিটচিটে গন্ধ মেখে অফিসে ঢুকা।

কপি পেষ্ট ইমেইলে চোখাচখি
ভিজিটরের জন্য লেটার, হোটেল বুকিং
কবে নামবে তিনি, বস জিগায় মুডে?
ভিজিটরের ভিজিটের প্লান সিট রেডি তো?
ব্যাংকের রিপটের কপি চাই এক্ষনি;
সারা দিন অফিসে কাজের কিছু তো হয় না?
চায়ের টেবিলে না না গুঞ্জন ভাসে কেন?
সিডিউল সারা! ফোনে কথা হবে, আছে বেশ তাড়া
প্রজেক্টের মিটিং সেক্রেটারি দিশে হারা।
মতান্তরে, বেশ চাপাচাপি কাজে যেন না শুনি
নানা অজুহাতে ফাঁকি; ঝেড়ে কেশে বলে উঠে মতিন
বস এবার বেতন একটু বাড়ান, আর যে চলে না
ছেলে মেয়েদের স্কুল, টিউশন ফি,বাসা ভাড়া!

শহরে চাকুরি জীবি, সবাই জানে শহরে থাকা
বিলাস বহল জীবন, আরাম আয়েশে কাটে সারা জীবন!
কেউ কেউ একটি প্রতিষ্ঠানে দশ,পনের বছর যাবত কর্মরত
আবার সারা জীবন কাটিয়ে যায়;
অথচ নেই কোন প্রভিডেন্ড ফান্‌ড! নেই বাসা ভারা!
নেই চিকিৎসা ভাতা!
মোক্তা একটা টাকা ধরে চলে, বছরের পর বছর।

অথচ উত্তর আধুনিক কালে, আধুনিক নগরের বাসিন্দা
পুঁজি অধিকার সব যায় রসাতলে, কালে কালে মানুষ সর্বহারা।
তাপিত দূর্ভোগে সর্বদা দিশে হারা।

১৪২৬/শরতকাল/ভাদ্রমাস।
বিষয়শ্রেণী: জীবনমুখী কবিতা, রূপক কবিতা

এখন কবিতারা, আর্শ্বিনের আউশ ক্ষেতে

——এখন কবিতারা, আর্শ্বিনের আউশ ক্ষেতে

এখন কবিতারা, আর্শ্বিনের আউশ ক্ষেতে
বানের জল ডুবা, আউশ ধানের ডগায় ডাহুক-ডাহুকী
হাঁটু জলে হেঁটে বেড়ায়;
কানি বক ঝিম ধরে বসে আছে শাপলা পাতায়।

আধা পাকা ধানের শীষে,
লাল ফড়িং ডানা মেলে বসে; ধানের পাতার ভাঁজে
মাকড়ষার শুভ্র বাসা ডিম পাহারায়
জাল বিছিয়ে বসে থাকে!
এখন কবিতারা, আর্শ্বিনের আউশ ক্ষেতে
ঘাস ফড়িং এর ঝাঁক
আউশ ক্ষেতের আইলে, আগাছার ঝাড়ে;
জল ডুবা ক্ষেতে নেংটি ইঁদুরের দল
পাকা ধানের শীষ দেখে দেখে রাখে!
এখন কবিতারা, আর্শ্বিনের আউশ ক্ষেতে

কাশ বনে কাশফুল বাতাস উড়ায়
আউশ ক্ষেতের গায়ে যেন শুভ্রতা মাখে; মেঘের ভেলা
আকাশে ঐ নীলের পরশ আঁকে
হাঁসের দল দিশেহারা ডেকে ডেকে সারা সাঁঝ বেলা!
এখন কবিতারা, আর্শ্বিনের আউশ ক্ষেতে

১৪২৬/ভাদ্র/ শরতকাল/বিষয়শ্রেণী: প্রকৃতির, রূপক কবিতা

কবি কুহক, না ফেরার দেশে! আমাদের ব্লগার স্বজন!

কবি কুহক, সেই সময়ের সাথী, যে সময় ব্লগের শৈশব ছেড়ে যৌবনে পা দিয়েছে, প্রচুর লেখা লেখি প্রচুর গালাগালি, বলা যায় ব্লগ যৌবন, বলে কথা, প্রত্যহ তীর ভাঙা ঢেউয়ে জলের সল্লাৎ সল্লাৎ আমেজ কবি, লেখক, হ্ওযার সে কি শুভ্র বাসনায় ছুটে চলা !

গত প্রত্যকটি বই মেলায় কাঁদে ব্যাগ গোলায় দুই তিনটা ক্যামেরা, ঝুলিয়ে লিটিলম্যাগ চত্বরে ঘুরে বেড়াতেন আর ছবি তুলতেন। দুই বছর আগে এক বই মেলায় লিটিল ম্যাগ চত্বরে কবির সাথে দেখা, বললাম গুরু কেমন আছেন? এই তো যাচ্ছে চারু ভাই! কবি কইল, চারু ভাই এই দিকে আসুন একটা ছুবি নেই, তখন বাংলা একাডিমির চত্তরের দক্ষিনের সিড়িতে বসলাম আর উনি আঁকা বাঁকা হয়ে কয়েক টা ক্লিক মারলেন, আর বললেন চারু ভাই ইন বক্স এ দিয়ে দিমুনি। দেইখেইন কেমন হইছে।

এ ছাড়া অনুপ্রাণন পত্রিকায় কবিতা ছাপলেন,

সে ব্যপারে কয়েক বার কথা বলেছি, বসে আড্ডা হইছে, উনি অফিসে কফি বানিয়ে খেতেন, বললাম না গুরু আমি কফি খাই না, আরে আমি বানামু,

আরেক দিন কবিতা নিয়ে আলাপ, আমি বললাম গুরু ইদানিং আমি তুমি থেকে বেড়িয়ে এসে কবিতা লিখছি, একটু পর বললেন বেশ তো প্রকৃতি ছাড়া কি লেখা যাবে? আমি তুমির ঘ্যানোর আর ভালো লাগে না; বললেন তাই তো, হতে পারে। এই ছিল, যত সামান্য জানা, আমার প্রাণের একজন প্রিয়, গুরু কবি কুহক। না ফেরার দেশে উনার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। আল্লাহ উনার সহায় হউন। আমিন।

রাতভর ভোতা অনুভূতির ঘোর

——–রাতভর ভোতা অনুভূতির ঘোর

রাতভর ভোতা অনুভূতির ঘোর, ঘুমের তন্দ্রায়
বিছানার কোনে লেজ গুটিয়ে কুকুরের মতো
আয়েশি ঘুমে মগন;
একই শব্দ শুনে শুনে কান তন্দ্রায় ডুবে যায়
পুরনো ফ্যানের পাখার বিদ্রূপ করা আওয়াজ!

ঘর জুড়ে খেলা করছিল অজস্র আঁধার
বেলুয়াড়ী খিড়কির ফাঁক দিয়ে যত সামান্য জোছনা
ছিঁটে ফোটা ঝলক; বিছানার কোনে যায়নি মোটে
তবুও আঁধার ঘোর লাগা ঘরটা একটু আয়েশে চুমকে উঠে
জোছনার প্রতিবিম্ব সিম্পনি তন্দ্রায় স্বপ্ন বুনে
আয়েশি যুগোল কৈশোরের; দেখে দেখে দুরন্তপনা প্রেম
অতলান্তিকের ভীত নড়ে উঠে, চমকে উঠে
ঘোর লাগা ঘরের আপদ মস্তক! যেন সুনামি বয়ে যায়।

ঘোর লাগা ঘরটা আবার আঁধারে ঢেকে যায়
ফ্যানের একই শব্দ; টিকটিকির ছুটাছুটি
সিঁথান দিয়ে ছুটে পালায় নেংটি ইঁদুর; আঁধার ঘর
ঘোর কাটে না! রাত গভীর হতে গভীর তর
জোছনা ডুবে সারা; তবুও জেগে ছিল যাতনা সুখের ছোঁয়াটুকু
সাথে আমার আয়েশি ঘুমে মগন।

বিষয়শ্রেণী: জীবনমুখী/ রূপক কবিতা/১৪২৬/শ্রাবণ/ বর্ষাকাল।