জাহিদ অনিক এর সকল পোস্ট

জাহিদ অনিক সম্পর্কে

ঝাঁপ দাও হে নক্ষত্র, জাহিদ অনিক ভাল নেই ।

বাহান্ন নম্বর পাতায় বুকমার্ক

আমার অনাহারী কবিতা থেকে তোমাকে দেয়ার মত অর্থবহ শব্দ;
নিখুঁত আর ঝকঝকে প্রেম ছিল না আমার হলদে মলাটের খাতায়
সময়ের বড্ড অভাবে পরিপাটি একটা প্রেমের আক্ষেপ আমার রয়েই গেল।
আমি বোধহয় সেসময়ে কিছুটা ভালবাসতেই চাইতাম তোমাকে
প্রেম তো আমাদের ছিল না সেসময় এসময় কোন সময়েই,
সময়টা যে আমাদের ছিল আরও পিছিয়ে; দুজনেই শুনতাম বাংলাদেশ বেতার ঢাকা (খ)

খা খা দুপুরে জ্বলন্ত সূর্যের সাথে চোখ মিলিয়ে খুব ভেবেছি তোমার কথা,
ভেবেছি কোন প্রেমই কি চিরকাল থাকে না ? নক্ষত্রেরাও তো একদিন মরে যায়!
অবহেলা আর উপেক্ষার কষাঘাতে নিপীড়িত হতে থাকে মহাবিশ্বের প্রতিটি প্রেম
ঠিক যতকাল সিলিং থেকে সিলিঙে গোত্তা খায় সম্পৃক্ত বাষ্প; সেই কালটাই চিরকাল।
ভাগ্যিস কোন প্রেম ছিল না আমাদের; ছিল কেবল ভালবাসতে চাইবার তীব্র আকাঙ্ক্ষা

হৃদয় পোড়া হীরকে কেটে যায় যে চোখ
ও চোখে চোখ রেখো না; বড্ড ভয় লাগে স্ব-অস্তিত্বের জানান দিতে;
অস্তিত্বের জানান দিতে হয় প্রেমিকার বুকে;
উথাল-পাথাল ঢেউ তুলে দিয়ে নিজেকে করে ফেলতে হয় গুম!
প্রেমিকার চোখের হাহাকার বলে দেয়, সেটাই নাকি সর্বকালের সার্থক প্রেম !
সার্থক প্রেমের অসাধারণ মুলতবী ঘোষণা করে আমি হয়ে রইলাম কালোত্তীর্ণ প্রেমিক!
তোমাতে অধিকার অর্জন করার মত সুপুরুষ তো ছিলাম না কোন কালেই ।

লবঙ্গ এলাচের ঝাঁজ তীব্র থেকে আরও তীব্রতর হয়
এক সময় তা বর্ণহীন সায়ানাইডের অম্লীয় স্বাদকেও হার মানায়
জীবন বলতে আমাদের আর থাকে না কিছুই অবশিষ্ট
পরিশিষ্ট জীবন বৃত্তান্তে রয়ে যায় একটি ভাঁজকরা পৃষ্ঠা;
বাহান্ন নাম্বার পাতায় একটি নীল ফিতার বুকমার্ক ।

তুমি নেই তাই [আবৃত্তি সংযুক্ত]

তুমি নেই তাই যাতনা ছুঁয়েছে বুক
কলিজার ঠিক নিচে একটি বুনো ভাল্লুক দাপিয়ে বেড়ায়
নিশাচর কিনা জানি না; রোজ রাতে লণ্ডভণ্ড করে দেয় এক বিস্তীর্ণ জঙ্গল
তুমি নেই তাই ভাল্লুকের নখের আঁচড়ে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে হৃদয়
এই শেষ রাতে তুমি নেই তাই হু হু করে মরুর বুকে বইছে বাতাস
দূর থেকে আশাহত এক চাঁদ বালুর বুকে ছড়াচ্ছে মলিন আলো;
মায়াবী ইশারায় যেন ডাকছে, সামনেই প্রকাণ্ড প্রগাঢ় চোরাবালি।

তুমি নেই তাই অসুখ ছুঁয়েছে শরীর
সাইবেরিয়া থেকে শীতের আগেই অসুখ যেন এসেছে উড়ে
অতীতের এক অতিথি পাখি আটকে রয়েছে; ডানা তার পড়েছে কাটা
এই শেষ রাতে তুমি নেই তাই,
অসাড় রক্তনালী জানান দিচ্ছে তোমার নির্মম নির্লিপ্ত অস্তিত্ব।

তুমি নেই, তুমি নেই, তুমি নেই
তুমি নেই, চিরন্তন এই সত্যটুকু বুঝে নিতে, মানিয়ে নিতে
হাহাকার বুকে চেপে রেখে বের করে দিতে হবে বিশুদ্ধ বাতাস;
নিষ্প্রাণ গুমোট বাতাসে ভরে ফেলতে হবে ফুসফুস
তুমি নেই তাই এই শেষ রাতে যাতনা ছুঁয়েছে বুক।

আবৃত্তি

youtu.be/8Sox9qu0qaM

অনুগ্রহ করে ভাল অডিও পেতে হেডফোন ব্যবহার করুণ।
বাজে সাউন্ড কোয়ালিটির জন্য দুঃখিত

শবনম – পুস্তক পর্যালোচনা

সৈয়দ মুজতবা আলী, নাম শুনলেই যাদের চোখের সামনে ভেসে আসে রসগোল্লা গল্পের ঝান্ডু দা’র কথা, শার্টের কলার ধরে একটি রসগোল্লা নাকের কাছে নিয়ে বলছে, ও পারণ খাবি নে? তোর গুষ্ঠি খাবে।
তাদের ভাবনা-চিন্তায় একটু না অনেকখানি আমল পরিবর্তন এনে দিবে শবনম।

আমাদের উপমহাদেশীয় সাহিত্যে একটা মাপ কাঠি আছে, কিসের ভিত্তিতে সে মাপকাঠি ধরা হয় জানি না। তবে সাহিত্যিকদের কেউই বোধহয় সেই তুলাদণ্ড থেকে বাদ যায় নি।
কোন লেখক যদি একবার রম্য গল্প লিখে বিখ্যাত হয়ে গিয়ে একটা প্রেমের গল্প লিখে থাকেন পাঠক তখন বলেন, “ওরে বাবা তিনিও রম্যের পাশাপাশি প্রেমটাও বেশ ভাল লিখতে পারেন”। কিছুতেই তাকে সেই সম্মানটা দেয়া হয় না যেটা দেয়া হয় অন্য কোন প্রেমের গল্প লেখা লেখককে।

যার কথা বলছিলাম বা বলতে চাচ্ছিলাম তিনি আর কেউ না, তিনি সৈয়দ মুজতবা আলী। যাকে আমরা সবাই একনামে চিনি রম্য লেখক হিসেবে। তিনিই যে একখানা আস্ত প্রেম-বিরহের উপন্যাস লিখে ফেলবেন এবং সে লেখা যে এতটা ভাল হবে তা কেউ আশা করেছিল কিনা জানি না, আমি অন্তত কিছুটা অবাক হয়েছি।

শবনম উপন্যাস সম্পর্কে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেছেন “বাঙ্গালী তরুন-তরুনীদের প্রেমে পড়ার পূর্বে অবশ্যই সৈয়দ মুজতবা আলীর শবনম উপন্যাসটি পড়ে নেয়া উচিত। এমন শিক্ষণীয় প্রেমের উপন্যাস বিশ্ব সাহিত্যে আর একটিও নেই।”
কথাটির সত্য মিথ্যা বিচার পাওয়া যাবে গোটা উপন্যাসটি পড়ার পরেই।

এই উপন্যাসের ভূমিকা লিখেছেন মুহম্মদ এনামুল হক এবং উৎসর্গ করা হয়েছে রাজশেখর বসুকে।

শবনমঃ প্লট ও পর্যালোচনা

আফগানিস্তান। সময়টা বাদশা আমানুল্লাহর শাসনামল। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে পাগমান শহরে আয়োজন করা হয়েছে নৈশ বল-ডান্সের। সেই বেলেল্লাপনা বল ডান্স দেখতে যাওয়া এক তরুণীর সাথেই প্রেম হয়ে যায় পরদেশী এক তরুণের। তরুণ সে দেশে একেবারেই নতুন। গিয়েছেন হিন্দুস্তান থেকে অধ্যাপনা করতে।
তরুণ অধ্যাপক যার প্রেমে পড়লেন তিনি যে সে দেশেরই রাজকুমারী সেকথা মনের ভুলেও ভাবেন নি ভিনদেশী যুবক। ভাবলেও সে ভাবনাকে পাত্তা দেয়ার কোন প্রশ্নই আসে না। প্রেম কি এতসব ভেবে হয়? হয়েছে কখনও?

যে দুইটা চরিত্রের কথা বলছিলাম তাদের মধ্যে স্ত্রী চরিত্রটির নাম শবনম, বয়স আঠারো-উনিশ। কিন্তু উপন্যাসে তার সংলাপ পড়ে মাঝেমধ্যে মনে হয়ে তার বয়স হয়ত ৩৫, কখনও মনে হয়েছে তার বয়স ১৬ কিংবা ১৭।
পুরুষ চরিত্রটির নাম মজনূন। বাংলা আর ইংরেজি ভাল জানেন কিন্তু ফার্সী ও ফ্রেঞ্চ খুব একটা পারেন না ভালো।

একে অন্যের নাম পরিচয় জানার এক মুহূর্তে মজনূনের ফার্সী ও ফ্রেঞ্চ সম্পর্কে শবনম রহস্য করে বলেছে,

আপনার ফ্রেঞ্চ অদ্ভুত, আপনার ফার্সীও অদ্ভুত। অদ্ভুত মানে খারাপ? ফার্সী উচ্চারণে কেমন যেন পুরনো আতরের গন্ধ, ঠাকুরমা সিন্দুক খুললে যেরকম বহু দিনের জমানো মিষ্টি গন্ধ বের হয় সেরকম। অন্য হিন্দুস্তানীরা যেরকম ভোঁতা ভোঁতা ফার্সী বলে সেরকম নয়” ।

সৈয়দ মুজতবা আলী শবনমের বর্ণনা লিখেছে এভাবে,

প্রথমে দেখেছিলুম কপালটি। যেন তৃতীয়ার ক্ষীণচন্দ্র। শুধু, চাঁদ হয় চাপা বর্ণের, এর কপালটি একদম পাগমান পাহাড়ের বরফের মতই ধবধবে সাদা। সেটি আপনি দেখেন নি? অতএব বলব নির্জলা দুধের মত। সেও তো আপনি দেখেন নি। তা হলে বলি বন-মল্লিকার পাপড়ির মত।
নাকটি যেন ছোট বাঁশী। ওইটুকুন বাঁশীতে কি করে দুটো ফুটো হয় জানি না। নাকের ডগা আবার অল্প অল্প কাঁপছে। গাল দুটি কাবুলেরই পাকা আপেলের মত।

আফগানিস্তানে লেবু তেমন হয় না। প্রণয়ের প্রথম দিকে মজনূন শবনমকে উপহার দিয়েছিল পাঞ্জাবীর পকেট হাতড়ে পাওয়া একটি ভারতীয় লেবু।

লেবুটি পেয়ে শবনম বলেছিল,

এটা কি ? ওঃ ! নেবু? লীমূন । লীমূন-ই-হিন্দুস্তান যার ভেতরেরটা টক!

সে প্রসঙ্গ উল্লেখ করে লেখক লিখেছেন,

ওরে মূর্খ! দিলি একটা নেবু!
তাও শুনতে হল ভিতরটা টক!
না, সে মীন করে নি।
আলবাৎ করেছে।
না।

শবনম। শবনম মানে তো শিশিরবিন্দু, হিমকণা। সে তো শিউলি। শরৎ-নিশির স্বপ্ন-প্রভাতের বিচ্ছেদ বেদনা। সে যখন ভোরবেলা সর্ব বন্ধন থেকে মুক্ত হয়, সে কি স্বেচ্ছায়?

উপন্যাসের সবথেকে আকর্ষণীয় অংশ মনে হয়েছে নানা ফরাসি ও ফ্রেঞ্চ কবিতার অনুবাদ। শবনম ও মজনূন অনেক কথা বলেছেন কবিতায় কবিতায়। এই উপন্যাসে যথেষ্ট কাব্যিক ও ভাষা-তাত্ত্বিক মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন সৈয়দ মুজতবা আলী।
অসংখ্য ঘটনা, ভীতি, শিহরণ ও কাব্যিক ব্যঞ্জনার মধ্য দিয়ে আগাতে থাকে উপন্যাস শবনম।
এক পর্যায়ে মজনূনের কুড়ে ঘরে নিয়মিত আসা যাওয়া চলতে থাকে শবনম বানুর। কখনও দিনের আলোয় বোরখায় নিজেকে ঢেকে, কখনও রাতের আঁধারে।

বোরখা সম্পর্কে শবনমের স্পষ্ট কথা, লোকে বলে বোরখা নারীদের বন্দি করে রেখেছে, আমি তো দেখি বোরখা নারীর সুবিধের জন্যই, ইচ্ছে করলেই নিজেকে লুকিয়ে ফেলা যায় বোরখার আড়ালে।

প্রেম যেখানে থাকে সেখানে ভয়ও থাকে, ভয় লজ্জা দ্বিধা না থাকলে প্রেম ঠিক প্রেম বলে মনে হয় না। অবাধ প্রেম কোন নর-নারীকেই আকর্ষণ করে না। প্রেমের এই ভয়, না পাওয়ার ভীতি এসব নিয়ে মজনূন যেন সর্বদা চিন্তিত থাকত। কোথাকার কোন হিন্দুস্তানের যুবক সে, তার কাছে কেন আফগান কুমারী বিয়ে দেবেন রাজা!
এসব প্রশ্নের কেবল একটাই জবাব দিত শবনম, “আমার কাছে ওষুধ আছে”

কি দাওয়াই ছিল শবনমের কাছে যা চিন্তামুক্ত করে দিবে পরদেশী মজনূকে? সত্যিই কি কোন দাওয়াই ছিল নাকি সব প্রেমিকাই যেমন বলে তারকাছে জাদু আছে শবনমও সেরমকই বলেছিল, এসব প্রশ্নের পাওয়া যাবে উপন্যাস শুরু করার অল্প সময়ের মধ্যেই।

লুকোচুরির এই প্রেমের এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত হয় তারা বিয়ে করবে। বিয়ে হয়। একবার না, দুইবার বিয়ে হয় শবনম ও মজনূনের। দুইবার কেন বিয়ে হল সে ব্যাখ্যা জানার জন্য গোটা উপন্যাস পড়তে হবে না, অর্ধেক পড়লেই জানা যাবে।

আফগান মেয়েদের বিয়ের পরে মাথার জুলফ কেটে দিতে হয়, যাতে করে বোঝা যায় তিনি বিবাহিতা। বাঙলা জুলপি কথাটা জুলফ থেকে এসেছে। ইরান তুরানের কুমারীদের অনেকেই দু গুচ্ছ অলক(চুল) রগ থেকে কানের ডগা অবধি ঝুলিয়ে রাখে। এটাই জুলফ।
বিয়ের পরে শবনমের জুলফ কাটা নিয়েও বেশ কিছু চিত্তাকর্ষক সংলাপ রয়েছে উপন্যাসের মাঝামাঝি পর্যায়ে।
বিয়ে হল। বাসর রাতে জামাইকে ঘরে ঢুকতে দেখেই কোনায় কোনায় লুকিয়ে থাকা কনের বান্ধবীরা গেয়ে উঠল,


রুটি খায় নি, দাল খায় নি, খায়নি কভু দই,
হাড়-হাভাতে ওই এল রে- খাবে তোরে সই!
মরি, হায় রে হায় !

শবনম উপন্যাসে প্রেম পর্ব দেখা হল, বিয়ে পর্ব দেখা হল।
পড়তে পড়তে মনে হতেই পারে এই উপন্যাসের তাহলে শেষ অবধি হয়ত শুভ সমাপ্তি। যখন থেকে ভাবতে শুরু করবেন এই উপন্যাসের রয়েছে দারুণ এক হ্যাপি এন্ডিং ঠিক তখন থেকে কয়েক পাতা এগুলোই একটা চিরকুট পাওয়া যাবে।

শবনম লিখেছে,
“বাড়িতে থেকো। আমি ফিরব”।

কোথায় গেল শবনম? কেনই বা গেল ? ঠিক কতদিনের জন্য গেল?
এসব অনেক জটিল প্রশ্ন। সব প্রশ্নের উত্তর রিভিউতে দিয়ে দেয়া যায় না। এত বড় একটা উপন্যাসের মূল এই অংশটুকু লেখক লিখেছেন অনেক শব্দের বিন্যাসে। যারা ভাল পাঠক তাদেরকে কিছুতেই বই ছেড়ে উঠতে দেবে না, শব্দের মারপ্যাঁচে পড়ে যেতেই হবে।

শবনম ঘরে নেই। বিরহে দিন কাটাচ্ছে মজনূন। কয়েক ঘণ্টা হয়ে গেল শবনম ফেরে নি, দিন হয়ে গেল তাও ফেরে নি শবনম। মাস হয়ে গেলে? শবনম কি ঘরে ফিরবে? কেনই বা এই অন্তর্ধান?
এতটা ভালবেসে শেষে কেন চলে যেতে হল? এ বিরহের মানে কি ?

ভিনদেশী যুবক মজনূন কি করবে? কোথায় কোথায় খুঁজবে সে তার স্ত্রী শবনমকে। সেকি তাহলে তার নামের মতই হিমিকা হয়ে সকালের রোদ ওঠার সাথে সাথে শুকিয়ে গেছে?
কিন্তু সে যে চিরকুটে লিখেছে, “বাড়িতে থেকো। আমি ফিরব”।

একা একা দিন যাপনে মজনূনের কেবল একটা কথাই মনে পড়ত বারবার। শবনমই তাকে বলেছিল,
– আমার বিরহে তুমি অভ্যস্ত হয়ে যেয়ো না।

শবনম বলেছে সে ফিরবে। উপন্যাস যখন প্রায় শেষদিকে, আর মাত্র সাত/ আটটি পাতা বাকী।
বইটি হাতে নিয়ে আমি ঝিম দিয়ে বসেছিলাম। আর পড়তে চাইছিলাম না। অনেকটা নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধেই পড়তে হল। একটা করে লাইন পড়ছিলাম আর ভাবছিলাম পরের লাইনেই হয়ত লেখা দেখতে পাব শবনম কথা রেখেছে, সে ফিরেছে।

উপন্যাসের পাতা এক সময় শেষ হয়ে যায়, শবনম কি কথা রাখে ? সে কি ফিরে আসে?
সে যে বলেছিল, “বাড়িতে থেকো। আমি ফিরব”।

চমৎকার এই উপন্যাসটি পড়া শেষ হয়ে গেলেও এর রেশ রয়ে যাবে অনেকদিন। যখন পড়ছিলাম আমি যেন ভাবছিলাম আমার আশেপাশেই কোথাও আছে শবনম।
পুরো উপন্যাসটি একপ্রকার জাল বিস্তার করে ঘিরে রাখবে পাঠককে যা খুব কম লেখকই করতে পেরেছেন।

___________
জাহিদ অনিক
১০/০৮/২০১৭

প্রয়োজনীয় যাতনা

এই যে তুমি কদিন ধরেই কষ্টে আছ খুব,
নিজের চোখেই দেখছ তুমি আমার ভীষণ সুখ।
বাঁচতে হলে রইতে হলে বলতে গেলে কথা,
কতটা আর কষ্ট চাই ? কতটা ঠিক যাতনা ?

এই যে খুব জ্বলছে আলো, লালের পরে নীল
নিভছে কেমন জ্বলছে যেমন আলোর পরে কালো
তাই তো তোমার কষ্টের পরে আরও কষ্ট এলো।

এই যে আমি চলেই গেলাম, আর এলাম না ফিরে
খুব গোপনে কষ্টে কষ্টে যাচ্ছ বুঝি হেরে ?
কষ্ট কষ্ট এই খেলাতে হেরেই যদিও যাও,
সর্বনাশের বিনাশ হলে দুঃখ যদি পাও
ভ্রষ্ট মায়ায় স্মৃতি হাতড়ে আরও কষ্ট চাও !

গাঙচিল কটেজ

গল্পের মত সাগর মোহনায় বেলাভূমি
ভারী বাতাসে ভেসে বেড়ায় নিঃসঙ্গ গাঙচিল,
এখানে আমি একলাই থাকি, দুটো ভাত নিজেই ফুটাই।
একাই বেশ দিব্যি আছি, সন্ধ্যা হলে হলদে চাঁদের আলোয় নীড়ে ফিরি,
এখানে এত একলা আমি, তবু এত হৈচৈ কিসের !
বেঁচে থাকা মানেই কি ব্যস্ত থাকা ? একটা অভ্যাস গড়ে তোলা!
এখানে বড্ড ব্যস্ত , বড্ড একলা আমি!
এই মরার কটেজ একলা একলা আর ভাল লাগছে না; ভাল লাগার মত কিচ্ছুটি নেই এখানে
কি করব আমি ? তোমাকে কি একটা ট্রাঙ্ক কল করে দিব ?
বিকেলের ট্রেন ধরে ঠিক পৌঁছে যাবে তো এই এখানে; গাঙচিল কটেজ।

অফুরন্ত এত অবসর কিভাবে কাটবে আমার একটা গাঙচিল ছাড়া,
একা একা পুরো সমুদ্রটাকে দেখা ফেলা একদম বৈধ নয়,
সমুদ্রের চিলদের নাম কিভাবে গাঙচিল হয় ভেবে দেখেছ ?
কিংবা ঢেউগুলো এত বেগে তীরে এসে কোথায় হারিয়ে যায়!
দিশেহারা নাবিকের মত আমিও তাকিয়ে থাকি ঊর্ধ্বপানে,
গাঙচিলের পাখনায় হাওয়া কাটে মৃদু বেগে, নিশানা নির্ভুল
ভুল পথে যাবার নয়; তবু কেন সব ভুল হয়ে যাচ্ছে!
এমন তো হবার কথা ছিল না, এভাবে তো হারাবার নয়
মরার আগেই এমন অদ্ভুতভাবে মরে যাচ্ছি; এমন তো কথা ছিল না।

নৈঃশব্দের এ সন্ধ্যায় শব্দগুলো ফুরিয়ে গেলেও প্রয়োজন এখনো কিছুটা বাকী ,
দিনগুলো এখানে আমার কাটে ঘরে বাইরে ঘরে, গাঙচিল গুণে গুণে ।
কাছে-দূরে নেই তো কেউ বাইরের লোক, যাকে খুব মন খুলে দুটো কথা বল যায়,
ঘরের লোক হলে লুকোচুরি করতে হয়, নিতে হয় কিছুটা বুঝে নেয়ার দায়িত্ব
ভালবাসাটা কিভাবে যেন পেয়ে বসে,
এখানে আমাকে যেমন পেয়ে বসেছে গাঙচিল কটেজ।

নিঃসঙ্গতা নেই

হাতের পিঠে হাত,
মুখভর্তি সাদা আলো, দাঁতের মুখে দাঁত
দুটি হাতের অনেক দূর, হাটের পরে হাট ।

বুকের উপর মরুর পশু তীব্র বেগে ধায়
জঙ্গল ভর্তি মিঠা পানি নোনতা কেবা চায় !
নুনের সাথে পান্তা আছে,
প্রেম আছে, সঙ্গী আছে।
তবে কি আমার সবই আছে ?
এ তল্লাটে আমিই কি তবে এমন,
যার কেবল নেই-টাই নেই?

না না, নেই আছে,
নেই নেই, নিঃসঙ্গতা নেই।

একটি অরাজনৈতিক প্রেম

পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ আলোড়ন তৈরী করে ফেলল,
আর আমি তোমার বুকে একটা ঢেউও তুলতে পারলাম না।
আমাকে ভর সন্ধ্যায় কে যেন ডাকে অনিক নামে,
কই তোমার দেয়া সেই পরিবর্তিত নামে তো কেউ ডাকে না,
পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ হল,
পাকমোটর থেকে বাংলামোটর হল,
কই আমার নামটাই কেবল পালটালো না!
বিরোধী দলের মত বলে দিতে দ্বিধা নেই,
তোমার দেয়া অসাংবিধানিক প্রেম আমাকে বানিয়েছে একনায়ক,
একদম একনায়ক,
আমি একাই নায়ক, আর কোন কুশীলব নেই।

আচ্ছা ক’টা বাজে এখন ?
রাত ক’টা?
মাঝরাত ছাড়া আমার আবার প্রেম আসে না।
২৫শে মার্চ মাঝরাতেও আমার বুকে প্রেম জেগেছিল,
শব্দ শুনেছিলে তুমি ?
গুলি না, গুলি না, আতশ বাজী!

তোমার দেশে কি সরকার আছে? নাকি নেই ?
সেখানে কি চলে? প্রজাতন্ত্র?
সব প্রজাই তোমাকে চায়, ঠিক আমার মতই?
নাকি স্বৈরতন্ত্র চলে,
জিম্মি করেছ তোমার বিশ্বাসঘাতক প্রেমিককে ?
কিসের দায়ে ? প্রেম পাও নি বলে ?
তুমি যাকে প্রেম বল আমি তাকে সংবিধান বলি,
বারংবার সংশোধনী এসেছে আমার অপ্রেমের সংবিধানে।

প্রজাতান্ত্রিক প্রেম আর সয় না,
বিপ্লব করতে চাইলে বামে
বিপ্লব দেখতে চাইলে ডানে,
ভয় পেয়ে থাকলে প্রেমিকার বুকে যাও
কিছু বলতে চাইলে থেমে যাও, বলা যাবে না।
৫৭ ধারা বাতিল করার আগ পর্যন্ত আমি বলতে পারবো না,
আমি কিছুতেই বলতে পারব না আমি তোমাকে ভালবাসি।

নির্বাচিত প্রেম

কলেজ কামাই করা কিংবা প্রতিবেশীর বারান্দায় উঁকি দেয়া; ঠিক এরকম প্রেম নয়,
ডুবেডুবে জল খাওয়া কিংবা অসীম সাহসের প্রতিফলনে পরিস্ফুটিত অনুরাগ; সেরকমও নয়।
জ্যোৎস্না রাতে ডাহুক পাখি ডেকে উঠলে প্রেমিক মন যেমন উথলে ওঠে,
জ্যোৎস্না অথবা অমাবস্যা কোন রাতেই আমার মন সেরকম ঠিক শিহরিত হয় নি।
সন্ধ্যা বেলায় বৃষ্টি এলে, মেঘের পরে মেঘ এসে গর্জন হুংকার দিলে; কেমন নাকি করে মন !
বর্ষা নাকি মানব মনে প্রভাব ফেলে হাজার ভাবে, প্লাবিত হয় উভয় পাড়!
শীত গ্রীষ্ম বর্ষা বসন্ত কোন ঋতুতেই নিজেকে আমার ঠিক প্রেমিক বলে মনে হয় নি!

নির্জন দুপুরে উচ্ছল হাসি, সাঁঝের বেলায় খোঁপায় বেলি ফুল, হাতের চুড়ি, পায়ের আলতা
বিকেল বেলায় চিঠি দেয়া, রাতে টেলিফোনে ফিসফিস করে আলাপ করা;
এসবও তো কোনদিন টানে নি আমাকে !
আমাকে দেখে কোনদিন তুমি লজ্জাবতী নারী হয়ে মাথায় টেনে দিয়েছ কাপড়;
কিংবা ক্যাবলার মত তাকিয়ে থেকেছি, তাই দেখে তুমি খুব হেসে কুটিকুটি হয়েছে; সেটাও তো নয়!

অন্তত:পক্ষে পৃথিবীর কেউ কি জানত আমাদের প্রেমের কথা?
তুমি আর আমিই বা কি করে জানলাম বলো তো আমাদের যে প্রেম চলে! গোপনে গোপনে অন্তরে অন্তরে!
তবু যেন কিভাবে প্রেম হল আমাদের, হয়ে গেল, ঘটে গেল; রটে গেল না!

সব মেয়েই যেমনটা বলে, অন্যদের মত না, আমি একটু আলাদা, অন্যরকম।
প্রেমিক হিসেবে আমিও সেভাবে অহংকার করেই বলি, বেশ অধিকার থাকে সে কথায়;
প্রেমটা অন্যসব প্রেমের মত অকপট নয়, অযাচিত নয়; নিগূঢ় নির্বাচিত প্রেম।

আমার মৃত্যু তোমার হাতে

মনিটরে একটা কালো ওয়ালপেপার সাঁটিয়ে দিয়ে
নিজের মুখচ্ছবিটা দেখি নানাভাবে,
নিষ্পাপ চোখদুটো দেখে বড্ড অসহায় লাগে; মায়া লাগে নিজের প্রতি
অনেকটা সময় নিয়ে কেবল নিজেকেই দেখি।
নিজের হাসিটা মন দিয়ে খুব শোনাবার চেষ্টা করি
কি ছিল এই হাসিতে যা খুন করেছিল তোমাকে?
নাহ ধ্যাত ! কিছুই পাই না খুঁজে, ভয়াবহ মিথ্যেবাদী তুমি
আবার হাসি, এবার আকাশ পাতাল কাঁপিয়ে অট্টহাসি দেই; বড্ড বিচ্ছিরি লাগে
আজকের মত এমন বাজে কর্কশ হাসি জীবনেও আমি হাসি নি।

একজোড়া বাদামী উলের মোজা পড়ে পায়চারী করি সারা ঘর
তারা ভরা রাতে নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে থাকি,
পূবের ঘরে যেতেই শরীরে বিদ্যুৎ কমে আসে
থরথর করে কাঁপতে থাকে আপন শরীরটা!
রাত দিন ফুরবে খুব দ্রুতই বুঝতে পারি,
যতগুলো কবিতা ছিল মুখস্থ মনে মনে জপতে থাকি।

নিজেকে ভাঁড় সাজিয়ে বেঢপ একটা ক্লাউনের পোশাক পড়ে উপস্থিত হই
মাথায় একটা কালো মুখোস পড়িয়ে দেই; ব্যাস ! এবার আমিই যমদূত !
আয়নায় আর দেখতে পাই না নিজেকে।
এটাই মোক্ষম সময়, বিদ্যুৎ চলে গেছে, দুর্দান্ত টাইমিং !
ঘড়িটা বন্ধ করে দিব এখুনি, সময় নেই ওটাতে আর।

আকস্মিক কালো মুখোশের মধ্যে দাঁতে দাঁতে ঝাঁকুনি ওঠে,
খুব ইলিশ ডিমের চচ্চড়ির কথা মনে পড়ে
মনে হল দাঁতের নিচেই ডিমের ঝুরি ভাঙছে !
মনে পড়ে কলমি শাকে চিংড়ি ভাজির কথা,
মুগের ডালের সাথে কাতলা মাছের মোড়া,
আহ! ভীষণ খেতে ইচ্ছে করছে।
মরে গেলে আমার আর এসব খাওয়া হবে না,
ভাবতেই পারি না মরে গেলে আমার আর রাঙ্গামাটি যাওয়াটাই হবে না!

এরকম অজস্র বাহানা বানিয়ে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখি আরও কয়েক কোটি বছর,
আবার কোন এক অমাবস্যা রাতে তুমি আমার হাত দুটি খুঁজবে, সেই আশায় আবারো বেঁচে থাকি।
আমি নিশ্চিত, মরার পরে ঠিকই তুমি আমায় পেতে চাইবে
প্রেমের এই অসহ্য কপটতা আর ন্যাকামিটা কিছুতেই আমি সহ্য করতে পারব না।

আমাকে ছাড়া তুমি ভাল থাকবে এটা ভাবতেই পারি না, ভাবলেই পাপে ঘামতে থাকে শরীর ।
কথা না হোক, দেখা না হোক! নাই বা হোক চিঠি চালাচালি !
আমি জানি, বেঁচে আছি এটা শুনতে পেয়েই প্রচণ্ড সুখে থাকবে তুমি
আমি মরে গেছি এই শোক সংবাদ তোমার কাছে পৌঁছাক; চাই না আমি।
নিজেকে নিঃশেষ করার মত এমন বীভৎস কাজ কিছুতেই করতে পারব না,
তোমাকে ভাল বেসে বেসে বড্ড ভীতু আর কাপুরুষ বনে গেছি
নিজেকে যে ভালবেসেছি তোমার থেকেও বড্ড বেশি।

আমাকে বরং তুমি ভালবাস

প্রথমত,
আমি চাই আমাকে তুমি পড়ো,
ঠিক যেভাবে রাত জেগে তুমি পড়েছ বার্নার্ড শ’ অথবা শেকসপিয়র।

বিনাশী চোখদুটি নিয়ে একবার তুমি তাকাও আমার দিকে,
ঠিক যেভাবে একজন দৃষ্টিহীন করুণ আকুলতা নিয়ে তাকিয়ে থাকে স্বচ্ছ আয়নার দিকে;

তোমার কথার চাবুক তুমি চালাও আমার বুকে ,
ঠিক যেভাবে তপ্ত বালুতে একটা ক্লান্ত সাদা ঘোড়ার পিঠে চাবুক চালায় মরুর সাওয়ার ।

দ্বিতীয়ত,
আমাকে তুমি প্রশ্রয় দাও,
ঠিক যেভাবে অসহায় শরণার্থীদের আশ্রয় দেয় ভিন্ন একটি রাষ্ট্র।

আমাকে বরং তুমি ভালবাস,
ঠিক যেভাবে অতিদূর হতে প্রবাসীরা ভালবাসে স্বদেশকে।

সর্বশেষে,
না হয় আবার তুমি ভুলে যেও আমাকে,
ঠিক যেভাবে একটি রাষ্ট্র ভুলে যায় তার যোগ্য নেতার কথা ।

মায়াং, তোমার হাঁটুর ক্ষত কতটা শুকিয়েছে ?

মায়াং,
তোমাদের তীব্র দুঃখের কথা পড়ছি পত্র-পত্রিকায়
দেখেছি কারও পা নেই, কারও হাত নেই,
হাত-পা বিহীন প্রাণগুলো দেখতে বড্ড মুমূর্ষু দেখায়, বড্ড বীভৎস দেখায় !
কারও কারও আবার গোটা দেহটা আছে কেবল প্রাণটাই নেই।
আমি আজকাল প্রাণহীন পত্র-পত্রিকা কেনা বন্ধ করে দিয়েছি,
টেলিভিশনের এন্টেনাটা আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলেছি।
পত্রিকার ছেলেটা আমাকে রোজ মনে মনে গালি দেয় দশবার
একটা পত্রিকা বেশি বিক্রি হলে ওদের দু’পয়সা কামাই হয়ত হয়
কিন্তু আর যে দেখতে পারি না তোমাদের বর্ণনাতীত দুর্দশা !

রাত দুটায় দুটা টি-ব্যাগ দিয়ে আমি যখন কড়া একটা চা বানাই
বুলেটিন শুনতে পাই; তীব্র গোলাগুলিতে ছয় রোহিঙ্গা নিহত।
আমার তখন খুব জানতে ইচ্ছে হয় মায়াং,
তুমি শেষ কবে একটু চা খেতে পেয়েছ ?
আর কতদিন তোমরা খবরের বুলেটিনে রোহিঙ্গা হয়েই থাকবে ?
তোমরাও যে মানুষ, এতদিনে সেটা সংবাদকর্মীদের মনে থাকার কথাও না।

কম্যুনিজমের এই যুগেও তুমি জানো নিশ্চয়ই মায়াং,
বাঁচতে হলে, খেতে হলে, প্রেম করতে গেলে কিয়াট প্রয়োজন
বিনে পয়সায় কিছুটা মাখোমাখো প্রেম হয়, কিন্তু জমে ঠিক ওঠে না।
তোমার বার্মিজ প্রেমিক এসেছিল গত দু’এক মাসে ?
তোমার শরীরে হাত ছুঁইয়েছিল ?
শারীরিক উত্তেজনায় না হোক,
তীক্ষ্ণ বেয়োনেটের ক্ষত শুকাতে হলেও যে মাথার উপরে একটা হাতের স্পর্শ লাগে,
সেই হাতটা কি তুমি পেয়েছ মায়াং ?

তোমাদের জাতীয় সংগীতে তোমরা বলেছে কাবা মা কিয়্যেই-পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত বার্মা
পৃথিবীর প্রান্ত তো দূরের কথা,
দ্যাখো রাজধানী নেপিদ পর্যন্তই পৌঁছাতে পারছ না,
পৌঁছাতে পারছ না বলবে বড্ড ভুল হয়ে যায়, পৌঁছাতে দেয়া হচ্ছে না তোমাদের।
রবি ঠাকুরের সোনার বাংলা আর সায়া তিনের কাবা মা কিয়্যেই;
দুইটার মধ্যে কোন পার্থক্য আমি দেখি না, পার্থক্য খুঁজি না।
আকাশ জল স্থল সব সীমানা অতিক্রম করে তুমি চলে এসো মায়াং,
সীমান্তের মাইনগুলোতে ভয় পেয়ে বেঁচে থাকা মানে নিজেকে অবিশ্বাস করা,
প্রত্যয়ী হও মায়াং, দৃঢ় হও; বেঁচে থাকা এখনো অনেক বাকী তোমাদের।

মানুষকে কাঁটাতারে যারা বাঁধে, তারা কি করে শান্তিতে ঘুমায় আমি জানি না।
এদেশে যখন বন্যা হল, বোরো ধানের পাকা বীজ ডুবে গেল
তোমার দেশেও তখন রাখাইন উচ্ছেদ তুঙ্গে !
সেই মুমূর্ষু সময়ে বার্মা থেকে নিয়ে আসা আড়াই লাখ টন চালের ভাত যারা খেয়েছে,
তারাই এখন দেখছে তোমাদের পায়ে দগদগে ক্ষত!
মানবতা বলতে একটা শব্দ এখন কেবল অভিধানেই আছে
বার্মিজ জান্তা তোমরা হজম করেছ, এটা তো তোমাদের কাছে দুধ-ভাত!
নিজেদের নিজেরাই এগিয়ে নিয়ে যাও মায়াং,
নিজেদের দল নিয়ে নিজেরা হেঁটে যাও বিশ্বের শেষ প্রান্তে,
আচ্ছা মায়াং? হাঁটতে পারবে তো? তোমার হাঁটুর ক্ষত কতটা শুকিয়েছে ?