জসীম উদ্দীন মুহম্মদ এর সকল পোস্ট

স্বাধীনতার সুখ

কোন সুখে বাবুই পাখি
করে শিল্পের বড়াই
যেই সুখেতে মুক্তিযোদ্ধা
করেছিলেন লড়াই।

কোন সুখে একটি শিশু
পতাকার ছবি আঁকে
যেই সুখেতে একটি শিশু
মা…মা বলে ডাকে।

কোন সুখেতে মাঝি ভাই
ধরে নৌকার হাল
যেই সুখেতে বয়ে চলেছে
বাংলার নদী খাল।

কোন সুখেতে বৃষ্টি ঝরে
মায়ে ফুলায় বুক
যেই সুখেতে চাষি ভাই
সব ভুলে যায় দুখ।

কোন সুখে দামাল ছেলে
আকাশে ওড়ায় ঘুড়ি
যেই সুখেতে দাদা-দাদু
খুলে গল্পের ঝুঁড়ি।।

বাপজান

চলো.. এবার সভ্যতার পাটাতন উল্টে দিই
গুড়িয়ে দিই কামুক নগর থেকে শহর
বস্তাবন্দি করে সমুদ্রে ডুবিয়ে দিই এইসব প্রহর!

চলো.. আবার জংলী হই আন্দামান থেকে
আমাজান, দু’উরুর সন্ধিতে রক্ত দেখে দেখে
আর কতো কাঁদবে বাপজান…?

চলো.. ফিরে যাই দিগম্বর বেলা; অতঃপর
যতো খুশি খেলতে থাকো আদিম খেলা..
ওহে কাবিলের উত্তরাধিকার!
যে জন্মছে নারীর গর্ভে.. সেই কেড়ে নেয়
তার অধিকার!

ডিকশনারি ঘেঁটে কোনো শব্দ পাইনি.কেবল
বেজন্মা ছাড়া; কবিতা লিখি বলে সব দায়
কাঁধে তুলে নিতে নিঃশর্ত রাজি আছি…
কেবল একটিবার স্বীকার যাও তুমি পথহারা

বইপাঠ নিয়ে আমার স্মৃতিকথা

চার ভাই-বোনের মধ্যে আমি সবার ছোট। ছোটকাল থেকেই দেখে আসছি, বাবা-মা, ভাই-বোন সবার হাতে বই। বলা চলে, একটি পাঠক পরিবারে আমি বড় হয়েছি। সঙ্গত কারণেই আমিও সেই বাল্যকাল থেকেই বইয়ের সাথে আছি। দস্যু বনহুর সিরিজ থেকে শুরু। অতঃপর মোহন সিরিজ, বাহরাম সিরিজ, দস্যুরাণী সিরিজ, রানা সিরিজ এসব পড়তে পড়তে একটা সময় নাওয়া-খাওয়ার কথা ভুলে যেতাম। মাঝে মাঝে মা বকুনি দিতেন। বলতেন, আউট বই এতো পড়লে পাঠ্যবই কখন পড়বি…? জানতাম, মায়ের কথা একান্তই সত্য; কিন্তু মন মানতো না। পরের বইয়ে কী ঘটনা ঘটল সেটা জানার জন্য ছটফট করতাম! সেই আমি এখনও একজন আপাদমস্তক পাঠক। রবীন্দ্র-নজরুল-শরৎ এখনও আমাকে ভিন্ন ভিন্ন জগতে নিয়ে যায়।

নিজের সম্পর্কে একটা ছোট্ট ফিরিস্তি ইচ্ছে করেই দিলাম। কারণ নতুন প্রজন্ম আমাদের মতো নয়। আমাদের সময় একটা পাঠক সমাজ ছিল। আর এখন আছে মোবাইল সমাজ। ছোট-বড় সবার হাতে হাতে বইয়ের বদলে মোবাইল শোভা পায়। ইন্টারনেট যেন বিনোদনের শ্রেষ্ঠ হাতিয়ার। ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, মেসেঞ্জার এবং অনলাইনে একা অথবা গ্রুপ ভিত্তিক গেমস খেলার রয়েছে অবারিত সুযোগ। এভাবেই আমরা বদলে গেছি। প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছি। তবে এতকিছুর পরেও যে পাঠক একেবারেই নেই… আমি সে দাবী করছি না। কিছু পাঠক এখনও আছেন। কিন্তু তাদের অনেকের হাতে বই নেই!

কেন বই নেই? এটি একটি মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন। যেহেতু আমি বই প্রেমিক, সেহেতু যত ব্যস্ততাই থাকুক না কেন… বইমেলায় আমার যাওয়া চাই-ই চাই। তবে নানা কারণে এবার যাওয়া হয়নি। অবশ্য কথা হয়েছে বেশ কয়েকজন পাঠক, লেখক এবং প্রকাশকের সঙ্গে। মোটের উপর বলা যায়, পাঠক, লেখক এবং প্রকাশক কেউ সন্তুষ্ট নয়। পাঠকের অভিযোগ, বইয়ের অনেক দাম। এতো দাম দিয়ে আমার মতো মানুষের পক্ষে বই কেনা সম্ভব নয়। লেখকের অভিযোগ আরও গুরুতর। কোন প্রকাশক তাদের নিজস্ব খরচে বই প্রকাশ করে না। লেখককে নিজের ঘাটের টাকা খরচ করে বই প্রকাশ করতে হয়। তার উপর প্রকাশিত বই কেউ কিনেন না। সবাই কেবল উপহার চান। একবারও ভাবেন না, একটি বই লিখতে লেখক অনেক শারীরিক-মানসিক শ্রম দিয়েছেন। পকেটের টাকা খরচ করে বই প্রকাশ করেছেন। শুধু এখানেই শেষ নয়। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবীরা কিছু বই কিনলেও প্রকাশক কোনো রয়্যালটি দেন না। জিজ্ঞেস করলে উল্টো ঝাড়েন, আরে ভাই.. বললাম তো, আপনার কোনো বই বিক্রি হয়নি।

প্রকাশকের অভিযোগ আরও গুরুতর। ভাইরে… খুব বিপদে আছি। কাগজ, প্লেট, বাঁধাই, সবকিছুর দাম বেশি। বই কেউ কিনে না.. খালি খরচ আর খরচ… লস আর লস ইত্যাদি… ইত্যাদি। এই যখন বাস্তবতা তখন একজন পাঠক হিসাবে, একজন লেখক হিসাবে আমার আর কিছুই বলার নেই। কেবল এক চিলতে সান্ত্বনার জায়গা খুঁজছি।।

দোসরা জীবন

কিছুটা অন্তর্মুখী আমি প্রায় পঞ্চাশে দাঁড়িয়ে আছি
এখনও শামুকের মতোন চিরায়ত খোলস বন্দি,
যেই পথ দিয়েই হেঁটে যাই… সেই পথই চিনি না
কত প্রেম কতোবার নিরবে এসে এসে ফিরে গেছে,
আমি এমনি অচল কখনও প্রেমিক হতে পারিনি!

কখনও সখনো নিজেকে জড়বস্তু ভেবে বুনিয়াদি
আত্মতৃপ্তিও কম নিইনি, এরও বেশ কিছু আগে…
যেদিন প্রথম প্রথম শিশ্ন উত্থান টের পেয়েছিলাম,
সেদিনও কাউকে কোনো প্রশ্ন না করেই নিজেকে
জীব বলে সাব্যস্ত করেছিলাম; এরপর আস্তিক,
নাস্তিক কতো কালই তো আসলো আর গেলো,
বানের জলের মতোন আমি কেবল ভেসে চলেছি!

এখন আমি নিজেই দর্শন, জ্ঞানপাপীদের পিছু পিছু
ঘুরি, দর্শক আর ধর্ষকের মাঝামাঝি; এখনও
বহির্মুখী পরাবাস্তব রীতির কিছুটাও আয়ত্ত করতে
পারিনি, তবুও চলছে কানামাছির দোসরা জীবন!!

সে এখন না নদী, না নারী

গল্পহীন নদীটার কথা অনেক অনেকদিন বলা হয়নি
সে এখন না নদী আর না নারী
অথচ একদিন সে কতো লাবণ্যময় কবিতা ছিলো!

শীতলপাটির মতো প্রাণের উপর প্রাণ বিছিয়ে দিতো
তার শব্দেরা মৌমাছির আজন্ম গুনগুন হতো
সেও ছিলো টুকটাক কোনোএক অলৌকিক জীবন;
সেখানেও তামাশার রাত কোনোদিন শেষ হতো না
অবলীলায় হারিয়ে যেত নদী অথবা নারীর মন!

আর আজকাল নাবিক ছাড়াই দিনকাল চলে যায়
সেই রাতের কথা আজ আর তোমায় নাই বা বলি
জানো, রাজনীতি এখন সবাই কম-বেশি বুঝে..বিষ
অথবা খোলা জানলার ধারের দোয়েলের শিস।

তবে সবাই আমার মতোন রাতকানা, দিনকানা,
ডানকানা, বামকানা নয়… দৈনিক হিসাবের মিল
কোনটা চিল আর কোনটা শকুন অন্তত বুঝতে পারে;
কেবল আমিই শুধু থেকে গেছি সে-ই বোকা বোকা
কবিতার রাজ্যপাট অনেক আগেই চুকিয়ে দিয়েছি
তবুও বিনিময়ে বিনিয়োগ যা পেয়েছি সবই ধোঁকা!!

পলাতকা সময়ের হাত ধরে

আজ আবার একটা তরতাজা প্রেম এইমাত্র বাসি হলো,
এখন আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে নতুন প্রেমিকা,
আমিও স্মিতহাস্যে ওদের অদল-বদল করে নিয়েছি;
যেভাবে অদলবদল হয় নতুন-পুরাতন লাল-নীল
কোর্তা ঠিক ঠিক সেভাবে; তবে এবার সে ধরা খাইছে,
ধরা খাইছে পলাতকা বেদুইন বেদিল সময়ের হাত ধরে!

বলছিনা গেলো বছরটা জলে গেল, একটাও পাণ্ডুলিপি
প্রস্তুত হয়নি, কবিও কবিতার মতো আমিও বর্ণবাদের শিকার;
অবশ্য বড়ো প্রেমের কাছে বুক আর পিঠ
এদের কোনোটাই কম বা অতিমুল্য নয়; ফেসবুকে
কবিতার এত প্রসব দেখে কোন এক বেরসিক পাঠক
মাথাটাই কেটে দিলে, পরে কিছু হিসেব-নিকেশ করে দেখলাম,
এই তো বেশ বেঁচে আছি বজায় আছে ঠাট
না হয় ভুলে গেছি দু’একটি অবুঝ নামতার পাঠ…!!

আমরাও না হয় রোজই একটু একটু করে বদলে যাবো
যেমন করে খোলস বদলে ডোরাও কাল কেউটে হয়
আমরাও বদলে যাবো তেমন করে অথবা
অক্টোপাস হবো, পলাতকা বেরহম সময়ের হাত ধরে!

বিবর্ণ রোদ

কিছু বিবর্ণ ভালোবাসা চড়া দামে বিক্রির আশায়
গোল্ড প্লেট হয়েছিলাম, ক’দিন বেশ চিকচিকে রোদ
বড়ো অদ্ভুত; লাগসই প্রেম খাতির করেনি, এখন
সুপ্রভাও ক্ষণপ্রভা, রাস্তার সস্তা শব্দেরা গিলে খেতে
চায় তিন অবস্থা- কঠিন, তরল এবং বায়বীয়!

একদিন গান পাউডারে মন পুড়ে কয়লা হয়েছিলো
সেই পোড়ামন জোড়া লাগেনি, অস্তগামী সূর্যের মতো
এর কোনো উত্তাপ নেই; ভালোবাসা তখন কেবলই
যদি, কেউ আছো? দাঁড়ি, কমা, কোলন, সেমিকোলন;
শোধ নিবে, নয়ত শোধ দেবে; আমিও উৎরে যেতাম
পুরুষ ভাবনার নারী ও নদী!

এখন ফেলে আসা দিন, রোজই চতুর্থ পুরুষ হয়;
বিবর্ণ রোদ তবুও কিছুটা উষ্ণতা ফেরি করে, জীর্ণশীর্ণ
আবেগ আর ঝুঁকি নিতে সাহস পায় না, সতর্ক প্রহরায়
তটস্থ থাকে নৈঃশব্দের বাতিঘর, কেবল পেছনে ফেনা
হয় নির্ঝরের নির্জনবাস; মাল্টিপল স্কেরোসিসে আক্রান্ত
সময় কোনো কথা বলে না, বলতে পারে না!
তবুও ভালোবাসাহীন আমাকে আমি নিজেই চিনি না!

একটি স্বপ্ন অথবা দুঃস্বপ্ন

কিছুক্ষণ হয় একটা স্বপ্ন অথবা দুঃস্বপ্ন দেখেছি
তখন রাত যেমন নেই, তেমনি দিনও নেই
অক্ষরেখা বরাবর দিনবদলের তাবিজ কবচ আছে,
অথচ আমার আসক্তিহীন স্বপ্ন বেচারার
কোনো পুংলিংগ যেমন নেই, তেমনি স্ত্রীলিংগও নেই!

কিছু কিছু কবিরাজি ব্যথা আতশবাজির চেয়ে
কোনোঅংশে কম নয়, ওদের যতোই….. গোঁয়ার
গোঁফের আড়ালে লুকিয়ে রাখি না কেনো
মরিচ পোড়া গন্ধে ভালোবাসা ঠিকই টের পায়,
সে ভালোবাসার হয়ত কোনো উদাহরণ নাই
সে প্রথম প্রেমিকা, দ্বিতীয়া স্ত্রীর মতোন বাজখাঁই!

তবুও বেলা আর খেলা একদিন গড়পড়তা হবেই..
ভোজবাজির মতো নাভিমূলে জন্ম নিবে বটবৃক্ষ
সাগর পাড়ির আকণ্ঠ ইচ্ছায় জলাবদ্ধতার গণকবর
এতোকিছু হতাশার পরেও কে চায় দুঃস্বপ্নের রক্তচক্ষু
এরচেয়ে বরং পরের জন্মের কথা ভাবা যাক…
ভাবা যাক……. ক্ষমতা নয় ভালোবাসার উৎস!!!

ঝরাপাতার গান

রাস্তার একপাশে মাথা নিচু করে হাঁটছিলাম
আমার সাথে হাঁটছিল একাকি ষোড়শী চাঁদ
হাঁটছিল আদমসুরত, সপ্তর্ষিমণ্ডল ওরাও..!

কেউ কোনো কত্থা বলছিলাম না.. না আমি
আর না ওরা; প্রহরের পর প্রহর শুকোয়
আচানক কথা বলে উঠে একটি গাছের গোড়া!

ইদানিং পাতাঝরার মতোন মানুষও ঝরে যায়
আকস্মিক উল্কাপাতের মতোন….
একবার মাটিতে গড়ালে আর কিছুই নাই!
তবু্ও প্রতিদিন হালনাগাদ করি জীবনের খাতা
কেবল ভুলে যাই জীবন মানে শুধুই ঝরাপাতা!

বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রপ্রভাব

3170

বাংলা সাহিত্যের কথা বললেই যে নামটি সর্বাগ্রে আসে তিনি আর কেউ নন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। যাকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ কবি-সাহিত্যিক বললেও অত্যুক্তি হবে না। যিনি “গুরুদেব”, “কবিগুরু” “বিশ্বকবি” ইত্যাদি অভিধায় ভূষিত। ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ, অসংখ্য গান ও অন্যান্য গদ্য সংকলনই তার আধিপত্য এবং শ্রেষ্ঠত্বের স্বাক্ষর বহন করে। সাহিত্যের এহেন শাখা নেই, যেখানে তার দীপ্ত পদচারনা নেই।

সেই হিসাবে বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্র প্রভাব খুবই স্বাভাবিক। পাঠ্যবই থেকে শুরু করে গবেষণাকর্ম, এমনকি সাধারণ পাঠকের কাছে এখনও তার জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। তবুও আমরা রবীন্দ্রনাথের কবিতা, গল্প, উপন্যাসে তার দুর্দান্ত প্রভাব নিয়ে সামান্য আলোচনার চেষ্টা করব। প্রথমেই কাব্য প্রসঙ্গ। অনেকের মতে, সন্ধ্যা-সঙ্গীত’ কাব্য থেকেই কবি তার নিজস্ব পথ খুঁজে পান। স্তবক রচনা, মিল সম্পাদন, মাত্রাবৃত্ত ও অক্ষরবৃত্তের নানারীতির প্রবর্তন এবং গদ্যছন্দের আবিষ্কারে তিনি বাংলা কবিতায় বৈচিত্র্য এনেছেন। ভাবের ক্ষেত্রেও তার অনুভূতি বিস্ময়কর। বিশেষ করে গীতি-কবিতা রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিতে সার্থকরূপ পরিগ্রহ করেছে। উনিশ শতকের শেষ পর্যায় থেকে বিংশ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত তিনি অজস্র রচনার দ্বারা পাঠকের রসপিপাসা নিবৃত্ত করেছেন। ভাবের ঐশ্বর্যে, কল্পনার বৈচিত্র্যে, ভাষার মাধুর্যে, প্রকাশের অসাধারণত্বে তার কবিতাগুলি অতুলনীয়। মানসী’ থেকে রবীন্দ্রকাব্যে পরিণতির ছাপ লক্ষণীয়। যদিও তার প্রথমদিকের কাব্যগুলিতে বিহারীলাল চক্রবর্তীর প্রভাব কিছুটা দেখা যায়। অবশ্য এরপরের কাব্যগাঁথা কেবলই রবীন্দ্রময়। এই যে এতো কবিতা লিখেছেন; তবুও শেষ জীবনে নিতান্তই আক্ষেপের সুরে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, “আমার কবিতা জানি আমি.. গেলেও বিচিত্র পথে হয়নি সর্বত্রগামী”! কবিগুরুর এই যে অতৃপ্তি, আক্ষেপ তা তাকে আরও মহিমান্বিত করেছে। তার সম্পর্কে জানার আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

একথা অনস্বীকার্য যে, রবীন্দ্রনাথ বাংলা ছোটগল্পের প্রথম সার্থক রূপকার। ‘সাধনা’ পত্রিকার মাধ্যমে তার ছোটগল্পের শুরু। তবে বাংলা ছোটগল্প যে পাশ্চাত্য গল্পের কাছে ঋণী, এমন কি রবীন্দ্রনাথ নিজেও এডগার অ্যালান পো-র মতোন বিদেশি সাহিত্যিকের সাহায্য গ্রহণ করেছিলেন, এ তথ্য আজ প্রমাণিত। প্রসঙ্গত প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের একটি উক্তি স্মরণযোগ্য। তিনি ছোটগল্পে রবীন্দ্রনাথের অসাধারণ কৃতিত্বের কথা স্মরণ করার পাশাপাশি লিখেছেন, “উপন্যাসের মত, ছোটগল্প জিনিসটাকেও আমরা পশ্চিম হইতে বঙ্গসাহিত্যে আমদানি করিয়াছি।”

রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প দু’টি পর্বে বিভক্ত। প্রথম পর্বের গল্পগুলিতে পদ্মা তীরবর্তী উত্তরবঙ্গের গ্রামীণ জীবনই প্রধানত প্রতিফলিত হয়েছে। সমকালীন জটিল নাগরিক পরিবেশ থেকে এই পটভূমির পার্থক্য অত্যন্ত স্পষ্ট। দ্বিতীয় পর্বের ছোটগল্প মূলত সবুজপত্রে প্রকাশিত গল্প। এগুলোর ভাব, বিষয় ও রূপকল্পে সম্পূর্ণ নতুনত্ব লক্ষণীয়। তবে রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্পের আসল পালাবদলের শুরু ‘ষষ্ঠনীড়’ রচনার কাল থেকে। তার উত্তরবঙ্গের জীবন অভিজ্ঞতা নির্ভর গল্প ৫৯টি আর নতুন জীবনবোধে সিদ্ধ গল্প ২৩টি। যেগুলো পরবর্তীতে গল্পগুচ্ছে স্থান পেয়েছে। অবশ্য এরপরেও রবীন্দ্রনাথ গল্প লিখেছেন, তবে সেগুলিতে রবীন্দ্রমানসের প্রতিফলন ততটা নেই। তবুও বাংলা ছোটগল্পে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিঃসন্দেহে পথিকৃৎ।

এবার আসা যাক সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় ধারা উপন্যাস প্রসঙ্গে। কিশোর রবীন্দ্রনাথ কাদম্বরী দেবীর প্রেরণায় প্রথম উপন্যাস লিখেছিলেন ‘করুণা’। প্রায় বছর খানেক ধরে ‘ভারতী’ পত্রিকায় সেটি প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একে একে লিখেছেন ঐতিহাসিক, সামাজিক, স্বদেশ চেতনা, রাজনৈতিক, কাব্যোপম এবং রোমান্টিক উপন্যাস। রবীন্দ্র উপন্যাসের ভাষাশৈলী সন্দেহাতীত ভাবে বাংলা সাহিত্যের চিরস্থায়ী সম্পদ। যদিও প্রথম দিকের ‘বউ ঠাকুরাণীর হাট’ ও ‘রাজর্ষি’ উপন্যাসের ভাষায় সাধু গদ্য এবং বঙ্কিমী গদ্যের প্রভাব স্পষ্ট। কিন্তু পরবর্তীকালে তার উপন্যাসে বিস্ময়কর পরিবর্তন দেখা দেয়। আর এই পরিবর্তন শুরু হয় ‘ঘরে বাইরে’ থেকে। সর্বোপরি, সাহিত্যের যে কোনো শাখার নাম নিলেই চেতনে অথবা অবচেতনে যে নামটি চলে আসবেই… তিনিই আমাদের রবি। যাকে ছাড়া বাংলা সাহিত্যের বিকাশ এবং সমৃদ্ধি প্রায় অসম্ভব ছিল।।

উপচানো জলের খতিয়ান

ক’দিন ধরে আমার সুখ যেনো উপচে উপচে পড়ে
আমিও কম না পরিত্যাক্ত একটি ডায়েরির পাতায়
লুকিয়ে রাখছি সেই উপচানো জলের খতিয়ান..,
তবুও সবাই বেসুরো জানতে চায়, কেমন আছো?
আমিও সংকোচহীন বলে দিই তাবত বয়ান—
বলি, বেশ ভালো আছি.. আছে দুই পাটাতনে পা
কেবল অন্তক্ষরা গ্রন্থিটার খবর কাউকে বলি না!

সেদিন বাংলিশ চ্যাটে কেউ একজন বললো,
আমাকে প্রেম দাও -আমি তোমায় শক্তি দেবো
বুকের গহিনে সেই প্রেম পারিজাত করে রাখবো!
আমি হাসতেও পারিনি, কাঁদতেও পারিনি..
শুধু নিজেকে নিজে একবার বললাম, যেই প্রেম
আমাকে একেবারে নিঃস্ব করেছে, আমাকে
চোরাবালি চিনিয়েছে, যেই প্রেম আমাকে ঘুমভাঙা
রাতদুপুরে মৃত কবিতা প্রসব করতে শিখিয়েছে
আবার কেন সেই প্রেম?

একবারও বলতে পারিনি চাইলেই যেই প্রেম
আষাঢ়ে জলের মতো পাওয়া যায়, এতো এতো
সস্তার প্রেম এখন আর আমার কাছে নেই-!!
ভালোবাসার জন্য যে আমি একদিন পৃথিবীর সব
বিশেষণ কিনে নিয়েছিলুম, আজ আর সেসবের
একটিও জীবন্ত নেই, এরা সবাই
একসমুদ্র অবহেলার নিদান জলে ডুবে মরেছে!!

ধূসর পাণ্ডুলিপি

এখন বেশ আছি আঁতুড় ঘর, ক্ষুধা আর শীত
শূন্য হাত সকরুণ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে
আর বাজখাঁই গলা বেসুরো হাঁকে
এ জীবনের নিবেদন; এখন মানুষগুলো
যেনো কেমন কেমন, কেউ তাকিয়েও দেখে না!

ওই পাড়ায় গিয়েছিলাম জ্ঞান দর্শন; সেখানেও
ঈশ্বর জেগে জেগে ঘুমিয়ে আছে; কামলা আর
আমলা ওরাই এখন বেশ আছে, আমিও কম না
বয়ে বেড়াই জীবনের মামলা, সংজ্ঞাহীন দিন-রাত
তবুও চলে যায়, কখনও জোয়ার, কখনও ভাটায়!

অনুতাপ আর পরিতাপ ওরাই এখন এ জীবনের
পদাবলী, ওদেরই এখন গিলে গিলে খায় বিষকাঁঠালি;
বিলুপ্ত বোধ সেও মাঝে মাঝে বিপ্লবী হতে চায়
তবে হালে পানি পায় না; গ্রীলকাটা জানলার মুখের
মতোন এই আমিও এখন কেবল ধূসর পাণ্ডুলিপি!

কবিতার কথা

একদা নিস্তব্ধ রাত্রির কাছে কাদঁতে শিখেছি
কত শামুকের পা সেদেঁছি, কত ঝিনুকে পা কেটেছি
তবুও একটা কবিতা লিখতে পারিনি!
অথচ একদিন শতরুপে ভালোবাসা এসেছিলো
যাত্রীর ভিড়ে নৌকোয় আমার ঠাঁয় হয়নি
এখন হাজার রুপে রুপালি ভালোবাসা আসলেও
আমার কোনো পরওয়া নেই.. কেননা
এখন আমি কবি নই, পথের মাঝেই পথ খুঁজি।

এখন আমি অন্ধকারে ডুবসাঁতরে হাঁটতে থাকি
যেদিকে কোনো জনমানুষ নেই সেদিকে
যে চাঁদ একবার কলংকে মরেছে,
সেই চাঁদের আর কলংকের এতো ভয় কী!
মাঝে-সাজে উঠোনে রোদ্দুর দেখে হেসে উঠি
আচানক পিপীলিকার মতো কেউ চেপে ধরে টুটি!
তবুও নাবালক ব্যাঙ এর মতো বৃষ্টিতে ছাতা খুঁজি
তবুও ভালোবাসা বলতে কবিতাকেই বুঝি…!!

একদিন তোমাকে

একদিন তোমাকে কবিতার কথা বলেছিলাম
বলেছিলে, প্রীতিলতা, সূর্যসেন, তিতুমীর ওদের বলো;
আমি কোনো কিছু বলতে পারিনি!
বলতে পারিনি, ঠাট্টা ছলে তুমি সেদিন যথার্থ বলেছিলে
প্রত্যেকটি কবিতাই এক একটি জ্যান্ত বিপ্লব !!

বলতে পারিনি আমার কাছে ভালোবাসা আর বিপ্লব
একই ফুলে গাঁথা মালা!
কবিতা কোনোদিন কালোকে সাদা বলে না
কবিতা কোনোদিন হেমন্তকে বসন্ত বলে না
কবিতা কোনোদিন চিলকে শকুন বলে না
কবিতা কোনোদিন প্রেমকে অসুন্দর বলে না!!

অতঃপর তুমি আরও কতোকিছু বললে, কতোকিছু;
কাক আবার কোন্‌ হাঁড়ির খবর রাখে না?
তখনও আমি তোমাকে কিছু বলতে পারিনি!!
বলতে পারিনি, তুমিও নারী; নদীও নারী—-
বলতে পারিনি এমনি কতো হাঁড়ির খবর… কেবল
কবিতা আমাকে এতোটা আস্তাকুরে নামতে দেয়নি!

বিশ্বকাপ ক্রিকেট

29573

বিশ্বটা যে কাঁপছে এবার
কাঁপছে ক্রিকেট জ্বরে
ব্যাটার আর বোলার এরা
যাচ্ছে সবাই লড়ে।

চার হাঁকছে ছক্কা হাঁকছে
হাঁকছে গলার স্বরে
জান তুমি কাপটা এবার
উঠবে কাহার ঘরে?

নানান দেশের নানা মানুষ
মাতছে সবাই খেলায়
ব্যাটে-বলে কাটছে সময়
সাজছে ক্রিকেট মেলায়।

এই কাপটা বাংলাদেশের
কেউ নিও না ভাগ
টাইগাররা বোলিং ব্যাটিং এ
ভাঙ্গবে সবার দেমাগ!