জসীম উদ্দীন মুহম্মদ এর সকল পোস্ট

কবিতায় রুপক শব্দের ব্যবহার এবং বাংলা সাহিত্যের পূর্ণতা প্রসংগ

কবিতায় রুপক শব্দের ব্যবহার এবং বাংলা সাহিত্যের পূর্ণতা প্রসংগ:

একটি কবিতায় কয়টি রুপক শব্দ ব্যবহার করা যাবে?

খুব কঠিন প্রশ্ন। তবুও উত্তর দেওয়ার বৃথা চেষ্টা করছি।
১। একটি কবিতায় কয়টি রুপক শব্দ ব্যবহার করা যেতে পারে? এর কি জবাব আছে? আমার ধারণা নেই। কেননা এই বিষয়টি সম্পূর্ণ রুপে নির্ভর করে কবিতাটির চাহিদার উপর। কবিতাকে কিভাবে শৈল্পিক করবেন, পাঠকের হৃদয়ে নিয়ে যাবেন — —- এটা নিতান্ত ই কবির নিজস্ব সাধনার ব্যাপার। ধরা বাঁধা কিছু নিয়মের গণ্ডিতে কবিতা আবদ্ধ নয়। হতেও পারে না কোনোদিন।।

সিনিয়র কবি-সাহিত্যিকগণ কি বাংলা সাহিত্যের পূর্ণতা দিয়ে গেছেন?

২। সিনিয়র কবিরা কি সব লিখে গেছেন নাকি এখনো নতুন কিছু বিষয় আছে? আমার তো মনে হয় তাঁরা যা লিখে গেছেন, তা সাগর থেকে এক বিন্দু জল তুলে আনার মতো। সাগর থেকে একবিন্দু জল তুলে নিলে সাগরে কি কোনো ক্ষতি হয়? হয় না। বাংলা সাহিত্য কোনো এক ঘটি জল নয়। কিয়ামত পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যের চর্চা চলবে। চলতে থাকবে নতুন নতুন সৃষ্টি।।

বাংলা সাহিত্য একটি অপার সাগরের মতো। এর কোনো কুল নেই। কিনারা নেই। একজনের লেখার ভাব আরেকজনের সাথে মিলেও যেতে পারে। কিন্তু প্রকাশ ভঙ্গি কি মেলে যায়? মিলে যাবে কোনোদিন? যদি মিলে যায়, তাহলে তা সাহিত্য নয়। সাহিত্যের নামে নকলবাজি। ভাওতাবাজি। এসব নকলনবীশদের লেখা টিকবে না। মহাকালের গর্ভে হারিয়ে যাবে।

প্রশ্নটি খুবই চমৎকার। আচ্ছা আকাশের কি কোনো সীমা-পরিসীমা আছে? আকাশকে কি ছাদ দিয়ে ঢেকে দেওয়া সম্ভব? নাকি বেড়া দিয়ে এর চারপাশে প্রাচীর তৈরি করা যাবে? আমার মনে হয়, কোনোটাই যাবে না। তাহলে কিভাবে সাহিত্য ভাণ্ডার পূর্ণতা পেতে পারে? আমি বিশ্বাস করি, সাহিত্য ভাণ্ডার তথা সাহিত্যের সকল শাখা এখনও অপূর্ণ, চিরকালই অপর্ণ থেকে যাবে। তবে তা দিন দিন সমৃদ্ধ হবে। কিন্তু কোনোদিনই পূর্ণতা পাবে না। আচ্ছা পূর্ণতার পরে কি আর কিছু আছে? যদি না থাকে তাহলে তো পূর্ণতা প্রাপ্তির পর সাহিত্য চর্চা থেমে যাওয়ার কথা! কিন্তু সাহিত্য চর্চা কি কোনোদিন থেমে যাবে? অবশ্যই না।

মানুষের কথাই ধরা যাক। আমরা কেউ কি পরিপূর্ণ মানুষ। পরিপূর্ণ মানুষ হওয়া কি সম্ভব? আমি নিজেকে সিকি মানুষ বলি। মাত্র চার ভাগের এক ভাগ মানুষ!! বাকি তিন ভাগ?????

ঋণপত্র

ঋণপত্র

খেলাপি ঋণের কথাই বলি। মূর্খামির হয়ত সীমা-পরিসীমা আছে
কিন্তু খেলাপি ঋণের কোনো সীমাও নেই। পরিসীমাও নেই।
যাদের কিছু নেই, তারা ঋণ পায় না।
যাদের কিছু আছে, তাদের ঋণের কোনো অভাব হয় না।
বিলাসী পণ্যের মতো তাদের চাহিদা কোনোদিন ফুরোয় না।
দেশের প্রতি, দশের প্রতি তাদের ভালোবাসা শেষ হয় না!!

কমলার মা এখন জেলে আছে। পেটের দায়ে গিয়েছিলো এন জি ও ‘র কাছে।
ঋণপত্রে টিপসই দিয়েছিলো। শতো শতো কিস্তি খেয়ে না খেয়ে পরিশোধ করেছিলো।
গেলবারের বানের জলের মতো কিস্তি শুধুই বাড়ে…..
তবুও আর শেষ হয় না।
এই ভালোবাসার নাম কী কমলার মা জানে না। জানতে চায়ও না।

সারাদেশে কমলার মায়ের কোনো অভাব নেই। তাদের দুর্গতিরও কিনারা নেই।
তাদের পক্ষে দাঁড়াবার কেউ নেই।
আমি জানি, কলম হারিয়ে গেলেই বিদ্যা হারিয়ে যায় না।
বই চুরি হয়ে গেলেই জ্ঞান চুরি হয়ে যায় না।
এতো কিছুর জানার পরেও খেলাপি ঋণের খবর কেউ নেয় না।
নিতে সাহসে কুলোয় না।
ভালোবাসার ঋণ পুরাতন হোক কিংবা নতুন কোনোদিন শেষ হয় না।

বিনষ্ট পত্র

বিনষ্ট পত্র

একটা সময় সামাজিক মূল্যবোধের পাহাড় ছিলো। আলোকিত আকাশ ছিলো।
অপকর্ম গোপনে হতো। এখন প্রকাশ্যে হয়। সবাই দেখে।
কিন্তু কেউ দেখে না। সবার চোখ ছিলো। এখন কারো চোখ নেই।
সবার মুখ আছে। সেই মুখে ভয়ের তালা ঝুলন্ত আছে।

বেশিদিন পূর্বে নয় ছোটরা বড়োদের সম্মান দিতো।
বড়োরাও ছোটদের প্রতিদানে আদর দিতো। ভালোবাসা দিতো।
এখন কেউ ছোট নেই। সবাই বড়ো আছে।
কেউ কারো কথা মানে না। উপদেশ শোনে না। সবাই জ্ঞানী আছে।
মূল্যবোধের সোনার বাটিটি সবাই বিনষ্ট আছে।

সবাই জানে ছাত্র-শিক্ষক কেমন সম্পর্ক ছিলো। একজন পিতা ছিলো।
আরেকজন সন্তান ছিলো।
এখন পিতা যেমন মারা গেছে। তেমনি সন্তান ও মারা গেছে।
শিক্ষক ছাত্রকে দেখলে বুকে বল পেতো। এখন ভয় পায়।
নকল ধরার ভয় আছে। পরীক্ষার হলে টাইম পানিশমেন্ট দিলেও ভয় আছে।
ছাত্রদের হাত অনেক বড়ো আছে। হাতে হাতিয়ার আছে।

মুদ্রার উল্টো পিঠ ও আছে।
ছাত্র শিক্ষককে দেখলে আস্থা পেতো। এখন অনাস্থা পায়।
প্রাইভেট, কোচিং না পড়ার জন্য নাম্বার কমে যাওয়ার আশংকা আছে।
তিরস্কারের চাবুক আছে। শ্যেনদৃষ্টির ভয় আছে।

সারাদেশে এমনি হাজার বিনষ্ট পত্র আছে। ক্ষয়ে যাওয়ার গল্প আছে!!

নষ্টপত্র

নষ্টপত্র

মাদকে সারাদেশ ছেয়ে গেছে। আগে শহরে ছিলো। এখন গ্রামেও আছে।
কেউ নষ্ট হচ্ছে না!
আগে যুবসমাজ মাদকাসক্ত ছিলো। এখন কিশোর আছে। শিশুও আছে।
মাদকাসক্তরা যেমন ভালো আছে। আমরাও তেমন ভালো আছি।
মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলো আরো বেশি ভালো আছে!
মাদক যারা নিয়ন্ত্রণ করার কথা তারা কেমন আছে? আমি জানি না।
দেশের সচেতন -অসচেতন মহল সবাই জানে!!

আগে পর্নোগ্রাফি দেখা কঠিন ছিলো। এখন সহজ হয়েছে।
আগে সন্ধ্যার পর পার্কে গেলে দেখা যেতো। এখন দিনেও দেখা যায়।
আগে সিনেমা হলে গিয়ে দেখতে হতো। এখন মোবাইলে দেখা যায়।
নেটে ছেড়ে দিয়ে বেশ ব্যবসাপাতিও করা যায়।

আগে প্রেম টেম করা কঠিন ছিলো। সামাজিক দেয়াল ছিলো।
এখনও সমাজ তেলাপোকার মতো টিকে আছে। দেয়াল নেই।
আগে চিঠি লিখে প্রেম নিবেদন করা হতো। চিঠিতে হৃদয় থাকতো।
অনেক ফেসবুক প্রেম হয়। মোবাইল প্রেম হয়। ম্যাসেঞ্জার প্রেম হয়।
আগে বিয়ের পরে শরীর হতো। এখন প্রেমের পরে হয়। আগেও হয়।

তবুও সবাই ভালো আছে!! পবিত্র আছে!!

প্রমাণ পত্র

প্রমাণ পত্র

উঠতি ছেলেটাকে দিনে দুপুরে পিটিয়ে জান্নাতবাসী করা হলো।
চারপাশে অনেকেই দাঁড়িয়েছিলো।
মামলা করা হলো। কোনো প্রত্যক্ষ সাক্ষী পাওয়া গেলো না।
আদালত প্রমাণ পত্রের অভাবে সবাইকে খালাস করে দিলো।
বায়স্কোপের মতো কী চমতকার দেখা গেলো!

মহিলা কলিগ অভিযোগ করেছে, সহকর্মী তাকে একা পেয়ে ধর্ষণ করেছে।
বড়োকর্তা বললেন, তোমার কথা ঠিক আছে। কিন্তু প্রমাণ কোথায়?
ঘটনা কি কেউ দেখেছে?
মহিলা বললেন, জী না স্যার। কোনো মানুষ দেখেনি। তবে….
তবে কি?
রুমের আসবাব পত্র দেখেছে। জানলার ফাঁক গলে আকাশও দেখে থাকতে পারে।
বড়োকর্তা বললেন, তুমি আকাশের কাছেই বিচার চাও।
মুদ্রার বিপরীত পিঠও আছে
গৃহকর্মী অভিযোগ করেছিলো মেম সাহেব আমাকে ধর্ষণ করেছে
কেউ আমলে নেয়নি। রীতি নেই।
ধর্ষণ শব্দটি নারী জাত। নারীরা ধর্ষিত হয়। পুরুষরা হয় না।

পরীক্ষার হলে একজন নকল করে কাগজটি ছুড়ে দিয়েছিলো।
আরেকজনের পায়ের কাছে কাগজটি এসে পড়তেই ম্যাজিস্ট্রেট এলো।
নকল করার দায়ে সে-ই অভিযুক্ত হলো।
হাতেনাতে প্রমাণপত্র পাওয়া গেলো। সে বহিষ্কার হলো।
মেয়েটি অনেক কান্নাকাটি করেছিলো।
বলেছিলো, স্যার আমি নকল করিনি। কেউ শোনলো না।

বইপত্র

বইপত্র

বইপত্রের নাম শুনলেই বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠে। প্রাণের টান।
শেকড়ের উপর শেকড়।
বই কোনোদিন কাউকে ঠকায় না। বইয়ের ভালোবাসায় শরীর নেই। মন আছে।
এই মন যেমন কোনোদিন পুরাতন হয় না।
তেমনি বই ও কোনোদিন পুরাতন হয় না।
আমার হাতে যতোক্ষণ বই থাকে, ততোক্ষণ আমার আর কিছু চাই না।

নতুন প্রজন্মের কথা বলি। বই তাদের টানে না। তারা বই কিনে না।
দেউলিয়া হওয়ার ভয় আছে। ভালো মানুষ হওয়ার ভয় আছে।
দশ দিগন্তে চোখ খুলে যাওয়ার আশংকা আছে।
শিক্ষিত মুর্খ সনদ হারানোর নগদ ক্ষতির কারণ আছে।

বই যে কথা বলে, হাঁটাচলা করে এসব তারা মানে না।
কেউ জানে না একটি বইয়ের কোটি কোটি চোখ থাকে।
সেই চোখ সবাইকে সমান চোখে দেখে। কাউকে কম না।
আরো বড়ো কথা বলি, বইয়ের পোকা কোনোদিন মরে না।
আকাশের বিশালতা নিয়ে বেঁচে থাকে……………!!

নথিপত্র

নথিপত্র

অনেক দেন-দরবার, তদবির, তকদির শেষে নথিপত্রটি ফুটআপ হয়েছিলো
এখন আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। খেমতার গজব পড়েছে।
পৃথিবীর এই এক আজব নিয়ৎ, যতো গজব পড়ে সব নরম-শরমের উপর!

যেমন তেমন একটা ঝড় হলো কাঁচাঘুম সব ভেংগে গেলো।
কাঁচা ঘর-বাড়ি ওরাও সবাই উড়ে গেলো। পাকারা বেঁচে গেলো।
সুনামি হলো। গ্রাউন্ড ফ্লোরের সবাই জান্নাতবাসী হলো।
উপরতলার কিছুই হলো না। সবাই পৃথিবী নামক নরকেই রয়ে গেলো।
বড়কর্তার হুকুমে নথিপত্রটি গায়েব হয়েছিলো। চাপরাশি গায়েব করেছিলো।
চাপরাশির চাকুরিটি খোয়া গেছে। বড়োকর্তা ভালো আছে।

বড়োমাছের মতো বড়োকর্তারা সবসময় ভালো থাকে।
ছোট মাছগুলোর বড়ো বিপদ থাকে।
নথিপত্র গায়েব করলেও বিপদ। না করলেও বিপদ। শাঁখেরকরাত।
জানা কথা, জল উপরের দিকে গড়ায় না। নিচের দিকে গড়ায়।
সবাই বলে, মাৎসনায় চলছে। চলুক। কেনো চলছে কেউ বলে না।
যেদিন সবাই বলবে, বন্ধ করো। বন্ধ করো।
সেদিন নথিপত্রটি আলোর মুখ দেখবে। সেদিন কি আর আসবে?

অভিনন্দন পত্র

অভিনন্দন পত্র

যে শিশুর ভূমিষ্ঠ হতে এখনো লক্ষ কোটি বছর বাকি
তাকেও আমি অ ভি ন ন্দ ন জানিয়ে রাখি!
হয়ত তখনকার নাম গুলো মানুষের নামের মতো হবে না
হয়ত তখন নদী নামের কোনো অনাথিনী থাকবে না
হয়ত তখন পাহাড় -পাহাড়িকা নামের আর কেউ রইবে না
হয়ত চিরন্তন সত্য বলে কোনোকিছু থাকবে না
হয়ত মাটি নামের খাঁটি কিছু তোমরা দেখবে না
তবুও তোমাদের অভিনন্দন………তবুও অভিবাদন।।

ধারণা করছি সমস্ত পৃথিবীতে একটি মাত্র সবুজ গাছ
পঙ্গপালের মতো সবাই সেই সবুজ চোখে মাখার প্রতিযোগিতায় নামবে
ধারণা করছি সমস্ত পৃথিবীতে একটি মাত্র ভঙ্গিল পর্বত অবশিষ্ট থাকবে
তোমরা সেই পর্বত মিউজিয়ামে লুকিয়ে রাখবে…….
ধারণা করছি সমস্ত পৃথিবীতে কোনো পাখি থাকবে না
তোমরা বিমুগ্ধ নয়নে পাখিদের ফসিল দেখবে
চিলেকোঠায় ভুতের দর্শন পাওয়ার মতো পাখিদের নিয়ে গল্প লিখবে, কবিতা লিখবে
ধারণা করছি তোমরা কাগজের ফুলের গন্ধ শুঁকবে
তবুও তোমাদের অভিনন্দন………….তবুও অভিবাদন!!

হয়ত তখন অভিধানে ভালোবাসা নামের কোনো শব্দ থাকবে না
হয়ত তখন পরিবার নামে কোনো সংগঠন থাকবে না
হয়ত সমাজ, রাষ্ট্র বলেও আলাদা কিছু পরিচিতি থাকবে না
বেশ ভালো ই হবে……
আমরা যা পারিনি তোমরা তা পারবে
আবার নতুন করে সবকিছু শুরু করবে, নতুন বিশ্ব গড়বে!!

ম নো রো গ

ম নো রো গ

আমার হয়েছে মনোরোগ
রাত বড় হলেই বাড়ে কবিতা সম্ভোগ!

তবুও আড়চোখে আলো খুঁজি
তবুও ভালোবাসার মানুষ বলতে তোমাকেই বুঝি!

হোক সৌরভহীন আমার প্রহর
তবুও আলোয় ভরে উঠুক তোমার শহর!!

না বর্ষার জল

না বর্ষার জল

তবুও আমার ভালো একটা বাসার বাসনা বলে কথা
যেখানে নীরব রাত্রির রোদন শোনা যায়
যেখানে ভোরের পাখির বোধন দেখা যায়
যেখানে চোখ না খুলেই দিগন্ত ছোঁয়া যায়
যেখানে আদুরী বাতাসের গন্ধের ভোগী হওয়া যায়!

আমার শহরটা বড়ো ক্ষেপাটে, মাথা গরম থাকে
ঝিঁঝিঁ পোকার মতো টানা টানা গাড়িগুলো ডাকে!

এখানে না বর্ষার জলের মতো চাকার আধুলি ঘুরে
এখানে কেবল সকাল হয় কলির সন্ধ্যা অনেক দূরে!

পালাই পালাই করে আমিও প্রতিপদ মরে যাই
তবুও কোনোরকম ভোর জাগলেই আবার বেঁচে যাই!!

শীত

শীত

যারা প্রেম চেটেপুটে খায় আমিও তাদেরই লোক
নিসর্গ আমায় চাটে
রোজ রোজ একটি করে প্রেমপত্র লিখে বালিশের নিচে
রেখে যায়
আমি শেওড়ার ঝোপের দিকে তাকিয়ে থাকি।

এখন রাজপথে হাড়কাঁপানো শীত…….
কবিতারাও অরণ্য ছেড়ে বেরুতে সাহস পায় না!!

তবুও আমি প্রণয়িনীর কথা ভাবি

তবুও আমি প্রণয়িনীর কথা ভাবি

তবুও কিছু কিছু ভালোবাসার দিকে তাকিয়ে থাকি
যদিও উদয়ের পর অস্ত থেমে থাকে না
তবুও গতবুদ্ধি রাংতার কাজলের কথা ভাবি…
মহাসমুদ্রের অলৌকিক বিভাজনের কথা ভাবি!!
শুরু যেভাবে মুদ্রিত হয়, শেষও যদি সেভাবে মুদ্রিত
হতো?
তাহলে কি পাহাড়ের দীর্ঘশ্বাস যুবতী রমণী হতো?
মৌণতার হাত ধরে ধীরে ধীরে ভালোবাসা হারিয়ে যেতো?
তবুও আমি প্রণয়িনীর কথা ভাবি…….
বালির সাথে সংগমরত সামুদ্রিক শামুকের কথা ভাবি!
এপাশে যখন সকাল হাঁটে, ওপাশে তখন বাড়ে সন্ধ্যা
বাড়ুক… .বাড়তে থাকুক ইচ্ছেনদীর মতো
তবুও ঝিনুকের মতো আমি বালিয়াড়িতে ভয় পাই কতো?
আলোগোছে তুলে আনি ভালোবাসার সকল কাঁটা
তবুও চোখ না তুলেই বুঝতে পারি
শব্দহীন পাহাড়ের মতো,
বাচাল সমুদ্রের মতো, খরাক্রান্ত’ ভুখা ভুমির মতো
আমার আজন্ম ভালোবাসার জমিটাও ফাটাফাটা….!!

চন্দ্রগ্রহণ

চন্দ্রগ্রহণ

ও সুন্দরি,
কোলবালিশ কোলে নিয়ে কার কথা ভাবছো?
আমাকে পাশ ফিরে কার ছবি সংগোপনে আঁকছো?
ওই দেখো…
পাতার ফাঁকে কী সুন্দর যমজ পাহাড় ঘুমায়
লতানো শিশিরের ভাঁজে ভাঁজে আকাশ চুমায়!

ঐ শোনো,
ওখানে সাগর ডাকে, ডাকে উর্বশী হরিণী চাঁদ
মনে আছে?
একদিন ওখানেই পেতেছিলে ভালোবাসার ফাঁদ!

সেখানেই আমি ফেলে এসেছিলাম কবিতার খাতা
কে জানতো…
সেখানে বারোমাসি জোছনার ফাঁদ পাতা!

দেখো, এখনো আমি চমৎকার বেঁচে আছি মর্মন্তুদ
এতোদিনে বুঝে গেছি চন্দ্রগ্রহণের চেয়েও তুমি অদ্ভুত!!

দুরাশা

দুরাশা

পাহাড়ের নিবিড় নীরবতার মতো আমিও ভালো
থাকতে শিখে গেছি
শিখে গেছি কিভাবে মাড়িয়ে যেতে হয়
শ্বাপদের ছায়া
শিখে গেছি কিভাবে আঙুলে জড়িয়ে রাখতে হয়
নীলমার মায়া…..!!
যেভাবে একদিন নামতার মতো মুখস্ত করেছিলাম
তোমার ভালোবাসা
সমুদ্রের গর্জন দেখে বুঝে গেছি সেদিন সন্ধ্যাবেলা
তুমি ছিলে আমার প্রথম দুরাশা!!

সে রাত্রির খরচের কথা ভাবি

সে রাত্রির খরচের কথা ভাবি

তবুও আমি একটি ফুটফুটে দিনের কথা ভাবি
গুটিবসন্তের দাগের মতো ঘাড়ের উপর চেপে বসেছে
যে রাত্রি
সে রাত্রির খরচের কথা ভাবি!

প্রেমহীন কিছু সময় বরাবর খবরের শিরোনাম হয়
আমি পাতাঝরা গাছেদের দিকে তাকিয়ে থাকি
দেখি তাদের কারো চোখে ঘুম নেই
তাদের কারো মুখে সুখের পদচিহ্ন নেই!

তবুও আমি একটি পানপাতার কথা ভাবি
তার সমস্ত শরীরে আঁকা ভালোবাসার কবিতার কথা ভাবি
নৈঃশব্দ থেকে কিছু আনকোরা ভাষারীতির জন্মের কথা ভাবি
অন্দরমহল আলোকিত করার আলোর কথা ভাবি
শিথান-পৈথানের প্রজনন শক্তির কথা ভাবি —–!

তবুও আমি নিলাচলে উড়ন্ত পাখিদের কাছে ডাকি
তবুও আমি ভালোবাসা নিলামে বিক্রির কথা ভাবি!!