জসীম উদ্দীন মুহম্মদ এর সকল পোস্ট

শব্দ পোড়া গন্ধ

তবুও থেমে নেই চাল-চুলোহীন নিপাতন জলের পতন
যদিও আমার দুরবিন চোখ একলা হাঁটে নিস্তেজ প্রান্তর
মাঝে মাঝে কেবল শব্দ পোড়া গন্ধে আকুল হয় অন্তর
তবুও ডানাভাঙা পাখিরা কেউ থেমে থাকে না
দেদার চলছে কেনাবেচা……
অশুদ্ধ হাতের শিরা কেটে ভালোবাসার উল্কি আঁকা;
পার্কের ব্যস্ত টুলে টোলপড়া গালে বাদমের যবনিকা!

যেখানে কোনোদিন কোনো অন্ধকার দ্রবীভূত হয় না
তবে সবাই জানে সেখানেও জীবন থেমে থাকে না
ভুলভাল জল পতনের অশরীরী শব্দ খুঁজে নেয় ঠিকানা
তবুও ভালোবাসার নামে হাসে সুখেন পাথরের কংক্রিট
তবুও কবিতার শব্দে নদী পোড়ায় জীবনের হার্টবিট!

অথচ কত কাজলনদী, কতোদিন জল চোখে দেখে না
রাংতার কাজল মেখে ভুল চোখে জীবনের গন্ধ শুঁকে,
আমি নিপাতন জলের শব্দে কৈলাশ পর্বতের ধ্যানস্থ
মুনি-ঋষিদের ধ্যান ভাঙানোর কথা ভাবি
স্বগৃহে নির্বাসিত মহাজাগতিক নির্বাণের কথা ভাবি
বায়ুশূন্য অবস্থানে সামুদ্রিক সাইক্লোনের কথা ভাবি!

তবে এতোকিছুর পরেও.. আমি এখন আর একা নই
এখন শব্দ পোড়া গন্ধ আছে, নৈঃশব্দ বাতিঘর আছে
সেখানে নিপাতন জলের উর্বশী পাতন আছে
কাকতাঁড়ুয়ার মতো একলা দাঁড়িয়ে থাকার ফুরসৎ আছে
আমি সেই শব্দ পোড়া গন্ধে বুঁদ হয়ে থাকার কথা ভাবি
শ্বাপদসংকুল অরণ্যে কবিতার একাকিত্বের কথা ভাবি!

সম্ভাব্য খাদ্য সংকট এবং উত্তোরণের উপায়

আগামী বছরের সম্ভাব্য খাদ্য সংকট এবং খাদ্য নিরাপত্তা এখন টক অব দ্যা ওয়ার্ল্ড। জাতিসংঘ থেকে শুরু করে বিশ্বের ছোট-বড় সকল রাষ্ট্র এ বিষয়ে সোচ্চার এবং শংকিত। আর শংকিত হওয়াটাই একান্ত স্বাভাবিক। কেননা মারাত্মক খাদ্য সংকট মানেই দুর্ভিক্ষ। আর দুর্ভিক্ষ মানেই কোটি কোটি প্রাণহানি। কেবল মানুষ নয়; প্রাণ যাবে অসংখ্য গৃহপালিত গবাদি পশু-পাখির। তাই আমরা গভীরভাবে বিশ্বাস করি সম্ভাব্য খাদ্য সংকট এবং এ থেকে উত্তোরণের বিষয়ে যুক্তিযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই যথার্থ সময়।

সম্প্রতি বিশ্ব অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি বলছে, বিশ্ব ‘মন্দার দ্বারপ্রান্তে’। বিশেষ করে এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলো এই মন্দায় অধিকতর ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। আঙ্কটাডও এক প্রতিবেদনে বলেছে, উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর মুদ্রা ও রাজস্ব নীতি, সুদের হার বাড়ানোসহ নানা কারণ বিশ্বকে একটি বৈশ্বিক মন্দা ও স্থবিরতার দিকে ঠেলে দিতে পারে। তাছাড়া আই এম এফ এবং বিশ্বব্যাংকও একই আশংকার তথ্য জানিয়েছে।

যদিও খাদ্য সংকটের বড় কারণ হিসাবে রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধ, কোভিড-১৯, পৃথিবী জুড়ে জলবায়ুর বিরুপ প্রভাব এবং ঘন ঘন প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে দায়ী করা হচ্ছে। কিন্তু অন্তরালে মজুতদারী, কালোবাজারি, দুর্নীতি, অপচয়, সুষম বণ্টনের অভাব এবং সরবরাহ চেইন সঠিকভাবে কাজ না করাও কম দায়ী নয়। সর্বোপরি খাদ্য সচেতনতার চরম অভাব তো আছেই! এসবের ফলশ্রুতিতে বিশ্ব খাদ্য সংস্থাসহ অন্যান্য সংগঠন এবং খাদ্য বিশেষজ্ঞগণ আগামী বছর বিশ্ব জুড়ে একটি চরম খাদ্য সংকটের আশংকা প্রকাশ করছেন। আমরাও মনে করি এই আশংকা অমূলক নয়। এই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের মতোন স্বল্প আয়তন অথচ অধিক জনসংখ্যার দেশে আগাম সচেতনতা এবং ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।

সম্প্রতি প্রকাশিত যুক্তরাজ্য ভিত্তিক দি ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের ‘গ্লোবাল ফুড সিকিউরিটি ইনডেক্স ২০২২’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা সূচকে ১১৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮০তম। যদিও গত বছরের তুলনায় চার ধাপ এগিয়েছে, তারপরও রাজনৈতিক সংকটে থাকা শ্রীলঙ্কার (৭৯) চেয়ে একধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশ। এই পরিসংখ্যানটিও আমাদের খাদ্য নিরাপত্তাহীতার চিত্র চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।

সম্প্রতি বিশ্ব খাদ্য দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি আবারো অনুরোধ করছি কোন খাদ্যের অপচয় নয়, যার যেখানে যতটুকু জমি আছে তা চাষের আওতায় এনে খাদ্য উৎপাদন বাড়ান, এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। সারাবিশ্বে যে দুর্যোগের আভাস আমরা পাচ্ছি,তা থেকে বাংলাদেশকে সুরক্ষিত করুন। আমি বিশ্বাস করি সকলের প্রচেষ্টায় এটা করা সম্ভব।’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘ বক্তৃতার এই চম্বুক অংশটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়োপযোগী।

আর তাই দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য নিরাপদ খাদ্য ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত করা বর্তমান সরকারের একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অবশ্য এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার নানাবিধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। কৃষি ঋণ বিতরণ, গবেষণায় অগ্রাধিকার ও প্রণোদনা দেওয়ার ফলে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পথেই ছিলাম আমরা। কিন্তু ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধকে কেন্দ্র করে পরাশক্তিগুলোর নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞাই এখন খাদ্য নিরাপত্তা প্রধান হুমকি। এই হুমকি মোকাবিলায় আমাদেরকে মিতব্যায়ী হতে হবে। রাষ্ট্র যন্ত্র থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত — সকল পর্যায়ে প্রকৃত সাশ্রয়ী মনোভাবাপন্ন হতে হবে। দুর্নীতি, অর্থপাচার, অসাধু ব্যবসায়ীদের লাগাম টেনে ধরে সমূলে উৎপাটন করতে হবে। যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্যশস্য সংরক্ষণ এবং আপদকালীন সময়ে এর সুষ্ঠু বন্টন নিশ্চিত করতে হবে। কারো একার পক্ষে এই খাদ্য সংকট মোকাবেলা সম্ভব নয়।

প্রয়োজন সকলের সার্বিক সচেতনতা, যথাযথ কর্মপরিকল্পনা এবং স্বদেশ প্রেমে উদ্ধুদ্ধ হয়ে সম্পূর্ণ সততা এবং নিরপেক্ষতার সাথে তার বাস্তবায়ন। তবেই দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এবং বাংলাদেশ রক্ষা পাবে সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষ থেকে।

প্রলুব্ধ ছায়ার ছবি

অনেকদিন ধরেই ঘাড়ধরা শব্দে কবিতা লিখি..
গাছ থেকে বেলের বদলে তাল পড়লে যেমন
হাঁচি আর কাশি একসাথে বেরোতে চাইলে যেমন
আমার কবিতার বেখাপ্পা শব্দেরাও তেমন..!!

তবুও কবিতা লিখি.. লেজ আর গোবর মাখামাখি
আমি ঋণগ্রস্ত অকবি..বয়ে বেড়াই শব্দের দায়,
এভাবেই বেড়ে চলছে অপরিশোধিত লেনদেন
যে কেউ ইচ্ছা হলেই স্বত্তাধিকার কিনে নিতে পারেন!

তবুও থেমে নেই বাক্যের মুখাগ্নি, উপমার ঘরামি
জমা-জমির মতোন নামখারিজ করে দিতে আমিও
সজ্ঞানে, স্বেচ্ছায় রাজি!!

কেউ হয়ত রসিকতা করে বলবেন আমি আসলে
একজন পাজি… আচ্ছা সে না হয় মেনে নিলাম
বলুন তো দেখি.. যে ডাকাত ঘাড়ধরা শব্দে কবিতা
লিখে… সে কীভাবে হয় কবি..?
সেতো বড়জোর হতে পারে প্রলুব্ধ ছায়ার ছবি!!

সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী আনি আর্নো

nob

নিঃসন্দেহে পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মান সূচক পুরস্কার হলো নোবেল। আর আমরা যারা লেখালেখির সাথে সংশ্লিষ্ট তারা সবাই সাহিত্যে নোবেলজয়ী কে হন সেই দিকে সবিশেষ নজর রেখে থাকি। প্রতিবছরের ন্যায় এবারো আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে সুইডেনের স্টকহোমে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। আর সেখানে বিভিন্ন পর্যায়ে অসংখ্য প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে ২০২২ সালের সাহিত্যে নোবেল পদক পেয়েছেন ফরাসি সাহিত্যিক আনি আর্নো। আমরা তাকে আন্তরিক অভিনন্দন এবং ফুলেল শুভেচ্ছা জানাই।

আনি আর্নোর জন্ম হয়েছে ১৯৪০ সালের ১ সেপ্টেম্বর। এখন তার বয়স ৮২ বছর। আনি আর্নোর সাহিত্য মূলত আত্মজীবনীমূলক। তিনি সমাজবিজ্ঞানের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ১৭তম নারী হিসেবে তিনি এই পুরস্কার জিতেছেন। এই ফরাসি সাহিত্যিক নরম্যান্ডির সাধারণ পরিবারে বেড়ে ওঠেন। তিনি বেশি পরিচিতি পেয়েছেন ওমেন্স স্টোরি, এ মেন্স প্লেস এবং সিম্পল প্যাসনের মতোন আত্মজীবনীমূলক কর্মের জন্য।

তার সাহিত্য ক্যারিয়ার শুরু হয় ১৯৭৪ সালে। তবে আনির এসব সাহিত্যকর্মকে ইংরেজীভাষী সমালোচক ও পাবলিশাররা মাঝে মাঝে আত্মজীবনী বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। অবশ্য আনি নিজে সবসময় বলেছেন, তার কর্মগুলো কল্পকাহিনী। তার অনেক সাহিত্যকর্ম ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করা হয়। ২০১৯ সালে দ্য ইয়ার্স নামে বইয়ের জন্য আন্তর্জাতিক বুকার অ্যাওয়ার্ডের জন্য নমিনেশন পান তিনি। বইটি সম্পর্কে অ্যাকাডেমি বলেছে, এটি তার সবচেয়ে উচ্চাকাঙক্ষী প্রকল্প, যা তাকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এবং একদল অনুসারী ও সাহিত্যিক শিষ্য এনে দিয়েছে।

তার লেখা প্রথম উপন্যাস ‘লে আরমোয়ার বিড’ ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হয়। কিন্তু ২০০৮ সালে ‘লে আনি’ প্রকাশ হওয়ার পর থেকে তিনি আন্তর্জাতিক পরিচিতি পান। এটি ২০১৭ সালে ‘দ্য ইয়ার্স’ নামে ভাষান্তরিত হয়। বইটি সম্পর্কে অ্যাকাডেমি বলেছে, এটি তার সবচেয়ে ভালো বই।

এ বছরের সম্ভাব্য প্রতিযোগীদের মধ্যে ফেভারিট তালিকায় ছিলেন আনি আর্নোসহ ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক সালমান রুশদি, কেনিয়ার লেখক নগুগি ওয়া থিয়ঙ্গো, জাপানের হারুকি মুরাকামি ও নরওয়ের জন ফোসের মতো লেখক ও সাহিত্যিকদের হারিয়ে পুরস্কার জিতে নিয়েছেন আর্নো।

নোবেল কমিটির স্থায়ী সদস্য ম্যাটস মাম বলেছেন, আনি এর্নো যে সাহিত্যে নোবেল পেয়েছেন সেটি তিনি জানেন না। তবে আনি দ্রুতই এ খবর পাবেন বলে জানান ম্যাটস মাম। আনি আর্নোকে সাহিত্যে নোবেল দেওয়ার ব্যাপারে নোবেল কমিটি বলেছে, সাহস ও তীক্ষ্ণতার মাধ্যমে তিনি ব্যক্তিগত স্মৃতির শেকড়, বিচ্ছিন্নতা ও সম্মিলিত সংযম উন্মোচন করেছেন তার জন্য সাহিত্য জগতের সর্বোচ্চ সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। তার সাহিত্যে গর্ভপাত এবং পরিবার মূল উপজীব্য বিষয়।

আবারও বলছি, সাহিত্যে নোবেল মানেই সারাবিশ্বের সমস্ত কবি-লেখকদের জন্য একটি উদ্দীপনা। একটি অনুপ্রেরণা। এটি এই বার্তা বহন করে যে, সাহিত্য হলো বিশ্বজনীন। সর্বকালের সবার। তাই বিশ্বসাহিত্য অধ্যয়ন করতে হবে। তবে সাহিত্য ভাণ্ডার যেমন সমৃদ্ধ হবে; তেমনি সমৃদ্ধ হব আমরা সকলে।

হাঙর-নদী-গ্রেনেড

কখন যে এসেছিলো একাদশী চাঁদের ঢেউ আধ-ডোবা
জল জোছনা, কোনদিন কেউ খোঁজও নিল না!
তখন সে পৈথানে রেখে গিয়েছিল প্রশান্তের ভাঙাবুক,
অথচ একদিন দু’আঙ্গুলে…
আলগোছে তুলে ধরেছিল এই গাঙ্গেয় চিবুক!

এখন সে তাল খুঁজে বেড়ায় বেতালের কবরে…,
রাজপথ ধরা খায় কাগজের ভাঁজে ভাঁজে,
গোকুলের খবরে; বেদনার পাথার লিখে রেখে যায়
বটতলার পুঁথি, শ্রাব্য-অশ্রাব্য, পুঁথিগন্ধময় শ্রাবণ শৈলী!

হেমলক ঘুমিয়ে আছে…আনকোরা ভাঙা রোদের ডালে,
কাঁচা কাঁচা নির্জীব গেটর ঝুলে আছে একহাত প্রস্থ
শিথানে, অবুঝ মাটিও ফ্যাল ফ্যাল চোখে চেয়ে থাকে
দূর্বাঘাসের দুয়ারী! ক্ষণে ক্ষণে প্রলাপ বকে আনাড়ি
পুতুলের মতোন, পাহাড় ভাঙার মতো বুক ভাঙে
হাঙর-নদী-গ্রেনেড সবাই একসাথে কাঁদে আর তাদের সাথে এসে যোগ দেয়
মেঘনার ঢল, শিথান-পৈথান এরা সব একসাথে!!

যুদ্ধ কোনো কবিতা নয়

দু’ একটি বর্ণচোরা অপাংক্তেয় শব্দ…..
আজ হঠাৎ কমরেড হয়ে উঠতে চাইছে…
ওরা এমনই ভয়ংকর যে,
কোনোপ্রকার বুলেট-বোমার ধার ধারে না!
কালবৈশাখী ঝড়ের মতো সত্যকে সত্য বলে
টাইফুনের মতো মিথ্যাকে মিথ্যা বলে!!

অথচ সত্যবাদীকে কেউ কেউ বলে থাকেন
সম্ভবতঃ তাকে পাগলা কুত্তা কামড়াইছে,
তা না হলে এইভাবে কেউ নির্লজ্জের মতো
সত্য বলে!!

অতঃপর….
পর্দার অন্তরালে থেকে মিথ্যাবাদীরা তখন
মুচকি হাসতে হাসতে মঞ্চের দিকে হেঁটে চলে!

একটি কবিতার জন্মের জন্য যদি একটি
যুদ্ধ না হয়
তাহলে সে কবিতা, কতোটা কবিতা হয়??

তবুও আমার মতো নিরীহ, নিভৃতচারী কবি
বলতে চায়….
যুদ্ধ কোনো কবিতা নয়
যুদ্ধ কোনো সমস্যার সমাধান নয়…নয় নয়!!

নগদ জলের বৃত্তান্ত

জীবন থেকে হররোজ যতটা জল খসে খসে পড়ে
কে জানে না…? চন্দ্রবিন্দু, খন্ড ত, অনুস্বার..
সে জল আর কোনোদিন ফিরে না আপন নীড়ে!
তবুও নিয়ত বায়ুর মতোন নিয়ত বন্দনা করি
পড়ি, মরি করে আবারও সে জলকেই স্মরি
বিষাদ থেকে আলাদা হয় কয়েকটি মাত্র বিন্দু
যে ডুবুরি সেও কি জানে কতটা গভীর এই সিন্ধু?

অথচ হ্যালোসিনেশন বলে অভিধানে আছে কিছু
জলের মতো কালও ঘুরে সদাই চক্রের পিছু পিছু
বোটার গর্ভে ক’দিনই বা বেঁচে থাকে শিশু ফল
এখানেও নাক-চোখ-মুখ-খিঁচিয়ে হেসে উঠে জল..!
জানি তবুও ইতিবৃত্ত হয়নি নগদ জলের বৃত্তান্ত
মাছির চোখের মতোন সেই জলও যে সর্বত্র সম্ভ্রান্ত!

যুদ্ধ কোনো কবিতা নয়

দু’ একটি বর্ণচোরা অপাংক্তেয় শব্দ…..
আজ হঠাৎ কমরেড হয়ে উঠতে চাইছে…
ওরা এমনই ভয়ংকর যে,
কোনোপ্রকার বুলেট-বোমার ধার ধারে না!
কালবৈশাখী ঝড়ের মতো সত্যকে সত্য বলে
টাইফুনের মতো মিথ্যাকে মিথ্যা বলে!!

অথচ সত্যবাদীকে কেউ কেউ বলে থাকেন
সম্ভবতঃ তাকে পাগলা কুত্তা কামড়াইছে,
তা না হলে এইভাবে কেউ নির্লজ্জের মতো
সত্য বলে!!

অতঃপর….
পর্দার অন্তরালে থেকে মিথ্যাবাদীরা তখন
মুচকি হাসতে হাসতে মঞ্চের দিকে হেঁটে চলে!

একটি কবিতার জন্মের জন্য যদি একটি
যুদ্ধ না হয়
তাহলে সে কবিতা, কতোটা কবিতা হয়??

তবুও আমার মতো নিরীহ, নিভৃতচারী কবি
বলতে চায়….
যুদ্ধ কোনো কবিতা নয়
যুদ্ধ কোনো সমস্যার সমাধান নয়…নয় নয়!!

বিড়াল ছানা

index

বিড়াল ছানা মিউ মিউ
আরশি মনি পিউ পিউ
করছে শোরগোল
পাশের বাসায় ঝগড়াঝাটি
কে নিয়েছে আমের আঁটি
কী যে গণ্ডগোল!

বিড়ালছানা ঘাপটি মারে
আরশি কি আর ওকে ছাড়ে
লুকোচুরি খেলা
গাছের ডালে পাখপাখালি
ব্যাঙের বাড়ি মহাখালি
কেমনে কাটে বেলা!

অটোগিয়ার

মাঝেমধ্যে খুউব খুউব ইচ্ছে হয় সুতো ছিঁড়ি…
ছিঁড়তে ছিঁড়তে ওলটপালট করে দিই কালের নদী
বাদ-প্রতিবাদ-বিসংবাদ ওরা ফিরে আসে যদি!

তাহলে আমিও হতে পারি কার-হীন কালো অক্ষর
চোখের কাজলে মেখে নিতে পারি কাবিননামার
কাঁপা কাঁপা স্বাক্ষর! দেখছো না…যুগের পর
যুগ জিয়ে আছে কাবিলের কাব্যিক উত্তরাধিকার;
ছেঁড়াসুতোর গিঁটে গিঁটে কেমন হাসছে অটোগিয়ার!

তবুও কিছু কিছু পাঠক জনান্তিকে হবেই আটক
সুলভে কিনে নেবে দুর্মূল্যের বাজার, আমিও এখন
বোধ ছাঁকতে শিখে গেছি হাজারে হাজার!

পাখির জোড়া ঠোঁট

খুটখুট করে করে ঠোকরে ঠোকরে খায় পাখিদের
জোড়া ঠোঁট..ঘুঁটঘুঁটে আঁধার অথবা অলৌকিক
আলোতে কখনও খায় একলা আবার কখনও হয়
জোট; তাবত পৃথিবীর সবাই জানে…ওরা কী খায়
আর কী কী ফেলে যায়…চোট আর গণভোট!

ওরা খায় নতুন-পুরাতন সব দাগ, সুসময়ের অগ্রভাগ;
তবু সূঁচালো কাল ওদেরও হিসাব কষে সকাল-বিকাল,
একদিন বিলুপ্ত হয় পৈশাচিক ধ্বনি..আজকে যার
সবে বৃহস্পতিবার আগামীকালই হতে পারে শনি!

তবুও আমরা খুব কমই মনে রাখি অর্জুনের ছাল,
হাঁটিহাঁটি পা পা করে বাড়-বাড়ন্ত দেখি করোনাকাল..
আবারও আসছে মহিয়সী শীত; কোকিল পাখির
জোড়া ঠোঁট আবারও গাইবে… লকলকে জিবের..
একদা আসন্ন বসন্তের আগমনী রাগসংগীত….!!

চা শ্রমিকদের আন্দোলন এবং কিছু প্রাসঙ্গিকতা

305 চা বর্তমানে বাংলাদেশ তথা সারাবিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয়। সকাল-বিকাল কিংবা যে কোনো অবসন্ন সময়ে এককাপ চা মানুষের শরীরে সঞ্চারিত করে নতুন আমেজ। মুহূর্তেই মন-প্রাণ চাঙা হয়ে ওঠে।

তবে এই চা রাতারাতি জনপ্রিয় হয়নি। এর রয়েছে দীর্ঘ বিবর্তনের ইতিহাস। যতটুকু জানা যায়, চীনের অনুকরণেই ভারতবর্ষে প্রথম চা চাষ শুরু করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। তাই পরীক্ষামূলকভাবে চা-বীজ, চারা ও যন্ত্রপাতির পাশাপাশি চীন থেকে দক্ষ শ্রমিক আনে তারা। কিন্তু বিদেশি শ্রমিকদের সঙ্গে বনাবনি না হওয়ায় অবশেষে শ্রমিক আমদানি বন্ধ করে দেশীয় শ্রমিক দিয়েই চা-বাগানের কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় কোম্পানি। ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় চা চাষের পরিকল্পনা শুরু করে। আসামে চায়ের একটি জাত আবিষ্কার করার পর ওই এলাকায় চা চাষে তারা বিশেষভাবে মনোযোগী হয়ে ওঠে। এভাবে দার্জিলিং, আসাম, সিলেটে কয়েকটি চা বাগান প্রতিষ্ঠা হয়।

আর বাংলাদেশে চায়ের চাষাবাদ প্রথম শুরু হয় ১৮৪০ সালে। চট্টগ্রামে কুণ্ডুদের বাগান নামে সেই চা বাগান অবশ্য সাফল্যের মুখ দেখেনি। এরপর ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালনিছড়ায় প্রথম বাণিজ্যিক চা বাগান প্রতিষ্ঠা করা হয়। তিন বছর পর সেই বাগান থেকে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চায়ের উৎপাদন শুরু হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, পঞ্চগড় এবং চট্টগ্রাম জেলায় ১৬৭টি নিবন্ধিত চা বাগান রয়েছে। যার মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কর্মক্ষম চা বাগান।

স্ট্যাটিস্টিক্যাল হ্যান্ডবুক অন বাংলাদেশ টি ইন্ডাস্ট্রি বুক-২০১৯ এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এসব চা বাগানে স্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ১ লাখ ৩ হাজার ৭৪৭ জন। অস্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ৩৬ হাজার ৪৩৭ জন এবং চা-জনগোষ্ঠীর মোট মানুষের সংখ্যা ৪ লাখ ৭২ হাজার ১২৫ জন। কিন্তু এই শ্রমিকরা সবসময়ে এই এলাকার বাসিন্দা ছিলেন না। এখনো স্থানীয় বাঙ্গালিদের সঙ্গে তাদের ভাষা বা সংস্কৃতির দিক থেকে অনেক পার্থক্য রয়েছে। বাংলাদেশে চা শ্রমিকদের সর্বশেষ দলটিকে নিয়ে আসা হয়েছিল ১৯৪৬ সালে, ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে। ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান ভাগের পর সিলেট ও চট্টগ্রামের চা শ্রমিকরা পূর্ব পাকিস্তানে থেকে যান। এরপর তাদের বংশধররাই এখনো বাংলাদেশের চা বাগানগুলোয় কাজ করে যাচ্ছেন।

এইসব চা শ্রমিকদের সাম্প্রতিক কর্মবিরতি তথা আন্দোলন দীর্ঘদিনের নিপীড়ন, শোষণ এবং বঞ্চনার ফল। আধুনিক বিশ্বে দাঁড়িয়ে… সভ্যতা এবং মানবাধিকারের বুলি আওড়ানো ধনিক শ্রেণীর মুখের উপর এ যেন চপেটাঘাত মাত্র। এখনও চা শ্রমিকরা অনেকাংশে ১৮৪০ সালের মুজুরি কাঠামোয় পারিশ্রমিক পান। এরচেয়ে অমানবিক আর কী হতে পারে? ভাবা যায় দৈনিক ১২০ টাকা! মাসে ৩৬০০ টাকা! তাও আবার শর্তযুক্ত। অর্থাৎ ২০ কেজি চা পাতা তোলার নিরিখ পূর্ণ করতে হবে! অন্যথায় টাকা কর্তন হবে। আবার এই ১২০ টাকাও নির্ধারণ হয়েছে ২০১৯ সালে। তখন বলা হয়েছিল, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে আবার মজুরি বৃদ্ধি করা হবে। কিন্তু সেটা করা হয়নি। সেখান থেকেই ক্ষোভ দানা বাঁধতে বাঁধতে আজকের এই অবস্থা, ধর্মঘট ছাড়া শ্রমিকদের আর কোনো পথ খোলা ছিল না। দীর্ঘ আন্দোলনের পর এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ১৭০ টাকা নির্ধারিত হয়েছে।

আমরা মনে করি, এই ১৭০ টাকাও জীবনযাত্রার মানের সাথে কোনোভাবেই সংগতিপূর্ণ নয়। যদিও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার দোহাই দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমরা সবাই জানি, এই অন্যান্য সুবিধা কতটা অপ্রতুল। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চা শিল্পের গুরুত্ব এবং ব্যাপকতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই শিল্পকে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। মনে রাখতে হবে, চা শ্রমিকরা বাঁচলে চা শিল্প বাঁঁচবে এবং চা শিল্প বাঁচলে চা বাগান মালিকরা বাঁচবে। আর তারই ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। তাই চা শ্রমিকদের ন্যায্য পারিশ্রমিক নিশ্চিত করা জরুরি।।

একটি ভালো থাকার গল্প

শিশুরা আছাড় খেতে খেতে হাঁটতে শিখে
আমি হাঁটতে হাঁটতে আছাড় খেতে শিখেছি
পাথর্ক্য কেবল সীমাহীন সময় অথবা অসময়!

তবু এখনও পাথরের উপর বেনিয়া রাস্তার
ল্যাম্পপোষ্টের নিচে দাঁড়িয়ে আছি….
কখনো ভগ্নাংশ মানুষ আবার কখনও শিম্পাঞ্জি!

আমার কাছে এই দাঁড়িয়ে থাকাও কম কিছু নয়
অতিকায় হস্তিও বরই গাছে ভয় পায়
বিশালাক্ষি তালগাছ সেও…..
আমি তো সেই তুলনায় ঢের ঢের ভালো আছি!

এই ভালো থাকা নিয়ে বেশ কিছু মহাকাব্য
হতে পারে, হতে পারে কিছু জীবন্ত উপন্যাস,
ইদানিং আমার কাছে নগদ আলোকেই আঁধার
ঠাহর হয় —সবখানে পোকামাকড়ের চাষ
বুঝতে পারিনা কে করলো আমার এই সর্বনাশ?

এলিয়েনের সঙ্গে এক বিকাল

287

এখন পড়ন্ত বিকাল। ছাদের বাগানে একা একা বসে আছে আকিব। সে পুরাতন ঢাকার একটি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। ভালো ছাত্র হিসাবে তার সুখ্যাতি আছে। সবচেয়ে বড় কথা হল, আকিবের আই কিউ অনেক বেশি। ক্লাসে টিচার যখন পড়ান, তখন সে একটি শব্দ শোনার পর পরের শব্দটি বলে দিতে পারে। একটি বাক্য শোনার পর পরের বাক্যটি বলে দিতে পারে। এজন্য ক্লাসের সকল ছাত্রছাত্রী এবং টিচার সবাই তাকে খুব ভালোবাসে। খুব পছন্দ করে। তাকে নিয়ে গৌরব বোধ করে।

সেই আকিবের কাছে আজকের বিকালটা খুবই নীরস নীরস মনে হচ্ছে। প্রাণহীন লাগছে। বাসার আশেপাশে কোনো খেলার মাঠ নেই। একটু জোরে নিশ্বাস ফেলার মতোন জায়গা নাই। এমনকি রাস্তার ফুটপাত.. তাও নাই। রাস্তার মধ্যে কেবল খানাখন্দ আছে। গাদাগাদি রিকশা, ভ্যান, অটো আছে। ফলে আকিবের মতোন অনেক কোমলমতি শিশুদের আজকাল একই অবস্থা। তার উপর আকিবের স্কুলেও মাঠ নেই। ক্যাম্পাস নেই। বিল্ডিং এর উপর বিল্ডিং। এইরকম পরিবেশ তার ভালো লাগে না। ভালো লাগার কথাও নয়। সে প্রজাপতির মতোন উড়তে চায়। মেঘের মতোন এদিক-সেদিক ঘুরতে চায়। রাজহাঁসের মতোন সাঁতার কাটতে চায়। কিন্তু কিছুই আর হয়ে উঠে না। যে বিকেলগুলো রঙিন হওয়ার কথাছিল, সেই বিকেলগুলো ছাদের বাগানে কাটছে। কাটাতে হচ্ছে।

এমনি মানসিক অবস্থায় আকিব কী মনে করে আকাশের দিকে তাকাল। সাথে সাথে তার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। তার ঠিক মাথার উপরে একটি উড়ন্ত সসার। দ্রুতবেগে তার দিকেই নেমে আসছে। আকিবের শরীরের সমস্ত লোম এক মুহুর্তেই দাঁড়িয়ে গেল। তার ভাবনার চেয়ে কম সময়ে উড়ন্ত সসারটি একেবারে তার ছাদের ঠিক উপরে চলে এলো। চোখের পলক পড়ার আগেই সসারটি থেকে একজন এলিয়েন বেরিয়ে আসলো।

ভুতপ্রেতের মতোন এতো বিশাল আকারের নয়। আকিবের সমবয়সী হতে পারে। এলিয়েনটি সোজা আকিবের দিকে করমর্দনের জন্য হাত বাড়িয়ে দিল। আকিবও ভয়ে ভয়ে হাত বাড়ালো। করমর্দন করতে করতে এলিয়েনটি বলল, হাই… আকিব, আমি ইকুচু। নেপচুন থেকে এসেছি। তুমি কেমন আছ?
আকিব বলল, আমি খুব ভালো আছি।

ইকুচু বলল, তুমি মিথ্যা কথা বলছো। তুমি মোটেই ভালো নেই। তোমার মন খুউব খারাপ। একা একা ছাদের বাগানে সময় কাটাতে তোমার ভালো লাগে না। আমি নেপচুন থেকে তোমার উপর দৃষ্টি রাখছিলাম। কারণ তুমি আমাদের গ্রহের বিজ্ঞানীদের পছন্দের তালিকায় আছো। তোমার আই কিউ অত্যন্ত বেশি। আচ্ছা আকিব, তোমাদের পৃথিবীতে কি মিথ্যা বলার ট্রেনিং সেন্টার আছে?

এমন অদ্ভুত প্রশ্ন শোনে আকিব খুব বিস্মিত হল। কিন্তু মুখে কিছু না বলে মাথা নেড়ে জানাল, নেই।
তাহলে তোমরা এতো সুন্দর করে ইনিয়েবিনিয়ে কীভাবে মিথ্যা বল? তোমরা কি জান না, মিথ্যা বলা মহাপাপ?
আকিব বলল, সব মানুষই এটা জানে। তবুও তারা মিথ্যা বলে। কারণ মিথ্যা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। আমিও এটা পছন্দ করি না। তবুও মাঝে মাঝে বলি। বলতে হয়।
ইকুচু বলল, মিথ্যা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি… এটিও একটি বড় মিথ্যা আকিব। যাক আসল কথা বলি, আমি একটি মিশনে এসেছি। তোমাকে আমাদের নেপচুন গ্রহে নিয়ে যাওয়ার মিশন। তুমি কি স্বেচ্ছায় যাবে নাকি জোর করে নিয়ে যেতে হবে?

আকিব এবার মনে মনে ভীষণ ভয় পেয়ে গেলো। কিন্তু মুখের মানচিত্রে ভয়-ডর কিছুই প্রকাশ করল না। বুদ্ধি খাটাতে লাগলো। হঠাৎ তার ষষ্ঠইন্দ্রিয় জেগে উঠল। আকিবকে কিছু নির্দেশনা দিলো। সে মোতাবেক আকিব বলল, তোমাদের গ্রহে তো মিথ্যার কোনো স্থান নেই। কিন্তু আমি এখনো মিথ্যা মুক্ত হতে পারিনি। তবে আমি চেষ্টা করছি। যদি আমি সে চেষ্টায় সফল হতে পারি, তাহলে আমার নেপচুন যেতে আপত্তি নেই।

এমন সময় ইকুচুর স্যুটের ভেতর ক্রিং ক্রিং আওয়াজ হল। আকিবও সেই আওয়াজ শুনতে পেল, কিন্তু কিছুই বোঝে উঠতে পারল না। ইকুচু বলল, হাইকমান্ড নির্দেশ দিয়েছে, তুমি এবার সঠিক বলেছ। আমরা তোমার মিথ্যা মুক্ত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করব। আমার হাতে আর সময় নেই। বাই আকিব…. বাই…

আকিবের বিস্ময়ের ঘোর তখনও কাটেনি। তবুও ইকুচু’র দিকে হাত নেড়ে জানালো, বাই ইকুচু… বাই।।

গোখরো সাপের ফণা

যেদিন সোনেলার মতোন সোনালি গল্প আমার হাত
ছুঁয়েছে, সেদিন থেকে কবিতাও কোনো এক মন্বন্তরে
ঠিকানা খুঁজে নিয়েছে….
যে নিয়েছে মেঠোপথ আপন করে
সে কি আর কাদামাটি, জলে ডরে?

তবুও আজ এতোদিন পরে স্বস্তিকা এসেছে ফিরে
যে নিজেকে হারিয়ে খুঁজছিলো অযুত মানুষের ভিড়ে!
যে মানুষ ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে, ঘুম ভাঙলেই সব মিছে হয়
যে পাথর জেগে স্বপ্ন দেখে, একদিন তা-ই সত্যি হয়!

আমিও এক স্বপ্নহীন স্বপ্নিল মানুষ, পথের ধুলিক্ণা
আমাকে যেদিকে খুশি বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে যায়,
তবুও আমায় কেউ কেউ দেখায় গোখরো সাপের ফণা!