ইন্দ্রাণী সরকার এর সকল পোস্ট

কথা শূন্যতা

resiz

সব বক্তব্য এক একে হারিয়ে যাচ্ছে
কথাশূন্যতা গ্রাস করেছে
দূরের ওই শাল্মলী বৃক্ষকে
আমার উন্মুক্ত দুটি চোখ দেখে
তোমার সদরে চলে যাওয়া
আমারই বুক মাড়িয়ে
নীল বিষে ভোরে গেছে
পরিত্যক্ত ক্লান্ত রাত,
আর ফিরো না –
অচঞ্চল এগিয়ে যাও।

আমার পরিপূর্ণ সম্মতি রইল
এত ঘৃণায় ভরা ভালোবাসা
না হয় নাই বা দিলে ?

নতমুখ মেয়েটি

mys

মেয়েটি বসে থাকে নতমুখে
বাইরে থেকে তির্যক আলো
এসে তার মুখের ওপর এক
আলো আঁধারি ঢেউ তোলে।

তার কোঁচকানো সাটিন জামায়
কিছু মনের অব্যক্ত অভিব্যক্তি
হাত দুটি কোলের ওপর ন্যস্ত
মাথায় পড়া মেপল পাতার টুপি
এক পাশে হেলে আছে অযত্নে
মাঝে মাঝেই দাঁত দিয়ে সে তার
ঠোঁটের ওপর ছোট্ট কামড় দেয়।

অনেক অজানা কথা লুকিয়ে আছে
চোখের তারায় কাজলের লেপনে।

নিশ্চুপ মন

index

অনেক দূরের যে পথটা এঁকেবেঁকে চলে যায়
তার পাশ দিয়ে বয়ে যায় একটা পাহাড়ি ঝর্ণা।
কুলুকুলু জলের শব্দ, একরাশ ফেনিল উচ্ছ্বাস
তারই মাঝে মাঝে থোকা থোকা বেগুনি ফুল।

এলোমেলো বাতাসে পাইনের পাতা তিরতির
সারি সারি দেবদারু পথের ধারটি ঘিরে থাকে।
বাহারি সব পাখিরা এদিকে ওদিকে গেয়ে যায়
তাদের গানের সুর বহুদূর অবধি ভেসে আসে।

সূর্য্যের আলোয় ঝিকমিকিয়ে ওঠে ঝর্ণার জল
দুহাতে আঁজলা ভরে বেঁচে থাকে নিশ্চুপ মন।।

স্বর্ণপ্রভা

Tec

তুমি কি হেলেঞ্চালতার মত দুলে ওঠো?
আকাশে ছড়িরে পরে তোমার স্বর্ণপ্রভা
রামধনুর সাতটি রং এসে তাতে মিশে যায়
মনে মনে ভাবি তুমি কি সেই যাকে দেখে
ইন্দ্র দেবতার হাজার চোখ ফুটে উঠেছিল?

বিশ্বামিত্র মুনির তপস্যা ভঙ্গ হয়েছিল?
চতুর্দিকে দেবতারা বাজিয়েছিল শঙ্খনিনাদ
তোমায় পাদ্য-অর্ঘ্য দিতে নতজানু হিমালয়
ময়ূর ভুলেছিল কেকারবে পেখম মেলতে
দেবীর আদলে আকাশ থেকে পুষ্পবৃষ্টি
তোমার দিব্য দর্শনে বিনা বাক্যালাপেই
পূরণ হয় সমস্ত ইচ্ছা, দূর হয় মতভেদ।

জোছনা ভরা রাতে

164

প্রতিটি জোছনা ভরা রাতে
বিনিদ্র চোখ জানে
রাত্রির অরণ্য সুখের কথা
আর বাতাসের ফিসফিসানি।

বৃষ্টিভেজা দীঘি জ্যোৎস্নায়
সুদূর স্বপ্নময় নীরবতায়
রুপালি আলোর মায়ায়
তোমার মুখের চালচিত্র।

দূরে ভাসে মেঘের কালো চুল
উড়ে যায় চাঁদের গায়ে
আকাশে তারাদের টিপছাপ
তার মাঝে তোমার চেয়ে থাকা।

শ্যাম পরবাসে

164

বর্ষা ছুঁয়ে যায় প্রেয়সীর অধর
শ্যাম পরবাসে আঁখি ঝরঝর
কভু যেও না আমারে ছাড়িয়া
শুধু ভরে থেকো আমায় চাহিয়া

গানের কলি ভাসে প্রান্তর জুড়ে
অধরে অধর ছোঁয় আনমনা সুরে
বাতায়নে জাগি হে আমার প্রিয়া
পাশে থেকে মোর ভরে দিও হিয়া

লাজে রাঙা তার চরণ দুখানি
ত্রস্ত নয়নে পশে বলাকা চাহনি
সিঁথিময়ূরে চমকে জ্বলজ্বল প্রভা
অতি আনন্দিত সৌন্দর্য্য বিভা

শ্যাম এস মোর বৈভব তিয়াসে
প্রজ্জ্বলকান্তি সমুজ্জল সহাসে
ভরে দিও সাজি ঝরা ফুল বাসে
আসিনু যে আমি তোমারি সকাশে

পারাপার

Rive

মৃত্তিকা-নদী খেয়ে পারাপারের
সংযোগস্থল পাথুরে, জনাকীর্ণ
অন্ধত্বের ভাণ করে পড়ে থাকা
মানুষের দল ভিক্ষারত প্রত্যাশা

কোজাগরী চোখে আলতো ভাবে
ছুঁয়ে যায় শীর্ণ, মলিন বসবাস
সামান্য উপঢৌকনে সাজায় হাত

সদ্যবিবাহিতা এক বধূ এস্ত্যভাবে
এদিক ওদিক চেয়ে ঘাটের তোরণে
এক পা এক পা করে জলে নামে
কুলবধূদের উলুধ্বনিতে পালিত
হয় কোনো আনন্দদায়ক কুলাচার।

মৌন পরিক্রমায়

নিবিড় মেঘে ঢাকা তমসাবৃত আকাশ
শুভ্র চাঁদের আলোয় ভরে যায়
মেঘ সরে গেছে, মেঘের ফাঁক দিয়ে
ফুটে ওঠে সুস্পষ্ট চাঁদ আর তার দীপ্তি
রাত্রি তারার আঁচল বিছিয়ে দেয়
মৌন পরিক্রমায় পৃথিবী ঘুরে নেয়
তার নিজেকে একদিন এক রাত
রাত গড়িয়ে দিন, দিন গড়িয়ে রাত
তুমি এসে বললে, সে কি ঘুমিয়ে গেছে?
আমি চোখ থেকে তুলে নিলাম ঘুম
আমি সজাগ নয়নে তাকে দেখলাম
কারা যেন অস্পষ্ট বিন্দুতে মিলিয়ে যাচ্ছে।

প্রান্তরেখা

157

নীল আকাশের তলায় একটা সাঁকো
তলায় বয়ে যায় পাহাড়ি নদী
প্রিয়ার চিবুক ছুঁয়ে প্রিয়র বহিরাগমন
ঘুমের মাঝে তুফান, তুফানের মাঝে পথ
ধ্যানবিন্দু সরে সরে যায়
নিঃশব্দতা বড় বুকে বাজায়
রাতপাখির ডানায় অপেক্ষা দূরাভাস
প্রিয়ার বোবা চোখ তবু তারে খুঁজে চলে
যেসব প্রজাপতি একদা রঙিন হয়ে ভেসে উঠত
তারাও পথ করে নেয় নিঃশব্দের ভাষা
আলো আঁধারের যে মিলন দিক্চক্রবালে
ভেসে ওঠে গোধূলির প্রান্তরেখায়,
সেখানে জেগে থাকে ঘরে ফেরা পাখি
সহস্র বছরের অশ্রুকণা আঁধারের বুক চিরে
তারা হয়ে আকাশে জ্বলজ্বল করে।

স্বরলিপি

png-transparen

নির্জন রাস্তায় একরাশ পাতার ওপর দিয়ে
তোমার নিত্য যাওয়া আসা
আমার অপেক্ষার শেষ হয় তোমায় পেয়ে
ভাবনার স্বরলিপি ঠোঁট ছুঁয়ে যায়
তোমার স্পর্শের অপেক্ষায়
রঙিন স্বপ্ন আঁকা হয় প্রজাপতির পাখায়
তোমার চোখের তারায় ভাসে আমার মুখ
তুমি হাত ধরে আমায় পাশে বসাও
ভাবনার সমুদ্র থেকে একরাশ কথা
ফোটা ফুল হয়ে আমার কোলে ঝরে পড়ে
সময় কখন যে পেরিয়ে যায় টের পাই না
তুমি দুহাত বাড়িয়ে আমায় কাছে টেনে নাও …

হাতছানি

30987

গোধূলির আলোয় ঘিরে থাকা স্তব্ধতা যত
বনভূমিতে আছড়ে পড়ে
কিছু পাখি অবসন্ন মেঘেদের বুক চিরে
দূরে কোথাও মিলিয়ে যায়।

তোমার মায়াবী মুখ ভেসে ভেসে ওঠে
অবভাস কেবল ঢেউয়ের মতো ভেসে আসে।
গোপন দেরাজ থেকে বেরিয়ে আসে না কেউ
প্রয়োজন পড়ে না, সবই গাঁথা আছে।

টুপটাপ ঝরে পড়ে শুকনো পাতারা
হাওয়াতে ছড়িয়ে যায় আরও দূরে।
তোমার ভাসা ভাসা দু’চোখ
অনেকটা দূর থেকে তাকিয়ে তাকিয়ে
হাতছানি দিয়ে কাছে ইশারায় কাছে ডেকে
ক্ষনিকেই সরে যায় মেঘের আড়ালে।

পেছন ফিরে দেখি তুমি দাঁড়িয়ে
যাবার সময় হল বোধ হয়।

কবিতা

290629

প্রিয়তমা, তোমার ওই কিশোরী মুখের হাসিতে
আমি বারবার ভেসে যাই
যতবার জোছনায় আমার ঘর, মাঠ, আকাশ
প্লাবিত হয় ততবার তোমার
সান্নিধ্য কামনায় আমি ব্যাকুল হয়ে উঠি।

তোমার ছেলেমানুষি ছটফটানি সব কিছুতেই
আমি বাঁচার রসদ খুঁজে পাই।
দেখো না তোমায় দেখলেই আমার পিয়ানো
কত সুন্দর বেজে ওঠে যেন
আমার কৃতিত্ব নয় তোমারি উপস্থিতি আমার
সুরকে মহিমান্বিত করে তোলে।

যখন আমরা চাঁদের আলোয় নির্জন পথে পথে
খুশিতে নেচে বেড়াই তখন
রাতের পৃথিবী অবাক চোখে চেয়ে থাকে যেন
বলে এরাই শ্রেষ্ঠ প্রেমিক প্রেমিকা।
কিন্তু তোমার অসফলতায় আমি ব্যথা পাই,
তুমিও দেখছি আমার সফলতা
ঠিক মানতে পারছো না — আসলে এমনি হয়
সাফল্য মানুষকে বদলে দেয়।

তুমি যাও সে পথে যাও, যেখানে তোমার জীবন
সফল হয় আমি আমার পথে যাই
তুমি কোনো সফল জীবনসঙ্গী খুঁজে নাও আমি চাই
আমি এমনি একলা থাকতে চাই
শুধু যদি কোনোদিন দেখা হয়ে যায় আমাদের জেনো
তোমার সুখে আমি সুখী চিরকাল।

অস্তগামী

index

সকাল থেকে রাত শুধু তোমাকেই দেখি
দেখতে দেখতে হয়রান হই
তোমার উজ্জ্বল মুখ, মায়াভরা চোখ
সবই কি আমার জন্যই ?

বাস্তবতা হারিয়ে হতাশা আঁকড়ে ধরতেই
তোমার দিকে ফিরে তাকাই।
তোমার নীরব চোখদুটো হেসে বলে,
ভয় কি ? আমি ত আছি।

আমি ত তোমায় ভালোবাসি তবে
কেন এত ভেঙে পড়ো ?
দেখতে দেখতে অস্তগামী সূর্য্যের সমস্ত রঙ
তোমার মুখে এসে জড় হয়
আমি স্তব্ধ হয়ে তোমায় দেখতে দেখতে
রঙের সৌন্দর্য্যের মধ্যে হারিয়ে যাই।

শতাব্দীর ঘুম

আমার তন্দ্রাচ্ছন্ন শ্রান্ত দুটি আঁখি
বিরল জনপথ ছাড়িয়ে প্রান্ত সীমায়
এসে বিশ্রাম নেয় কোনো নদীর ধারে,
তবু তোমার দেখা পাওয়া যায় না ।
ঘুম আসে আবার ভাঙে, তোমায় খুঁজি
হয়ত একদিন দেখা পাব এই আশায় ।
আবার ঘুমিয়ে পড়ি, শতাব্দীর ঘুম
তোমার ভরসায় থেকে থেকে প্রদীপ
ম্লান হয়, নতুন প্রদীপ খুঁজে পাই না
চিরকাল এমন অন্ধকারে রেখে দেবে ?

বাবুই পাখিটার বাসা ভেঙে গেছে

19133

তার সন্ততি ও বন্ধু পাখিরা
কখনো সখনো তাকে কুটো দিয়ে যায়
নতুন করে ঘর বাঁধতে

কিছু বন্য পাখি নিজেদের মধ্যে
কলহবশত: এই শান্ত পাখিটির বাসা
তছনছ করে চলে গেছে

সেইসব পাখিদের আর দেখা যায় না
তারা দূর থেকে কখনো সখনো
কিচির মিচির আওয়াজ দিয়ে যায়।