জসীম উদ্দীন মুহম্মদ এর সকল পোস্ট

আমার মুখে লাগাম চাই

একটি সার্থক কবিতা কীভাবে লিখবো…?
যখন নগদ দাম দিয়ে বেদনা কিনি
বেদনা কিনতে হয়!

এরচেয়ে বরং
কাঠ-খড়ি কুঁড়িয়ে নেওয়া ঢের ভালো
কুঁকড়ে যাওয়া জীবন যদি কিছুটা উষ্ণতা পায়!
শিঁকের চূড়ায় উঠা পারদ নেমে আসতে পারে
আদুরী বিড়ালের তুলতুলে গায়!

প্রচ্ছদ প্রজাপতি মূর্ত হোক কিংবা বিমূর্ত
যে গর্তে পড়েছে, সেই বুঝে কোনটা গর্ত
আর কোনটা মর্ত্য!
আমি বেদনা কিনতে কিনতে কোটিপতি
হতে চাই
বাজারের লাগাম থাকুক আর নাই থাকুক
আমি আমার মুখে লাগাম চাই!!

সবুজ ছাতা

জীবনের কথা ভাবলেই লবণের কথারা আসে
তামাদি হওয়া কিছু শব্দও অলক্ষে থেকে মুক হাসে
এই জাতীয় হাসিকে আমি বিগাইড়া হাসি বলি…
তবুও হাত এবং অজুহাত মেপে মেপে পথ চলি!!

মহামহিম রাজাধিরাজ মুচকি মুচকি হাসেন
তবুও আমি জানি তিনি আমায় বড্ড ভালোবাসেন
দুই নাসারন্ধ্রের মাঝখানে সুউচ্চ পাহাড় ঘুমায়
তবুও আমার কাংখিত কিছু শব্দাবলী এখন কোমায়!

তবুও আমি চাই আশায় আর ভালোবাসায়…
মহাসমুদ্র বেঁচে থাক
ভালোবাসার অবিবারিত সবুজ ছাতা সবার মাথার
উপরে সবসময় শোভা পাক।।

দু’একটি বুঁদবুঁদ এর গল্প

অনেক ভেঙেচুরে দেখেছি…
জীবন বলতে বলার মতোন তেমন কিছুই নেই!
জন্মের সময় যেমন উয়া উয়া কেঁদেছিলাম
এখনও তেমনি আহ উহু করেই চলেছি…!!

এসবের মাঝখানে কেবল অদল-বদল হয়েছে
চামড়ার ভাঁজ, চুলের রঙ, মুখের গরম;
হাফপ্যান্ট হয়েছে ফুলপ্যান্ট; টিশার্ট, শার্ট এরাও
হয়েছে ছোট থেকে বড়!
জীবন বলতে এর বেশিকিছু আছে কি?

বড়জোর দোলনাটা দুলতে দুলতে কবর পর্যন্ত যাবে
এই এক চিমটি সময়ের জন্য এতো আয়োজন!
আমাদের সবার কাজের কোনো শেষ নেই
আমাদের ব্যস্ততার, ত্রস্ততার সীমা-পরিসীমা নেই!

অথচ আমি পৃথিবীর সর্বত্র তন্নতন্ন করে খুঁজে দেখেছি…
এখানে কোথাও আমাদের জীবন নেই!
যা আছে তা বড়জোর মৃত্তিকা ভেদ করে উপরের
দিকে ছুটে আসা দু’একটা বুঁদবুঁদ মাত্র!

চেতনাহীন কবিতা ও একটি জীবন্ত লাশ!

জন্ম আর মৃত্যু সব সময় মুখিয়ে থাকে
সে ব্রহ্মপুত্রের নাদান চর হোক কিংবা রাজপ্রাসাদ!
কালেভদ্রে কেউ কেউ দ্বিগুণ হয় জন্মসাল
আর কেউ জন্মের আগেই কুড়িয়ে নেয় মহাকাল!

প্রতিটি জন্মের মতো কবিতারও জন্ম হয়
প্রসব বেদনায় শিরোনাম খুঁজে নেয় পাগল পাঠক
শব্দ ও ভাবের কারাগারে যখন হয় সে আটক!
অতঃপর আসে কবিতার মৃত্যু স্বাদ…
পাঠকহীন কবিতাগুলোও তেমনি বারবার মরে
পড়ে থাকে যুদ্ধের মাঠে চরম বিস্বাদ!

যেভাবে লড়াইয়ের ময়দানে মরে পড়ে থাকে
পলায়নপর আহত কাপুরুষ সৈনিক,
যেভাবে অলসের প্রতিটি ক্ষণের মৃদু মৃত্যু হয়
সেভাবেই চেতনাহীন কবিও জিয়ন্তে লাশ হয়!

সমস্ত দায়ভার আমি নেবো

ব্যস্ততা এখন চড়ুইভাতি —
কিছু কিছু অভিজ্ঞান আর কিছু অভিজ্ঞতা
আমি ভালো সময়ে যেমন থাকি
এখনও তেমনি ভালো আছি!

বিষণ্ন বাতাস যেমন কারো কাছে অভিযোগ করে না
বরফ যেমন গলে গলে জলের চেলা হয়
ছাই যেমন ভাংগা কুলার সাথে কথা কয়
আমারও তেমনি নিজের সাথে নিজের দ্বৈরথ হয়!

আমি এখন সমাপ্তি আর পরিসমাপ্তির আকাশ খুঁজি
কিছু নগদ ভালোবাসা খুঁজি
সমস্ত প্রাপ্তি তোমাদের দেবো
অপ্রাপ্তির সমস্ত দায়ভার আমি নেবো!

গড়পড়তা জীবন

উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা আর কতো—?
এবার একটু শান্তি আর প্রশান্তির মুখ চাই
শব্দের আঁচলে হোক
প্রকৃতির নীলাচলে হোক
তবুও দুকড়ির মুখে টুকিটাকি স্বর্গ চাই
হিসাবের খাতায় লড়াই আর বড়াইয়ের অবসান চাই!

গড়পড়তা জীবন যেভাবে চলছে চলুক
আমার কোনো দেন -দরবার নাই
কাঁহাতক আমার এসবে কিছু যায় আসে না
আমি কেবল চাই —-
আমার মাথার উপরে গাছের ছায়া থাকুক
গাছের মাথার উপরে আকাশের ছায়া থাকুক!

এরপর আমি, গাছ আর আকাশ পাঁতিহাঁস
অথবা পানকৌড়ি হই
জল আর জলের তলার বিনে সুতোর মালা হই!!

দাগ

কিছু কথা যাক বাতাসে ওড়ে
কিছু কথা থাকুক বালিশের নিচে চাপা পড়ে
আর কিছু কথা ঢাকা পড়ে থাকুক
অন্য কথার ভিড়ে!

যেভাবে আজকাল জোড়া কবুতর ওড়ে
যেভাবে মক্ষিকা ফুলের পেছনে ঘুরে
যেভাবে ভালো মানুষ গুলো গুমরে মরে
ঠিক ঠিক সেভাবে…!!

যেভাবে লাগামের পেছনে ঘোড়া ছুটে
যেভাবে ভাগাড়ে কবিতার মোহ টুটে
যেভাবে বিড়ালের গলায় পদ্মফুল জুটে
ঠিক ঠিক সেভাবে…!!

ভেবো না, এই মাঘই শেষ মাঘ
মনে রেখো, কখনো মুছে না কষ্টের দাগ!!

একটি মাটির গাছ

আমার মাটির গাছে ঠোকা দিলে কেবল পাপ
ঝরে…. পড়ে
বৃক্ষ থেকে যেভাবে মরা, আধমরা পাতা ঝরে
আমার মাটির গাছ থেকেও তেমনি পাপ ঝরে!

পাপ ঝরতে ঝরতে উইপোকার ঢিবি হয়
একদিন ঢিবি বড় হতে হতে মূষিক পর্বত হয়
অতঃপর
আমি সে পাহাড় জলে সাঁতরাতে থাকি
পানকৌড়ির মতো বড় অদ্ভুত সে ডুবসাঁতার!

আমি জানিনা, এরপর কী হবে?
তবুও আমি আমর দৃষ্টিসীমা অবধি চেয়ে থাকি
আমি চেয়ে থাকি আমার মাটির গাছের দিকে!
ওরা কেবলই বড় হয়!

আমি আকাশের দিকে করজোরে তাকাই…..
মাটির গাছের পাপ মুক্তির গান গাই
ব্যাঙাচির মতো লাফাতে লাফাতে ওরা যদি
আচমকা আমার মাটির গাছ ছেড়ে যায়!!

এতোটা ভাবিনি….

এতোটা ভাবিনি…..
দিন রাত হবে, রাত দিন হবে
অসাড় পরে থাকবে হেমন্তের বাতিঘর!

কাঁচুলিও মাদুলি পরবে
পুকুরেও নুপুর খেলা করবে
তুমিও একদিন হবে আমার পর!

এতোটা ভাবিনি…..
নুনের ছিঁটা গোনবে পথ
ঘুম ভেঙে কুসুম দেখবে ভেঙেছে শপথ!

জলেও জলাঞ্জলি হবে
শেওড়া পাতায় কবিতা লেখা হবে
চাওয়া হবেনা কবির কোনো মতামত…!!

এরপর আর কী থাকে বাকি?

কিছু বেহায়া ইচ্ছা বারবার ফিরে ফির আসে
আঁতুর ঘর……
তুমি যতোই আমাকে ধুরধুর করো, আমি কিন্তু
একবারও বলিনি তুমি আমার পর!.

আমি জানি, জল বেঁধে রাখা যায়
এও জানি, মন বেঁধে রাখা কতোটা ভীষণ দায়!

তবুও আমার এসব কিছুর কোন পরোয়া নাই
খতিয়ান বই … রেওয়ামিল
ওদেরও আমি দিতে শিখেছি গোঁজামিল!

বলতে পারো, এরপর আর কী থাকে বাকি?
আমি জানি, পৃথিবীর সব সাগর যে মোহনায় মিলেছে সেই হলো তোমার দুটি আঁখি!

দু’দণ্ড ছুটি নাও হে বিষণ্নতা

বিষণ্নতাকে কত বলেছি……এবার ছুটি নাও,
এবার ছুটি নাও;
দেখো ওইখানে সাদা সাদা বরফের পাহাড়
পাহাড়ের উপর পাহাড় জমে আছে বেদনার!

আরো বলতে বাকি রাখিনি
কুবের মাঝির নৌকাটা অনেকদিন ধরে একা
কেউ জানে না তার নাম এখন আল্লারাখা!

আরও বলতে চেয়েছিলাম….. দেখে এসো
টিপু সুলতানের তরবারিটা কেমন জং ধরা!
যে কলমের কালি নেই
ঠিক যেনো তার মতো মনমরা!

আসলে কে শোনে কার কথা? অন্যের বেলায়
সবাই দিতে পারে স্নেহ, শর্করা, আশালতা;
তবুও তুমি দু’দণ্ড ছুটি নাও হে প্রিয়তমা বিষণ্নতা!!

সুনয়না, ভেবো না

মাঝিহীন নৌকার মতো ভেসে চলেছি
বাতাস যেদিকে ভাসিয়ে নেয়, আমিও সেদিকে ভাসি
গুজবের দশ পাখা দেখি আর মনে মনে হাসি!

পেঁয়াজের ঝাঁঝ নিয়ে কিছু লিখিনি
আশাকরি লবণ-টবণ নিয়েও লিখতে হবে না
চোখ থাকতে যে অন্ধ দেখে না, সে ভাবে
দুনিয়ার সব মানুষ আস্তা কানা!

সুনয়না,
কবিতা লেখা ছেড়ে দিয়েছি বলে ভেবো না
ভুলে গেছি বর্ণমালা
এবার আসুক গুজব ছড়াতে
আমিও ঠিক ঠিক দেখে নেবো সে কোন শালা!!

এসো…….

অনেক করেছি সমাহিত জলের বড়াই
অনেক করেছি নিয়তির সাথে লড়াই
আর না… আর না!

এবার এসো….
সেই জলে বড় হই, নত হই, আনত হই
অশুদ্ধাচার থেকে নির্বিবাদ শুচি হই
এসো……….ভালোবাসার দাসদাসী হই!

সমূলে উপড়ে দিই নিজেকে
উগড়ে দিই উগ্রপন্থী সব উচ্ছিষ্ট, পাকস্থলী
খালি বমি হোক… বমি!

এসো……
নিজেকে শোধরাতে শোধরাতে সাঁতার কাটি
কাল, মহাকাল
দেখো, আর কোনোদিন দুর্ভিক্ষ হবে না
হবে না ভালোবাসার আকাল!!

আমিও তেমনি থাকি

এখন আর কারো সাথে অভিমান করি না
পাথর আর জল যেভাবে মিশে থাকে
আমিও তেমনি থাকি
আমিও তেমনি থাকার অনন্তর চেষ্টা করি!

দিন শেষে যখন আকাশে কিছু নক্ষত্র মিটিমিটি করে
আমি ওদের কিছু কথা বলি
ওরা হাঁটলে আমি হাঁটতে থাকি
ওরা কাঁদলে আমিও কাঁদতে থাকি
ওরা হাসলে আমিও হাসতে থাকি,!

আবার বেদিল দিন যখন রাত্রিকে হটিয়ে দেয়
তখন আমি আসমুদ্রহিমাচলের কথা ভাবি
তখন আমি আসন্ন শীতে জবুথবু থাকার কথা ভাবি!!

তাঁর আসার আশায়

তাঁর আসার আশায় শব্দযট তৈরি হয়,
শত শত আলোকবর্ষ;
হাজারো ফিঙে সজনে ডালে করে হর্ষ…..
তবুও সে আসেনা যাদুর বাঁশি
আমি কচুরিপানার মতো হৃদয়ের উত্তাল
সমুদ্রে ভাসি….
তবুও আমি যে তাকে বড়ো ভালোবাসি!

সে থাকে দূরদেশ
তার আছে বহুরূপী ছদ্মবেশ….
আকাংখা, আসক্তি, যোগ্যতা;
আমার কোনোকিছু নেই পরাজিত সৈনিক
কেউ কিনে না, কিনতে চায় না এমনি দৈনিক!

তবুও রাত্রি যেমন কেটে যায় সংগোপন
তেমনি নিশিও বসে থাকে না….
ঘাসের মতোন আমিও অপেক্ষায় থাকি
শিশিরের মতো কেউ আমাকেও করুক আপন!