কাজী রাশেদ এর সকল পোস্ট

নারী, আজো বন্দী

ভগবান কেমন করে গড়েছেন
আমায় অথবা তোমায়,
সে খবর আমার জানা নাই,
সে খবরে আমার কোনদিন ছিলো না মন,
তবে দশ মাস কষ্টের গর্ভধারণ,
খেয়ে না খেয়ে সৃষ্টির লালন পালন,
এ শুধু তোমাতেই পাই, নারী,
মা আমার, গর্ভধারিণী মা।

সৃষ্টির উষা লগ্নে বীজ থেকে গাছ,
মাটির বুক চিরে নতুন জীবন,
গাছের তন্তু থেকে লজ্জা নিবারন,
আচ্ছাদন, মানব সমাজের এগিয়ে চলা,
সে সবই তোমার,
নারী শুধু তোমারই অবদান।

জীবন থেকে জীবনকে বয়ে চলা,
গাছ থেকে ফল, ফল থেকে গাছ,
লজ্জার আচ্ছাদনে নিজেকে মুড়ানো,
প্রকৃতির আস্ফালনে তোমার ধীরচিত্তের
অসাধারন নিমগ্নতা, তোমার বিরুদ্ধেই,
তোমাকে বন্দী হতেই হয়েছে ব্যবহার।

ব্যক্তি সম্পত্তির লোভের কাছে,
বিশেষ মুহুর্তের দুর্বলতা আর
কিছু নিরাপদ আশ্রয়ের লোভ,
তোমাকে এনে দিয়েছে পরাধীনতার শিকল,
পুরুষের শক্তির কাছে পরাভব মেনে,
হয়ে গেছো সন্তান উৎপাদনের যন্ত্রমানব।

প্রবঞ্চনা, মিথ্যা আর মিথ্যা আশাবাদের
কুট কৌশলে তুমি আজো বন্দী,
নারী মুক্তির কথা বলে আজো তুমি পন্য,
ক্ষমতার অংশীদার হয়েও পুরুষের ক্রীড়নক।
০৮ই মার্চ, ২০১৯ইং।

সার্বজনীন প্রেমের কবিতা

বলেছিলে পাশে থাকবে সুখে অথবা দুঃখে,
বলেছিলে সম্পর্কের বাঁধনে থাকো বা না থাকো,
আমরা পাড়ি দিবো অনেকটা পথ,
সম্পর্ক বিহীন এক সম্পর্কে আমরা হবো
অনাদি কালের ভেসে বেড়ানো হংসমিথুন।
সেসব কথা এখন শুধুই মনের কড়িকাঠে ঝুলানো অপ্রয়োজনীয় শিকা, হঠাৎ হাওয়ায় মাঝে মাঝে দোল খেয়ে যায় মনের বারান্দায় ।।

সম্পর্কের বাঁধন বড়ো মায়াবী এক দোলা,
মনের সাথে শরীরের এক মায়াবী খেলা,
তুমি চাও নি এই মায়াবী খেলায় তুমি আমি
মেতে উঠি, ভুলে যাই সেই নিঃস্বর্গ ভালোবাসা।
তুমি চাওনি বলেই আমার এই না পাওয়া ভালোবাসা, পেতে চায় নি কোন পার্থিব সুখ।

সেই তুমি যখন অন্যের হাত ধরে,
ভালোবাসায় মুখ ঘষো অন্যের বুকে,
সময় অসময় ভুলে যেয়ে পার্থিব সুখের আশায়
পথ হাঁটো অনন্তকাল, আমি সব বুঝেও
চেয়ে দেখি শুধু মানুষের মুখ,
দেখে নেই কথা রাখা না রাখা মানুষের
আদলে কি কোন ফাঁক থাকে? থাকে কোন
অস্বাভাবিক রাজটীকা একেবারে তোমার মতো।

ইচ্ছের ডালপালা

ইচ্ছে গুলো আজ নেই ইচ্ছে পুরণের ঘরে, মনের কুহকজাল বাস্তবতার বেড়াজালে নিত্য বন্দী।
পিপীলিকা যেমন ডানা চায় না,
তবু তো ডানার ইচ্ছে হয়,
সেই ডানাই হয়ে যায় মৃত্যু সমান।

ইচ্ছে গুলো আজ বড়োই বেমানান, বড়োই গোলমেলে, জীবনের
হিসেবের সাথে মিলে না কিছুতেই।

যাদের আশা ভরসার সমুদ্রে বসবাস,
যারা নিত্য দিনের পরিক্রমায়, শুধুই এগিয়ে চলে ইচ্ছে অনিচ্ছের ডানা মেলে, তারা সহজেই বলে দেয়,
আশা কখনোই ফুরায় না,
আশার কখনোই শেষ নেই।

যারা ইচ্ছের ফানুস উড়িয়ে,
আকাশের দিকে তাকিয়ে সাজায় নিজেদের ইচ্ছের ডালপালা,
বাস্তবতার কঠিন ঝাপটায়,
সব ইচ্ছে নদীগুলো একে একে
শুকিয়ে যায় জীবনের মাঝপথে, তখনো কি আশা থাকে অপার
সম্ভাবনা নিয়ে, জীবনের দরজায়?

বিতাড়িত মানুষ

আমি প্রতিনিয়ত ভুলে যাচ্ছি,
ভুলে যাচ্ছি আশেপাশের মানুষজন,
ভুলে যাচ্ছি পরিবেশ প্রতিবেশ, চিরচেনা এই দেশ, এই শহর- নগর,
বন্দর, বাজার ঘাট, লোকালয়,
একটা আবছায়া মননে মাঝে মাঝে
দাগ কেটে যায়, মনে হয় একদিন
মানুষ ছিলাম এই ভুবনে। অথচ এখন
আমার শুধুই পরিচয় আমি হিন্দু অথবা মুসলমান অথবা বৌদ্ধ
কিংবা খৃষ্টান, মানুষ হিসেবে পরিচয় আজ কেবল বক্তৃতা অথবা কল্পনায়।

আমি কি নিউরোসিসের প্রভাবে আস্তে আস্তে সাইকোসিস হতে পারি?
নাকি মানসিক এই প্রশ্নের মুখোমুখি
দাঁড়িয়ে সাইকো সোমাটিক হয়ে যাবো?
আমি আজকাল এক ভয়ানক যন্ত্রনাময়
সময় পাড়ি দিচ্ছি, পাড়ি দিচ্ছি এক অজানা ভুবন, রাতের নিশ্চিত ঘুম
চলে গেছে সেই সুদুর অতীতে,
রেপিড আই মুভমেন্টের ভেংগে যাওয়া ছন্দ প্রায় সারারাত জাগিয়েই রাখে।

গ্যাস্ট্রোটাইটিজের অসীম করুণায়
গলায় আটকে থাকে এক অস্থির দলা,
অজীর্ণ আর পেট ফুলে থাকার অভ্যস্ততায় নাওসিয়া ভোমেটিং এর একক রাজত্ব আমার সারা দিনমানে।
তবুও মন শুধু খুঁজে ফিরে একই প্রশ্ন, একই জিজ্ঞাসা, আমি মানুষ
থেকে বিতারিত হলাম কবে ?

আমার নিমগ্নতা

১।
খুব ইচ্ছে ছিলো, খুব জানার ইচ্ছে ছিলো,
তোমার মনের পাঠে আমার মতো এক অল্পদামের মানুষের কতটুকু স্থায়ী, কতটুকু দাগ ফেলা, কতটুকু গভীরে শিকড় গজিয়ে ছিলাম,
তোমার ঐতিহ্যশালী হৃদয়ের গভীরে।

তোমার সাথে আমার পথচলায় ছিলো না
কোন মিছিল, ছিলো না লাল পতাকায় জড়ানো,
পবিত্র শপথ, হাতে হাত রাখাও হয় নি কোনদিন,
তবুও মনের মধ্যে এক অভাবনীয় কল্পনা
আমাকে বার বার তোমার কাছেই নিয়ে গেছে।

তোমার অপ্রেমে,
তোমার প্রত্যাখানে,
লড়াইয়ের একাগ্রতার মতো,
সব কিছু পিছনে ফেলে
তোমাতেই নিমগ্ন হয়েছি,
নদী যেমন সমুদ্রে,
পাথর যেমন নুড়ি থেকে বালুতে,
কালো মেঘ থেকে যেমন বৃষ্টিতে,
আমিও আশা নিরাশার দোলাচলে,
হোচট খেতে খেতে ফিরে যাই তোমাতেই।

২। পুরুষের পৌরষ্যহীনতা।

আজকাল আর কবিতায় মন বসে না,
আজকাল আর কবিতা লিখতেও পারি না।
এতো এতো নির্দয় ঘটনায় মনের সুপ্ত নদী
শুকিয়ে যায় অবিরত, পথ হারায় যখন তখন।

তিন থেকে অশীতিপর সব নারী,
নিজেকে নিয়েছে গুটিয়ে,
কতিপয় পুরুষের যৌন তান্ডবে,
যেনো পুরো পুরুষ জাতিকে
নিয়ে যাবে ধ্বংসের শেষ সীমায়।
বিশ্বাস অবিশ্বাসের নিদারুণ নিষ্ঠুর
আচরনে, নারী ভুলতে বসেছে তার
বিশ্বস্ততার চির সাথী পুরুষ, পুরুষ
হারিয়েছে তার পুরুষত্বের অহংকার।

শিউলী ঝরা সকালে–

কোন এক আধো অন্ধকার ভোরে,
শিউলী ঝরা সকালে, চলে যাবো অজান্তে,
অন্যলোকে, অন্য ভুবনে।
চলে যাবো নিশ্চয়।
সাদা সাদা শিউলী তে ভরা রাংগা ধুলার পথ,
শিশির ভেজা ঘাসের ডগা,
অথবা রাতভোরে-
ডেকে উঠা কোন এক গৃহস্থের মোরগ,
আমার চলে যাবার সাক্ষী হয়ে রবে নিরবে।

এই ঘর, এই সংসার,
এই রাষ্ট্র, এই রাজনীতি,
এই সমাজ, এই রক্তের হানাহানী,
সব কিছু ফেলে রেখে চলে যেতে চাই,
চলে যেতে চাই এক হিম শীতল দেশে।
যেখানে হৃদয়ের তন্ত্রীতে বাজে না –
কোন সুখ – দুঃখের কাড়া- নাকাড়া,
চোখের কোনে আসে না কোন জল,
ভালোবাসার সুখেতে কোন হাসির ফোয়ারা।

শিউলী ঝরা ভোরেই আমি চলে যেতে চাই,
চলে যেতে চাই মায়া মমতার প্রহসন ছাড়িয়ে,
যেতে চাই যাবতীয় কষ্টের সীমানা পেরিয়ে।
কোন এক অজানা নক্ষত্রের অজানা গ্রহে,
সীমাহীন সুন্যতার এক সীমাহীন জগতে,
যেখানে শুরু আছে, শেষ নেই।
যেখানে যাওয়া আছে, ফেরা নেই।

ঝড় আসুক অমিত লাবন্যের ভালোবাসায়

এই জন্মে তোমাকে নাই বা পেলাম,
অন্য জন্মে তোমাকে পাবোই পাবো
এমন বিশ্বাসের মুখে ঝাঁটা মেরে,
ভালোবাসার এমন বানীতে না ভুলে,
তোমাকে ভুলেই যাবো এমন কথা ভাবি,
প্রতিদিন, প্রতিক্ষন। আর অস্পষ্টতার ঘেরাটোপে নিজেকে মুড়িয়ে রাখি নিরন্তর।

অথচ প্রতিদিন বেহেয়ার মতো একবার হলেও
ঢুঁ মেরে দেখে নেই তোমার এফবির পাতা,
ইনষ্ট্রোগ্রামের ছবি অথবা ম্যাসেঞ্জারে পাঠানো ভালো আছো বা ভালো আছির
সংক্ষিপ্তসার নানান রঙ, বেরংগের বারতা।

আমি অমিত রায়ের মতো কেতকীতে,
তুমি, লাবন্য,
শোভনলালের কোমলতায়,
দিন কাটাচ্ছি সুখে থাকার জীবন্ত অভিনয়ে,
ভালোবাসা যেখানে এসে ঠেকে এক বা দুই,
সন্তান সন্ততীর মায়াজালে,
মিথ্যে ভালো থাকার বসত বসতীতে।

তার চেয়ে বরঞ্চ এসো, প্রাথনায় বসি,
তার চেয়ে বরঞ্চ এসো, যুদ্ধে নামি,
তার চেয়ে বরঞ্চ এসো, আয়লা বা ফণীর মতো
এক বিধ্বংসী ঝড় তুলি, জীবনের এই নিস্তরঙ্গ
মিথ্যে ভালো থাকার সংসারে।

এমনই তো হয়

মনের পাথারে আজ অনেক শেওলা,
অনেক আগাছায় ভরে গেছে মনের বাগান,
আগাছায় বাসা বাঁধে বিষধর সাপ, সাপেদের ছেলে মেয়ে বউ বাচ্চা, আর ঘর সংসার।

এক সুন্দর নিস্পাপ মনের চাষ করার অভিলাষে তোমাকে আধি দেওয়া আমার মন,
তুমি সেই মনের জমিন অবহেলায় ভরিয়ে দিলে, আগাছা আর স্বাপদের বংশ বিস্তারে।

আমি দিলাম বিশ্বাস,
তুমি দেখলে অবিশ্বাসের মায়াজাল।
আমি দিলাম ভালোবাসা,
তুমি সেই ভালবাসায় দিলে সন্দেহের বিষ।
আমি চাইলাম সুখ,
তুমি তাতে ঢেলে দিলে সীমাহীন যন্ত্রনা।

এইসব অবিশ্বাস, সন্দেহ আর সীমাহীন যন্ত্রনা,
আর প্রতি ক্ষনে আমার নিঃশেষ হবার নিরব
পদযাত্রায়, অপেক্ষা শুধু জীবন পালার শেষ অংকের, শেষ দৃশ্যের শেষ অভিনয়ের।

অবহেলা, অবিশ্বাস আর সন্দেহের তীব্র দহন,
প্রতিনিয়ত খুঁজে ফিরেছে স্বস্তি আর ভালোবাসা, খুঁজে ফিরেছে নতুন আধিয়ার,
জমিনের অবিশ্বাস নামক আগাছা সমুলে
উৎপাটনে, বীজ বুনবে নতুন জীবনের,
সীমাহীন যন্ত্রানায় প্রলেপ লাগিয়ে,
ফুটাবে জীবনের নতুন গোলাপ।
সেখানেও শুধুই নেওয়া,
ভালোবাসা পাওয়া নেই।

বৈশাখের বাস্তবতা

একটা পহেলা বৈশাখ আসে,
একটা নববর্ষের বারতা নিয়ে,
নতুন এক দিনের আশায়,
নতুন এক সুর্যের আলোয়,
নিজেদের রাংগিয়ে নেওয়ার শপথে।

এমন দৃঢ়তায় শুরু হয় প্রভাত ফেরী,
রমনার বটমূল থেকে বাংলার আনাচ কানাচ।
শাসকের রক্তচক্ষু আর দালালের বেঈমানী,
আর সব বাধা ডিংগিয়ে,
এক নদী রক্তের স্রোত পেরিয়ে,
মা বোনের সব সম্ভ্রম হারিয়ে।

বাবার ফিরে না আসা
ভাইয়ের নিখোঁজ সংবাদ,
ধর্ষিত বোনের কড়িকাঠে ঝুলন্ত লাশ,
আগুনে ঝলসে যাওয়া বিস্তৃণ ফসলের ক্ষেত,
সবকিছু মেনে নিয়ে পথ চলা।
বৈশাখী ঝড়ের সাথে যুদ্ধ জয়ী জাতি,
সব ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়ায় আবার,
উঠে দাঁড়ায় সব হারানোর ব্যথা ভুলে,
উঠে দাঁড়ায় জীবনের শেষ সম্বল নিয়ে।
টিকে থাকার যুদ্ধে আবারো হানা,
জীবনের জয়ী হওয়া যুদ্ধে আবারো হানা,
সেই পুরানো শকুন, সেই পরাজিত দানব।

স্বাধীন দেশের মাটি আজ চারণ ভুমি,
ধর্ষক আর ভন্ড মাওলানা,
পুরোহিত কিম্বা নানক,
বাবা অথবা পরুষ,
সবাই আজ মূর্তিমান আতংক।

কোমলমতি শিশু আর নারী,
মাদ্রাসা, উপসনালয়, শিক্ষাংগন,
বাসা অথবা আত্মীয়স্বজন,
রাস্তাঘাট অথবা যানবাহন,
মানুষরূপী জানোয়ারের আতংকে
হারিয়েছে শৈশব আর জীবনের উচ্ছলতা।
নারী আজ নিরাপত্তা খুজে ফেরে
ঘেরাটোপের অন্ধকারে,
তবুও শান্তি নেই, স্বস্তি নেই,
নেই ধর্ষণ থেকে মুক্তি।
এমনই এক অন্ধকার সময় কে
সাথে নিয়ে বৈশাখ আসে বাংলায়,
যেখানে আজ নুসরাত প্রাণ দেয়,
তনু হয় ধর্ষিতা আর খুন,
ঘরের ভিতরে আটকে থেকে আগুনে
পুড়ে যায় চার নারী।
নারী স্বাধীনতা আর নারী মুক্তি
নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলা,
সে শুধু ম্যাজিক বাক্সের নিতান্তই ভোগ্যপণ্য।

হেরে যাওয়ার গল্পকথা

আজকাল হেরে যাচ্ছি,
প্রতিনিয়ত নিজের কাছেই,
হেরে যাচ্ছি বন্ধু – পরিজন,
স্বজন অথবা দুরের চেনা – অচেনা
পরিবেশ প্রতিবেশ থেকে,
বিনয়ে বিগলিত হতে হতে নতজানু হয়ে নিজেকে নিঃশেষ করার বিমোহিত যাদুটোনা,
এসব কিছুই আসে না আমার
এই একগুয়ে যাপিত জীবন প্রবাহে,
হেরে যাচ্ছি তাই, হেরে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত নিজের কাছে, সবার কাছে।

আজকাল তোমার জন্যেও কোন
অপেক্ষা নেই,
অপেক্ষা নেই কোন নতুন সকালের।
একটা সময় ছিলো সুর্যোদয় থেকে সুর্যাস্ত,
সকাল আসতো, তুমি আসতে,
নব যৌবনের গান নিয়ে,
বেঁচে থাকার তীব্র আকুলতা নিয়ে।
দুপুর অথবা নিকষ কালো অন্ধকার,
সব কিছু ছিলো মহুয়া মাদকের মতো,
বুকের ভিতর বেজে চলতো –
দ্রিম দ্রিম দ্রাক দ্রাক
করা ভালো লাগার সুর বেসুর।
বিচিত্র আনন্দ বেদনার তাল বেতাল।
এখন শুধু হেরে যাওয়ার অশুভ পদধ্বনি,
এখন শুধু ফুরিয়ে যাওয়ার হাতছানি,
এখন শুধু অজানা এক ভয় আঁকড়ে ধরা,
এখন শুধু অতীত নিয়ে লুকোচুরি খেলা।

কবিতার ইচ্ছেমালা

তোমার চোখের আলোয় এই বিশ্ব দেখার
লোভে নিজে হতে চেয়েছি অন্ধ,
ভালোবাসার বেসুমার ভালো লাগার জালে
নিজেকে আটকাতে চেয়েছি অবিরাম।
তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে আমি
মুগ্ধ হতে চেয়েছি বারংবার,
আমি আমার শারিরীক ভালোবাসা,
আমার কল্পনায় থাকা তোমার দেহ সৌষ্ঠব,
নুপুরের মতো নাভি,
কাঠবেড়ালীর মতো আদুরে চঞ্চলতা,
তোমার চকিত চাহনী,
কৃষ্ণপক্ষের একাদশীর মতো গ্রীবায়, বহুবার
মুখ ডুবিয়ে দিয়েছি স্বপ্নের রংগীন আভাসে, হাত দিয়ে ছুয়েছি হাত,
কোমল ওষ্ঠের ‘পরে রেখেছি
আমার স্পর্ধার ঠোট,
কল্পনায় তোমার বুকে বহুবার
রেখেছি আমার মাথা,
মেলাতে চেয়েছি জীবনের সব
পাওয়া না পাওয়ার হিসাব নিকাশ।
দ্বিধা দ্বন্ধের সব কিছু সমর্পিত করে
তোমাতেই হতে চেয়েছি বিলীন।
এ শুধু এক কল্পনার স্বপ্ন চারন,
এ শুধু আমার জাগরনে বয়ে চলা
এক কল্পনার রাজকন্যের জন্যে।

তোমাকে পাওয়া বা না পাওয়া,
কাছের গন্ডিতে তোমাকে বাঁধতে
চাওয়া বা না চাওয়া, সব কিছু আজ
শুধুই কবিতার খোলা পাতা,
কবিতার আবোল তাবোল ইচ্ছেমালা।

শেষ বিকেলের গানে

এক বসন্তের কোকিল তার মধুময় গানে
চৈত্রের প্রখরতাকে ছাপিয়ে দিয়ে,
উদাস করা দুপুরকে,
নিয়ে যেতে যায় শেষ বিকেলে।
তপ্ত দুপুর, অস্থির সময় আর এই জ্বালাময় অবসর আর হতাশ ভাবনাগুলো
উড়ে উড়ে ঘুরে বেড়ায় এদিক সেদিক।

প্রকৃতিতে যখন এলো –
লাল হলুদের রঙের ছোঁয়া লাগা বসন্ত,
চারিদিকে যৌবনের গান,
ক্লান্তিহীন বিদ্রোহের কবিতা,
মধ্য বয়সের শেষ প্রান্ত
ছুই ছুই করা এক মানুষ,
অপার্থিব সুখ আর শান্তির আশায় –
নতুন কিছুর অপেক্ষায়,
বহমান রাখে এই জীবন,
থাকে অবিচল, থাকে ধ্যানে মগ্নতায়।

প্রকৃতির ঘূর্ণায়মান রীতিতে একে একে
চলে আসা শীত, বসন্ত আর গ্রীষ্ম,
বর্ষার অবিরাম ঝরে পড়া,
শরতের উড়ে চলা মেঘেদের ভীড়,
হেমন্তের হালকা শিশির ভেজা সকাল,
জীবনের পরতে পরতে লাগায় ভিন্নতা,
জীবন বার বার ফিরে পেতে চায়
এক বহমান গতিপথ, বহমান স্রোতধারা।

নেতা তোমার জন্মদিনে

আজ থেকে একশত বছর আগে,
জন্ম নিয়েছিলে তুমি এই সবুজের দেশে,
শ্যামলিমায় ঘেরা এক সুদুর পল্লী,
পথঘাট চলাচলে নিতান্তই জংলী।

অখ্যাত গ্রামে তুমি এসেছিলে,
এসেছিলে মৃত্যুহীন প্রাণ হাতে নিয়ে,
জন্মভুমি বাংলা, মাতৃভুমি দেশ,
শোষনে খাচ্ছে তখন বেনিয়া বিদেশ।

তুমি এলে বাংলার নদী ঘেরা গ্রামে,
তুমি এলে মধ্যবিত্ত এক যৌথ পরিবারে,
অধিকতা ছিলো না কোন ধন সম্পদে,
নাম ছিলো বংশ আর অভিজাত সম্ভ্রমে।
ধর্ম ছিলো, নীতি ছিলো, ছিলো না ধর্মান্ধতা,
শিক্ষা দিয়েছিলো এক আলোর বারতা।

ফুটবল মাঠ, আর শিশু কিশোরের দল,
নদীর উত্তাল ঢেউ সঙ্গী তোমার,
গায়ের জামা অথবা গোলা থেকে ধান,
বিলিয়ে দিয়ে রক্ষা করো নিজের সন্মান।
ন্যায্য দাবী অথবা অধিকারে পথের আটক,
মন্ত্রী কিম্বা হোমড়াচোমরা সে যেই হোক।
নেই কোন পিছিয়ে আসা, বিফল হওয়া
জীবন বাজী রেখে শুধু এগিয়ে যাওয়া।

বিট্রিশ তাড়াও কিম্বা পাকিস্তানি শাসক,
দিনে দিনে তুমি হয়েছো দেশের নায়ক,
মৃত্যু অথবা অন্ধকার কারাগারের ঘর
ভয় হীন তুমি আরো হয়েছো কঠোর।
দমাতে পারেনি কেউ তোমার সাহস।
অবিচল পথচলায় এই মুক্ত স্বদেশ,
প্রিয় মাতৃভূমি তোমার, স্বাধীন বাংলাদেশ।

মৃত্যুহীন প্রাণ তুমি, মৃত্যু অনুভব,
পঁচাত্তর এর কালো রাত হয়েছে পরাভব।।

প্রিয় স্বদেশ

মধ্যরাতের ট্রেন টা হুইশেল বাজিয়ে চলে যায়,
চলে যাওয়ার ক্ষণটায় প্রতিদিন ঘুম ভেংগে যায়,
আর মনে পড়ে তোমাকে,
এক সুতোয় গাঁথা হয়ে গেছে আমার বাঁধাধরা রুটিনে।

একদল সারমেয় প্রতিদিন এই সময়টাতেই কেঁদে
উঠে করুণ বীভৎসতায়,
থেকে থেকে না জানি কোন এক অজানা
শংকায়, কেঁপে যায় উথাল পাতাল।

বুকের ভিতর মোচর দিয়ে উঠে এক অজানা
আশংকা, অন্ধকার গ্রাস করে অন্ধকারকে।
দুনিয়ার তাবৎ অমংগলকে তুড়ি মেরে
উড়িয়ে দিয়ে মনে মনে ভেবে যাই
শুধু তোমার মংগল, তোমার জন্যে
থাকে শুধু একরাশ শুভাশিস।

মাঝে মাঝে মনের মাঝে উঁকি দিয়ে যায়,
নানা শংকা, নানা দুঃশ্চিন্তার আবোল তাবোল,
তবে কি ফিরে আসে সেই পুরানো শকুন,
তবে কি আবারো রক্তের হোলী খেলা,
তবে কি আবারো হিংস্র থাবায় ছিড়ে খাওয়া,
আমার প্রিয় স্বদেশ, স্বাধীন জন্মভুমি?

প্রিয় জন্মভূমি, প্রিয় স্বদেশ,
লাখো শহীদের রক্তে ভেজা এই মাতৃভূমি,
শহীদের রক্তে কেনা আমার বাংলা ভাষা,
তোমার সাথে বেইমানি করে আজো কিছু
বেজন্মা দালাল, বিকিয়ে দিতে চায় তোমাকে,
বিকিয়ে দিতে চায় স্বাধীনতা, ভাষা আর সম্ভ্রম।
২৮শে ফেব্রুয়ারী,২০১৯।

তুমি যাওনি বদলে

প্রতিদিন দেখতে দেখতে বদলে যায় পৃথিবী,
বদলে যায় ষড় ঋতুর ছয়টি
চেনা জানা দিনগুলো,
গ্রীষ্মের প্রখরতা বাড়ে,
বর্ষা আসে নিয়ম অনিয়মের বাইরে,
শরতেও নেই আজ শুভ্র মেঘের আনাগোনা।
হেমন্ত আর হাসে না শীতের আগমনীতে,
শীতের তীব্রতা আর ঘন কুয়াসা ঘেরা সকাল,
বহুদিন দেখা হয় না এই শহরের
দূরে অথবা কাছে,
বসন্ত আসে গুটি গুটি পায়,
এসেই আবার তাড়া দেয় পালাই পালাই,
আমের মঞ্জুরীতে আজ মাতে না মৌ,
ফুল ফুটে শুধু বানিজ্যের বাগানে।

বদলে যায় পৃথিবী, বদলে যায় মানুষ,
সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে –
কেনা হয় সুখ,
কেনা হয় সময়,
কেনা হয় দুনিয়া,
চিরদিনের হিসেব নিকেশ পালটে দিয়ে,
শত্রু হয়ে যায় বন্ধু,
আর বন্ধু হয় শত্রু,
শুধু তুমি যাওনি বদলে।

মনে পড়ে সেই –
পরিচয়ের প্রথম ক্ষনে তুমি বলেছিলে বন্ধু,
আমি বললাম ভালোবাসি, খুব ভালোবাসি।
সময় বদলে গেছে, প্রকৃতিতে আসে ভিন্নতা,
অথচ আজো তুমি সেই একই কথায়
আটকে গেছো,
ভাংগা রেকর্ডের মতো বেজে চলে তোমার
একই সুর,
একই কথা,
একই ধ্বনি প্রতিধ্বনি।
তবুও আমি আছি অবিচল,
অবিরাম, ভালো বেসে যাই,
ভালো বেসে যাবো,
তোমাকেই, শুধু তোমাকেই।
২২শে ফেব্রুয়ারী, ২০১৯ ইং।