কাজী রাশেদ এর সকল পোস্ট

বাবা আপনাকে

আমার দৌরাত্মে আপনার ব্যস্ততা,
আমার মায়ের কাছে কুমিল্লার
আঞ্চলিক টানে এক নিদারুন ডাক,
কই গেলা, দেখছো নি তোমার ছেলে কি করে!
এমনভাবে আপনার সেইসব স্মৃতি, আজো
আমাকে নিয়ে যায় দুরন্ত শৈশবে।

অসাম্প্রদায়িক আমাদের পরিবারে
বাবাকে আব্বা, আর মাকে আম্মা
বলার চল কিভাবে এসেছিলো
তা জানা হয়নি কোনদিন,
তবে এনিয়ে মাথা ঘামাতে হয়নি
কোন সকাল কিম্বা বিকেল।

প্রতিওয়াক্তে আপনার আজান দিয়ে নামাজ,
সকালের তেলোয়াত কিম্বা আমাদের
অসুখে বিসুখে আপনার অনুচ্চারিত দোয়া
আমাদের প্রশান্তি দিলেও ধর্মান্ধ করেনি কখনো।

আমাদের ভাইবোনদের লেখাপড়ার সীমাহীন ফাঁকি,
পাঠ্যবইয়ের আড়ালে গল্পের বই,
সহজ অংকে তালগোল পাকানো অথবা
সন্ধ্যা পেরিয়ে বাড়ী ফেরা, আপনার উপস্থিতি,
সব যেনো আজো ভেসে উঠে ফ্লাসব্যাকে।

মাঝে মাঝে আপনার প্রচন্ড রাগ, অভিমান,
শাসন, বেত্রাঘাত, আবার মায়ের বেত্রাঘাত থেকে
বাঁচার আকুতিতে আপনার আশ্রয়ে লুকানো,
সব কিছু আজো চিরন্তন হয়ে আছে
মনের মনিকোঠায়, হৃদয়ের অলিন্দে।

আমাদের শৈশব, আমাদের যৌবন
চাকরী, আপনার সততায় আমাদের দারিদ্র,
না পাওয়ার বেদনায় ক্ষতবিক্ষত মন,
অস্থির হয়েছি, ভেংগে ফেলতে চেয়েছি নিয়ম
আর অনিয়ম বেড়াজাল,
তবু সততার দেয়াল ভাংগতে পারিনি আজো,
তাই আজো সেই দারিদ্র আমাদের নিত্য সহচর।

৭ই ফেব্রুয়ারী, ২০১৯ইং।

বদলে যাওয়া দিন, বদলে যাওয়া তুমি

অনেকটা পথ একসাথে হেঁটে আসা
অনেকটা সময় পাশাপাশি বসে থাকা,
সময়ের গণ্ডিকে পেরিয়ে যাওয়া সময়,
এইসব নিয়েই আমাদের যাপিত জীবন।
মাঝে মাঝে এই সব যাপিত জীবনকেই
মনে হয় ভালোবাসি, ভালোবাসি খুব।

অথচ—
কি আশ্চর্য ! কি অদ্ভুত এক মায়া!
আমাদের ভালোবাসা যে তোমার কাছে
ভালোবাসা নামের এক অখন্ড অবসর!
তোমার হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসার
মধ্যবর্তী ফিলার, কিছুটা শূন্যতা পূরণ!
ইচ্ছাকৃতভাবে ভুলে হয়ে যায় বার বার।

অথচ এটাই সত্য, এটাই বাস্তবতা,
যেদিন তোমার হৃদয় বাঁধা পরবে
অন্য কোন যুবকের উষ্ণ ভালোবাসায়,
কি নিদারূন যুক্তিতে আমি হয়ে যাই
এক অপাংক্তেয় কবিতার পংক্তিমালা।

আজকের এই সুন্দর দিন আর সময়,
আজকের এই সোনামাখা রৌদ্রময় সকাল,
সূর্যের গনগনে আগুন ঢালা মধ্যাহ্ন,
ছায়া ঘেরা মায়াময় বিকেল, সবকিছু ম্লান
হয়ে পরিনত হবে এক বিদায়ী সন্ধ্যায়,
তুমি সেইসব ঝরে পরা বিকেল অথবা সন্ধ্যায়
উচ্ছ্বসিত হয়ে হাত তুলে দিবে তোমার
সেই কাংখিত যুবকের হাতে, প্রেমিকের হাতে।
আর আজকের এই দিনগুলো হবে বিদ্রূপের।
৩১শে জানুয়ারী, ২০১৯। ঢাকা।

মুক্তো দ্বীপে একাকী এক মাছরাঙ্গা

কি এক অজানা কারণে এক মাছরাঙ্গা পাখী
সকালের প্রথম প্রহরেই চলে এলো মুক্তো দ্বীপে,
পানির উপরে ভাসমান মুক্তো দুটো অনেক আগেই
স্থান করে নিয়েছিলো আমাদের প্রধানমন্ত্রী
অফিসের উল্টোদিকে, এই দ্বীপে পানি আছে, ঝর্নাও আছে,
তবে মাছ নেই, তবুও আজ সকাল সকাল কি ভেবে
মাছরাঙ্গা এলো এই দ্বীপে, নিয়ে তার নান্দনিক রূপ।

প্রিয় স্বদেশ এখন মাছদের চারণভুমি, মিঠা পানির
মাছে এখন সয়লাব এই দেশ, সেই মাছের চারণ
ভুমিকে পাড়ি দিয়ে এই প্রায় শুষ্ক দ্বীপে কি
ভেবে এলো এই মাছরাঙ্গা? তবে কি কৃতজ্ঞতায়?

খয়েরী সবুজ নীল সহ অনেক রঙ্গে রাঙ্গানো মাছরাঙ্গা
নিশ্চিন্ত উন্নাসিকতায় বসে থাকে দীর্ঘ সময়,
দীর্ঘ ক্ষন -।
কোথাও যাবার নেই,
কোন ক্ষুধা তাকে নিয়ে যায় না,
অন্য কোন শিকারের সন্ধানে।
যেনো এখানেই তার একাগ্রতা,
এখানেই তার দিনমানের অপেক্ষা।

পড়ন্ত বিকেলে তোমার বড়ো ভয়

তোমার মনের মধ্যে ইদানীং পড়ন্ত
বিকেলকে নিয়ে বড়ো ভয়,
পড়ন্ত বিকেল মানেই সন্ধ্যে নামা,
দিনের আলো নিভে যেয়ে রাতের অন্ধকার। রাত নেমে আসে চরাচরে,
তুমি ভয় পাও অন্ধকার,
ঘর পোড়া গরুর মতো সিঁদুরে মেঘে,
তুমি আগুনের লেলিহান দেখো,
ভয় পেয়ে গুটিয়ে নিতে চাও,
ভালোবাসা আজো তোমার চেতনায়
এক নিস্ফল স্বপ্নের দোলাচল,
প্রতিটি সকাল, প্রতিটা ক্ষনে,
মনের ভিতরে ফুরিয়ে যাওয়ার যাতনা।

তোমার এই ফুরিয়ে যাওয়ার যাতনা,
পড়ন্ত বিকেলের ম্লান হয়ে আসা আলো, নিজের শুভারম্ভের ব্যর্থ ভালোবাসা,
কখনোই ভুলে যেতে চাও না,
বার বার তোমার ভয় মিশ্রিত জিজ্ঞাসা,
তুমি কি আমার প্রেমিক হতে চাও?
কি শ্লেষে, কি বিদ্বেষে!
আমি এক পড়ন্ত বিকেল,
জীবনের গান শোনাতে হাত বাড়াই,
ভালোবাসার গল্প শোনাই,
জীবনের মানে টুকু পাল্টাতে চাই,
তুমি আঁতকে উঠো নিজের অজান্তে।

১৮ই জানুয়ারী, ২০১৯ইং।

যুদ্ধ জয়ের পূর্ণতা

(বংগবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন স্মরণে)

পঁচিশের কালো রাত, পাকিস্তানী হানাদার যখন হত্যা নেশায় বাংগালী নিধনে মত্ত,
সেই হত্যাযজ্ঞের এক ক্ষনে কিছু পাঞ্জাবী কুকুর নেতাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পশ্চিম পাকিস্তানের অন্ধকার কারাগারে।

মৃত্যুকে ভয় পাওয়া কাকে বলে নেতা জানেনা,
অন্ধকার কারাগার ততোদিনে নেতার আরেক আবাস,
জীবনের সুন্দর সময়গুলো নেতা অন্ধকারেই কাটিয়ে দিয়েছে বড়ো অবলীলায়।

অন্ধকারকে ভয় পাওয়া কাকে বলে নেতা জানেনা,
একটাই ছিলো চিন্তা,
একটাই ছিলো ভয়,
নেতাকে অন্ধকারে আটকে রেখে,
কতো মানুষ, কতো প্রাণ, কতো সম্পদ,
ধ্বংস করে এরা ক্ষান্ত হবে!
কতো মায়ের কতো বোনের ইজ্জত,
লুটে নিবে এই হায়নার দল।

নিজের জীবনের চিন্তা তাঁর নেই,
অন্ধকার প্রকোষ্টের পাশেই খুঁড়ে চলে
নেতাকে মেরে কবর দেওয়ার পরীখা,
কোন ভ্রুক্ষেপ নেই তাতে নেতার।
দিনের পর দিন নেতার চিন্তায়
প্রিয় মাতৃভুমি, প্রিয় স্বদেশ,
কতো হত্যা আর কতো ধ্বংসযজ্ঞ,
কতো গ্রাম হলো পুড়ে ছাড়খার।
বিশ্ব বিবেককে অবজ্ঞা করে
নরখাদক ইয়াহিয়া চালায়
বিচারের নামে এক মিথ্যা প্রহসন।

নেতার নামে চলা এক মরণপন যুদ্ধে
দামাল ছেলেরা ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতা,
রক্তের বন্যায় ভেসে যায় সকল অন্যায়,
লাখো মা বোনের সম্ভ্রম হারানো অভিশাপে
পিছু হটে পাকিস্তানি জান্তা বাহিনী,
সংগে থাকে ভারতীয় বীর জওয়ান সেনা।

স্বাধীন হয়েও দেশের আকাশে উঠে না
লাল সুর্য্য,
শত্রু মুক্ত হয়েও আনন্দের নেই লেশ,
কোথায় যেনো এক অপূর্ণতা,
কোথায় যেনো এক বিষন্নতা।

তারপরে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ,
অন্ধকার থেকে এলো স্বাধীনতার লাল সুর্য, স্বাধীন আকাশটাকে লাল রংগে রাংগিয়ে, দেশ মেতে উঠে মুক্তির আনন্দে,
সকল দুঃখ ভুলে,
বরন করে জাতি তার শ্রেষ্ট সন্তান।

রাজনীতির ভদ্রপুরুষ

(সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম স্মরণে)

এতো অসময়ে এভাবে তোমার চলে যাওয়া,
কিছুতেই মানতে পারে না দেশ, এই জন্মভুমি।
এক বিরল প্রজাতির ভদ্রমানুষ তুমি ছিলে, অনেকটাই বেমানান এই বাংলাদেশের
খেয়োখেয়ির রাজনীতির মাঠে।
তুমি ছিলে মানুষের হৃদয়ের গহীন কুঠিরে, শ্রদ্ধা আর মানুষের ভালোবাসায়,
চলে গিয়ে বুঝিয়ে দিলে তুমি ছিলে
তোমার বাবার মতো এক নিভৃতচারী
নেতা পাগল, দেশ পাগল, স্বাধীনতা পাগল
এই মাতৃকার এক শ্রেষ্ঠ পুরুষ।

বুকের ভিতর ভয়াবহ এক মৃত্যু কামড় নিয়ে,
দেশের প্রতি, নেত্রীর প্রতি, মানুষের প্রতি বিশ্বাস কে অটুট রেখে,
পথ চলেছো মাথা উঁচু করে।
প্রতিনিয়ত রাজনীতি আর ক্ষমতা
যেখানে লুটে নেয় সম্পদ,
নীতি আর বিবেক,
মিথ্যা আর সত্যের ফারাক বুঝা দায়!
তখন বিক্রি করে দিয়েছো,
নিজের উপার্জনে করা একমাত্র বাড়ী,
তবু বিক্রি করো নি বিবেক আর নীতি।

সব অস্থির আর সংকটে তুমি দাঁড়িয়েছো
এসে, তোমার প্রিয় নেত্রীর পাশে,
সুযোগ সন্ধানী যখন ব্যস্ত ক্ষমতার হিসাব মিলাতে অথবা কারাগারের অন্ধকারে,
মাথা উঁচু করে লড়ে গেছো প্রিয় নেত্রী,
প্রিয় বোনের জন্য এক অসম লড়াই।

তেলবাজী, তোষামোদ আর স্বজনপ্রীতি,
তোমাকে স্পর্শ করেনি কখনো কদাচিত,
দলবাজীর ভয়ে অফিস কে নিয়েছো বাসায়,
সুপারিশ এড়াতে রটিয়েছো তোমার ঘুম কাতরতা, দলীয় কোন্দলকে এড়াতে বেছে নিয়েছো আড়াল, সমালোচনা আর মিথ্যে প্রচারেও ছিলে অবিচল আর একরোখা।

তুমি ছিলে এই সময়ের এক ভদ্র পুরুষ,
তুমি ছিলে পরিচিত রাজনীতির এক
অপরিচিত, অচেনা আর বিস্ময় মানুষ।।

অধরা স্বপ্ন, তোমারই নাম

একমুঠো স্বপ্নকে ধরবো বলে সারাদিন,
স্বপ্নের পিছনে দৌড়াই,
ছুটে বেড়াই এদিক অথবা ওদিক,
স্বপ্নেরা এসে স্বপ্ন দেখায়,
ধরা দেবে, ধরা দেবে করেও
চলে যায় নাগালের অন্য পাড়ে,
পাশ কাটিয়ে চলে যায়,
এই সব সময় থেকে অন্য কোন সময়ে।

স্বপ্নের পিছনে এই ছুটে চলা,
তোমার পিছনে ছুটে চলার মতোই
বার বার পিছলে পিছলে যায়,
আমার প্রতিটা ক্ষন,
প্রতিটা দিন, প্রতিটা ইচ্ছে।
তুমি নামক আমার স্বপ্নটাকে ভালোবাসার আজন্ম মমতায় লালন করে যাই।

অধরা স্বপ্ন, অধরা প্রেমের মতোই
আমাকে ক্ষতবিক্ষত করে তুলে,
করে তুলে এক যন্ত্রমানব,
সময়ের এক ঘোরলাগা ঘুর্ণিপাকে
পাক খেতে খেতে চালিয়ে নিয়ে
যাই এই ব্যর্থ জীবন।

স্বপ্ন দেখা, যুদ্ধ করা

পলাশীর আম বাগানের স্বপ্ন ভাংগা,
শত বছর পরে হলেও মানুষ আবার,
স্বপ্ন বাঁধে, বুক বাঁধে,
স্বপ্ন বেঁধে যুদ্ধ করে।

হেরে যাওয়ার কষ্ট বুকে নিয়ে
জন্ম নেওয়া হাজার ছেলে,
জন্ম নেয় ঘরে ঘরে,
শপথ নিলো অকুতোভয়ে,
স্বদেশ ভুমি মুক্ত হবে,
স্বাধীনতার রাংগা প্রভাত,
স্বপ্ন আবার পুর্ণ হবে।

কত প্রাণ, কত স্বপ্ন,
কত রক্তের হোলী খেলায়,
লাল হলো এই স্বদেশভুমি,
কত যুবকের প্রাণ বিনিময়ে
স্বপ্ন এলো বিভক্ত হয়ে,
হিন্দু মুসলিমের দেশ হয়ে।

ভাগাভাগির স্বপ্ন আসে মিথ্যে
এক ভাবাদর্শে,
ভাষার উপর আঘাত আসে ,
রক্তে ভাসে পুর্ণ স্বদেশ।

আবার শুরু স্বপ্ন দেখা,
একজন মানুষ স্বপ্নগুলো,
জড়ো করে একই সুতোয়।
স্বপ্ননায়ক পথ দেখায়,
ডাক দিয়ে যায় মুক্ত হবার,
স্বপ্ন দেখা মানুষ আবার,
প্রাণ দেয় আর স্বজন হারায়।

বাড়ী ঘর, বসত ভিটা,
মা বোনের সম্ভ্রম হারায়।
নয়মাসের যুদ্ধ আর ত্যাগের ফলে,
দেশ টা আবার মুক্ত হলে,
ত্রিশ লাখের রক্তে ঋণ,
পুর্ণভুমি বাংলা স্বাধীন ।

উপনিষদের দ্বিতীয় পাখী

আমি ঘটক বা অনুঘটক হতে চাই না,
আমি চাই না শরত বাবুর দেবদাস,
অথবা লাইলীর ব্যর্থ মজনু হতে।
আমি বিষন্নতার কষ্টের গাঢ় নিঃশ্বাস,
ঘাড় পেতে নিতে নিতে ফুরিয়ে যেতে চাই,
আমি উপনিষদের দ্বিতীয় পাখীর মতো,
দূরে দাঁড়িয়ে দেখে যেতে,
শুধু দেখে যেতে চাই,
আনন্দ আর বিষাদে ভরা,
তোমাদের ভালোবাসার সোনালী মাখামাখি।

গোধুলী বেলার লাল রংগে নিজেদের
রাংগিয়ে, বাগানের লনে বসে,
চা খাওয়ার অবসরে, কিম্বা
খুনসুটির মহামিলনের অবসাদে,
আনন্দের ঘন নিঃশ্বাসে,
আমাকে ভাববে,
আমাকে মনে করবে,
দীর্ঘশ্বাস ফেলবে,
এমন কিছু মানতেই পারে না মন।

পালটে দেবার এই আমাকে

পালটে দিবো, বদলে দিবো,
চেনা জানা এই সমাজটাকে,
পচে যাওয়া এই রাষ্ট্রটাকে
ভেংগে ফেলে গড়িয়ে নিবো।।

এমন স্বপ্ন বুকে এঁকে,
কিশোর মনের ছোট্ট কোনে,
অন্ধকারে পথে নামা
নতুন সুর্য আনবো ছিনে।।

পথের পরে পথ হেটেছি,
নতুন সাথী যোগ হয়েছে,
লড়াই করার সাহস আরো
জোর হয়েছে, জোর পেয়েছি।।

যৌবনের সেই রক্ত গরম,
সব কিছু তার পায়ের তলে,
বুকে শুধু সৎ বাসনা
অন্য সবই সহজ সরল।।

পড়াশুনো শিকেয় তুলে,
ঘরের খেয়ে মোষ তাড়ানো,
বাবা মায়ের আদর শাসন
তুচ্ছ তখন এই আমাতে।।

পালটে দেওয়া, বদলে নেওয়া
অনেক হলো পথ মাড়ানো,
রাষ্ট্র যেমন তেমন আছে
আমি শুধু পথ হারানো।।

করতলে তোমার মুখ

একমুঠো রোদ ধরতে চাই,
অথবা একমুঠো জ্যোৎস্না,
হাতের করতলে লুকিয়ে থাকা অন্ধকারে
তোমাকে দেখবো বলে, আমার একমুঠো
রোদ্দুর চাই, অথবা একমুঠো জ্যোৎস্না।

দিনের পর প্রতিদিন তোমার আটপৌরে
জীবনের কষ্টগুলো,
নানা মিল – অমিলের দ্বন্দ্বে
কাটানো যন্ত্রনা ময় সময়,
তোমার ভালো লাগা – না লাগা অবসর,
নিত্যদিনের অসুখ – বিসুখ,
তোমার ভালো থাকার কঠিন অভিনয়,
আমাকে দেখতে হবে করতলের জমিনে,
একমুঠো রোদ্দুর, অথবা একমুঠো জ্যোৎস্নায়।

ভালোবাসার জন্যে লুকিয়ে রাখা
তোমার ভালোবাসা,
তোমার প্রেম,
তোমার চোখের জল,
তোমার কঠিন অভিনয়,
ঢাকতে না পারার অস্থিরতা,
ভেংগে পড়ে কথা আর
কবিতার নান্দনিকতায়।
নান্দনিক কথামালার পিছনে লুকিয়ে
রাখা কষ্টের যন্ত্রনাময় অনুভুতি,
তোমার চোখের ছায়ায় ভেসে উঠা
কষ্টের লাগাতার ঢেউ,
আমি দেখতে চাই,
আমার করতলের নিজস্ব সাম্রাজ্যে,
একমুঠো রোদ্দুর
অথবা একমুঠো নির্মল জ্যোৎস্নায়।

রাশেলের রক্তাক্ত বুক

সমাজটাকে পালটে ফেলা, অথবা
নিজের মাপে করে নেওয়ার স্বপ্নটা,
রাশেল দেখেছিলো খুব আপন করে।
চেয়েছিলো জগতটাকে বদলে নিবে,
ব্যক্তিগত সুখ, দুঃখ, হাসি – কান্না,
টিকে থাকার নিজস্ব লড়াই,
সমাজের পচে যাওয়া মুল্যবোধ,
ক্ষয়ে যাওয়া মানুষিকতা, অসাম্য আর
অনৈতিকতা সব কিছু পিষে ফেলে,
এগিয়ে যেতে চাওয়া এক স্বপ্নীল
যুবক, আমাদের রাশেল, সাহসী রাশেল।

পুর্নিমার ধর্ষিত শরীর, নাবালিকা মায়ের
মেয়েকে বাঁচানোর করুণ আর্তি।
লাখো সংখ্যালঘুর আগুনে পোড়া
ধ্বংসের উপর দাঁড়িয়ে ক্ষমতা,
শাসক শ্রেণীর দাম্ভিকতা,
হাওয়া ভবনের সর্বগ্রাসী কমিশনিং,
রাজনীতি, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস,অনাচার,
অত্যাচারে বিক্ষুদ্ধ রাশেল,
সমাজ বদলের স্বপ্নকে সাথে
নিয়ে পথেনামে রাশেল,
আমাদের সাহসী রাশেল।

ক্ষমতায় অন্ধ হাওয়া ভবন,
সংগে পুরানো শকুন,
একাত্তরের খুনী আর পরাজিত শত্রু,
ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার হিংস্র ষড়যন্ত্রে,
পেটো বাহিনী ঝাপিয়ে পরে,
স্বাধীনতা আর গনতন্ত্রকামী মানুষের
মিছিল আর মানুষের সমাবেশে,
গুলিতে ঝাঝড়া হয় রাশেলের বুক,
গনতন্ত্রের সাহসী বুক, গনতন্ত্রের
আপোষহীন লড়াইয়ে এক সাহসী নাম।

রাত্রি’ র কাছে সুর্য চাওয়া

আমি রাত্রির কাছে সুর্যের আলো,
আমি মেঘাচ্ছন্ন আকাশে পূর্নিমার চাঁদ,
অথবা চৈত্রের দুপুরে হেমন্তের শীতল বিকেল,
চেয়ে চেয়ে পথ থেকে পথে হাটছি,
হাটছি–
এবং হাটছি,
আমি বার বার এমন করেই,
আমি বার বার আকাশ কুসুমেই,
কাটিয়ে দিলাম ক্ষনকালের এই জীবন।

হৃদয়হীনা নাকি বাস্তবতা,
স্বপ্ন নাকি শুধুই দিবাস্বপ্ন মাখা এই জীবন,
ভাবনার অলীকতা নাকি সত্যের অপ্রিয়তা,
ফিরে ফিরে আসা আমার প্রেম অথবা
আমার না পাওয়া ভালোবাসা,
প্রত্যাখ্যাত,
সুন্যতা আর সুন্যতায়।

হঠাত ভুলের মাশুল গোনার উছিলায়
কিম্বা চলে যাওয়া সময়ের দিকে
তোমার ফিরে ফিরে তাকানো,
আমাকে প্রত্যাখ্যানের আগুনে জ্বালিয়ে
ফিরে আসা তোমার সময় অথবা অসময়।

আমার রাত্রির কাছে সুর্য চাওয়ার
প্রত্যাশা,
আমার চৈত্রের দুপুরে শীতল হেমন্তের
বিকেল,
এক হৃদয়বতীর কাছে হৃদয়ের আকুলতা,
সব ফিকে হয়ে যায় তোমার নিরবতায়।

সুন্দরের অনিন্দতায়

ফিরোজা রঙ্গে জড়িয়েছো এক ভীষন অনবদ্যতায়,
তোমার গোলাভী আভা দিয়েছে
তাতে এক অপার আনন্দলোক,
ফিরোজার গায়ে গায়ে জড়িয়েছো আকাশ থেকে
নেওয়া টুকরো টুকরো কিছু নীল,
মেঘেদের ভরাট বুক থেকে কিছু সাদা,
তোমার নিপুন হাতের কারুকাজে হয়ে গেছে
সুচী কর্মের এক শবনম গাঁথা।

দখিনের বারান্দায় সেই শবনম গাঁথা হয়ে
দাঁড়ালে একটু আলস্যে ভরা দুপুরে,
প্রকৃতি যেনো অপেক্ষায় ছিলো তোমারই,
সুর্য হলো ম্লান, শরতের মেঘগুলো থমকে
গেলো সহসা, শান্তির পায়রা উড়তে উড়তে,
এসে তোমার কাছেই ডিগবাজী খায়,
একবার, দুইবার বার বার।।
যেনো এই বিষন্ন দুপুরে তুমি নিয়ে
এলে শান্তির এক অপার স্নিগ্ধতা।

আমি ছিলেম আনমনে এক অন্যমনে,
পায়রার ডিগবাজী, বাক বাকুম,
সুর্যের ম্লানতা, মেঘেদের থমকে যাওয়া,
সব কিছু আমাকে নিয়ে যায় সেই স্নিগ্ধতায়,
আমাকে নিয়ে যায় সুন্দরের এক অনিন্দতায়।

নিন্মচাপের মতো ফিরে ফিরে আসো

আমার আকাশ জুড়ে আজ ভাবনার মেঘ,
মনের জানালায় আজ অবিরাম বৃষ্টি,
সুখ কিম্বা দুঃখ,
আনন্দ অথবা বেদনা।
প্রকৃতি আজ আমারই সাথে আকাশকে
করেছে মেঘলা,
বুকের কষ্টগুলোকে সাজিয়েছে যত্নে,
কষ্টের নিদারুন চাপে গুমরে উঠছে মন,
কষ্টের মেঘেরা হয়েছে বৃষ্টি ।
সেই বৃষ্টির নোনা জলে আমার অবগাহন।

দমকা হাওয়ায় ঝির ঝিরে বৃষ্টি অথবা উত্তরের হিমেল হাওয়া,
আমার মনের ভাবনার মেঘে শুধুই তূমি,
আর তুমি, তোমার আসা যাওয়া,
তোমার স্বপ্ন দেখা,
তোমাকে না পাওয়ার বেদনা,
বিষন্ন এই মন, তারপরেও
নিন্মচাপের মতো ফিরে ফিরে আসে,
আর শুধু তোমাকেই খুঁজে ফিরে।