জসীম উদ্দীন মুহম্মদ এর সকল পোস্ট

যে জলের কেবল শুরু আছে

পাথর গড়ানোর মতোন ভালোবাসাও গড়ায়
গড়াতে গড়াতে উড়ন্ত চিল হয়, দুরন্ত শকুনি হয়,
শকুনও হয়…
অতঃপর একটা সময় সেই গড়ানো থেমে যায়!

তখন জীবনটা গুলিবিহীন বন্দুকের নল হয়
আমাজানের মতো নখ-দন্তহীন বনের দাবানল হয়
নাটক, কবিতা, ছড়া এবং ক্ষেত্র বিশেষে খেসারি,
মশুর অথবা মুগ ডালের বড়াও হয়!

তবুও আমরা সবাই ভালোবাসা ছাড়া বাঁচিনা…
এই যেমন ধরুন পাখি ছাড়া আকাশ বাঁচেনা
এই যেমন ধরুন মাছ ছাড়া কোনো নদী বাঁচেনা
অথবা শিল্পী ছাড়া যেমন সুর বাঁচেনা তেমন…!!

অতঃপর আচম্বিত…
আবারও একদিন শখের পাথর গড়াতে শুরু করে
গড়াতে গড়াতে শেষের শুরু হয়
মানসাংকের কিম্ভুতকিমাকার জল পাহাড় হয়
যে জলের কেবল শুরু আছে, কোথাও শেষ নেই!!

একজন নজরুলের বড়ো অভাব

আমাজান পোড়ে যাচ্ছে, পোড়ে যাচ্ছে..
কোমলমতি পৃথিবীর মন
যেই গ্রহে তুমি নেই, সেই গ্রহে কার মন
হবে তোমার মতো উচাটন?

এই যে আমি রোজই দেখি রাজার হাতে
লেগে আছে প্রজার পাপ
তবুও কাপুরুষ আমি প্রতিবাদে নেই; দিই
কেবল দায়মুক্তির অভিশাপ!

এই যে নিয়মের ঘাড়ে এতো গাঢ় অনিয়ম
তবুও আমাদের দায়সারা ভাব
যেখানে চাবুকের পিঠে দুরন্ত ঘোড়া হাঁটে
সেখানে একজন নজরুলের বড়ো অভাব!

কোনোএক বিদ্রোহী কবির কথা

কিছু বিনিদ্র রাত্রির খতিয়ান পৃষ্ঠা আওড়াচ্ছিলাম
তেমন কাউকে পৃষ্ঠপোষক পাইনি….
না দেনাদার
আর না পাওনাদার!

আজ কোনো তরফ থেকেই তেমন কোনো সাড়া নেই
অবশেষে সপ্তর্ষিমণ্ডলে কিছুক্ষণ নিজেকে দেখলাম….
না সেখানেও কোনো উন্মাদনা নেই!
কেবল অনেক খান্দানী আলোকবর্ষ দূরে ঘোরাফেরা
করছে গুটিকয়েক শখের আলোকচিত্র শিল্পী,
ওরা নাকি আগে একবার মরেছিলো
কেন জানিনা, ওরা আবারও একবার মরতে চায়..!

আবারও কোনোএক শুভক্ষণে কোনোএক বিদ্রোহী
কবির ছবি আঁকতে চায়
যে ছবিতে কোনো কথা নেই
কেবল অসমসাহসিক প্রতিবাদী চেতনার চাষ আছে।

আমরা সবাই জানি, পরনারীর প্রতি আমাদের যেমন
আসক্তি আছে, তেমনি পরপুরুষের প্রতিও কম নয়!
আমরা সবকিছু পারি….
নিজেদের আখের যেমন গোছাতে পারি
তেমনি নাক, মুখ, কান, চোখ বন্ধ করে সবকিছু সহ্যও
করতে পারি
কেবল প্রতিবাদী হয়ে উঠতে পারিনা
নিজেদের দাঁতের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনা…!

কোনোএক বিদ্রোহী কবির কথা

কিছু বিনিদ্র রাত্রির খতিয়ান পৃষ্ঠা আওড়াচ্ছিলাম
তেমন কাউকে পৃষ্ঠপোষক পাইনি….
না দেনাদার
আর না পাওনাদার!

আজ কোনো তরফ থেকেই তেমন কোনো সাড়া নেই
অবশেষে সপ্তর্ষিমণ্ডলে কিছুক্ষণ নিজেকে দেখলাম….
না সেখানেও কোনো উন্মাদনা নেই!
কেবল অনেক খান্দানী আলোকবর্ষ দূরে ঘোরাফেরা
করছে গুটিকয়েক শখের আলোকচিত্র শিল্পী,
ওরা নাকি আগে একবার মরেছিলো
কেন জানিনা, ওরা আবারও একবার মরতে চায়..!

আবারও কোনোএক শুভক্ষণে কোনোএক বিদ্রোহী
কবির ছবি আঁকতে চায়
যে ছবিতে কোনো কথা নেই
কেবল অসমসাহসিক প্রতিবাদী চেতনার চাষ আছে।

আমরা সবাই জানি, পরনারীর প্রতি আমাদের যেমন
আসক্তি আছে, তেমনি পরপুরুষের প্রতিও কম নয়!
আমরা সবকিছু পারি….
নিজেদের আখের যেমন গোছাতে পারি
তেমনি নাক, মুখ, কান, চোখ বন্ধ করে সবকিছু সহ্যও
করতে পারি
কেবল প্রতিবাদী হয়ে উঠতে পারিনা
নিজেদের দাঁতের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনা…!

পোষা পাখি

কেউ কেউ কুকুর পোষে, বিড়াল পোষে…
আমিও কম যাইনা
আমি একটি বেদনার চারাগাছ পুষি!
ওতেই আমি পানি দিই, জল দিই
ওর মুখে দানাদার খাবারও তুলে দিই
যে যাই বলুক, ওতেই আমি বেশ খুশি!

কেউ কেউ আমাকে নেংটি ইঁদুর ভাবে
আর কেউ ভাবে সাত সমুদ্রের ফেনা
আমি এতোসব ভাবাভাবির ধারধারিনা
আমি গর্ব করেই বলতে পারি..
আমার আর কিছু থাকুক, না থাকুক;
আছে পোষা পাখির মতো কিছু বেদনা!

সুরমা রঙের শব্দাবলী

অনেকদিন চোখে সুরমা লাগাইনি…
এতোদিনে আলপথ হয়েছে গলিপথ, গলিপথ হয়েছে রাজপথ….
খাল হয়েছে আকাল
বিল হয়েছে নাকাল
তেমনি নদী হয়েছে নারী, নারীও হয়েছে বাহাদুরি!

কেবল আমি এখনও জল পাহাড়ের মূষিক ছানা
রাত হলে দিনকানা, দিন হলে রাতকানা!

তবুও অবশ্যম্ভাবী কিছু ঘটনা ঘটেই চলেছে
আসমুদ্রহিমাচল….
সমতট, হরিকেল, গৌড়,
কেবল আমার মতো কিছু দাম্ভিক জেনেও জানেনা
তারও আছে একটি সুনির্দিষ্ট, সুনিশ্চিত দৌড়!

অতিথি

অর্ধাংগিনী রাাতের প্রায় পৌনে একটা বাজে…..
আমার দিন এখনও শেষ হয়নি!
শেষ হয়নি আমার ছাপোষা দৈনন্দিন কর্মঘন্টা….!
অবশ্য এতে…… কারো কিছু যায় আসেনা
না রাত
আর না দিনটা!

তবুও……
মিনমিন করে রাতের বাঁশি বেজেই চলেছে
দশ দিগন্ত জুড়ে শুরু হয়েছে ভোরের আয়োজন
পৃথিবী কি জানে,
আগামীকাল তার কার কার প্রয়োজন?

তবুও চলে যায় প্রতিদিনের সব প্রহরী প্রহর……
কেউ লিখে রাখে না আগামীর দেনা
যে গাছের ছায়ায়.. সে কেবল এতোটুকু জিরিয়ে
নিয়েছে…
সেই গাছ নাকি তার বাপ-দাদা-পরদাদার কেনা?

উড়ন্ত ধূলিকণার গান

চারাগাছটি আজই রোপণ করেছিলাম
তখন সময় যেমন ছিলোনা, তেমনি অসময়ও ছিলোনা
তবুও চারাগাছটি যেভাবে রোপিত হয়েছিলো
সেভাবেই তেলে-জলে-বলে মিশে একাকার হয়ে গেলো!

ফুল, পাখি, নদী কাউকে বুঝানো যায়নি …
কবিতা আমায় আর আগের মতো ভালোবাসেনা
এই যে শরৎ উঠোনে এসে দাঁড়কাকের মতোন দাঁড়িয়ে আছে
তবুও শব্দদের কেউ চারাগাছের জন্য অপেক্ষ করেনা!

ওরা সবাই চামড়ার আড়তদার আর ট্যানারি পল্লীর
আশেপাশে এখনও কুকুরের মতোন ঘুরঘুর করে!
নীরব আস্ফালন করে…..
এই এতো যে ঘুরিঘুরি, শব্দের হাটে চোরাচুরি……..
তবুও তাদের, ওদের, আমাদের কারো টনক নড়েনা!

উড়ন্ত ধূলিকণার মতোন
আজকাল আমরা চোখ থাকতেও অনেক কিছু দেখিনা
মুখ থাকতেও অনেক কিছু বলিনা
বোধ থাকতেও সোজাপথে চলিনা………..!!

তবুও আমি আমাদের ভাগ্যবান বলি

হিসাবের কড়িকাঠ একটু বেসামাল হলেই…
যখন জলে আগুন জ্বলে; তখন
ক্ষুধার্ত নেকড়ের মতো কিছুকিছু শব্দও টিপ্পনীর
মতোন করে কথা বলে!

আলহামদুলিল্লাহ…..
আমি ছাতিম গাছের তলায় যেদিন প্রথম
পুরোদস্তুর একটা রাজপথ ঘুমাতে দেখেছিলাম
পাতাঝরার শব্দে শেষবার যেদিন শুনেছিলাম
কবি থেকে রাজপুত্র হয়ে উঠার সারস গল্প;
আমার জানা মতে,
সেদিনের পর আর কোনো চাঁদ পোয়াতি হয়নি!

আর আজকাল হিসাব ছাড়াই আমরা চামড়ার
গায়ে বিবস্র সভ্যতার সীলমোহর এঁকে দিতে পারি
জলের ভেতরে জলের কবর কোদাই করতে পারি
রাজপথ থেকে মেঠোপথ…… এদের সবাইকে
একই সারিতে, একই বৈঠকে গণকবর দিতে পারি.!!

আমি জানি, আমরা সবাই আমড়া কাঠের ঢেঁকি
তবুও আমি আমাদের বড়ো ভাগ্যবান বলি…..
কারণ আমরা সবকিছু ভুলতে যেমন শিখে গেছি
তেমনি সবকিছু সহ্য করতেও শিখে গেছি…!!

ব্যাধি

শরীরের ব্যাধি আর মনের ব্যাধি কোনটাকে
দুরারোগ্য বলি?
তবুও আজানুলম্বিত কিছু আজন্ম ভাবনাকে
ছাইচাপা দিয়েই পথ চলি!

কেউ কেউ গৃহযুদ্ধ করতে করতে গৃহীত হয়
আর কেউ আরাকনীদের মতো স্বভূমে নিগৃহীত হয়!
তবুও ঢোল আর টোলপড়া গালের কথা ভাবি
এখনও জানিনা কে নিয়ে গেলো আমার
সিন্দুকের গোপন চাবি?
তবুও…….
কি মেটাতে পেরেছি সীসা ঢালা সময়ের দাবি?

তবুও……উড়ন্ত সসারে বিদঘুটে হাওয়া কাটি
সবাই জানে, কেবল আমি জানিনা
জামানা এখন গজব, আজব, গুজব আর রুটি.!!

বন্ধু

দুদিন আগেও ব্রহ্মপুত্রের চোখে উত্তাপ দেখেছি
লেলিহান আগুনের শিখার মতোন
অথচ আজ আর এসবের কিছুই নেই!
যেমন মৃতছিলো ব্রহ্মপুত্রের সরল গৈরিক বুক
দুমুঠো অন্নজলের অভাবে এখন সে হয়েছে সেই
কিছু নেতিয়ে পড়া ঘাস ছাড়া আর কিছুই নেই!!

আমরা যেনো কেমন হয়েছি রাত্রির মতো কালো
এরচেয়ে ব্রহ্মপুত্রের দু’পাড়ের বৃক্ষগুলো ঢের ভালো
তাদের অন্তরে আছে ভালোবাসার সুগভীর মুল
আমরা কেবল সবাই ছিঁড়তে চাই, অন্যজনের চুল!

তবুও গদ্যে-পদ্যে আমাদের সবার ভালো থাকা চাই
নদীর মতো, বৃক্ষের মতোন বন্ধু কোথায় আছে ভাই?

কুলুঙ্গি

কুলুঙ্গি

মাঝে মাঝে গভীরতার কথা ভাবি
অন্ধকারের গভীরতা
আলোর গভীরতা
জলের গভীরতা
জল এবং জংগলের কাব্যের গভীরতা
মনের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা
হিংসা-বিদ্বেষের গভীরতা…….!

কোথাও কোনো কূলকিনারা নেই
কুলুঙ্গির যেমন চারপাশে আলো
কেবল নিচের দিকে অন্ধকার…..
তেমনি আমি আজও বুঝতে পারিনি
কে আমার… আমিই বা কার?

একটি দুর্গন্ধযুক্ত কোবতে

একটি দুর্গন্ধযুক্ত কোবতে

ফুল থেকে যখন আচম্বিত দুর্গন্ধ বেরোয়
তখন কবিতায় আর বলার মতো কিছুই থাকেনা,
ইদানিং আমি দূর আর দূরের পার্থক্যও বুঝিনা!

সব গাছে যেমন কাঁটা থাকে না
তেমনি সব আকাশেও মেঘ থাকেনা
তবুও অঞ্জলি ভর্তি করে সবাই চায় গীতাঞ্জলি
দিন শেষে ফুলের মতো মুখ থেকেও যখন
দুর্গন্ধ বেরোয়….
তখন মনে হয় সব কবিতারেও দিই জলাঞ্জলি!

দায়বদ্ধতা অনেকটা জলাবদ্ধতার মতো…দুটোর
একটি হৃদয়ের গভীর থেকে আসে
আরেকটি মৃত্তিকার….
এজগত আসলেই হিংসা, বিদ্বেষ আর ঘৃণার
এখানে কি কোথাও স্থান নেই এতোটুকু ভালোবাসার?

আপোষহীন

আপোষহীন

আবারও আমার দু’হাত কবিতার হাত হোক
আমার পা মা পিঁপড়েদের মতো পিলপিল হাঁটুক
শুদ্ধ আর অশুদ্ধের মাঝে কোনো শব্দ নেই
শুভ আর অশুভের মাঝেও তিলার্ধ বর্ণ নেই
সত্য আর মিথ্যার মাঝামাঝিও কোনোকিছু নেই!

যেমন পরিচ্ছন্ন আকাশ আর পৃথিবীর মাঝখানে
আর কিছু নেই
তেমনি নৈতিক শুদ্ধাচারের কোনো বিকল্প নেই!