ইকরামুল শামীম এর সকল পোস্ট

ইকরামুল শামীম সম্পর্কে

ইকরামুল হক ( শামীম ) পেশা : সমাজকর্মী, লেখক ও আইনজীবী । জন্মস্থানঃ ফেনী বর্তমানঃ ঢাকা, বাংলাদেশ স্ট্যাডি ব্যাকগ্রাউন্ডঃ ১.মাস্টার্স ইন ভিক্টিমলজি & রেস্টোরেটিভ জাস্টিস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ২. মাস্টার্স ইন পলিটিক্যাল সাইন্স। ৩. ব্যাচেলর ডিগ্রী অব সোশ্যাল সাইন্স। ৪. ব্যাচেলর অব 'ল'। কর্মঃ ১. ফাউন্ডার, বাংলাদেশ রেস্টোরেটিভ জাস্টিস সোসাইটি. ২. জুনিয়র ল'ইয়ার, জেলা জজ কোর্ট। ৩. এক্স এ্যাস্ট. কো-অর্ডিনেটর, বিশ্ব সন্ত্রাস ও জঙ্গী বিরোধী সংস্থা, বাংলাদেশ। ৪. এক্স- ট্রেইনার(HIV & DOWRY), টালফ অর্গানাইজশন, বিডি। বর্তমানে তিনি " ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তা এবং অপরাধীদের সংশোধন" নিয়ে কাজ করছেন। রাজনীতিঃ দেশপ্রেম। প্রিয় লেখকঃ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, নির্মলেন্দু গুন। সখঃ ভ্রমণ করা, কবিতা পড়া এবং দাবা খেলা।

জীবনের বিবর্তন

1216_160543

ভাবছি! কবে যে বড় হবো!
এই ভাবতে ভাবতে কবে যে বড় হয়ে গেলাম বুঝতে পারিনি।
ঘুম ঘুম চোখে মক্তব যাওয়া কতটা বিরক্ত ছিল তখন!
তারপর স্কুলে, স্যারদের চোখ রাঙানো, মায়ের কঠিন শাসন থেকে মুক্ত হতে ভাবতাম-
ভাবতে ভাবতে কবে যে বড় হলাম ইটের পেলাম না।

হঠাৎ একদিন পড়ন্ত বিকেলে উড়ন্ত কালো কেশ আমায় ছুঁয়ে গেল,
সারারাত গোল্লা ছুট খেলেছে আমার চোখের আঙিনায়,  ঘুমোতে দিইনি সেই বালিকা।
এই যেন এক অসম্ভব শূন্যতা, যেন এক অচেনা সুখ।
তবে কি বড় হয়ে গেলাম! ভাবতে ভাবতে বালিকার সাথে চুটিয়ে প্রেম।
প্রথম স্পর্শ, প্রথম আলিঙ্গন, প্রথম চুম্বন যেন বদলে দিল সবকিছু।

হঠাৎ সম্পর্কে টানাপড়েন বালিকার সাথে বিচ্ছেদ।
অসহনীয় যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে কবে যেন বড় হয়ে গেলাম।
এখন বালিকা দু’সন্তানের জননী, আমিও পিতা।
বড় হয়ে গেলাম।
এখন ভাবছি কেন বড় হলাম!
সেই মায়ের শাসন, বাবার কর্কশ কণ্ঠ, স্যারের বেত্রাঘাত
তখনই ভালো ছিল।

হায়!
জীবনের বিবর্তনে আজ কত অসহায়।

অসাম্প্রদায়িকতা নয়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি হোক আমাদের লক্ষ্য

223

সাম্প্রদায়িকতা এক দুরারোগ্য ব্যাধি। এই ব্যাধির জীবানু জাতির জীবনে গভীরে প্রোথিত। শুধুমাত্র আইন-শৃঙ্খলার কঠোরতার মধ্যেই এর সমাধান-সূত্র নেই। তরুন শিক্ষার্থীরাই হল দেশের সবচেয়ে আদর্শপ্রবণ, ভাবপ্রবণ অংশ। ছাত্র-সমাজই দেশের ভবিষ্যৎ, জাতির কান্ডারী। তাদের মধ্যে অফুরাণ প্রাণশক্তি। পারস্পরিক শ্রদ্ধার মনোভাব, আন্তরিক মেলামেশা, ভাবের আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে অভ্যুদয় হবে এক নতুন প্রজন্মের। এরই মধ্য দিয়ে ছাত্ররা নতুন করে অনুভব করবে মানবতার উদার মহিমা। গড়বে মহামিলনের মন্ত্র। ছাত্রাবস্থায়ই সাম্প্রদায়িকতার রাহু মুক্তির শফথ নিতে হবে। সম্প্রীতির মহাব্রত অনুষ্ঠানের তাদেরই হতে হবে প্রধান পুরোহিত। শুধু পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়া নয়, সুকুমার বৃত্তিগুলো যথাযথ বিকশিত করতে হবে তবেই শিক্ষার পূর্ণতা, সার্থকতা। মনুষত্বের অধিকার অর্জনই হোক প্রতিটি শিক্ষানুশীলনের পরম প্রাপ্তি। শিক্ষার নিবেদিত প্রাঙ্গণে নতুন করে উপলব্দি করতে হবে সবার উপরে মানুষ সত্য, তবেই মানুষে মানুষে প্রীতি-বন্ধন সৃষ্টিতে হবে শেষ কথা।

সমাজবদ্ধ মানুষ নানা ধর্ম সম্প্রদায়ে বিভক্ত। কিন্তু ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতা এক নয়। সকল ধর্মের মূল কথা – প্রেম, মৈত্রি, শান্তি ও সম্প্রীতি। কিন্তু বর্তমান সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় পর্যালোচনা করলে দেখা যায় সাম্প্রদায়িকতার বিষাক্ত ছোবলে সৃষ্টি হচ্ছে সন্ত্রাসবাদ, ধর্মীয় উগ্রতা। আমরা সবাই জানি মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। তাই আমাদেরকে হতে হবে মানবতাবাদী। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা যেন সমাজের জন্য অমঙ্গল হয়ে দেখা না দিতে পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি যেন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সমাজ প্রগতির পথকে রুদ্ধ না করতে পারে সেদিকে আমাদের লক্ষ রাখতে হবে। কারণ কোনো ধর্ম, কোন আদর্শই পৃথিবীতে এ সর্বনাশা ভেদবুদ্ধিকে সমর্থন করে নি। পবিত্র কোরআনে বলা আছে” ধর্মের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই”।

গতিশীল জীবনে সমাজ উন্নয়নের চাবিকাঠি প্রগতির পথ পাড়ি দিতে আমাদরকে ভ্রাতৃত্ববন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে। ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি করে সামজিক জীব হিসেবে আমাদেরকে সর্বোৎকৃষ্ট সমাজ গঠনের দৃষ্টান্ত করতে হবে। আমাদের জাতীয় জীবনে গঠনমূলক কাজের উৎকৃষ্ট উদাহরণ সৃষ্টি করতে চাষি, জেলে, কামার, কুমার, মুচি, ডোম এবং ধনী-গরীব সকলকে কাঁধ মিলিয়ে দেশপ্রেমে উদ্ধুদ্ধ করে জাতির উন্নয়নের জন্য গঠনমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে।

” জগৎ জুড়িয়া এক জাতি আছে/ সে জাতির নাম মানুষ জাতি।
এক পৃথিবীর স্তন্যে লালিত/ একই রবি শশী মোদের সাথী। ”

কবির এই ছন্দের ভাবার্থ সঠিক উপলব্দি করতে পারলেই তবে সমাজ থেকে বৈষম্য দূর হবে।

টমাস পাইল বলেছেন- ‘ পৃথিবীটা আমার দেশ, সমস্ত মানব জাতি আমার ভাই এবং সবার ভালো করাই আমার ধর্ম’। এই নীতি সৃষ্টি করুন দেখবেন আপনার সাথে সাথে সমাজের নীতিবাচক কোলাহলও পাল্টে গিয়েছে।

ধর্মভেদ, বর্ণবেদ, সাদা-কালোর দম্ভ ধ্বংস করে জীবনে সঠিক শিক্ষা, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি ও সভ্যতার ক্রমবিকাশের মাধ্যমে সামাজিক সম্প্রীতি তথা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করেই পৃথিবীতে শান্তি ও প্রগতি স্থাপন সম্ভব।

” হে চিরকালের মানুষ, হে সকল মানুষের মানুৃষ
পরিত্রাণ করো ভেদচিহ্নের তিলক পরা/ সংকীর্ণতার ঔদ্ধত্য থেকে”।

কবির উক্ত লাইনের মর্ম হৃদয়ের আঙিনায় রোপণ করে সর্বজনীন চেতনায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনকে মজবুত করে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারলেই আমরা বিশ্বের বুকে একটি সভ্য ও আদর্শ জাতি হিসেবে স্বীকৃতি পাবো।

অবশেষে কবি নজরুলের কন্ঠে উচ্চারিত-
” হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞেস কোন জন
কান্ডারী! বলো, ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মোর’।

তৈল মর্দন নয়: দেশকে ভালবাসুন

FB_IMG_1607

আবেগ দিয়ে সংগঠন হয় না, বাস্তবতা আর দেশপ্রেম দিয়ে একজন ব্যাক্তি হয়ে উঠে সাংগঠনিক। যার মাঝে দেশপ্রেম নেই, সেই সামান্য রাজনৈতিক পদবী নিয়ে অহংকার আর দেমাগে কর্মী কিংবা সাধারণ মানুষকে বিচ্ছিন্নকরণ করে। পদ বড় নয়, বড় ব্যাপার আমি বা আমরা দেশের জন্য কি করছি? ৫২’র ভাষা আন্দোলনে, ৭১’র মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছিলো তারা নিজেকে বিসর্জন দিয়ে দেশ রক্ষা করেছে। তাদের কোনো রাজনৈতিক পদ ছিলো না, পকেট ভর্তি অর্থ ছিলো না। তাদের একটি পরিচয় “আমি বাঙ্গালী”।

বাঙ্গালি জাতির পিতা কি চেয়েছিলো? সাধারণ মানুষদেরকে নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করে মুক্তি দিতে। অথচ ১৫ই আগস্ট ঘাতকরা তাঁকে নির্মম ভাবে খুন করলো। ১৪ই ডিসেম্বরে খুন হওয়া বুদ্ধিজীবীরা দেশের কথা ভাবতেন বলেই তৈল মর্দনে তৈলাক্ত রাজনৈতিক খেকরা তাঁদের বাঁচতে দেয়নি।

জহির রায়হান বা নুর হোসেন দেশের জন্য নিজের মায়া ত্যাগ করছেন। বছরে একটি দিন আসলে তাদের আমরা স্বরণ করি অথচ তাদের পরিবার বাকী ৩৬৩দিন ঠিক মত খাচ্ছে কি-না তা আমরা তলিয়ে দেখি না।

আমার জানাশুনা কিছু রাজনৈতিক কর্মী দেখেছি যারা সামান্য পদবী নিয়ে নিজেকে মনে করে স্বাধীন বাংলার প্রধান কিন্তু দেশের জন্য ঘোড়ার ডিম। তারা পদ পায় নেতার চামচি করে, দেশের জন্য নয়।

দেশকে যদি ভালোবাসতো তবে নিপীড়িত মানুষের পাশে, বস্তিতে, রেললাইনে, ফুটপাতে পড়ে থাকা মানুষকে নিয়ে ভাবতো। ধনীদের এক রাতের ডিনারের টাকা দিয়ে ১০জন বস্তির ছেলে মেয়েকে পড়ানো যায়। যে বস্তির ছেলেগুলো শিশু বয়স থেকে বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত হয়ে দেশ ও জাতির জন্য হুমকি হয়। এখন রাজনীতি পুরো তৈল মর্দনের রাজনীতি। তাই আমি রাজনীতি থেকে বহুদূরে। তবে মনের ভিতর কাঁদে নিপীড়িত, অবহেলিত মানুষের জন্য, তবুও কিছু করার নেই কারণ কিছু করতে গেলে তখন হাইব্রীড নেতাকর্মীদের ঘা জ্বলে যে এই ছেলে দেশের জন্য কিছু করতে গিয়ে আমাদের ডিঙিয়ো যাচ্ছে। ধিক্কার তোদের মত রাজনৈতিক কর্মীদের।

আমি বৃহৎ বাগানের কোনো এক কোণে পড়ে থাকা ছোট্ট একটি ফুল। সুঘ্রাণ হয়তো কেউ অনুভব করে, হয়তো কেউ করে করে না। আমার কেউ না থাকুক, কলম আছে।

আসুন, নেতাদের তৈল মর্দনের তৈল নর্দমায় ফেলে দিয়ে নিজগুণে দেশকে ভালবেসে দেশের নিপীড়িত আর অবহেলিত মানুষের পাশে দাঁড়াই। আর নেতাদের বলছি, আপনারা যাদের দিয়ে নেতা হয়েছেন দৈনিক তাদের সাথে দেশের স্বার্থে আধ-ঘন্টা সময় দেন, দেখবেন দেশ কত দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে।

মুক্তির আশায়

কি আশায় ছুটছি!
একলা পথের পথিক
আমি,
আমার ধর্ম নেই
নেই কর্ম
অন্ধকারে আমার বাস
কালো রাত্রির যাত্রী
আমি,
আমার ঠিকানা নেই
নেই হারানোর ভয়
দুর্গম পথে সুখ খুঁজি
ঝর্ণাধারা স্রোত
আমি,
আমার নদী নেই
নেই বালি।
কি নেশা দুচোখে
ভবের জলসায় রাজকুমার
আমি,
আমার মাদকতা নেই
নেই অশ্রুজল
কল্পনার রাজপ্রাসাদে
প্রজাদের শাসনের শাসক
আমি,
আমার ডাল নেই
নেই তলোয়ার।

মাটির উপরে কষ্টগুলো
সইতে পারি না
তবে মাটির নিচে কষ্টগুলো
অনন্তকাল
সইবো কি করে!
তবুও আমি ছুটছি
পৃথিবীর নরক থেকে
মুক্তির আশায়।

১৩:৩০
২৬/১০/১৭ইং

আবেদন

IMG_2

কোনো এক পড়ন্ত বিকেলে
দেখা হবে দুজনে
হাতে হাতে রেখে
না হয় বললাম কিছু কথা,

মনের গহীনে জমে থাকা কিছু ব্যাথা
বিলিয়ে দিবো তোমার উষ্ণতায়
হারিয়ে লাজ হবো বেসামাল
মাতিয়ে কামুক ঝংকার
না হয় হলাম উন্মাদ,
তবে কোনো পড়ন্ত বিকেলে।

কোনো এক পড়ন্ত বিকেলে
বলে দিবো সব
ছুঁয়ে দিবো তোমার উড়ন্ত কেশ
আলতো করে চুমো নিবে
বলি দিবো এতোদিনের ক্লেশ।

তবে কোনো এক রাতদুপুরে
ঝিঁঝিঁ পোকার সুর তালে
জ্যোৎস্নার গন্ধে চুষে নিবো ব্যাথাদের জল
নামিয়ে দিবো তোমার লাজুকতা
নরম স্পর্শে হবে তোমার কষ্টের কামুক জাগ্রতা।

চলো তবে
অধর আলিঙ্গনে হয়ে যাই কিছু সময়ের জন্য বেসামাল,
এসো তবে মিলিয়ে নেই না পাওয়ার হিসেব
কিছুটা সময়ের জন্য চাই
নিজেকে নুঁয়ে দিলাম
যত পারো খুঁজে নাও তোমার ইচ্ছে সাহেব।

—ডেডিকেট টু নিম পাতার চা—

ফেরারী তুমি

সীমানায় কাঁটাতার
স্মৃতিতে রক্তক্ষয়
জীবনের পৃষ্ঠে অন্ধকার
চাওয়া-পাওয়ার পরাজয়।

টকটকে জবাফুল আমি
বিবেকের পাঠশালায়
তারা গুনে বেকুব তুমি
প্রেমের ইতিহাস যন্ত্রনায়।

স্বার্থের টানে ছুটছি মোরা
পিষে যত অঙ্গিকার
হারিয়ে কথার অজস্র তারা
তুমি-আমি কে বা কার!

সময় এখন ফেরারী
মিছে সুখ নহরে ডুবে
দুঃখ তাই কান্ডারী
বেদনাময় তরী আবার পাবে।

ফেরারী তুমি অবিশ্বাসে
ভালবাসার বাগান বাড়ীতে
নিদারুন যন্ত্রনা ক্ষনিক নিঃশ্বাসে
উড়িয়ে দিলাম রঙ্গীন ঘুড়িতে।

১৬:২০
২৪/১০/১৬ইং

আমার একটা তুমি চাই

IMG_20200719_202407_906

আমার একটা তুমি চাই
যে তুমি হবে ঘোর অন্ধকারে একটু আলো
তুমিতে থাকবে কৃষ্ণচূড়ার রঙ
তুমি হবে মেঘের ভরসা
তোমাতে ডালিয়ার সুঘ্রাণ।

আমার একটা তুমি চাই
যে তুমি হবে বৈশাখী দমকা হাওয়ায় একটু আশ্রয়
তুমিতে থাকবে সকালের মিষ্টি রোদ
তুমি হবে নীল পদ্মের সমাহার
তোমাতে কথাদের বাগান।

আমার একটা তুমি চাই
যে তুমি হবে সাগরের উতলা গর্জন
তুমিতে থাকবে অসময়ের তৃষ্ণা
তুমি হবে খচিত স্বপ্নের মহাকাল
তোমাতে এই ফেরারী বিচরণ।

আমার একটা তুমি চাই
যে তুমি মেঠোপথে দস্যিপনায় ফড়িংয়ের পিছনে
তুমি শিউলী ঝরা মাঠে বসবে আনমনায়
তুমিতে হারিয়ে যাবার বাসনা
আমি-তুমি, তুমি আমি হবো একাকার।

অজ্ঞতা নাকি ভন্ডামী

আমাদের ধর্ম পালন দেখে খুবই দুঃখ লাগে। নিজের সুবিধার্থে ইসলামকে আমরা ব্যবহার করছি। যেমন, জ্বিল হজ্জ মাসের প্রথম তারিখ থেকে কোরবানী ঈদ উপলক্ষ্যে অনেকে দাঁড়ি-গোঁফ কাটেনি। আমি তাদের প্রশ্ন করলাম, কেন তারা কাটেনি? উত্তরে আমি বিব্রত হই। এই সময়ে দাঁড়ি-গোঁফ কাটলে আল্লাহ নাকি গোনাহ দিবে। এই কেমন যৌক্তিরে ভাই? হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে, হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন, এক মুঠো সমপরিমান দাঁড়ি রাখতে, আর যদি দাঁড়িতে ক্ষুর লাগানো হয় তাহলে নবী (সঃ) গলায় ক্ষুর বসানো সমান গোনাহ হবে। অথচ বর্তমানে ধর্ম কে নিজের মত সাজিয়ে যুক্তি দিয়ে নিজেকে মুসলমান দাবী করছে। আপনি আল্লাহর হুকুম পালনে নামাজ পড়ছেন কিন্তু হিন্দু নাপিত দিয়ে দাঁড়ি চাটাই করে উনার বন্ধু নবী করীম (সঃ) কে অপমান করছেন। এইটা কি আপনাদের অজ্ঞতা নাকি আল্লাহর সাথে ভন্ডামীর পরিচয়?

পশ্চিম পাকিস্তানীরা পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালীদের মুসলমান মনে করতো না। কারণ বাঙালিদের আচার-আচরণ ও সংস্কৃতি বিধর্মীদের সাথে মিল। তাই তারা পূর্ব পাকিস্তানীদের উপর নির্যাতন চালিয়ে ছিল। অথচ পশ্চিম পাকিস্তানীরা চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, খুন ধর্ষণ তথা যত অপকর্ম ইসলামে নিষেধ করেছে সে সকল অপকর্মের সাথে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল আর নিজেদের মুসলমান দাবী করে পূর্ব পাকিস্তানীদের উপর নির্যাতন চালিয়েছিল। বর্তমানেও ঠিক বাংলাদেশে অধিকাংশ মানুষ সকল অপকর্ম করবে আর তখনই তাদের মুসলমানিত্ব দেখাবে আপনি যখন যৌক্তিক প্রতিবাদ করবেন। বর্তমানে বাংলাদেশের গ্রামীন সমাজে নামাজ পড়া মানুষগুলোকে আমরা ভালো মনে করি, কিন্তু অন্তরালে তার কুৎসিত চরিত্রটা আমরা দেখি না। শুধু নামাজ পড়লেই যদি সৃষ্টিকর্তাকে খুশি করানো যেত তাহলে কোরআন-হাদিসে এতো বিধিনিষেধ নাজিল হতো না। আর মানুষেরও মৃত্যু হতো না।

কিছু লোক আছে যারা নামাজ পড়ে আমি ভালো হয়ে গিয়েছি প্রমাণ করার জন্য। আর কিছু লোক আছে বয়স হয়েছে আর কত! তাই। আল্লাহকে ভয় করে যদি নামাজ পড়তো তবে আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ সকল অপকর্ম থেকে নিজেকে বিরত রাখতো।

আপনি বা আপনারা তো নামাজ পড়েন, তাহলে কয়েকটা জিনিস থেকে আপনারা নিজেদের বিরত রাখতে পারেন কি-না দেখি। যেমন, লোভ-লালসা, হিংসা-পরশ্রীকাতরতা, গীবত-পরনিন্দা, সামাজিক অন্যায় বিচার এবং অন্যের অনিষ্ট সাধন করা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।

মনোরথ

এই অধুনাতন ক্ষিতিতে আমি সংহারক হতে চাই না
আমি হর্যকের মত ইনকিলাব করবো শুধু তোমার অন্তরে একটু স্থান পেতে।
রত্নাকরের যেমন শুক্তিতে লুকিয়ে থাকে মুক্তা
আমি তেমন তোমায় ধারণ করি।

তোমার মনোরথের বিরুদ্ধে ইনকিলাব গড়বো
তোমার ঈক্ষাতে ভালবাসার কোপল মহোর্মি তুলবো
আমি তোমার কুলোষিত নিতি ভষ্ম করবো
আমি তোমার ওকির জাঙ্গল ভাঙবো
আমি প্রেম বাত্যায় তোমার বুকে থই থই খুঁজবো।

আমি কোনো ওজর শুনবো না
আমি কালকন্ঠ হতে চাই না
আমি তোমার আসক্তিতে ভাবীকাল ময়ূখ করতে চাই।

হ্যাঁ! আমি অতিপ্রবল, আমি ছার
হতে পারি তোমার ঠাহরে।
তবে একবার তোমার তেষ্টার জল করো
আমি তোমার কাতোয়ান হয়ে রইবো আমরণ।

এই আমার আবেগ নয়
আমার বাস্তবতা, আমার ঐকান্তিক প্রতীতি।

১৪ঃ৩০
২৭/০৬/১৯ইং

ইচ্ছে করে

ইচ্ছে করে
শীতের রাতে কনকন ঠান্ডায়
উষ্ণ চাদর হয়ে তোকে গরম রাখি।
ইচ্ছে করে
গ্রীষ্মের উত্তপ্ত রৌদে ঘর্মাক্ত দেহ
ঝিরিঝিরি হিমেল হাওয়া হয়ে তোকে শীতল করি।
ইচ্ছে করে
কাল বৈশাখী দমকা ঝড়ে
স্বর্ন লতিকা হয়ে তোকে প্যাঁচিয়ে থাকি।
ইচ্ছে করে
শরৎ এর শিশির হয়ে
তোর পা ভিজিয়ে রাখি।
ইচ্ছে করে
বসন্তের সুর হয়ে
পাওয়া কষ্টগুলো তোর ভুলিয়ে রাখি ।
ইচ্ছে করে
অমবস্যা নিশীতে
জোনাক হয়ে তোকে আলোকিত করি।
ইচ্ছে করে
আঁখি বেয়ে তোর অশ্রুগুলো
ফুলের মধু ভেবে পান করি।

ইচ্ছেগুলো হায় ! ইচ্ছে রয়ে যায়
তোর মাঝে অবিশ্বাসের স্রোত তাই।

তোর দেহের সেই গন্ধ নাকের কাছে শুকতে পাই
তোর অনুভূতির বদন চোখের মাঝে পাল তুলে যায়,
তোর কাম জাগ্রত ধ্বনি কানের কাছে শুনতে পাই
তোর গরম নিঃশ্বাসের সাথে ওষ্ঠদ্বয়ের ছোঁয়া যখন তখন জাগিয়ে তুলে আমায়।

পারিনি; পারবো না ইচ্ছে আর স্মৃতিগুলো নিয়ে
স্বচ্ছ ভাবে বাঁচতে
অতীত, বর্তমান আর ভবিষৎ
চাই থাকতে নিয়ে থাকতে।

হারানোর ভয় নেই

এক পেয়ালা মদ গিলে
রাতের জ্বোৎস্নায় একা একা গল্প শ্রেয়
দেড়হাজার খরচ করে প্রেমিকার সাথে
ডেটিং করার চেয়ে

সারাদিন মেসেজ কিংবা কল
আহ্লাদের চেয়ে দু’ঠোঁটে ধোঁয়া উড়াও
পাবে শান্তি, বিশ্বাস হারানোর ভয় নেই

মিথ্যে প্রতিশ্রুতির হেয়ালীপনায়
সময়গুলো মুমূর্ষ করার চেয়ে
চন্দ্রমুখীর বিছানায় স্পর্শহীন গল্পে
মাতিয়ে সুখ খুঁজো, প্রেম হারানোর কষ্ট নেই

মায়াবী স্বপ্ন জালে হারানোর চেয়ে
সমুদ্রগর্জনে আর্তনাদ বিলিয়ে দাও
হিমেল হাওয়ায় হয়তো এক মুঠো সুখ
ছুঁয়ে যাবে, নীলিমার ছলণা নেই

বাবু সোনা জান কে হারিয়ে দাও
পাহাড়ী অরণ্য প্রেমে সঁপে
খুঁজো প্রকৃতির অচেনা ভালবাসা
ঝর্ণার সুরে মিটিয়ে নাও একাকীত্বের তৃষ্ণা
পাবে সুধা, যাতনা পাওয়ার ভয় নেই

লিটনের ফ্ল্যাটে বা অন্ধকার রেস্তঁরায়
শরীর গরমে বিশ্বাস হারানোর চেয়ে
নর্তকীর ঘরে সুরা পানে রঙ্গ শ্রেয়
থেতলে যাওয়া পঁচা ঘা বিশ্বাস নিয়ে
একাকী বেঁচে থাকার ভয় নেই।

১৪ : ৩০
১৬/০৭/১৮ইং

তোমার-আমার সম্পর্ক

আমি সকাল বেলায় হাসতে চেয়েছিলাম তোমার হৃদয়ের চিলেকৌঠায়
আমি সুখ খুঁজেছিলাম তোমার অন্তরে শুভ্র মেঘের পালে
আমি বিশ্বাসের সুগন্ধি পেয়েছিলাম তোমার মনের আঙিনায়
আমি হাঁটতে চেয়েছিলাম তোমার বিষণ্নতার অন্তরালে।
কিন্তু আমি হেরে গিয়েছি।
আমি নিয়মের বাহিরে ভালবসেছি।
আমি বুঝিনি!
গ্রীষ্মের প্রখর তাপে ঝলসে যাওয়া তোমার প্রেম বৃক্ষে আমি বর্ষার মৃদু ছন্দে বৃষ্টি হয়ে নামতে পারিনি।
তোমার ভালবাসা কখনও আর সতেজ হবে না, হেতু তোমার বিশ্বাসকে কুঁকড়ে কুঁকড়ে খেয়েছে বসন্তের কোকিল।
সেই কোকিলের কুহু কুহু মিষ্টি সুর নিত্যদিন তোমার শ্রবণে-মননে ঝংকার তুলে
আর আমি হররোজ পিষে যাই, আমি যে শুষ্ক বকুল।

তাই তোমার-আমার সম্পর্ক এখন প্রায় পড়ন্ত বিকেল।

নিয়ম অনিয়ম

পৃথিবীর সবচেয়ে নষ্ট মানুষটি তোমার দৃষ্টিতে আমি
তবে সেইদিন কেন আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলে যখন আমি বলেছিলাম চলবো একা নির্জনে,
এই আধুনিক সমাজের নিকৃষ্ট জীব তোমার নতুন ভাবনায়
তবে কেন সেইদিন নগ্নদেহে বাহুতলে সঁপে মিটমিটে আলোয়ে চুমো এঁকেছিলে!
জঘণ্যতায় ভরপুর আমারই চারিপার্শ্বিকতা
তবে কেন সেইদিন বিচরণ করেছিলে আমার জঘন্য হাতটি ধরে?
আমি কোনো যোগ্যতাই রাখি না যে মুখে বলেছো সেই মুখেই কত কতবার চুমো একেঁছো নগ্ন দেহে তার হিসেব কি মনে আছে?

সাগরের কোল ঘেঁষে ডুবুডুবু সূর্য দেখতে আমরাই অজস্র পাপে ভরা কাঁধে মাথা রেখে
আর স্বপ্ন বুনতে তুমি-আমি পরীদের রাজা রাণী।
হঠাৎ হঠাৎ গোঙিয়ে উঠতে যদি আমি কখনো ধোঁকাবাজ হই, যদি কখনো তোমার স্বপ্নগুলোকে পিষে দেই অবিশ্বাসের রোলারে!
রাগ-অনুরাগে অশ্রু ঝরিয়ে চোখ ফুলা করতে তা হয়তো আজ ভুলেই গিয়েছো আত্মপ্রবঞ্চনায়।

ল্যাম্পপোস্টের আলোয় রিক্সার হুকতলায় রসালো মৈথুনে উত্তপ্ত নিঃশ্বাসে বলতে ” ভালবাসি খুব ” তুমিই আমার শ্রেষ্ঠ মানুষ
তখন কি ভাবো নি আমি তোমার ভুলে ভরা মানুষ?
কত কোটিবার বলেছিলে আমি বিনে তোমার পৃথিবী অন্ধকার, মরুভূমির তৃষ্ণার্ত পথিক হবো,
তবে আজ পুর্ণিমার আলোয় সুখের নদীতে ভেসে বেড়াচ্ছো কোনো এক পুরুষের মিথ্যে প্রতিশ্রুতিতে আর আমি ঘুটঘুটে অন্ধকারে জোনাকি খুঁজি।

কত আহ্লাদ, কত কান্নার জল, কত উৎকন্ঠা, কত শফথ বিলীন হয়েছে তোমারই অজানা চাহিদায়
নিমেষেই ডুবেছে স্বপ্নতরী, পাল ছিঁড়া কূলহারা বিশ্বাসের মাঝিকে শুধু ভাবায়-
প্রেম ভালবাসা সত্যিকার অর্থে কি?

দেহের স্বাদ মিটে গেলেই কি নতুন দেহের সন্ধানে ডাস্টবিনে চলে যায় সেই সব ভালবাসা, প্রতিশ্রুতি, টান কিংবা প্রেম!
আবার কি শুরু হয় নতুন হিসেবের খাতা, কখনো লেখা হয় লোক দেখানো সংসার কিংবা নগ্ন দেহের নগ্ন খেলা?
কোনো একদিন সবকিছু হারিয়ে এতোকিছু থাকার পরেও অনুশোচনার দহনে পুড়তে পুড়তে কি হাসির মৃত্যু হয় আমরণ তরে?
নিয়ম-অনিয়মের খেলায় পরাজিত সৈনিক তুমি আমি সবাই।

তবে চলো নিয়ম ভাঙ্গি-
প্রেম ভালবাসা হউক সাত পাকে বাঁধা কিংবা তিন কবুলের পরে অথবা জিশুকে সাক্ষী করে চুমোর ফলে
তবেই হয়তো তোমাদের মত মানুষদের তরে অশ্রুসজল হতে হবে না আর কাউকে।

সময়ের খুনী

প্রতিটি মুহূর্ত জল্লাদ হয়ে আসে
প্রতিবারই ফাঁসির মঞ্চে আধ-মরা করে
ফিরিয়ে দে চার দেওয়ালে।
কখনো কখনো মুন্ড কাটিবার প্রয়াস লয়
কখনো কখনো বক্ষের দিকে তাড়িত বুলেট হয়,
আবার কখনো রক্তাক্ত মাটির উপর পড়ে থাকা
গোঙ্গানো লাশ হয়।

সময় বড্ড স্বার্থপর!
বয়স কেড়ে নিয়ে স্মৃতিগুলো পাহাড়ে রুপান্তরিত করে,
শ্রাবণের আকাশে কালো মেঘ করে তুলে
চলমান সময়টাকে।
পিছনে ফিরে তাকাতে চাই না, তবুও বেহায়া মন
টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যায় সেইসব রঙ্গীন মুহূর্তে
যে মুহূর্তুলো আজ বড় ব্যথিত, ক্লান্ত।

কি পেলাম!
সময়ের খুনী হওয়া ছাড়া আর কি-ই-বা হলাম!
নিজেকে আজ খুনী ভাবলেই কেন জানি
ঘেন্নার থুথুতে ডুবিয়ে রাখতে ইচ্ছে হয়
এই আমি আমাকে।
সময়গুলো খুন করে আজ কয়েদী
কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করছি
লাভ নেই তাতে, কারণ আমি “সময়” এর খুনী।

ভালবাসা

যে তুমির নিকট ভালবাসা
তা যেন মনে হয় টাইটানিকের গল্প
প্রেমিকা বাঁচাতে শেষ সম্বল কাঠের টুকরো দিয়ে বরফ জলে নিথর দেহ,
আর প্রেমিকা তার করুন দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে বেঁচে থাকা।

যে তুমির নিকট ভালবাসা
তা পারুর ছুটে আসা দেবদাসের গল্প
আভিজাত্যের নিষ্ঠুর অহমিকায় প্রেমিকার কপালে দাগ কেটে দেওয়া
আর প্রেমিক মদের গ্লাসে প্রেম বিসর্জন।

সেই তুমির প্রেম, ভালবাসা আর মায়া যেন সুনীলের তেত্রিশ বছর ফেরিয়ে-
কেউ কথা রাখেনি।

সেই তুমির ভালবাসায় কত আহ্লাদ!
স্বার্থের টানে অবজ্ঞায় বলা ” তুমি ভালো থেকো ”
স্বপ্নের জাল বুনতে বুনতে নিজের অজান্তেই যন্ত্রণার চাষ
বেগতিক উন্মাদনায় কাল্পনিক তাজমহলে রাজাবাবুর অট্টহাসি
যাতনায় কালের ধূসরতায় যুগান্তর ফাঁড়িতে অতন্দ্র প্রহরী
সেই তুমির প্রেম মেঠোপথে দস্যিপনায় নুপুরের ঝংকারে মাতাল হওয়া
দিবানিশি বেদনা সিক্ত হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ গাওয়া
“যাও সুখেরও সন্ধানে যাও, আমি যত দুঃখ পাই গো “।

সেই সুখের সন্ধান পাইনি বলেই
ভালবাসা মানে কি তা আজও বুঝিনি
বিশ্বাঘাতকতা, প্রবঞ্চনা না-কি কালো রজনীর দমকা হাওয়া?