ইলহাম এর সকল পোস্ট

কোড

কোড

এক লোক দৌড়াতে দৌড়াতে এসে থানায় ঢুকতেই গেটের সেন্ট্রি থামিয়ে জানতে চাইলো, কার কাছে যাবেন? লোকটি হাঁপাতে লাগলো কিন্তু মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না। তখন সেন্ট্রি বললো, খাতায় এন্ট্রি করে যান। কিন্তু লোকটি এন্ট্রি না করেই ভেতরে ওসি সাহেব… ওসি সাহেব বলতে বলতে এক দৌড়ে ওসি সাহেবের রুমে ঢুকে গেল। তারপর আবার হাঁপাতে লাগলো। ওসি সাহেব উনাকে বসতে বললেন এবং জানতে চাইলেন, কী হয়েছে?

লোকটি হাঁপাতে হাঁপাতে অনেক কষ্টে বললো, ওসি সাহেব, আমি গত ছয় মাস যাবত ঘুমাতে পারি না। ওসি সাহেব কলিং বেল চেপে এক কনষ্টেবলকে ডেকে একটা ওরাল স্যালাইন এনে পরিমাণ মতো পানিতে মিশিয়ে উনাকে দিতে বললেন। কনষ্টেবল ওরাল স্যালাইনের একটি গ্লাস দিয়ে চলে গেল। কিন্তু লোকটি আবারও বললো, ওসি সাহেব, বিশ্বাস করেন আমি ছয় মাস যাবত ঘুমাতে পারছি না।

ওসি সাহেব বললেন, আপনার সমস্ত শরীর ঘামে ভিজে গেছে আর এখন প্রচন্ড গরম পড়েছে, আগে স্যালাইনটা খান, ফ্যানের বাতাসে একটু স্বাভাবিক হোন তারপর শুনছি আপনার কি হয়েছে। লোকটি স্যালাইন টুকু ঢক ঢক করে গিলে ফ্যানের বাতাসে বসে আছে। ওসি সাহেব একটি পত্রিকা বের করে জানতে চাইলেন, এই পত্রিকার নাম কী? লোকটি নাম বলে দিলো।

এবার ওসি সাহেব অন্য একটি পত্রিকা বের করে সেটার নাম জানতে চাইলে লোকটি সেটার নামও বলে দিলো। এরপর ওসি সাহেব একটি ইংরেজি পত্রিকা বের করে সেটার নাম জানতে চাইলে তাও ওই লোকটি বলে দিলো। তারপর ওসি সাহেব বললেন, দেখুন, আপনার মেমোরি এবং সেন্স ঠিক আছে তবে আপনি ভুল জায়গায় এসেছেন। লোকটি চিতকার করে বলে উঠলো, স্যার আমি ভুল জায়গায় আসি নি , বুঝে শুনেই এসেছি।

ওসি সাহেব বললেন, আপনি ছ মাস যাবত ঘুমাতে পারচেন না এজন্য ক্লিনিক, হাসপাতাল বা ডাক্তারের কাছে যাবেন, থানায়তো ডাক্তার বসে না, এখানে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অফিসারগণ বসেন। লোকটি বললো, এ জন্যইতো এখানে এসেছি। ওসি সাহেব কি যেন ভাবতে ভাবতে বললেন, বলেনতো আপনার কাহিনী কী?

লোকটি বললো, ওসি সাহেব আমাকে এরেষ্ট করুন। ওসি সাহেব বললেন, সাধারণত এরেষ্ট করতে হলে ওয়ারেন্ট লাগে আর ওয়ারেন্ট বের করতে গেলে মামলা করতে হয়।
– আপনি বাদী আর আমি বিবাদী, আপনি আমার এগেইনষ্টে মামলা করুন।
– কীসের মামলা করবো?
– ২৮টি খুনের মামলা।
– আপনি ২৮ টি খুন করেছেন?
– জ্বী করেছি।
– দেখুন, মামলা আমি করতে পারি কিন্তু তদন্তে যদি আপনার কোনও দোষ না পাওয়া যায়?
– আমি নিজেইতো স্বীকার করছি।
– আপনার মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক আছে কিনা সেটা আগে নিশ্চিত হতে হবে আর আপনি যে খুনি তার স্বাক্ষী প্রমাণ লাগবে।

লোকটি তার পকেট থেকে ২৮ টি ছবি বের করলো।
ওসি সাহেব একটি একটি করে সব ছবি দেখে বললো, আরে! এতো দেখছি সেই প্রফেশনাল কিলারের ছবি এনেছেন যাকে আমরা দীর্ঘ দিন ধরে আটক করার চেষ্টা করেছি। লোকটি বললো, স্যার আমিই সেই প্রফেশনাল কিলার। তারপর লোকটি পকেট থেকে বেশ কিছু পেপার কাটিং বের করে ওসি সাহেব এর কাছে দিলে ওসি সাহেব পেপার কাটিং এর দিকে আর লোকটির মুখের দিকে বেশ কয়েকবার তাকিয়ে বললেন, আপনার লম্বা লম্বা ঝাকড়া চুল কী করে এরকম টাক মাথা বানালেন?
– চুল চেছে ফেলেছি।
– মাথা টাক করলেও তাতে হাত দিলে এক আধটু হাতে বাধে কিন্তু আপনার মাথা দেখে মনে হচ্ছে দশ বছর আগেই আপনার মাথায় টাক পড়েছে, এটা কী করে সম্ভব?
– স্যার এগুলোতো আপনারা ভালোই জানেন, অযথা দেরি না করে আমাকে দ্রুত এরেষ্ট করুন।
– আপনার এই টাক মাথায় এতো তেলতেলে ভাব এলো কী করে? এগুলো মনে হয় স্পা সেন্টারের স্পেশাল ট্রিটমেন্ট, ঠিক না?
– জি ঠিক বলেছেন
– লম্বা লম্বা দাড়ি আর মোচ ক্লিন সেভ করেছেন তা বুঝলাম কিন্তু আপনিতো শ্যামলা টাইপের ছিলেন, এতো ফর্সা হলেন কী করে?
– গত ছয় মাস দিনে তিনবার করে ফেস ওয়াস করেছি এবং পর পরই একটি বিদেশি ক্রিম মেখেছি যার নাম চান্দনি।
– কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে আপনি আপনার ভ্রু দুটোই ক্লিন সেভ করেছেন যা আমি এর আগে কখনো কোনও ক্রিমিনালকে করতে দেখি নি। যাইহোক আপনি ছয় মাস না ঘুমিয়ে স্বাভাবিক আছেন কী করে? আর ঘুমাতে পারেন নি বা কেন?
-স্যার, আমার বাসা ১৮ তলা, প্রতিটি তলার ঘরে ঢুকতে গেলে ৭ টি করে ১০ ইঞ্চি চওড়া স্টিলের দরজা ভাংতে হবে, এভাবে ১৮ তলা পর্যন্ত করা আছে আর প্রতি তলার প্রতিটি দরজায় দশজন করে অস্ত্রধারী আছে যারা আমার প্রটেকশনের জন্য আছে।
– তাই নাকি?
– কিন্তু স্যার এরপরও এতো নিরাপত্তার পরও ১৮ তলায় ঘুমাতে পারি না, ঘুম আসার ঠিক ২ মিনিটের মধ্যেই ঘুম ভেঙে লাফিয়ে উঠি, চারিদিকে ভালো করে দেখি শত্রু আসলো কি না!
– আপনার শত্রু করা?
– আমার শত্রু দুটো, একটি পুলিশ আর অন্যটি আমার এন্ট্রি পার্টি, পুলিশ নিয়ে বেশি চিন্তা করি না কিন্তু আমার এন্ট্রি পার্টি খুব ডেঞ্জারাস।
– পুলিশ নিয়ে আপনার টেনশন নেই কেন?
– পুলিশ এলে আমার বাড়ির চারপাশ ঘেরাও করে রাখবে, মাইকিং করবে তারপর এক সময় দিয়ে ধরে নিয়ে যাবে কিন্তু এন্ট্রি পার্টি মুহুর্মুহু ডিনামাইট নিক্ষেপ করে আমার বাড়ি সহ আমাকে উড়িয়ে দিতে পারে, তাই যখনি ঘুম আসে ঠিক ২ মিনিট পরই ঘুম ভেঙে লাফিয়ে উঠে দেখি এন্ট্রি পার্টি এলো কি না!
– কিন্তু আমরা তো আপনাকে আপনার বাড়িতে অনেক খুঁজেও পাই নি, এমন কি আমাদের ডিটেক্টিভ ব্রাঞ্চও আপনাকে ট্র‍্যাক করতেই পারছে না, এর কারণ কী?
– স্যার গত এক বছর যাবত আমি কোনও স্থানে ২০ মিনিটের বেশি থাকি না।
– কেন?
– আমি কোনও একটি নতুন জায়গায় অবস্থান নিলে আপনাদের বর্তমান ট্র্যাকিং সিস্টেম দিয়ে আমাকে ট্র্যাক করতে ২২ মিনিট সময় লাগে তাই ২০ মিনিট পরই আমি অন্য স্থানে অবস্থান নেই এবং কোনও স্থানেই ২০ মিনিটের বেশি থাকি না।
– শুনুন, আপনি একজন টপ টেরর এবং প্রফেশনাল কিলার, আপনাকে আমরা ভালো করেই চিনি, আপনি যা ভাবছেন তা এখন আর সম্ভব নয়।
– আমি কী ভাবছি স্যার ?
– আপনি জেলখানায় যেতে চাচ্ছেন কারণ ওখানে আপনার এন্ট্রি পার্টির আক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকতে পারবেন।
– জি ঠিকই বলেছেন।
– কিন্তু আপনি জেলখানায় যাওয়ার জন্য মূল যে চিন্তা ভাবনা বা প্ল্যান করছেন তা এই বর্তমান সরকারের সময়ে সম্ভব নয়।
– আমি কী প্ল্যান করেছি? আর এখন কী সম্ভব নয়?
– কোড বুঝেন?
– হ্যাঁ বুঝি।
– কী বলুনতো?
– SWP, KFM
– এগুলো কী?
– SWP হচ্ছে “স্লিপ উইদাউট পিলো” মানে বালিশ ছাড়া ঘুম, KFM হচ্ছে “কিডন্যাপ ফর মানি”।
– আরে রাখেনতো আপনাদের সন্ত্রাসী কোড ফোড!
– তাহলে কোন কোড স্যার ?
– সম্প্রতি বিভিন্ন বিল্ডিংয়ে আগুণ লাগার কারণে এখন অন্যান্য সব বিল্ডিং চেক করা হচ্ছে যে ওই সব বিল্ডিং গুলো বিল্ডিং কোড মেনে বানানো হয়েছে কি না তা আপনি জানেন?
– হ্যাঁ জানি কিন্তু বিল্ডিং কোড কী সেটা বুঝি না।
– ওটা আপনার বুঝার কথা নয়, আমারও বুঝার কথা নয় তবে ইদানীং পত্রিকায় এ বিষয়ে বেশ লেখালেখি হচ্ছে তাই কিছুটা ধারণা হয়েছে।
– বিল্ডিং কোড সম্পর্কে কী পত্রিকায় লেখালেখি হচ্ছে?
– এই ধরুন বিল্ডিং এ পর্যাপ্ত আলো বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকতে হবে, ওই মাটির ওপর বিল্ডিংটির ধারণ ক্ষমতা আছে কি না তা যাচাইয়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং বিল্ডিং নির্মাণের নীতিমালা সহ অন্যান্য তথ্য উপাত্ত থাকে – এই আর কি!
– ও
– শুনুন, বিল্ডিং কোড এর মতো এখন সব জেলখানায়ও চেক করা হচ্ছে যে সেখানে জেইল কোড মেনে যাবতীয় কর্মকাণ্ড করা হচ্ছে কি না।
– তাতে আমার কী?
– আপনি যে এখন জেলে বসে বসে আপনার অনুসারীদের খুন খারাবী, ক্রিমিনাল এক্টিভিটি বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর নির্দেশনা দেয়ার প্ল্যান করছেন তা এখন আর সম্ভব নয়।
– আপনি আমার প্ল্যান বুঝলেন কী করে ওসি সাহেব?
– পুলিশদের অনেক কিছুই বুঝতে হয়, অনেক কিছুই জানতে হয় এবং এমন কোনও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বা ক্রিমিনাল এক্টিভিটি নেই যা পুলিশ দমন করতে পারে না।

আস্থা এবং অবিচল

আস্থা এবং অবিচল

– আপনি আবার কী মনে করে আসলেন?
– একটা প্রশ্নের উত্তর জানতে।
– কী প্রশ্ন?
– মানুষ সৎ কাজ করতে গেলে বাঁধা আসে কেন?
– প্রতিটি শিশুই সৎ হয়ে জন্মায়, বড় হতে হতে অসৎ হওয়ার নানাবিধ কারণ থাকে।
– কারনটা কি ইবলিশ?
– না
– তাহলে কে?
– মানুষ
-মানুষ!
– হ্যাঁ, মানুষ সৎ হয় মানুষের কারণে আবার মানুষ অসৎও হয় মানুষের কারণে, ইবলিশ বা শয়তানের এখানে কোনও তেলেসমাতি নেই।
– কোন মানুষ এগুলো? যাদের কারণে মানুষের সততা এবং অসততা নির্ভর করে?
– কয়েকটি মানুষ মিলে একটি পরিবার, কয়েকটি পরিবার মিলে একটি সমাজ, কয়েকটি সমাজ মিলে একটি জনপদ আর কয়েকটি জনপদ মিলে জনগণ, অতঃপর একটি রাষ্ট্র।
– ও
– এই রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য কিছু মনোনীত মানুষ থাকে যাদের রাষ্ট্র পরিচালক বলে।
– সেটাইতো জানতে চাইছি, সৎ কাজে বাঁধা আসে কেন?
– একটু ভেঙে বলেনতো কী জানতে চান?
– ওই যে বঙ্গপোসাগরের পাড়ে একটি দেশের বর্তমান পরিচালকগণ ওই দেশটি ঠিক করতে চাচ্ছে, অর্থাৎ সৎ কাজ করতে চাচ্ছে কিন্তু বাঁধা আসছে কেন?
– কেমন?
– ওই দেশটির বর্তমান পরিচালকগণ এখন বেশকিছু গঠনমূলক এবং পজিটিভ পদক্ষেপ নিচ্ছে।
– কী পদক্ষেপ?
– এই ধরুন দেশটিতে আইনের সঠিক প্রয়োগ করতে চাইছে এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সংস্কার করতে চাইছে।
– আর?
– দেশটিকে মাদক মুক্ত করতে চাইছে, জঙ্গি তৎপরতা দূর করতে চাইছে, সন্ত্রাস এবং দুর্নীতি দূর করতে চাইছে।
– আর?
– আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং দেশটিকে একটি নিদৃষ্ট সময়ের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করতে চাইছে।
– তাহলে এগুলো ভালো কাজ করছে, দেশপ্রেমিক না হলে এগুলো করা সম্ভব নয়।
– কিন্তু কিছু গোষ্ঠী এগুলো চাইছে না।
– কী করে বুঝলে যে ওই গোষ্ঠী দেশটির উন্নতি চাইছে না?
– কিছুদিন আগে একটি মেয়েকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হলো।
– তো?
– কিন্তু ওই দেশের বর্তমান পরিচালকগণ এই অপরাধের সাথে জড়িত কাউকে ছাড় দিচ্ছে না।
– গুড! এটাইতো হওয়া উচিৎ।
– এমন কি এই অপরাধের সাথে জড়িত আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও আইনের আওতায় আনছে।
– তাহলেতো গুড সিম্পটমস!
– নিজেদের লোক অপরাধে জড়িত থাকলেও ওই দেশের বর্তমান পরিচালকগণ তাদেরও আইনের আওতায় আনছে।
– ওয়াও! ইটস রিয়ালি গুড ইনিশিয়েটিভ।
– ওই অপরাধের সাথে নিজেদের লোক যুক্ত থাকার কারণে ওই দেশের প্রাক্তন পরিচালক তাকে অলরেডি ক্রিমিন্যাল বলেছে এবং সম্ভবত বহিষ্কারও করতে পারে।
– তুমি যা বলছো এভাবে চলতে থাকলে ওই দেশ উন্নত হবে এটা নিশ্চিত।
– কিন্তু কিছু গোষ্ঠী এতোদিন চুপচাপ ছিলো কিন্তু যখনই দেশটির বর্তমান পরিচালকগণ এইসব পজিটিভ পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে তখনি ওই গোষ্ঠী নড়েচড়ে উঠেছে।
– সেটা কেমন?
– ওই আগুণে পুড়িয়ে মারা মেয়েটির পেছনে যাদের হাত ছিলো যেমন গুন্ডা থেকে শুরু করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এমন কি নিজেদের লোকদেরও যখন ছাড় দিচ্ছে না তখন ঐ গোষ্ঠী এটাকে ভিন্ন ইস্যু বানাচ্ছে।
– কেমন?
– বলছে নিজেদের লোকইতো জড়িত, নিজেদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীইতো জড়িত, এসব বলে বর্তমান পরিচালকগণের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণের সমর্থন এবং জনমত তৈরি করতে চাইছে।
– তাই নাকি?
– আর হঠাত করেই এখন আন্দোলন টাইপের হুমকি ধামকি দিচ্ছে।
– দিচ্ছে দিক!
– নিজেদের লোক এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আইনের আওতায় আনা কি দেশের জন্য বর্তমান পরিচালকদের মহানুভাবতা নয়? এটা কি দেশ প্রেমের ইন্ডিকেশন নয়?
– ডেফিনিটলি এগুলো দেশপ্রেমিকদের কাজ এবং এদের দ্বারাই দেশ ঠিক হবে।
– কিন্তু ওই গোষ্ঠী বলছে এগুলো বর্তমান পরিচালকগণের দূর্বলতা এর পক্ষে জনমত তৈরির চেষ্টা করছে, বলছে আন্দোলন করবে।
– ব্লুক! বলতে দিন, দ্যাখেন জনগণ তাদের সাথে আসে কিনা?
– কিন্তু সাধারণ জনগন কি এই চাল বুঝবে?
– জনগনকে আপনি কী মনে করেন?
– আমার কাছে মনে হয় জনগণ সব বুঝলেও তারা তাদের নিরাপত্তার জন্য যেদিকে ছাতা পাবে সেদিকেই যাবে।
– না, এটা ভুল। ছাতাতো অনেকই আছে। জনগণ ভালো ছাতা আর কালো ছাতা ভালোই চেনে।
– তাহলে সাধারণ জনগন কোন দিকে?
– শুনুন, আপনি ওই দেশের বর্তমান পরিচালকগণের যে সব কাজের কথা বললেন তা চলতে থাকলে জনগণের আস্থা বাড়তে থাকবে যা ওই গোষ্ঠীর সহ্য হচ্ছে না তাই হঠাত এসব হুমকি ধামকি দিচ্ছে।
– আমারও তাই মনে হচ্ছে।
– আর জনগণ এগুলো ভালোই বুঝে।
– কিন্তু ভাই, সাধারণ জনগণতো এতো শিক্ষিত না।
– শুনুন, দেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নতি হচ্ছে কিনা, আইনের সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে কি না, দুর্নীতি মুক্ত হচ্ছে কি না, মাদক মুক্ত, সন্ত্রাস মুক্ত, জঙ্গি মুক্ত হচ্ছে কি না তা বুঝবার জন্য পি এইচ ডি করার প্রয়োজন নেই – এটা বুঝেন?
– কিন্তু ভাই, ওই দেশ কি দুর্নীতি মুক্ত হবে?
– কেন হবে না?
– তাহলে এতোদিন হয় নি কেন?
– আগের কথা তুলে কী লাভ? এখন যে গোষ্ঠী হুমকি ধামকি দিচ্ছে তারাওতো ওই দেশ ইতোপুর্বে পরিচালনা করেছে, তারাতো ওই দেশ দুর্নীতি মুক্ত করার কথা মুখেও আনেনি।
– তা ঠিক
– আর এতোগুলো কঠিন কাজ এতো দ্রুত করা কী সম্ভব?
– না
– তবে যেহেতু শুরু হয়ে গেছে তাই ৫ বছরে বেশ বড় ধরণের একটা পরিবর্তন আনা সম্ভব।
– ও, কিন্তু বর্তমান পরিচালকগণের অধিকাংশইতো নতুন।
– ওটা কোনও সমস্যা না, পুরাতন পরিচালকগণের অভিজ্ঞতা এবং পরামর্শ নতুনদের সাথেই আছে।
– আমারও তাই মনে হয়।
– যেহেতু এখন দেশ ঠিক হতে শুরু করেছে, নিজেদের লোককেও ছাড়ছে না তাহলে এ দেশ উন্নত হবেই – আপনি লিখে রাখুন।
-কিন্তু ভাই, ওই যে ওই গোষ্ঠী!
– শুনুন, জনগণ যদি একবার বুঝে যায় ওই গোষ্ঠী দেশের উন্নতি চায় না তাহলে ভবিষ্যতে এই জনগণই তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।
– তা অবশ্য ঠিকই বলেছেন।
– ওই গোষ্ঠীর উচিৎ বর্তমান পরিচালকদের পরিচালনা পর্ষদে যোগ দিয়ে ওই দেশের উন্নয়নের অংশীদার হওয়া।
-যদি তা না করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করে?
– তাহলে ওই দেশের জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে।
– হুমকি ধামকি দিলে?
– ওই গোষ্ঠী যতই হুমকি ধামকি দিক কাজ হবে না শুধু প্রয়োজন বর্তমান পরিচালকগণের দেশ গড়ার এই মহৎ কাজের প্রতি আস্থা এবং অবিচল।
– ও
– আপনার লেখা পড়ার সাবজেক্ট কী ছিলো?
– ইংরেজী
– আস্থা এর ইংলিশ কী?
– কনফিডেন্স
– গুড, আর অবিচল এর ইংলিশ কী?
– স্টিডি
– স্টিডি এর একটা সিনোনিম বলেন তো!
– ফিক্সড বা ফার্মনেস অর্থাৎ অনড়।
– গুড! আপনিতো তাহলে ছাত্র হিসেবে ভালোই ছিলেন।
– ভালো ছিলাম কিন্তু টিচারের সাথে তর্ক করতাম তাই নাম্বার কম দিতো।
– হা হা হা!
– হাসলেন যে!
– না এমনি হাসলাম, যা বলছিলাম যত বড় ঝড় তুফান আসুক ওই দেশের বর্তমান পরিচালকগণদের দেশ ঠিক করার এই মহৎ কাজের জন্য প্রয়োজন আস্থা এবং অবিচল।
– জি বুঝতে পেরেছি, কনফিডেন্স এন্ড স্টিডি, ভয় এবং লোভ উপেক্ষা করে অর্পিত দায়ীত্বে এবং কাজে শতভাগ আত্নবিশ্বাস এবং সিদ্ধান্তে অটল থাকতে হবে।
– গুড! এইতো সঠিক ধরেছেন।

দ্বৈত বৈশাখ

দ্বৈত বৈশাখ

বছর শেষে চৈত্রের সূর্যাস্ত যেন
সাগর স্রোতের মতোই টেনে নিয়ে যায় জীবনের সকল জঞ্জাল
উদিত নতুন সূর্যের মুখে ওই দেখা যায় মমতাময়ী এক শান্তির পরশ
তবে বুকে তার জমে আছে পৃথিবী পোড়ানোর মতো জ্বলন্ত এক
উত্তাল উত্তাপের আক্রোশ।

এসো – স্বাগত হে নতুন বৈশাখ
মনে প্রাণে জনে জনে জাগাও আশা ভরসা
এসো – স্বাগত হে নতুন বছর
আমাদের মাঝে হৃদ্যতা খুঁজে জাগাও প্রেমের আশা।

ভুলে যাক সকলে অতীতের যত হিংসা ঈর্ষা রেষারেষি
এসো মিলেমিশে হাতে হাত রেখে থাকি একে অপরেরে পাশাপাশি
এসো মানবতার নিবিড় বন্ধনে আমরা আমাদের ভালোবাসি।

কিন্তু! শোণ হে নতুন বৈশাখ
শোণ হে নতুন সূর্যের উত্তাল উত্তাপ

নতুন বছরে আমরা সইবো না আর
অশুভ শক্তির কোনও নির্মম অত্যাচার

আড়াই বছরের শিশু ধর্ষনের কলংক!
মসজিদে মন্দিরে গোলা বর্ষণের আতঙ্ক!

আলোকিত ধর্মের নামে যদি ধর্মকে করা হয় অপব্যবহার
অশুভ শক্তি যদি চায় জীবন্ত মানুষের গায়ে আগুন জ্বালাবার
সমাজকে যদি মাদকাশক্ত বানিয়ে বাঙালির ভবিষ্যতকে করতে চায় অন্ধকার!
আবারো যদি এখানে সেখানে আগুন আর মানুষের কয়লা দেখা যায়!
আবারো যদি সন্ত্রাস আর উন্নয়নের মহাসড়কে মৃত্যুর করুণ আর্তনাদ শোণা যায়!
আবারো যদি চেষ্টা করে কর্মাক্ত করবার
মুখচ্ছবিতে আমাদের সোনার বাংলার!

তবে হে নতুন সূর্য –
ঢালো তীব্র প্রতিবাদের আগুন উত্তাল উত্তাপ
জ্বালিয়ে পুড়িয়ে অশুভ শক্তিকে করো উৎখাত।

তবে হে নতুন বৈশাখ –
আকাশে বজ্র আনো
কলঙ্কে আঘাত হানো
হয়ে ওঠো ভয়ঙ্কর কালবৈশাখ।

নিজ বুদ্ধিমত্তা

নিজ বুদ্ধিমত্তা

– এই তুই আবার আইলি ক্যান?
– ভাইজান, কোনহান থিকা কি হইতাসে কিচ্ছু বুসতাসি না।
– এতো বুঝার দরকার নাই, আগে নিজে ঠিক হ
– আমি কি ঠিক নাই?
– তুই বলদ না বোকা নাকি সরলমনা তা বুঝার জন্য নিজেরে কয়ডা প্রশ্ন কর।
– কী প্রশ্ন?
– ফুলের মধ্যে মধু থাকলে মৌমাছি আসে না?
– তাতো আসেই।
– তর কাছে টাকা থাকলে কী বন্ধুর সংখ্যা বেড়ে যায়?
– হ্যাঁ, বেড়ে যায়।
– তাদের সবার বাড়ি চিনিস?
– না, সবার বাড়িতো চিনি না
– এই পর্যন্ত তুই বলদ, এবার পরের প্রশ্ন।
– জি বলেন।
– কেউ একজন মুখ কাচুমাচু করে বললো, আমার ৬ মাস চাকরি নাই, বাচ্চার দুধ কিনতে পারি না, পঞ্চাশ হাজার টাকা ধার দেন ভাই দুই মাসের মধ্যে দিয়ে দিবো, তুই কি টাকা দিবি?
– যদি এক বছর ধরে চিনে থাকি তাহলে দিবো।
– এক বছর ধরে চিনিস মানে? ফেসবুকে চেনা নাকি এক বছর ধরে তার বাসায় যাতায়াত?
– না মানে বাসায় হয়তো যাওয়া হয় নি কিন্তু অনেক বিজ্ঞজনের সাথে এবং জনপ্রিয় ব্যক্তিবর্গের সাথে মিশতে দেখেছি।
– এই পর্যন্ত তুই বোকা এবং সরলমনা এর মাঝামাঝি অবস্থানে আছিস, পরের প্রশ্ন।
– জি বলুন।
– ধর তোর একটা সুনাম হলো, হতে পারে এটা ভালো লিখালিখি করে বা ভালো গান করে বা ভালো অভিনয় করে বা রাজনীতি করে অর্থাৎ তোর একটা ভালো ইমেজ তৈরি হলো, তখন কেউ তোর মাথায় কাঁঠাল ভাংতে আসলে বা তোকে ইউজ করতে আসলে বুঝতে পারিস?
– এই বিষয়টাতে আমার বুঝতে একটু দেরি হয়।
– কেন?
– আমাকে তখন যদি কেউ অমুক কমিটির সহ সভাপতি, তমুক কমিটির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক, অমুক গ্রুপের নির্বাহী সদস্য, তমুক মানবিক সংগঠনের সভাপতি বা অমুক পুরস্কার, তমুক সম্মাননা এই জাতীয় অফার আসলে বুঝে উঠতে পারি না কি করা উচিত।
– এখন মনে হচ্ছে তুই বোকা না। কিন্তু ওই সময় তোকে না বলা শিখতে হবে।
– কেন?
– তোকে দেখতে হবে সে জন্য তোকে যা পদবী বা সম্মাননার অফার দেয়া হচ্ছে তার পেছনে তোর কতটুকু অবদান আছে বা আদৌ অবদান আছে কি না আর অবদান থাকলে ওই সম্মাননা কে দিচ্ছে বা তা সরকার স্বীকৃত কি না ।
– ও
– ধর তুই কোনও ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেলি এবং সরকার স্বীকৃত পুরস্কার পেয়ে গেলি, তখন তোকে সব অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বা বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ দিলে তুই কি যাবি?
– টাকা দিলে যাবো।
– না, এটাও ঠিক নয়।
– কেন?
তখন তোকে শোকেজের ফুল বানিয়ে অঘা মঘারা সব ফায়দা লুটবে।
– আমি জনপ্রিয় হলে মানুষ আমাকে দেখতে চাইলে যাবো না? এটা কী বলেন আপনি?
– আমিতো যেতে নিষেধ করি নি কিন্তু বাছ বিচার করে যেতে বলেছি।
– সেটা কেমন?
– যেমন কোনও গ্রুপের প্রধান তোকে অনেক টাকা দিয়ে তাদের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির আমন্ত্রণ দিলে তোকে ওই গ্রুপের নাড়ি নক্ষত্র জানতে হবে, ওখানে কারা আছে, তাদের ইতিহাস কী ইত্যাদি।
-ও
– আর তোর যদি মনে হয় কোনও একটি গ্রুপ অনুষ্ঠান করতে যাচ্ছে কিন্তু তোকে আমন্ত্রণ করার মতো সামর্থ্য নেই অথচ ওখানে অমানুষ নেই, মানুষ আছে তাহলে আমন্ত্রণ ছাড়াই উপস্থিত হয়ে পেছনের সীটে বসে থাকবি।
– কেন?
– এতে তোর গুরুত্ব কমবে না বরং বাড়বে, কিন্তু টাকার বিনিময়ে অঘা, মঘা, দুর্বৃত্ত, সন্ত্রাসী, দুর্নীতিপরায়ণ, স্বার্থপর, ধান্দাবাজ এই সব বাছ বিচার না করে গড়ে হরিবোল মারিস তাহলে তোর গুরুত্ব এবং জনপ্রিয়তা এক সময় মানুষ আর নেবে না।
-ও
– আর খেয়াল রাখবি তুই যখন প্রতিষ্ঠার পথে তখন তোকে নানান ভাবে ইউজ করা শুরু হবে।
– একজন লেখক অনেক লিখেও যা পাচ্ছে না তা তোকে দেয়ার জন্য কেন অফার করছে তার কারণ খুঁজে বের করতে হবে, প্রয়োজনে সেই সম্মাননা কৌশলে ফিরিয়ে দিতে হবে।
– এতে আমার ফ্যান বা ভক্তরা আমাকে অহংকারী মনে করবে না?
– না, কেন তা মনে করবে, বরং তারা বুঝতে পারবে যে ভেজালের যুগেও ভালো মানুষ আছে।
– শোন, কিছু মেধাবী মানুষ আছে যারা সরল প্রকৃতির, নিজে যেমন সরল তাই সবাইকে সরল মনে করে কিন্তু এখন এমন একটা সময় যখন সরল এবং গরলের মিশ্রণে চলতে হবে।
– ও
– ধর তুই জনপ্রিয় হতে চলেছিস কিন্তু কখন তোকে মিষ্টি কথা বলে বলে আড্ডায় নিয়ে চাঁদাবাজের খাতায় নাম তুলে দেবে বুঝতেই পারবি না।
– ও
– কবি লেখকদেরও এখন চৌকস এবং চালাক হতে হবে, কে কেন ডাকছে, কোথায় ডাকছে, কেন সম্মাননা বা পদ পদবী দিতে চাচ্ছে তার নাড়ি নক্ষত্র যাচাই বাছাই করার সময় এখন এসেছে।
-ও
– অর্থাৎ তোকে যেন কেউ ঠকাতে না পারে বা অমুক তমুক ব্যবসার মালিকানার নামে তোর কাছ থেকে টাকা বের করে নিতে না পারে সেটা খেয়াল রাখতে হবে।
– ও
– মানুষ যদি একবার বুঝতে পারে তুই বলদ বা বোকা তাহলে এমন নিত্য নতুন প্রতারণার কৌশলে আটকে দেবে যা তুই ভাবতেও পারবি না।
– মানুষ এমন বিচিত্র কেন?
– যিনি মানুষ বানিয়েছেন স্বয়ং তিনিই বলেছেন ” মানুষ বড় অকৃতজ্ঞ ” তাহলে আর কিছু কি ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে?
– সুতরাং সাধু, শয়তান এবং ভালো মন্দ বুঝতে নিজ বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করতে হবে।

চক্র

চক্র

– এই তুমি উঠলা ক্যামনে?
– আপনিতো আমার সামনেই বসে চা খাচ্ছেন
– চা খায় না পান করে?
– খাওয়া এবং পান করা এ পার্থক্য হয় লেখার সময়, আমি আর আপনিতো এখন কথা বলছি, লিখছি না।
– হুম বুঝলাম কিন্তু তুমি উঠলা ক্যামনে?
– ভাইজান সেটাইতো বলছি, আপনিও চায়ের দোকানে আমিও ওই একই চায়ের দোকানে বসে আছি
– হুদাই প্যাচাস ক্যান, কেমনে উঠলি হেইডা ক
– আরে দুইজনই বসে আছি, কেউই বিছানায় ঘুমাচ্ছি না, আমি উঠেছি ভোরে, টাইমটা মনে নাই
– তরে কী ঘুমেত্তে উডার কতা কইছি হালার পুত?
– তাহলে কীসের কথা বলছেন ভাইজান?
– মনে হইতেছে এহন কিচ্ছু বুজিস না, ফিডার খাছ? তুই বাড়ি বানাইছস কয়ডা?
– কেন ভাইজান?
– এই দেশে ৫ টা আর সেকেন্ড হোম না কি জ্যান কয় ওইডা মনে হয় দুবাই, ঠিক না?
– ও বড়লোক হয়েছি কী করে সেটা জানতে চাচ্ছেন?
– দুইডা জি প্রেমিক, একটা নিশান পেট্রোল আরেকটা কি জ্যান লেক্সি না ফ্লেক্সি জীপ কিনছস!
– লেক্সি না ওটা লেক্সাস আর জি প্রেমিক না ও দুটো জি প্রেমিও
– হেইডাইতো কইতাসি, তুই উঠলি ক্যামনে?
– ভাইজান চক্র বোঝেন?
– চা চক্র?
– না, এটা বাংলা চক্র
– এইডা আবার কী?
– এই চক্র যতদিন না চিনবেন আর এই চক্রের ভেতর যতদিন না ঢুকবেন ততদিন উঠতে পারবেন না।
– এই চক্রের সদস্য হইতে কী যোগ্যতা লাগে রে?
– ভাইজান, অগুলো এখানে বলা যাবে না, সবাই শুনে ফেলবে।
– হুম, বুচ্ছি কিন্তু এহনতো দ্যাশ ঠিক হইতাসে দেখা যায়!
– আরে রাখেন চাচাজি, এই দেশ কেউ ঠিক করতে পারবে না।
– ক্যান? একদিন ইউরোপ আমেরিকাওতো এমন ছিলো, এহন ঠিক হইছে না?
– আরে চাচা এইডা ইউরোপ আমেরিকা না এইডা বাংলাদেশ।
– বাংলাদেশ তাতে কী হইছে, ঠিক করন যাইবো না?
– না
– ক্যান?
– এই চক্র ভাংগার কোনও শক্তি নাই
– ক্যান?
– এই দেশকে ঠিক করতে হলে এই চক্র আগে ভাংতে হবে।
– ভাংতে হইলে ভাংতে হইবো!
– এই চক্র ভাংগার সাহস যারা দেখাবে, যারাই ভাংগার কাজ শুরু করবে তারাই ভেঙে যাবে।
– ক্যান?
– ইতিহাস দেখেন নাই?
– কী ইতিহাস?
– এ দেশ স্বাধীন হয়েছে তাতে সমস্যা হয় নি কিন্তু যখন তিনি এ দেশ ঠিক করতে চাইলেন তখনই…..
– আর কইতে হইবো না বুচ্ছি।
– বুঝলে চুপচাপ থাকেন চাচা, এই চক্রের ভেতর ঢুকে পড়েন, যারা দেশ ঠিক করার কথা বলছে কিছুদিন পরই দেখবেন কী হয়!
– নারে! আমিওতো এই দ্যাশের জন্য যুদ্ধ করসি ওনার কথায়, আমি ক্যামনে এতবড় বেঈমানী করুম রে!
– আরে চাচা রাখেনতো ঈমাণের কথা, এই যে আমি এই চক্রে ঢুকে কত ভালো আছি দেখছেন না?
– তরা পারবি, তরা যুদ্ধ করসনি, দ্যাখসনি, আমি যুদ্ধ করসি, আমি এই চক্রে ঢুকুম না।
– না ঢুকলে আপনার ভবিষ্যত খারাপ চাচা।
– কেউ এ দেশ ঠিক করতে না পারলে আমারে খালি একবার আমার জেলা ঠিক করার ক্ষমতা দে, দ্যাখ কী করি।
– পারবেন না চাচা, এ চক্র ভাংগার মতো কোনও শক্তি নাই।
– আরে রাখ! বাংলির চেয়ে দশগুণ খতরনাক পাকিস্তানি, ওগরে হুয়াইয়া দিসি! তুই কারে কী কস?
– আরে চাচা এই চক্র ভাংতে হলে নিজের জীবনের চেয়ে এই দেশকে বেশি ভালোবাসতে হবে আর সেই ব্যক্তি একজনই ছিলেন।
– এহনও আছে রে! তরা জানিস না, দেখবি এই দেশ ঠিক হইয়া যাইবো।
– হইলে ভালো, তখন চক্র থেকে বেরিয়ে আসবো।
– আর চক্কর ভক্কর চলবো না, এইবার ঠিক হইতেই হইবো।
– এজন্য বুকে দুর্বার অদম্য সাহসী দেশ প্রেমিক এবং সেই সাথে কৌশলী কিছু মানুষ প্রয়োজন চাচাজান।
– আছে, অরা আছে, সময় মতো অরা বাহির হইবো।
– কোথায় আছে ওরা! আমিতো দেখি না।
– তুই দ্যাখোস নাই কিন্তু অদের নাম শুইনাই ভয় পাইছস
– কৈ নাতো? ভয় পেলাম কোথায়?
– তুই এই আলাপের শুরুতে আমারে ভাইজান ডাকছস তারপর কখন চাচাজান কইতে শুরু করছস, কইতে পারবি?
– ও, না মানে “ওরা” না ” চক্র” না – না “ওরা” হ্যাঁ “ওরা” আছে, মনে হচ্ছে আছে, মনে হচ্ছে “ওরা” আছে!

মাথা গোল

মাথা গোল

– আমার টাকা আছে, আমার যা খুশি করবো, ন্যায় অন্যায় বুঝি না
– তার মানে আপনি এই থিওরিতে বিশ্বাসী ” মানি ইজ সেকেন্ড গড “?
– না, ওটা ভুয়া থিওরি
– তাহলে সঠিক থিওরি কোন টা?
– সঠিক থিওরি হচ্ছে ” মানি ইজ অনলি ওয়ান গড”
– আপনি ভুল পথে আছেন মিস্টার!
– কেন?
– আপনার বাবার কত টাকা ছিলো?
– সে কৃষক ছিলো
– হুম, বুঝতে পেরেছি
– কী বুঝলেন?
– আপনি দু নাম্বারি করে অনেক টাকা বানিয়েছেন
– হ্যাঁ, বানিয়েছি তাতে কী হয়েছে?
– টাকার একটা ওজন আছে।
– থাকলে থাক, তাতে আমার কী?
– অসৎ উপায়ে রাতারাতি টাকা বানিয়েছেন তো তাই টাকার সেই ওজন আপনি সইতে পারছেন না।
– হোয়াট ডু ইউ মিন?
– আপনি মিন মিন করে কথা বলতে পারেন কিন্তু আমি ওইসব মিন মিন কথা বলি না
– আপনি আমাকে অপমান করছেন? এবার বুঝবেন ঠ্যালা।
– কী ঠ্যালা?
– আপনার বাড়ি ভেঙে দেবো
– আমার রক্ত ঘাম করা টাকা দিয়ে বানানো বাড়ি আপনি ভাংবেন?
– হ্যাঁ, ভেঙে দেবো
– শুনুন মিস্টার, টাকা দিয়ে সব হয় না
– হয় কি না হয় তা আপনার বাড়ি ভেঙে দিলেই বুঝবেন
– দেশে আইন আছে কি করতে?
– আরে ধুর, ওসব আইন, আদালত, উকিল, পুলিশ, মন্ত্রী সব কিনে ফেলবো
– সরি মিস্টার, সে সময় এখন আর নেই, এখন দেশ উন্নত হচ্ছে, এখন দেশে আইনের সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে আর দেশ এখন দূর্নীতি মুক্ত হচ্ছে
– আপনি যাই বলুন, তাল গাছ আমার কারণ আমার অঢেল টাকা আছে, আমি আপনার বাড়ি ভেঙেই ছাড়বো
– আপনি ভুল জায়গায় এসেছেন
– আপনি মৃত্যু চান নাকি বাড়ি চান?
– মৃত্যুর ভয় দেখাচ্ছেন? আমার মৃত্যু ভয় নেই
– ইয়ে, না, মানে কেন মৃত্যু ভয় নেই!
– শুনুন মৃত্যু চির সত্য, এই পৃথিবীতে আপনি, আমি এবং আমাদের সবার মৃত্যু হবে, দু দিন আগে আর পরে
– হ্যাঁ, তা অবশ্য ঠিক
– আপনার ওই অঢেল টাকা দিয়ে সব কিনতে পারলেও মৃত্যু কিনতে পারবেন না
– আপনার বাড়ি ভেঙে দিতে গেলে আপনি কী করবেন?
– বাধা দেবো
– বাধা দিতে আসলে যদি আপনাকে মেরে ফেলি?
– এ জন্যইতো বললাম, আপনি ভুল জায়গায় এসেছেন
– কে আপনি?
– আমি মানুষ তবে আমার মৃত্যু ভয় নেই
– কেন?
– কারণ আমি নিজের কাছে সৎ আছি, আর জন্ম মৃত্যু এগুলো সৃষ্টিকর্তার হাতে, আপনার হাতে নয়
– আরে পাগল! আমি সৃষ্টিকর্তাকে অনেক আগেই টাকা দিয়ে কিনে ফেলেছি
– আমার পা লম্বাই আছে কিন্তু আপনার মাথা গোল
– মাথা গোল মানে কী?
– মানে মানকচু, খাইলে গলা চুলকায়
– আবারও অপমান?
– অপমান না সম্মান সেটা পারে বলছি, আগে বলেন আপনি কী করে টাকা দিয়ে সৃষ্টিকর্তাকে কিনলেন?
– আমি হজ করেছি, মসজিদ বানিয়েছি, এতিমখানা বানিয়েছি, হাসপাতাল বানিয়ে দিয়েছি, গরীব দুঃখীদের দান খয়রাত করেছি ব্যাস সৃষ্টিকর্তা আমার হাতের মুঠোয়
-টাকা দিয়ে আর কী কিনেছেন?
– লয়ার, পুলিশ, সচিব, আমলা, মন্ত্রী, ক্যাডার ফ্যাডার সব কিনেছি, এখন আমার যা খুশি তাই করবো ন্যায় অন্যায় গোনার টাইম নেই
– এজন্যই বলেছি আপনার মাথা গোল

কোথায় যেন একটা গন্ধ পাই

কোথায় যেন একটা গন্ধ পাই

একুশ তুমি বায়ান্নতে বাঙালির প্রাণ কেড়ে নিয়েছো
বিনিময়ে মায়ের ভাষায় কথা বলতে শিখিয়েছো
তাই আমরা সে শোক হাসি মুখে নিয়েছি
তুমি বাঙালির হাসি।

তুমি একাত্তরে এক মাস পাঁচ ঘর এগিয়ে এসে
এনে দিলে স্বাধীনতা
একুশ তুমি বাঙালির বীর।

কিন্তু তুমি পঁচাত্তরে ছ মাস এগিয়ে ছ ঘর নেমে গিয়ে
উপড়ে দিলে বাঙালির শেকড়!
একুশ তুমি বাঙালির অশ্রু
হৃদয়ের দগদগে ব্যথা!

একুশ তুমি গ্রেনেড হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লে দুই হাজার চারে
বঙ্গ কন্যাসহ বাঙালির ওপর
একুশ তুমি একুশবার যম হয়ে দাঁড়িয়েছো
বঙ্গ কন্যার মাথার ওপর
একুশ তুমি বাঙালির আতংক!

একুশ তুমি আমার পিতাকেও নির্মম হাতে কেড়ে নিয়ে গেলা
একুশ তুমি পুরান ঢাকায় দেখালে বীভৎস মানুষের কয়লা
কোথায় যেন একটা গন্ধ পাই!

একুশ! একুশ!! একুশ!!!
তুমি বাঙালির হাসি
বাঙালির বীর
তুমি বাঙালির অশ্রু
দগদগে ব্যথা!
একুশ তুমি বিতর্কিত, বিষ্ময়, নির্মম আতঙ্ক!

একুশ, তুমি বায়ান্নতে যা দিয়েছো
পঁচাত্তরে ছ মাস এগিয়ে ছ ঘর নেমে গিয়ে
তার অনেক বেশি কেড়ে নিয়েছো
একাশি, অষ্টাশি, উননব্বই, একানব্বই
চুরানব্বই, পঁচানব্বই, ছিয়ানব্বই, সাতানব্বই
দুই হাজার এক, দুই, চার, সাত
দুই হাজার এগারো, চোদ্দ, ষোল, সতেরো
একুশ তুমি একুশবার কালো বৃষ্টি হয়ে নেমেছো।

তুমিই কি সড়ক দুর্ঘটনার মন্ত্র আউড়ে যাচ্ছো?
তুমিই কি একের পর এক আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছো?
কোথায় যেন একটা গন্ধ পাই!

একুশ তুমি বিতর্কিত, বিষ্ময়, নির্মম আতঙ্ক
তোমাকে দেখলে আমরা খেই হারাই
কোথায় যেন একটা গন্ধ পাই।

কার্যকরী তাবিজ

কার্যকরী তাবিজ

– মীরজাফর এর বিশ্বাস ঘাতকতা এবং কূটকৌশলের কাছে নবাব সিরাজউদ্দৌলা কি পরাস্থ হয়েছিলেন?
– ইতিহাস তো তাই বলে
– ইতিহাস কি?
– রাজহাঁস কিংবা পাতিহাঁস নয়, তা জানি
– বিকৃত ইতিহাস এবং নিরেট সত্য ইতিহাস বুঝবার উপায় কি?
– এতো জটিল করছেন কেন? কে পরাস্থ হয়েছে, মীরজাফর না কি সিরাজউদ্দৌলা?
– মীরজাফর পরাস্থ হয়েছে
– কী করে?
– মীরজাফর এর বিশ্বাস ঘাতকতায় এবং কূটকৌশলের কাছে নবাব সিরাজউদ্দৌলা তাঁর রাজত্ব হারিয়েছেন
– তার মানেইতো পরাজিত
– না, এটা ভুল
– কেন?
– পরাজিত হয়েছে মীরজাফর
– কী করে?
– এমন কোনও মানুষ দেখাতে পারবেন যিনি মীরজাফর কে ঘৃনা করেন না?
– না
– ওই ঘটনার পর থেকে এমন কোনও মানুষ দেখাতে পারবেন যার নাম মীরজাফর রাখা হয়েছে?
– না, মীর মারুফ, মীর আলী, মীর মোসাররফ, মীর আব্বাস শুনেছি কিন্তু মীরজাফর শুনিনি
– আবার আবু জাফর, জাফর ইকবাল, কাজী জাফর ইত্যাদি পাবেন কিন্তু মীরজাফর নাম পাবেন না
– হ্যাঁ তাইতো দেখছি
– যতগুলো সিনেমা, নাটক, যাত্রা, ড্রামা হয়েছে কোথাও কি নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে মুকুট বিহীন দেখেছেন?
– নাতো!
– মীরজাফর আজীবন কলঙ্কিত থাকবে আর সিরাজউদ্দৌলা আজীবন মানুষের ভালোবাসায় থাকবে
– হ্যাঁ এটা শতভাগ সঠিক
– তাহলে কে পরাজিত?
– মীরজাফর
– মানুষ আসলে দ্বৈত সত্তা দিয়ে তৈরি
– তাই নাকি?
– একটি হচ্ছে ক্রোধ, হিংসা, লোভ, ঠগবাজি, হিংস্রতা
– আরেকটি সত্তা কী?
– সেই একই মানুষের মাঝেই আবার বিবেক, বিশ্বাস, প্রেম, ভালোবাসা, মায়া, মমতা, বিনয়, শ্রদ্ধা, পরোপকারী সত্তা বিদ্যমান
– ও
– এখন আপনি কোনটা নেবেন আর কোনটা ছাড়বেন , এটা আপনার বিষয়
– বুঝলাম না
– ধরুন কেউ আপনাকে ক্ষমতার দাপট দেখালো বা আপনি ভালো কাজ করছেন বা আপনার যোগ্যতা বা মেধায় হিংসা করে আপনার সাথে রেশারেশি করতে আসলো, আপনি কী করবেন?
– আমার ক্ষমতা বেশি থাকলে ওই কুত্তার বাচ্চার পাছায় আগুন জ্বালিয়ে দেবো
– ভুল করছেন, কুকুর বিশ্বাস ঘাতকতা করে না, প্রয়োজনে আপনার জন্য জীবন দিয়ে দেবে।
– ওই একই কথা, হারামজাদাকে ফেঁড়ে ফেলবো
– না, এটা করলে আপনি আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন না
– তাহলে কী করবো?
– ওই যে! “ক্রোধ, হিংসা, লোভ, ঠগবাজি, হিংস্রতা” এই সত্তাগুলো এড়িয়ে গিয়ে ওই মানুষটির মাঝেই বিদ্যমান “বিবেক, বিশ্বাস, প্রেম, ভালোবাসা, মায়া, মমতা, বিনয়, শ্রদ্ধা, পরোপকারী” এই সত্তাগুলো নিয়ে মেতে উঠুন, রেশারেশি এভোয়েড করে মানুষের এই সত্তাগুলো নিয়ে ঘাটাঘাটি করুন, তাহলেই আপনি আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন এবং কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ের একটি বড় অংশ জুড়ে মানুষের মাঝে মানুষের ভালোবাসায় চিরকাল থেকে যাবেন
– কিন্তু যারা আমার পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে?
– থাকতে দিন, আপনার পা থেকে না হয় একটু রক্তই ঝরবে তবুও আপনি আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন
– আর ওরা যে কূটকৌশলে লাভবান হয়ে গেল ?
– ওই যে! মীরজাফর এর খাতায় ওদের নাম উঠে যাবে
– ভাইজান, সিরাজউদ্দৌলাতো রাজা ছিলেন, আমিতো আর রাজা নই, আমার সাথে কে মীরজাফরি করলো, সে খবর কে বা রাখবে?
– আপনি রাজা নয় তাতে কী?
– রাজা প্রজা ছাড়া সাধারণ মানুষের কথা কেউ মনে রাখে?
– “প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে”, এটা কত নম্বর ভার্স জানেন?
– আপনি ভুল করছেন, এটা ভার্স নয়, নিউটনের গতি বিষয়ক তৃতীয় সূত্র
– ও হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন, আমারই ভুল হয়েছে
– তা, এই সূত্র এখানে এসে ঢুকে গেল কেন?
– এটি এই মহাবিশ্বের এমন এক মহাসত্য যা আজও কেউ ভুল প্রমাণিত করতে পারেনি এবং পারবেও না
– বুঝলাম, তা এই সূত্র এখানে আনলেন কেন? এখন কি ক্যালকুলাস বা বস্তুর ভর, ওজন, অভিকর্ষ, মহাকর্ষ এইসব ক্লাস নেবেন নাকি?
– না, ওই যে বল্লেন আপনি রাজা নন, আপনার খবর কে বা রাখবে?
– হ্যাঁ তাইতো, সিরাজউদ্দৌলা রাজা ছিলেন তাই উনার খবর সবাই রেখেছেন, আমিতো আর রাজা নই
– আপনার খবর নিউটনের গতি বিষয়ক ওই তৃতীয় সূত্রই রাখবে
– ভাইজান, আপনি শুরু করলেন ইতিহাস দিয়ে, মাঝে টেনে আনলেন গনিত আর এখন ঢুকেছেন ফিলোসোফিতে, বাসায় যান, মাথায় তেল পানি দিন, ওষুধ পত্র খান তারপর ঘুম দিন
– কেন?
– আমার মনে হচ্ছে এরপর আপনি ভূগোল, বোটানি, বায়োলজি , রাষ্ট্রবিজ্ঞান, গার্হস্থ্যবিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান , সমাজবিজ্ঞান, হিসাব বিজ্ঞান, ব্যাবস্থাপনা, অর্থনীতি এমনকি মেটাফিজিক্সও টেনে আনতে পারেন।
– ঠিক আছে যাচ্ছি, আপনি আমার মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে যাই ভাবুন সেটা আপনার ব্যাপার তবে আমি মানুষের দ্বৈত সত্তার প্রথম সত্তাগুলো ( ক্রোধ, হিংসা, লোভ, ঠগবাজি, হিংস্রতা) এভোয়েড করে দ্বিতীয় সত্তাগুলোকে (বিবেক, বিশ্বাস, প্রেম, ভালোবাসা, মায়া, মমতা, বিনয়, শ্রদ্ধা, পরোপকারী) আপনার পথের পাথেয় বানালে আপনি সফল – এটা লিখে নিয়ে তাবিজ বানিয়ে গলায় ঝুলিয়ে রাখতে পারেন। ভালো থেকেন। শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য।

নারী

নারী

নারী হয়ে নাড়ির বাঁধনে নাড়িয়ে দিলে
মানব জন্মের ইতিহাসকে
এই ভূবনে তিন জীবনে তাইতো এনে দিলে
মা- স্ত্রী আর মেয়েকে
নারী হয়ে নারী-রূপে কাঁপিয়ে দিলে
যৌবন-জীবন আর পৃথিবীকে।

একদিন মাঝরাতে

একদিন মাঝরাতে

গতকাল মাঝরাতে আকস্মিক এক তীব্র ঝাঁকুনিতে ঘুম ভেঙে যায়
পাশে তাকিয়ে দেখি একটি বাঁশি
এই ধরুন আট দশ ইঞ্চি লম্বা।

রঙ?
সিয়ান ম্যাজেন্টা সাদা কমলা নীল হলুদ বেগুনীর আর গোলাপি রঙের
এম এল সমান ১-১০ লিকার রেশিওতে যে রঙ হয়।

ম্যাটেরিরেল?
দস্তা লোহা তামা ইস্পাত রূপা স্টিল এলুমিনিয়াম আর বাইশ ক্যারেট সোনা এর
সমহারের সংমিশ্রণে যে ধাতু হয়।

সেখানে ফুঁ দেয়ার দুটি নল আছে
কিন্তু বের হওয়ার নল একটি।

আর ঘুম এলো না সেই রাতে
উঠে গিয়ে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকালাম
রাতের আকাশ পুরোটা তারায় তারায় জ্বলে আছে
আমি একটি নল দিয়ে আকাশের দিকে ফুঁ দিতেই আট-দশটা তারা খসে পড়লো
নৈশব্দিক এক তীব্র ঝাঁকুনিতে শরীর কেঁপে ওঠে
এবার অন্য একটি নল দিয়ে ফুঁ দিলাম
সাথে সাথে খসে পড়া তারাগুলো আবার ফিরে এলো।
আশ্চর্য তো?

এটা কিসের বাঁশি?
সূর শব্দ তরঙ্গ কিছুই যে নেই?
আছে শুধু ধ্বংস আর পুনরূদ্ধারের এক মহাশক্তি।

এটা কি হ্যামেলিনের বাঁশি?
না, ওটাতো ঠগবাজদের শায়েস্তা করার একটা গল্প।

তাহলে কি এটা সাপের বীণ?
ওটাতো তাবিজ বিক্রি করার কৌশল
যে প্রাণীর কান নেই – চেরা জিভ দিয়ে শব্দ শোনে
তাও ইন্দ্রিয় শক্তি অতিব দূর্বল
সেই প্রাণী বীণের শব্দে পাগল হবে কি করে?

তাহলে কি আমি এই রাতে ইস্রাফিল এর শিঙা পেলাম?
না, তাহলে প্রথম ফুঁতেই কেয়ামত শুরু হয়ে যেতো।

আপনারা এ বাঁশি নিয়ে যার যা খুশি ভাবতে থাকুন – তাতে কিছুই যায় আসে না
না, মাফ করবেন, আপনারা না, ঐ যে! ওনারা।

একদিন মাঝরাতে আমি ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেবো ওনাদের
সকল পৃথক পৃথক কবিতার সংগঠন।

কবি কংগ্রেস-পার্টি?
কবি লেবার-পার্টি?

ডেমোক্রেটিক কবি-পার্টি?
রিপাবলিকান কবি-পার্টি?

কবি গ্রীন-পার্টি?
কবি আই এস পার্টি?

কবি কমিউনিস্ট পার্টি?
কবি সোসিয়ালিস্ট পার্টি?

কবিদল, কবিলীগ, কবি জনতা পার্টি?
কবিজোট, কবি-ফোরাম, তেল মারা কবি-পার্টি?

এম আর আই এ কবি পার্টি?
হিযবুত তাহরীর কবি পার্টি?
আর সমস্ত কবি জঙ্গি-পার্টি।

এক ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেবো
সব কবি সংগঠন আর সব কবি-পার্টি।

শুনে রাখুন – লিখে রাখুন
কবিদের কোনও দল নেই
কবিদের কোনও দেশ নেই
কবিদের কোনও নির্দিষ্ট ভাষা নেই।

সব কবির মন একটাই
সব কবির আত্মা একটাই।

সব ভাষাই সব কবির
সব দেশই সব কবির।

কবির সাথে কবির যুদ্ধ
কলমের সাথে কলমের যুদ্ধ
সাহিত্যের সাথে সাহিত্যের দ্বন্দ্ব
উপন্যাসের সাথে উপন্যাসের দ্বন্দ্ব
আলোর সাথে আলোর সংঘর্ষতা
পুরুষ্কারের সাথে পুরুষ্কারের মুমূর্ষুতা
একাডেমির সাথে একাডেমির বিরোধিতা
দেখতে দেখতে ভারাক্রান্ত মনে আজ ঘোলা হয়ে উঠেছে এই দুটি চোখ
বাঁশিটির দিকে তাকাতেই এক ক্রোধান্বিত রঙে চক চক করে ওঠে আবার এই দুটি চোখ।

এই সেই সাহিত্যের বাঁশি
যা দিয়ে এক ফুঁৎকারে উড়িয়ে দেয়া যায় এইসব আমর্ষ
একদিন মাঝ রাতে তীব্র বেগে কেঁপে উঠবে পৃথিবী
এই বাশির ফুঁৎকারে
খুলে যাবে ওনাদের মুখোশ দেখা যাবে চোখ মুখ বেজায় বিমর্ষ।

সব কবির একটাই প্ল্যাটফর্মঃ কবিতা, মানুষ ,বই, প্রকৃতি আর নিজের অন্তরে
সব কবিরাই আজ ইউনিফর্মঃ কবিদেরে ঐশী জ্ঞান থাকে মহাজ্ঞানীর ভাণ্ডারে।

আমাকে একটি রাইফেল দিন

আমাকে একটি রাইফেল দিন

প্রথমে চকলেটের প্রলোভন
তারপর নিরিবিলি রুম
একটু পর
চকলেট আর আইসক্রিম।

অতঃপর চিৎকার!
কান্না!!
আর্তনাদ!!!
দাপাদাপি!
রক্ত আর রক্ত!!
নিস্তেজ! নিথর!! অজ্ঞান!!!
শেষ হয়ে গেল সব আশা-ভরসা

এই মাত্র ধর্ষিত হলো
দুই বছরের শিশু আয়েশা !!!???

কেউ শুনতে পায়নি শিশুটির তীব্র আর্তনাদ?
কেউ ঠেকাতে পারেনি এই ভয়ঙ্কর আঘাত?

কেউ বাঁচাতে পারলো না শিশুটিকে?
ঐ হায়েনাদের আক্রমণ থেকে?
খুবলে খুবলে – কামড়ে কামড়ে
নিঃশেষ করে দিলো শিশুটিকে?

শিশুটির – আর্তনাদ – চিৎকার – হাহাকার
বাতাস বয়ে নিয়ে গেছে আকাশে – পাহাড়ে – সমুদ্রে – সবুজে ঘেরা অরণ্যে!!

বাতাস ঝড় তুলতে শুরু করেছে!
আকাশে বজ্রের ঝলকানি !!
সমুদ্রে ক্ষিপ্ত ঢেউয়ের তীব্রতা!
বনে-জঙ্গলে অগ্নিশিখার দাবানল!!!
ধেয়ে আসছে তীব্র বেগে ঘূর্ণিঝড়!!
এখন ভূমিকম্পের আশংকা!!!

অথচ?

কোথায় ছিলো এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল?
কোথায় ছিলো চাইল্ড প্রোটেকটিভ প্রফেশনাল?
কোথায় মানব অধিকার?
কোথায় শিশু অধিকার?
কোথায়?
কোথায়?
কোথায় ?

আর নয় – আর নয়
না – আর নয়
আর হতে দেব না
সমাজের এই অবক্ষয়

আমাকে একটি রাইফেল দিন
আমি কলম ছেড়ে আজ তুলে নেবো রাইফেল।

আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন?

আইন?
কিসের আইন?
কোথায় আইন?
আপনাদের এ আইন আমি মানি না
হিংস্র পশু মারতে কিসের আইন?

মানুষ হত্যা মহা-পাপ জানি
আমি মানুষ মারবো না
আমি মারবো হিংস্র পশুদের
যে আইনে আমরা মেরেছিলাম উনিশ’শ একাত্তরে
বর্বর হিংস্র পশুদের।

আমাকে একটি রাইফেল দিন
অথবা মেসিনগান দিন
না হলে অন্তত একটা পিস্তল দিন।

যদি না দেন,
তাহলে আমাদের যা কিছু আছে
তাই নিয়ে আমরা সরিয়ে দেবো
সমাজের এই জঞ্জাল
সরিয়ে দেবো বাংলার এই ঘৃণিত লজ্জিত অধ্যায়
শিশুদের করবো প্রাঞ্জল
দ্বীপ্ত দৃঢ়তায় থাকবো শিশু-কিশোরীর প্রহরায়
বাঙালির এ শক্তি বাঙালির অহংকার
পৃথিবীর কাছে এ আমাদের অঙ্গীকার।

আমি স্বপ্ন দেখছি

আমি স্বপ্ন দেখছি

ভার্চুয়াল মঞ্চে দাঁড়িয়ে অবিকল মানুষের সামনে
আমি ঘোষণা দিয়েছি – আমি আর কবিতা লিখব না।

কিন্তু! মধ্যাহ্নে আমার ভেতর শব্দ শুরু হয়
অজস্র মৌমাছির গুনগুন শব্দের মতো

মাঝরাতে শব্দগুলো নেমে আসে হাতে – আংগুলের ডগায়
আমার আংগুল কাঁপতে থাকে – কাগজ-কলম খোঁজে

অতঃপর ঐ গুণগুণ শব্দগুলো অক্ষর হতে চায়
অক্ষর শব্দ হতে চায়
শব্দ হতে চায় মাত্রা-পর্ব-পংক্তি-স্তবক

কিন্তু আমি ঘোষণা দিয়েছি –
কবিতা লিখবো না
আমি কিন্তু এখন কবিতা লিখছি না।

কেন লিখছি না?
কেন লিখব না?

ইদানীং কবিতা লিখতে গেলে
ভয়ংকর কিছু একটা কলমে ওপর ভর করে

কি ভর করে?
ওটা খুব ভয়ংকর – একটা দূরারোগ্য ব্যাধি

আগে কেন কবিতা লিখতাম?

ঐ ভয়ংকর ব্যাধিটি তখন ছিল না

কি ছিল?

দর্শন আর কলুষিত সমাজের অন্ধকারে আঁধারের বিচ্ছুরণ
ধর্ষন আর মানুষের অমানবিক আনবিক বোমার বিস্ফোরণ।

একদিন এক মধ্যাহ্ন আমাকে
ঐ ভয়ংকর দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত করেছে।

আমি ছিলাম কিন্তু আমার মাঝে
মগজ ছিল – মন ছিল না
দেহ ছিল – হৃদয় ছিল না
নয়ন ছিল – অশ্রু ছিল না

কিন্তু সেই দিন ঐ মধ্যাহ্ন এসে আমার বুক চিড়ে ফেললো
অতঃপর মন – হৃদয় – অশ্রু দেখিয়ে দিয়ে চলে গেল

এই যে! দেখুন আবার কিন্তু কলমে ঐ ভয়ংকর জিনিসটা ভর করছে
আমি কিন্তু এখন কবিতা লিখছি না

তাহলে আমি এখন কি করছি?

ছবি আঁকছি
না – রং তুলিতো দেখছি না কোথাও

আমি এখন দাবা খেলছি
না – হাতি ঘোড়াও নেই কোথাও

আমি কিন্তু এখন কবিতা লিখছি না
আমি নিশ্চিত – আমি এখন স্বপ্ন দেখছি।

আমার ইচ্ছে করে

আমার ইচ্ছে করে

হুন শক এ্যাংগেল স্যাক্সন জুট’রা
এবং আলপিন-আলমিরা
ইস্কাপন-রুইতন আর কার্তুজ-রেস্তোরাঁ
সকলেই যখন বাংলার ভাণ্ডার লুট করে নিচ্ছিল
তখন সাহসী বীর যোগ্য বাঙালির বড়ই অভাব ছিল।

বাংলার এ নির্মম ইতিহাস দেখতে দেখতে
ব্যথিত হয়ে উঠলেন সময়ের এক কবি
বলেছিলেন বাঙালিদের মানুষ হতে।

শুধু বাংলা নয়
আশপাশ থেকেও ওরা সব লুট করে নিচ্ছিল
একদিন আমাদের পাশের আকাশে
এক বীরের গর্জন শোনা গেল, “ভারত ছাড়”
সবাই বলে উঠল “করবো নইলে মরবো”
এরপর বিতাড়িত হলো ওরা।

এরপর আরও ২৩ বছর বাঙালিরা
আর্থিক ভাবে বঞ্চিত হলো
সামাজিক মর্যাদায় ক্ষুন্ন হলো
রাজনৈতিক ভাবে শোষিত হলো
ভাষার জন্য জীবন দিতে হলো
নির্যাতিত হতে হতে বাঙালিরা দিশেহারা।

সময়ের সেই কবি’র ব্যথার মতো
ব্যথিত হয়ে উঠলেন এক শ্রেষ্ঠ বাঙালি
আবির্ভূত হলেন এক অদম্য দুর্বার
শ্রেষ্ঠ সাহসী যোগ্য বাঙালি হয়ে
এবার আমাদের আকাশে গর্জন শোনা গেল
“এ দেশকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ!”
দল-মত- ধর্ম – বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে তখন
সাত কোটি বাঙালি মানুষ হয়ে উঠল।

আমার ইচ্ছে করে এমন কিছু কথা বলতে
যেন আজ ষোল কোটি বাঙালি একত্রিত হয়
অতঃপর রেসকোর্সের ময়দানের মঞ্চে দাঁড়িয়ে
এমন কিছু কথা বলতে ইচ্ছে করে
যেন ষোল কোটি মানুষের বিবেক জাগ্রত হয়
পাশবিকতাগুলো ভেঙে যেন মানবিকতা হয়।

এমন কিছু বলতে ইচ্ছে করে যেন
দল-মত- ধর্ম – বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে
সেদিনের সাত কোটি মানুষের মতো
আজ ষোল কোটি মানুষ – মানুষ হয়
যেন স্বেচ্ছায় ভেঙে যায় সমাজের কলুষিত অধ্যায়
অন্যায় অপরাধ দূর্নীতি ধর্ষণ মাদক বন্ধ হয় স্বেচ্ছায়
যেন মানুষে মানুষে হৃদ্যতা আর ভালোবাসার টানে
নীরবে নিভৃতে ঝরে পড়া অশ্রু গুলো ফিরিয়ে আনে
যেন দেশের উন্নয়নে জীবন বাজি রেখে ত্যাগ স্বীকারে উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠে
যেন দুঃখি মানুষ গুলোর বিষণ্ন মুখে আনন্দের হাসি ফুটে ওঠে।

আমার এমন কিছু বলতে ইচ্ছে করে
যেন আর কোনও কবি মানুষ হবার কথা বলে
যেন আর কোনও কবি এ কবিতা না লেখে
“তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা”
যেন আর কোনও গায়ক না গায়
“তিরিশ বছর পরেও আমি স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি”।

আমার চোখে ভেসে ওঠে দুঃখি মানুষের মনের গহীনে
জমে থাকা অভিসম্পাত আর নীরব আর্তনাদ গুলো
আমার চোখে ভেসে ওঠে নির্যাতিত দুঃখি বাঙালির বোবা-কান্না আর চোখ থেকে ঝরে পড়া অশ্রু গুলো।

আমি স্থির থাকতে পারি না
শরীরের কম্পন থামাতে পারি না
শরীর এবং মন এক প্রলয়ঙ্কর সাহসে কেঁপে ওঠে
দুর্বার অদম্য এক শক্তিতে হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে ওঠে।

ষোল কোটি মানুষের সামনে রেসকোর্সের ময়দানে
মঞ্চে দাড়িঁয়ে কলরেডি মাইক্রোফোনের সামনে
আমার এমন অনেক কিছুই বলতে ইচ্ছে করে
আমার শুধু একটি বার মুজিব হতে ইচ্ছে করে।

তীরন্দাজ-যাদুকর-বিজ্ঞানী এবং অপ্রমাণিত ত্রিভূজ

তীরন্দাজ-যাদুকর-বিজ্ঞানী এবং অপ্রমাণিত ত্রিভূজ

প্রিয় কবিতা,

এটাই হয়ত তোমার কাছে আমার শেষ চিঠি
এ চিঠি তুমি পড়বে কি না আমি জানি না।

আমি আর চিঠি লিখব না
তোমাকে
কাউকে
ফেসবুকে

ভেবেছিলাম এ কাঠের হৃদয়ে ঝড় তুলতে পারবে
এমন রমণীর সাথে কোথাও কি আর দেখা হবে?
যে চোখ এ চোখে দৃষ্টি দিলে
বুঝে নেবে কি ব্যথা এ অশ্রু জলে
অথচ সে চোখ সাপ হয়ে কেটেছে যে মন
তাই দৃষ্টির দূরেই রয়ে যাক সেই স্বজন।

ধরে নিও
বুঝে নিও
অজস্র কবিদের ভীড়ে
কবিতা পড়তে না পেরে
হেটে হেটে ধুধু মরু প্রান্তর ধরে
গেছে চলে এক কবি দূর-অতিদূরে
সে ছিল এক ভিন্ন ধরণের অভিমানী
তাই সে আর পিছু ফিরে তাকায় নি।

ক্যাপশন যদি আর কখনো ছবি না পায়
ছবি যদি ছবির ফ্রেমের আঁটকে যায়
তবে জেনে রেখো-
“বড় প্রেম শুধু কাছেই টানে না, দূরেও ঠেলে দেয়”।

তুমিও জানো
আমিও জানি
সবাই জানে
এ চিঠি, কে – কাকে লিখছে
জানুক – সত্য কে কবে চাপা রাখতে পেরেছে!
ভালো থেকো
ভালো রেখো।

আমি আর হব না মুখোমুখি তোমার
জলে জল মিশিয়ে জ্বলতে চাইব না আর
প্রতিদিন মধ্যাহ্ন আসে বলে কবিতা লিখব না আর
মধ্যাহ্ন আসবে বলে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে যাব না আর
মধ্যাহ্ন আসবে বলে-
কোনও সাহিত্য আড্ডায়
একুশের বই মেলায়
কিম্বা কোনও জনসভায়
এবং কবিতা পড়তে রাত্রি জাগব না আর।

প্রিয় কবিতা,
তুমি হয়ত জানো না
আমি শত্রুর সামনে বদর যুদ্ধের এক ক্ষিপ্ত সাহাবী
ব্যাঘ্রের সামনে ক্ষিপ্ত ব্যাঘ্র – সিংহের সামনে হিংস্র সিংহ
অথচ প্রেমিকার সামনে এক ভেজা ট্যাবি।

এতোটুকু ব্যথা যদি দিয়ে থাকি মনে
ক্ষমা করে দিও তোমার সূহৃদয়ের গুণে।

ইতি,
“লিখে রাখো ক্যাপশন তুমি প্রিয় কবি”

যাকাত

যাকাত

বন্ধু আমার সোলাইমান
বল্লো আমি মুসলমান
যাকাত আমায় দিতে হবে
ইসলাম আমার সঙ্গী হবে।

সঙ্গে আমায় নিয়ে যায়
বলে দেখো ডানে বাঁয়
মসজিদেরই ভেতর এসে
তাকিয়েছে আশে পাশে।

অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর
ঢুকে গেলেন এক হুজুর
বন্ধু আমার সালাম দিলো
কেমন আছেন জানতে চাইলো।

জবাব দিয়ে জানতে চায়
আপনার সাথে হ্যায় কেডায়?
বন্ধু আবার জানতে চাইল
যাকাত এবার কতো হলো?

ফেকাহ সাহেব বল্লেন হেসে
কত আছে বছর শেষে?
একশ পঁচিশ মিলিয়ন ডলার
আছে এই বছর,
কতযে টাকা যাকাত হবার
বলুন সেই খবর?

মাসলা দিলেন ফেকাহ সাহেব
আড়াই পার্সেন্ট করতে হিসেব,
নিয়ম অনুসারে তবে
আড়াই পার্সেন্ট হারে
পঁচিশ কোটি টাকা হয়তো
যাকাত হতে পারে।

বন্ধুর মুখ শুঁকিয়ে গেল
এত টাকা জলে গেল?
কিযে বলে গেলেন হুজুর!
হয়ে যাব ফতু্‌র,
ইনকাম আমার ছহি হালাল
নেইযে কোনও চতুর।

ভালো ফতুয়া বাতলে দিন
নইলে হয়ে যাব বিলীন,
ফেকাহ সাহেব একটু হাসলেন
বল্লেন থাকতে খুশি,
যাকাত বিধান নেই যদি ঋণ
কর্য থাকে বেশি।

জলদি যদি আপনি পারেন
ব্যাঙ্কের থেকে কর্য নিবেন,
ঋণ নেবেন অবশ্যি
হাজার কোটির একটু বেশি
যাকাত তবে হবে যে মাফ
থাকতে হবে পাক সাফ।

রমযান মাসের শেষ হয় যখন
কর্য ফেরত দেবেন তখন
হাত যখন মেলাচ্ছিল
মোটা একটা খাম ছিল
হাদিয়াটা মন্দ নয়
হিসাব যখন এমন হয়।

আমি কখনও ছড়া লিখিনি।
আজ প্রথম লিখলাম তবে মনে হচ্ছে একটা খিচুড়ি হয়ে গেছে।
স্বরবৃত্তঃ
৭+৭ / ৮+৮ (প্রথম ৪ স্তবক)
৮+৮ / ১৪+১৪ (শেষ ৬ স্তবক)

সবাইকেও হাসালাম আমিও হাস্যকর হলাম।
মাঝে মধ্যে হাস্যকর হতে ভালই লাগে। :)