চারু মান্নান এর সকল পোস্ট

বির্মষ পৃথিবীর কালান্তর

-বির্মষ পৃথিবীর কালান্তর

বির্মষ পৃথিবীর কালান্তরে
তাকে হারিয়ে ফেলেছি; যুগে যুগে তারে খুঁজে ফিরি
নীল সবুজের চাঁদোয়া ঢাকা আকাশ পাড়ে
কালের মরুঘন তেপান্তরে
কত কত সভ্যতার শুন্যতার ঘোরে?
খুঁজে ফিরি আজও!

ক্ষয়ে যাওয়া পৃথিবীর বিস্বাদ মৃক্তিকা জুড়ে
দ্রাব্য দ্রবণের কোনার স্তরে স্তরে
এ কোন কালের সৌরম্য আভিজাত্য যায় ভেসে?

হারিয়ে ফেলা লাবণ্য অনামিশায় জ্বলে
কতক নক্ষত্র যেন; স্বস্তির আকর বলয়ে জেগে রয়
মোহ মায়ার লাবণ্য ছকের আদল
সাঁঝ লালিমায় ঝরা বৃষ্টির মুর্চ্ছণায়
খুঁজে ফিরি তারে!

১৪২৫/ আষাঢ়/বর্ষাকাল

সদ্য তলানীতে বুদ্ধির বিন্দু

-সদ্য তলানীতে বুদ্ধির বিন্দু

সদ্য তলানীতে বুদ্ধির বিন্দু
তাইতেই দেরাজ গলা; সদর দরজা আগল আঁটা
সদলবলে বুদ্ধি সাঁটা।
এতটুকুতেই দেমাগ ভারি
পা যেন পরে না মাটির ধুলোয়; কবিতা সে তো অবোধ ভারি!
অহঙ্কারে যে পথ হারালি।

সিন্ধুর জলে বিন্দুর ফোটায়
বুদ্ধি আহরণে বিন্দুর মাপন! তাতেই পৃথিবী চনমনে জ্বলজ্বলে
অসীমের সেই সসীমে অট্টহাসি হাঁসে।

এ কি র্নিবোধ? তুচ্ছ মিহি দানা বুদ্ধিসম
তুবও নিঃশেষ হয় না কখনও? জীবনভর ছুঁয়ে থাকে জীবনে
বিন্দু বিন্দু বুদ্ধির তিমিরে মনষ্য প্রাণ।

১৪২৫/আষাঢ়/বর্ষাকাল।

স্মৃতিকলা

স্মৃতিকলা

অনেক দিনতো গেল
দিনভর, চলে গেল; যেতে যেতে অতীত বুনে যায়
পিছনের ফিরে দেখার বাসনা!

পুরানো ঘরটায়,
মৃদু টকা দেয় কে যেন; আচমকা বোধ হয়
খিরকি খুলে যায়
গচ্ছিত স্মৃতিকলা বলে কথা
সেই স্মৃতিকলায় কত কত শাখা প্রশাখা?
যাতনা কলা, সুখ কলা, বিভ্রম কলা,
কৈশর যৌবণ কলা!
ঘরটায় ঠাসা এত এত সব কলাতন্ত্রে এ
মজ্জাগত সূতীকাগার বলা চলে।

স্মৃতিকলা আমাদের জীবন বৈভব
আত্মার ক্ষণস্থায়ী শরীর যেন।
===

ঝমঝমাঝম বৃষ্টি এলো আষাঢ়ে

-ঝমঝমাঝম বৃষ্টি এলো আষাঢ়ে

ঝমঝমাঝম বৃষ্টি এলো আষাঢ়ে
ভুতু সোনা ভিজবে বলে, ইটিশ পিটিশ করে সে
ব্যাঙের ছাতা ভিজে সারা
মেঘ গুর গুর ডাকে রে !

মেঠো পথে বেজায় কাদা
গরুর গাড়ী ফেঁসেছে প্যাকে, পুঁটির গায়ে রাঙা শাড়ী
ভেসে বেড়ায় আষাঢ় ঢলে
চাল কুমড়া চুন মেখে, উনুন চালে হাসেরে !

১৪২৫/ আষাঢ়/বর্ষাকাল।

-তারে চাহিতে

-তারে চাহিতে

তারে চাহিতে, জনম গেল ঘোর মাঝে
তারে চাহিতে, চক্ষুষ্মান দিশায় যাতনা মিলিয়ে যায়
শত দহনেও জলের ছিটায় যেন স্বস্থি বিলায়
তারই প্রহরায় ছায়া যেন পথের আঙ্গিনায় বিছায়।

কি অবিরাম স্বস্থি! প্রকৃতি খেলায়
স্বচ্ছ হাওয়া দলে দলে খিল খিলিয়ে যায়
মন ভরা যাতনা লয়ে এ কি আশ্বাস বিলায়?
তারে চাহিতে উন্মুখ দেহ মন পথ চেয়ে রয়।

যেমন পথ চলে বায়ু ভূতলের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এদিক ওদিক
এঁকে বেঁকে ছুটাছুটি করে করে; কি চাই তার?
এমনি কালে কালে সদল বলে!
তারে চাহিতে চাহিতে বেলা ঢলে পরে।

জল ভরা মেঘ

জল ভরা মেঘ

জল ভরা মেঘ
বাতাসে টইটুম্বর
জলের ঘ্রাণ।

সেই ঘ্রাণ আঁকাশ নিয়ে
তুলির আঁচড়ে এদিক ওদিক কোণা কোণি
এলো মেলো এলোকেশ; এক সময় বিরক্ত স্বরে উচ্ছ্বনে যায়,
ছুঁড়ে দেয় দিগন্তের পাড়ে।

কোন কথা নেই? শুধু বোবা কথন!
হাওয়ার অন্দর মহলে নিত্য সুধা রসে
গীত গায় প্রহলিকা, পৌন পৌনিক চন্দ্রবতীর কবিতারা
রাতের জোছনায় নৈতিকতা ফিরে না
যত সব অযাচিত শীৎকার, অভিনয়;
ধোঁয়াশায় আলো ঢাকে নিত্য।

সবুজ জমিনে
কোলাহলে মাতম
সুলোলিত তীরুন্দাজ!

আগুপিছু ভাবে না সচল কালের আঁধার
বাষ্পের মতো বুদ বুদ কোলাহল কালের ক্ষেপ
পারে না সদল বলে রাখিতে;
বিষাদে আঁকা
মেঘের কৃঞ্চকালো দ্রোহ
ক্ষণকালের দর্পে পুড়ে!

১৪২৫/ বৈশাখ/ গ্রীষ্মকাল।

ভাবনা বিতান

-ভাবনা বিতান

জাত ভেদে যে কত রঙ্গ?
নিত্য পোড়া যাপিত কাল। যাপিত কাল তুচ্ছু অতি
তারেই কেমনে আপন ভাবি? জীবন দশায় একি নেশা?
তার তরেই যে যত ভাবনা! অন্তের তরে নাই যে দিশা; ওরে পথিক
সে যে বড়ই কঠিন কাল, অসীম সসীমে দেখাই ভার
জনম জনম বয়ে যায় কাল হা’হুতাশে
সসীমের তরে ও’রে পথিক!

নক্ষত্র লোকে এ কোন ভাবনা বিতান?
শুন্য মহলে শুধু শুধু প্রদ্বীপ জ্বলে।

১৪২৫/ বৈশাখ/গ্রীষ্মকাল।

খোয়াব নামা

-খোয়াব নামা

পথিক বেলা, দিন ফুরালে
রাতের সুধার টান। কেমন করে যায় যে দিনে রাতের?
অভিমানের পালা। খড়গ তলে জীবন, ক্ষণ কালে নিত্য জাগে
এমনি করে পথিক জীবন উজান ভাটির রসানলে; বেআব্রুর কলঙ্ক
ভেদে, রসের তৃঞ্চায় নিত‌্য ডুবে। পথের ধুলায় বিষন্নতা
আঁধার ধুঁয়ায় জেঁকে বসে, খোয়াব নামার স্বপ্ন উড়ে
পথিক ভাবে মিছে একা।

তাইতে পথিক
নিঃস্ব একা পথের দিশা
বে’ভুলা এ কােন রঙ্গ?

মায়ার আলো

-মায়ার আলো

জীবন থাকলেই বোধের মাপন
না রইলে প্রাণ পাটকাঠি, সেথায় যে যোজন যোজন পরিতাক্ত
মৃক্তিকা চুঁষে করে গ্রহন, অমানিশার মায়ার আলো কোথায় যে পালিয়ে ঘুরে?
প্রাণ শুধালেই সেই আলোটা বোধের সলতেতে জ্বালে বাতি। মায়ার আলো কেমন বটে?
কিসে সে ধরে বাঁচে? মায়া নামক বেজায় টান; আকাশ দ্যাখে মুখ ঢাকে
সেই মায়াটা বাঁচতে শেখায় বোধের সুতায় নাই বা ঝুলে!
এলো মেলো জড় জীবের মৃত্যু রসের রসানলে
সোদা মাটির মায়ার ঘ্রাণ।

বোধের মাপন কিসের তরে?
জীবন সে তো ক্ষণকালের; সেই কালটা ধরতে বুঝি
জড় জীবন ফিরে এলো।

১৪২৫/ বৈশাখ/গ্রীষ্মকাল।

বিশ্বভরা মমতার মেলা

বিশ্বভরা মমতার মেলা

শরীরে কোথাও কোন আঘাত পেলে?
চলতে পথে হোঁচোট খেলে;
গোলাক ধাঁধায় পরে গেলে;
ওমনি ঠোঁটে বেড়িয়ে আসে, উঃ মাগো!
কেন এমন হয় বলতে পারো কি কেউ?
নাড়ি পোঁতা ধন যে মায়ের তাইতে এমন হয়।

তাই যদি না হয়!
কেমনে বুঝে মায়ের মন? সন্তান কষ্ট পায়
সেই কষ্টে মা যে মোর না না চিন্তায় ভূগে
দুহাত তুলে খোদার কাছে মঙ্গল দো’য়া মাগে।
আদি অন্ত বিশ্বজোড়া
তার বিহীন দরদ খেলা
মায়ার টান মমতাময়ির
বিশ্বভরা মমতার মেলা।

১৪২৫/ বৈশাখ/গ্রীষ্মকাল।

তার বেদনা ভুলিতে

-তার বেদনা ভুলিতে

তার বেদনা ভুলিতে
অন্তর গহন, ধুলোর গরাগরিতে নিত্য ডুবে। যায় বেলা।
গহন দহনে মরীচিকা সম আচম্বিতে বেহাল দশার ক্ষণ। চেতনার কাঁপনে কাঁপনে
শুধা রসের এ কি বিরহ? যাতনা সহে প্রাণ।
প্রেম রসে স্বপ্ন গহন সমুদ্র জলের ফেনায় বিন্দু বিন্দু
কজাগরী চাওয়া; আমলকি বনে রাতের সিঁথানে
চুপি চুপি জোনাকি সাজে নিত্য পাহারায়।

তবে কিসে তারে?
রাখিনু প্রাণে প্রাণে
অযাচিত বেদনার ভার!

১৪২৫/বৈশাখ/গ্রীস্মকাল।

চলে যেতে যেতে

-চলে যেতে যেতে

চলে যেতে যেতে
পথে থমকে দাঁড়ালে তুমি
পিছন ফিরে তাকালে কতক বার?
সময় ধেয়ে বাতাস কানে কানে
কাগজ পোড়া গন্ধ যেন;
অতীত ভাঁজের পরতে পরতে
মাঝে মাঝে উঁইপোকার কুরে কুরে খাওয়ার
মৃত্তিকা ঘ্রাণে জানান দেয় তোমাকে;

সে দিন নিঃস্ব হয়ে কেঁদে ছিল
উঠানে পাতা ঝরা সজনে গাছটা
পুঁইমাচা, ডালিম গাছে টোনাটুনি
কুয়াতলায় আতা গাছ
সাদা লাউ ফুলে লাল ডানার ফড়িং
কেঁদে ছিল আরও কতক
ঘরের টুঁইয়ে বসে থাকা চড়ুই
ফিরে তাকাতেই
বদলে গেল সব,,,,

-জমানো অভিমান

জমানো অভিমান। কখন যে রুপ নিয়েছে বিগ্র দ্রোহ। সব করবে তচ্ছনচ্ছ। যেন প্রকৃতির ঝড়। বাতাস বিদ্রহ। সব ভাঙ্গবে এখন। গুড়িয়ে দিবে সব। যত্ন করে সাজানো ছিল যা। মায়ার টান। মায়ার আদরে জোড়ানো মমতা। ভালোবাসা প্রেম সুবেদী কালে জড়ানো। কতক ছিল অতিব গোপন। তার জন্য শুধু তারই,,,

জোছনা বিলাপে রাতভর জেগে রয়

জোছনা বিলাপে রাতভর জেগে রয়

সন্ধ্যাবতী আমার; নিত্য পুড়ে
বোশেখের প্রখর রোদে!
বিরামহীন ধুলোমাখা গায়ে
মেঘের ছায়ার প্রলেপ মাখে
মেঘ ফুরালেই আবার পোড়ায়
দক্ষিণা বায়ে গাও টা জুড়ায়;

বেলা বাড়ে; উদাস উদাস
আকাশ মোহ সন্ধ্যাবতীর প্রেমে পরে!
ঢলে পরা সাঁঝে মায়ার আকুলতা
ডাক দিয়ে যায় ঐ দূরের দিগন্ত
আকাশ প্রেমে ছুঁয়ে যায় সাঁঝ লালীমা
ডাহুক ডাহুকীর নল খাগড়ার বনে;

হারিয়েছি তারে; সন্ধ্যাবতীর পথে
এমনি বোশেখের আঁধার ঘন সাঁঝে!
সাঁঝ ঘনালে অমীয় ঘন আঁধার নামে
বিরহী একাকী সন্ধ্যাবতী তাহারই মতো
জোছনা বিলাপে রাতভর জেগে রয়;

১৪২৫/ বৈশাখ/গ্রীষ্মকাল।

যাব যাব করে থেমে যাই পথে

যাব যাব করে থেমে যাই পথে

যাব যাব করে থেমে যাই পথে।
অনাথ ধুলোর মতো।
তুমি যাবে বলে এই পথে হেঁটে। তাই চেয়ে রই পিছে।
পথের ধুলোয়।
তোমার পায়ের ছাপ আঁকে ষ্পর্শে।
অনাথ ধুলোর আহত বিলাপ। চুপিসারে আমায় ডেকে কয়।

চঞ্চল হাওয়া বয়ে যায় মৃদুলয়।
কদাচিত বীণা ঝঙ্কারে মন।
আহল্লাদে মনে মনে গীত ঠোঁটে। পুনঃ পুনঃ ঘ্রাণে মন জাগে।
সেই তো পথে যাওয়া ধীর লয়।
আক্ষরিক বীণা ঝঙ্কারে ধুলোর।
তুমি নেই এখন খানিকটা পথে ছিলে। তাই তো পথ পথ ভোলায়।

১৪২৫/ বৈশাখ/গ্রীষ্মকাল।

-সেই মাপন টা

-সেই মাপন টা

নিত্য নতুন মাপন গুনে
মাপা যায় কত কি!
চাওয়াটা বা কিসে মাপে?
রাত্রি দিন হিসেব কসে।

কালের খাতায় হিসাব জমে
নন্দন পুরাণ। কালের কাল।
সে তো গেল আদি অন্ত।
নতুন করে কি আকাশ রং ছড়ায়?
না কি একই পটে নিত্য নতুন?
ভবের তরে সঙ সাজা।
সেই সঙ রঙ্গ জোড়া।
মাতাল করা রুপে হরা।
জীবন বলে যৌবন তুই।
এমনি করে হাসা কাঁদা।

হারিয়ে গেল সেই মাপন টা
পায়ে হেঁটে পথিক পথ।
সেই তো ছিল ভালো। সোনাতন মর্ম।
খুঁজিতে তারে অপূর্ণ জীবনভর।