জাহিদ অনিক এর সকল পোস্ট

জাহিদ অনিক সম্পর্কে

ঝাঁপ দাও হে নক্ষত্র, জাহিদ অনিক ভাল নেই ।

জলমগ্ন দ্বীপ

উদাসীন যুবক,
চলো একবার হারিয়ে যাই জলের মোহনায়
দাঁড়িয়ে থাকি আলতো জলের উপরে-
প্রাণভরে দেখে নেই একটি নির্জন দ্বীপ।
রাত্রির আঁধারে –
জলের বুকে লাফিয়ে চলা ঈষৎ উচ্ছল রূপালী আলো;
এখানে যেন একদম স্থির শান্ত – নারীর স্পন্দনের মত।
নীরবতার সে এক অন্য মাত্রা,
কানের শিরা-উপশিরায় বয়ে চলে শান্ত শীতল জলজ প্রবাহ;
সামুদ্রিক ঢেউ যেন কানের একপ্রান্ত দিয়ে প্রবেশ করে-
একান্ত নীরবে চুপিসারে আছড়ে পরে কানের গহীন ভেতরে।

তার পূর্বে গোধূলির প্রাক্বালে-
দিগন্ত পার হয়ে যাওয়া মাঠ জিরিয়ে নেয় এই এখানে –
এই নির্জন দ্বীপে এসে।
অবাধ্য পর্বত-সম ঢেউ ভিজিয়ে দিয়ে যায় চুনোপাথরের দেয়াল,
জলস্রোতের তোড়ে নুড়ি পাথরেরা এগিয়ে চলে দক্ষিণা গাংচিলের পথ ধরে;
চোখের পাতা বন্ধ করো,
পলকের মধ্যে দেখতে পাবে বড্ড অদ্ভুত – সে এক অনন্য মুহূর্ত !

অতিদূর সাগরে জাহাজের মাস্তুল দেখে মনে হয়
যেন প্লাবিত বীজতলায় উঁকি দিচ্ছে সবুজ বীজপত্র;
যতদূর চোখ যায়–
দেখা যায় একটি অসম্পূর্ণ – অর্ধপূর্ণ দৃশ্য;
উদাসীন যুবক এসো পরিপূর্ণ করো-
এসো মুখ লুকাও আমার জলমগ্ন ভূখণ্ডে-
ঠিক যেভাবে চিড় ধরা মাঠে ঘুরে বেড়ায় গ্রীষ্মের জল-
মেঘেরা লুকায় মুখ সাগরের পোতাশ্রয়ে।

————————————
কবিতাটি W. H. Auden এর On this Island থেকে কিছুটা অনুপ্রাণিত হয়ে লিখেছি।
——————————————

On this island
W. H. Auden

———————-

Look, stranger, at this island now
The leaping light for your delight discovers,
Stand stable here
And silent be,
That through the channels of the ear
May wander like a river
The swaying sound of the sea.

Here at the small field’s ending pause
Where the chalk wall falls to the foam, and its tall ledges
Oppose the pluck
And the knock of the tide,
And the shingle scrambles after the suck-
Ing surf, and the gull lodges
A moment on its sheer side.

Far off like floating seeds the ships
Diverge on urgent voluntary errands;
And the full view
Indeed may enter
And move in memory as now these clouds do,
That pass the harbor mirror
And all the summer through the water saunter.

————————–

সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১৮

কবি- লেখক- ব্লগারদের সাক্ষাৎকার

আমরা যারা ব্লগে কিংবা নানা প্রকার অনলাইন ফোরামে লেখলেখি করি তাদের জন্যই এই সাক্ষাৎকার পর্বের আয়োজন।
মূলত ধরা হয়ে থাকে যে বর্তমান সময়ের লেখকদের চিন্তা-চেতনা বেশ এই সময়কে কেন্দ্র করেই এবং কখনো কখনো তা সময়ের বাইরে গিয়েও পাঠকদের ভাবাতে সাহায্য করে।

একজন লেখক বা কবির সাথে পাঠকদের সরাসরি মিথোষ্ক্রিয়ার তেমন কোন সুযোগ থাকে না। পাঠক তার প্রিয় লেখকের লেখা হয়ত পড়তে পায় কিন্তু তার চিন্তা জগতের বৃহৎ একটা অংশ প্রায় বলতে গেলে অপ্রকাশিতই থেকে যায় সাধারণ পাঠকের কাছে।
পাঠক যেন কিছুটা হলেও লেখকের সেইসব চিন্তা সম্পর্কে জানতে পারেন এবং লেখক যেন কিছুটা হলেও পাঠকের নৈকট্যে যেতে পারেন সেই প্রায়াস রেখেই এই অনলাইন সাক্ষাৎকার পর্ব।

প্রশ্ন-উত্তর পর্বে সাধারণ পাঠকদের বা সমালোচকদের পক্ষ থেকে প্রশ্নগুলো সাজিয়ে দিচ্ছি আমি জাহিদ অনিক।
(আমি নিজেও সাক্ষাৎকার পর্বে অংশ নিয়েছি।)

যাইহোক, আর কথা না বাড়াই, নিচে দেয়া গুগল ফর্মের লিংকে গিয়ে আপনি অংশ নিতে পারবেন সাক্ষাৎকারে। সেখানে কতগুলো প্রশ্ন লিখিত আকারে আছে আপনাকেও সেই প্রশ্নের উত্তর লিখিত আকারেই দিতে হবে।
এটা সত্যি যে সরাসরি সাক্ষাৎকার গ্রহণ ও প্রদানে যে আমেজ পাওয়া যায় তার সিকি ভাগও এই লিখিত প্রশ্নোত্তর দিয়ে পাওয়া যায় না। তবুও———- কিছু তো পাওয়া যায়।

আপনাদের আন্তরিক অংশগ্রহণ কামনা করছি। সবাইকে ধন্যবাদ।

সাক্ষাৎকার লিংক —
কবি- লেখক- ব্লগারদের সাক্ষাৎকার

দ্রষ্টব্যঃ এই লেখাটি আমি আমার ফেসবুক ওয়াল সহ আরও একটা ব্লগে প্রকাশ করেছিলাম। সেখান থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১৮ জন লেখক-কবি ও ব্লগার অংশ নিয়েছেন এই ভার্চুয়াল সাক্ষাৎকারে।

Classical Beats

When You wake up early before the first light
You’re faster than time –
You go for a walk to the north
Maybe to hills from the downtown.
Shining red sun makes your silky hair brown,
You walk with music-
which one? Perhaps Country music?

You walk, walk along the hillside.
And then your fleshy body sweat-
Surrender yourself into a white bathtub
Take a long warm bath,
By the time your gardener starts watering
You get refreshed- keep lively all day long- in all seasons.

Every single footstep of your beautiful leg
Plays piano chords deep inside my heart,
It sounds like the keystroke of a very fast typewriter,
Your footsteps are like a piston; intake and exhaust
It goes up and down.

Your footsteps make me woozy-
I stay alive, because you walk
I stay alive, because you run-
My heart impulses, because of your harmonic walk.

— September 08, 2018

অভ্যন্তরীণ

আমার ভেতরে এক নারী বাস করে
তার ভেতরেরটা আমার চেনাজানা,
যেন পরিচিত কোন পার্কের দাগ কাটা রাস্তা
সে হাঁটে পায়ে মিলিয়ে পা, আমি হাঁটি
সে হাসে কণ্ঠে মিলিয়ে কণ্ঠ, আমিও হাসি
তার বিছানা বালিশ চাদর বড্ড পরিপাটি।

আমার ভেতরে এক নারী বাস করে-
তাকে আমি দেখতে পাই না
ছুঁতে পাই না;
আবছায়া দেখে দৌড়ে ছুঁটে যাই না।
পুরুষের অন্দরে থাকে যে নারী,
পর হলেও কখনো ছাড়ে না ঘর।

ভোররাতে আচ্ছন্ন মন ও মগজ ভারী হয়ে উঠলে-
প্রতিযোগিতা শুরু হয় ঈশ্বরের সাথে;
মুয়াজ্জিন দিনে ডাকে পাঁচবার,
আমারও তো ইচ্ছে হয় শুধু একবার
খাটো স্বরে কানেকানে জপে দেই বীজমন্ত্র!
কান্না পেলে আমার ভেতরের নারী কেঁদে উঠে,
কেননা পুরুষ কাঁদতে পারে না।

আমার ভেতরে যে কবি শব্দে দিচ্ছে বুনট
অকাতরে বিলিয়ে দিচ্ছে দু:খ-বিলাস,
আদ্যোপান্ত বুঝেনি যে, শিখেছে কেবল শব্দ গোটাকতক!
সত্যিকারের সুখের বানানে শুরুতে দন্ত-স; জানে না সে,
জানলে একদিন মস্ত করে লিখত সুখ-কাব্য।

সুখপাখী আকাশে উড়ে না
ঝিম ধরে বসে থাকে মনের উঠানে-
যেন একটু ওম রোদ পেলেই পাখনা ঝাড়া দিয়ে উঠবে।
আমার ভেতরের নারী বালুচরি শাড়ি পড়ে,
পাড়ের আঁচল পানিতে ভিজিয়ে, কপালে ও সিঁথিতে লাগিয়ে দেয়ালের সাদা চুন
চিনি হাঁসের পালক ধরে উড়িয়ে দিয়েছে শরতের মেঘ।

আমার ভেতরে এক নারী বাস করে-
আবাদ করে অনাবাদী জমি,
সে আমার হাত ধরে – ধরেই থাকে শক্ত করে;
হাতের মধ্যেই রাখছে যেন একটি ঋদ্ধ পুরুষ।

নির্জন সঙ্গম

রাত্রির হাতে হাত রেখে ঘুমিয়ে পড়ে পৃথিবীর সমস্ত আলো
জাগ্রত আঁধারের বুকে লুকোচুরি খেলে সপ্তপদী রঙ –
সমস্তটা আঁধার সে ধারণ করে আপনা বুকে
কৃষ্ণবর্ণ নিস্তব্ধতার সাথে সবচেয়ে গভীর মিতালি থাকে নীল জলের-
বেলাভূমির ঢেউ ছুঁইছুঁই জলে
একটি দ্বিপুটক ঝিনুক হেঁটে যায় অন্য আরেকটি ঝিনুকের দিকে;
সে এক অন্য জীবন।

অন্ধকার সাগর জলকে তখন মনে হয় নেশার শরাব
ইচ্ছে করে-
সাগরের বুকে একটা বরফকল পেতে দিয়ে
দু’হাতে আঁজলা ভরে পিয়ে নেই ব্লু সি-ওয়াটার
মহোল্লাসে খসিয়ে দেই অন্তরিক্ষের অন্তত দু’একটি নক্ষত্র।

উল্লাস পর্ব শেষ হয়ে এলে-
সমুদ্রকে না হয় দু’একটা প্রশ্নও করা যাবে;
জিজ্ঞেস করা হবে-
সমুদ্র, তোমার লোনা জল ভালো লাগে?

রাত্রিকে জিজ্ঞেস করা যাবে-
রাত্রি, তোমার অন্ধকার ভালো লাগে?
পা’য়ে এসে আছড়ে পড়া ঢেউকে জিজ্ঞেস করা হবে-
ঢেউ, তোমার পা’য়ে আছড়ে পড়তে ভালো লাগে?

সমুদ্র, রাত্রি, অন্ধকার;
ওরা যদি সম্মিলিত হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করে-
কবি, তোমার বেতনমুখী কবিতা ভালো লাগে?
তখন আমরা পরস্পরকে কি জবাব দেব?

প্রশ্নোত্তর পর্ব সাঙ্গ হলে-
অদূরে-
রূপালী আলোতে দেখা যাবে-
জলে ভিজতে ভিজতে ঝিনুক দু’টি পৌঁছে গেছে একে অপরের নৈকট্যে;
নিজেদের শুকিয়ে নিতে ওদের তখন দরকার হবে-
কিছু উষ্ণতা- একটু গরম কাপড়- মোজা তোয়ালে;
আর অনেকটা গাঢ় নির্জন অন্ধকার।

তুলনামূলক যুগলতত্ত্ব

কমপক্ষে একজন নারীকে আমি চিনি- যে শাড়ি প্যাঁচাতে জানে না
আমিও পারি নে; পয়েন্ট টেবিলে সমতা।
সে ভালবাসতে জানে না-প্রেম করতে জানে না- চুমু খেতে জানে না
অন্তত আমাকে তো খায়নি কোনদিন; আমিও না———-
আবারও সমতা; ২:২

বল এবার আমার কোর্টে-
প্রতিপক্ষকে দুর্বল ভাবতে নেই ঠিকই
কিন্তু যখন সে মত্ত থাকে চরম ফ্যান্টাসিতে – বেহুঁশ ভাবা অনুচিত নয়;
আমার প্রতিপক্ষ- আমার চেনাজানা নারী-
আমাকে সে আ-জীবনকাল ভেবেছে কাপুরুষ-
অথচ সে জানে নিজেও,
সান্ধ্য আইনে বিছানার রাজত্ব তার হলেও জয়ী হবার মত কিছু শব্দ আমারও আছে;
ব্রহ্মাস্ত্র তুলে রাখা আছে——–

এ এমনই এক বাণ, যাতে মৃত্যুও আছে মোক্ষলাভও আছে-
প্রেমও আছে বিরহও আছে;
বুকে বিঁধলে প্রেম আর নিশানা মাথায় হলে রক্তক্ষরণে নির্ঘাত মৃত্যু।।

গর্দানের সামনে যখন বক্র-ছুরি—সময় অপচয় তখন খামখেয়ালীপনা
একটা তাই অব্যর্থ অস্ত্র নিশানা করতেই হল-
তাকে বললাম,
“তুমি রমণী, তুমি নারী, তুমি কামিনী-তুমি যামিনী—————— ”

শেষ কথাটা আমাকে আর সে বলতে দিল না
তার পূর্বেই চোখ তার হয়ে উঠলো নীল – শরীরের চামড়া হয়ে গেল ফ্যাকাসে –
বাণ প্রেমের হয়নি, হয়েছে মৃত্যুর।

এই অব্যর্থ মৃত্যুবাণেরও আছে নিরাময়-
দাওয়াই আছে গাছের চূড়ায়- গাছ আছে জংগলে- জংগলে আছে পাঁচটা বটবৃক্ষ,
বৃক্ষের শিকড় উঠেছে হাতির পায়ের ছাপ থেকে-
বৃক্ষের মাথায় আছে গোখরো সাপ- সাপেই আছে শাপমোচন।

অহর্নিশ যে যাতনা নারীর বুকে-
যে বিষ তার সমগ্র শরীরে-
যে সত্তা সে করে আছে ধারণ;
তত্ত্বকথায় তার কেন এত ভারী হয় কান?
বর্ষার জলে কিসের এত মৃত্যু তাড়না তার?
প্রবল বর্ষণে ‘পুরুষ’ নামক যে শব্দে ভারী হয় কান –
যে শব্দের মধ্যে এত শৌর্য-বীর্য ও দাম্ভিকতা – যতটা নারী ভাবে;
তারও কয়েক’শ গুণ অধিক প্রেম-স্নেহ-আদর ও আবেদন থাকে ‘নারী’ শব্দে।।

নারীর নারীত্ব আসলে- আসে পূর্ণতা-
পুরুষের পৌরুষ আসলে- আসে ধ্বংস।
হর্ষ-বিষাদ চলতে হয় যুগপৎ-
অথচ একজন আরেকজনকে ভেবেছে প্রতিদ্বন্দ্বী
নয় যুগল অনুবন্ধী।

ও আমার ঘর গোছানী-পর নারী –
ও আমার রাত্রি জাগা- আদর মাখা –
ও আমার দূর রাণী- রাত কাটেনি –
ও আমার আপনা নারী, মরতে মরতে যাও বেঁচে যাও-
এমন করুণ মৃত্যু হলে বাঁচবে বলে ক’জন পুরুষ ?
তোমার মৃত্যু হলে তোমার জরায়ুতে পচে মরবে অচল পৌরুষ;
ও আমার বেপরোয়া নারী- যাও শুনে যাও অমোঘ দাওয়াই-
যাও শুনে যাও সেই কথাটি – যে কথাটি হয়নি বলা-
‘তুমি যাত্রী-তুমি রাত্রি-তুমি কামিনী-তুমি যামিনী’-
তুমি- তোমার বুকই এই ধরণী।

এবার আবার ফিরে যাই পয়েন্ট টেবিলে-
২:২ এর পরে-
আর কি বিশেষ কিছু ছিল ঠিক গুণে রাখবার মত !

———————
২৭-৮-২০১৮

Call me by name

Another glass of wine
Another question and so many answers;
Many people and so many small talk,
And then,
You call me by name.

Say, you hate me and cross your heart
Walk far away from me.
Next morning, may be at the seashore –
You remember me,
You call me by name.

A twenty and two pound cake and a dinner for two
A month, a very long month,
A boat journey or soda of central bar
All my chewing moments of life that i gathered by time –
Maybe come true in next early spring.

Say, you hate me and cross your heart,
Hasta la vista.

যুগপৎ

আমার সর্বশেষ প্রেমিকার বয়স কত, তার জন্মদিন কবে;
অথবা তাকে সর্বশেষ কোথায় দেখা গিয়েছিল সেসব আমি জানি না।
আমার সাথে তার কোনদিন দেখা হয়নি, জন্মদিনে কেক কাটা হয়নি-
তার যাওয়া-আসার পথে শিঞ্জন শুনিনি;
শুধু জেনেছি তার বাম পায়ে থাকে মিসরীয় পায়েল-
নাভি নিচে পুরোটা কোমরজুড়ে সাপের মত প্যাঁচানো পার্সিয়ান কোমরবন্ধ।

অনন্ত অপেক্ষান্তে মিলনের মৌসুমে আমাদের মিতালি হলে-
চামড়ার ভাঁজ ও শরীরের খাঁজ-ভর্তি আদিম গহনা দেখে বুঝে নিতে কষ্ট হবে না
আমার প্রেমিকার বয়স শতবর্ষী বৃক্ষের চেয়ে কম কিছু না-

চন্দ্রগ্রহণের মত আমাকে সে গ্রহণ করুক দুর্নিবার আকর্ষণে-
মধ্যবর্তী দূরত্ব ঘুচে গিয়ে বনাবনি হোক প্রেম ও অহংবোধের;
আঙুলের স্পর্শে অবনত হোক লজ্জাবতীর ললাট গ্রীবা-
অমরাবতী ধরণী নীলাভ হোক সর্বনাশা প্রেমে।

আমার ঠোঁট থেকে পুনর্জন্ম পাক ফলবতী বৃক্ষ,
প্রেমিকার নাভিতে শুদ্ধ হোক আমার অমর জনম-
আমাদের সত্য জন্মতিথি হোক অভিন্ন দিনে

ছবি- ছবিটা এখান থেকে নেয়া

নাটক- মৃত্যু দুয়ার

স্থানঃ মৃত্যু দুয়ার দিয়ে অমরত্বে প্রবেশের দ্বারপ্রান্ত
সময়ঃ মধ্যরাতের পর থেকে সকাল

কুশীলবঃ (এই পর্যন্ত)
১) ১ম প্রহরী
২) ২য় প্রহরী
৩) ৩য় প্রহরী

প্রথম দৃশ্য

বিশাল ধু ধু প্রান্তর- চারিদিকে ঘন অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না। অতিদূর হতে পোঁ পোঁ ভোতা সাইরেন শোনা যায় ।
(দুজন প্রহরীর একইসঙ্গে প্রবেশ-গায়ে কোন খাকি পোশাক, কান্ধে রাইফেল নেই তবুও এরা প্রহরী, দেখতেই মনে হয় তালপাতার সেপাই)

১ম প্রহরীঃ (২য় জনের দিকে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে) তোমার নাম কি ভাই ? কোথা থেকে এসেছো?
২য় প্রহরীঃ ভাই বলছো কেন ? জানো না অন-ডিউটি ঊর্ধ্বতন’কে স্যার ডাকতে হয়। ঠিক করে আবার বলো, নইলে রিপোর্ট ঠুকে দেব।
১ম প্রহরীঃ আপনি আমি দুইজনেই আসছি গার্ড দিতে কেউ যেন অবৈধভাবে ঢুকে যেতে না পারে, আপনার কান্ধেও কোন ব্যাজ নাই- হাতে পিস্তল নাই, র‍্যাঙ্ক তো বোঝারই উপায় নাই। তবে আপনার গাল ভাঙ্গা, চুল অর্ধেক নাই; মনে হয় বড়ই হবেন বয়সে। সেইখান থেকেই বলতেছি যখন বলছেন, ‘আপনার নাম কি স্যার? নিবাস কোথায়?’
২য় প্রহরীঃ এইতো ! তোমার ভিতরে আদব লেহাজ আছে দেখেই বোঝা যায় তুমি ভদ্র বংশের শুধু একটু ঝালিয়ে দিতে হবে। চিন্তা করো না। আমার সাথে যখন কাজ করতেছো একদম র‍্যাতের মত সোজা হয়ে যাবে। আমি যখন প্রথম জয়েন করি তখনকার সময় তো আর নাই। আমাদের অফিসার ছিলেন মিঃ অনুপম। আহা ! যেমন নাম তেমনি তার আচার ব্যবহার। কাজও ছিল চমৎকার বিন্যস্ত। যে কথা বলতেন সেইটাই করতেন, কোন নড়চড় নাই। এখন তো আর সেই সময় নাই। আচ্ছা তুমি যেন কোন ব্যাটালিয়নের ছিলে ?
১ম প্রহরীঃ আমি ছিলাম ৮৭(খ) ব্যাটেলিয়ন, কিন্তু আপনার নামটাই তো জানা হলো না। কোথা থেকে আসছেন সেটাও বললেন না। নাম পরিচয় না জেনে একত্রে কাজ করতে কেমন যেন উসখুস করতেছে।
২য় প্রহরীঃ তোমাকে এইখানে আনা হয়েছে গার্ড দেয়ার জন্য। গার্ড মানে বোঝ ? নজর থাকতে হবে বাজপাখির মত, দৃষ্টি থাকতে হবে বাঁদুরের মত আর কান থাকতে হবে কুকুরের মত। তোমার সাথে আছি প্রায় দশ মিনিট হয়ে গেল, আমার বুকের উপরে বাম পাশে দেখতে পাও না খাস বাংলায় আমার নাম লেখা আছে নেইমপ্লেটে ! নাকি পড়তে লিখতে জানো না। টিপসই দাও?
১ম প্রহরীঃ অনুপম স্যারের কথা বললেন বলে, তিনি ছিলেন ৭৭ ব্যাচের। দেখলে মনে হয় না আপনি আমার থেকে দশ বছরের সিনিয়র। আপনার জ্ঞান বুদ্ধি আমার থেকে বেশী সেটা বোঝা যাচ্ছে তবে আপনি যে নজরের কথা বলছেন বাজ পাখির মত, বাদুরের মত; এইখানে যে ঘুটঘুটে অন্ধকার স্বর্গের অপ্সরা দুই হাত দূর দিয়ে হেঁটে গেলেও টের পাওয়া যাব না। আপনার বুকের উপরে লাগানো নেইমপ্লেট দেখা যাচ্ছে না।
২য় প্রহরীঃ হ্যাঁ সেটা অবশ্য মন্দ বলো নি, অন্ধকার বড্ড বেশী। আচ্ছা এই তোমার কাছে কোন টর্চ লাইট টাইট নাই ? থাকলে মারো তো, কাছেই কি যেন খচখচ করে উঠলো।
যাইহোক, আমার নাম অর্জুন। এটা অবশ্য আমার আসল নাম না। তবে সবাই আমাকে এই নামেই চেনে। খুব ভালো তীর মারতে পারতাম বলে আমাকে এই নাম দেয়া হয়েছিল। অনুপম স্যার আবার বেশিই মহাভারত পড়তেন।
১ম প্রহরীঃ টর্চের কোন ব্যবস্থা নেই। এটা একটা বিশেষ অভিযান বলে কোন ধরনের আলো দেয়া হয় নাই। আলোতে নাকি ওদের চোখের জ্যোতি বেড়ে যায় তাই এই মিশনে আলো একদম নিষিদ্ধ। আমার নাম–
২য় প্রহরীঃ (মুখের কথা কেড়ে নিয়ে) তোমার নাম পরে জানা যাবে, দুর্যোধন নিশ্চয়ই নয়। এখান দেখো তো কারও আনাগোনা টের পাও কিনা। রেল লাইনে কান লাগাবার মত শুয়ে পড়ে কান মিশিয়ে দাও মাটিতে, পাখির মত শূন্যে ভাসান দিয়ে কান পাতো বাতাসে – দেখো যদি কিছু শুনতে পাও। নাহলে এইখানে মাছিও নেই যে মারবে।
(বিপরীত দিকে ঘুরে, কিছুটা হেঁটে গিয়ে জোরে চেঁচিয়ে) আমি এইখানেই আছি। একটা লাঠি পুতে যাও। আমি একটু এলাকাটা ঘুরে ফিরে দেখি। আমি উত্তরে যাচ্ছি তুমি দক্ষিণে যাও। পূর্ব পশ্চিমে কেউ মরতে যাবে না। সাবধানে যেও। তুমি আমার যত ছোটই হয় না কেন, তোমাকে তাচ্ছিল্য করা ঠিক না। র‍্যাংঙ্ক এখন তোমার আমার একই। বেশী সৎ থাকলে যা হয় প্রমোশন পাওয়া যায় না।
১ম প্রহরীঃ কোন সমস্যা নেই স্যার, আপনি বলুন যা ইচ্ছে। আমি এই লাইনে নতুন না।
২য় প্রহরীঃ স্যার বলছ কেন ? নিজের ইচ্ছায় নাকি ভয়ে ? যা ডাকছিলে তাই ভালো। ভাই ডাকো। যেদিকে যেতে বলেছি সে দিকে যাও, কুড়ি মিনিট পরে এসো ঠিক এইখানে। এখন যাও, আমিও যাই। ফ্ল্যাগ পুতে যেতে ভুলে যেও না বুঝেছো দুর্যোধন।

২য় দৃশ্য

( কাঁটাতারের সীমান্ত ভেদ করে পঙ্গপালের মত সবাই কেমন ওইদিক থেকে এইদিকে চলে আস্তে চাইছে। সবাই অসভ্যের মত হাউকাউ করছে। এখানে এত সোরগোল অথচ এতক্ষণ দূরে থেকে কিছুই টের পাওয়া যায়নি। আরও আছে যেতেই শব্দ আরো স্পষ্ট হতে লাগলো। সবাই একেবারে মিছিল দিয়ে আসছে, হাতে ফেস্টুন-প্ল্যাকার্ড-ব্যানার। উদ্ভট সব ব্যানার পোষ্টার। কি লেখা নেই তাতে !

বাঁচতে বাঁচতে মরে গেছি- এবার তবে মরতে দাও
এর নাম বাঁচা হলে মরা তবে কারে কয় ?
জীবন যদি না চাইতেই পাই, মরণ কেন স্বেচ্ছায় নয় ?

টিপিক্যাল রাজনৈতিক স্লোগানের মত সামনে থেকে একজন ইন্ধন দিচ্ছে পেছন থেকে সবাই কোরাস দিচ্ছে-

বাঁচতে বাঁচতে মরে গেছি- এবার তবে মরতে দাও – মরতে দাও- মরতে দাও-মরতে দাও
এর নাম বাঁচা হলে মৃত্যু তবে কাকে বলে – মৃত্যু তবে কাকে বলে- মৃত্যু তবে কাকে বলে।
জীবন যদি না চাইতেই পাই, মরণ কেন স্বেচ্ছায় নয় ?- মরণ কেন স্বেচ্ছায় নয় ?- মরণ কেন স্বেচ্ছায় নয় ?- জবাব চাই ! জবাব চাই !

(মৃত্যুর এত মিছিল দেখে প্রহরীরা ভয় পেয়ে গেল। এত মানুষ মরতে চাইছে। পৃথিবীতে আর কেউ বাঁচতে চাইছেই না ! সবার পাখা গজিয়েছে। এত-বড় মৃত্যুর মিছিল দেখে প্রহরী এক দৌড়ে হাঁপাতে হাঁপাতে আগে পুতে রাখা ফ্ল্যাগের কাছে চলে এলো। এসে দেখে ২য় প্রহরী আগে থেকেই এসে হাজির।)

১ম প্রহরীঃ (হাঁপাতে হাঁপাতে) অর্জুন স্যার ! ওইদিকে কি হাল? এদিকের অবস্থা সুবিধার না। সব একেবারে পঙ্গপালের মত মরণের মিছিলে নেমেছে। এই ঢল একবার কাঁটাতার পেরিয়ে গেলে যমদূত পর্যন্ত পৌঁছে যাবে নিশ্চিত। এদের কেউ আটকাতে পারবে না।
২য় প্রহরীঃ শান্ত হও ! শান্ত হও ! তুমি অনেকটা পথ দৌড়ে এসেছো। কিছুটা বিশ্রাম নাও। বুক ফুলিয়ে ছাতি পর্যন্ত বাতাস ঢুকাও। এখন যা বলি মন দিয়ে শোন।
১ম প্রহরীঃ বলুন স্যার-
২য় প্রহরীঃ তোমার মনে আছে দুই বছর আগে ইলেকশনের সময় বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের ইশতেহার কি ছিল ? তারা কি কি ওয়াদা দিয়েছিল ?
১ম প্রহরীঃ মনে আছে বৈকি, ঐ-তো বলেছিল- ‘যার জীবন তার তার, বাঁচতে যখন কষ্ট হয়- মৃত্যুতে বাধা নয়’।
২য় প্রহরীঃ সাব্বাস ! পুরোটাই মুখস্থ আছে দেখছি ! চকচকে মেধা তোমার, সিভিল সার্ভিসে কততম হয়েছিলে ? দশের বাইরে যাওনি নিশ্চয়ই?
১ম প্রহরীঃ একটুর জন্য ফার্স্ট হতে পারি নি স্যার, এমন একটা আন-কমন প্রশ্ন দিয়েছিল যেটা একদম সিলেবাসের বাইরে ছিল; পৃথিবীতে শেষ কবে মানুষ মারা গিয়েছিল তারিখ লিখ?
আপনিই বলেন স্যার ! মানুষ মরেছে সেই কবে কোন আমলে সেই ইতিহাস দিন তারিখ কি মনে রাখা সম্ভব ?
আমার বাপের আমলে না, তার বাপের আমলেও না, তার বাপের আমলে মনে হয় একজন মরেছিল, তাও খুব লুকিয়ে বাঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছিল। ধরা পড়তে পড়তে মরে যেতে পেরেছিল, ধরা পড়লেই ঢুকিয়ে দিত আজীবন হাজতে।
২য় প্রহরীঃ ইশ ! গাধা তুমি ! দুইশ চারশো বছর আগের একটা তারিখ দিলেই হয়ে যেত, এত আগের ডেট কেউ খুঁজতে যাবে ? শত বছর আগের হিসেব দেখে এগজামিনারও ভেবে নিত ঠিকই লিখেছো ! যাইহোক, পেছনের ইতিহাস বাদ্ দাও, যে ইতিহাস সামনে সৃষ্টি হবে সেটা মনে রাখবো কিভাবে সেটা ভাবো। আন্দোলনের যা অবস্থা, মরতে তো এবার দিতে হবেই—

তৃতীয় দৃশ্য

(ভোরের আলো অল্প-অল্প ফুটতে শুরু করেছে। প্রহরী দুজনেই সারা রাত জেগে জেগে ক্লান্ত হয়ে প্রায় আধো-ঘুম পর্যায়ে। আর অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের শিফট পরিবর্তন হবে। অন্য দুইজন প্রহরী আসবে। এদের ছুটি হবে। বেশী সময় নেই। এরই মধ্যে দিনের রিপোর্ট লিখে কেন্দ্রে জমা দিয়ে সাক্ষর দিয়ে যেতে হবে।
প্রথম প্রহরী ঝুঁকে ঝুঁকে কাগজের উপর রিপোর্ট লিখছে- ঠিক এমন সময়ে দৌড়াতে দৌড়াতে একজন প্রহরীর আগমন। )

৩য় প্রহরীঃ আমি ১৯ ব্যাটালিয়ন-১৭(ল) কেন্দ্রীয় কমান্ড–
২য় প্রহরীঃ পরিচয় দিতে হবে না, দেখে চিনেছি। কি ব্যাপার এক ঘণ্টা আগেই এসে গেছো? আর তুমি একা কেন ? তোমার সাথেরজন কোথায় ?
৩য় প্রহরীঃ আজকের পর থেকে মনে হয় আর কোন চৌকির দরকার হবে না। উপরের আদেশ আছে, যারা যারা মৃত্যুর জন্য আন্দোলন করছে তাদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে ধরে নিয়ে যেতে। এমনভাবে ধরে নিয়ে যেতে হবে যেন তারা বুঝতে পারে যে তাদের দাবী মেনে নেয়া হয়েছে। এই কাজের জন্যই আমাকে পাঠিয়েছে আপনাদের খবর দিতে আর সাহায্য করতে।
১ম প্রহরীঃ হাজার হাজার লাখো লাখো মানুষ মিছিল দিচ্ছে, কয়জনকে ধরে নিয়ে যাবেন ?
২য় প্রহরীঃ আহ ! তুমি একদম বে-আক্কেল। কি শিখলে এই কয় বছরে ? সবাইকে ধরে নিতে হবে কেন ? যাদের হাতে ব্যানার-ফ্যানার ছিল তাদের পাঁচ-ছয়জনকে নিয়ে গেলেই হবে।
৩য় প্রহরীঃ একদম ঠিক বলেছেন জনাব, আপনার বুদ্ধির তারিফ করতে হয়। আমিও এমনটাই ভাবছিলাম।
২য় প্রহরীঃ কিন্তু আমি ভাবছি, এদেরকে নিয়ে করবে টা কি ? মেরে তো ফেলবে না, তাহলে কি মিটিং করবে ? পারস্পারিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট দ্বি-পক্ষীয় বৈঠক ? বৈঠকে এরা মানবে না। এদের খুন কাঁচা লাল, বড্ড তেজ। মৃত্যু এদের চাইই-ই
১ম প্রহরীঃ এত ভেবে কাজ কি ? চলেন আদেশ যা এসেছে পালন করি তারপর ঘুমাই। সারা রাত জেগে আছি। চোখ লেগে আছে। বাড়িতে আমার বৌ-বাচ্চা আছে।
২য় প্রহরীঃ তোমার বয়স বাড়ছে না কমছে ? কিছুই বুঝতে পার না ! কেবল ঘুমাতে চাও-
১ম প্রহরীঃ বয়স বাড়লেই কি আর কমলেই কি ? জীবনে তো মরতে পারবেন না। বয়সের চিন্তা তাই অনেক আগেই বাদ দিয়েছি।
৩য় প্রহরীঃ সে কিন্তু ঠিকই বলেছে স্যার, আমার পর-দাদু, কিছুই করতে পারে না। খেতে পারে না, কথা বলতে পারে না, হাঁটতে পারে না। একদম অথর্ব হয়ে আছে, সেজন্য গতমাসে মৃত্যুর জন্য আবেদন করেছিল। খারিজ করে দিয়েছে। মরতে যে আমরা পারব না সেইটা তো মেনে নিয়েই আছি স্যার।
১ম প্রহরীঃ এসব ফিলসফি বাদ দিয়ে চলেন, পূব দিকে যাই। বেলা হয়ে যাচ্ছে। ওখান অনেকে স্লোগান দিচ্ছিলো, ওদের কয়েকজনকে ধরে বেঁধে নিয়ে যাই-

– চলবে————–

জাহিদ অনিক
২১-৮-২০১৮

আত্মসমর্পণ

আমার নিঃস্ব হওয়ার নিকষ রাতে-
মহুয়া বনে মাতাল হাওয়া
ডাল ভাঙ্গার চুরমার শব্দে;
নিঃশব্দে-
কলিজার ভিতরে যেন মিশে যাচ্ছে পিত্তরস-
মুখ ভর্তি তিক্ততায়-
কি এক গরল বিষে;
নিমিষেই বুঝতে পারি-টের পাই
দেহে অচেনা মোচড়- অঙ্গপ্রত্যঙ্গের রদবদল

অন্তরের সবটুকু বিষ কানে ঢেলে দিয়ে
কানেকানে কি যেন চাইছে বলতে-
ফিসফাস-
আমি বুঝতে পারি না কিছুই
সব শব্দ অক্ষর দলা পেঁচিয়ে – হিজিবিজি হিজিবিজি
কান ফেটে যায় অশ্রাব্য অশ্লীল শব্দে

পলাতক ঘাতক অসীম ক্ষিপ্ততায়-
দেয়ালে ঠেলে ধরে পিঠ
হাতে চেপে রাখে নাক- ঠোঁটে ঠোঁট
দম বন্ধ করে খুন করতেই যেন সে উদ্যত;
আমিও ভুলে যাই ফেরাতে-
দমে যাই-
যদিওবা ফেরাতে চাই;
সাধ্যি কি থামিয়ে দেই মস্ত এক দানব!

অগত্যা;
থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই
ঘাত প্রতিঘাত
ধস্তাধস্তির পরে নিস্তেজ-
বুঝতে পারি ঠিক পর মুহূর্তেই-
আর নেই নিজের একান্ত ব্যক্তিগত কিছুই
কুক্ষণে করেছি অর্পণ
ক্রমশ জমানো প্রেম।

বিভ্রান্ত প্রেমিক

হে অল্পভাষী অপরিণামদর্শী প্রেমিক,
ভালোবাসা ও অবহেলার মত পরস্পরবিরোধী যুগল শব্দে তুমি লিখতে চাও কোন মহাকাব্য ?
নারী হৃদয়ের ব্যাকুলতা ভরাতে চাও তোমার কোন কাব্যিক উপমায় ?
স্রোতের বিপরীতে দাঁড় টেনে পালে যে হাওয়া তুমি লাগিয়েছ
সে হাওয়া ঘূর্ণি হয়ে তোমাকে নিয়ে যাবে দূরে – আরও দূরে!
যদিওবা কাছাকাছি তুমি কোনদিনও আসতে চাও নি৷

আমার অপরাধের শীর্ষ ও সর্বশেষ সীমানাঃ কেবল তোমাকে ভালোবাসা।
নিজের ছোট্ট বুকে চপলতা ও চঞ্চলতায় লজ্জিত মুখে
হৃদয়ে যে তুলে দিয়েছি এক সর্বগ্রাসী ঢেউ
সেই চঞ্চল চপলা আমি তখন তোমার নবলব্ধ প্রেমিকা;
যা’কে তুমি আপন করে নিলে ঠিকই কিন্তু বশে নিলে না।

তোমার বৈরাগ্য ও উদাসীনতা আমাকে যে খুব বেশি সুখ এনে দিত তাও নয়
তুমি ভেবেছ,
সম্ভোগ পরের বিষয়, আপাতত আপনাতেই থাক
আপন আলোয়- আপন আলয়ে;
নিজের প্রতি যে বিতৃষ্ণা তুমি ধরিয়েছ তা কোন অসুখ নয়-
ভেবেছ তোমার এই খামখেয়ালীপনা বুঝি নারী হৃদয়ের কাম্য,
ভুল পুরুষ বেখেয়ালে জলাঞ্জলি দিয়েছ নিজ যক্ষের পৌরুষ,
যে নিজের শরীর চিনে না- নিজেকে ভালোবাসে না
অন্য আরেক সত্ত্বাকে কি ভালোবাসা সে দেবে?

বিদায় ঊষা লগ্নে হে প্রিয় এই হোক কামনা-
বেপরোয়া জীবনের গতিতে ভেসে যাওয়ার আগেই শুধরে নিও নিজেকে
অদম্য ইন্দ্রিয়শক্তিতে নিজেকে করে নিও শাণিত
দুর্নিবার গতিতে চলতে চলতে কখনোবা থমকে যেও- দেখে নিও নিজেকে
প্রণয়ের রঙে ও রূপে যা আমিও দেখেছিলাম তোমার চোখে ।

    ১৭ ই আগস্ট, ২০১৮

————————–

কবিতায় দুইটা জিনিস বোঝাতে চেয়েছি, পুরুষের হৃদয়ের বৈরাগ্য নারী হৃদয়ে কেমন প্রভাব ফেলে একজন পুরুষ হয়ে সেটা অনুধাবন করা। এবং নারীর চোখে পুরুষের রূপ দেখা।

ছবির ক্রেডীটঃ ছবি এখান থেকে নেয়া

জল কড়চা

রাজধানী শহর ঢাকাতে বসবাস করেন অথচ আজিকে সন্ধ্যার পরে নিজ নীড় হইতে বাহির হইলেন না, তাহারা ঘরকুনো তো বটেই আমি তো বলিব কাপুরুষও বটে! এমন আনাড়ী বৃষ্টির তুমুল পতনের পরে গুপ্ত প্রকৃতি যে কতটা উন্মুক্ত হইয়াছে তাহা যাহারা আজিকে বাহিরে ছিলেন তাহারাই দর্শন করিয়াছেন এবং সুখের সে বাতাসে অবগাহন করিয়াছেন। টানা বর্ষনের পরে ভূমি উপরিমণ্ডল ছিল কাচের ন্যায় স্বচ্ছ, বায়ু ছিল নির্মল ও ভরপুর যৌবনবেগ প্রাপ্ত। রাস্তাঘাটে জল কিছুটা জমিয়া ছিল বৈকি তবে বায়ুর তীব্র বেগের সাথে তাল মিলাইয়া সে জল যেন সমুদ্রের ঊর্মীর মতই দোল খাইতেছিল। এমন বাতাস ও জলের উপস্থিতে নগরের রাস্তাঘাট, বাজার, অফিস আদালাত সবকিছুই ছিল শীতল। শীত যে আসি আসি করিতেছে তাহার অন্য আরও একটি লক্ষণ অবশ্য দেখা যাইতেছিল নগরের রাস্তায় রাস্তায়। পিঠা বিক্রেতা ছেলে বৃদ্ধ্বাদের ভ্যান গাড়ি মাটির চুলায় পিঠা সমেত দৃশ্যমান হইতেছিল যায়গায় যায়গায়। ডুবন্ত তেলে ময়দা ভাজিয়া ও সরষে ভর্তাযোগে তাহা পরিবেশনের দৃশ্য ছিল চোখে পরিবার মতই।

রাজপথে ছিল না ট্রাফিকপুলিশের বাড়াবাড়ি রকমের ব্যস্ততা, ছিল না একতলা কিংবা দ্বিতল বাসের ঘনঘন যাতায়েত। রিক্সার আধিক্য ছিল চোখে পড়িবার মতই। টুং টাং বেলের শব্দে পথঘাট যেন ফিরিয়া গিয়াছিল সত্তর কিংবা আশির দশকেই।

চা প্রিয় বাঙালীর সমস্ত আড্ডা আজ জমিয়াছিল সন্ধ্যার পরে চায়ের দোকানগুলোতে। দোকানিরা আজ চা বানাইতে বানাইতে হিমশিম খাইতেছিল বটে তবে অধিক বিক্রির হেতু উহাদের মনে যে বাড়তি খুশির বাতাস দোল খাইতেছিল তাহার কিছুটা ছাপ চোখেমুখেও দেখা যাইতেছিল। যা খাওয়াইয়া এবং খাইয়া দোকানী ও খরিদদার উভয়েই ছিল বেশ তুষ্ট।

টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে যাহারা নিয়মকরেই খিচুড়ি খাইয়াছেন তাহারা আজ আর খিচুড়ির দিকে না যাইয়া রাত্রের খাবারের মেন্যুতে যোগ করিয়াছেন সবজীর বাহারী পদ। তবে ব্যাচেলদের কারও কারও সাথে কথা বলিয়া জানা গিয়াছে যে তাহারা তাহাদের ঐতিহ্যবাহী খাদ্যতালিকায় কোনরূপ পরিবর্তন না আনিয়া আজিকেও ডিম দিয়াই হাত কচলাইয়াছেন।

টানা দুই দিনের সাপ্তাহিক বন্ধ ও যুগপৎ বৃষ্টির এই ছন্দময় পতনে বাস ও মিনিবাস যেমন ছিল প্রায় ফাঁকা তেমনি নগরীর শপিংমলগুলোতেও ছিলনা তেমন কোন হৈহুল্লোড়। তবে আজিকে সন্ধ্যার পরে কিছুটা শোরগোল দেখা যাইতেছিল স্থানে স্থানে। ইহা যে রাজনৈতিক আয়োজন নয় বরং প্রাকৃতিক আহ্বানের ফল তাহা বুঝিতে হইলে ফেলু মিত্তির হইতে হইবে না।

বৃষ্টির হরেক রকম দুর্ভোগের সাথে সবথেকে উল্লেখযোগ্য দুর্ভোগ ছিল রাস্তায় জল জমিয়া গিয়া তাহা সড়ক হইতে নদীতে রূপান্তরিত হওয়া এবং ইন্টারনেট সংযোগ ক্যাবলে জল জমিয়া গতি ধীর হইয়া যাওয়া।
নগরবাসীর তাই আশা, বৃষ্টি যেমন ছুটির দিনে ভালই রোমাঞ্চকতা দিয়াছে তেমনি কর্মময় দিনে যেন বেরসিকতা না ঘটায়। রাত পোহালেই আবার বৃষ্টি হইবে কি হইবে না তাহা জানিবার জন্য আবহাওয়া অফিসের নিকট ধরনা দিতে হইলেও উহাদের উপরে যে জনগন খুব একটা আস্থা রাখিতে পারিতেছেন না তাহা তো সকলেরই জানা কথা। আস্থাটা তাই এবার বাড়িয়া গিয়াছে রেইনকোট ও ছাতা বিক্রেতাদের উপরেই।

– ছবিঃ গুগল

অস্তিত্ব

সন্ধ্যার বেশ কিছু সময় পরের কথা, সারা দিনের খাটাখাটনির পরে বাসে করে বাসায় ফিরছি। সকাল ৭ টায় বের হয়ে বাসায় ফিরছি প্রায় রাত ১০ টার কিছু পরে।

মাঝখানে তিনবার হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি হয়ে গেছে, ভিড়-বাট্টায় কোথায় যেন ছাতাটাও হারিয়ে ফেলেছি। লাঞ্চ ব্রেকফাস্ট কিছুই তেমনভাবে করা হয় নি; সন্ধ্যার পরে খিদেটা বেশ জেঁকে বসেছিল কিন্তু তাড়াহুড়ার কারণে পাত্তা দিতে পারিনি।
যখন মনে পড়ল সারাদিনে প্রায় কিছুই খাইনি চটজলদি একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে গেলাম। ওয়েটার আসলো; হড়বড় করে দুনিয়ার যত খাবার আছে সবগুলোর নাম বলে জিজ্ঞেস করল
-কি খাবেন স্যার ?

স্যার বলে কেউ ডাকলে খুব বিব্রত-বোধ করি। কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে হোটেল ছেড়ে উঠে গেলাম। পাশের টং দোকানের থেকে এককাপ চা খেয়ে ভাবলাম বেশ হয়েছে, অনেক খেয়েছি। চা খাওয়ার সাথে একটা সিগারেট খাওয়া জরুরী ছিল। কিন্তু সিগারেট খাওয়া বাদ দিয়ে দিয়েছি প্রায় কুড়ি দিন। মনের সাথে অনেক যুদ্ধ করে শেষ অবধি জিতে গেলাম; খেলাম না সিগারেট!

হেড-ফোনটা কানে লাগিয়ে বাসে সিট না পাওয়ার আক্ষেপ ভুলে যেতে ফুল ভলিউমে গান ছেড়ে দিয়ে রড ধরে ঝুলছি। জ্যাম, বৃষ্টির জল, কাদা প্যাঁ পো হৈ-হুল্লোড় সব ঠেলে নিয়ে এগুচ্ছে বাস। প্রায় কুড়ি মিনিট পরে একজন যাত্রী নেমে গেলে একটা সিট ফাঁকা হল; ততক্ষণে বাসের ঝাঁকুনি আর হেড-ফোনের গানের তালে তালে বেশ একটা জমে গেছে। সিটে বসে গেলে এই রিদমটা আর থাকবে না তাই পাশেই দাঁড়ানো অন্য একজনকে ইশারা করে সিটটাতে বসতে বললাম।
ধন্যবাদ সূচক মুচকি হাসি দিয়ে তিনি বসে পড়লেন। তার কিছুক্ষণ পরে আরও একটা সিট খালি হল। এবার আর না বসে পারা যায় না। বসে পড়লাম। পাশের সিটে এক ভদ্রলোক বসে আছেন। বেশ পরিপাটি হয়ে কোথাও যাচ্ছেন হয়ত। শার্ট প্যান্ট চুল সবকিছুই একেবারে টিপটাপ। শার্টের রন্ধ্র রন্ধ্র থেকে বেশ দামী পারফিউমের ঘ্রাণ পাচ্ছি। কেমন একটা মাদকতা লেগে আছে। এমন ভাল সুগন্ধি পারফিউমের ঘ্রাণ অনেকদিন পাই না। ব্যক্তিগতভাবে নিজে কোনদিন পারফিউম ব্যবহার করেছি বলে মনে পড়ে না, খুব একটা ইচ্ছেও হয়নি কোনদিন। কিন্তু আজকে এই এত সুবাস নাকে আসার পর থেকেই ইচ্ছে করছে লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে ভদ্রলোকের কাছে পারফিউমের নামটা জিজ্ঞেস করি।
কিছুক্ষণ পরেই তাকিয়ে দেখি পাশের সিটে বসা যাত্রী বেঘোরে ঘুমচ্ছেন। নিশ্চয়ই সারাদিনের ক্লান্তিতে উনিও বেশ ক্লান্ত। আহা বেচারা ঘুমানোর ফুসরতই হয়ত পায় নি।

কোনমতে বসে গান শুনছি আর অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই বাসায় ফিরব এই আশায় ঝিম ধরে বসে আছি। মনে মনে একটু খুশিও লাগছে পুরো সপ্তাহ পরে কাল পরশু দুইদিন ছুটি। আহ !

বাস আগাচ্ছে না, বৃষ্টিতে পানি জমে রাস্তা জ্যামে আটকে গেছে। অনেকটা সময় কেটে গেছে। মাঝখানে একবার বাদাম ওয়ালা, পানি ওয়ালা পেয়ারা ওয়ালা ডেকে গেছে। এর পরেই এলো পপকর্ন ওয়ালা। একটা পপকর্ন কিনলাম। শুকনা খাবারের মধ্যে পপকর্নটাই একমাত্র প্রিয়। প্যাকেটটা খুলে কয়েকটা দানা মুখে দিলাম। বেশ ভালই লাগছে। খাচ্ছি। পপকর্নের মচমচ শব্দে শব্দে কখন যে এই তালের সাথে তাল মিলিয়ে ঝুমঝুম বৃষ্টিও শুরু হয়ে গেছে টেরই পেলাম না। জানলার কাচ খোলা ছিল, বৃষ্টির ঝাপটা গায়ে লাগতেই পাশে বসা ঘুমন্ত যাত্রী রে রে করে জেগে উঠল। ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করল- বৃষ্টি হচ্ছে নাকি ভাই !

বাসায় যখন পৌঁছলাম তখন রাত প্রায় ১২ টা। ক্লান্তিতে চোখ মুখ বুজে আসছে। বিছানার চাদরটা যেভাবে ছিল সেভাবেই রইলো, বালিশের একটা কোনা ধরে টান দিয়ে শুয়ে পড়লাম। পিছনের পকেট হতে মানিব্যাগটা বা হাতে হ্যাঁচকা টান দিয়ে বালিশের পাশে ফেলে দিলাম। মানিব্যাগের সাইজ ও ওজন বুঝে মনে হল টাকা পয়সা কমে গেছে। মাসের এখনও কয়েকটা-দিন বাকী। টাকা পয়সা যে কিভাবে যাচ্ছে ! ক্লান্তিতে চোখ মেলে রাখা দায় কিন্তু টাকার চিন্তায় ঘুম আসছে না।
যারা বলে টাকা কোন সমস্যা না তাদের সাথে আমি একমত না। টাকাই পৃথিবীর সবথেকে বড় সমস্যা। টাকা ! টাকা! টাকা !

ছোটবেলায় বাবা মাকে দেখতাম তাদের বেতনের টাকা নির্দিষ্ট একটা জায়গায় জমা করে রাখতেন এবং সেখান থেকেই টাকা নিয়ে সাংসারিক খরচ মেটাতেন। দুজনের বেতন-টাকা ব্যাংক থেকে উঠিয়ে মোট কত টাকা হল সেটা তারিখ দিয়ে ডাইরিতে লিখে রাখতেন এবং যে যখন যত টাকা নিতেন সেটা কোন উদ্দেশ্যে নিচ্ছেন সেটা লিখে সিগনেচার করে রাখতেন। তখন আমি বুঝতাম না, নিজেরদের টাকা নিজেরা খরচ করছেন তাতে আবার এত লেখাজোঁকা সিগনেচার এসবের কি আছে !
এটা যে মাসশেষে একটা হিসেব রেজিস্টারের মত কাজ করত কিছুদিন আগেও সেটা আমি বুঝতাম না ! সত্যি কথা বলতে যতদিন বাপের টাকা উড়িয়েছি ততদিন টাকার হিসেব বুঝি নি। নিজের কামানো টাকা থেকে একটা পয়সা খরচ করতে গেলেও কয়েকবার ভাবতে হয়।

ভাবতে ভাবতে মুঠোফোনটা হাতে নিয়ে দেখি রাত দুইটা ত্রিশ! প্রায় আড়াই ঘন্টা হল ময়লা বিছানার উপরে শুয়ে আছি। শার্ট প্যান্ট কিছুই বদলানো হয়নি। জামাটা শুঁকে দেখলাম বিশ্রী ঘামের গন্ধ! মনে মনে বেশ আক্ষেপ হচ্ছিল, ইশ! কেন যে যে পাশের সিটের ভদ্রলোকের কাছে পারফিউমের নামটা জিজ্ঞেস করলাম না !

আবার কবে, কোন শরতে ?

আমাকে তোমার মনে পড়বে আবার কবে, কোন মহাসাগরের পাড়ে?
আবার কবে কোন ঝিনুকের সাথে ধাক্কা খেলে, কেটে গেলে পা
তবেই কেবল আমার কথা মনে আসবে তোমার !
কোথায় কোন সাগরের পাড়ে লুকিয়ে আছে কোন ঝিনুক কে জানে !

আবার কবে কোন শীতের রাতে আমার কথা মনে পড়বে তোমার?
শেষরাতে কাঁপা শীতে চৈত্রের অমন তীব্র দাহ আর কে তোমায় দেবে বলো?
কবে আবার শীত কাঁপন ধরাবে শরীরে তোমার !
আমাকে তোমার মনে পড়বে আবার কবে, কোন মাঘের রাতে?

শীত গ্রীষ্ম বর্ষা ঠিক কতগুলো ঋতু চলে গেলে ?
কত মিলিমিটার আর বৃষ্টি হলে তারপর আমার কথা ভাববে তুমি?
কতগুলো ইফতার সেহরী চলে গেলে একা একা হাঁপিয়ে উঠবে তুমি?
কতগুলো ঈদের চাঁদ ঘুরে গেলে, আমার কথা মনে আসবে তোমার?

দ্রব্যমূল্যের দাম আর কত বেড়ে গেলে আমায় বলো খুঁজবে তুমি?
ন’টার ট্রেন ঠিক ক’টায় এলে তবেই আমি বুঝে নিব সময় হয়েছে এবার
রাতের ডিনারে একই ডাইনিংএ আর কতবার যাব ! আর কত প্লেট !
মর্নিং ওয়াকে আর কত ক্যালরী পোড়ালে তবে সকালটা শুভ হবে !
আমাকে তোমার মনে পড়বে আবার কবে, কোন শরতে ?

প্রভাত

সূর্যের মৃদু রশ্মি যেন অদ্ভুত অদৃশ্য উত্তাল লহরী
শিশির শীর্ষে ঝিলমিল বর্নালী আভা থামিয়ে দিচ্ছে স্পন্দন
ধলপ্রহরের প্রত্যেকটি প্রহর যেন হাজার রাতের অপেক্ষা
কাঙ্খিত একটি ঊষার জন্য কত অব্যর্থ আয়োজন!

শবনম, একা একলা কোথায় ছিলে এতগুলো রাত?
কি দুর্বিষহ অপেক্ষায় নিভেছে একেকটি শুকতারা
সুখের খুব কাছে এসেও কোথায় গিয়েছ উবে;
কার সাথে খেলছ এ ঐকান্তিক হিমশীতল খেলা ?

নৈঃশব্দ্যের যবনিকা পতনের পর এলে তুমি,
কতগুলো রাত পরে এলে তুমি ক্ষণিকা নীহার !
বুকে নিয়ে সহস্র শব্দ তুমি এলে যেন শব্দহীনতায়;
কত প্রত্যাশা প্রতীক্ষার পর নিশ্চুপ নিঝুম
ঘড়ি ঘড়ি অপেক্ষার পর তাও তো তুমি এলে প্রভাত!