ইলহাম এর সকল পোস্ট

অনুপ্রেরণার বৃষ্টি

অনুপ্রেরণার বৃষ্টি

যা অন্যায়, যা অসঙ্গতি
যা অবক্ষয়, যা দূর্নীতি
যা আছে অনিয়মের নিয়মে
তুলে আনবো কলমে কলমে
এ আমার দৃঢ় অঙ্গিকার।

তবে আমিও ফেরেস্তা নই
আমিও ভুলের উর্ধে নই
আমার ভুল ত্রুটি চোখে পড়লে ভাই
জানিয়ে দিও আমায় শুধরে নিতে চাই
এটুকুওই আছে শুধু চাইবার।

আমি মানুষ, স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি
সৃষ্টির মাঝে করতে এসেছি অণুসৃষ্টি
নাই বা দিলে ভালোবাসা
তবুও আমার প্রত্যাশা
অন্তত ঢেলে দিও অনুপ্রেরণার বৃষ্টি।।

দ্য আর্থল্যান্ড

দ্য আর্থল্যান্ড

ঐ যে!
আমি শুনতে পাচ্ছি সেই শব্দ!

কান পেতে রেখো,
যে রাতে চাঁদ নেই চারিদিকে শুধু নিস্তব্ধ
শুনতে পাবে তুমিও সেই শিহরণ জাগা শব্দ।

এটা বিগ-ব্যাং এর মতো তীব্র কোনও শব্দ নয়,
কিংবা এটা কোনও এয়ার প্লেন দ্বারা
ওয়ার্ল্ড ট্রেড-সেন্টার ধ্বংসের শব্দও নয়।

এটা কোনও ধনীর দুলালের হ্যামার গাড়ী
স্টার্ট দেবার শব্দ নয়,
কিংবা এটা কোনও ভিক্ষুকের থালায়
কয়েন পড়ার শব্দও নয়।

এটা ফ্যানের তীব্র বাতাসে পেপারের পাতা
এলোমেলো হওয়ার শব্দ নয়,
কিংবা শার্ট ইন করার সময়
হঠাৎ কোনও বোতাম খুলে পড়ারও শব্দ নয়।

ঐ যে!
আমি শুনতে পাচ্ছি সেই শব্দ!

আমি শুনতে পাচ্ছি,
পৃথিবীর মানচিত্র থেকে
সমস্ত সীমারেখা মুছে যাবার শব্দ।

অচেনা অদ্ভূত এক শব্দ
ছিন্ন ভিন্ন করে দিচ্ছে পৃথিবীর সব সীমা-রেখার চিত্র,
চিহ্ন রাখছে চিহ্নিত করে বিশ্বময় শুধু একটি দেশের মানচিত্র।

শুনতে পাচ্ছি নির্মাণ হচ্ছে শত শত এয়ার-পোর্ট
আর সবাই ফেলে দিচ্ছে তাদের সব পাসপোর্ট।

ভেঙ্গে যাচ্ছে সব ভিসা প্রসেস
শুরু হচ্ছে সব খানে সবার প্রবেশ।

শুনতে পাচ্ছি,
ভেঙ্গে যাচ্ছে সব অন্যায় আর প্রতিবন্ধকতা
বাতিল হচ্ছে সব পেশী শক্তি আর পাশবিকতা।

শোনা যাচ্ছে,
পৃথিবী জুড়ে শুধু একটি দেশের ডিম্যান্ড
দেশটির নাম শোনা হচ্ছে “দ্য আর্থল্যান্ড”।

ঐ যে!
শোনা যাচ্ছে!
মানবতার পায়ের আওয়াজ,
আসছে ওরা “দ্য আর্থল্যান্ডে”
শোনা যাচ্ছে সেই কুচকাওয়াজ।

ঐ যে!
শোনা যাচ্ছে!
সেই শব্দ ঐ দূর বাতাসে
শিক্ষা-চিকিৎসার খরচ নেই
ঔষধেরও খরচও নেই
আছে শুধু মানবতন্ত্র সেই দেশে।

মিশে গেছে সবাই এক নিবিড় ভালবাসার বন্ধনে
চুরি হয়ে যাওয়া বিশ্বাস গুলো ফিরে আসে সেখানে।

ঘৃণা-অপমান-অবহেলা গুলো ফিরে আসে সম্মান-শ্রদ্ধা হয়ে অকপটে,
ঝরে পড়া অশ্রু গুলো ফিরে আসে স্নেহ মমতায় মুখে মুখে হাসি ফোটাতে।

এক সুতোয় হচ্ছে গাথা হৃদ্যতায় ভালোবাসায়
সকল মানুষের একই প্রাণ,
আনন্দ-সুখ আর উল্লাসের ঐকতান
একসাথে গাইছে সবাই মানবতার জয়-গান।

ঐ যে!
শোনা যাচ্ছে!
সেই শব্দ! সেই ডিম্যান্ড!
পৃথিবী জুড়ে শুধু একটি দেশের ডিম্যান্ড
দেশটির নাম শোনা যাচ্ছে “দ্যা আর্থল্যান্ড”।

________________________
কাব্যগ্রন্থঃ “অদৃশ্য বলয় থেকে বলছি”।

অকেজো করে দেবে সব মাশিনগান

এইতো সেদিন নুসরাত
আজকে আবার রিফাত !

কেরোসিন শরীরে ঢেলে
মানুষ মানুষকে পুড়িয়ে মারার নৃশংসতা!
চা-পাতি দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে
মানুষ মানুষকে মেরে ফেলার বর্বরতা!

কেন এগুলো করছেন?

তোরা কবিরা কবিতা লেখা বাদ দে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে লিখিস?
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, ঘুষের বিরুদ্ধে লিখিস?

হ্যাঁ, লিখি।
জাহান্নামে কী থাকে?
আগুন।
মানুষের শরীরে আগুন দিয়ে বুঝিয়ে দিলাম জাহান্নামটা কি।
কেন?
দিনের বেলা চা-পাতি দিয়ে কেন কুপিয়েছি বুঝিস না?
না।
তোদের কলিজা কাঁপানোর জন্য, তোরা কবিতা লেখা বাদ দে।

অন্যায়ের বিরুদ্ধে কবিদের কলম চলেছে, চলছে, চলবেই।
তোদের সব কবিদের ব্রাশ ফায়ার করে ওপরে পাঠিয়ে দেবো।

কবিদের কলম ওই চা-পাতির চেয়ে ধারালো।
কী?
কবিদের কলমের আগুণের ফুলকি তোদের ওই জাহান্নামের চেয়ে উত্তপ্ত।
কী?
কবিদের কলমের এক ফোটা কালি অকেজো করে দেবে তোদের সব মাশিনগান।

এই বাংলায় আসতে চাই

এই বাংলায় আসতে চাই

যদি আবারো একটি জন্ম পাই
তবে অ্যান্ড্রোমিডা বা ট্রায়াংগুলাম নয়
এই মিল্কিওয়েতে আসতে চাই।

যদি আবারো একটি জন্ম পাই
তবে মঙ্গল, বৃহষ্পতি না ইউরেনাস নয়
এই পৃথিবীতে আসতে চাই।

যদি আবারো একটি জন্ম পাই
তবে ইউরোপ, এমেরিকা বা অষ্ট্রেলিয়া নয়
এশিয়াতেই আসতে চাই।

যদি আবারো একটি জন্ম পাই
তবে জাপান, কোরিয়া বা কুয়েত নয়
এই বাংলাদেশে আসতে চাই।

এই বাংলার মেঠো পথ ধরে
অবুঝ সবুজ ঘাসের নির্জন প্রান্তরে
থেমে থাকা অলস দুপুরের পুকুরের পাঁড়ে
জমে থাকা শিউলি ফুলের ঝিলের ধাঁরে
সুদূর বহুদূর অনেক দূরের পার্বতীপুরে
বসে থাকবো আমি পার্বতী আসবে বলে
মেহেদি রাঙা হাতে হাত দুটি ধরবে বলে।

সেরিজ রঙের শাড়ির আঁচল নামিয়ে দিয়ে
জড়িয়ে ধরবে আমায় বুকের সাথে বুক লাগিয়ে
দুচোখে আমার ভালোবাসার চুম্বন এঁকে দেবে বলে
বসে থাকবো আমি পার্বতী আসবে বলে।।

এই বাংলার নির্জন মধ্য রাত্রিতে
তীব্র গর্জনে বর্ষার অঝোর বৃষ্টিতে
স্ট্রীট-লাইটের আলো-বৃষ্টি দেখবো বলে
জানালার কাঁচ বৃষ্টিতে ঝাপসা হবে বলে।

যদি আবারো একটি জন্ম পাই
না, আর কোথাও নয়
এই বাংলায় আসতে চাই।।

কোথাও যেন একটা কিছু নেই

কোথাও যেন একটা কিছু নেই

এখানে সেখানে কোথাও যেন একটা কিছু নেই
অন্তরে অন্দরে সুন্দরে বন্দরে মন্দিরে অস্থিরে
গণ্যরে মাণ্যরে পিঞ্জরে জিঞ্জিরে অস্থিরে স্বস্থিরে
দেখেছি খুঁজেছি নেই তো! যেন একটা কিছু নেই।

প্রান্তরে কান্তারে আন্ধাঁরে চাঁন্দোরে গর্গরে উত্তরে
কিংকরে কিন্নরে গম্ভীরে কুম্ভীরে অপ্সরে খদ্দরে
কোথাও নেই তো! কোথাও যেন একটা কিছু নেই।

ভালোবাসায়
অবহেলায়
নিঃশ্বাসে
বিশ্বাসে
উপহাসে
উপাস্যে
হাসিতে
কান্নাতে
গদ্যতে
পদ্যতে
কোথাও তো নেই!

কামজ্বরের কামনায়
ওষ্ঠাধারের উষ্ণতায়
কোথাও তো নেই!

কাহারবা কাহাল রাগ খেয়াল
হারিয়েছে তাল হয়েছে বেহাল।

জীবনের যতো মিল বা অমিল
হিসেবের খাতায় নেই অন্ত্যামিল।

বসে আছি পুকুর পাড়ে একলা একা
একলা ঘাটে বিকেল বেলা একা একা
ছোট্ট ছোট পাথর ছুড়ি আস্তে করে একটা একা
পাথর ডুবে টপাক করে ছিটকে পানি আকা বাঁকা।

আঁকর বাঁকর শেকড় পাথর হারিয়ে গেল সব
একটাও যে নেই!
নেই তো আর কিছুই!
কোথাও তো নেই! কোথাও যেন একটা কিছু নেই।
খানে সেখানে কোথাও যেন একটা কিছু নেই

নীল পাখির গানের মতো

নীল পাখির গানের মতো

পড়ন্ত দুপুরের নীল পাখির গানের মতো
তুমি এসেছিলে আমার জীবনে।
তারপর লেগস্পিন বলের মতো আকস্মিক বাঁক নিয়ে
আঘাত হানলে আমার হৃদয় উইকেটে,
উপড়ে দিলে আমার ভালোবাসার মিডিল স্ট্যাম্পটি।

কিন্তু সাবধান!!!

তুমি যখন সমুদ্রের বেলাভূমিতে বায়ু পরিবর্তনে যাবে,
নীল সমুদ্রের সৌন্দর্যের মতো
আমিও ঢুকে পড়বো তোমার হৃদয়ে,
শুরু হবে সেকেন্ড ইনিংস এর খেলা।

তীরে আছড়ে পড়া সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো
তীব্র ইন সুইং বলের মতো দ্রুত বাঁক নিয়ে
যেকোনো মুহুর্তে আঘাত হানবো
তোমার হৃদয়ের বাম অলিন্দে।

ঘুমটুকু দিয়ে যেও

ঘুমটুকু দিয়ে যেও

তোমাকে সেই কবে দেখেছিলাম মনে নেই
অতঃপর মাঝে মধ্যে ফেসবুকে
আমার লেখায় তোমার প্রতিক্রিয়া।

আকস্মিক দেখা হয়ে গেল আমাদের
তোমার কথায় চলায়
কি যেন ছিল কোথায়!

রাতে বাসায় এসে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম
কিন্তু কিছুক্ষণ পরই লাফিয়ে উঠলাম
স্বপ্ন।

হ্যাঁ, তোমাকে স্বপ্নে দেখে ঘুম ভেঙে যায়।
ডান পাশ থেকে বাম পাশ ফিরে
আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলাম
কিন্তু আবারও লাফিয়ে উঠলাম
স্বপ্ন।

হ্যাঁ, আবারও একই স্বপ্ন।

এবার বাম থেকে ডানে
কিন্তু আবারও লাফিয়ে উঠলাম
স্বপ্ন।

হ্যাঁ, আবারও তুমি।
সেই রাতে আর ঘুমাতে পারি নি।

পরদিন তোমাকে ফোনে জানালাম
বললে, কী স্বপ্ন দেখেছেন?
আমি তিন বার একই স্বপ্নের কথা বললে
তুমি দুই মিনিট ধরে হাসতে থাকলে
আমি ঘড়ি দেখেই হাসার সময় বলেছি।

অতঃপর বললে, মাথায় পানি ঢালতে
আমি তখন একটা অফিসে ছিলাম
ওয়াস রুমে গিয়ে মাথায় পানি ঢাললাম
বিশ্বাস হচ্ছে না?
আমার ভেজা চুলের ছবি আছে
কিন্তু এখানে সেটা দেবো না।

একজন জিজ্ঞেস করলেন, রোজায় ধরেছে?
না।
তাহলে?
কী যে ধরেছে বুঝতে পারছি না
তবে বুকের ভেতর একটা ব্যথা!

উনি একটু হেসে বললেন, ঠিক হয়ে যাবে।

এখন তুমি আমার থেকে দূরের শহরে
কিন্তু আমি যে রাতে ঘুমাতে পারছি না
ওই স্বপ্নের ভয়ে!

রাতে উঠে গিয়ে মাথায় পানি ঢালি
কিন্তু ঘুম যে আসে না আর!

এভাবে আর কত নির্ঘুম রাত? কীসের অপেক্ষায়?
আর কত পানি ঢালতে হবে আমার মাথায়?

একটি বার।
হ্যাঁ, শুধু একটি বার
এসে দেখা দিয়ে যেও
মাথার পানিটুকু মুছে দিয়ে
ঘুমটুকু দিয়ে যেও।

জীবনের অর্থ

জীবনের অর্থ

আজমল সাহেবের ছেলের নাম রাখা হলো ঝলমল।
তার স্ত্রী রেগে গিয়ে বললো, এটা কোনও নাম হলো?

আজমল সাহেব বললেন, আমি প্রফেশনে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হলেও মূলত একজন কবি। কবিরা যখন কবিতা লেখেন তখন ওনারা অন্ত্যামিল রাখেন। আমি কবিতা লিখলেও জীবনের সব কিছুতেই অন্ত্যামিল রাখবো ভাবছি।

উনার স্ত্রী বললেন, আর কোথায় অন্ত্যামিল রেখেছো?

এই ধরো তোমাকে বিয়ে করতে গিয়ে আমাকে ৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। অনেক সুন্দরী মেয়ে, ধনি মেয়ে এসেছিলো কিন্তু আমি বিয়ে করি নি। আমি শুধু খুঁজে চলেছিলাম আমার নামের সাথে যে মেয়েটির নামের অন্ত্যামিল থাকবে আমি সেই মেয়েকেই বিয়ে করবো। অবশেষে খোঁজ পেলাম পুরানো ঢাকায় একটি মেয়ে আছে যার সাথে আমার নামের অন্ত্যামিল আছে। ব্যাস ওমনি আমি তোমাদের বাসায় গিয়ে হাজির হলাম। তোমার বাবতো রাজিই হচ্ছিলেন না। আমি অন্যান্ন মেয়েদের বায়োডাটা দেখিয়ে বললাম, এই দেখুন কত সুন্দরী এবং ধনি মেয়েরা আমাকে বিয়ে করতে রাজি আছে কিন্তু আমি বিয়ে করিনি।

তোমার বাবা জানতে চাইলো, কেন বিয়ে করছেন না?
আমি বললাম, দেখুন ওই সব মেয়েদের নামের সাথে আমার নামের অন্ত্যামিল নেই তাই বিয়ে করি নি।

তোমার বাবা জানতে চাইলেন, অন্ত্যামিল আবার কী জিনিষ?
আমি বললাম, এই যে দেখুন আমার নাম আজমল আর আপনার কন্যার নাম মখমল – এটাই অন্ত্যামিল।

তারপর তোমার বাবা আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কি যেনো ভাবছিলেন, তারপর বললেন, তুমি কী করো?

আমি আমার ভিজিটং কার্ড বের করে দেখালাম, সেখানে লেখা ছিলো, আজমল হোসেন, এডিএম।

আমি বললাম, এখনতো ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট, আমি দ্রুতই সচিব হয়ে যাবো।

যাইহোক, অবশেষে বিয়ে হলো, এখন আমরা আজমল, মখমল এবং ঝলমল।

আজমল সাহেবের স্ত্রী আর কথা বললো না।

আজমল সাহেব বললেন, আমাদের এই বাড়ির কী নাম দিয়েছি দেখেছো?

স্ত্রী জবাব দিলো, দেখবো না কেন, নাম দিয়েছো নিরমল।

আজমল সাহেব বললেন, আর আমার ফেভারেট খেলার নামও ফুটবল, ছোট বেলায় আমার খেলা দেখে কাউ বলতো পেলে আবার কেউ বলতো ম্যারাডোনা হা হা হা!

তার স্ত্রী বললেন, আচ্ছা বুঝলাম। কিন্তু তুমি কি একটা বিষয় লক্ষ করেছো?

-কী বিষয়?

– এই যে আমাদের ঝলমল জন্মের পর থেকে কত হাসিখুশি এবং দূরন্ত ছিলো কিন্তু ওকে যখন চার বছরে স্কুলে ভর্তি করে দিলে তারপরই ও একদম চুপচাপ হয়ে গেল, সামনে যে এস সি পরীক্ষা, ক্লাসের পড়াতো পড়েই না সাড়াদিন শুধু গল্পের বই পড়ে।

আজমল সাহেব ঝলমলকে ডাক দিলেন।

ঝলমল এসে বললো, জি বাবা, বলো কী হয়েছে?
– তোমার না সামনে যে এস সি পরীক্ষা?
– হ্যাঁ
– তাহলে তুমি ক্লাসের বই বাদ দিয়ে গল্পের বই পড়ছো কেন?
– বাবা, আমার এক বই বার বার পড়তে ভালো লাগে না।
– মানে?
– তুমি যেমন আমাকে এখন গল্পের বই পড়তে দেখছো তেমনই আমি ক্লাসের সব বই গল্পের বইয়ের মতো পড়ে শেষ করে ফেলেছি।
– গল্পের বই আর ক্লাসের বই একই নিয়মে পড়লে কি হবে?
– আমার কাছে এটাই সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি মনে হয়।
– কেন?
-আমি একটা গল্পের বই শেষ করার পর ওটা হুবহু মনে থাকে, যেখান থেকে প্রশ্ন করবে আমি উত্তর দিতে পারবো
– কিন্তু…
– না বাবা, তোমাদের এইসব মুখস্ত করার নিয়ম আমার ভালো লাগে না।
-তাহলেতো পরীক্ষায় খারাপ করবি!
– আমি পি এস সি তে কী পেয়েছিলাম?
– জি পি এ ৫
-জে এস সি তে কী পেয়েছিলাম?
-গোল্ডেন এ
– আমাকে কী ক্লাসের বই পড়তে দেখেছো?
– না, তা অবশ্য দেখিনি।
– স্কুল থেকে যেদিন বই দিয়েছিলো তার দুই সপ্তাহের মধ্যে আমি সব বই গল্পের বই হিসেবে পড়ে শেষ করে ফেলেছিলাম।
– ও
– তাই যে প্রশ্নই এসেছিলো আমি উত্তর দিতে পেরেছিলাম।
– আচ্ছা!
– আমার মনে হয় আমাদের দেশে ছাত্র ছাত্রীদের ক্লাসের বইএর ওপর মুখস্ত করার চাপ দেয়া ঠিক না বরং ওদের বলা প্রয়োজন এগুলো গল্পের বইয়ের মতো করে পড়, কোনও চাপ নেই।
– তাহলে কী হবে?
– তাহলে তারা পরীক্ষায় ভালো করবে।
– আচ্ছা! তুই ছোট বেলায় বেশ দূরন্ত এবং চঞ্চল ছিলি কিন্তু এখন এমন চুপচাপ হয়ে গেলি কেন?
– আমি ছোট বেলা থেকে একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজে চলেছি।
– কী প্রশ্ন?
– জীবনের মানে কী?
– আরে! জীবনের মানে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করা এবং ভালো চাকুরী পাওয়া।
ঝলমল আর কোনও কথা বলে নি।

এস এস সি পরীক্ষা দিয়ে সে তার বাবকে বললো, আমাকে পঞ্চাশ লাখ টাকা দাও।
আজমল সাহেব একটু আশ্চর্য্য হয়ে বললেন, এতো টাকা দিয়ে কী করবি?
– জীবনের মানে খুঁজে বের করবো।
– জীবনের মানে খুঁজে বের করবার দরকার নেই, পরীক্ষা শেষ হয়েছে, চল আমরা বরং গ্রামের বাড়ি থেকে ঘুরে আসি।

কিন্তু ঝলমল গ্রামের বাড়িতে গেলো না। ইন্টারনেট ঘেটে ঘেটে এমিরিকার একটি স্কুলে স্কলারশিপ পেয়ে গেলো।

তারপর একদিন উধাও। সপ্তাহ খানেক পর মায়ের কাছে ফোন করে বললো, আমি এমিরিকার একটি স্কুলে স্কলারশিপ নিয়ে ভর্তি হয়েছি কিন্তু আমার উদ্দেশ্য জীবনের মানে খুঁজে বের করা।

ওখানে একদিন সাবিনা ইয়াসমিন এর সাথে দেখা হয়ে গেলো।
ঝলমল জানতে চাইলো, আপনি যে “এখনই সময়” নামক একটি সিনেমায় গান গেয়েছিলেন, জীবন মানে যন্ত্রনা – এই গানের লেখকের নাম মনে আছে কি?

সাবিনা ইয়াসমিন উত্তর দিলেন, সেতো অনেক আগে গেয়েছিলাম, গানের লেখক যে কে এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না।

ঝলমল চলে গেলো বিল গেটস এর বাসায়।
সিকিউরিটি পরিচয় জানতে চাইলো এবং আগে যোগাযোগ করে এসেছেন কি না এইসব প্রশ্ন করতে লাগলো। ঠিক এই সময় বিল গেটস বেরিয়ে গাড়িতে উঠতে যাবেন কিন্তু উঠলো না।
সিকিউরিটির কাছে এসে জানতে চাইলো কী হয়েছে?
সিকিউরিটি বললো, এই ছেলেটি আপনার সাথে দেখা করতে চায়।

বিলগেটস ঝলমলকে বাসার ড্রয়িংরুমে নিয়ে বসালো। এরই মধ্যে কফি সহ নানান ধরনের ফুড আইটেম চলে আসলো।
বিলগেটস বললেন, আমি সাধারণত কাউকে তেমন সময় দিতে পারি না কিন্তু তোমার চোখে আমি অন্য কিছু দেখেছি,মাইক্রোসফট এ জয়েন করতে চাও?
ঝলমল বললো, না স্যার!
– তাহলে কী জানতে চাও বলো।
– স্যার জীবনের মানে কী?
– শোন, জীবনের মানে হচ্ছে মৃত্যুর সময় পর্যন্ত টাকা কামানো, তোমার মৃত্যুর পর মানুষ যেনো এসে দ্যাখে তুমি টাকা গুনতে গুনতে মারা গেছো।

ঝলমল বললো, স্যার! আমার স্কুলের টাইম হয়ে গেছে, আমি আজ উঠি।
বিলগেটস বললেন, তুমি ট্রিপল ই নিয়ে পড়ালেখা করো আর পড়ালেখা শেষ হলে মাইক্রোসফটে জয়েন করতে পারো।
– বেতন কত দিবেন স্যার?
– ওটা কোনও সমস্যা না, ব্ল্যাঙ্ক চেক দিয়ে দেবো, তোমার যা প্রয়োজন সেই অঙ্ক বসিয়ে নেবে।
ঝলমল বললো, স্যার এটা আপনার মহানুভাবতা।

এরপর ঝলমল বেরিয়ে গেলো।

দুদিন পর হোয়াইট হাউজে গিয়ে হাজির। সিকিউরিটিরা বিভিন্ন প্রশ্ন করতে লাগলো। এক সিকিউরিটি বললো, তুমি মিস্টার ডোনাল্ড ট্রাম্প এর কাছে কী জানতে চাও?
ঝলমল বললো, আমি উনার কাছে জানতে জীবনের অর্থ কী?

ডোনাল্ড ট্রাম্প সিসি ক্যামেরায় সব শুনছিলেন। তারপর একটা ক্যামন যেন আওয়াজ হলো।
এক সিকিউরিটি এসে ঝলমলকে ভেতরে নিয়ে গিয়ে বসালো।

কিছুক্ষণ পর ডোনাল্ড ট্রাম্প এসে বললেন, শোন, ইউ এস এ এর প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে আমার কাছে জীবনের অর্থ ছিলো ভিন্ন কিন্তু এখন তা পাল্টে গেছে।
ঝলমল বললো, এখন আপনার জীবনের অর্থ কী স্যার?
– ওই যে কোরিয়ায় কিম দায় জুং নামক একটা লোক আছে, তাকে শায়েস্তা করাই এখন আমার জীবনের অর্থ
– কেন স্যর?
– এমিরিকার জন্য প্রথমে হুমকী ছিলো সৌভিয়েত ইউনিয়ন কিন্তু আমাদের বুদ্ধির কাছে সৌভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেছে।
– আচ্ছা!
-তারপর হুমকী হয়ে দাড়ালো চীন কিন্তু তাকেও বিভিন্ন কৌশলে আঁটকে রেখেছি।
– ও
– তারপর সাদ্দাম একটু বাড়াবাড়ি করছিলো কিন্তু ওটাকে বেহেস্তে পাঠিয়ে দিয়েছে আমার আগের প্রেসিডেন্টরা
– বুঝলাম স্যার, কিন্তু কিম দায় জুং……
– সে কথাতে আসছি, এরপর ইরাণকে হুমকী মনে হয়েছে কিন্তু এ বিষয়ে এখুনি কোনও সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না।
– কেন স্যার?
– ইরান নিজেরাই যুদ্ধ বিমান বানায় এবং যার সংখ্যা ইসরাইলের চেয়ে বেশি এবং পারমাণবিক শক্তিও ইসরাইলের চেয়ে বেশি, ওরা রেগে গেলে এক ঘন্টার মধ্যে ইসরাইলকে তুলাধুনা করে দিতে পারে।
– ইসরাইলকে তূলাধুনা করলে ইউ এস এ এর কী?
– শোন, শতকরা ১০% এমিরিকানদের মাথায় কটুবুদ্ধি আছে আর ৯০% এমিরিকানরা হচ্ছে সহজ সরল।
– তাই নাকি?
– হ্যাঁ, এটা অনেকেই জানে না, তাই বিশ্ব চালানোর জন্য আমাদের নির্ভর করতে হয় ইসরাইলদের ওপর।
-কেন স্যার?
– ফারাও জনগোষ্ঠীর নাম শুনেছো?
– জি শুনেছি
– তুমি মুসলিম, তাহলেতো জানই তোমাদের মূসা নবী ফারাওদের শায়েস্তা করতে এসেছিল কারণ ফারাও এর রাজা নিজেকে স্রষ্টা হিসেবে ঘোষণা করেছিলো।
– হ্যাঁ, তা জানি।
– কিন্তু তোমাদের মূসা নবী ফারাওদের শায়েস্তা করতে না পেরে নিজেরাই তার জ্ঞাতি গোষ্ঠী নিয়ে রাতে আঁধারে পালিয়ে গিয়েছিলো।
– কিন্তু স্যার, মূসা নবীকে ফারাও’রা ধরতে গিয়ে ফারাওএর রাজাতো নিজেই নীল নদে ডুবে মরলো।
– ওটা আসলে ব্যাডলাক,ফারাও’রা নীল নদ পার হতে গিয়ে হঠাত সুনামী শুরু হয়ে গেলো তা না হলে ঠিকই তোমাদের ওই মূসা নবীকে শায়েস্তা করে ছাড়তো।
-ও
– এর পরের ঘটনা নিশ্চয় জানো!
– জি।
– ওই মূসা নবীর সাথে যারা ছিলো তারা আসলে ফারাওদের বংশধর, তারা কাউকে বিশ্বাস করে না, নিজের চোখে দেখলে বিশ্বাস করে।
– হ্যাঁ, আমি পবিত্র কোরআনে পড়েছি, মূসা নবীর উম্মতরা মূসা নবীকে এবং তাঁর সৃষ্টিকর্তাকে সংশয়ের চোখে দেখতো।
– ওই ফারাও এর বংশধর হচ্ছে ইসরাইলিরা।
-ও
– ওদের সন্তানদের বয়স যখন তিন বছর হয় তখন টেবিলের ওপর দাড় করিয়ে তাদের মা বাবারা একটু দূরে দাঁড়িয়ে বলে, আসো, একলাফে পিতার কোলে আসো, মাতার কোলে আসো।
– তারপর?
– সন্তানটি যখন লাফ দেয় তখন তাদের পিতা-মাতা সড়ে যায়।
-কেন স্যার?সন্তানটি তাহলে তো নিচে পড়ে গিয়ে ব্যথা পাবে!
– আরে! এজন্যইতো ওরা এগুলো করে যেন ছোট বেলা থেকেই শিক্ষা পায়, নিজেকে ছাড়া আর কাউকে বিশ্বাস করা যাবে না, পিতা-মাতাকেউ না।
-ও মাই গড!
-তাই এই মুহূর্তে ইরানকে কিছু বললে ইরান ইসরাইলকে শেষ করে দেবে যা ইউ এস এ এর জন্য হিতকর হবে না।
– আর তোমাদের মিডিল ইষ্টে কিছু মানুষ ধনী হয়েছে তেলের কারনে কিন্তু এখন মিডিল ইষ্টের সব ক্ষনির তেল এক করলেও ইউ এস এ যে তেলের রিজার্ভ আছে তার সমান হবে না
– এতো তেল কিনলেন কী দিয়ে?
– অস্ত্র দিয়ে।
– তা আপনাদের রিজার্ভে কী পরিমাণ তেল আছে?
– এই ধরো তোমাদের বাংলাদেশের মতো আয়তন অর্থাৎ ৬০ হাজার বর্গমাইল আয়তন এবং ২ হাজার মাইল গভীরতার এক বিশাল সাগরের মতো তেলের ট্যাঙ্কি আছে
– এতো তেল দিয়ে কী করবেন?
– যখন সবার তেল শেষ হয়ে যাবে তখন ইউ এস এ চওড়া দামে তেল বিক্রি করবে।
– এটা কী ওই ইসরাইলদের বুদ্ধি?
– হ্যাঁ। ওদের বুদ্ধিতেই ইউ এস এ পৃথিবী চালাচ্ছে কিন্তু ওই কিম দায় জুং নামক লোকটাকে কোনও ভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না, সে কিছুই ভয় পায় না।
– ও
– তাই আমার এখন জীবনের একটাই অর্থ আর তা হচ্ছে কিম দায় জুংকে শায়েস্তা করা, অবশ্য প্রেসিডেন্ট এর পদ থেকে চলে গেলে আমার জীবনের অর্থ বদলেও যেতে পারে।

ঝলমল মিস্টার ডোনাল্ড ট্রাম্প এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যেতে চাইলো কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প বললেন, এতো রাতে আর যাবে কোথায়! তুমি না হয় আজ রাতে আশেপাশের কোনও হোটেলে থেকে যাও।
– কিন্তু স্যর!
– এগুলো খুব ভালো হোটেল আর ভাড়া এবং সিকিউরিটি আমার, তাই তোমার টেনশন নেই।
– কিন্তু স্যার, আমাকে না হয় আমার কলেজে নামিয়ে দিতে বলুন, শুধু শুধু হোটেলে রাখছেন কেন?
– না, আসলে তুমি যে প্রশ্ন আজ আমাকে করেছো এই প্রশ্ন এর আগে কেউ আমাকে করে নি এবং এটা একটা গুরুত্বপুর্ন প্রশ্নই বটে।
– কিন্তু স্যার………
– শোন, যে এই প্রশ্ন করতে পারে সেই ব্যাক্তিও নিশ্চিত একজন গুরুত্বপুর্ন ব্যাক্তি এবং এই ধরনের মানুষের মুল্যায়ন করা আমাদের কর্তব্য।
– স্যার……
– আমি হোয়াইট হাউজেই তোমাকে রাখতে ছেয়েছিলাম কিন্তু জাতিসংঘের একটা কনফারেন্স এর জন্য রাখতে পারছি না।

ডোনাল্ড ট্রাম্প একটা ফোন করলেন।

সাথে সাথে একটা রোডস রয়েলস গাড়ি চলে এলো। সেখানে ঝলমলকে বসানো হলো আর সামনে পেছনে পুলিশ দিয়ে এক হোটেলে পৌঁছে দিলো।
ঝলমলের বাবার কথা মনে পড়ে গেল কারণ ওর নামও ঝলমল আবার হোটেলটাও বেশ ঝলমল – এখানে একটা খাঁটি অন্ত্যামিল পাওয়া গেছে।

ঝলমল হোটেলে ঢুকে লাইট জ্বালাতেই বিছানায় দেখতে পেলো একটি সুন্দরী মেয়ে শুয়ে আছে।
ভুল করে অন্য রুমে ঢুকে গেছে ভেবে ঝলমল দ্রুত বেরিয়ে যেতে চাইলো কিন্তু মেয়েটি ঝলমলের হাত টেনে ধরলো।
মুহূর্তেই ঝলমল আঁতকে উঠলো। আঁতকে ওঠার কারণ হচ্ছে ওই মেয়েটিকে সে চেনে এবং বেশীরভাগ মানুষই চেনে।

ঝলমল বললো, আপনি এখানে কেন?
মেয়েটি বললো, তুমি আমাকে চেনো?
– আপনাকে চেনে না এমন মানুষ কি এই দুনিয়ায় আছে?
– আমার নাম কী বলোতো?
– ঝলমল বললো, আপনার নামটা বাঙলায় বলি?
– বলো!
-রৌদ্রোজ্জ্বল লিওন
-বাহ! তুমি তাহলে আমাকে চেনো।
– হ্যাঁ, আপনি এখানে কেন?
– এটা আমার অন্তর্বাস খুললেই বুঝতে পারবে।
– ও মাই গড! না ওটা খোলার প্রয়োজন নেই।
– আরে! তোমাদের দেশেতো বেশীরভাগ খয়েরি এবং কালো, আজ পিংক কালার ওপেন করে দ্যাখো!
– না, মানে আপনাকে এখানে কে পাঠিয়েছে?
– তুমি একটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছো না?
– হ্যাঁ, আমি আসলে জানতে চাইছিলাম জীবনের অর্থ কী?
– সেটাই আজ তোমাকে হাতে কলমে এমন উত্তর দিয়ে দেবো যে এরপর থেকে তুমি আর জীবনের অর্থ খুঁজতে চাইবে না।
– কেন?
– জীবনের কী অর্থ তা আজই তুমি পেয়ে যাবে।

মেয়েটি ঝলমলকে ধরে নিজের দিকে একটা হ্যাঁচকা টান দিলো, তারপর অন্তর্বাস খুলতে লাগলো।

ঝলমল দুই হাত দিয়ে চোখ ঢেকে আছে। চোখ থেকে একটা আঙুল সরাতেই রুমের চাবিটা দেখলো, তারপর দড়জা খুলে একটা দৌড় দিলো।

নিচে নেমে দ্যাখে সিকিউরিটি দাঁড়িয়ে আছে । ঝলমল বললো, আমার হোস্টেলে এক বন্ধু মারাত্নক অসুস্থ হয়ে পড়েছে তাই আমাকে এক্ষুণি যেতে হবে।

তারপর সোজা চলে গেলো ওর কলেজের হলে।

রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছে জীবনের অর্থ খোঁজা আর ঠিক হবে না এই শহরে।

পরদিন স্কলারশিপ এর কিছু টাকা দিয়ে একটি ট্যালিপ্যাথিক ডিভাইস কিনলো। মৃত মানুষের কাছে গিয়ে কিছু টেলিপ্যাথিক কোড ইউজ করলে ওই মৃত ব্যাক্তির কাছ থেকে কিছু ট্যা্লিপ্যাথিক কোড আসে যার মাধ্যমে ঝলমল যে প্রশ্ন করে তার উত্তর পাওয়া যায়।
ঝলমল চলে আসলো গ্রীসে। সক্রেটিস এর কবরের কাছে গিয়ে কিছুক্ষণ বসে থেকে কিছু ট্যালিপ্যাথিক কোড ইউজ করলো।
প্রায় সঙ্গে সঙ্গে যে কোড ফেরত আসলো তার অর্থ হচ্ছে, জীবনের অর্থ হচ্ছে সাহসের সাথে সত্যকে তুলে ধরা যেনো সমাজের কলুষিত অধ্যায় ভেঙে পড়ে এবং এজন্য যদি হেমলক পান করতে হয় তাও স্বাচ্ছন্দে পান করতে হবে।
ঝলমল আবার কোড ইউজ করে জানতে চাইলো, সত্য তুলে ধরতে গিয়ে যদি নিজের জীবনই শেষ হয়ে যায় তাহলে কেউ কী আমাকে মনে রাখবে? আর যে সত্য আমি তুলে ধরবো আমার মৃত্যু হলেতো সে সত্য হারিয়ে যাবে
– তোমাদের দেশে রিসেন্টলি নুসরাত নামের একটি মেয়ে সত্যকে তুলে ধরার জন্য আগুনে পুড়ে মরেছে না?
– জি
-ওই নুসরাতকে কী কেউ ভুলে গেছে?
– না
– ওই কলুষিত অধ্যায়কে তোমাদের সরকার এখন ভেঙে দিচ্ছে না?
– জি
– তোমার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছো?
-জি

এরপর ঝলমল চলে গেলো ইংল্যান্ডে এবং নিউটনের কবরের পাশে গিয়ে কোড ইউজ করে জীবনের অর্থ জানতে চাইলো।
যে উত্তর এলো তা হচ্ছে, আসলে দ্যাখো আপেল গাছের নিচে ঝিম মেরে বসে থেকে আমি অভিকর্ষ সূত্র আবিষ্কার করতে পেরেছিলাম কিন্তু জীবনের অর্থ বলতে গেলে আমার আরও কিছু জিনিষের ওপর ঝিম মেরে বসে থাকা উচিৎ ছিলো।
– আরও কিছু জিনিষ বলতে কীসের ওপর ঝিম মেরে বসে থাকা উচিৎ ছিলো?
– এই যেমন ধরো পানির ওপর, বাতাসের ওপর, পাহাড়ের ওপর।
– তাহলে কী হতো?
– পানির ওপর বসে থেকে আর্কিমিডিস পানির প্লবতা আবিষ্কার করেছে যার কারনে এখন সাগরে জাহাজ চলে।
– বাতাসের ওপর বসে থাকলে কী হতো?
– ওখানে বসে থেকে অলিভার রাইট এবং উইলবার রাইট প্লেন আবিষ্কার করেছে।
– পাহাড়ের ওপর বসে থাকলে কী হতো?
– যেহেতু বসা হয় নি তাই কী আবিষ্কার হতো তা এখন বলতে পারছি না।

এরপর ঝলমল চলে গেলো জার্মানীতে। হিটলারের কবরের পাশে গিয়ে একই প্রশ্ন করলো।
হিটলার উত্তর দিলো, আসলে আমার আত্নহত্যা করাটা ভুল হয়েছে বরং জীবনের অর্থ হচ্ছে প্রয়োজন হলে সপ্তম বিশ্বযুদ্ধ করেও সব ইহুদি মেরে ফ্যালা এবং বিশ্বজয় করে একক আধিপত্য বিস্তার করা।

ঝলমল এবার আইনস্টাইনের কবরে গিয়ে একই প্রশ্ন করলো।
উত্তর এলো, জীবন আসলে একটা ভ্রম যা একটূ দির্ঘস্থায়ী।

ঝলমল এবার গৌতম বুদ্ধের কবরে এসে একই প্রশ্ন করলো।
উত্তর এলো, জীবন আসলে একটা বাবল, একটা ইলুশন, একটা বিভ্রম।
– তাহলে আপনি ডুমুর গাছের নিছে বসেছিলেন কেন?
– সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজে বের করার জন্য।
– উনাকে পেয়েছিলেন?
– নাহ! আমি প্রায় নাইন্টি পারসেন্ট মৃত হয়ে গিয়েছিলাম তারপর একদিন একটি মেয়ে এসে আমাকে জাগিয়ে তুলে পায়েস খাওয়ালো, তারপর আমি বেঁচে উঠলাম।
– আপনি কী বোধি না কি যেনো বলে, ওটা কি লাভ করেছিলেন?
– বোধি আসলে এই পৃথিবীর সত্যকে জানা, সেটা আমি পেয়েছিলাম।
– কী সেই বোধি?
– আসলে যেহেতু এই জীবন একটা বিভ্রম, এ সত্যটা আমি জেনেছিলাম।
– তাহলে আপনি ওই চার সত্য কেন বানালেন?
– যেহেতু এই জীবন একটা বিভ্রম তাই মানুষ যেনো হিংসা বিবাদে লিপ্ত না হয় তাই ওই চার সত্য বানিয়েছি।

এরপর ঝলমল ভারতে এসে রবীন্দ্রনাথের কবরে গিয়ে একই প্রশ্ন করলো।
উত্তর এলো, এই পৃথিবীতে যত জন্তু জানোয়ার আছে তারা কী করে?
– দুটি কাজ করে।
– কী কী?
– খাদ্য সংগ্রহ এবং বংশ বিস্তার।
– আর মানুষ কী করে?
– বেশীরভাগ মানুষ এ দুটো কাজই করে
– তাহলে জন্তু জানোয়ার আর মানুষের মধ্যে পার্থক্য কী?
– জানি না।
– শোন, মানব জীবনের অর্থ হচ্ছে, মানুষ এমন কিছু সৃষ্টিকর্ম করে যাবে যেনো মানুষকে জন্তু জানোয়ারের কাজ থেকে পৃথক করা যায়।

ঝলমল এবার সৌদী আরব গিয়ে এক মসজিদের খতীবকে সরাসরি একই প্রশ্ন করলো।
তিনি বললেন, আল্লাহ তায়ালা জিন এবং ইনসানকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁর ইবাদাত করার জন্য।

এরপর ঝলমল বাংলাদেশে চলে এলো। এক ভালো আলেম সাহেবের কাছে একই প্রশ্ন করলো।
তিনি বললেন, জীবন আসলে পরীক্ষা কেন্দ্র।
– কীসের পরীক্ষা কেন্দ্র?
– ঈমান এর পরীক্ষা কেন্দ্র
– প্ররীক্ষার প্রশ্নগুলো কী কী?
– আল্লাহ তায়ালা মানুষকে ধন দিয়ে পরীক্ষা করেন, গরীব করে পরীক্ষা করেন, সন্তানের মৃতু দিয়ে পরীক্ষা করেন।

এরপর ঝলমল সাড়া বিশ্ব ঘুড়ে বেড়াতে লাগলো। আধুনিক সভ্য অনেক মানুষের কাছে জীবনের অর্থ জানতে চাইলো।
বেশীরভাগ উত্তর দিলো, ইটস মিনিংলেস।

তারপর হলিউডের এক অভিনেত্রীর কাছে একই প্রশ্ন করলো।
তিনি বললেন, জীবনের অর্থ হচ্ছে অস্কার পুরুষ্কার লাভ করা।

আবার বাংলাদেশে এসে ধ্যান-আত্মা নামক এক ভদ্রলোককে একই প্রশ্ন করলো।
সে উত্তর দিলো, জীবনের অর্থ আসলে অভিনয় করা।
– অভিনয়তো সিনেমায় অভিনেতারা করবে।
– আরে! ওগুলো অভিনয় নয়, বিনোদনের জন্য কিছু কৌশলগত কাজ
– তাহলে অভিনয় কোনটা?
– জীবনে যখন যেটা প্রয়োজন সেটা পাওয়ার জন্য বাস্তবে সবাই অভিনয় করে।
– আপনি কী বাস্তবে অভিনয় করেন?
– শুধু আমি নয় সবাই অভিনয় করে, যে শিশুটি আজ জন্ম নিলো তার ক্ষুদা লাগলে কী সে কথা বলতে পারবে বা বলতে পারবে আমার ক্ষুদা পেয়েছে?
– না
– তাহলে সে কী করে?
– জানি না
– তার ক্ষুদা পেয়েছে এটা বুঝানোর জন্য কান্না শুরু করে দেয়, এই কান্না কিন্তু কোনও ব্যথা পাওয়ার কারণে প্রকৃত কান্না নয়, এটা খাদ্য পাওয়ার জন্য অভিনয়ের কান্না।

এরপর ঝলমল, এক ক্রিকেটার এর কাছে গিয়ে একই প্রশ্ন করলো।
সে উত্তর দিলো, জীবনের অর্থ আসলে বিশ্বকাপ জেতা।

এবার ঝলমল এশিয়ার এক রাজনীতিবিদের কাছে গিয়ে একই প্রশ্ন করলো।
সে উত্তর দিলো জীবন আসলে একটি খেলা, লাইফ ইজ এ জাস্ট গেম।
– কী খেলা?
– মানুষ ঠকানোর খেলা, মানুষ মারার খেলা, মানুষের সম্পদ দখলের খেলা, ক্ষমতা দখলের খেলা, টাকার খেলা, প্রেমের খেলা ইত্যাদি।

ঝলমল এবার তার পরিবারের কাছে ফেরত এলো। তার বাবাকে বললো, বাবা আমি জীবনের অর্থ খুঁজে পেয়েছি।
তার বাবা জানতে চাইলো, জীবনের অর্থ কী?
– তুমি যা করছো তাই।
– তারমানে?
– জীবনের অর্থ হলো এমন কিছু সৃষ্টিশীল কাজ করা যা মানুষকে জন্তু জানোয়ারের চেয়ে পৃথক করতে পারে।
– কী সেই সৃষ্টশীল কাজ?
– এটা বিভিন্ন রকম হতে পারে।
– যেমন?
– গল্প, কবিতা, উপন্যাস লেখা বা গান, সিনেমা, নাটক করা বা মানব কল্যান মূলক কাজ করা।
– আমার নাম আজমল, তোর মায়ের নাম মখমল, তোর নাম ঝলমল, আমাদের বাড়ির নাম নিরমল, আমার পছন্দের খেলা ফুটবল, কী? অন্ত্যামিল পেয়েছিস।
-হ্যাঁ, পেয়েছি।

এখনই সময়

এখনই সময়

এই সেই সময়
যখন পিতা মাতাকে হত্যা করে
তাদের ঔরসজাত সন্তানেরা।

এই সেই সময়
যখন পিতা মাতার ঘুমের নিশ্চয়তা নেই
ঘুমালে জেগে ওঠার আর নিশ্চয়তা নেই।

এইতো সেদিন শান্তিতে ঘুমিয়েছিলেন
এক পুলিশ দম্পতি
অথচ ইয়াবার থাবায়
অভিশপ্ত হয়েছিল ঐসির জীবন
তার পিতা মাতা আর উঠতে পারেননি ঘুম থেকে।

পিতা মাতার নিরাপদ ঘুমের নিশ্চয়তা আছে কী?
ঘুম থেকে জেগে ওঠার নিশ্চয়তা আছে কী?

এখনই সময় সামাজিক ঐক্যবদ্ধতার
এখনই সময় তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করবার।

না হলে হয়তো সেদিন আর বেশি দূরে নয়
যেদিন বাঙালি জাতি হয়ে পড়বে মেধা শূণ্য
হয়তো আরও পিতা মাতার মৃত্যু হবে
ঔরসজাত সন্তানের হাতে।

না, এ হতে পারে না
তিরিশ লাখ শহীদের বিনিময়ে
অর্জিত স্বাধীন বাংলায়
বাঙালির এ অভিশপ্ত জীবন হতে পারে না।

এখনই সময় মাদক বিরুদ্ধে সরকারের যুদ্ধের সাথে
আমজনতার সহযোগিতা করবার।

এখনই সময় পিতা মাতা হত্যার শান্তি দেওয়ার
এখনই সময় ঐসব কুলাঙ্গার সন্তানদের
ফাঁসিতে ঝুলাবার।

প্রিয় সুধীমণ্ডলী : আমি সমালোচিত আমি বিতর্কিত

প্রিয় সুধীমণ্ডলী : আমি সমালোচিত আমি বিতর্কিত

এই সময়ে যদি কেউ
এই সময়ের প্রতিষ্ঠিত কবিদের মতো
কবিতা লিখে ফেলেন
কিংবা তিনি যদি পেয়ে যান
কবিতার প্রচলিত কোনও এক ছঁক
তবে তিনি পেয়ে যেতে পারেন
বাহবা কিংবা মারহাবা
অথচ অনেকেরই এই কথা মনে থাকে না
ওই ছঁকে রচিত হয়েছে কবিতা কতখানা!

আমরা কেউ কেন মনে করি না?
প্রথাগত কবিতার সময় যে এটা না!
কেন সাজাই না কবিতা ভিন্নরূপে?
কেন আনি না কবিতায় ভিন্ন বিষয়!

একটা দীর্ঘ কাহিনী লিখলেই কী হয়ে যায় উপন্যাস?
ছন্দে বা গদ্যে আবেগের প্রকাশই কী কবিতার উচ্ছ্বাস?

আমরা মৌলিকত্ব সৃষ্টি করতে চাই না
যদি কোনও ছোট অংশ তা চায়
তাদের পদে পদে বাঁধা
আর পথে পথে কাঁটা
তাদের পথ বড়ই পিচ্ছিল
তারা বুঝে ফ্যালে
এখানে মৌলিকত্ব সৃষ্টি করা নিষেধ
এখানে অতিক্রম করা নিষেধ
এখানে প্রথার সাথে তাল মিলিয়ে চললেই
জুটে যেতে পারে অভাবনীয় এক পুরস্কার।

হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ আর চেতনায় নজরুল
এ বুলি শিখিয়ে আমরা কি করছি না মহাভুল?
একজন রবীন্দ্রনাথের পর
বাঙলা সাহিত্যে আর কিছু কী চাওয়ার আছে?
একজন নজরুলের পর
আমাদের আর কোনও চেতনার প্রয়োজন কী আছে?

প্রতিদিন ফেসবুকের নিউজফিড জুড়ে
তৈরি হয় কবিতা নামক অজস্র সৃষ্টি
কেউ কেন বলেন না, তার বেশির ভাগই
স্বল্প কবিতা পড়ুয়া কবি সমাজের পুরাতন সৃষ্টি।

প্রিয় সুধীমণ্ডলী,
আমি জানি আজ থেকে আমি হয়তো হয়ে যাবো
তীব্র কথার সমালোচিত
ক্ষিপ্র চোখের নিন্দিত
রক্ত চক্ষু সমূহের চক্ষুশূল
কিংবা হয়তো আটকে যাবো
সাহিত্যের কোনও এক ব্ল্যাকহোলে
কিন্তু তবুও বলে যাবো তরুণ প্রজন্মকে
এ সমাজকে তুচ্ছ করে এগিয়ে যাও
ভেঙে দাও মৌলিকত্ব বিরোধী এ সমাজ
ছুড়ে ফেলে দাও অনুকরণ আর পুনরাবৃত্তি
অতিক্রম করো শুরু হোক নব জাগৃতি।

যেখানে ঝাঁপিয়ে পড়তে ভয় পান বিজ্ঞ জনেরা
সেখানেই ঝাঁপিয়ে পড়ে নিশ্চিন্তে নির্বোধ’রা
এই বাংলায় আমার মতো নির্বোধ আমি আর দেখি না
তাইতো ওইসব বিষয়ে কলম ধরতে আমি ভয় করি না।

নষ্ট’রা হুঁশিয়ার সাবধান

নষ্ট’রা হুঁশিয়ার সাবধান

“আমি জানি সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে”
এ কথা বলে আমাদের সতর্ক করে গেছেন হে কবি

এই বাংলা হবে বঙ্গবন্ধু্র স্বপ্নের সোনার বাঙলা
বিশ্ব কবি রবী নাম দিয়েছেন ” আমার সোনার বাঙলা”

আমরা কথা দিচ্ছি হে কবি
নষ্ট’রা বিনষ্ট হয়ে যাবে
নষ্টদের পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে।

টাকার শক্তি আর ক্ষমতার শক্তি
যারা মনে করেন এতেই তাদের মুক্তি
এ দুটি অপশক্তি এখন আর কোথাও চলবে না
বাঙলার মানুষ নষ্টদের অধিকারে আর যাবে না।

বাঙালি জাতি পরীক্ষিত হয়েছে বহুবার বহু জায়গায়
নষ্টদের কাছে হেরে যাবার নয়,তারা মাথা নোয়াবার নয়,

নষ্ট’রা বিনষ্ট হয়ে যাবে
নষ্ট’রা পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে

বাঙালিরা প্রস্তুত হচ্ছে ভেতরে ভেতরে
ক্ষোভের ক্ষিপ্রতায়
প্রবল দৃঢ়তায়
নিক্ষেপ করে দেবে নষ্টদের আস্তাকুঁড়ে।

তাই আগেই থাকতে মান-সম্মান
নষ্ট’রা হয়ে যান হুঁশিয়ার সাবধান।

অদৃশ্য বলয় থেকে বলছি

অদৃশ্য বলয় থেকে বলছি

দেশের উন্নয়ন করবেন?
হা হা হা!

মাদক বন্ধ করবেন?
সন্ত্রাস থামাবেন?
ঘুষ, দূর্নিতী বন্ধ করবেন?
জঙ্গি তৎপরতা ঠেকাবেন?
খুন, ধর্ষন ঠেকাবেন?

আপনাদের কথা আমি শুনি
আর অট্ট হাসিতে ফেটে পড়ি
জ্যাক ডেনিয়েল এর দুটো করে
বোতল শেষ হয়ে যায় প্রতি রাতে
আপনাদের এইসব প্যাঁচাল শুনতে শুনতে।

আপনারা এগুলো কিছুই করতে পারবেন না
এগুলো হতে দেবো না।

আমি কে?
এই প্রশ্নটি যিনি করেছেন
তিনি একটি মহাপাপ করেছেন।

আমি ধরা ছোঁয়ার বাহিরে
এক অদৃশ্য বলয়ে আছি
আমি অদৃশ্য বলয় থেকে বলছি।

আপনারা দূর্নীতি বন্ধ করলে
তিন দিন আগের মৃত লাশকে লাইভ সাপোর্টে
রেখে তিরিশ লাখ টাকা কামাবে কী করে
আমার অদৃশ্য বলয়ের সদস্যরা?

এখনো বলছি
এসব করতে যেয়েন না
আপনাদের বড় বড় ছোট ছোট হাসপাতালে
আমার সদস্যরা কিন্তু আছে
সামান্য অসুখে যখন ভর্তি হবেন
আপনাদের মতো সুস্থ মানুষদের
মেরে ফেলার সিস্টেম আমার জানা আছে।

আপনাদের অফিসে, আদালতে
স্কুল,কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে
কয়েদখানা এবং সকল ধরনের কারখানা
আমার সদস্যদের অবাধ আনাগোনা।

মন্দিরে, মসজিদে, গির্জায়
সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে শিরায় উপশিরায়
মিশে আছে
ঢুকে আছে
জাপটে ধরেছে
সমাজের গলা
নড়চড় করবার একটুও নেই উপায়
অদৃশ্য বলয়ের অদৃশ্য হাতের থাবায়।

সব থেকে সুন্দরী মেয়েগুলো অদৃশ্য বলয়ে আসে
বাধ্য করি আসতে
আমার লিঙ্গ চুষতে
আমি ধরা ছোঁয়ার বাহিরে
এক অদৃশ্য বলয়ে আছি
আমি অদৃশ্য বলয় থেকে বলছি।

সামাজিক সোসাইটি

সামাজিক সোসাইটি

– আচ্ছা! আপনি এই হুড়ুৎ ফুড়ুৎ করে আমার কাছে এসে অযথা হাজির হন কেন বলবেন?
– ভাই, আমিতো এর আগেও বলেছি, আমি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছাড়া আপনার কাছে আসি না।
– হুম, তো এবার কী সমস্যা নিয়ে এসেছেন দ্রুত বলে চলে যান।
– দ্রুত চলে যাবো? আপনি কি আজ বেশি ব্যস্ত?
– নাহ।
– তাহলে?
– আজ মন ভালো নেই।
– কেন?
– জানি না, মাঝে মধ্যে কোনও কারণ ছাড়াই অহেতুক মন খারাপ হয়ে যায়।
-ও
– শুনুন, এই প্রকৃতিতে কোনও কারণ ছাড়া কিছু ঘটে না।
– ও
– ও ও করছেন কেন, আমার মন কেন খারাপ হয়েছে এটা আমি না জানলেও এর পেছনে নিশ্চিত কোনও কারণ আছে।
– কী কারণ?
– আরে! সেটাইতো মাঝে মধ্যে ধরতে পারি না, অহেতুক মন খারাপ হয়ে যায়।
– আমি একটি বিষয়ে জানতে এসেছি।
– কী বিষয়?
– স্রোতের বিপরীতে চলা কি ঠিক?
– সব সময় নয় তবে কিছু কিছু সময় স্রোতের বিপরীতে চলা ছাড়া অন্য কোনও উপায় থাকে না।
– তারমানে স্রোতের বিপরীতে চলা আপনি সমর্থন করেন?
– কেন নয়?
– আজ পর্যন্ত কোনও বিজ্ঞজন বা দার্শনিক কি স্রোতের বিপরীতে চলার কথা বলেছেন?
– হ্যাঁ, বলেছেন।
– কে সেই দার্শনিক?
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
– কী বলেছেন?
– সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে প্রয়োজনে “একলা চলো রে”।
-উনার মতো এতো বড় মাপের কবি এই ভুল কথাটি কেন বললেন?
– উনি ভুল বলেন নি।
– তাহলে আমাকে বুঝানতো! কোন ক্ষেত্রে একলা চলবো?
– ধরুন আপনার ছেলে-মেয়ে সহ পরিবারে মোট সদস্য ১২ জন।
– আচ্ছা!
– এর মধ্যে আপনার ছেলে-মেয়ে ৭ জন।
-আচ্ছা!
– ৭ জনের মধ্যে ৫ জন ছেলে আর ২ জন মেয়ে।
– তারপর?
– আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে আপনার পরিবার ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে।
– কী করে?
– এক ছেলে মাস্টার্স পাশ করে ঘুরে ফিরে আর খায়, চাকুরীর চেষ্টা করে না।
– তো?
– আরেক ছেলে মাদকাশক্ত হয়ে গেছে, রাত ৩টায় বাসায় ফেরে।
-আচ্ছা!
– আরেক ছেলে সন্ত্রাসী হয়ে গেছে, এলাকায় ভদ্র সমাজের মানুষদের ডিস্টার্ব করে।
– আচ্ছা!
– আর ২ জন স্কুলে পড়ে কিন্তু পরীক্ষায় ফেল করে, সারাদিন স্টার জলসা, জি বাংলা নিয়ে পড়ে থাকে অথবা ব্লু হোয়েল বা পাবজি গেম খেলায় ব্যস্ত থাকে।
– ওহ! এমন হলেতো সমস্যা!
– এই ক্ষেত্রে আপনার পরিবারের স্বার্থে আপনাকে স্রতের বিপরীতে একলা চলতে হবে।
– সেটা কেমন?
– আপনার বাসার দরজা সন্ধ্যা ৬ টায় বন্ধ করে দিতে হবে, ওই মাদকাসক্ত ছেলেটা রাত ৩ টায় এসে যতই হাউখাউ করুক দরজা খোলা যাবে না।
– কিন্তু আমার স্ত্রীতো দরজা খুলে দেবে।
– আপনার স্ত্রীর প্যানপ্যানানি শোনা যাবে না, আপনি আছেন স্রোতের বিপরীতে এবং কঠোর থাকতে হবে, দরজার চাবি আপনার কাছে থাকবে।
– কিন্তু এতে যদি ওই চেলেটি দড়জা বন্ধ পেয়ে রাতভর নেশায় মত্ত হয়?
– তাহলে ফোর্স এনে এ্যাম্বুলেন্সে করে রিহ্যাবিলেটেশন সেন্টারে পাঠিয়ে দিতে হবে।
-ও
– আর যেটা মাস্টার্স পাশ করে শুধু খায় দায় আর ঘুরে ফেরে ওকে বাসা থেকে বের করে দিতে হবে।
– কী বলেন? তাহলে থাকবে কোথায়? খাবে কী?
– দু চার দিন কিছু বন্ধু বান্ধবের বাসায় থাকতে চাইবে কিন্তু দু দিন পর বন্ধুরাই ওকে আর রাখবে না।
– তাহলে?
– রাস্তায় ঘুরবে আর পেটে ক্ষিদে পেলেই টাকার প্রয়োজন অনুভব করবে।
– কিন্তু হঠাৎ করে টাকা পাবে কোথায়?
– সেটা আপনাকে ভাবতে হবে না, প্রয়োজনে রিক্সা চালাবে।
– কী বলেন? মাস্টার্স পাশ করে রিক্সা চালাবে?
– হ্যাঁ, রিক্সা চালাবে, মটর সাইকেল চালাতে জানলে পাঠাও চালাবে আর গাড়ি চালাতে জানলে উবার চালাবে।
– তারপর?
– এগুলো চালাতে গিয়ে যখন মানুষের গাল মন্দ শুনবে তখন টনক নড়বে এবং এগুলো্র পাশাপাশি কী করে ভালো চাকুরী পাওয়া যায় সে দিকে মন দিবে।
– কিন্তু যদি আমার সাথে সম্পর্ক চিন্ন করে?
– করুক! মানুষের লাত্থি গুতা খেয়ে পৃথিবী কী তা যখন চিনতে শিখবে তখন আপনার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতেও পারে।
– কিন্তু……
– কোনও কিন্তু নেই, ওই সময়েই তার ভেতরে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবার জিদ তৈরী হবে এবং জীবনে যেদিন প্রতিষ্ঠিত হবে সেদিন সে বুঝবে আপনি ভালো কাজ করেছিলেন।
– ও
– আর যে ছেলেটা সন্ত্রাসী তাকে পুলিশে দিতে হবে।
– বলেন কী? তাহলেতো কোর্টে চালান করে দিয়ে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেবে।
– জেলে পাঠানোর জন্যইতো পুলিশে দিতে হবে।
– তাতে কী ভালো হয়ে যাবে?
– জ্ঞান বুদ্ধি থাকলে ভালো হয়ে যাবে।
– কিন্তু যদি জেল থেকে বেরিয়ে আরও বড় সন্ত্রাসী হয়ে যায়?
– তাহলে সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির ব্যাবস্থা আছে।
– ও মাই গড! বলেন কী ভাই? আমি যাই আজ, মনে হয় আসলেই আপনার মন খারাপ আছে আজ।
– না, আপনি যেতে পারবেন না।
– কেন?
– আমার কাছে কেউ কোনও সমস্যা নিয়ে আসলে তার পুরোপুরি উত্তর না দিয়ে আমি যেতে দেই না।
– ভাই, জেলে না পাঠিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে দিলে কেমন হয়?
-ভালো হবে না।
– কেন?
– ওই সন্ত্রাসী ছেলেকে যদি ১২ লাখ টাকা খরচ করে ইউরোপ বা এমেরিকায় পাঠান তাহলে সে যা ইনকাম করবে সব বার এ গিয়ে শেষ করে দেবে।
– তাই নাকি?
– দশ বছর পর দশ কোটি টাকা নিয়ে দেশে না ফিরে হয়তো দেখবেন ওই দেশের সরকার অপরাধের কারণে জেল খাটিয়ে শুণ্য হাতে আপনার কাছে পাঠিয়ে দেবে।
– ও
– আর যে দুটা টিভি আর গেমস নিয়ে পড়ে থাকে তার জন্য প্রথমে টিভি বিক্রি করে দিবেন এবং তারপর মোবাইল সিজ করে নিবেন।
– ও
– আর পড়ালেখা না করলে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিবেন।
– বলেন কী? এক রাত না খেলেইতো ঘুমাতে পারবে না।
– ঘুমাতে না পারলে ক্লাসের বইতো পড়তে পারবে।
– কিন্তু আমার স্ত্রী সহ আত্নীয় স্বজন সবাইতো আমাকে ভুল বুঝবে!
– বুঝুক! সেটা হবে সাময়িক।
– কী করে সাময়িক?
– রিহ্যাবিলেটেশন সেন্টার থেকে ফিরে এসে যখন আপনার ওই মাদকাশক্ত ছেলে যখন একদিন বি সি এস অফিসার হবে সেদিন সবার ভুল ভাঙবে।
– তা অবশ্য ঠিক।
– বেকার যে চেলেটিকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছিলেন সেই ছেলেটির নিজের প্রতিষ্ঠানে যেদিন ২/৩ হাজার মানুষের কর্ম সংস্থান হবে সেদিন সবার ভুল ভাঙবে।
– দারুণ বললেন তো!
– জেল খেটে আসার পর যেদিন সেই ছেলেটি আই জি প্রিজন হবে সেদিন সবার ভুল ভাঙবে।
– কিন্তু……
– না, কিন্তু নেই, আপনি এখন স্রোতের বিপরীতে, কে কী বললো তা শোনার সময় নেই।
– আচ্ছা!
– যে দুটোকে দু রাত খেতে দেন নি সেই দু জন যখন গোল্ডেন এ পাবে সেদিন সবার ভুল ভাঙবে।
– না, মানে বলছিলাম, এই যুগের চেলে মেয়েতো! যদি আমার উপর আক্রমণ করে বসে?
– এই বিষয়ে আপনি জানতে না চাইলেও আমি বলতাম।
– কী বলতেন?
– এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে, কঠোর হতে হবে এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখতে হবে।
– ভাই, আপনি যা বলছেন এমন কি এর আগে কেউ করেছে?
– হ্যাঁ, করেছে, তবে সেটা আরও বৃহৎ স্বার্থে করেছে।
– কী স্বার্থ?
– দেশ এবং জনগণের স্বার্থ।
– কে তিনি?
– মাহাথির মোহাম্মদ।
– ও
– উনি ক্ষমতায় আসার পর প্রথম দশ বছর সে দেশের জনগণ উনাকে ভুল বুঝেছিলো।
– তাই নাকি?
– উনি যখন ক্ষমতায় এলেন তখন দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিলো টোটালি ক্যাওজ।
-ও
– তখন তিনি স্রোতের বিপরীতে চলার সিদ্ধান্ত নিলেন।
– সেটা কেমন?
– খুন, ধর্ষন, মিছিল লেগেই ছিলো।
– ও
– রাজনীতির নামে যারা আইন শৃঙ্খলার বিঘ্ন ঘটাচ্ছিল তাদের বিরুদ্ধে তিনি কঠোর হলেন।
– ও
– তখন হিউন্যান রাইট গ্রুপগুলো মাহাথিরকে প্রশ্ন করতে লাগলো, where is your freedom?
– তারপর?
– তিনি উত্তর দিতেন, free for whom? free for rogue speculators? free for anarchists?
– তাই নাকি?
– উনি আরও উত্তর দিতেন, free for whom those are watching to destroy weak countries in their crusade for open societies?
– আচ্ছা!
– এরই মধ্যে মাহাথিরে এর বিরুদ্ধে লেগে গেলো বিশ্ব মোড়লেরা, বললো, সে একজন ডিটেকটর, ওই দেশে গণতন্ত্র নেই, জনগণকেও ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করলো।
– কেন বিশ্ব মোড়লেরা এইগুলো করলো।
-শুনুন, তৃতীয় বিশ্বের কোনও দেশে টাকার অভাব থাকলে যত টাকাই লাগুক বিশ্ব মোড়লেরা তা লোন হিসেবে দেবে কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের কোনও দেশের উন্নয়ন হোক এটা বিশ্ব মোড়লেরা চায় না।
– তাই নাকি?
– কিন্তু মাহাথির মোহাম্মদ ভেঙে পড়েন নি, তাঁর লক্ষে অবিচল ছিলেন এবং লং টাইম প্ল্যান করে দেশকে উন্নত দেশে পরিণত করলেন।
– ও
– তখন ওই ফ্রিডম স্পিচার লোকদের খুঁজেও পাওয়া যায় নি।
-ও
– এবং দেশের জনগণেরও ভুল ভেঙে গেছে।
– কিন্তু ভাই আজ আপনাকে একটা কথা বলে যাই।
– কী কথা?
– আমার মনে হয় এই দেশেও একটা সুইসাইড স্কোয়াড তৈরি হচ্ছে।
– কী করে বুঝলেন? ওই যে একটি দল খোলস পাল্টাচ্ছে তাই?
– না, ওদের নিয়ে বেশি একটা ভাবছি না কারণ ওরা চাইলেও এখন পারবে না, দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ বিষয়ে সজাগ আছে, তাছাড়াও ওদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
– তাহলে কেন এমন মনে হলো আপনার?
– দিন দশেক আগে এক বিশ্ব মোড়ল বলেছিল, এই দেশের জন্য এখন সিকিউরিটি এলার্ট চলছে।
– বিশ্ব মোড়ল যেহেতু বলেছে তাহলে হয়তো হতে পারে কিন্তু এ দেশ যথেষ্ট সজাগ আছে।
– কী করে সজাগ আছে?
– শুনুন শুধু সরকার নয় এই দেশের কোনও জনগণ এটা হতে দেবে না।
– কী করে?
– জনগণ এখন সামাজিক ঐক্যবদ্ধতা গড়ে তুলছে।
– কী করে?
– সন্তান যেনো বিপথে না যায় সেজন্য পিতামাতারা আদর স্নেহ সহ সন্তানদের বিপথ থেকে রক্ষার জন্য প্রতিটি ঘরে ঘরে প্রয়োজনীয় দূর্গ গড়ে তুলেছে।
– আর?
– প্রতিটি এলাকায় ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ধর্ম বর্ণ গোত্র ধনী গরিব নির্বিশেষে সকল শ্রেনী ও পেশার মানুষ সোসাইটি গড়ে তুলছে।
– এইসব সোসাইটির কাজ কী?
– মাদক, সন্ত্রাস এবং দূর্নীতির বিরুদ্ধে সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষ ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং আমাদের সন্তানদের সামাজিক অবক্ষয় থেকে রক্ষা করা।

আমরা বিশ্ব মোড়লদের বলছি

আমরা বিশ্ব মোড়লদের বলছি

মধ্যপ্রাচ্য থেকে আফগান
মোড়টা একটু ঘুড়িয়ে
এমেরিকায় নাইন ইলেভেন
অতঃপর ইউরোপে এলেন
লন্ডনে ভয়ঙ্কর সিরিজ বোমা হামলা
প্যারিসে আত্মঘাতী হামলা
ইরাকের ইয়াজিদি কমিউনিটির উপর হামলা
সিনেমা রেক্স ফায়ার
বেসলান গণহত্যা
ইস্তাম্বুলে বিমানবন্দরে হামলা
এরপর দক্ষিণ এশিয়ায় ঢুকলেন
মুম্বাইয়ের হোটেল তাজমহলে হামলা
বাংলাদেশের হলি আর্টিজান
আবারও ইউরোপ ঘুড়ে ক্রাইস্টচার্চে আসলেন
আবারও দক্ষিণ এশিয়া
শ্রীলঙ্কায় ইস্টার সানডে সিরিজ বোমা হামলা ।

আপনারা যদি চান
আমরা আমাদের সদ্যজাত সন্তানের গলার রগ
ব্লেড দিয়ে কেটে দিতে পারি
ফিনকি দিয়ে উঠে আসা রক্তের গ্লাস দিয়ে
সাজিয়ে দেব আপনাদের প্রতিদিনের নাস্তার টেবিল
তবুও এ রক্তের স্রোত থামান।

হ্যাঁ আমরা বিশ্ব মোড়লদের বলছি
ধর্মের অজুহাত মানুষ আর বিশ্বাস করে না।
আপনাদের সর্বোচ্চ শক্তি আমরা জেনে গেছি
আর তা হচ্ছে ইউরেনিয়াম এর বিস্ফোরণ
কিন্তু আপনারা জানেন না কতটা শক্তিধর মানবিক বিস্ফোরণ।

যদি এ রক্তের স্রোত না থামান
তাহলে আজ শুনে রাখুন…

পৃথিবীর শান্তিকামী মানুষ অতি দ্রুতই
ছিনিয়ে নেবে আপনাদের মোড়লত্ব
না তারা অস্ত্র তুলে নেবে না
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকেও পৃথিবীকে ঠেলে দেবে না।

আপনাদের মোড়লত্ব ছিনিয়ে নেয়া হবে
ঘৃণা দিয়ে, গগনবিদারী আহাজারি দিয়ে
কান্নার আওয়াজ দিয়ে, সিন্ধুসম অশ্রু দিয়ে।

আমরা বিশ্ব মোড়লদের বলছি
আপনাদের একটু কি জানতে ইচ্ছে হয়?
ক ফোঁটা রক্ত দিয়ে এক ফোটা অশ্রু হয়?

একটি প্রশ্ন উঠেছে

একটি প্রশ্ন উঠেছে

– আপনাকে না বলেছি অহেতুক যখন তখন আসবেন না!
– ভাইজান, আমি কিন্তু অহেতুক আসি না।
– কোনও জটিল বিষয় নাকি?
– জটিল মানে মহাজটিল!
– কী হয়েছে বলুনতো!
– ভাইজান, ওই যে বঙ্গপোসাগরের পাড়ের দেশটা।
– হ্যাঁ, সেটা নিয়েতো সেদিনও কথা বলে গেলেন।
– ভাইজান কিন্তু এখন যে কি একটা খেলা চলছে বুঝতে পারছি না।
– কী খেলা?
– ওই দেশের সাবেক রাষ্ট্র পরিচালকগণের প্রধান এখন জেলে আছেন।
– দূর্নীতি করলে সে যেই হোক শাস্তি পেতেই হবে।
– কিন্তু ভাইজান একটা ব্যাপার বুঝতে পারছি না।
– কী ব্যাপার?
– বর্তমান রাস্ট্র পরিচালকগণ ওই সাবেক পরিচালকগণের প্রধানকে জেল থেকে বের করার একটা বিশেষ সুযোগ দিচ্ছেন।
– সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে এমনি এমনি কী করে বের করবে? তাই একটি বিশেষ সুযোগ দিচ্ছে।
– কিন্তু ওই সাবেক পরিচালকগণের প্রধান এর অনুসারীরা এই বিশেষ সুযোগটা নিচ্ছে না।
– রাজনীতি বুঝেন?
– জি কিচ্ছুটা বুঝি।
– কী বুঝেন?
– সাবেক ওই পরিচালকগণের অনুসারীরা উনাকে নিয়ে রাজনীতি করছেন।
– শুনুন, একজন বয়ষ্ক মানুষ এমনিতেই বৃদ্ধজনিত নানান কারণে অসুস্থ হতে পারে।
– জি তাতো ঠিকই।
– বর্তমান পরিচালকগণও এটা বুঝেন আর সাবেক পরিচালক প্রধানের অনুসারীরাও এটা বুঝেন।
– তাহলে বর্তমান পরিচালকগণতো এটা বুঝতে পেরে মানবিক দিক থেকে বিবেচনা করে উনাকে বের করার বিশেষ ব্যবস্থা করে দিয়েছেন কিন্তু উনার অনুসারীরা সেই সুযোগ নিচ্ছেন না কেন?
– এই সুযোগতো নিচ্ছেনই না বরং বলছেন বর্তমান পরিচালকগণ উনার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
– কেন এমন করছেন ওনারা?
– ওই যে রাজনীতিতে পলিটিক্স করছেন।
– কী পলিটিক্স?
– ওনাদের কাছে এখন ওনাদের ওই সাবেক পরিচালক প্রধানের প্রয়োজনীয়তা শেষ, উনাকে আর প্রয়োজন নেই।
– মানে?
– ওই সাবেক পরিচালক প্রধানই এখন উনার অনুসারীদের রাজনীতির ট্রাম কার্ড।
– কী করে?
– আরেকটু সময় গেলেই বুঝতে পারবেন।
– একটু ভেঙে বলুনতো!
– ওই সাবেক পরিচালক প্রধানের জেলের ভেতর মৃত্যুর জন্য উনার অনুসারীরা অপেক্ষায় আছেন।
– কী?
– ওই সাবেক পরিচালক প্রধান নিজের বাসভবনে থাকলেও বয়ষ্ক জনিত কারণে অসুস্থ হতে পারতেন এবং তখন প্রয়োজনে উনার অনুসারীরা মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নিয়ে যেতেন।
– তাহলে এখন যে বর্তমান পরিচালকগণ উনার বৃদ্ধতার কারণে উনাকে জেল থেকে বের করার একটা বিশেষ সুযোগ দিয়েছেন, এখন বের করে ওই হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন না কেন?
– ওই যে! জেলের ভেতর মৃত্যু হলে বিশাল এক ইস্যু বানাবেন এবং বর্তমান পরিচালকগণদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জনমত তৈরি করার প্ল্যান করেছেন।
– তাহলে ওই সাবেক পরিচালক প্রধানের জীবনের কোনও মুল্য কী উনার অনুসারীদের কাছে নেই?
– তাইতো মনে হচ্ছে।
– ও মাই গড! মানুষের জীবন নিয়ে রাজনীতি তাও আবার ওই অনুসারীদের প্রধানকে নিয়েই?
– বর্তমান পরিচালকগণ জেল থেকে একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে তো আর বেআইনি ভাবে খালাস দিতে পারেন না।
– না, বেআইনি ভাবে খালাস দিবেন কী করে?
– এজন্যইতো এই বিশেষ সুযোগটা দিয়েছেন।
– কিন্তু উনার অনুসারীরাতো এই সুযোগটা নিচ্ছেন না।
– তাহলে বলেন, উনার অনুসারীরা জেলখানায় উনার মৃত্যু কামনা ছাড়া আর কী কারণ থাকতে পারে এই বিশেষ সুযোগটা না নেয়ার?
– উনার মৃত্যু জেলের ভেতরে হলেতো জনগণ এই চাল বুঝবে না, তখন সাধারণ জনগণ ভুল বুঝে ক্ষেপে উঠতে পারে।
– আরে! এটাইতো উনার অনুসারীরা চাইছেন।
– তাহলেতো বর্তমান পরিচালকগণ যে বিপদে পড়ে যাবেন!
– শুনুন, বর্তমান পরিচালকগণ অতো কাঁচা নন।
– তাহলে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লে কী করবেন?
– বর্তমান পরিচালকগণ সে ব্যাপারে যথেষ্ট সজাগ আছেন এবং সঠিক চিকিৎসাই করছেন।
– ও
– কিছুদিন আগে যখন উনার অনুসারীরা চেচামেচি করছিলেন, ওনাদের নেত্রীর শরীর মারাত্মক অসুস্থ!
– হ্যাঁ তা দেখেছি।
– তারপর একটি বিশেষ হাসপাতালে কিছু দিন থাকার পর ওই সাবেক পরিচালক প্রধান নিজ মুখেই বলেছেন উনি সুস্থ আছেন।
– হ্যাঁ তাও শুনেছি।
– আর হায়াত মউত আল্লাহর হাতে, তারপরও জরুরী অবস্থা হলে বর্তমান পরিচালকগণই মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করাবেন মানবিক দিক বিবেচনা করে।
– আপনি যে রাজনীতিতে পলিটিক্স বা নির্দয় পাষণ্ড মর্মান্তিক রাজনৈতিক খেলার কথা বলছেন সেটাতে আসলে কতটুকু সত্যতা আছে তা আমি জানি না কিন্তু উনার অনুসারীরা এই বিশেষ সুযোগ নিচ্ছেন না এবং কেন উনাকে জেলখানা থেকে উনাকে বের করছেন না,এটা কিন্তু জনমনে একটা বড় প্রশ্ন জেগেছে।
– প্রশ্নতো জাগবেই, জনগণকে যে বোকা মনে করবে সেই আসলে বোকার স্বর্গে বাস করে।