ইকরামুল শামীম এর সকল পোস্ট

ইকরামুল শামীম সম্পর্কে

ইকরামুল হক ( শামীম ) পেশা : সমাজকর্মী, লেখক ও আইনজীবী । জন্মস্থানঃ ফেনী বর্তমানঃ ঢাকা, বাংলাদেশ স্ট্যাডি ব্যাকগ্রাউন্ডঃ ১.মাস্টার্স ইন ভিক্টিমলজি & রেস্টোরেটিভ জাস্টিস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ২. মাস্টার্স ইন পলিটিক্যাল সাইন্স। ৩. ব্যাচেলর ডিগ্রী অব সোশ্যাল সাইন্স। ৪. ব্যাচেলর অব 'ল'। কর্মঃ ১. ফাউন্ডার, বাংলাদেশ রেস্টোরেটিভ জাস্টিস সোসাইটি. ২. জুনিয়র ল'ইয়ার, জেলা জজ কোর্ট। ৩. এক্স এ্যাস্ট. কো-অর্ডিনেটর, বিশ্ব সন্ত্রাস ও জঙ্গী বিরোধী সংস্থা, বাংলাদেশ। ৪. এক্স- ট্রেইনার(HIV & DOWRY), টালফ অর্গানাইজশন, বিডি। বর্তমানে তিনি " ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তা এবং অপরাধীদের সংশোধন" নিয়ে কাজ করছেন। রাজনীতিঃ দেশপ্রেম। প্রিয় লেখকঃ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, নির্মলেন্দু গুন। সখঃ ভ্রমণ করা, কবিতা পড়া এবং দাবা খেলা।

উড়ন্ত চিঠিতে শেষ জিজ্ঞাসা

প্রিয় মায়া
ঘ্রাণহীন কাগজের ফুলের মত নিশ্চয়ই ভালো আছো। তবে তুমি যেন সতেজ হও আর্শীবাদ রইলো। তোমার সাথে দেখা কিংবা কথা বলার আর কোনো সুযোগ হবে না তাই আমার মনের কিছু কথা রেখে গেলাম, যদি কখনো তোমার চোখে পড়ে সেই আশায়।

কতোটা অমানুষ হলে সব মানুষই দূরে সরে যায়?
কতোটা নিষ্ঠুর হলে ঝড়-তুফান বা মহামারীতে কেমন আছি কেউ খোঁজ রাখে না?
কতোটা দোষী হলে গর্ভধারিনী মুখ ফিরিয়ে নেয়?

কত? কত?

এতোটাই পাপ করেছি যে আজ আমি নিঃস্ব। আমি হিসেব মিলিয়েছি কতোটা আমি মূল্যহীন!
আমি স্বর্বস্ব হারিয়েছি, উঠে দাঁড়াবার মত শক্তি নেই।
এই পঙ্গুত্ব জীবন নিয়ে পৃথিবীর রঙ-তামাশা দেখার চেয়ে পৃথিবীকে বিদায় জানাবো বলে আজ আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছি।

তুমি আমার আক্রোশ দেখেছো কিন্তু আক্রোশের কেন সৃষ্টি বুঝারো চেষ্ঠা করোনি। আমি চলে যাওয়ার পর হিসেব কষে নিও।

তবে সত্যি আমি তোমাকে ভালবাসি, যথেষ্ঠ ভালবাসি। কিন্তু ভালবাসার মানুষকে যে মুখে অপমান আর আঘাত করেছি সে ভালবাসার কোনো মূল্য নেই। নিজের পালিত কুকুরটি যখন উন্মাদ হয় তখন তাকে মেরে ফেলতে হয়। আর তুমিও সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছো।

যাবার বেলায় কয়েকটা বেশ উপাধি নিলাম-
মিথ্যুক, মিথ্যাবাদী, ক্রিমিনাল, প্রতারক, বোক…..!

আমি আমার দোষে নিজেকে দন্ডিত করলাম। আর তার শাস্তি ফাঁসির দড়িতে মৃত্যু নিশ্চিত করা।

ভালো থেকো প্রিয় মায়া, ভালো থেকো প্রিয়তমা। অমবস্যা যেন তোমায় না ছুঁয় সে প্রত্যাশায়…

ইতি
তোমার কোনো একসময়ের
অবলা অবুঝ বালক

এক খন্ড স্মৃতি দিলাম

শুরুটাও হয়েছে বেশ
তোমার বিষাদের মাঝে কেমন করে যেন আমি পেয়েছি একটু ঠাঁই।
তারপর-
তোমায় নিয়ে ইচ্ছের জন্ম হলো
একশ একটা দেশ ঘুরে মানবতার কথা বলা।
কিন্তু কতদিনই বা তুমি কিংবা আমি…!!

তাই তোমার কপালে টিপ করে এক খন্ড স্মৃতি দিয়ে দিলাম।
সেই টিপ মাঝে মাঝে লাগিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দু’ফোটা অশ্রুজল, এর চেয়ে বেশি কিছু চাই না
কিন্তু তুমি অপারগ পাচে তোমার অহেতুক গঞ্জনা।
তবুও দিও তোমার আনমনা কিছুটা সময়।

এতোটুকুই আমার শান্তি কি সুখ চেয়ে নিলাম তোমার বুকের খাঁজের উঞ্চতা থেকে।
সেই প্রতিক্ষায় রইলাম অনন্তকাল, মহাকাল।
তুমি পরশ দিবে, তুমি মমতা দিবে, তুমি সঙ দিবে যুগ থেকে যুগান্তর
প্রয়োজন – অপ্রয়োজনে তুমি থাকবে চিরকাল।

মধ্যবিত্তের ভালবাসা ভালো থাকুক

ক্লান্ত শরীরে যখন বাসায় ফিরতাম
তুমি এসে ব্যাগটা নিয়ে আচল দিয়ে ঘাম মুছে
পাখার নিচে বসিয়ে এক গ্লাস জল দিয়ে বলতে
ওগো! ফ্রেশ হয়ে নাও, তোমার জন্য আজ
টাকি মাছের ভর্তা আর মলা মাছের ঝোল করেছি।
খাবার শেষে দখিনের বারান্দায় গোপনে
পাতা বিড়ির ধোঁয়া ছাড়তাম
তুমি খানিকটা রাগতে, বদ অভ্যাস ছাড়বে না!
সিগেরেট না ফুঁকলে নিজেকে পুরুষ মনে হয় না
বলে ললিতাকে টেনে পাশে বসাতাম
তারপর অনেক অনুরোধ করে, কান ধরে বলতাম
আজকের পর আর না।
কিছুক্ষণ গল্প আর ললিতার মিষ্টি কন্ঠে
রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনে দুজন বিছানায় যেতাম।
ফের ভোরে ললিতার ঘুমন্ত ললাটে
আলতো করে ছোট্ট চুমো এঁকে আমি বের হতাম।

এখন আমাকে ভাবায়,
অফিসের চাহিদা মেটাতে যখন খুব ব্যস্ততায় নিজেকে বলি করি
তখন ললিতা কি করে সময় কাটায়?
ঘরে টিভি তো দুরের কথা খবরের কাগজ নিতে পারতাম না
শুধু ললিতাকে বাটন মোবাইল দিয়েছিলাম
সংসার চালাতে এতোটাই হিমশিম যে সাধ্য ছিল না।
ডাক্তারবাবু বলেছিল ললিতা কখনও মা হতে পারবে না
তাতে একটু কষ্ট বা বিচলিত হয়নি।

সেইদিন হঠাৎ বুকের ভিতর মুছড়ে উঠলো!
ললিতাকে একের পর এক কল দিয়েই চললাম
কেউ হ্যালো বলেনি।
কর্তাবাবুকে বললাম আমাকে ছুটি দিতে হবে
কর্তাবাবু ভ্রু কুঁচকে জানতে চাইলো কেন?
বলতে পারিনি যে ললিতা ফোন ধরছে না
বাসায় যেতে হবে।
ডেস্কে বসে ফোন করেই যাচ্ছি। ইচ্ছে হচ্ছিল
উড়াল দিয়ে যাই, ললিতা আজ এমন করছে কেন?
এতোক্ষণে অন্তত দশের অধিক কথা হতো
কিন্তু আজ!
পর-পুরুষের সাথে! ছিঃ ছিঃ এইসব কি ভাবছি!
ঘড়ির কাটা ছয়ের ঘরে যেতেই আমি বের হয়ে গেলাম
মাস শেষ তাই পকেটে সীমিত পয়সা বলে লোকাল বাসে।

প্রায় অজ্ঞাণের মত বিছানায় পড়ে আছে
ললিতার শরীর এতোটাই গরম যে ধরা যাচ্ছে না,
কি করবো বুঝতে পারছি না!
ললিতার মাটির ব্যাংক ভেঙ্গে হাজার তিনেক টাকা পেলাম।
সরকারী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কি সব পরিক্ষা করে ললিতাকে নিয়ে গেল নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে।
যে মেয়ে তেলাপোকা দেখলে ভয় পেতো তাকে কতগুল যন্ত্র আর নল দিয়ে রেখেছে!
ডাক্তার বাবু জানালো তার ফুসফুস নষ্ট হয়ে গিয়েছে।

ভোর সাতটা, নার্স ডেকে বললো ধ্রুবো কে?
আমি দৌঁড়ে গিয়ে বললাম আমি!
ধ্রুবো বাবু! দুঃখিত যে ললিতা আর বেঁচে নেই…

ভালো নেই

ভালো নেই
ভালো থাকার ইচ্ছেটাও সাত-সমুদ্র দূর
রাগটাও এখন আর হয় না, যেন শীত ভোরের শীতল জল
অনুরাগের কণাগুলো বেসমালভাবে লাঞ্ছিত
কারো জন্য উচাটন নয় শুধু হাজার প্রশ্নের তুফান
সহানুভূতির মৃদু পরশে উত্তরটা চাই
টিপটিপ জোনাকির আলোয় আর জ্বোৎস্না ভেজা রাতে,

তুমি আজ ঝিঁঝিঁ পোকা
নিস্তব্দ রজনীতে তারা গুনি অসহ্য যন্ত্রণায়
প্রতিশ্রুতির হিসেব কষি ভাগফল বরাবর শূণ্য
অরক্ষিত টান পথে প্রান্তরে
নিতান্ত ভালবাসার নিশ্চুপ হাহাকারে,

মিষ্টি হাসি ঠোঁটে লেপ্টে বলেই কি ভালো আছি!
সেই নর্তকী সমুদ্র, কিচিরমিচির পাখিদের অরণ্য, নাম না জানা সুগন্ধ মিশ্রিত বাতাস
সব ঠিকই আছে শুধু আমি শুনতে পাই কর্কশ সুর, নিষ্ঠুর ভয়াল অমবস্যার গান,
দেখতে পাই প্রতিটি মানুষের কপালে স্বার্থের টীকা
কষ্টের তীব্র তাপদহে চৌচির স্বপ্নের সাজানো বাগান
ভালবাসি” শুনলে আঁতকে উঠি কে যেন বিষাক্ত তীর ছুঁড়েছে কর্ণকুহুরে
ইচ্ছে, স্বপ্ন, ভালবাসা অহেতুক চাহিদার তামাশা
বেদড়ক শ্বাস জিয়ে আছে বলেই হয়তো বলি ভালো আছি।

এক মুঠো সুখ পাবো বলেই হয়তো ভবঘুরে
তাই
আমি আমাকে বিলিয় দিলাম আমরণ।