লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী এর সকল পোস্ট

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী সম্পর্কে

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। কাব্যচর্চার সাথে সাথে তিনি সাহিত্যচর্চাও করেন। গল্প ও রম্য রচনা আর ছোট গল্প লিখেন। বহু একাঙ্ক নাটকও তিনি লিখেছেন। অন্ধকারের অন্তরালে, সমাজের শত্রু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বহু যাত্রাপালা -সোনা ডাকাত, শ্মশানে জ্বলছে স্বামীর চিতা উল্লেখযোগ্য। কবির অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিচারক মণ্ডলী তাঁকে বহু সম্মানে ভূষিত করেছেন। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী একাধারে কবি ও অপর দিকে লেখক। তার লেখা “আমার গাঁ আমার মাটি”, আমার প্রিয় শহর জামুরিয়া, আমার প্রিয় শহর কুলটি, আমার প্রিয় শহর আসানসোল, আমার প্রিয় শহর রাণীগঞ্জ বহু পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী প্রকৃতপক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও তিনি অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বিশ্বাস করেন সব মানুষই ঈশ্বরের সন্তান। তাই ধর্মে আলাদা হলেও আমরা সবাই ভাই ভাই।

মহাশক্তির আরাধনা ……দেবীর বন্দনা -১৪২৭ শ্রী শ্রী মহাসপ্তমী পূজার কবিতা (তৃতীয় পর্ব)

মহাশক্তির আরাধনা ……দেবীর বন্দনা -১৪২৭
মহিষাসুরমর্দিনী পৌরাণিক কাহিনী (প্রথম পর্ব)

তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
1
হিন্দু ধর্মবিশ্বাস মতে, অশুভ শক্তির বিনাশ আর ধর্ম রক্ষায় যুগে যুগে মর্ত্যলোকে দেবতাদের আবির্ভাব হয়েছে। যার ধারাবাহিকতাতেই অসুর কূলের হাত থেকে দেবগণকে রক্ষায় দেবী দুর্গার আগমন ঘটেছিল। পৃথিবীতে যখনই ব্রহ্মার বরপ্রাপ্তের মতো শক্তিশালী মহিষাসুরেরা ফিরে আসে বারবার, ধর্মের গ্লানি হয় এবং পাপ বৃদ্ধি পায়, তখন তাদের ত্রাস-সংহারে দেবী দুর্গা ফিরে আসেন বারবার। আর দেবীর এ শুভাগমন ঘটে শুভ মহালয়ায়। মহালয়ার শুভক্ষণে যাবতীয় আঁধার গ্লানি মুছে যায় অসুরনাশিনী দুর্গার তেজচ্ছটায়।

কালিকা পুরাণ মতে– দুন্দুভি নামক জনৈক দৈত্যরাজ, ব্রহ্মার বরে বলীয়ান হয়ে– দেবতাদের পরাজিত করেছিলেন। কৈলাসে মহাদেব ও পার্বতীকে একত্রে ভ্রমণ করার সময় পার্বতীকে দেখে মোহিত হন, এবং তাঁকে অধিকার করার চেষ্টা করলে- মহাদেবের অগ্নিদৃষ্টিতে ইনি ভস্মীভূত করেন। [চতুর্থোহধ্যায়, কালিকাপুরাণ]

শুম্ভ-নিশুম্ভ হত্যা এবং এই উপলক্ষে দুর্গার বিভিন্ন নামপ্রাপ্তি
দুর্গা কর্তৃক ধুম্রলোচন বধ ও মাতঙ্গী এবং একজটা নামপ্রাপ্তি

শুম্ভ-নিশুম্ভ নামে দুই অসুরের অত্যাচারে অতীষ্ট হয়ে– দেবতারা মাতঙ্গ মুনির আশ্রমে এসে- দুর্গার আরাধনা করেন। আরাধনায় তুষ্ট হয়ে এই দেবী প্রথমে মাতঙ্গ মুনির স্ত্রীর রূপ ধরে দেবতাদের কাছে আসেন এবং পরে একটি বিশেষ মূর্তি ধারণ করেন। এই মূর্তিতে এঁর চার হাত ও গলায় নরমুণ্ডমালা ছিল। এই মূর্তি মাতঙ্গ মুনির স্ত্রীর রূপ মাতঙ্গী’র দেহরূপ থেকে নির্গত হয়েছিল বলে– এর নাম হয়েছিল মাতঙ্গী। এই মূর্তীতে দুর্গার মাথায় একটি মাত্র জটা থাকায় ইনি একজটা নামে অভিহিত হয়ে থাকেন।

মার্কেণ্ডেয় পুরাণের মতে, হিমালয়ে গিয়ে দেবতারা দেবীর স্তব করেছিলেন। এই সময় পার্বতী জাহ্নবী নদীতে স্নান করতে অগ্রসর হলে, দেবতাদের জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কার স্তব করছো। এই বাক্য শেষ হওয়ার সাথে সাথে, পার্বতীর শরীরকোষ থেকে দুর্গা দেবী প্রকাশিত হলেন। এই কারণে, দেবীর অপর নাম কৌষিকী। এরপর পার্বতী কৃষ্ণকায় মূর্তি ধারণ করলেন। এই রূপের জন্য তিনি কালিকা নামে অভিহিত হলেন।

দুর্গার কৌষিকী এবং কালিকা নামপ্রাপ্তি
পরে ইনি মনোহর মূর্তি ধারণ করলে– শুম্ভ-নিশুম্ভের সেনাপতিরা এই নারীরূপ সম্পর্কে শুম্ভ-নিশুম্ভকে জানান। এরপর শুম্ভ-নিশুম্ভ দেবীর কাছে সুগ্রীব নামক এক দূতের দ্বারা বিবাহের প্রস্তাব পাঠান। দেবী এই দূতকে জানান যে, যে তাঁকে যুদ্ধে হারাতে পারবেন, তাঁকেই তিনি বিবাহ করবেন। এই কথা শুনে শুম্ভ-নিশুম্ভ ধূম্রলোচনকে সেনাপতি করে একদল সৈন্য পাঠান এবং ধূম্রলোচনকে এই নির্দেশ দেন যেন সে দেবীর চুল ধরে নিয়ে আসেন। ধূম্রলোচন দেবীর সম্মুখে এলে, দেবী তাঁকে ভস্মীভূত করেন।

দুর্গা কর্তৃক চণ্ড-মুণ্ড বধ ও দিগম্বরী, আকর্ণনয়না, পূর্ণযৌবনা, মুক্তকেশী, লোলজিহ্বা, মুণ্ডুমালাবিভুষিতা, চতুর্ভুজা, শ্যামবর্ণ, কালী এবং চামুণ্ডা নামপ্রাপ্তি এরপর শুম্ভ-নিশুম্ভ দেবীকে ধরে আনার জন্য চণ্ড-মুণ্ডকে পাঠান। হিমালয়ের শিখরে তাঁরা দেবীকে আক্রমণ করলে– দেবীর ললাট থেকে অপর একটি ভয়ঙ্কর দেবী নিষ্ক্রান্ত হন। এই দেবী কালী নামে অভিহিত হয়ে থাকেন। এই সময় ইনি কালীরূপ-সহ দশটি রূপ ধরে যুদ্ধ করেছিলেন। এই দশটিরূপকে দশটি নামে অভিহিত করা হয়। এই নামগুলো হলো– দিগম্বরী, আকর্ণনয়না,পূর্ণযৌবনা, মুক্তকেশী, লোলজিহবা, মুণ্ডমালাবিভুষিতা, চতুর্ভুজা, শ্যাম বর্ণ ও কালী।

মূলত কালীর ছিল চারটি হাত। এর মধ্যে দুই ডান হাতে ছিলে খট্বাঙ্গ ও চন্দ্রহাস, বাম দুই হাতে রয়েছে চর্ম ও পাশ। এঁর গলায় ছিলে নরমুণ্ডু ও দেহ বাঘের ছালে আবৃত। এঁর দাঁত দীর্ঘ, রক্তচক্ষু, বিস্তৃত মুখ ও স্থূল কর্ণ। যুদ্ধ ক্ষেত্রে আবির্ভুতা হয়েই দেবী অসুর সৈন্য ও হাতি ঘোড়া মুখে পুড়ে আহার করা শুরু করেন। ফলে অসুর সৈন্যরা ভীত হয়ে পড়লেন। এরপর চণ্ড-মুণ্ড দেবীর উদ্দেশ্যে বিভিন্ন অস্ত্র নিক্ষেপ করলে, দেবী তা মুখে গ্রহণ করে অট্টহাস্য করতে লাগলেন। এরপর ইনি চণ্ড ও মুণ্ডকে হত্যা করলেন। এই দেবী চণ্ড-মুণ্ডকে হত্যা করে দুর্গার মূল মূর্তির কাছে গেলে, দুর্গা তাঁকে চামুণ্ডা (চণ্ড-মুণ্ডকে হত্যা করার কারণে) নামে অভিহিত করেন। উল্লেখ্য অম্ (সূক্ষ্ম) রূপযুক্তা– এই অর্থে কালীর অপর নাম অংশস্বরূপা।

যুদ্ধে দেবতাদের সহায়তা
চণ্ড-মুণ্ডের নিহত হওয়ার কথা শুনে, শুম্ভ নিজেই বিশাল সৈন্য বাহিনী নিয়ে যুদ্ধ ক্ষেত্রে অগ্রসর হন। এই সময় অন্যান্য দেবতারা দেবীকে শক্তি ও অস্ত্র দ্বারা সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন। এই সময় যে সকল দেবতারা সাহায্য করার জন্য এসেছিলেন, তাঁরা হলেন– ব্রহ্মার তাঁর ক্ষমতা নিয়ে হংসবাহনে এবং ব্রহ্মাণী অক্ষসূত্র ও কমণ্ডলু ধারণ করে আসেন । ষাড়ের পিঠে চড়ে মহাদেব সর্পবলয় ও চন্দ্ররেখা ভূষণ ধারণ করে ত্রিশূল হাতে নিয়ে আসেন। গুহরূপিণী কৌমারী ময়ুর বাহনে শক্তিশেল নিয়ে আসেন। বৈষ্ণবী শক্তি নিয়ে গরুড়ের পিঠে চড়ে আসেন বিষ্ণু। এঁর হাতে ছিল শঙ্খ, চক্র, গদা ও খড়্গ। এছাড়া বিষ্ণুর যজ্ঞবরাহ মূর্তি, নৃসিংহমূর্তিও যোগ দিয়েছিলেন এর সাথে। ইন্দ্র এসেছিলেন বজ্র হাতে ঐরাবতে চড়ে।

চণ্ডিকা মুর্তির আবির্ভাব
দেবী চূড়ান্ত যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হলে, তাঁর শরীর থেকে চণ্ডিকা শক্তি নিষ্ক্রান্ত হলো। এরপর দেবী কিছু শর্ত দিয়ে মহাদেবকে চণ্ড-মুণ্ডের কাছে দূত হিসাবে পাঠান। কিন্তু মহাদেবের এই প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে, দেবীকে আক্রমণ করলো। ফলে দেবীর চণ্ডিকা ও কালী মূর্তিসহ- সকল দৈবশক্তি অসুরদের হত্যা করতে লাগলেন।

রক্তবীজ বধ
ভীত অসুর সৈন্যদের উৎসাহ দিয়ে রক্তবীজ নামক অসুর যুদ্ধক্ষেত্রে এলো। এই অসুরের রক্ত মাটিতে পড়লে, তা থেকে অসংখ্য অসুর সৈন্য জন্মগ্রহণ করতো বলে, এর এরূপ নামকরণ করা হয়েছিল। রক্তবীজ ইন্দ্রের-শক্তির সাথে যুদ্ধ শুরু করলে, এই শক্তি বজ্র দ্বারা তাকে আঘাত করলেন। এর ফলে আহত রক্তবীজের শরীর থেকে নির্গত রক্ত বিন্দু থেকে অসংখ্য অসুর সৈন্য সৃষ্টি হতে থাকলো। অন্যান্য দৈব শক্তির আঘাতের ফলে একই ঘটনা ঘটতে থাকলে, অচিরেই যুদ্ধক্ষেত্র অসুর সৈন্যে পরিপূর্ণ হয়ে গেলো। এরপর চণ্ডিকা কালীকে ডেকে বললেন যে, রক্তবীজকে আঘাত করলে, যে রক্তপাত হবে, তা কালী খেয়ে ফেললে, সৈন্য উৎপাদন বন্ধ হবে। এরপর চণ্ডিকা রক্তবীজকে আঘাত করলে, কালী তার রক্ত খেয়ে ফেলতে লাগলেন। একসময় রক্তবীজ রক্তশূন্য হয়ে ভূমিতে পতিত হয়ে মৃত্যুবরণ করে।

শুম্ভ-নিশুম্ভ বধ
রক্তবীজের হত্যার পর শুম্ভ-নিশুম্ভ নিজেরাই সসৈন্যে যুদ্ধক্ষেত্রে আসে। এই যুদ্ধে প্রাথমিকভাবে দেবীর শরাঘাতে নিশুম্ভ ভূপাতিত হলে, শুম্ভ তাঁকে আক্রমণ করে। কিন্তু কিছুক্ষণ যুদ্ধের পর শুম্ভ শূলের আঘাতে মূর্চ্ছিত হয়। পরে নিশুম্ভ চেতনা লাভ করে দেবীকে পুনরায় আক্রমণ করে। দেবী প্রথমে নিশুম্ভের বুকে শূলের আঘাত করলে, তার হৃদয় থেকে একটি পুরুষ মূর্তি নির্গত হয়। এরপর দেবী খড়গের আঘাতে এই পুরুষের শিরশ্ছেদ করেন। ফলে নিশুম্ভের মৃত্যু হয়। এরপর শুম্ভ চেতনা লাভ করে দেবীকে বলে যে, এই সব সহকারী শক্তির বলে যুদ্ধ করছে, মূলত দেবীর কোন শক্তি নেই। শুম্ভের এই কথা শুনে দেবী সকল সহকারী শক্তি তাঁর দেহের ভিতর টেনে নিয়ে এককভাবে শুম্ভের মুখোমুখী হন। এরপর শুম্ভ তাঁকে আক্রমণ করলে, দেবী সকল আক্রমণ প্রতিহত করলেন। এই সময় শুম্ভ দেবীকে আকাশে তুলে নিয়ে যুদ্ধ শুরু করেন। একসময় দেবী শুম্ভকে পৃথিবীতে নিক্ষেপ করে মাটিতে নেমে এলে, শুম্ভ মুষ্ঠিবদ্ধ হাতে দেবীকে আক্রমণ করে। কিন্তু দেবী শূলের আঘাতে শুম্ভকে হত্যা করেন।

কেন মা দুর্গাকে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ বলা হয়?
মহিষাসুর কে ছিলেন? ‘মহিষাসুর’ একটি সংস্কৃত শব্দ যা ‘মহিষা’ শব্দ থেকে উৎপত্তি, এর অর্থ ‘মহিষ’ এবং ‘অসুর’ শব্দের অর্থ রাক্ষস বা দৈত্য। বিভিন্ন প্রাচীন হিন্দু কাহিনীতে মহিষাসুরকে অপদেবতা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। মহিষাসুর ছিলেন অসুরাজ রম্ভ-র সন্তান। অসুররাজ রম্ভ ছিলেন এক ভয়ঙ্কর দৈত্য, যিনি ব্রহ্মার বরপ্রাপ্ত ছিলেন। অসুর ও দেবতাদের মধ্যে তিনি অজেয় ছিলেন। মা দুর্গাকে কেন ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ বলা হয়?

মহিষাসুর ভগবান ব্রহ্মের একনিষ্ঠ উপাসক ছিলেন। বহু বছর তপস্যার পর ব্রহ্মা তাঁকে একটি বর প্রদান করেছিলেন। মহিষাসুর নিজের শক্তি নিয়ে গর্বিত ছিলেন। তিনি ভগবান ব্রহ্মার কাছ থেকে অমরত্বের বর চেয়েছিলেন, এবং তাঁর ইচ্ছা ছিল পৃথিবীর কোনও মানুষ বা প্রাণী তাঁকে যেন হত্যা করতে না পারে। ব্রহ্মা তাঁকে এই বর প্রদান করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে তিনি একজন মহিলার কাছে পরাস্ত এবং নিহত হবেন।

মহিষাসুর তাঁর শক্তির ওপর এতটাই আস্থা করতেন যে তিনি বিশ্বাস করেছিলেন, এই পৃথিবীতে কোনও মহিলাই তাঁকে হত্যা করতে পারবে না। মহিষাসুর তাঁর সেনাবাহিনী নিয়ে ত্রিলোক (স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল) আক্রমণ করেন এবং ইন্দ্রলোকও (ভগবান ইন্দ্রের রাজ্য) জয় করার চেষ্টা করেন। তাঁর অত্যাচারে সারা জগৎ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল।
দেবতারা মহিষাসুরের সাথে যুদ্ধ করলেও ভগবান ব্রহ্মার আশির্বাদের ফলে কেউ তাঁকে পরাস্ত করতে পারেনি। এরপর, দেবতারা ভগবান বিষ্ণুর কাছে সাহায্য প্রার্থী হন। মহিষাসুরকে বধ করার জন্য সমস্ত দেবতা ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং শিব তাঁদের সমস্ত শক্তি একত্রিত হয়ে সৃষ্টি করেন দেবী দুর্গার।

যা দেবী! সর্বভূতেষু শক্তিরূপেন সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।।
যা দেবী! সর্বভূতেষু মাতৃরূপেন সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।।
যা দেবী! সর্বভূতেষু শান্তিরূপেন সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।।

প্রায় ১৫ দিন ধরে মহিষাসুরের সাথে দেবী দুর্গার লড়াই চলে। মহিষাসুর একের পর এক আলাদা আলাদা রুপ ধারণ করতে থাকে। অবশেষে, যখন মহিষের রূপান্তরিত হলেন, তখন দেবী দুর্গা ত্রিশুল দিয়ে তাঁর বুকের উপরে আঘাত করে হত্যা করেছিলেন। মহিষাসুরমর্দিনী অর্থাৎ মহিষাসুরকে দমনকারী।

মহিষাসুর মহালয়ার দিন দেবী দুর্গার হাতে পরাস্ত ও নিহত হন। সেই থেকে দেবী দুর্গার নাম হয় ‘মহিষাসুরমর্দিনী’।

মহাশক্তির আরাধনা ……দেবীর বন্দনা -১৪২৭
শ্রী শ্রী মহাসপ্তমী পূজার কবিতা (তৃতীয় পর্ব)

কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

2

শ্রী শ্রী মহাসপ্তমীতে বিধির বিধান,
সযত্নে নবপত্রিকা করাইবে স্নান।
দোলা লয়ে চলে সবে অজয়ের চরে,
বারি লয়ে আসে সবে রাঙাপথ ধরে।

ঢাকঢোল বাদ্যি বাজে শঙ্খধ্বনি হয়,
সকলেই ধ্বনি দেয় মা দুর্গার জয়।
মন্দির চত্বরে কত আলপনা আঁকা,
সম্মুখে বরণ ডালা ধূপ দীপ রাখা।

মন্দিরেতে পুরোহিত বসি শুদ্ধাসনে,
করিছেন মন্ত্রপাঠ শুচি শুদ্ধ মনে।
সপ্তমীতে বিধিমতে পূজা সমাপন,
পূজাশেষে ফলমূল প্রসাদ বণ্টন।

মহা সপ্তমীর কাব্য শুনে সর্বজন,
দেবীর কৃপায় লিখে শ্রীমান লক্ষ্মণ।
—————————–
মনে রাখবেন-
পূজা প্রাঙ্গনে সকলের মাস্ক পরা প্রধান ও পবিত্রতম কর্তব্য।
পূজার প্রাঙ্গনে প্রবেশের আগে হাত ধুয়ে নিন।
স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।
প্রতিটি পূজা প্যাণ্ডেলে স্যানিটাইজার রাখা বাঞ্ছনীয়।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন।
ভিড় থেকে নিজেকে ও পরিবারকে দূরে রাখুন।
সকলকে জানাই শুভ দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা আর শুভকামনা।

Remember-
Wearing masks is the main and holiest duty of everyone in the worship premises.
Wash your hands before entering the worship premises.
Use sanitizer.
It is recommended to keep sanitizer in each puja pandal.
Maintain social distance.
Keep yourself and your family away from the crowd.
I wish everyone a happy Durga Puja and best wishes.

মহাশক্তির আরাধনা ……দেবীর বন্দনা -১৪২৭ শ্রী শ্রী মহাষষ্ঠী পূজার কবিতা (দ্বিতীয় পর্ব)

মহাশক্তির আরাধনা ……দেবীর বন্দনা -১৪২৭
শ্রী শ্রী মহাষষ্ঠী পূজার কবিতা (দ্বিতীয় পর্ব)

তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

3

দুর্গাপূজা মানেই সার্বজনীন উৎসব, দেবী দুর্গা আমাদের মাঝে মাতৃরূপে বিরাজ করেন, সবার মা। মা সন্তানের সুরক্ষাদায়িনী, সব অপশক্তি বিনাশিনী, মুক্তিদায়িনী, আনন্দময়ী দুর্গা। মায়ের কাছে সব সন্তান সমান, সব সন্তানের কাছে মা অনন্য, তাই মা দুর্গা সর্বজনের, দুর্গাপূজা সার্বজনীন।

দেবীর বোধন :- শুদ্ধ ভাষায় যা নবপত্রিকা সেটাই চলিত ভাষায় পরিচিত কলাবউ রূপে৷ আর এই কলাবউ তো বাংলার দুর্গাপূজার একটি বিশিষ্ট অঙ্গ। আর এই নবপত্রিকা শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল নয়টি গাছের পাতা। যদিও বাস্তবে এই নবপত্রিকা নটি পাতা নয় আসলে ৯টি গাছ। মূলত এটা কলাগাছ তার সঙ্গে থাকে কচু, বেল, হরিদ্রা (হলুদ), দাড়িম্ব (দাড়িম), অশোক, মান জয়ন্তী এবং ধান গাছ ৷ কলাগাছের সঙ্গে একেবারে মূল থেকে উৎপাটিত করে তা বেঁধে দেওয়া হয় এবং গণেশের ডান পাশেই বসানো হয় এই নবপত্রিকাকে ৷ একেই একেবারে লাল পাড় সাদা শাড়ি পড়িয়ে একেবারে ঘোমটা পড়া কলাবউয়ের রূপ দেওয়া হয় ৷

দেবী দুর্গার ছেলে মেয়ে এবং মহিষাসুরের সঙ্গে পুজো পায় এই নবপত্রিকা৷ কথিত আছে এই নবপত্রিকার ৯টি গাছ আসলে দেবী দুর্গার নয়টি বিশেষ রূপের প্রতীকস্বরূপ৷ এই নয় দেবী হলেন-রম্ভাধিষ্ঠাত্রী ব্রহ্মাণী, কচ্বাধিষ্ঠাত্রী কালিকা, হরিদ্রাধিষ্ঠাত্রী উমা, জয়ন্ত্যাধিষ্ঠাত্রী কার্তিকী, বিল্বাধিষ্ঠাত্রী শিবা, দাড়িম্বাধিষ্ঠাত্রী রক্তদন্তিকা, অশোকাধিষ্ঠাত্রী শোকরহিতা, মানাধিষ্ঠাত্রী চামুণ্ডা ও ধান্যাধিষ্ঠাত্রী লক্ষ্মী৷ অর্থাৎ এরাই যেন একত্রে নবদুর্গা রূপে পূজিত হয়৷ কলাবউয়ের চান দুর্গাপুজোর এক বিশেষ অঙ্গস্বরূপ৷

মহাশক্তির আরাধনা ……দেবীর বন্দনা -১৪২৭
শ্রী শ্রী মহাষষ্ঠী পূজার কবিতা (দ্বিতীয় পর্ব)

কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

4

আজি শ্রীশ্রী মহাষষ্ঠী দেবীর বোধন,
দোলা চড়ে মা দুর্গার মর্ত্তে আগমন।
জয়ন্তী, অশোক, কলাগাছ আর মান,
হলুদ, দাড়িম্ব, বেল সঙ্গে থাকে ধান।

পাটসুতো দিয়ে বাঁধা নব পত্রিকার,
সন্ধ্যাকালে কল্পারম্ভ বিবিধ প্রকার।
ষষ্ঠাদি বিহিত পূজা হয় সমাপন,
দেবীর আরতি হলে হরষিত মন।

করোনা আবহে আজি জাতীয় সঙ্কট,
মূর্ত্তিপূজা বন্ধ তাই, সবে পূজে ঘট।
ঢাক বাজে কাঁসি বাজে মণ্ডপ প্রাঙ্গনে,
শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি দেয় এয়োগণে।

মন্দিরেতে পুরোহিত বসিয়া আসনে,
করিছেন মন্ত্রপাঠ ভক্তিযুক্ত মনে।
কল্পারম্ভ পূজাপাঠ হয় বিধিমতে,
মহাশক্তি আরাধনা বিদিত জগতে।

বিল্ব-ষষ্ঠী মহা পূজা হয় সমাপন,
মহাষষ্ঠী কাব্য লিখে শ্রীমান লক্ষ্মণ।

……………………………………….
ষষ্ঠী তিথি আরম্ভ:
বাংলা তারিখ– ৪কার্তিক, ১৪২৭, বুধবার।
ইংরেজি তারিখ – ২১/১০/২০২০
সময় – দুপুর ২টো ৪৪ মিনিট ২০ সেকেন্ড থেকে।

ষষ্ঠী তিথি শেষ:
বাংলা তারিখ – ৫ কার্তিক, ১৪২৭, বৃহস্পতিবার।
ইংরেজি তারিখ – ২২/১০/২০২০
সময় – দুপুর ১টা ১১ মিনিট ৫৮ সেকেন্ড পর্যন্ত।

সকাল ৯টা ২৭ মিনিট ১১ সেকেন্ড মধ্যে শ্রীশ্রী শারদীয়া দুর্গাদেবীর ষষ্ঠাদিকল্পারম্ভ ও ষষ্ঠী বিহিত পূজাপ্রশস্তা।সায়ংকালে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস।

……………………………………………………….

এ বছর সব কিছুই অন্য রকম। মহালয়ার প্রায় পাঁচ সপ্তাহ পরে পুজো, তা-ও আবার এক ভয়াবহ অতিমারীর আবহে। বিশেষত দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ সামলাতে সমস্ত সম্মেলনের জন্য নিয়ম বেঁধে দিয়েছে সরকার:
– ২৫ জন এর বেশী লোক জমায়েত হতে পারবে না।
– সর্দি কাশি বা জ্বর থাকলে অনুষ্ঠানে যোগদান নিষেধ।
– ১.৫ মিটার সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
– মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক।
– স্যানিটাইজ করতে হবে।

নিয়ম না মানলে কড়া শাস্তির ভয়। এ দিকে দুর্গাপুজোর অঙ্গ, যেমন শাঁখ বাজানো, উলু দেওয়া- সে সব মাস্ক পরে সম্ভব নয়। তাছাড়া মেলামেশাও তো পুজোর খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। সেটাও এই পরিস্থিতিতে সম্ভব নয়। এত সব মেনে কি আর আনন্দ করা সম্ভব!

তাই প্রায় সকলেই শর্ট নোটিসে পুজো বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।এমনকি, কোলন-এর মতো প্রাচীন পুজোও। তা বলে কি দেবী দুর্গা কে আবাহন করব না? অঞ্জলি দেব না? নিশ্চয়ই আবাহন করব। তবে এই অতিমারীর সময়ে এবার ভার্চুয়াল পুজো হবে। আমরা “আপন মনের মাধুরী মিশায়ে” বাড়িতে থেকেই ভার্চুয়াল মাধ্যমে অঞ্জলি দেব, ঠাকুর দেখব। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করব। মানুষের জীবন ও নিরাপত্তা উৎসবের ঊর্ধ্বে। সব কিছু ঠিক থাকলে আসছে বছর আবার হবে!

মহাশক্তির আরাধনা ……দেবীর বন্দনা -১৪২৭ শ্রী শ্রী মহাপঞ্চমী পূজার কবিতা (প্রথম পর্ব)

করোনা আবহে আজি জাতীয় সংকট,
বন্ধ হলো মূর্ত্তি পূজা, তবু পূজে ঘট।

তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

1

কমিটির অন্যরা জানাচ্ছেন, আড়ম্বর কমাতে মণ্ডপের দৈর্ঘ্য অন্যান্য বারের তুলনায় প্রায় ১৫ ফুট কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অষ্টমীর অঞ্জলির জন্য বেলেঘাটা, ফুলবাগান এলাকায় মাইক লাগানো হচ্ছে কয়েকটি বাড়ি ধরে ধরে, এক-একটি জ়োন বানিয়ে। বাড়ি বাড়ি ফুল-বেলপাতা পৌঁছে দেওয়ারও ব্যবস্থা হচ্ছে। ভিড় এড়াতে বেলেঘাটার ৩৩ পল্লি এখন থেকেই প্রচার করছে, ‘‘মণ্ডপে এসে নয়, দয়া করে বাড়িতে বসে মাইকে পুরোহিতের মন্ত্র পাঠ শুনে অঞ্জলি দিন। অঞ্জলি দেওয়া শেষ হলে আমাদের পৌঁছে দেওয়া ফুল গুলো বাড়ির দরজার কাছে এক জায়গায় রেখে দিন। আমাদের কমিটির ছেলেরাই গিয়ে নিয়ে আসবে। প্রতিমার সঙ্গেই সেগুলি ভাসান চলে যাবে!’’

ওই পুজো কমিটির অন্যতম কর্তা পরিমল দে বললেন, ‘‘পাড়ার লোকেদেরই আমরা এই কথা বলছি। তাহলে ভাবুন, বাইরের দর্শনার্থীদের জন্য আমাদের পরামর্শ কত স্পষ্ট। পরিষ্কার বলছি, এ বার বাদ দিন। করোনা মিটলে সামনের বছর দলবল নিয়ে আসুন। ইচ্ছে করেই এ বার আড়ম্বর কমিয়ে মানবিকতার পুজো করছি আমরা।’’

কমিটির অন্যরা জানাচ্ছেন, আড়ম্বর কমাতে মণ্ডপের দৈর্ঘ্য অন্যান্য বারের তুলনায় প্রায় ১৫ ফুট কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। বহু বছর ধরে কাজ করে আসা শিল্পী-কারিগরদের আয়ের পথ খোলা রাখতে দেবীর আঁচলের কারুকাজ বাদ দেওয়া না হলেও এ বার ভোগ থেকে শুরু করে বিসর্জনের সমস্ত জৌলুসের আয়োজন বন্ধ থাকছে। কমিয়ে ফেলা হয়েছে আলোর রোশনাই। উল্টে মণ্ডপে অবাঞ্ছিত ভিড় এড়াতে ফুল বাগান মেট্রো স্টেশনের আশপাশের এলাকা-সহ আরও দু’টি জায়গায় তিনটি অতিকায় স্ক্রিন বসাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। তাঁদের দাবি, ‘‘আমরাচাইব, মণ্ডপে না ঢুকে এ বার দর্শকেরাও ইস্ক্রিনেই আমাদের প্রতিমা দেখে নিন।’’

তবে এ বারের পুজোতেও মেলা হচ্ছে ৩৩ পল্লিতে। মণ্ডপ ঘিরে প্রতিবারের মতো এ বারও থাকছে আট-ন’টি স্টল। থাকছে নানা রকম দোলনা। তবে মেলার সেই সব স্টল থেকে কিছুই কেনা যাবে না বলে উদ্যোক্তাদের দাবি। পরিমলবাবু বললেন, ‘‘কেউ ফুচকা, কেউ ঘুগনি, কেউ আবার বন্দুক দিয়ে বেলুন ফাটানোর স্টল দেবেন। পুজোর চারদিন তাঁদের যা আয় হয়, সেটা আমরা কমিটির তরফে তাঁদের হাতে তুলে দেব। ভিড় এড়ানো এবং মানুষের কর্ম সংস্থান, দুই-ই হবে তাতে। দু’টো দিক বজায় রাখাই আমাদের দায় বদ্ধতার মধ্যে পড়ছে।’’

ভিড় কমিয়ে ‘দায়বদ্ধতার পুজো’ করার কথা বলছে মুদিয়ালি ক্লাবও। উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, অন্যান্য বারের তুলনায় মণ্ডপ এবার ৬০ শতাংশ ছোট করে ফেলা হয়েছে। আলোর জাঁকজমক বাদ, ভাসানের শোভা যাত্রা বাদ। বাদ পড়েছে ভোগের আয়োজনও। পুজোর অন্যতম কর্তা মনোজ সাউ বললেন, ‘‘কয়েক মাস আগে আমারই করোনা হয়েছিল। কী রকম ভোগান্তি পোহাতে হয়, সামনে থেকে দেখেছি। বড় কিছু করলেই বহু মানুষ ভিড় করবেন। তাই ছোট করে পুজো টিকিয়ে রাখার দায়বদ্ধতা সারব ঠিক করেছি।’’

উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, সেই দায়বদ্ধতার অঙ্গ হিসেবেই মুদিয়ালির মণ্ডপ সাজিয়ে তোলা হচ্ছে বিভিন্ন জেলার পরিচিত শিল্পকর্ম দিয়ে। সেগুলি তৈরি করতে বলা হয়েছে কলকাতার পুজোর উপরে নির্ভরশীল বেশ কয়েকজন শিল্পীও কারিগরকে। ৩০০টি পরিবারের খাবারের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি এক ক্যানসার আক্রান্তের চিকিৎসার খরচও জোগানো হয়েছে পুজো কমিটির তরফে। তাঁদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা এক দৃষ্টিহীন পড়ুয়ার মাধ্যমিকের পরবর্তী পড়াশোনার দায়িত্ব নেওয়ার সিদ্ধান্তও তাঁরা নিয়ে ফেলেছেন বলে জানালেন মুদিয়ালির পুজোর উদ্যোক্তারা। মনোজ বাবুর কথায়, ‘‘দর্শনার্থীদের বলব, মণ্ডপ দর্শন পরের বারও হবে। এবার মুদিয়ালিকে মনে রাখুন তার কাজ দিয়ে।’’

একই পথে হাঁটছেন উত্তরের আহিরীটোলা সর্বজনীনের উদ্যোক্তারা। মাঠ জুড়ে নয়, এবার তাঁদের মণ্ডপ হচ্ছে মাঠের প্রবেশপথের কাছে ছোট করে। আলোর আড়ম্বরে তাক লাগানোর রেওয়াজ বদলে ফেলা হয়েছে। ৮১ তম বছরে এ বার বাদ গিয়েছে ভোগ, জলসা বা বিসর্জনের যাবতীয় উদ্যোগও। এমনকি, প্রতি বার বর্ধমান থেকে আসা ঢাকির দলকেও এবার আসতে বারণ করছেন তাঁরা। পুজোর অন্যতম কর্তা দুলাল শীল বললেন, ‘‘ঢাকিদের পারিশ্রমিক পাঠিয়ে দেওয়া হবে। ওঁদের বাজানো ঢাকের বোলই রেকর্ড করে বাজানো হবে। কোনও রকম ভিড়ই আসলে চাইছিনা এবার।’’

মহাশক্তির আরাধনা ……দেবীর বন্দনা -১৪২৭
শ্রী শ্রী মহাপঞ্চমী পূজার কবিতা (প্রথম পর্ব)

কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

2

শ্রী শ্রী মহা পঞ্চমীতে দেবী আনয়ন,
বেদীপরে প্রতিমারে করিয়া স্থাপন।
মহাশক্তি আরাধনা করে বিশ্ববাসী,
শুভশক্তি আবাহন অশুভরে নাশি।

মহা পঞ্চমীতে হয় দেবী আগমন,
মহা শক্তি আরাধনা সুপ্রসন্ন মন।
সুদৃশ্য প্যাণ্ডেল পরি শোভে ফুলমালা,
মাইকের উচ্চরবে কান ঝালাপালা।

ঢাক ঢোল শঙ্খ ঘন্টা, বাজয়ে কাঁসর,
পূজার আনন্দ আজি আনন্দ বাসর।
করোনা প্রবাহে আজি জাতীয় সঙ্কট,
মূর্ত্তিপূজা বন্ধ বহু, তবু পূজে ঘট।

মহা পঞ্চমীর কাব্য লিখিল লক্ষ্মণ,
যে কাব্য পঠনে হয় করোনা দমন।

————————————————-
মা দুর্গার দোলায় আগমন -ফলমড়ক।
মা দুর্গার গজে গমন-ফল শস্যপূর্ণা বসুন্ধরা।

পঞ্চমী তিথি আরম্ভ :
বাংলা তারিখ – ৩ কার্তিক, ১৪২৭, মঙ্গলবার।
ইংরেজি তারিখ – ২০/১০/২০২০
সময়– অপরাহ্ন ৪টে ৩৫ মিনিট ৫৩ সেকেন্ড থেকে।

পঞ্চমী তিথি শেষ:
বাংলা তারিখ– ৪ কার্তিক, ১৪২৭, বুধবার।
ইংরেজি তারিখ– ২১/১০/২০২০
সময়–দুপুর ২টো ৪৪ মিনিট ১৯ সেকেন্ড পর্যন্ত।
সায়ংকালে শ্রীশ্রী শারদীয়া দুর্গাদেবীর বোধন।

মনে রাখবেন-
• পূজা প্রাঙ্গনে সকলের মাস্ক পরা প্রধান ও পবিত্রতম কর্তব্য।
• পূজার প্রাঙ্গনে প্রবেশের আগে হাত ধুয়ে নিন।
• স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।
• প্রতিটি পূজা প্যাণ্ডেলে স্যানিটাইজার রাখা বাঞ্ছনীয়।
• সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন।
• ভিড় থেকে নিজেকে ও পরিবারকে দূরে রাখুন।
• সকলকে জানাই শুভ দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা আর শুভকামনা।

সোনা রোদ ঝরে নদীচরে অজয় নদীর কবিতা শারদ সংকলন-১৪২৭ (প্রথম পর্ব)

সোনা রোদ ঝরে নদীচরে। অজয় নদীর কবিতা
শারদ সংকলন-১৪২৭ (প্রথম পর্ব)

কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

সোনা রোদ ঝরে অজয়ের চরে
দুইধারে কাশবন,
সাদা মেঘমালা করে আনাগোনা
শরতের আগমন।

যাত্রীরা আসিছে কিনারার কাছে
মাঝি তরী আনে কূলে,
চাপিল সবাই যাত্রীরা নৌকায়
সবে বোঝা মাথে তুলে।

চলে হেলে-দুলে লাগিল একূলে
যাত্রী সবে নেমে যায়,
রাঙাপথ ধরে চলে সবে ঘরে
বোঝা আপন মাথায়।

অজয়ের কূলে সাদা কাশফুলে
দুধার গিয়েছে ছেয়ে,
হাতে একতারা বাজায় দোতারা
চলেছে বাউল গেয়ে।

অজয়ের চরে বেলা আসে পড়ে
মাঝি শেষখেয়া বায়,
রবি অস্ত যায়, আলোক হারায়
দিনের শেষে সন্ধ্যায়।

রাতের আকাশে চাঁদ তারা হাসে
জাগে সারারাত ধরে,
রাতে পেঁচা ডাকে শেয়ালেরা হাঁকে
অজয় নদীর চরে।

শিউলি ঝরানো সকালে শরতের কবিতা শারদ সংকলন-১৪২৭ দশম পর্ব

শিউলি ঝরানো সকালে শরতের কবিতা
শারদ সংকলন-১৪২৭ দশম পর্ব

কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

শরৎ এসেছে শিউলি ফুটেছে
শিউলির গাছে গাছে,
টগর বকুল আর জুঁই ফুল
আমার বাড়ির কাছে।

উঠোনের ধারে ছোট দিঘি পারে
গাছে গাছে পাখি গায়,
তার কালো জল করে ঢল ঢল
রুই কাতলা লাফায়।

শালুক ফুটিল পাপড়ি মেলিল
দিঘি তার কালো জল।
পদ্মদিঘি জলে রাজহাঁস খেলে
ফুটে সোনার কমল।

অজয়ের চরে সারাদিন ধরে
মাঝি করে খেয়াপার,
সাঁঝের বেলায় ঘরে ফিরে যায়
নেমে আসে অন্ধকার।

মন্দিরের মাঝে মা দুর্গা বিরাজে
ঢাকঢোল কাঁসি বাজে,
দেরি নাই পূজা, দেবী দশভূজা
আসিছেন ধরা মাঝে।

শিউলি ঝরানো সকালে শরতের কবিতা শারদ সংকলন-১৪২৭ নবম পর্ব

শিউলি ঝরানো সকালে শরতের কবিতা
শারদ সংকলন-১৪২৭ নবম পর্ব

কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

শরতের আগমনে শিউলির বনে বনে
ফুটে সব শিউলির কলি,
প্রভাতে পাখিরা সব তুলে নানা কলরব
গুঞ্জরিয়া আসে যত অলি।

সবুজ ঘাসের পরে শিশিরের বিন্দু ঝরে
সূর্যের আলোয় তারা হাসে,
সকালের সোনাঝরা রোদ্দুর পাগল করা
সাদামেঘ আকাশেতে ভাসে।

ঝোপে কেয়াফুল ফুটে পূবদিকে রবি উঠে
সোনাঝরা রোদ পড়ে ঝরে,
অজয় নদীর পারে কাশফুল সারে সারে
শোভা দেয় অজয়ের চরে।

সবুজ ধানের খেতে মুক্তবায়ু উঠে মেতে
গাভী চরে সবুজ ডাঙায়,
শঙ্খচিল আসে যায় রাঙাপথ সীমানায়
কভু উড়ে আকাশের গায়।

শরতের আগমনী শোনা যায় শঙ্খধ্বনি
ঢাক ঢোল আর বাজে কাঁসি,
পূজা এসে গেল কাছে পুলক হৃদয় নাচে
রাখালিয়া সুরে বাজে বাঁশি।

শিউলি ঝরানো সকালে শরতের কবিতা শারদ সংকলন-১৪২৭ অষ্টম পর্ব

শিউলি ঝরানো সকালে শরতের কবিতা
শারদ সংকলন-১৪২৭ অষ্টম পর্ব

কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

শরতের আগমনে মেঘ গগনে গগনে
পুঞ্জে পুঞ্জে ভেসে চলে যায়,
সাদা মেঘেদের ভেলা সারাদিন করে খেলা
গাছে গাছে পাখি গীত গায়।

ফুটিল টগর কলি শিশিরে সিক্ত শিউলি
মালতী মাধবী চাঁপা বেলি,
বাড়ির বেড়ার ধারে কেয়াফুল সারে সারে
গন্ধরাজ, ফুটেছে চামেলি।

জলাশয়ে খালে বিলে শালুক পাপড়ি মিলে
সরোবরে ফুটেছে কমল,
পূবদিকে রবি উঠে প্রভাতে সৌরভ ছুটে
গুঞ্জরিয়া আসে অলিদল।

অজয়ের কাশবনে শরতের আগমনে
শালিকেরা নিত্য আসে ঝাঁকে,
ভরে উঠে দুনয়ন শাল পিয়ালের বন
আছে অজয় নদীর বাঁকে।

পূজা এসে গেল ভাই আর তো সময় নাই
আনন্দেতে প্রাণে দেয় সাড়া,
গাঁয়ের মন্দির মাঝে ঢাক ঢোল কাঁসি বাজে
পূজার উত্সবে জাগে পাড়া।

শিউলি ঝরানো সকালে শরতের কবিতা শারদ সংকলন-১৪২৭ সপ্তম পর্ব

শিউলি ঝরানো সকালে শরতের কবিতা
শারদ সংকলন-১৪২৭ সপ্তম পর্ব

কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

শিউলি ঝরানো শারদ সকালে
ফুল ফুটে বাগিচায়,
আকাশে বাতাসে সুগন্ধ সুবাসে
পাখি সব গীত গায়।

বিকশিত শত শতদল যত
সরোবরে শোভা দেয়,
ফুটিল কমল আসে অলি দল
ফুলে ফুলে মধু নেয়।

কমল কাননে মধু আহরণে
মত্ত হয় মধুকর,
শালুক ফুটিল পাপড়ি মেলিল
শোভা অতি মনোহর।

বরষার শেষে শারদ দিবসে
উদিল তপন পূবে,
দিবসের শেষে ম্লান হাসি হেসে
পশ্চিমের পানে ডুবে।

সকাল ও সাঁঝে ঢাক ঢোল বাজে
পুলকে হৃদয় নাচে,
পুজোর সানাই শুনিবারে পাই
পুজো এসে গেল কাছে।

শিউলি ঝরানো সকালে শরতের কবিতা শারদ সংকলন-১৪২৭ ষষ্ঠ পর্ব

শিউলি ঝরানো সকালে শরতের কবিতা
শারদ সংকলন-১৪২৭ ষষ্ঠ পর্ব

কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

শরতের নীলাকাশে সাদামেঘ চলে ভেসে
পূরব গগনে রবি উঠে,
গাঁয়ের পথের বাঁকে ফুলবনে ফুলশাখে
টগর বকুল ফুল ফুটে।

সোনালী কিরণ ঝরে অজয়ের নদীচরে
দুইধার ভরা কাশ ফুলে,
নয়ন দিঘির ঘাটে দুপুরে সাঁতার কাটে
ছেলেরা শালুকফুল তুলে।

জল নিয়ে যায় বধূ মাথায় ঘোমটা শুধু
পরনে আলতা পেড়ে শাড়ি,
নদীঘাটে স্নান সেরে দ্রুতপদে ঘরে ফেরে
রাঙাপথ ধরে আসে বাড়ি।

অবশেষে পড়ে বেলা মাঠে ফুটবল খেলা
চাষীরা আসে আপন গাঁয়ে,
দিনশেষে সাঁঝ হলে, ঘরে ঘরে দীপ জ্বলে
নামে আঁধার পথের বাঁয়ে।

মন্দিরে কাঁসর বাজে ঢাক বাজে ঢোল বাজে
দুর্গাপূজা আর দেরি নাই,
পূর্ণিমার চাঁদ উঠে একে একে তারা ফুটে
বাজে দূরে সাঁঝের সানাই।

জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীজি (দ্বিতীয় পর্ব)

জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীজি (দ্বিতীয় পর্ব)
তথ্য-সংগ্রহ ও প্রবন্ধ রচনা- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

পূর্ব প্রকাশিতের পর থেকে……

শুরুর দিকে দক্ষিণ আফ্রিকায় জুলু যুদ্ধে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে সৈনিকদের চিকিৎসাকেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে যোগ দেন। ভাগ্যের ফেরে গান্ধী একটি ভারতীয় প্রতিষ্ঠানে দেনা আদায়কারীর চাকুরি পেয়ে যান। তখন দক্ষিণ আফ্রিকা ব্রিটিশ এবং ডাচ শাসনাধীন। ভারতীয়রা সংখ্যালঘু হওয়ায় বর্ণ বৈষম্যের শিকার হত। গান্ধী বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন এবং সত্যাগ্রহের ধারণা সেখান থেকেই শুরু। যে ঘটনাটি গান্ধীর ভেতরকার নেতৃত্বের আগুনটি জ্বালিয়ে দেয় –

• ফার্স্ট ক্লাসের টিকিট থাকা সত্ত্বেও তাকে কালো এবং ভারতীয় বলে ফার্স্ট ক্লাস কামরায় বসতে তো দেয়নি বরং বিষয়টি নিয়ে বিবাদ করায় তাকে ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া হয়। এই ঘটনাটি গান্ধীর মনে দাগ কেটেছিল।

স্বদেশী আন্দোলনের সময় সকল বিদেশী পণ্য বিশেষত ব্রিটিশ পণ্য বর্জন করা হয়। এর পথ ধরে তিনি সকল ভারতীয়কে ব্রিটিশ পোশাকের বদলে খাদি পরার আহ্বান জানান। তিনি সকল ভারতীয় পুরুষ ও মহিলা, ধনী ও গরিব মানুষকে দৈনিক খাদীর চাকা ঘুরানোর মাধ্যমে স্বাধীনতার আন্দোলনকে সমর্থন করতে বলেন। এটি এমন একটি কৌশল ছিল যা নিয়মানুবর্তিতা ও আত্মত্যাগের অনুশীলনের মাধ্যমে অনিচ্ছা ও উচ্চাকাঙ্খা দূরীকরণের পাশাপাশি আন্দোলনে মহিলাদের যুক্ত করে, এ সময়ে মহিলাদের করা এ সকল কাজকে অসম্মানজনক বলে মনে করা হত।
লবণের উপর অতিরিক্ত কর আরোপ করায় গান্ধী হাজার হাজার ভারতীয়দের সাথে পায়ে হেঁটে ডান্ডির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। ইতিহাস একে Salt March বলে থাকে। শুধু মাত্র নিজ হাতে লবণ তৈরির জন্য পায়ে হেঁটে ১২ই মার্চ থেকে ৬ই এপ্রিল পর্যন্ত এলাহাবাদ থেকে ডান্ডি পৌছান। এলাহাবাদ থেকে ডান্ডি প্রায় ২৪১ মাইল। সে সময় ব্রিটিশরাজ সেই অপমানের বদলা নিতে ৬০,০০০ ভারতীয়কে গ্রেপ্তার করে। ৬০,০০০ ভারতীয়!

হাঁটা নিয়ে মহাত্মা গান্ধীর বিশেষ খ্যাতি রয়েছে। গান্ধী জীবনে এত হেঁটেছেন যে তাতে পুরো পৃথিবী দুইবার চক্কর দেয়া সম্ভব। অর্থাৎ দিনে প্রায় ১৮ কিলোমিটার করে হাঁটতেন তিনি।

গান্ধী তার জীবদ্দশায় দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ভারতে সব মিলিয়ে ১৩ বার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। সবচেয়ে বড় সাজার আদেশ পেয়েছিলেন ১৯২২ সালে Young India পত্রিকায় ব্রিটিশ বিরোধী জ্বালাময়ী আর্টিকেল লেখার জন্য তাকে ৬ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয় কিন্তু অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে ১৯২৪ সালেই মুক্তি দেয়া হয়।

গান্ধী আমেরিকা যাননি কখনো। তিনি মনে করতেন, তিনি যেহেতু জাতির পিতা (ভারতীয়রা গান্ধীকে বাপু বলে ডাকতেন), জাতির অধিকাংশ মানুষই গরিব, সেই গরিবের পিতা হয়ে তিনি কিভাবে বিমান ভ্রমণ করবেন? দেশ বিদেশে গান্ধীর অনেক ভক্ত তৈরি হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট হেনরি ফোরড ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম গান্ধী যাকে নিজের সাক্ষরযুক্ত একটি চরকা উপহার দিয়েছিলেন।

গান্ধী নিয়মিত তলস্তয়কে চিঠি লিখতেন। হিটলারের সাথেও বেশ চিঠি চালাচালি দেখা গিয়েছিল। যুদ্ধ বন্ধের অনুরোধ করে গান্ধী হিটলারকে একটি চিঠি লিখলেও তা আর হিটলারের কাছে পৌছায়নি। কারণ ব্রিটিশ সরকার এতে হস্তক্ষেপ করেছিলেন।

আমরা ভালো কাজকে পুরস্কৃত করে থাকি। কিন্তু কিছু কিছু কর্ম থাকে, কিছু কিছু মানুষ থাকেন যারা সকল পুরস্কারের ঊর্ধ্বে, বরং পুরষ্কার তাদের মহৎ কর্মকে খাটো করে। গান্ধী হলেন তেমনি পুরস্কারের ঊর্ধ্বের মানুষ। যাকে নোবেল কমিটি ৫ বার নোবেল মনোনয়ন দিয়েছিল। ১৯৩৭, ১৯৩৮, ১৯৩৯ এবং ১৯৪৭ সালে মনোনয়ন দিলেও ১৯৪৮ সালে শান্তিতে নোবেল গান্ধিরই পাবার কথা ছিল। কিন্তু ২ অক্টোবর আততায়ীর গুলিতে মৃত্যু হওয়ায় গান্ধীকে পুরষ্কার দিয়ে খাটো করা যায়নি।

যে দেশের বিরুদ্ধে গান্ধী সারাজীবন যুদ্ধ করেছিলেন সেই গ্রেট ব্রিটেন তার মৃত্যুর ২১ বছর পর তার সম্মানার্থে স্ট্যাম্পে গান্ধীর ছবি ছাপায়।

গান্ধীর সম্মানে ভারতে ৫৩ টি বড় রাস্তা এবং সারা পৃথিবী জুড়ে ৪৮ টি রাস্তার নামকরণ করা হয় গান্ধীর নামে। শুধু তাই নয়, Time Magazine এর Man of the Year 1930 হয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধী।
1948 সালের 30 শে জানুয়ারি নাথুরাম গডসে ব্ল্যাক পয়েন্ট রেঞ্জ থেকে মহাত্মা গান্ধীকে গুলি করে হত্যা করেছিলেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো হত্যা করার পর নাথুরাম গডসে সেখান থেকে পালানোর কোন চেষ্টাই করেনি। কারণ সে চেয়েছিল তার এই জঘন্যতম হত্যার কথা সারা দেশবাসী যাতে জানতে পারে। এবার আপনাদের যেটা জানাবো সেটা অবাক করে দেওয়ার মতো ঘটনা। গান্ধীজী কে হত্যা করার জন্য তিনি একটা নয় দুটো নয় মোট 150 টি কারণ দেখিয়েছিল।

তবে সেই সময় কংগ্রেস সরকার এই সমস্ত কারণগুলি প্রকাশ্যে আসতে দেয়নি। কিন্তু নাথুরামের দাদা গোপাল গডসের দীর্ঘতম আইনি লড়াইয়ের পর তা প্রকাশ পায়। গান্ধীজী কে হত্যা করার পেছনে নাথুরাম গডসে জেড এর সঠিক কারণ তুলে ধরা হয়েছিল তার মধ্যে সবগুলি এখানে উল্লেখ করা সম্ভব নয়, তাই দশটি উল্লেখযোগ্য কারণ দেওয়া হলো।

1. 1919 সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের মূল জেনারেল ডায়ারের গোটা দেশ শাস্তি চেয়েছিল। কিন্তু গান্ধী সেই দাবি খারিজ করেন।
2. ভারতবাসী চেয়েছিল যে বিপ্লবী ভগৎ সিং এবং সুখদেবের ফাঁসি আটকানোর জন্য গান্ধী কিছু পদক্ষেপ করুক। কিন্তু এই সব কিছু তিনি করেননি। উল্টা আবার গান্ধী বলেন, এরা পথ ভ্রষ্ট বিপ্লবী, এরা যে পথে হাঁটছিল সেগুলি সন্ত্রাসের পথ, তাদের ফাঁসি তিনি আটকাবেন না।
3. 1986 সালের 6 ই মে যখন দেশের নানা প্রান্তে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চলছে সেই সময় গান্ধী হিন্দুদের উদ্দেশ্যে বলেন যে তারা যেন মুসলিম লিগের লোকের বিরুদ্ধে যেন না লড়াই করে। সেই সময় মুসলিম লীগের লোকেরা কেরালায় প্রায় 1500 হিন্দুকে হত্যা করেছিল। এছাড়া আরও 2000 হিন্দুকে জোর করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করানো হয়।
4. কাশ্মীরের রাজা হরি সিংকে কাশ্মীর ছেড়ে দিতে বলেন গান্ধী। কারণ কাশ্মীরে মুসলিমদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল।
5. অনেকবার ভারতের মহান যোদ্ধা শিবাজী মহারাজ, রানা প্রতাপ এবং গুরু গোবিন্দ সিং কে পথ ভ্রষ্ট ভারতীয় বলেছিলেন গান্ধী।
6. ত্রিপুরা কংগ্রেস অধিবেশনে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। কিন্তু গান্ধী নিজের ক্ষমতা বলে নিজের অনুগত পট্টভি সিতারামাইয়াকে কংগ্রেসের সভাপতি করেন।
7. 1947 সালের 15 ই আগস্ট কংগ্রেস সরকার ঠিক করে যে তারা ভারত বিভাজনের বিরোধীতা করবে। তবে যে সভাতে এই সিদ্ধান্তটা নেওয়া হবে সেই সভাতে গান্ধী একদম শেষ সময়ে পৌঁছান এবং দেশভাগের বিষয়টিকে তিনি সমর্থন করেন। এর আগে গান্ধী নিজেই বলেছিলেন দেশ ভাগ তার নিজের লাশের উপর দিয়ে হবে।
8. ভারত স্বাধীনতা লাভ করার পর সর্দার প্যাটেল প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল। কিন্তু গান্ধীর নির্দেশে নেহেরুকে প্রধানমন্ত্রী করা হয়।
9. এরপর নেহেরু প্রধানমন্ত্রী হয়ে সিদ্ধান্ত নেন যে ভারত সরকার সোমনাথ মন্দির আবার নির্মাণ করবেন, কিন্তু সেই সময় গান্ধী সরকারে না থাকা সত্ত্বেও সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করান। আবার ঠিক একই সময়ে অর্থাৎ 1948 সালের 13 জানুয়ারি তিনি দিল্লির মসজিদ যাতে সরকারি টাকায় নির্মাণ করা হয় তার জন্য তিনি অনশনে বসেন এবং শেষ পর্যন্ত তিনি তার দাবি মানতে বাধ্য করান সরকারকে।
10.1947 সালের অক্টোবর মাসে পাকিস্তান কাশ্মীরে হামলা করলে গান্ধী আবার ভারত সরকারের বিরুদ্ধেই অনশনে বসেন। এর ফলস্বরূপ ভারত সরকার পাকিস্তানকে 55 কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হয়। গান্ধীর এমন সিদ্ধান্ত দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে সেই সময় ভারতের মুসলিমদের খুশি করতে হিন্দুদের নানা ভাবে প্রতারিত করেছেন তিনি।

সর্বশেষে নাথুরাম গডসে এবং তার সঙ্গে নারায়ণা আপ্তেকে 1949 সালের 15 ই নভেম্বর পাঞ্জাবের আম্বালা জেলে দুজনকে ফাঁসি দেওয়া হয়। উপরের এই মন্তব্যগুলি নাথুরাম গডসে আদালতে করেছিলেন।

গান্ধীর শেষকৃত্যে ১০ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়েছিল যা প্রায় ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ হয়েছিল। কেন মানুষ ভালবাসবে না এমন মানুষকে?

শিউলি ঝরানো সকালে শরতের কবিতা শারদ সংকলন-১৪২৭ পঞ্চম পর্ব

শিউলি ঝরানো সকালে শরতের কবিতা
শারদ সংকলন-১৪২৭ পঞ্চম পর্ব

কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

শরতে সবুজ খেতে মেঠো পথে যেতে যেতে
মৃদু মন্দ সমীরণ বয়।
শরতের রং লাগে গাছে গাছে পাখি জাগে
পুলকিত সবার হৃদয়।

আমলকী বনে বনে যেন কাঁপে ঘনে ঘনে
জলাশয়ে ফুটেছে শালুক,
শিউলিরা পড়ে ঝরে সূর্যোদয় হলে পরে
হতাশায় ফেটে যায় বুক।

মাধবী মালতী লতা সুনীলা অপরাজিতা
একসাথে হাসে আঙিনায়,
বেলি ফুল জুঁই ফুল ফুটে টগর বকুল
চারিভিতে সুগন্ধ ছড়ায়।

অজয়ের নদীধারে কাশফুল সারে সারে
অপরূপ শোভা মনোহর,
জেলে ডিঙি বেয়ে চলে মাছ ধরে নদীজলে
বেলা হলে ফেরে নিজঘর।

শুনি আমি আনমনে শাল পিয়ালের বনে,
বাজে মাদল বাঁশির সুরে,
দিন যায় সন্ধ্যা আসে তারা ফুটে নীলাকাশে
শরতের চাঁদ উঠে দূরে।

আগমনী সুর

করোনা আবহে মহালয়া-২০২০
সংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

করোনা আতঙ্কের গ্রাসে স্তব্ধ জন-জীবন একটু একটু করে শ্বাস নেওয়া শুরু করেছে। এমন পরিস্থিতিতেই মানব জাতি…

‘মা’ আসছে বলে কথা, এই সময়টা তো পরিবারের সঙ্গে আনন্দে মেতে থাকারই বিশেষ উৎসব। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দু্র্গাপূজা।

শাস্ত্র মতে, ২০২০ সালে মা দুর্গার আগমন হবে দোলায়। দোলায় চড়ে বাপের বাড়ির উদ্দেশ্যে স্বামীর ঘর থেকে…মর্ত্যে আগমন। ২০২০ সালের মায়ের গমন এবার গজে। অর্থাৎ হাতিতে চড়ে মা বাপের ঘর ছেড়ে পাড়ি দেবেন স্বর্গে। গজে চড়ে গমন…

আগমনী সুর
কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

শরতের সাদামেঘ আকাশেতে উড়ে,
সোনালী রোদ্দুর খেলা করে বিশ্বজুড়ে।
নদীধারে কাশবন কাশফুলে ভরা,
পূজার খুশিতে আজি হাসে বসুন্ধরা।

নদীঘাটে যাত্রীদের শুনি কোলাহল,
খুশিতে সাঁওতালেরা বাজায় মাদল।
শিউলি টগর ফুল সুবাস ছড়ায়,
করে রব পাখি সব তরুর শাখায়।

দিঘিতে শালুক পদ্ম ফুটিল সকলি,
মধুলোভে দলেদলে ধেয়ে আসে অলি।
আসে অলি দলে দলে কমল কাননে,
খুশিতে পুলক জাগে হরষিত মনে।

আকাশে বাতাসে ভাসে আগমনী সুর,
সেই সুর মিলে যায় দূর হতে দূর।

https://youtu.be/BHjRL4ryOU8

জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীজি (প্রথম পর্ব)

জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীজি (প্রথম পর্ব)
তথ্য-সংগ্রহ ও প্রবন্ধ রচনা- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। এই উপমহাদেশে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর যিনি মহাত্মা গান্ধীর নাম শুনেনি। কেউবা তাকে বাপু বলে ডাকতে পছন্দ করেন। ধুতি আর চাদর পরিহিত কালো ছোটখাটো শুকনো মানুষটা ভারতের জাতির পিতা। অহিংস মতবাদ ও সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রবক্তা গান্ধী। মহাত্মা তার উপাধি। মহান আত্মা যার। উপাধিটি দিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের দিকপাল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

আজ আমরা মহাত্মা গান্ধীর জীবনের কিছু অজানা অংশের দিকে আলোকপাত করবো।

গান্ধী কিশোর বয়সে বিয়ে করেছিলেন। করেছিলেন বললে খানিক ভুল হবে, করানো হয়েছিল। কাস্তবাইয়ের সাথে তার ৭ বছর বয়সেই বিয়ে ঠিক হয়। ১৮৮৩ সালে ১৩ বছর বয়সের গান্ধীকে ১৪ বছর বয়সী কাস্তবাইয়ের সাথে বিয়ের বন্ধনে বেঁধে দেয়া হয়। সেই বন্ধন গান্ধী সারাজীবন অটুট রেখেছিলেন। শুধু তাই নয়, গান্ধীর সকল আন্দোলনের অন্যতম অনুপ্রেরণাদাত্রীও ছিলেন কাস্তবাই। যদিও ৩৭ বছর বয়সে গান্ধী নারী সংসর্গ পরিত্যাগ করেন। বৈবাহিক জীবনে কাস্তবাই এবং গান্ধী ৪ ছেলে সন্তানের জন্ম দেন।

ধুতি চাদর পরিহিত নিরামিষভোজী যে গান্ধীকে আমরা জানি তিনি লন্ডনে পড়াশুনাকালীন সময়ে পুরোদস্তর সাহেব ছিলেন। নিয়মিত নাচ এবং বেহালা শিখতেন। কোট টাই পড়ে সাহেবি কায়দার ছড়ি ঘুরাতেন।

গান্ধী সারাজীবনে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছিলেন। ইংরেজিতে Experiment যাকে বলে। তার মধ্যে একটি হলো ধুমপান এবং গোমাংস ভক্ষণ। মা পুতলিবাই এবং দেওয়ান পিতার ঘরে গান্ধীর জন্ম। পুতলিবাই ছিলেন কঠিন ধর্মানুরাগী নারী। তিনি প্রতিদিন উপোস করতেন এবং নিরামিষাশী ছিলেন। ধর্মীয় অনুশাসনে গান্ধী বড় হন। যার ফলে গান্ধীর কখনোই কোন বদভ্যাস ছিল না বরং ছোটবেলা থেকেই মা তাকে জীবে দয়া করা, অহিংসা এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মাঝে পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের কথা শুনাতেন।

বিদেশ যাবার কালে মা তাকে পইপই করে শপথ করিয়ে ছিলেন যে তিনি মদ, মাংস এবং নারী হতে বিরত থাকবেন। পরীক্ষা নিরীক্ষাবাদী গান্ধী বড় ভাইয়ের সাথে একবার ধূমপান করলেন কিন্তু ভালো না লাগেনি। এক মুসলিম বন্ধু, শেখ মেহতাব তাকে বুঝিয়েছিলেন যে, ইংরেজরা মাংস খায় বলেই এত বুদ্ধি তাদের, এত দেশ শাসন করতে পারে। আর ভারতীয়রা নিরামিষাশী বলেই এখনো তাদের প্রজা হয়ে আছে। গান্ধী সেই বন্ধুর কথায় প্রভাবিত হয়ে গরুর মাংস খেলেন।

সারাবিশ্বের সকল নেতার অনুপ্রেরণার ব্যক্তিত্ব মহাত্মা গান্ধী ছোটবেলায় খুবই অন্তর্মুখী স্বভাবের ছিলেন। তিনি স্কুল শেষ হলে কোন রকমে দৌড়ে বাড়ি চলে আসতেন। কেননা সহপাঠীদের সাথে একেবারেই মিশতে পারতেন না। লজ্জায় মুখে কথাই আসতো না গান্ধীর, আর বন্ধুই বা বানাবেন কিভাবে। লন্ডন থেকে ব্যারিস্টারি পাশ করে এসেও গান্ধী সেই মুখচোরাই ছিলেন। ব্যবসায় প্রসার ছিল না। প্রসার হবেই বা কিভাবে? আদালতে দাঁড়িয়ে কথা বলতে গেলে তার যে পা কাঁপত। বিপক্ষের উকিল কিছু বললে তিনি আমতা আমতা করে কোন উত্তরই দিতে পারতেন না। এমন উকিলকে কে চাইবে? অগত্যা দক্ষিণ আফ্রিকায় পাড়ি দিলেন গান্ধী। ( চলবে)
[আগামী পর্বে শেষ]

জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীজি

আজ ২রা অক্টোবর জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন। দেশের মহান নেতা ১৮৬৯ সালের ২রা অক্টোবর, গুজরাটের পোরবন্দরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাল্য নাম ছিল মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। পিতার নাম ছিল কাবা গান্ধী ও মাতার নাম ছিল পুতুলী বাঈ। স্বদেশের স্বাধীনতার তরে তিনি বহুবার কারাবরণ করেছেন। তাঁর জন্মদিনে জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীজীকে জানাই কোটি কোটি প্রণাম। তাঁর শুভ জন্মদিনে বাংলা কবিতার আসরে আমার কবিতাটি প্রকাশ দিলাম।

যে দেশের বিরুদ্ধে মহাত্মা গান্ধী সারা জীবন যুদ্ধ করেছিলেন সেই গ্রেট ব্রিটেন তার মৃত্যুর ২১ বছর পর তার সম্মানার্থে স্ট্যাম্পে গান্ধীর ছবি ছাপায়।

গান্ধীজির সম্মানে ভারতে ৫৩ টি বড় রাস্তা এবং সারা পৃথিবী জুড়ে ৪৮ টি রাস্তার নামকরণ করা হয় গান্ধীর নামে। শুধু তাই নয়, Time Magazine এর Man of the Year 1930 হয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধী।

গান্ধীজির শেষকৃত্যে ১০ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়েছিল যা প্রায় ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ হয়েছিল। কেন মানুষ ভালবাসবে না এমন মানুষকে?

জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীজি
কলমে -লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

শুভদিন ২রা অক্টোবর, গুজরাটের পোরবন্দর
গান্ধীজির পূণ্য জন্মস্থান
শিখালেন মানবেরে স্বদেশ হিতের তরে
রাখিতে স্বদেশের সম্মান

কাবা গান্ধী তাঁর পিতা পুতুলীবাঈ নাম মাতা
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী,
দেশের স্বাধীনতার তরে সংগ্রাম আজীবন ধরে
কারাগারে থাকিলেন বন্দী।

করহ আপন কর্ম অহিংসা যে পরম ধর্ম
রাখিহ স্বদেশের সম্মান,
যায় যাবে প্রাণ তাহে সবে স্বাধীনতা চাহে
দিতে রাজি প্রাণ বলিদান।

স্বদেশের স্বাধীনতা দেশ, জাতি ও একতা
জাতির জনক দেন শিক্ষা।
করহ জীবন পণ সত্যাগ্রহ আন্দোলন
চাহিও না কভু প্রাণভিক্ষা।

সংগ্রাম করি আমরণ তিনি করিলেন অনশন
জাতির জনক মহান নেতা।
গান্ধীজীর সেই আহ্বানে অ-সহযোগ আন্দোলনে
দেশবাসী লভিল স্বাধীনতা।

কোথা হতে আততায়ী নিধন তরে কে দায়ী ?
নাথুরাম গডসে তার নাম,
আজিকের এই শুভদিনে সারা ভারতের জনগণে
জানায় সহস্র কোটি প্রণাম।

পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (পঞ্চম পর্ব)

পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (পঞ্চম পর্ব)
তথ্য-সংগ্রহ ও প্রবন্ধ রচনা- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দে মফস্বলে স্কুল পরিদর্শনে যাওয়ার সময় পাল্কিতে বসে তিনি বর্ণপরিচয়-এর পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করেন। ১লা মে-তে সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষের পদ ছাড়াও মাসিক অতিরিক্ত ২০০ টাকা বেতনে দক্ষিণবঙ্গে সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শকের পদে নিযুক্ত হন। ১৭ই জুলাইতে বাংলা শিক্ষক প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে সংস্কৃত কলেজের অধীনে, ওই কলেজের প্রাতঃকালীন বিভাগে নর্ম্যাল স্কুল স্থাপন করেন। এই স্কুলে প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত হন অক্ষয়কুমার দত্ত। এই বছরেই দক্ষিণবঙ্গের চার জেলায় একাধিক মডেল স্কুল বা বঙ্গবিদ্যালয় স্থাপন করেন।

আগষ্ট-সেপ্টেম্বর মাসে নদিয়ায় পাঁচটি, আগস্ট-অক্টোবরে বর্ধমানে পাঁচটি, আগষ্ট-সেপ্টেম্বর-নভেম্বরে হুগলিতে পাঁচটি এবং অক্টোবর-ডিসেম্বরে মেদিনীপুর জেলায় চারটি বঙ্গবিদ্যালয় স্থাপন করেন। অক্টোবর মাসে বিধবা বিবাহ বিরোধী মতের কণ্ঠরোধ করার পর্যাপ্ত শাস্ত্রীয় প্রমাণসহ ‘বিধবা বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব’ – দ্বিতীয় পুস্তক প্রকাশ করেন। বিধবা বিবাহ আইনসম্মত করতে ভারতে নিযুক্ত ব্রিটিশ সরকারের নিকট বহুসাক্ষর সম্বলিত এক আবেদনপত্রও পাঠান। ২৭ ডিসেম্বর আরেকটি আবেদনপত্র পাঠান বহু বিবাহ নিবারণ বিধির জন্য।

১৮৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ জানুয়ারি মেদিনীপুরে পঞ্চম বঙ্গবিদ্যালয় স্থাপিত হয়। ১৬ জুলাই বিধবা বিবাহ আইন পাশ হয়। ৭ ডিসেম্বর কলকাতায় প্রথম বিধবা বিবাহ আয়োজিত হয়— ১২, সুকিয়া স্ট্রিটে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বন্ধু রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে। পাত্র ছিলেন প্রসিদ্ধ কথক রামধন তর্কবাগীশের কণিষ্ঠ পুত্র তথা সংস্কৃত কলেজের কৃতি ছাত্র ও অধ্যাপক, বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বন্ধু শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন। পাত্রী ছিলেন বর্ধমান জেলার পলাশডাঙা গ্রামের অধিবাসী ব্রহ্মানন্দ মুখোপাধ্যায়ের দ্বাদশ বর্ষীয়া বিধবা কন্যা কালীমতী।

১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৪শে জানুয়ারিতে স্থাপিত হয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। এই সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা সমিতির অন্যতম সদস্য তথা ফেলো মনোনীত হন। এই বছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে হুগলি জেলায় সাতটি ও বর্ধমান জেলায় একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। পরের বছর জানুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে হুগলিতে আরও তেরোটি, বর্ধমানে দশটি, মেদিনীপুরে তিনটি ও নদিয়ায় একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাস থেকে ১৮৫৮ সালের মে মাস অবধি সমগ্র দক্ষিণবঙ্গে বিদ্যাসাগর মহাশয় ৩৫টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন। মোট ১৩০০ ছাত্রীসম্বলিত এই বিদ্যালয়গুলির জন্য তাঁর খরচ হতো মাসে ৮৪৫ টাকা। এই ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩ নভেম্বর শিক্ষা বিভাগের অধিকর্তার সঙ্গে মতবিরোধ হওয়ায় তিনি সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষের পদ ত্যাগ করেন।

১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ নভেম্বর প্রকাশিত হয় সোমপ্রকাশ নামক একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা। এই পত্রিকা প্রকাশের পরিকল্পনার নেপথ্যে ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। দেশীয় ভাষায় প্রকাশিত এটিই প্রথম পত্রিকা, যাতে রাজনৈতিক বিষয় স্থান পেয়েছিল। ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে ১ এপ্রিল পাইকপাড়ার রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় মুর্শিদাবাদের কান্দিতে প্রতিষ্ঠা করেন ইংরেজি-বাংলা স্কুল। কিছুকাল এই প্রতিষ্ঠানের অবৈতনিক তত্ত্বাবধায়কও ছিলেন তিনি।

২০ এপ্রিল মেট্রোপলিটান থিয়েটারে উমেশচন্দ্র মিত্র রচিত নাটক বিধবা বিবাহ প্রথম অভিনীত হয়। ২৩ এপ্রিল রামগোপাল মল্লিকের সিঁদুরিয়াপট্টির বাসভবনে সেই নাটকের অভিনয় দেখেন বিদ্যাসাগর মহাশয়। মে মাসে তত্ত্ববোধিনী সভা ব্রাহ্মসমাজের সঙ্গে মিশে গেলে উক্ত সভার সভাপতির পদ থেকে তিনি পদত্যাগ করেন। ২৯ সেপ্টেম্বর গণশিক্ষার প্রসারে সরকারি অনুদানের জন্য বাংলার গভর্নরের নিকট আবেদন করেন।

১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে বোর্ড অফ একজামিনার্সের পদ থেকেও ইস্তফা দেন তিনি। ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে কলিকাতা ট্রেনিং স্কুলের সেক্রেটারি মনোনীত হন। এই বছর ডিসেম্বর মাসে হরিশ্চন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের অকালপ্রয়াণে, তিনি তাঁর সম্পদিত হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার পরিচালনভার গ্রহণ করেন। ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে কৃষ্ণদাস পালকে তিনি এই পত্রিকার সম্পাদক নিযুক্ত করেন। এই বছর তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় বাণভট্টের কাদম্বরী। মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁকে উৎসর্গ করেন স্বরচিতবীরাঙ্গনা কাব্য।