ইন্দ্রাণী সরকার এর সকল পোস্ট

দিনান্ত শেষে মেঘমালা

edc_b

হেমন্তের বিকেলের ডিম রাঙা সূর্য্য
পাইন বনের ওপারে দীর্ঘ ছায়া ফেলে
সমুদ্রের জলের আয়নায় মুখ দেখে।
তখন নিঃ স্তব্ধতা, কচি পাতার ঘ্রাণ,
কালপুরুষের দীর্ঘ ছায়া আকাশ পারে
ম্লান হয়ে আসে ধূসর বিকেল পেরিয়ে।

দূরে বৃহৎ গাংচিলের ডানার শব্দ
পতঙ্গদের কান্নার মত ক্রমশঃ বিস্তৃত হয়।
জলপাই রঙের মেঘ আকাশে ভাসমান।
সে তখন এসে মৃদু স্বরে ডাকল আমায়
ভাসমান দুটি চোখ সাঁঝের আলোয় মলিন।
বলল, মেঘমালা, তোমায় নিয়ে যাব বহুদূর।

খেয়াজাহাজে সাগর পাড়ি

faper-preview

যাত্রীবাহী জাহাজ জল
কেটে কেটে এগিয়ে চলে
সমুদ্রবক্ষের উপর দিয়ে।

ধবধবে সাদা তার রং
নীল নীল কাচের জানালা
পর্যবেক্ষণের জায়গা রেলিং দিয়ে ঘেরা
জাহাজের তিন দিক
সামনের দিকে ড্রাইভার এর কেবিন

অপূর্ব ফেনিল জলরাশি সরে সরে যায়
তারই মাঝ দিয়ে বয়ে চলে সমুদ্রপাখি

মাঝে মাঝে তিমি, ডলফিন, সী গাল
জলের উপর ভেসে ভেসে উঠে।
একধারে পাইনের রাশি অথবা পাথরের টিলা
ক্রমশ: দূরে সরে যায় একেবারে দৃষ্টির বাইরে।

যাত্রীদের হৈ হৈ খাওয়া দাওয়া শেষ হতে হতে
গন্তব্যস্থল এসে যায়, সমুদ্রের বিস্তার সংক্ষেপ হয়
সমুদ্র সৈকতে জাহাজ এসে থামে, অপূর্ব জলযাত্রা
শেষ করার পর তার স্মৃতি মনে গেঁথে থাকে।

নৌকাযাত্রা

index

নদীবক্ষে নৌকা বওয়ার শব্দ ছলাৎ ছলাৎ
গলুইয়ের ভিতর দুটি প্রাণ স্বামী ও স্ত্রী
নতুনা বিবাহের পর জামাইয়ের
সস্ত্রীক শ্বশুরবাড়ি যাত্রা।

জলের ওপর শাপলা, শালুক ও
পদ্ম পাতা ফুটে রয়েছে।

মৌমাছিদের গুনগুনানি, জলের
তলায় ছোট ছোট মাছ, প্রজাপতিদের
পাখায় রং বেরঙের আঁকিবুঁকি,
দূফরে মাঠে রাখালের বাঁশির সুর।

ধীরে ধীরে নৌকাটি আপন পথে
মাঝির ভাটিয়ালি গানের সুরে
সুর মিলিয়ে ক্রমশঃ মিলিয়ে যায়।

নিশ্চুপ মন

6e4cfa

অনেক দূরের যে পথটা এঁকেবেঁকে চলে যায়
তার পাশ দিয়ে বয়ে যায় একটা পাহাড়ি ঝর্ণা।
কুলুকুলু জলের শব্দ, একরাশ ফেনিল উচ্ছ্বাস
তারই মাঝে মাঝে থোকা থোকা বেগুনি ফুল।
এলোমেলো বাতাসে পাইনের পাতা তিরতির
সারি সারি দেবদারু পথের ধারটি ঘিরে থাকে।
বাহারি সব পাখিরা এদিকে ওদিকে গেয়ে যায়
তাদের গানের সুর বহুদূর অবধি ভেসে আসে।
সূর্যের আলোয় ঝিকমিকিয়ে ওঠে ঝর্ণার জল
দুহাতে আঁজলা ভরে বেঁচে থাকে নিশ্চুপ মন।।

রংবাহারি ফুলের মেলা

unnamed

বাগানের ফুলটি জানে
ফুটলে ভালোবাসা হয়

জুঁইফুলের গন্ধ মেঝে
অমৃতপাত্রে হাত রাখি।

বাহারি পাতার ঝাড়ে
মৃদু কম্পন খেলে যায়

দুটো পদ্মের পাপড়ি
খসে পড়ে মৃদু ঠোঁটে।

গভীর গন্ধে ঘন শ্বাস
হাতের পাতায় মুখটি

গাল থেকে ঝরে পড়ে
চুয়া চন্দন আর আবীর।

একটি রাতের কথা

নীরব নিশুতি রাতে যখন চলি একা,
দূর থেকে ভেসে আসে বকুলের গন্ধ।
সারি সারি গাছের ফাঁকে আঁকাবাঁকা পথ
ফুলের গন্ধে সুগন্ধি বাতাস বয় মন্দ।

দূরের আকাশে ওঠা একফালি চাঁদ
আলোয় ভরায় আমার অজানা এ পথ।
ভয় হয় যেন না হারাই এই আঁধারে
চলার সাথে সাথে গতি হয় শ্লথ।

দূরে শুনি সমুদ্রের ঢেউয়ের আহ্বান
সমুদ্রের রং বোঝা যায় না এ আঁধারে।
শুধুই শুনি ঢেউয়ের ওঠাপড়ার শব্দ
কালো মেঘ মেশে নিঃসীম পারাবারে।

ভুলে যাই নিজেকে মায়াবী রাতে, সাথে
চাঁদের আলো আর বাতাস গন্ধে ভরা।
গাছের পাতারা ফিসফিসিয়ে কথা কয়,
হঠাৎ বুঝি জগতে সবাই একা মোরা।

হযবরল

১.
তোমায় ভালোবাসি প্রিয়া আগের জন্ম থেকে
মুখেও বাত পায়েও বাত অপেক্ষাতে রেখে
নত হব না তোমার পাশে যদিও পুত্র সমান
কাটব কচু খাওয়াব কচু রুস্তম মোর নাম।

২.
নধর আমার শরীরখানি রাখি তাদের তরে
তোমার জন্য আনি প্রিয়া গবাদি পশু ধরে
তবুও যদি তাকাও তুমি অন্য কোনো দিকে
বুকে আমার হাঁপর ধরে বাঁচি ছদ্মসুখে।

কষ্ট পেও না

thumb-w

অপরাধবোধে তারা চুপ করে থাকে
তুমি কেন কষ্ট পাও ?

দেখেছি তোমার কষ্ট আমার কথা ভেবে
অচেনা অজানার অশ্রু আমায় ছুঁয়ে গেল
এ জগতে কে কার কথা ভেবে কাঁদে ?
সব কান্নাতেই জুড়ে যায় নিজের স্বার্থ

ওরা সাময়িক ভ্রমে আছে যে বিষয়ে
তারা নিজেরাও ওয়াকিবহাল
এমন ভ্রমে অনেকেই থাকে তফাৎ খালি
সেটা প্রকাশের পন্থা, কেউ সেটা গোপনে রাখতে চায়
কেউ রাখতে গিয়েও একসময়ে নিজের কাছে হার মেনে যায়
কিন্তু এই ভুল ভ্রান্তির নামই ত’ জীবন
তাই জীবন যা শেখায় সে শিক্ষা কোনো পাঠ্যপুস্তকে নেই

যে অর্বাচীনেরা নিজেদের আরোপিত ভাবনায়
মানুষের বাইরেটা দেখে বিচার করে, করে যাক যতদিন পারে,
কোনো না কোনো দিন তাদেরও থামতে হবে
তুমি আমি সেই অর্বাচীনদের দলে নেই তাই যথেষ্ট

যে নীরবতা ভাঙানোর সব প্রচেষ্টাই বৃথা
সেই নীরবতা শুধু নীরবতা দিয়েই ভাঙা যায়
ভাগ্য ভালো তাদের যে এই হাত ধরেছিলো
যে হাত কোনো নিরপরাধকে, যে কি না তার ক্ষতিকারক নয়
তার গলা টিপে জলে ফেলে দিতে শেখে নি
এটাই তার দীর্ঘ জীবনের পাঠ

কষ্ট পেও না, আলোর পথ তারা দেখবেই…..

শ্রাবণের আসা যাওয়া

13

যতবার এই পথে সে আনাগোনা করে
জলভরা মেঘ হয়ে জাপটে ধরে
পা দুটো অবশ হয়ে যায়
নিজে কাঁদে আমাকেও কাঁদিয়ে দিয়ে যায়

চোখের পাতায় রেখেছে শ্রাবণ
অতিথি বাতাস হয়ে ফিরে ফিরে আসে
নির্বিবাদে ছড়িয়ে পড়ে বৃষ্টি সুবাস
তমিস্রা রাত্রে করতলে কিছু স্বপ্ন ফিরিয়ে দেয়।

অহ্যলার জীবন্মুক্তি

14570382_811194392351339_2912076205054846763_n

যশোমতির পাহাড়ি উপত্যকায় আমি প্রথম
দেখেছিলাম তোমার চোখে অপূর্ব ভালোবাসা,
সেই থেকে পাহাড় পাহাড় আমার বড় প্রিয় ।
আমি ছুটে চলি আটলান্টিক থেকে
প্রশান্ত মহাসাগরের সমুদ্রতটে ভেসে যাই ।
প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের শীর্ষে
বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে বন্ধ করি চোখের পাতা,
হাত বাড়িয়ে দিই তোমার হাতের স্পর্শকামনায়।
গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের সুবিস্তীর্ণ বর্ণবৈচিত্রময়
গিরিখাত নব্যতা আনে আমার ভাবনায়,
খুঁজে পাই তোমার মনের বিপ্রতীপ ভাবনার দোলাচল।
অবশেষে জ্যামাইকার সমুদ্রের বিশালতায়
নতুন করে তোমাকে খুঁজে পেলাম,
তুমি মিশে আছ প্রতিটি বালুকনায়, প্রতিটি জলকণায়।
অহল্যার তপস্যা সফল হলো তোমার পায়ের স্পর্শে
মৃন্ময়ী শিলাপাথরের চিন্ময়ী রূপদানে,
এইরূপে সার্থক জীবন ফিরে গেল যশোমতির উপত্যকায়।

বলে দাও আমি কি নিয়ে কথা বলব ?

ei-samay

বলে দাও আমি কি নিয়ে কথা বলব ?
উর্দু কবিটি যখন জানলার সামনে দাঁড়ায়
তখন তার অনুচ্চারিত স্নেহ আর তার প্রতি
আমার তৎসহ অন্য কবিদের দুর্ব্যবহারের
কথা মনে হয়, ছেলেটিও একটু অদ্ভূত।
চিরকাল তার প্রেমিকা দুটি ছোবল মেরে গেছে,
কি কষ্ট দিয়েছে কি বলি, কে জানে ক্যান ?
সে বলে তার দোষ নয়, অন্য কেউ কলকাঠি নেড়েছে।
এ আমি এখনকার কথা বলছি না,
সাত বছর আগের কথা, আমি মুখোশ চিনি না।
তাই বেকায়দায় পড়লে হয় নেকড়ে নয়ত: মেনিবিড়াল।

সংক্ষিপ্ত পরিচয়

সংক্ষিপ্ত পরিচয়ের মানুষ, কদিনের
আগে পরিচয় বুঝি নি।
একা পাশে থেকে একাঙ্ক নাটক করেছে
জানি না তাতে কে কতটা পর্যুদস্ত হয়েছে।
স্বল্পভাষী মানুষ বহুদিন পর ধরা দিল।
মায়ায় ভরা শরীর, এককালীন দস্যি
ভাইকে স্নেহের চোখে দ্যাখে, অহিংসা ধর্ম।
যে টুকু বলে কয় তার ভালোর জন্যই বলে।
নিজের মানুষটি সরে যেতে সবাইকে আপন করে নেয়।
এ দিকে শীত এসে গেছে।
রংবাহারি কথায় আর সজ্জায়
পৃথিবীর মানুষদের নিঃস্বার্থে সঙ্গদান করে যায়।

বসতি

SOMEN PRA

পাহাড়ের স্নেহ আঁকতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলি
দিগন্ত বিস্তৃত ক্ষেত, মাঝে মাঝে জলে ডোবা ধানজমি
আর পানের বরজ, আলের পথ পেরিয়ে দেখি পাহাড়।
কোনো ভাষা নেই, চলন নেই, কখনো সখনো ধস নামে।
কিছু বিলাসী বা ঘরহারা মানুষদের পাহাড়ের কোলে বসতি।
দূরে বৃক্ষের পল্লবে পল্লবে আনন্দের কেয়াধ্বনি,
নীলের সুদূর নভে মিলায়, কুসুম রাঙা আকাশ
জলের উপরে ছায়া বিস্তার করে।

অভিধান

অভিধান

বিচিত্র মানসিকতায় থাকি
একটা শকুন, একটা পেঁচা
আর একটা চিল —
অনুশোচনা শব্দটি অভিধানে
রাখি নি বা প্রকাশ করি না।

কাউকে ছুঁতে না পারার বিষ
সবার মনে ঢেলে দিই,
সংক্রামক রোগের মত সেগুলো
এক মানুষ থেকে অন্য মানুষে ছড়িয়ে পড়ে,
শেষমেষ সবাই চুপ করে যায়
আমরা করি না।

একটা কানা ছেলে,
তিন চারটে অভিনেতা, কিছু গায়ক,
যাকে পাই চিবিয়ে খেয়ে নিই।
অতঃপর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে
নিজের সাজানো দেহমন টেনে পয়গম্বর হই।

আগমনী

পূজোর মরশুমে নাচে ঢাক ঢোল ঘন্টা
তাই দেখে বেজে ওঠে নিদারুণ মনটা।
জগজ্জননী মাতার সবেতেই লক্ষ্য
জানা নেই কবে তিনি কার নেন পক্ষ।
প্রণাম মাত: তব চরণে রাখি পুষ্পাঞ্জলি
তুমি না রক্ষিলে সন্তানের আকুলি বিকুলি।
পদ্মিনী শঙ্খিনী তুমি, নও কভু হস্তিনী
তব নামে চরাচরে ছুটে আসে আগমনী।