জসীম উদ্দীন মুহম্মদ এর সকল পোস্ট

ভোঁতা অনুভূতির গল্প

কিছু কিছু অনুভূতি আগেই ভোঁতা হয়েছিলো
এখন সময়ের সাথে টাইমের পাল্লা দিয়ে ভোঁতার লাইন
কেবলই দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে!

অনেকদিন মেশক, আম্বর, জাফরানের খুশবাই পাইনা
দানাদার এলাচ, দারচিনি লং ওদেরও…..
বিপন্ন বাতাসে কেবল মুখে কুলুপ এঁটে থাকার গন্ধ!

এখন আমি দারুচিনি দ্বীপের কথা ভাবি
পাহাড়ের কাছে দীক্ষিত হওয়ার কথা ভাবি
নীরবতার কাছে শিক্ষিত হওয়ার কথাও ভাবি!

তবুও যদি ফিরে পাই কিছু কিছু ভোঁতা অনুভূতির গল্প!

তবুও সবকিছু শুচি হোক

আসন্ন বইমেলার আগেই আমার কবিতার
সব পাণ্ডুলিপি জলে যাক;
অতঃপর বাষ্প অথবা বিষবাষ্প হয়ে বিষণ্ন বাতাসের সংগী হউক
তবুও সবকিছু শুচি হোক
তবুও সবকিছু শ্রীযুক্ত হোক!!

অনেকদিন পর কবিতা লিখতে বসেছি বলেই কিনা
জানিনা, চারপাশে কেবল ধর্মঘটী বাতাসের ঢেউ;
বৃক্ষ অথবা বিষবৃক্ষ সে যাই হোক
আমি চাই আমার সংগী থাকুক কেউ না কেউ….!

আর কেউ না হলে…. না হোক
শাপ অথবা অভিশাপ যাই হোক
তবুও আসন্ন নবান্নে কেউ আমার সংগী হউক…!!

তবুও এই পৃথিবীর সবকিছু শুচি হোক
তবুও জগতের সমস্ত অসুন্দর দূর হোক!!

গেরস্তের দায়-দেনা

কিছু দুরবিন চোখ রোজ রোজ কুণ্ডলী পাকায়
যেমন করে সাপ কুণ্ডলি পাকায়, জটাধারী সন্ন্যাস;
তেমনি করে…ওরাও কুণ্ডলি পাকায় যুক্তাক্ষর!

পাকাতে পাকাতে তারাও হয় পাহাড়ি পানের বরজ
ভাবে আর কারো দায় নেই; কেবল গেরস্তের সমস্ত গরজ!
কে জানে না, পৃথিবীর পাকস্থলী সবচেয়ে বড়সড়?
কে জানেনা, গৃহযুদ্ধের ভয়ে গেরস্ত থাকে সবসময়
জড়সড়?
তবুও. যদি কিছু অকারণ নীরবতার দায় এড়ানো যায়
তবুও যদি বানপ্রন্থে যাওয়া কোনোমতে ঠেকানো যায়!

এতোকিছুর পরেও থেমে নেই কালের ঘর্মাক্ত শরীর;
থেমে নেই চাল-চুলোহীন গেরস্তের নাখাস্তা দিন
তারা নিজেও জানেনা আসলে তাদের কী হয়েছে?
ভ্রম, বিভ্রম নাকি মতিভ্রম…..?
যেদিন কেল্লাফতে চলে যাচ্ছে সে ফিরবেনা কোনোদিন
কেবল বাড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে আগত জন্মের ঋণ!

যে ঋণ ঢেকে আছে সর্বংসহা মৃত্তিকার ছায়া
তবুও ইতিহাস সাক্ষী দেয় সবকিছুর জন্য দায়ী মায়া!

রটনা

ভুলে গেছি শিল্পের নগদ চোখ
ভুলে গেছি কালের নোলক…
এভাবেই একদিন ভুলে যাবো সব
ভুলে যাবো..
তোমার আমার যতো কলরব!!

পথের উপর পড়ে থাকুক পথ
আঁচলে বাঁধো এ জন্মের শপথ
তবুও ভালো থাকো রটনা
যদিও যা ঘটে সব নয় ঘটনা!

ভালো থাকো কুহেলিকা ভোর
যে সাধু সেই এখন মস্তচোর
তবুও সমুদ্র তীরে বেঁধেছি ঘর
কে জানেনা রটনা আর ঘটনার মাঝে
ফারাক কেবল দুঃখের বালুচর!

ঋতু বদলের ডাক

ঋতুর বদল চলছে এখন
সজাগ থাকা চাই
জ্ঞানী-গুণী সবলোকে কয়
সাবধানের মার নাই!

এই সময়ে রোগ-বালাই
হাওয়ায় চড়ে আসে
ছেলে-বুড়ো সবাই মিলে
খক খকিয়ে কাশে!

সর্দি-জ্বরে আপন করে
ঘরের পরে ঘর
এই সময়ে উদাস থাকে
মনের বালুচর।।

তাইতো বলি এই সময়ে
শিশুর খেয়াল রাখো
শীত-গরম বুঝে তবেই
শরীরটি তার ঢাকো।।

কুটুম পাখি ডাকে

গ্রামের বাড়ি বাড়ি নয়
দোয়েল পাখির গান
শ্যামল শোভা, পুকুর ডোবা
খোঁপায় গোঁজা চাঁন।

ঝরা পাতার মর্মরেতে
কুটুম পাখি ডাকে
সেই ডাকেতে খোকাখুকু
ঘুমের স্বপ্ন আঁকে।

সেই স্বপ্নে মাখা থাকে
মেঘের ভালোবাসা
সবুজ ধানে কৃষক হাসে
জুড়ায় সবার আশা।
—————————————

ছড়াকারঃ সহযোগী অধ্যাপক, আনন্দ মোহন কলেজ, ময়মনসিংহ।

তৃতীয় লিংগের জয়

তৃতীয় লিংগের জয়ে…
একশো এগারোটি শ্বেতপদ্মের অভিনন্দন!

যদিও আমার খুব বেশি লিংগ জ্ঞান নেই
তবুও এতোটুকু বুঝতে পারছি…
পুংলিঙ্গের কদর কমেছে
স্ত্রীলিঙ্গের কদরও কমেছে
তৃতীয় লিংগের কদর বেড়েছে!

এতে আমাদের তেমন কিছু হয়নি ঠিক
কেবল সমাজ ব্যবস্থার চোখে নগদ আঙুল ঢুকেছে
এখন তারা বিবাহ-সাদীর অধিকার যেমন চাইতে পারে
তেমনি আরও অধিকার চাইতে পারে
তখন কী হবে…….?

কবিতায় প্রশ্ন করা অভদ্রতা বটে
তবুও নিরুপায় হয়েই জিজ্ঞেস করছি…
এরপর কোন লিংগের উত্থান হবে?

গ র ল

হাতিকে বলো জবরদস্ত
পাহাড়কে বলো অচল
চোখ থাকতেও দেখেনা যে
সে-ই কি তবে সচল?

পাখিকে বলো বিহংগ
আর পানিকে বলো তরল
তোমার কথার খোঁচার চেয়ে
বিষ কী অধিক গরল?

নদীকে যদি নারী বলো
নারীকে তবে বলবে কি?
যেমন খুশি খাল কাটো
কুমির আসলে কার কী!!

পুঁজিবাদী অভিশাপ

আগে মাঝেমাঝে একটানায় পড়তাম
এখন দু’টানা, তিনটানায় পড়ি….
বাগবিধিতে শাখের করাতের কথা যেমন আছে
তেমনি আছে দু’মুখো সাপ;
অথচ আজকে ঘন্টা ছাড়াই যেভাবে ছুটি হচ্ছে
এ সব আসলে পুঁজিবাদের জ্যান্ত অভিশাপ!

অবশ্য সবকিছুকে অভিশাপ বলে উড়িয়ে
দেওয়ার মতো মহাজ্ঞানীও আমি নই;
আমি চাই ছাত্র, শিক্ষক সবার হাতে কেবল
থাকুক
খাতা, কলম, বই আর বই…!!

ডিকশনারি ঘেঁটে শাপ, অভিশাপ এবং সাপ শব্দত্রয়ীকে
কেটে বাদ দেওয়া হউক
যেমন করে আমরা দারিদ্র্য জয় করেছি
যেমন করে আমরা মহাকাশ জয় করেছি
তেমন করেই পুঁজিবাদী এসব অভিশাপও জয় হউক!!

সে আসে ধীরে

তবুও সে আসে ধীরে…
বর্ণমালা থেকে শব্দের জন্মদিন পালন করতে আসে
শব্দাবলী থেকে বাক্যের শ্রাদ্ধ পালন করতে আসে…
তবুও সে আসে
তবুও মর্ত্যের ছায়া শরীরের মতো এখনও ভালোবাসে!

আমিও কাকের মতো মহান কবি
আমিও মন গলে গলে মহাশয়
আমারও আছে ভালোবাসা বিক্রি করার মতো কিছু
বিষয় আশয়!

তবুও বিপন্ন প্রজাতির কিছু ভাবনাদের উৎপাত বেড়ে গেছে
ওরা সবাই আমার মতো কাক কবি হতে চায়
ঘর থেকে বালুচর
আপন থেকে পর!

আমিও নৈঋত ভেবে বিশ্বাসের উঁচু ডালে মাঁচা বানাই
সেও আসে ধীরে
আমিও বান্দা নাছোড়
তাকে খুঁজে খুঁজে হয়রান হাজারো জনতার ভীড়ে…!!

সেই ছেলেটা

অবশেষে আমারও ছড়া লেখার চেষ্টা
————————————-

সেই ছেলেটা সকালবেলা
নাস্তা খেতো ক্রিকেট খেলা।
সারাটা দিন ঘুরাঘুরি
মুখে শুধু জারিজুরি।

সেই ছেলেটা দুপুরবেলা
লাঞ্চ খেতো বাবার ঠেলা
সন্ধ্যা হলে ফিরতো বাড়ি
সাত সমুদ্দুর দিয়ে পাড়ি।

সেই ছেলেটা রাত্রিবেলা
ডিনার খেতো অবহেলা
কথায় কথায় ভেন্নাভাজা
তবুও মায়ে দিতো সাজা।

কোথাও সুখের সুমন নাই

আগে আকাশ থেকে তারাখসা দেখতাম
ধুমকেতুর লেজের ধুমধাম পতন দেখতাম
আর এখন মন থেকে তারাখসা দেখি…!

এই যেমন মাঝেমাঝে নীরবতারাও উষ্মা
প্রকাশ করে..
তারাও গতির গতরে অকারণ পিষে মরে!
তবুও….
শরতের শরীরে কাশফুলের প্রণয় দেখতে
কার না ভালো লাগে?
আমি আজকাল কচ্ছপ আর মোচ্ছব এর
কথা ভাবি
অথচ পৃথিবীর কোথাও সুখের সুমন নাই
চুনোপুঁটি বলি, আর রাঘব বোয়ালই বলি
আসলে তারা কেউ ভালো নাই…কেউ নাই!!

নীরবে-নিভৃতে

নীরবে কিছু কিছু উড়ুকথা রোজ আসে….
এদের কেউ উচ্চতায় যেমন বড়োসড় তালগাছ!
তেমনি দৈর্ঘ্য-প্রস্থেও কম যায় না
ঠিক যেনো সুশীল রাত
অথবা
সময়ের ঘাড়ে পুরোপুরি সাড়ে বারোহাত…
অথবা
বিলুপ্ত প্রজাতির কিছু স্বদেশী দারকিনি মাছ!

অথবা একটি নির্ঘুম রাত যতোটা লম্বা হয়
অপেক্ষার রেলগাড়ি ঠিক যতোটা দীর্ঘ হয়
ওরাও ঠিক ঠিক ততোটা!

তবুও…কিছু কিছু
উড়ুকথা হররোজ নীরবে, নিভৃতে আসে
এদের কেউ কেউ বৃদ্ধ রোগীর মতোন কাশে
আর কেউ বাবুইপাখির মতোন অচেনা হাসে
কখনো হাসতে হাসতে রেগে যায়
পাতার বাঁশির নাকে
তখন রাগে গজগজ করতে থাকে…!!

আমিও তখন মুখে তালা মেরে ভেতরে হাসি
কেবল সদম্ভে বলতে পারিনা
আমিও নীরবতা, নিভৃত এসব শব্দদের বড়ো
ভালোবাসি…বড্ড ভালোবাসি…!!

থাক না কিছু উচ্ছিষ্ট

আবারও সেই একই পুরনো ধাঁচের বালাই…
মৃন্ময়ী আর মৃত্তিকা কাছাকাছি; আমিও কম না,
অভব্য সময়ের চেলাচামুণ্ডা….
রতন, কেতন আর যতনের মাঝামাঝি!

তবুও হিংসুটে জল বাড়ায় বিভেদের অনল
অশরীরী ছায়া শরীর
এক-দুই-তিন প্রস্থ ঘাম
আর
কাল কেউটের বিষের মতো চামড়ার দাম..!!

আসলে ভব্য, অভব্য, ভবিতব্য কোনোটাই কারো
একার নয়; রাজ্য বলি, রাজা বলি, মার্তণ্ড বলি….
অথবা
বলি অনাগত সময়ের পদাবলী.. এসব কিছু
নেয় যার পিছু —
একদিন না একদিন সেও হয় দুশমন্ত সময়ের
চোখের বালি!!

তবুও…..
অভাব আর খুঁতখুঁতে স্বভাব দেশী কুকুরের মতো
লেজ নেড়ে নেড়ে ডাকে, আমিও খাঁটি সরিষার
তেল আর গাছপাকা বেল…. স্বর্গ, মর্ত্য খুঁজি..
চুকিয়ে দেবো সকল লেনদেন এই তামাশার পথের
বাঁকে; থাক না কিছু উচ্ছিষ্ট এই দুর্বৃত্ত নাকে!!

ঈশ্বর এসব দেখেও দেখেন না

প্রতিটি দিনই কোনো না কোনোভাবে শেষ হয়
নেমে আসে আগন্তুক রাতের স্বপ্ন অথবা দুঃস্বপ্ন
একবার সে আঁতুড় ঘর ছেড়ে রান্নাঘরে যায়
আরেকবার রান্নাঘর ছেড়ে নির্বাসিত হয় আঁতুড়
ঘরে…
তবুও বিলাসী দিন সবসময় রাতের ঘাড়ে চড়ে!!

মাঝখানে বেড়াবন্দি হয়ে আছি আমি, তুমি, সে;
বলের কাছে জলের কৈফিয়ত
আমলার কাছে মামলার কৈফিয়ত
তবুও….
কৈবর্ত পাড়ায় ঈশ্বর আছে কি নেই সেই বিতর্ক
আমাদের পিছু ছাড়েনা
সনদের জোরে কারো কারো নাগরিকত্ব বাতিল
হয়, ঈশ্বর এসব দেখেও দেখে না….!!

পিপীলিকা যেমন ইচ্ছায় হোক কিংবা অনিচ্ছায়
হোক.. মৃত্যুর স্বাদ একবার আস্বাদন করে
অতিকায় হস্তী সেও সেই একবারই মরে….
কেবল কাপুরুষ, নিন্দুক, জালিম বারবার মরে!!