ইন্দ্রাণী সরকার এর সকল পোস্ট

নই মায়াবিনী

রেশমী জরীতে জড়ানো বেনী চোখেতে টানা সুরমারেখা
কপালের মাঝে উজ্জ্বল তারা
ছলছল মেঘ চুপিসারে বলে,
কে তুমি মায়াবিনী মেয়ে ?

চপল আঁখি দুটি বড় উজ্জ্বল ত্র্যস্ত চাহনিতে একরাশ কথা;
ময়ুরকণ্ঠী রাঙা শাড়ি পরিধানে,
জোছনা আকাশে সপ্তর্ষি শুধায়,
কে তুমি মায়াবিনী মেয়ে ?

ভেজা বাতাসে কাঠচাঁপা সুবাস
জুঁই চামেলীতে ভরা চারিপাশ
নদীর ঢেউয়ে ছলাত ছলাত বিরহী ডাহুকী ডেকে উঠে বলে,
কে তুমি মায়াবিনী মেয়ে ?

নিথর নীরব তার আধভেজা চোখ ঠোঁট দুটি কাঁপে মৃদু থরথর
শাড়ির আঁচলে মুখ ঢেকে নিয়ে
ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে সে,
আমি শুধু এক সাধারণ মেয়ে।

চাঁদের অপেক্ষায়

মেয়েটা নদীর ধারে বসে
অপেক্ষা করছিলো চাঁদের
আজ শুক্লপক্ষ তবুও
চাঁদটা ঘুমিয়ে রয়েছে।

আকাশের আলো আঁধারি
ক্যানভাসটায় আঁকিবুকি কেটে
কিছু পাখি উড়ে চলে গেল।
চাঁদের তবু খবর নেই।

ফুলের সুরভিতে বাতাস মম
মাতাল হওয়ার ফিসফিসানি
নদীর জলে মেঘের ছায়া
চাঁদ কি আর উঠবে না ?

হঠাতই আকাশে চাঁদ দিল উঁকি
লজ্জাবতী মেয়ের মত
গাড় কমলা রঙের থালা
ধীরে ধীরে ভেসে উঠলো।

স্নিগ্ধ আলোয় ভরে গেল চারিদিক
মেঘেরা হেসে গড়িয়ে পড়ল
অবাক চোখে জ্যোছনা মেখে
মেয়েটা যেন ঘুমিয়ে গেল।

চুপ চুপ কেউ কথা বোলো না
ঘুমিয়ে আছে রাজকন্যা
চাঁদের আলোয় এল বন্যা
মুখ যেন তার মনের আয়না।।

মৃত্তিকানদী

মৃত্তিকানদী অন্তিম শয্যায় যেন শায়িত
একমাত্র সন্তান ফেলে যেতে হবে
তবুও শেষ কামড় বসিয়ে দেয় হলুদ চন্দনে
সন্তানের জন্মদিনে চন্দন এঁকে দিতে পারে নি
দেবাংশীর অন্ধকার বলে কিছু নেই, কোনো লালসা নেই
তবু কর্কটে আক্রান্ত সন্দিগ্দ্ধ মন
ফেলে যাওয়া মানুষদের শুভবিচার না করে
শেষ ছোবল দিয়ে যায় অজ্ঞাত কুলশীলদের
বাহির থেকে যা দেখা যায়, যা বোঝা যায়,
তা সঠিক নয় এ পরমার্থ কেবল প্রভু জেনেছেন
চিত্রকল্প দিয়ে আঁকা হয় মানসিকতার বিভিন্ন রূপ
মানবজনমে যখন যতিচিহ্ন আঁকা যে কোনো মুহূর্তে
কেন মানুষ মানুষে আশ্রয় খোঁজে
কি যন্ত্রনায় একটি শিশু কোনো নারীর কোলে মাথা গোঁজে
তা শুধু বয়সের মাপকাঠিতে মাপা
যেন বয়সের মত পাপ এ জগতে আর নেই।

পরশপাথর

মায়ামুকুরে প্রতিফলিত প্রতিবিম্বে অহরহ কাকে দেখি ?
যেন দুর্বোধ্য কোনো যন্ত্রণা সহস্র বছরের
মহেঞ্জোদরো সভ্যতার নীচে ঢাকা !
এবার ম্লান মুখগুলিতে হাসি ফোটানোর সময় এসে গেছে
জ্যেষ্ঠদের আশীর্বাদ মাথায় ঝরে ঝরে পড়ে।
পরশপাথর চাই কোথায় পাব ?
নিজেকে নিজে বার বার শব্দজগতে ফিরিয়ে আনি।
রূপ কথা বল, ফের কিছু মধুর শব্দ লিখে নে
তোর সাদা কালো পাতায় একটু জায়গা দিস
আমার এ নিতান্ত প্রাঞ্জল কিছু শব্দের সমষ্টি।

পরিচয়

মোমের কোনো ভঙ্গি নেই
তাই স্তব্ধতারও নিজস্ব কোনো আকার নেই
পরস্মৈপদীতে বেঁচে থাকা
পিতৃমাতৃপরিচয়ও ভুলে থাকা
পিলসুজের ঘি ফুরিয়ে যায় অন্যত্র পাবার সংস্থান করি
আসলে পরিচয় নামক অলংকার
বহুদিন আগে থেকেই জলাঞ্জলি দিয়েছি
শ্বাদন্ত বার করে বা লুকিয়ে
ধারালো চোখে একলা তরবারির খোঁজে নিম গাছ হয়ে যাই
তেমনি তেঁতো তেমনি মধুর।

ঋণ

চালসে পরে আছে চোখে
কাজলটাও তেমন যত্ন করে
পরাতে পারি না, হাত কাঁপে
শোনো তুমি এত কেঁদ না
তোমাকে আমি চিনি না
চেনা দিয়ে যাও কখন সখন
নয়ত আমার হাত এগোয় না
আজানুলম্বিত আমার হাত
বিবর্তনবাদ ঠিক মত মানতে
পারি নি হয়ত, তাই পরিবর্তনশীল
জগতে আজও বেমানান
ভয় কি এসো, না হয় সুরমাই
এঁকে দেব, কাজলের ঋণ
এখনো যে শোধ করতে পারি নি |

যখন তুমি আসো

ভেজা শিশিরের টুপটাপ ছন্দ নিয়ে
যখন তুমি আসো
তোমার পায়ে জড়িয়ে ধরে কুয়াশার
কাজল কালো ঋণ
তোমার গা থেকে খসে খসে পড়ে
এক একটা মাণিক
তোমার হাসির ঝিলিকে বেজে ওঠে
নূপুরের সুরেলা বীণ
হাতের মুঠোয় একরাশ জোনাকির
আলো জ্বেলে নিয়ে
রোজ সকালে যখন আমার জানলা
ছুঁয়ে দিয়ে যাও
তখনো তোমার দুচোখের পাতায় লেগে
রাতের মধুর স্বপ্ন
গোলাপ পাপড়ি ঠোঁট থেকে ঝরে যায়
মেঘেদের নরম হাসি।

নিষ্ঠুর বকরাক্ষস

চেনা ছেলে মেয়ে পেলেই
টোপা কুলের মত আমার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে
নিজের পকেটে পুরে রাখে।
তাদের এতটুকু আমার কাছে পাঠায় না।

অথচ ওরা সব আমারি লোক
লোভ দেখিয়ে কেড়ে নিয়েছে।

সমস্তটা দিন রাত ধরে ভেস বদলে বদলে
এক একটা লোক পকেট থেকে বার করে
তার মুখোশ নিয়ে এখানে বসে বসে মজা দেখে
আর আমাদের নাচানাচি দেখে হেসে কুটিপাটি খায়।

ঈশ্বরপর্ব

ঈশ্বরপর্ব

ঈশ্বর গঙ্গাস্নানে হরিদ্বারে যান
ধূলি পায়ে একাকী পথে পথে ঘুরে বেড়ান
ঈশ্বর চিঠি লিখে পোস্টারবোর্ডে টাঙিয়ে বলেন,
আর কতদিন এমন একা একা থাকব,
এইবার তুমি আমার হয়ে যাও গো !

এই বলে তিনি ধ্যানস্থ হয়ে লোটা কম্বল নিয়ে
মাদুরে শয়ন করেন, লোকে ভাবে,
উরিব্বাস ! কত কিছু হচ্ছে গো তাঁর ওনার সাথে !

ধীরে ধীরে তাঁর অনন্ত সমাধি হয়, তাঁর আত্মা
শরীর থেকে বেরিয়ে দিকে দিকে মিলিয়ে যায়।

মাত্র অনুলিপি

মাত্র অনুলিপি

পূর্ণিমার আলোয় ঋষি তাকিয়ে থাকেন সুদূর আকাশে
সেই দৃষ্টিতে ত্যাগ আর বৈরাগ্য পরিস্ফুট
পাশেই স্বাতী, অনুরাধা, পুষ্যা, রোহিনী আদি
বৈরাগ্যময় ঋষি একটি ঠিকানা দেওয়া পাখির চিন্তায় মগ্ন
পাশে তার শুষ্ক ইউক্যালিপটাস
সে রাতের শিকারী পাখিটির আশ্রয়স্থল
সামনে তার যেন একটি আয়না
সেই আয়নায় চোখ রেখে তিনি দেখেন
ঠিকানা না দেওয়া একটি দণ্ডায়মান মোমবাতি
রাত জাগা নক্ষত্ররা ভেড়া গোনে
পাঁচ, চার, তিন, দুই, এক
চরাচর ভেসে যায় এক অপূর্ব গরিমায়।

মোহময় স্মৃতি

মোহময় স্মৃতি

ফুলঝুরির মত ঝরে ঝরে পড়ি হে প্রিয়তমা,
প্রতিটি ফুলকিতে লেগে থাকা আমার ভালোবাসা।
কবি মাইকেলের মত একই সাথে পাঁচটা মহাকাব্য লিখি
এক একজন অনুপাঠক এক একটি প্রতিলিপি আঁকে।

পৃথিবীতে কিংবদন্তি করে যাব, অবিস্মরণীয় ভালোবাসা
একান্ন পীঠে একান্নটা খণ্ড, যদি সাথে পেতাম !
এখন পর্দায় চোখ গেঁথে রাখো, অস্তিত্ব পাবে।
একান্নবর্তী সংসারের একান্নবর্তী ভালোবাসা
বিগলিত মোমের মত যেন মোহময় স্মৃতি।

মধুময়

মধুময়

দশ বছরে দশ দিক দিয়ে দশ রূপে ঘুরেফিরে
ঈশ্বর এসে মধুময় বাণী শুনিয়ে গেছেন বুঝি নি।

আঙুলের ফাঁক দিয়ে গলে যাবার পর জানলাম
তিনি ঈশ্বর ছিলেন,
যিনি সেই ভাবেই ছিলেন মনের মণিকোঠায়,
অধরা মায়ায়, সুরের মোহজালে।

কিন্তু তিনি পরিচয় দিয়ে জাল ছিঁড়ে জ্যোতিষ্ক হলেন।

এখন আমরা আকাশে তাকিয়ে ঈশ্বর খুঁজি,
আলো দেখে বুঝি কি ভীষণ তাঁর ব্যাপ্তি,
কি ভীষণ তিনি জুড়ে আছেন
মনে হয় আহা, যেখানে এতদিন ছিলেন
সেখানেই ত আছেন।

সিম্ফনি

সিম্ফনি

ক্রিস্টাল ফুলদানিতে বসানো আরক্তিম গোলাপ
চারিদিক ঘিরেছে সুন্দরী ফুলেরা
অদূরে পিয়ানোতে সোনাটার মূর্চ্ছনা
সঙ্গী ভায়োলিন অপূর্ব কাঁদে, হাসে।

বাইরে শ্বেতপাথরের সিঁড়ি ধাপে ধাপে
নেমে গেছে স্বচ্ছ সরোবরে
জলের ওপর ভেসে আছে থোকা থোকা শ্বেতপদ্ম

সরোবরের চারিদিকে সারিবদ্ধ ফুলের গাছ
রোদের ঝকঝকে আলোয় তাদের রং ঠিকরে পড়ছে।

এখুনি আসবেন সিম্ফনি বাদক
হলঘরের আলোগুলি জ্বলে উঠছে
মৃদু সুগন্ধে ভরে উঠেছে বাতাবরণ

সিম্ফনির তালে তালে হেঁটে আসে দুই কিশোর ও কিশোরী,
সার বেঁধে হাসিখুশি উচ্ছ্বল সঙ্গী ও সঙ্গিনীরা
ধীর পায়ে হেঁটে আসে বিবাহমঞ্চে।
পাশ থেকে দর্শকরা বিমুগ্ধনয়নে শ্বেতপুষ্পস্তবক
তাদের পায়ের নিচে সাজিয়ে রেখে যায়।

দুটি সুন্দর হৃদয় ধরা পড়বে আজ শৌখিন এই মুহূর্তে।

নির্বাক ভালোবাসা

নির্বাক ভালোবাসা

তোমার নির্বাক ভালোবাসায় আচ্ছন্ন হয়ে আছি প্রিয়
তোমার কেয়া, তোমার দিয়া, তোমার হিয়া মনে ভরে

কি ভাবে বোঝাই এতো মানবিক স্বীকৃতি
আর কখনো মেলে নাই
কখনো আমার বাঁধানো চাতাল এত ধনধান্যে
ভরন্ত হয় নাই

কবে সীমান্তে সিঁদুর প্রলেপে ঘরে নিয়ে যাবে
অপশনে না রেখে প্রথমার আসনে ?
সেই ভেবে ভেবে এখনো দুচোখে অঝোর ঝরে।

মায়াবতী

কবে থেকে মায়ায় জড়িয়েছিস
তোর প্রিয় বোন হলাম যেদিন জানলা বেয়ে
চুল খুলে দিলাম আর তুই সেই বেয়ে উঠে এলি
আমার রূপকথার সাজানো গল্পে

ঘুরে ঘুরে পায়ে পায়ে জড়ানো তোর কথা
ঝাপসা চোখে ছেড়ে যেতে যেতে ফের ফিরে আসা
সেই থেকে তোর মায়াবতী বোন হলাম
সাত ভাই চম্পার এক বোন পারুল যেন

অতসী ফুলের মত গায়ের রং দেখে তুই মুগ্ধ হস
তোর চোখে এঁকে দিই মায়াকাজল
যার কোল আঁচলে তুই ঘুমিয়ে পড়িস
বৃষ্টির আদলে ভরে যায় তোর হাতের পাতা
কাশফুলের হাসিতে ভরে যায় মুখ
বাসন্তী রঙে তোর উঠোন ভরে ওঠে।