ইন্দ্রাণী সরকার এর সকল পোস্ট

চুপ পাথর

চুপ পাথর

রোজই আমি বাড়ির কাজের ফাঁকে ফাঁকে
মোবাইলে ট্যাপ করে ফেসবুক ঘুরতে আসি।
রোজই দেখি কতগুলো ঈশ্বরের সন্তান পদ্য
লিখেছে, আমি পৃথিবী ঘুরে চাদরে আদর
করে ধোপানি হয়েছি, তখনি বুঝি এখানে
ধোপাদের পাড়ায় বেড়াতে আসি, এত কষ্ট
করার পর হয় রেগে উঠি নয় চুপ পাথর হই।
ধোপা, ধোপানীরা রা কাড়ে না শুধু হুহু কাঁদে।

অসাধারণ কাব্য

অসাধারণ কাব্য

চারণ কবি সানাই বাজায় লালনে দেয় বিয়ে
উলু খাগড়া ঢোলক বাজায় এক কবিতা নিয়ে
ঝাঁটিয়ে তাড়ায় লোক লস্কর পিটিয়ে তাড়ায় সুজন
লালন কবি মন দরদী ভেবো না তারে কুজন
শূন্য ঘরে ডাকে পিয়া আয়না তুই ভরতে হিয়া
লাইক না পেলি কি আসে যায় লাইক দিয়ে ভর হিয়া
ফেমাস আমায় হতেই হবে নই কো কবি নাব্য
তুই কি বুঝিস মহিমা আমার অসাধারণ এ কাব্য।

মৌবনী

মৌবনী

কতবার ভেবেছি তুমি যদি মাঝি হয়ে
আমায় জলের বুকে ভাসিয়ে নিতে
দাঁড় বেয়ে বেয়ে চলে যেতে বহুদূর
আমি শাপলা পদ্ম তুলে নৌকায় রাখি
তুমি না হয় একটা মালা গড়ে দিও
কানপাশা খুলে ছোট্ট একরত্তি চুমু
তারপর নিয়ে যেও অচেনা এক পারে
যেখানে মৌবনী আলতা পা ধুয়ে যায়।

এবারে বর্ষায় নৌকো ভাসাতে ইচ্ছে করে
সেই কবে ছোটবেলায় কাগজের নৌকো
বানিয়ে নালার জলে ভাসিয়ে দিতাম,
কত দূর ভেসে আপন মনে চলে যেত,
আমার মনটাও অজানায় হারাতে চায়।
এক একটা প্রহর দেখতে দেখতে কেটে যায়,
নতুন পথ খুঁজি, কিন্তু সব পথই যেন এক !
নতুন পথ পাব না ভেবে বিমর্ষ হয়ে পড়ি।

আসল অভিপ্রায়

আসল অভিপ্রায়

অনাগত সন্তান, স্ত্রী সব বাজে কথা, সব ছল
অনেকটা সময় লেগেছে ওই বোবাকে বুঝতে
আসল কথা চুপ করে থেকে মানুষকে খুঁচোনো
এটাই উদ্দেশ্য, হাজারটা দোষ ঢাকবে কি সে?

তার ওপর আবার জমজমাট সহোদরের নীরব প্রেম
এখন তার ডিজিটাল অক্সিজেন না পেয়ে জীবন মরণ
নিজের অহংকারে নিজেই হয়েছে পতন —-
তাই রোজ তারিখে খুঁচিয়ে মরণ কামড় দিয়ে যায়
ওসব অবৈধ সন্তান, বিবাহের সিগন্যাল ওসব কিছু নয়
লোকদেখানি ফাঁকা মাঠে গোল করাই আসল অভিপ্রায়।

কথার পুতুল

কথার পুতুল

কতবার তোকে খুন করতে গিয়েও
হাতগুলো সরিয়ে নিই
তোর হিরন্ময় মন, তোর হিরন্ময় কথা

কথাদের আমরা সাজাই নানান ভাবে
তাদের গায়ে রং দিই, আলখাল্লা জড়িয়ে দিই
দেখতে দেখতে কথাগুলো এক একটা পুতুল হয়ে ওঠে

এই ছুঁড়ি তুই এতগুলো প্রেম সামলে কি করে
এত কিছু ভেবে যাস
রহস্যটা বলবি ?

মাকড়সার জাল থেকে কথাগুলো
বায়বীয় আকার হয়ে মিশে যায়।

বারণ

বারণ

বলতে চাইলে বলতে পারো কথা
বারণ কিছু কোনটাতেই নেই
বেখেয়ালের খেয়ালবশে কত
ভাবনা থাকে আপন মনেতেই
তার চেয়ে বল বেশ ত চুপ চাপ
উদোর পিন্ডি ভুদোর ঘাড়ে দেই
কথার ঘাড়ে কথা পড়ে না আর
মাথা আছে মুন্ডু কেবল নেই
চোখ নেই মোর অন্ধ বোবা কালা
লক্ষ্য যদিও থাকে বেজায় ঠিকই
বাইরে খালি লোক দেখানি চুপ
ভেতর ভেতর করছি খুনসুটি
আমার নেই মোসাহেবের দল
একলা কলম চলছে ছুটে জোরে
প্রজাবিহীন আমার রাজ্যপাট
কলম ছেড়ে শিং নিয়ে যাই তেড়ে

উপন্যাসের রাত্রি

উপন্যাসের রাত্রি

কৃষ্ণপক্ষের রাতে বায়বীয় আঁধারে
শুনতে পাই বাতাসের শিরশির।

মেঘে ঢাকা সন্ধ্যাতারাগুলি
ঘন আঁধারের বসনের আড়ালে
জড়িয়ে রেখেছে চোখের পাতা।

অনুরাগের মুর্চ্ছনায় বিবশ মনের কথা
বিশ্বাসের রৌদ্রে পোড়া মনকে
ছুঁয়ে যায় ভ্রমরের গান নীলিমা।

অজস্র শিলালিপি ছড়ানো চোখের
সমান্তরাল মেঘে ঢাকা পড়ে যায়
নক্ষত্রদের উপন্যাসের রাত্রি।

দ্বিধাহীন সত্ত্বাগুলি আবার ফিরে পায়
বিগত দিনের আশা ও সৌরভ।

সবসে মিঠা চুপ

সবসে মিঠা চুপ

কে জানছে কার গভীর অন্তঃস্থলে
কত দুঃখ লোকানো ?
বাইরে থেকে কতটুকু বোঝা যায় ?

আমি এতগুলো মানুষের কষ্ট গিলে গিলে
আর তাদের “অযাচিত ভাবে” দেওয়া কষ্ট
সহ্য করে করে শারীরিক ও মানসিক অসুস্থ।
আর আমি স্বীকার করলাম এ আমার স্বভাবদোষ।

সাধারণ নির্ঝঞ্ঝাট মানুষরা শুনে বলবে,
“ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়িয়ে কি হল ?
জাগতিক দিক দিয়ে কোনো অর্থ বা যশ প্রাপ্তি,
অথবা কোনো বিখ্যাত লোক হতে পারলে কি?
শুধু শ্রম আর সহানুভূতি দিয়ে গেলে।”

তাও কোনো বুদ্ধিমান মানুষেরা বলে,
অনেক নাকি অভিনয় ছিল !
ঠিক, নিজেরা যা করে গেছ সেভাবেই ত দেখবে !

একটা খাঁটি মানুষকে চিনতে গেলে
নিজেকে ততটাই খাঁটি হতে হয়,
সে কজন হতে চায় বা হতে পারে ?

চামউকুনি উলূপী

চামউকুনি উলূপী

গতজন্মের মরা মেয়ে বলে নিয়েছিলাম কোলে
পরিবর্তে ছুঁড়ে দিল তার মনের গভীরতা।
স্বর্ণকলস যেন ককিয়ে ওঠে তার বিমূর্ত হাতের ছোঁয়ায়
কি অপরূপ ভাবে কবিতা আঁকে, যেন পটুয়া বসেছে
মৃন্ময়ীকে চিন্ময়ী রূপ দেবে বলে।

নাসারন্ধ্র তার ফুলে ফুলে ওঠে
যখন তার প্রতিভা ফুটে বেরিয়ে ওঠে অবাক দর্জিপাড়ায়।
আমি দেখে ভাবি, কন্যা তুমি কি সেই যে ধরণীতে নেমে এসেছ
আপামরকে কাব্য রসে মজাতে আর
চ্যাটচ্যাটে রস নিত্য চাটাতে চামউকুনি উলূপী !

নান্দনিক

নান্দনিক

নান্দনিক তার চলাফেরা, নান্দনিক তার হাসি
দুটি গজদন্ত শ্বাপদ হয়ে ছুঁড়ে দেয় খাবার বাসী
অপরূপ তার ভঙ্গিমা, অপরূপ তার কালিমা
সেই অপরূপে মন মেজে নিয়ে হয় বৃন্দাবাসী।

নাগর এসে একমুঠো করে ধুলো ছুঁড়ে দেয় বাতাসে
আমরা অভাজন তাই চেটে খাই আরও পাবার আশে
বার করে নেওয়াটাই আসল কথা নাগর দিল লিখে
জানো না কি অভিমন্যু শুধু ঢুকেছিল বেরোয় নি সমুখে !

ঋতুমতী বর্ষা

ঋতুমতী বর্ষা

ঋতুমতী বর্ষা সব ঋতুতেই ভিজে সপসপে
যেন আষাঢ় শরীরে লেগে
ডুবে যায় ভেসে যায় তার অনিন্দ্য দুখানি পা
কখনো নদীতে কখনো পুকুরে যেন ফোটা লাজুক পদ্ম
কৃষ্ণ ঠাকুরেরা শিউরে শিউরে উঠে
কেউ ডুকরে উঠে বলে, মাগো তুমি কি তবে সেই
বিরহী রাধা যে অঙ্গনে অঙ্গনে দাঁড়ায় একাকী
শ্যামেদের তরে মেলে তার লাজুক আঁখি
বসন ভূষণ হেলেদুলে যায়
পালঙ্কের বাহুতে জাগে তার ডাগর আঁখি।

চিত্রকল্প

চিত্রকল্প

বাইরে অলৌকিক অপার নিস্তব্ধতা
অচেনা রহস্যের মত সাদা সাদা বালুকণা
পথ প্রান্তর জুড়ে ছড়ানো অসীম উদাসীনতায়
সবুজ ঘাস পাথর কুঁচির মত চাপা পড়েছে বালুকণায়
তুষারপাতের চিহ্ন পাতাবিহীন শাখায় শাখায়
প্রেরণার মত উড়ে যায় ঝোড়ো বাতাস
নির্জন পথঘাটে স্বর্গের শান্তি যেন উপচিয়ে পড়ছে
চিত্রকল্প বর্ণনায় এ আমি আজ মৌনী আত্মস্থ।

বালির ঘর

বালির ঘর

সপ্তর্ষি মেলা আকাশে পা দিয়ে ভাবি
তোমার বাড়িতে ফিরে যাবার কথা
পাঁচিল বেয়ে বোগেনভেলিয়ার গাছটা
ডালপালা ছড়িয়ে সুন্দর বেড়ে উঠেছে
রঙিন ফুলগুলোতে রামধনু ফুটে ওঠে
কিন্তু তোমার দেখা নেই, জানিনা তুমি
এখন কোন সমুদ্রে বালির ঘর আঁকছ
কালো আকাশে কাজলের মাখামাখি
নীল পাহাড়ের দেশে সবুজের আলপথ
ডিমনা হ্রদের সাজানো বাগানে এখন
অজস্র ফুল ঝরনার মত ঝরে যাচ্ছে
ময়ূরকণ্ঠী রং মাছরাঙা জলের ধরে।

নক্ষত্রপতন

নক্ষত্রপতন

চাঁদের গায়ে পেরেক পোঁতার শব্দ
ক্রমশ: ফিকে হয়ে আসে,
দূরে কালপুরুষ এক রাশ অপেক্ষা নিয়ে
তারাদের সাথে লুকোচুরি খেলে।

বহুদূরে নীল নীলিমায় চাঁদনী আকাশ
আঁধারে আঁধারে মেঘে আর চাঁদে
লুকোচুরি নক্ষত্রপতনের শব্দ
কান পাতলে শোনা যায়।

অন্ধকারে পেঁচার চোখ ফসফরাসের মত
জ্বলতে থাকে।

সীমন্তিনী কপালে কালো টিপ্
দুঃস্বপ্নের মত জেগে
আলোকবর্ষ দূরে একটি সোনালী গ্রহ
অবহেলার পাশে গড়ে ওঠে।

ভাগ্যদোষ

ভাগ্যদোষ

মানুষই থাকতে চেয়েছিলাম বরাবর
ভাগ্যদোষে হলাম এক গুপ্তচর
অনটনের সংসার, আজ আছে কাল নেই
ভাগাড় থেকে শকুনের সাথে
খাবার ভাগ করে খাই
তাই দেখলাম এ ব্যবসা টা নেহাত মন্দ নয়
প্রপিতামহ সুত্রে প্রাপ্ত
তাই হতে দিই না তাকে বাজেয়াপ্ত
তবে অন্যেরা যাতে এ জীবিকায়
জীবন না বিলিয়ে দেয় তাই
সব কিছু জানান দিয়ে দিই
হাভে ভাবে আড়ালে আবডালে

শকুনদের সাথে কেউ ভাগ নিক বরদাস্ত হয় না।