ইলহাম এর সকল পোস্ট

প্রশ্ন জেগে ওঠে মনে

রাষ্ট্রভাষা বাংলা হয়েছে বলেইতো আজ মাতৃভাষা বাংলা হয়েছে
আজ আমি চিন্তা করি বাংলায়
ভাবি বাংলায়, দেখি বাংলায়
ভেসে ওঠে চোখে বায়ান্নর ছবি, একুশের ছবি – আমি দেখি বাংলায়।

ভেসে ওঠে –
বুলেট বিদ্ধ নিষ্প্রাণ সন্তানকে দু হাতে তুলে ধরে
কত মা যে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলেন সেদিন!
ভেসে ওঠে –
কতগুলো ঈদের দিনে অশ্রুসিক্ত দৃষ্টিতে
কত বোন যে তাকিয়ে ছিলেন তার ভাইয়ের জায়নামাজের দিকে!

ভেসে ওঠে –
কত বাবা যে কতদিন অফিস থেকে ফিরে এসে
তার খোকাকে ডাক দিয়েই থমকে গিয়েছেন; বিশ্বাস হচ্ছিলো না খোকা…

ভেসে ওঠে – আমি দেখি বাংলায়,
আজও আমি দেখি শহীদ মিনারে লেগে আছে রক্তের দাগ!

দেখতে দেখতে অকস্মাৎ প্রশ্ন জেগে ওঠে মনে
প্রশ্ন জেগে ওঠে বাংলায়;
ইসলাম ধর্মের মুসলমান কেন ইসলাম ধর্মের মুসলমানদের হত্যা করেছিলো?
কেন নির্মম ভাবে বুলেটের পর বুলেট ছুড়েছিলো?
কেন দপ দপ করে মানুষ মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিলো?
বিস্ফোরিত বারুদের মৃত্যুগন্ধ আজও আমি টের পাই
আজও কানে ভেসে আসে বুলেট ছোড়ার শব্দ
আমি শব্দ শুনি বাংলায়।

প্রিয় ভাই; রফিক বরকত সালাম জব্বার শফিউর
এবং নাম না জানা আরও অনেকে; তোমাদের বলছি,
প্রতি ফাল্গুনে সারা বাংলার সব ফুল ফোটে তোমাদেরই জন্য
বাংলা, বাঙালি, পৃথিবী তোমাদের ভুলে যায় নি
ভুলতে পারে না
ভোলা যায় না
জালিমদের বিরুদ্ধে তোমাদের আত্নবলিদান দেখে; তারই অনুপ্রেরণায়
বার বার বাঙালি জেগে ওঠে অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা নত না করার প্রত্যয়ে।

আবার প্রশ্ন জেগে ওঠে,
মুসলমান কতৃক মুসলমানের গুলিবিদ্ধ
আমাকে আজ করেছে প্রশ্নবিদ্ধ।

প্রশ্ন জেগে ওঠে মনে;
ইসলাম মানেই কি আরবি?
মুসলমান মানেই কি উর্দু?
কষ্ট জেগে ওঠে প্রাণে;
জীবন বনাম ভাষার আকুতি
ধর্ম বনাম সংস্কৃতি।

ইতিহাস স্বাক্ষী, বায়ান্ন স্বাক্ষী,
একুশ স্বাক্ষী, বাঙালি স্বাক্ষী,
মানুষ স্বাক্ষী, পৃথিবী স্বাক্ষী,
প্রশ্ন জেগে ওঠে মনে
ইসলাম মানেই কি আরবি?
মুসলমান মানেই কি উর্দু?
কষ্ট জেগে ওঠে প্রাণে
জীবন বনাম ভাষার আকুতি
ধর্ম বনাম সংস্কৃতি!

আলাপন-৫০ (ডুডুভন ক্রক্ক)

নাহিদ সাহেবের ঘুম আসছে না। এপাশ ওপাশ ফিরছে বিছানায়।
একবার ঘুম এসেছিল কিন্তু তন্দ্রার ভেতরে কাকে যেন দেখার পর ঘুম ভেঙে গেলো। তাওতো ঘন্টা তিনেক আগের কথা। এখন রাত ৩টা বাজে। হঠাৎ ঘড়ঘড় ঘড়ঘড় শব্দ হতে শুরু করলো। ওই শব্দটার ভেতরে প্রচন্ড কষ্ট এবং ভয়ের কম্পন বুঝা যায়। নাহিদ সাহেব বাসায় একা। তার স্ত্রী সন্তান কিছু দিনের জন্য শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে গিয়েছে। এতো রাতে একা একা, লাইট অফ করা, তার মধ্যে এই ঘড়ঘড় শব্দ কেমন যেন লাগছে। আরেকটি শব্দ ওই ঘড়ঘড় শব্দটাকে ধমক দিয়ে বললো, চুপ!

ঘড়ঘড় শব্দটা থেমে গেলো। এখন যেই শব্দটা ধমক দিয়েছিলো সেই শব্দটা মোলায়েম সুরে ডাক দিলো, নাহিদ সাহেব! আপনি জেগে আছেন আমি জানি।
নাহিদ সাহেব ওই মোলায়েম কন্ঠের উত্তরে বললেন, কে কথা বলছেন?
উত্তর এলো, আমি ডুডুভ ক্রক্ক।
নাহিদ সাহেব বললেন, ও আচ্ছা – কিন্তু ঘড়ঘড় শব্দটা কিসের?
ডুডুভন উত্তর দিলো, ওটা একটা পাপাত্মা।
– এখানে এসেছে কেন? আর এমন শব্দ করছে কেন?
– সে খুব কষ্টে আছে, ওই আত্মাটা শান্তি পাচ্ছে না
– কেন?
– ভয়ানক এক শাস্তি চলছে আত্মাটার যা সে সহ্য করতে পারছে না।
– তা আমি ওই শব্দ শুনেই বুঝতে পেরেছি কিন্তু কেন এই ভয়ানক শাস্তি?
– সেটা ওই আত্মাটার কাছ থেকেই শুনুন।
আবার ঘড়ঘড় ঘড়ঘড় শব্দ হতে শুরু করলো। ঘড়ঘড় শব্দটা কেঁপে কেঁপে উঠছে। ওভাবেই কথা বলতে চেষ্টা করছে। ভারী ঘড়ঘড় কাঁপা ভয়ার্ত কন্ঠে ওই আত্মাটা কথা বলতে লাগলোঃ
– আমি আজ এই ভয়ানক শাস্তি সহ্য করতে না পেরে আপনার কাছে এসেছি। আমাকে বাঁচান।
– আমি কি করে একটি আত্মাকে শাস্তি থেকে বাঁচাবো?
– শুনুন, আমি জীবিত থাকা অবস্থায় অনেক বেঈমানি করেছি। এক মহৎ ব্যক্তিকে সপরিবারে হত্যা করেছি। অনেক নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছি। আজ তাই আমার এই অবস্থা। আমাকে বাঁচান।
– কিন্তু আমি কি করে বাঁচাবো?
– আমি এই দেশের মানুষ না। আমাকে আমার দেশে পাঠিয়ে দিন।
– আপনার দেশ কোনটা?
– যেই দেশের সাথে এই দেশের যুদ্ধ হয়েছিল সেটাই আমার দেশ।
– তার কি প্রমাণ আছে?
– প্রমাণ খুঁজলেই পাবেন আর সবচেয়ে বড় প্রমাণ আমার বাবা এবং মা এর কবর ওই দেশেই আছে। আমি ওই দেশের লোক। আমাকে ওই দেশে পাঠিয়ে দিন।
– আশ্চর্য! কি করে তা সম্ভব? আর এখন এই দেশে কি হচ্ছে আপনি কিছু জানেন?
– জানি, সব জানি
– কি জানেন?
– আমি যেই মহৎ ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলাম তাঁর বংশধরদের আমার বংশধরেরা অনেকবার হত্যা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে এখন বিভিন্ন ধরণের ষড়যন্ত্র করছে।
– কি কি ষড়যন্ত্র করছে? কবে থেকে করছে?
– ষড়যন্ত্র অনেক আগে থেকেই চলছে ।
– কিছু রিসেন্ট ষড়যন্ত্রের কথা বলুন।
– একটি সেতুতে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ, সেতুতে মাথা লাগবে সহ নানা ধরণের গুজব, ধর্মীয় সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে ওই মহৎ ব্যক্তির অবয়ব ভাঙার চেষ্টা……
– কিন্তু একটি গণমাধ্যম……
– জানি জানি, ওই প্রতিবেদনটার ষড়যন্ত্র সুদূর প্রসারিত এবং সুকৌশলে করা হয়েছে,
– কেমন?
– দেখুন ওখানে ওই মহৎ ব্যক্তির পক্ষে প্রতিবেদন দিয়ে প্রথমেই এই দেশের প্রধানকে বোকা বানাতে চেষ্টা করেছে। তারপর একটি বাহিনীর প্রধানকে টারগেট করে প্রতিবেদনটি করা হয়েছে।
– কিন্তু এটা সুদূর প্রসারিত ষড়যন্ত্র কি করে?
– যেহেতু দেশের প্রধানের পক্ষে অর্থাৎ ওই মহৎ ব্যক্তির পক্ষে কথা বলে একটি বাহিনীর প্রধানকে অপরাধী হিসেবে প্রকাশ করার চেষ্টা- এই কৌশলে দেশের প্রধান এবং ওই বাহিনীর প্রধানের মধ্যে দ্বন্দ্ব সংঘাত এর সূত্রপাত ঘটানোই এই প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য।
-কেন এমন কৌশল অবলম্বন করলো?
– রিসেন্টলি পাশের দেশে কি হচ্ছে তা জানেন না?
– তা তো জানি
– ওই প্রতিবেদনের উদ্দেশ্যই হচ্ছে সুকৌশলে যদি এমন কিছু এদেশে ঘটে কিন্তু এ দেশে সে সম্ভাবনা একেবারেই নেই কারণ ইতোমধ্যে সবাই ওই প্রতিবেদনের মূল উদ্দেশ্য বুঝতে শুরু করেছে।
– দুইজন মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাঁধানো তো শয়তানের কাজ।
– ওরা তো মানুষরূপী শয়তান। আমিও তাই ছিলাম। আমার বংশধরেরাও তাই হয়েছে কিন্তু ওরাতো জানে না আমি কি কষ্টে আছি। আমাকে বাঁচান।
– কি করে বাঁচাবো বলুনতো?
– আমার শাস্তি খুব অল্পই কমবে যদি আমার সম্মাননা বাতিল করে কিন্তু আমি এই পুরো শাস্তি থেকে রেহাই পেতে চাই।
– বলুন কি করতে হবে?
– আমার বংশধরদের এই দেশ থেকে বহিষ্কার করুন আর আমার কবর তুলে ওই দেশে নিয়ে গিয়ে আমার মা-বাবার পাশে স্থান্তরিত করুন – এ ছাড়া এ শাস্তি থেকে আমি রেহাই পাবো না।
– কিন্তু আপনার বংশধরদের কি করে দেশ থেকে বহিষ্কার করা যাবে?
– কেন? এক লেখিকাকে বহিষ্কার করা হয় নি?
– সে তো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে
– ভালো করে সংবিধান ঘাটুন। আমার বংশধরদের বহিষ্কার করারও উপায় পেয়ে যাবেন কারণ ওরা অতীতে কি কি করেছে সব আমি জানি। আর আমার এই প্রার্থনা দুটি গ্রহণ করলে সব ষড়যন্ত্র থেমে যাবে এবং ওই গণমাধ্যমও ঠিক হয়ে যাবে।
হঠাৎ কন্ঠটা ভারী ঘড়ঘড় কাঁপা ভয়ার্ত কন্ঠে পরিনত হতে লাগলো।
ডুডুভন ক্রক্ক ওই আত্মাটিকে বললো, তুমি চলে যাও।
আত্মাটি চলে গেলো।
ডুডুভন বললো, নাহিদ সাহেব – ওই আত্মাটার শাস্তি বাড়তে শুরু করেছে তাই চলে যেতে বললাম।
নাহিদ সাহেব বললেন, কিন্তু সে যে শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য দুটি প্রার্থনা করে গেলো এখন এগুলো কি করে করা যায়?
– শাস্তি পাচ্ছে পাক না, শাস্তি পাওয়ার কজ করেছে তো শাস্তি পাবে না?
– না, কিন্তু তার আকুতি খুব করুন। তার এই প্রার্থনা দুটি কবুল করতে হবে।

আমিও একদিন বসন্ত হবো

তোমাকে আমার ভালো লাগে; তারচেয়েও বেশি সঠিক “ভালোবাসি”
ভালোবাসি, তবে তোমাকে তা বলা হবে না কোনো দিনও
ভালোবাসি বলেই সম্মোহিত করে ছিনিয়ে নিতে চাই না।
যার গোলাপ ভালো লাগে সে তো গোলাপকে ছিঁড়ে নিয়ে যায়
যে গোলাপ ভালোবাসে সে তো গোলাপের গাছে পানি ঝরিয়ে দেয়
ভালোবাসি বলেই আবেগি হয়ে কাতর হয়ে পাগল হয়ে
তোমাকে ছিনিয়ে নেয়ার অভিপ্রায় দেখাতে চাই না।
যখন তোমার হৃদয়ে, এ হৃদয়ের টান অনুভব করবে
এ ভালোবাসার টান অনুভব করবে
তখন না হয় নিজ থেকেই ছুটে এসো আমার কাছে
যেমন গোলাপের পাপড়িগুলো
আর সব গাছের পাতা নিজে থেকে ছুটে যায় বসন্ত বাতাসে;
বসন্তের টানে বসন্তের কাছে।
আমিও একদিন বসন্ত হবো
একে একে গৃষ্ম বর্ষা শরৎ হেমন্ত শীত পেরিয়ে
আমিও একদিন বসন্ত হবো
শুধু তোমারই জন্য
আমিও একদিন বসন্ত হবো।

অলক্ষ্যে লক্ষ্য না হারাক

যা আসে আসুক – যা যাবার যাক
এ জীবনে যা কিছু হবার তা হোক
অলক্ষ্যে জীবন-লক্ষ্য না হারাক।
দৃঢ় মনোবল লক্ষ্যে অটল
কচু পাতার পানির মতো
নয় তা টলমল।

ধন যায় যাক – মান যায় যাক
এতো সময়ের খেলা
অলক্ষ্যে জীবন-লক্ষ্য না হারাক
ধন-মান বহুগুণে আসে ফিরে ফিরে
লক্ষ্যে যে অটল কে দমায় তারে!

আরে! কাঁদো কেনো? হাহাকার কেনো?
সময়ের ধন-মানের সাথে লক্ষ্য জড়াও কেনো?
লক্ষ্যে অটুট থেকে কাজে নেমে পড়
ছোট কাজ বড় কাজ—
সময় বলে দেবে কে ছোট কে বড়
সততা আর উদ্দেশ্য ঠিক থাকে যার
পৃথবীটা থাকে হাতের মুঠোয় তার।

যা আছে কাছে তাই সাথে নিয়ে
যে বয়স আছে তাই সাথে নিয়ে
লক্ষ্যে অটুট থেকে কাজে নেমে পড়
আসুক যতোই ঘুর্ণিপাকের ঘুর্ণিঝড়
লক্ষ্যে যে অটল কে দমায় তারে
ধন-মান বহুগুণে আসে ফিরে ফিরে।
যা আসে আসুক – যা যাবার যাক
এ জীবনে যা কিছু হবার তা হোক
অলক্ষ্যে জীবন-লক্ষ্য না হারাক।

আজও বাংলার শেকড় কাটে

আবারো বাংলার মাটিতে
লুকিয়ে আছে মীরজাফরের দল
আজও বাংলার মাটিতে
জানান দেয় খন্দকার মোস্তাকের দল
আজও বাংলার মাটি কাটে, আকাশ কাটে, বাতাস কাটে
পাখির গান কাটে, ফুলের গাছ কাটে, বাংলার শেকড় কাটে ঘুণপোকার দল।

বাংলার শেকড় কাটে; শব্দ শোনা যায়
দেখা যায় না, ধরা যায় না,
আজও বাংলার শেকড় কাটে ঘুণপোকার দল
আজও বাঙালির শেকড় কাটে নেঙটি ইঁদুরের দল।

আজও জীবন্ত মানুষের মাংস ছিঁড়ে খায় সেই পুরনো শকুনের দল
আজও দলবেঁধে মানুষকে কামড়ায় সেই বিষাক্ত বিচ্ছুর দল
আজও মানুষের রক্ত শুষে নেয় সেই কালো জোঁকের দল
আজও জীবন্ত মানুষকে খুবলে খুবলে খায় সেই হায়েনার দল।

শেকড় কাটার শব্দ শোনা যায়
তাজা রক্তের গন্ধ বাতাসে ভেসে ওঠে
মানুষের মৃত্যু যন্ত্রণার আর্তনাদ শোনা যায়
মা-বোনের সম্ভ্রম হারানোর বোবা-কান্না গোঙানির শব্দ শোনা যায়
আজও বাংলাদেশে বিশ্বাসঘাতকদের আনাগোনার শব্দ শোনা যায়।

প্রিয় বাংলাদেশ! প্রিয় বাংলা মা!
তুমি জেগে ওঠো-
তোমার মতো শক্তিমন্ত আর কে আছে?
তুমি দুর্দম! তুমি ভূমিকম্প! তুমি সুনামি
আঘাত করো – নির্মূল করো ঘুণপোকা
দাবানল হয়ে পুড়িয়ে মারো হায়েনা আর বিচ্ছুর দল
অগ্নিবৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ো – বজ্র হয়ে ভস্ম করো শকুনের দল
প্রচন্ড সাহসে ক্ষিপ্র আক্রোশে তীব্র হাতে দমন করো বিশ্বাসঘাতকের দল
পবিত্র করো লাখো শহীদের রক্তে ভেজা বাংলার পুণ্য মাটি।

শ্বেত শব্দ

মিটলো না ভালোবেসে আশা মিটলো না
বড় কষ্ট রয়ে গেলো তুমি আসলে না
জানলো না কেউ এই প্রেম জানলো না
মনে হয় তুমি ছাড়া আর কোনো নারী নেই যেনো
হায়! জগতে মানব জীবন এতোটা ছোট কেনো!

অক্ষরবৃত্তঃ ৮ + ৬ = ১৪ / ৮ + ৬ + ৪ = ১৮

ঝিনুক

মুখ খুলোনা ঝিনুক মুখ খুলোনা
বুকের ভেতর বিষের জমাট আরতো সহে না
তবুও সয়ে যাও ঝিনুক তবুও সয়ে যাও
সয়ে সয়েই ধীরে ধীরে বিষকে মুক্তা বানাও।

মুখ খুলোনা ঝিনুক মুখ খুলোনা
অসহ্য যাতনা বিষের জ্বালা আরতো সহে না
তবুও সয়ে যাও ঝিনুক তবুও সয়ে যাও
মুখ বুজে কষ্ট চেপে বিষকে মুক্তা বানাও।

মাত্রাবৃত্তঃ ৫ মাত্রার চাল।

ভালোবাসার স্পর্ধা

তোমার কাছে আমার পাওনা আছে
১৪৬০ দিনের ভালোবাসা।

তোমার মতো
এক মহানুভব
এক বিনয়ী
এক উঁচু শ্রেণীর মহীয়সী নারীকে
আমার মতো সাধারণ
এবং অতিসাধারণ এক মানুষ
কী করে স্পর্ধা পায় ভালোবাসতে?

আমি তোমার নাম বলবো না
তাতে তুমি যদি হাসো
কিংবা বিরক্ত হও
কিন্তু তুমি জানো
কুড়ে কুড়ে
ধুকে ধুকে
তিলে তিলে
নিঃশেষ হওয়ার জন্য
ভালোবাসার যন্ত্রণা
এক ভয়ংকর
এক মারাত্বক অসুখ।

তুমি জানো,
তোমাকে ভালোবাসার অধিকার আমার নেই
আমার এই স্পর্ধাকে আঘাত করো
এই নাও চাবুক
শিকলে বাধো
আঘাত করো তোমার নিজ হাতে
যতক্ষণ না আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি
আঘাত করো তোমার নিজ হাতে
যতক্ষণ না এই স্পর্ধা অবদমিত হয়
যতক্ষণ না তোমার প্রতি ভালোবাসা স্তিমিত হয়।

বাধো শেকলে
আঘাত করো
যতক্ষণ না জ্ঞান হারিয়ে ফেলি
যতক্ষণ না ভালোবাসা স্তিমিত হয়
অতঃপর বিতাড়িত করো
ঢাকা থেকে
দেশ থেকে
আঘাত করো
আঘাত করো
নিজ হাতে
চাবুক দিয়ে
আর কেউ যেনো এমন ভালোবাসার স্পর্ধা না পায়।

অক্ষর জীবন্ত হয়ে ওঠে

জাতিসত্তার কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার প্রতি নিবেদিত কবিতাঃ
অক্ষর জীবন্ত হয়ে ওঠে

কবিরা কবিতা লিখেন
হাতে কলমে কাগজে
কিংবা টাইপ করেন।
অতঃপর,
সেগুলো কাব্যগ্রন্থ হলে
দেখা দেয় ছাপার অক্ষরে
অক্ষরে অক্ষরে শব্দের বুনন
শুরু হয় শব্দ শব্দ খেলার লগন
মাঝে মধ্যে কিছু অক্ষরে হয় প্রাণের সঞ্চার
অক্ষর হয়ে ওঠে জীবন্ত, উদ্ভাস কথা বলবার।

জেগে ওঠে
সাগর মহাসাগর মহাকাশ মহাবিশ্বের অবুঝ ভাষা
জেগে ওঠে
আশা নিরাশা হতাশার মাঝে এক বিন্দু ভালোবাসা।

“এই, তুমি কী মনে করো আমি কিছুই বুঝি না?
এমন ভাব দেখাও যেনো একটুও ভালোবাস না!”

জেগে ওঠে
দর্শন বিজ্ঞান গনিত পদার্থ অপদার্থের আবিষ্কার
দুঃখ কষ্ট অর্থ সামর্থ্য সৌম্য বৈষম্যের অদ্ভুত সংসার
জন্ম মৃত্যুর এই পৃথিবী যে শুধুই গোলকধাঁধাঁর!

নারী পুরুষের মিশ্র মিষ্টি কণ্ঠে
শুদ্ধ উচ্চারণের নিপুণ ছন্দে
আজ যখন প্রতিধ্বনিত হয়ে উঠলো
কবির কবিতার অক্ষরগুলো
স্বননের সমস্বরে উচ্চারিত হয়ে উঠলোঃ

“রোদ্দুরে নিয়েছি আর বৃষ্টিতে বেড়েছি
সহস্র শতাব্দী দিয়ে নিজেকে গড়েছি
আমরা তামাটে জাতি, আমরা এসেছি।”

প্রতিটি অক্ষরে যেনো পেলাম প্রাণের স্পন্দন
ছাপিয়ে গেলো অতীত ভবিষ্যতের সব ক্রন্দন
কণ্ঠ থেকে প্রতিটি অক্ষর নিলো তার নিজস্ব আকার
সময় এলো নিজেকে সময়ের গভীরে হারাবার
অ – আ – ক – খ…..
সমস্ত অক্ষর সশরীরে চোখের সামনে এখন আমার
আমি হারিয়ে গেলাম সময়ের কালে
হারিয়ে গেলাম ১৯৫২ সালে
জীবনের জন্য অক্ষর
জীবন ত্যাগের অক্ষর
রক্তিম অক্ষর
বাংলা অক্ষর
বংগের অক্ষর
ভাষার অক্ষর…..

মুহূর্তেই সজাগ হলাম আবার কবিতার শব্দে,

“আমরা তামাটে জাতি, আমরা এসেছি।”

হ্যাঁ,
আমরা তামাটে জাতি
আমরা এসেছি
আমরা বাঙালি জাতি
আমরা আবির্ভূত হয়েছি
বিশ্ব জয় করতে
না,
যুদ্ধ দিয়ে নয়
বাংলার বাংলা অক্ষরের ভালোবাসা দিয়ে
বাংলার বাংলা অক্ষরের কবিতা দিয়ে
আমরা তামাটে জাতি
আমরা বাঙালি জাতি
আজ আবির্ভূত হয়েছি
বিশ্ব জয় করতে।

প্রতিদিন প্রয়োজন পাঁচশ পঞ্চাশ লিটার

পৃথিবীর ফুসফুস আজ পুড়ে যাচ্ছে
মাছ গাছ প্রাণীর কয়লা
পড়ে আছে এখানে সেখানে
সব কয়লাই কালো মনে হচ্ছে।

এমাজনে আজ, সিংহ হরিণ ধরছে না
বাঘে মহিষে লড়াই চলছে না
বাঘ, মহিষ, সাপ ব্যাঙ, সিংহ, হরিণ
আজ তাদের চেহারা বড়ই মলিন
হুঙ্কার নেই
হিংস্রতা নেই
একসাথে বসে আছে সবাই
চারিদিকে আগুয়ের দাবানল
বিভীষিকাময় ধোঁয়ার অন্ধকার
কেউ কী নেই আজ ওদের বাঁচাবার?

ওরা মারা যাক !
সব গাছ পুড়ে যাক!
কার কী আসে যায়?
আমরা এখন ব্যস্ত হয়েছি এ, ওকে দোষারোপ করবার
আর হিসেব করছি কত খরচ হবে আগুন নেভাবার !

অথচ কেন আমরা হিসেব করছি না
নিজেদের বাঁচাবার?
কেন আমরা বানাচ্ছি না
মানুষের জন্য পিঠে বেধে রাখবার
লিকুইড অক্সিজেনের কনটেইনার?

চলে এসেছে সেই সময় এইবার হিসেব করবার
একজন মানুষের প্রতিদিন প্রয়োজন ৫৫০ লিটার
তাহলে সাতশ কোটি মানুষের জন্য কত দরকার?

ওই যে, আকাশের ওই নীল রং?
ওটাইতো ওজন স্তর!
ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাচ্ছে
আস্তে আস্তে ওই নীল,
নীলাম্বরী,
নীল শাড়ি,
নীলিমা !
ওহ !
আমার নীলিমা?
আমার নীলিমা কোথায়?
নীলিমা তুমি কোথায়?

সেই যে কবে দেখেছিলাম তোমাকে,
নীল শাড়ির আঁচলে ঢেকে
বলেছিলে আমাকে,
চলো না হারিয়ে যাই সেখানে
আকাশের নীল রং মিশে গেছে যেখানে
নীল সমুদ্রের উজ্জ্বল নীল জলের মাঝখানে !

অর্ধেক তার প্রাপ্য তোমার

প্রিয় বঙ্গমাতা,

এই বঙ্গোপসাগরের তীরে
এই বঙ্গদেশ বিনির্মাণে
বঙ্গবন্ধুর তীব্র আন্দোলনে
সুদৃঢ় বজ্রকণ্ঠে, আদর্শে, চিন্তা-চেতনায়
তুমিই যে ছিলে তাঁর সংগ্রামের অনুপ্রেরণায়
আজ তা আমরা জেনে গেছি।

এই বঙ্গের জন্য
কারাবরণের চিহ্ন
জাতির পিতার
বাইশ বার।

কতবার যে তুমি জেল গেটে গিয়েছো
প্রতিবার যে রুল টানা কাগজ নিয়েছো
বারবার যে বঙ্গবন্ধুকে লিখতে বলেছো
আজ তা আমরা সবাই জেনে গেছি
তাইতো আজ আমরা দুটো বই পেয়েছি
কারাগারের রোজনামচা পড়েছি
অসমাপ্ত আত্নজীবনী পড়েছি
আমরা সত্য জেনে গেছি।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার কারণে
উত্তাল জনসমুদ্র যখন পূর্ব পাকিস্তানে
লাহোর গোলটেবিল বৈঠকে
ডেকেছিলো যখন বঙ্গবন্ধুকে
একমাত্র তুমিই বুঝতে পেরেছিলে
ষড়যন্ত্রের সবকটি যন্ত্র যাবে বিফলে
নিষেধ করেছিলে বঙ্গবন্ধুকে
যেওনা ওই গোলটেবিল বৈঠকে।

অতঃপর !
অতঃপর এলো সেই ৭ই মার্চ
বজ্রকণ্ঠে কেঁপে উঠলো পৃথিবী
“ভালো হবে না
সাত কোটি মানুষকে
দাবায় রাখতে পারবা না
তোমাদের যে কিছু আছে
তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো
এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশা আল্লাহ”

তারপরের ইতিহাসও আমরা জেনে গেছি
আলোকিত স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়ে গেছি।

প্রিয় বঙ্গমাতা,

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি,
অর্ধেক তার
প্রাপ্য তোমার
নয় শুধু তা হয়ে
বঙ্গবন্ধুর অর্ধাঙ্গিনী।

তোমার দূরদৃষ্টি
নিবিড় অন্তর্দৃষ্টি
প্রখর দূরদর্শিতা
অসম সাহসিকতা
দেখেছি আমরা
এই বঙ্গোপসাগরের তীরে
এই বঙ্গদেশ বিনির্মাণে
বঙ্গবন্ধুর তীব্র আন্দোলনে
সুদৃঢ় বজ্রকণ্ঠে, আদর্শে, চিন্তা-চেতনায়
তুমিই যে ছিলে তাঁর সংগ্রামের অনুপ্রেরণায়
যা এনে দিয়েছে তোমায় এই সম্মান
নয় শুধু হয়ে তা বঙ্গবন্ধুর অর্ধাঙ্গিনী।

.
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব: জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি ও নিবেদিত কবিতা।

দ্রুত গবেষণায় নেমে পড়ুন

মা, বাবা, ভাই, বোন, চাচা, ফুপু, মামা ইত্যাদি মিলিয়ে আপনার একান্নবর্তী পরিবার। এর মধ্যে এক ভাই ডাক্তার এবং ওনার দায়িত্ব হচ্ছে পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসা করা। আর দুই ভাই এর দায়িত্ব পরিবারের রক্ষণাবেক্ষণ।

এখন ফেব্রুয়ারি মাসে ওই ডাক্তার ভাইয়ের চেম্বারে লোকজন এসে বলে গেল এই বছর কিন্তু ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বরের প্রকোপ বেশি হবে।

যে দুই ভাই পরিবার রক্ষণাবেক্ষণ এর দায়িত্বে আছেন ওনারা শুনলেন এবং তারা জানেন যে ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বর হলে কী ওষুধপাতি লাগে। অতীতে অনেকবার এই জ্বর ওই দুই ভাইয়ের দেয়া ওষুধে পরিবারের প্রত্যেকেই সুস্থ হয়েছে যাদের ইনফ্লুয়েঞ্জা হয়েছিলো।

ওই ডাক্তার ভাইয়ের চেম্বারের লোকজনের কথা অনুযায়ী মে মাস থেকে ওই পরিবারে জ্বর শুরু হলো। রক্ষণাবেক্ষণে থাকা দুই ভাই যে ওষুধগুলো এনে মজুদ করে রেখেছিলো সেগুলো খাওয়াতে শুরু করলো এবং নিশ্চিত যে পরিবারের ওই সদস্য সুস্থ হয়ে উঠবে অথচ অসুস্থ পরিবারের সদস্যটি ২ দিন পর মারা গেলো। তখন ওই দুই ভাই ভাবতে লাগলো বোধহয় ওষুধের ডোজ কম হয়েছিলো। ইতোমধ্যে পরিবারের ৫১ জনের মধ্যে ১০ জন ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বরে অসুস্থ হয়ে পড়লো মাত্র ৩ দিনের মাথায়। দুই ভাই চিন্তিত হয়ে পড়লো। কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না। কেউ বলছে ওষুধের ডোজ বাড়িয়ে দাও। কেউ বলছে আমড়া, কামরাঙা, আনারস, জলপাই, চালতা, করমচা নিয়ে এসো। ওষুধের ডোজ বাড়িয়ে খাওয়ানো হলো কয়েকজন কে কিন্তু অসুস্থদের কেউ চেয়ার থেকে হঠাত মেঝেতে পড়ে গিয়ে মারা গেলো, কেউ আকস্মিক বমি করতে করতে মারা গেলো, কারও কারও মুখ থেকে রক্ত বেরিয়ে এসে মারা গেল।

ওই দুই ভাই এবং ডাক্তার ভাইয়ের মাথা কাজ করছে না। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা ক্ষেপে গিয়েছে। দুই ভাই এবং ডাক্তার ভাই এমন অপ্রস্তুত এবং ভয়ানক পরিস্থিতিতে কী বলতে কী বলছে কিছুই বুঝতে পারছে না।
আশেপাশের পরিবারের একই অবস্থা।
একটু দূরের একটি পরিবার ইতোমধ্যেই মহামারি ঘোষণা করেছে কারণ সেটাও একান্নবর্তী পরিবার কিন্তু ওই পরিবারের অলরেডি ১৫ জন মারা গেছে।

এমতাবস্থায় একটি বিশ্বস্ত সুত্রে জানা গেলো, ইনফ্লুয়েঞ্জা এখন আর আগের ওষুধে ভালো হবে না।
কেন?
– ইনফ্লুয়েঞ্জা নিজেই তার চরিত্র পালটে বিপজ্জনক একটি ভাইরাসে পরিনত হয়েছে।
সবাই থমকে গেল, বললো এমন কথাতো আগে শুনিনি, এমনকি চিন্তা ভাবনাতেও আসেনি।
– তাহলে কী করবো?
– প্রথম কাজ হচ্ছে এই ভয়ংকর ভাইরাস নিধনের জন্য কার্যকরী কী ওষুধ আছে তা নির্ণয় করতে হবে।
– তারপর?
– পরিবারের সবাইকে আতংকিত না হওয়ার জন্য অভয় দিন।
– আর?
– ওইসব ওষুধ আর না দিয়ে বিশ্রামে থাকতে বলুন।
– আর কী করবো?
– দ্রুত কার্যকরী ওষুধ নিয়ে আসুন।
এরপর দুইভাই কোথায় কার্যকরী ওষুধ পাওয়া যাবে তা খুঁজতে লাগলো এবং পেয়েও গেলো কিন্তু এখন ভয় কাজ করছে অন্য জায়গায় আর সেটা হচ্ছে যেহেতু এটা নতুন ওষুধ তাই এর কার্যকারিতা এবং ডোজ পরীক্ষা করে না দিলে যদি পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হয়? তাই ওই দুই ভাই আবার সেই বিশ্বস্ত সূত্রের কাছে গিয়ে জানতে চাইলে, এখন কী করবো?
– ওষুধের কার্যকারিতা এবং ডোজ পরীক্ষা করুন।
– তারপর?
– কার্যকারিতা এবং ডোজ এর ফলাফল ইতিবাচক হলে ওষুধ প্রয়োগ করুন।
– জ্বী ঠিক আছে।
– আর একটি কথা শুনে রাখুন।
– জ্বী বলুন।
– ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ে দ্রুত একটি গবেষণা ইন্সটিটিউট প্রস্তুত করুন।
– কেন?
– পরের বছর ইনফ্লুয়েঞ্জার ভাইরাস আরও ভয়ানক হয়ে আসতে পারে, ব্ল্যাক ভাইরাস, ইয়োলো ভাইরাস, লাল-কালো ডোরাকাটা ভাইরাস, এক ঘন্টায় খেল খতম।
– ও মাই গড! কেন এমন হচ্ছে ভাই?
– প্রকৃতির কিছু কিছু বিষয়ের কোনও ব্যাখ্যা নেই।
– ও
– তবে দ্রুত গবেষণায় নেমে পড়ুন।
– জ্বী, ঠিক আছে।

আমাদের খোলা চিঠিঃ ১ জুলাই ২০১৬ ইং

প্রিয় বাবা!
তুমি কী শুনতে পাচ্ছো?
তোমার মেয়ে তিরিশি জৈন আটকা পড়ে আছে জঙ্গিদের হাতে
আমি কী আর কখনো তোমাকে বাবা বলে ডাকতে পারবো?

আমরা আবিন্তা, ফারাজ এবং ইশরাত বলছি,
ওরা আমাদের সমস্ত শরীরে ছুরি বসিয়েছে অনবরত
একজন বলছে, যেখানে নড়ে সেখানে ছুরি মার,
বাংলার ১৬ কোটি মানুষ, আপনারা কী শুনতে পাচ্ছেন?
কোটি কোটি মানুষের মাঝে আমাদের হত্যা করা হচ্ছে।

আমরা মারিয়া, সিমোনা এবং মারকো বলছি,
আমরা গুলিবিদ্ধ ! রক্তাক্ত !!
ইতালির প্রেসিডেন্ট সাহেব, আপনি কী শুনতে পাচ্ছেন?
আমি সিনোমা মন্টি বলছি,
আমি গুলিবিদ্ধ কিন্তু আমার গর্ভে ৭ মাসের সন্তানটি এখনো জীবিত আছে,
পেটের ভেতর ও নড়ছে, ওর ক্ষুধা পেয়েছে, ওকে বাঁচান ! অন্তত ওকে বাঁচান !!

আমরা নাদিয়া, আদেলে এবং রোজি বলছি,
আমাদের বুক গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিয়েছে
তারপর !
তারপর আমাদের গলা কেটে ফেলেছে কিন্তু কয়েকটা রগ কাটতে পারে নি,
প্রিয় প্রেসিডেন্ট সাহেব,
আমাদের সন্তানেরা যেন অশ্রুর রঙ আর রক্তের রঙের মিশ্রণ না দ্যাখে,
তার অনুরোধ জানিয়ে গেলাম,
এ রঙ সহ্য করার মতো চোখ মানুষের নেই।

আমরা কাপেল্লি, ভিনসেনজো এবং বিরোলি বলছি,
গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর বাড়িটি
আজ অন্যান্ন দিনের মতো নয়,
এখন পুরো ফ্লোরে ২ ইঞ্চি রক্তের প্রলেপ
একটু আগে আমাদের সমস্ত শরীর বিষাক্ত বেয়োনেট দিয়ে
ক্ষত বিক্ষত করা হচ্ছিল – এখন ! এখন আমরা……

আমরা তানাকা, ওগাসাওয়ারা, শাকাই, কুরুসাকি,ওকামুরা
শিমুধুইরা এবং হাশিমাতো বলছি,
জাপানের প্রিয় সম্রাট মহোদয়, আপনি কী শুনতে পাচ্ছেন?
ওরা মুসলিম নয়, ওরা জঙ্গি, ওরা পবিত্র রমযান মাসের
ইফতারির সময় আমাদের গুলি করলো !
তারপরও তলোয়ার এখনো আঘাত করে ছলেছে !!
জঙ্গি নির্মূলের জন্য একটি বড় অঙ্কের টাকা বরাদ্দ রাখার অনুরোধ রেখে গেলাম,
আমাদের সন্তানদের বলে দিয়েন, বেশি দূরে নয়, ওই বাংলার আকাশেই আমরা আছি !

আমরা ওসি সালাহউদ্দিন এবং রবিউল বলছি,
মহামান্য আদালত, আপনি কী শুনতে পাচ্ছেন?
যেসব জঙ্গি গ্রেপ্তার হবে তারা যেন কারাগার থেকে বের হতে না পারে,
প্রিয় আই ই জি স্যার, আপনি কী শুনতে পাচ্ছেন?
জঙ্গিদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী রেখে গেলাম
আমরা মৃত্যু পথযাত্রী আপনার অনুগত অফিসার।

মুসলিম ( বিশ্বাসীদের) বলছিঃ

বিজয় টিভিতে দেখলাম লিটন দেওয়ান চিশতী নাকি যে কোনও মানুষের চেহারা দেখে ভবিষ্যত বলে দিতে পারে। অথচ পবিত্র কোরান এ আল্লাহ বলেছেন ভবিষ্যত শুধু তাঁর জ্ঞানে আছে।

“আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহর কাছেই রয়েছে। [সূরা ১৬ /নাহল – ৭৭]”

উক্ত লিটন দেওয়ান নাকি এমন আধ্যাত্মিক শক্তির অধিকারী যে উনি যে পাথর দিবেন তা দিয়ে যে কেউ কোটিপতি হয়ে যাবেন কয়েক দিনের মধ্যে এবং এও বলেন যে নবী (সাঃ) নাকি আকিক পাথরের আংটি পড়তেন।

আসুন দেখি সহীহ হাদিস কী বলে?

১) আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাঃ) রূপার আংটি ব্যবহার করতেন। আর তার আংটিতে আবিসিনীয় পাথর বসানো ছিল। (৭১])আবু দাউদ, হা/৪২১৮

২) ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সঃ) একটি রৌপ্যের আংটি তৈরি করেছিলেন। তিনি তা দ্বারা (চিঠিপত্রে) সীল মারতেন, তবে তিনি (সচরাচর) তা পরিধান করতেন না। [৭২] নাসাই, হা/৫২১৮; মুসনাদে আহমদ, হা/৫৩৬৬।

৩) আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন অনারব রাজা-বাদশাহদের কাছে দাওয়াতপত্র প্রেরণের সংকল্প (ইচ্ছা) করেন তখন তাকে জানিয়ে দেয়া হয় যে, তারা সীল ছাড়া চিঠি গ্রহণ করে না। তাই তিনি একটি আংটি তৈরি করান। তার হাতের নিচে রাখা আংটিটির ঔজ্জ্ব্বল যেন আজও আমার চোখের সামনে ভাসছে। [৭৩]সহীহ মুসলিম, হা/৫৬০২; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হা/৩০৭৫

৪) আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আংটিতে ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ অংকিত ছিল। ‘মুহাম্মাদ’ এক লাইনে, ‘রাসূল’ এক লাইনে এবং ‘আল্লাহ’ এক লাইনে। [১] সহীহ বুখারী, হা/৫৮৭৮; ইবনে হিব্বান, হা/১৪১৪

এখানে ৪ টি সহিহ হাদিস এর মধ্যে প্রথম হাদিস এ দেখা যায় তিনি রুপার আংটিতে আবিসিনীয় পাথর লাগিয়ে ছিলেন কিন্তু পরের ৩ টি সহিহ হাদিস বলা আছে নবী (সাঃ) রুপার আংটি ব্যবহার করতেন।

কিন্তু হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) রুপার যে আংটি ব্যবহার করতেন সেই আংটিতে লেখা ছিল “মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” এবং যেহেতু তিনি অক্ষর জ্ঞান হীন ছিলেন তাই কারও কাছে ইসলামের আহবান করার জন্য চিঠি লিখতে জানে এমন সাহাবীকে দিয়ে ইসলামের আহবান লিখাতেন এবং নবী (সাঃ) ওই চিঠিতে নিজের নাম এবং তিনি রাসুল – তা ওই আংটি দিয়ে সীল মারতেন।

কোনও সহিহ হাদিসেই এমন বর্ণনা নেই যে তিনি পাথরের আংটি ব্যবহার করে নিজে এবং মানুষকে কোটিপতি করেছেন। লিটন দেওয়ান নামক এই লোকটি নিজেও শিরক করছে এবং অনেক মানুষকে শিরক করাচ্ছে। আল্লাহ পবিত্র কোরান এ ঘোষণা করেছেন, জেনে শুনে শিরক করলে তওবা করলেও তা মাফ করবেন না।

প্রথম মারাত্মক শিরক যেটা করছে সেটা তিনি নিজেকে আল্লাহর সমকক্ষ বলছেন, অর্থাৎ আল্লাহ সুরা নাহলে বলছেন, অদৃশ্যের জ্ঞান শুধু আল্লাহর কাছে আছে, আর লিটন দেওয়ানও বলছে অদৃশ্যের জ্ঞান অর্থাৎ সে ভবিষ্যত বলে দিতে পারে।

দ্বিতীয় শিরক করছে, নবী (সাঃ) রুপার আংটি ব্যবহার করতেন সীল মারার জন্য আর লিটন দেওয়ান বলছে সে পাথরের আংটি দিয়ে মানুষের দুঃখ, দুর্দশা কাটিয়ে দ্রুত মানুষকে কোটিপতি করে দিতে পারে। এর মানে আল্লাহ ওই দুঃখ, দুর্দশা কাটিয়ে দ্রুত মানুষকে কোটিপতি করতে পারে না কিন্তু তার ওই পাথর এগুলো পারে।

লিটন দেওয়ান সাহেবকে বলছি, ধর্মের নামে মানুষকে শিরক এর পথে নেয়ার স্পর্ধা আপনার আসলো কোথা থেকে? আপনি এতো আধ্যাত্মিক শক্তিধর হয়ে থাকলে আপনার দশ আংগুলে দশটি পাথর পড়ে থাকলেই তো প্রতিদিন আকাশ থেকে দশ বস্তা টাকা আপনার ঘরে চলে আসবে। আপনি অযথা ধর্মের নামে পাথর বেচার ধান্দাবাজি বন্ধ করুন।

এভাবে মানুষকে শিরক করাবেন না। আলেম সমাজ হয়তো আপনাকে কিছু বলতে পারে না আপনার পেশী শক্তির ভয়ে কিন্তু আমার মতে একজন সচেতন মুসলিম হিসেবে আমি এই শিরক কাজের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আর মানুষকে ধোঁকা দেয়ার বা বাটপারির যে রাষ্ট্রিয় আইন আছে সেই আইনের আওতায় আপনাকে আনা হতে পারে।

গড ফাদারের কাছে আসিস না

আমি গড ফাদার (অগ্নি সন্ত্রাস) বলছিঃ
ওই কবিরা,
তোরা এখনো থামলি না !
পুরান ঢাকার মার্কেটে
ডি এন সি সি এর মার্কেটে
এফ আর টাওয়ার ভবনে
নুসরাতের জীবন্ত জীবনে
মার্কেটে ভবনে মানব জীবনে
দেখিস নি কী করে পুড়েছে আগুনে?
ওই কবিরা তোরা কী এখনো থামবি না?

আমি গডফাদার (সড়ক সন্ত্রাস) বলছিঃ
ওই কবিরা,
তোরা দেখছিস না !
কত মানুষের বুকের ওপর দিয়ে
বাস ট্রাক চালিয়ে দিয়েছি !
আর কোনও কবিতা যদি লিখিস
মাদক, ধর্ষন, ঘুস, দুর্নীতি, সন্ত্রাস নিয়ে
বাস রাস্তা থেকে মাঠে ফেলে দিয়ে
ব্রিজ থেকে নদীতে উলটে ফেলে দিয়ে
কী করে পালিয়ে যেতে হয়
আমার ড্রাইভার’রা ট্রেনিং প্রাপ্ত জেনে রাখিস,
তোরা কবিরা,
রাস্তায় বেরলেই আচমকা একটি বাস এসে
হাড় হাড্ডি মাংস মাটির সাথে দেবে পিষে।

আমি গড ফাদার (রাম দা-ছুরি) বলছিঃ
বরগুনায় রিফাতকে প্রকাশ্য দিবালোকে
রাম দা’র কোপানো দেখেও তোদের হুঁশ হলো না?
দ্যাখ, কুমিল্লায় আদালতের ভেতর ছুরি বসিয়েছি,
এরপর?
সব অফিসের নীল নক্সা করা আছে
এরপর থানায় কর্তব্যরত ওসিকে ছুরি বসাবো
পুলিশ সুপারের কার্যালয়
ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়
এসি ল্যন্ডের কার্যালয়
সি আই ডি, ডিবি, ডিজিএফআই এর কার্যালয়
ক্যান্টনমেন্টের আর্মি চিফ এর কার্যালয়
হাই কোর্ট, সুপ্রিম কোর্টের বিচারালয়
গণভবন, বঙ্গভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়
তারপর?
সংসদের ভেতরে সব সাংসদের অশ্রুর সাথে রক্ত
মিশে হবে এক অদ্ভুত রঙের খেলা
ওই কবিরা,
এখনো সময় আছে
থামা তোদের ভালো মানুষীর ছলা কলা।

আমি গড ফাদার (সমন্বয়ক) বলছিঃ
চ্যালা, পুটি, মলা, ঢ্যালা ধরতে চাইলে ধর
মানুষ দেখা তোরাও জানিস ধর-পাকড়
কিন্তু ভুলেও গড ফাদারের কাছে আসিস না
তাহলে কী ঘটবে তা জানতেও পারবি না
আমি গড ফাদার (সমন্বয়ক) বলছি।

ওই কবিরা,
আমার মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ে আর কিছু লিখবি না
ধর্ষকদের দু-পায়ের মাঝের অংশ কাটার কথা লিখবি না
সন্ত্রাসী কর্মকান্ড নিয়ে আর কিছুই লিখবি না
দূর্নীতি নিয়ে লেখার আগে কলম আর খুঁজেই পাবি না
অগ্নি সন্ত্রাস, রাম দা, ছুরি সন্ত্রাস শুধু দেখেছিস
পাখির মতো মানুষ মারা কী দেখেছিস?
আমাদের সাথে ১০০ জঙ্গি বাহিনী আছে
ট্যাংক, কামান, পারমাণবিক অস্ত্র ছুড়তে জানে
এই জঙ্গিরা কমান্ডোদের ট্রেইনার
তোরা কবিরা বাড়াবাড়ি করিস না আর
আমি গড ফাদার ((সমন্বয়ক) বলছি,
জাতীয় পতাকার পুরোটাই লাল করে দেবো
বাংলার সব সবুজ ঘাস রক্তাক্ত করে দেবো
বঙ্গোপসাগরের পানির রঙ লাল করে দেবো।