লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী এর সকল পোস্ট

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী সম্পর্কে

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। কাব্যচর্চার সাথে সাথে তিনি সাহিত্যচর্চাও করেন। গল্প ও রম্য রচনা আর ছোট গল্প লিখেন। বহু একাঙ্ক নাটকও তিনি লিখেছেন। অন্ধকারের অন্তরালে, সমাজের শত্রু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বহু যাত্রাপালা -সোনা ডাকাত, শ্মশানে জ্বলছে স্বামীর চিতা উল্লেখযোগ্য। কবির অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিচারক মণ্ডলী তাঁকে বহু সম্মানে ভূষিত করেছেন। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী একাধারে কবি ও অপর দিকে লেখক। তার লেখা “আমার গাঁ আমার মাটি”, আমার প্রিয় শহর জামুরিয়া, আমার প্রিয় শহর কুলটি, আমার প্রিয় শহর আসানসোল, আমার প্রিয় শহর রাণীগঞ্জ বহু পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী প্রকৃতপক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও তিনি অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বিশ্বাস করেন সব মানুষই ঈশ্বরের সন্তান। তাই ধর্মে আলাদা হলেও আমরা সবাই ভাই ভাই।

শিউলি ঝরানো সকালে শরতের কবিতা শারদ সংকলন-১৪২৭ চতুর্থ পর্ব

শিউলি ঝরানো সকালে শরতের কবিতা
শারদ সংকলন-১৪২৭ চতুর্থ পর্ব

কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

শরতের সোনা ঝরা রোদ্দুর পাগল করা
আঙিনায় সোনা রোদ হাসে,
ফুটিল কমল কলি জুটে আসে যত অলি
সাদা মেঘ গগনেতে ভাসে।

অজয় নদীর পারে কাশফুল সারে সারে
কাশবনে শালিকেরা নাচে,
কেয়াফুল ফুটে বনে শরতের আগমনে
গাহে পাখি মহুলের গাছে।

গাঁয়ের পথের ধারে আজ বৃহস্পতিবারে
বটের তলায় বসে হাট,
হাটুরেরা আসে হাটে সেথা সারাদিন কাটে
পরে যায় অজয়ের ঘাট।

খেয়াঘাটে দেখি মাঝি তরী আনে কূলে আজি
সাঁঝ হলে শেষ খেয়া বায়।
হাটের হাটুরে যত বেচে কিনে কত শত
দলে দলে ঘরে ফিরে যায়।

ঢাকঢোল কাঁসি বাজে, আরতি মন্দির মাঝে
জ্বলে দীপ তুলসী তলায়,
শরতের চাঁদ উঠে লক্ষ লক্ষ তারা ফুটে
দূরে নীল আকাশের গায়।

পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (চতুর্থ পর্ব)

পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (চতুর্থ পর্ব)
তথ্য-সংগ্রহ ও প্রবন্ধ রচনা- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

ঈশ্বরচন্দ্র ছিলেন অত্যন্ত প্রতিভাবান ছাত্র এবং ১৮৩৯ সালের মধ্যেই বিবিধ বিষয়ে অগাধ পাণ্ডিত্যের পাণ্ডিত্যের জন্য ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধি লাভ করার পরে তিনি দু-বছর ওই কলেজে ব্যাকরণ, সাহিত্য, অলঙ্কার, বেদান্ত, ন্যায়, তর্ক, জ্যোতির্বিজ্ঞান, হিন্দু আইন এবং ইংরেজি বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। তাছাড়া প্রতি বছরই তিনি বৃত্তি এবং গ্রন্থ ও আর্থিক পুরস্কার পান।

তাঁর পাঠ্যপুস্তকগুলি বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে, তিনি কেবল লেখাপড়া শেখানোর কৌশল হিসেবে এগুলি লেখেননি, বরং ছাত্রদের নীতিবোধ উন্নত করা এবং আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদানও তাঁর লক্ষ্য ছিল। যেমন চরিতমালায় তিনি প্রাচীন ভারতের মুনি-ঋষিদের জীবনী লেখেননি, বরং ইউরোপের ষোলোজন বিখ্যাত ব্যক্তির পরিচিতি দিয়েছেন। তেমনি জীবনচরিতে তিনি কোপারনিকাস, গ্যালিলিও, নিউটন এবং হার্শেলের মতো বিজ্ঞানীদের এবং উইলিয়ম জোনসের মতো পন্ডিত ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত জীবন পরিচিতি লিখেছেন। নীতিবোধেও একই দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় মেলে। এতে তিনি আনুষ্ঠানিক ধর্ম এবং আচার-অনুষ্ঠানের কোনো উল্লেখ করেননি, বরং যেসব নীতিবোধ সকল মানুষের থাকা উচিত, তার কথা লিখেছেন।

কথামালায় তিনি নীতিমূলক গল্প সংগ্রহ করেছেন। আর তিন খন্ড আখ্যানমঞ্জরীতে সংগ্রহ করেছেন ইউরোপ-অ্যামেরিকার (এবং চারটি আরব দেশ ও পারস্যের) সত্যিকার এবং জনপ্রিয় গল্প। এসব গল্পের শিরোনাম—মাতৃভক্তি, পিতৃভক্তি, ভ্রাতৃস্নেহ, গুরুভক্তি, আতিথেয়তা, পরোপকার এবং সাধুতার পুরস্কার—থেকেই বোঝা যায় যে, তিনি কেবল ছাত্রদের নীতিবোধ উন্নত করতে চাননি, সেই সঙ্গে চেয়েছিলেন তাদের দৃষ্টিকে প্রসারিত করতে। তাঁর পাঠ্যপুস্তকগুলি দীর্ঘদিন বঙ্গদেশের সর্বত্র পাঠ্য ছিল। এগুলোর মাধ্যমে তিনি একই সঙ্গে প্রামাণ্য ভাষা ও বানান যেমন শিক্ষা দিতে পেরেছিলেন, তেমনি পেরেছিলেন নীতিবোধ উন্নত করতে।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮৪১ সালে সংস্কৃত কলেজে শিক্ষা সমাপ্ত শেষ করার পর, ২৯ ডিসেম্বর মাত্র একুশ বছর বয়সে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ বাংলা বিভাগের সেরেস্তাদার বা প্রধান পণ্ডিতের পদে নিযুক্ত হন। সে সময় তাঁর বেতন ছিল মাসে ৫০ টাকা। সংস্কৃত কলেজের রামমাণিক্য বিদ্যালঙ্কারের মৃত্যুতে একটি পদ শূন্য হলে, তিনি ১৮৪৬ খ্রিষ্টাব্দের ৬ এপ্রিল সংস্কৃত কলেজের সহকারী সম্পাদক হিসাবে যোগদান করেন। কিন্তু কলেজ পরিচালনার ব্যাপারে সেক্রেটারি রসময় দত্তের সঙ্গে মতান্তর হওয়ায় তিনি ১৮৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ জুলাই তারিখে সংস্কৃত কলেজের সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর এই বছরের ১ মার্চ পাঁচ হাজার টাকা জামিনে, মাসিক ৮০ টাকা বেতনে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে হেডরাইটার ও কোষাধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। এই বৎসরেই তিনি স্থাপন করেন সংস্কৃত প্রেস ডিপজিটরি নামে একটি বইয়ের দোকান।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮৪৯ খ্রিষ্টাব্দে বন্ধু ও হিতৈষীদের সহযোগিতায় সমাজ সংস্কার আন্দোলনের লক্ষ্যে স্থাপনা করেন ‘সর্ব্বশুভকরী সভা’। ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট মাসে মদনমোহন তর্কালঙ্কারের সহযোগিতায় তিনি সর্ব্বশুভকরী নামক পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দের ৪ ডিসেম্বর ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের কাজে ইস্তফা দেন এবং ৫ ডিসেম্বর সংস্কৃত কলেজে সাহিত্যের অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন।

১৮৫১ খ্রিষ্টাব্দের ৫ জানুয়ারি তারিখে তিনি সাহিত্যের অধ্যাপকের পদ ছাড়াও কলেজের অস্থায়ী সেক্রেটারির কার্যভারও গ্রহণ করেন। ২২ জানুয়ারি ১৫০ টাকা বেতনে কলেজের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। এই সময় থেকেই সংস্কৃত কলেজে সেক্রেটারির পদটি বিলুপ্ত হয়। সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্বভার নিয়ে তিনি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সাধন করেন। ৯ জুলাই, পূর্বতন রীতি বদলে ব্রাহ্মণ ও বৈদ্য ছাড়াও কায়স্থদের সংস্কৃত কলেজে অধ্যয়নের সুযোগ করে দেন। ২৬ জুলাই প্রবর্তিত হয় রবিবারের সাপ্তাহিক ছুটির প্রথা। উল্লেখ্য এর আগে প্রতি অষ্টমী ও প্রতিপদ তিথিতে ছুটি থাকত। ডিসেম্বর মাসে সংস্কৃত কলেজকে সকল বর্ণের সম্ভ্রান্ত হিন্দু সন্তানদের জন্য উন্মুক্ত করে দেন।

১৮৫২ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে ২৬ অনুচ্ছেদ সম্বলিত নোটস অন দ্য সংস্কৃত কলেজ প্রস্তুত হয়। ১৮৫৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি তাঁর জন্মভূমি বীরসিংহ গ্রামে একটি অবৈতনিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন। ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর নিজের বেতন বৃদ্ধি পেয়ে তিনশো টাকা হয়। ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে ইংরেজ সিভিলিয়ানদের প্রাচ্য ভাষা শিক্ষা দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠিত ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ভেঙে বোর্ড অফ একজামিনার্স গঠিত হয়। বিদ্যাসাগর এইবোর্ডের সদস্য মনোনীত হন।

শিউলি ঝরানো সকালে শরতের কবিতা শারদ সংকলন-১৪২৭ তৃতীয় পর্ব

শিউলি ঝরানো সকালে শরতের কবিতা
শারদ সংকলন-১৪২৭ তৃতীয় পর্ব

কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

শিউলি ঝরানো শারদ সকালে
ফুটেছে টগর ফুল,
গন্ধরাজ আর মাধবী লতার
পাশে ফুটেছে বকুল।

অরুণ বরন তপন উঠেছে
পূব আকাশের গায়,
ফুলের সুবাসে অলি ছুটে আসে
কমল কাননে ধায়।

জলাশয়ে কত ফুটেছে শালুক
পাড়ে কেয়া ফুলগাছ,
কালো জলে ভাসে রুই ও কাতলা
লাফায় বোয়াল মাছ।

অজয়ের পারে সাদা কাশবন
নদীতে ভাসিছে ভেলা,
নদীচরে জুটে শালিকের মেলা
সারাদিন করে খেলা।

শারদ আকাশে সাদামেঘ ভাসে
শঙ্খচিল ভেসে যায়,
সকাল ও সাঁঝে ঢাকঢোল বাজে
বাজে পুজোর সানাই।

শিউলি ঝরানো সকালে শরতের কবিতা শারদ সংকলন-১৪২৭ দ্বিতীয় পর্ব

শিউলি ঝরানো সকালে শরতের কবিতা
শারদ সংকলন-১৪২৭ দ্বিতীয় পর্ব

কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

এসেছে শরৎ ফুটেছে টগর
শিউলি ঝরানো প্রাতে,
শিশিরে ভিজেছে কচি দূর্বাঘাস
জেগেছে ভোরের রাতে।

পূবের আকাশে সোনা রবি হাসে
সোনালী কিরণ দেয়,
সূর্যোদয় আগে ঝরিছে শিউলি
বল কেবা খোঁজ নেয়?

ফুটেছে বকুল আর কেয়াফুল
বেড়ার ঝোপের ধারে,
সাদা কাশফুল শোভে অপরূপ
অজয় নদীর পারে।

শালুক ফুটেছে কাল ঘোলাজলে
নয়ন দিঘির ঘাটে,
রাঙাপথ বাঁকে ঘুঘু বসে থাকে
সবুজ ধানের মাঠে।

দেবীর মন্দিরে বাজে জয়ঢাক
শোনা যায় শঙ্খধ্বনি
ভোরের বেলায় পাখি গীত গায়
শরতের আগমনী।

পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (দ্বিতীয় পর্ব)

পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (দ্বিতীয় পর্ব)
তথ্য-সংগ্রহ ও প্রবন্ধ রচনা- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

সংস্কৃত পন্ডিত, লেখক, শিক্ষাবিদ, সমাজসংস্কারক, জনহিতৈষী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (২৬শে সেপ্টেম্বর, ১৮২০- ২৯ জুলাই, ১৮৯১) আক্ষরিক অর্থেই একজন আলোকিত মানুষ ছিলেন, আদর্শ মানব ছিলেন। বিদ্যাসাগরের জীবন কেটেছে বাংলার ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ ক্রান্তিকালে। দারিদ্র্য ও শোষণ বাঙালির সমাজজীবনকে ক্ষয় করে ফেলেছিল। শিক্ষা, ইংরেজ শাসন ও সামাজিক কুসংস্কার ইত্যাদি বিষয়ে রামমোহন রায় থেকে শুরু করে অনেকেই বাংলার নবজাগরণে ভূমিকা রেখেছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রত্যেকেই ছিলেন শহুরে বণিক পরিবারের। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন বিদ্যাসাগর। তিনি ছিলেন গ্রামের ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান। সাত ভাই আর তিন বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। মায়ের প্রতি ছিল বিদ্যাসাগরের অগাধ শ্রদ্ধা। মায়ের প্রতিটি ইচ্ছা অকাতরে পূরণ করতেন।

তাঁর মাতৃভক্তি নিয়ে অনেক জনশ্রুতিও শোনা যায়। বাংলা গদ্য সাহিত্য যার হাতে পেল গতি ও শ্রুতি তিনিই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। সাহিত্যিক হিসেবেও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের রয়েছে যথেষ্ট অবদান। তিনি সাহিত্যে সৃজনী প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি যখন অধ্যাপক ছিলেন, তখন বাংলায় উন্নত পাঠ্য পুস্তকের অভাব বোধ করেছেন। নিজের সাহিত্য প্রতিভাবলে বাংলা গদ্যের ভান্ডার শক্ত করেছেন তার জন্যই বাংলা গদ্যরীতি আপন পথ খুঁজে পায়। আর এ জন্যই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে বাংলা গদ্যের জনক বলা হয়। এই তিনিই আবার বৃটিশ ভারতে বাঙালির সমস্যাসমূহ টের পেয়েছিলেন বলেই সেসব সমস্যা সমাধানে আমৃত্যু নিরন্তর কাজ করে গেছেন। জীবনে কম কষ্ট পাননি তিনি তাঁর আদর্শকে বাস্তবায়ন করতে গিয়ে।

নিজ পরিবার, সমকালীন সমাজ এবং ওপনিবেশিক শাসকদের কাছ থেকে। অত্যন্ত দরিদ্র অবস্থা থেকে অর্থনৈতিকভাবে বেশ সম্পদের অধিকারী হয়েও তিনি ব্যক্তিগত ভোগ বিলাসীতায় কখনো নিজেকে নিমজ্জিত রাখেননি। বিত্ত অর্জনে কষ্ট করেছেন কিন্তু চিত্তের উদারতায় মানব কল্যাণে ব্যয় করতে কখনো সংকোচ কিংবা দ্বিধা করেননি। ফলে সমকালেই তিনি জ্ঞানের বা বিদ্যার সাগরের পাশাপাশি করুণার সাগর হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেছিলেন।

বিদ্যাসাগর উনিশ শতকে অবিভক্ত বাংলায় শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। তিনি হিন্দু সমাজের বিধবা বিবাহ প্রথা চালু করেন। তার প্রচেষ্টায় ২৬ জুলাই ১৮৫৬ সালে বিধবা বিবাহ আইন পাস হয়। নিজের ছেলের সাথে এক বিধবা কন্যার বিয়ে দিয়েছিলেন। যাতে অন্য হিন্দুরাও বিধবা বিবাহে উৎসাহ বোধ করে।

শিউলি ঝরানো সকালে শরতের কবিতা শারদ সংকলন-১৪২৭ প্রথম পর্ব

শিউলি ঝরানো সকালে শরতের কবিতা
শারদ সংকলন-১৪২৭ প্রথম পর্ব

কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

শিউলি ঝরানো শরতের প্রাতে
ফুলকলি ফুটে বনে,
রাশি রাশি কত ফুটেছে বকুল
শরতের আগমনে।

অজয়ের পারে সাদা কাশফুল
মেঘ ভাসে দলে দলে,
রাখালিয়া সুরে বাঁশি বাজে দূরে
সোনা রোদ ঝরে জলে।

মাঠে মাঠে চরে গরু ও মহিষ
মেঠো পথে কচি ঘাস,
বেণু দাস নামে বাউল গায়ক
এই গাঁয়ে করে বাস।

এ গাঁয়ের শেষে ডোমপাড়া আছে
ঢাকে দেয় ওরা কাঠি,
মহুল তলায় সাঁঝের বেলায়
বাজে ঢোল, ঘুরে লাঠি।

বাজায় ওরাই, পূজার সানাই
ঢাক ঢোল কাঁসি বাজে,
ধূপদীপ জ্বলে সন্ধ্যার আরতি
দেবীর মন্দির মাঝে।

শারদ সংকলন-১৪২৭ কবিতা মালা আগমনী গীতি কবিতা (অষ্টম পর্ব)

শারদ সংকলন-১৪২৭ কবিতা মালা
আগমনী গীতি কবিতা (অষ্টম পর্ব)

কলমে-কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

শরতের সাদা মেঘ করে আনাগোনা,
দূর হতে আগমনী গান যায় শোনা।
শরতের সোনা রোদ ঝরে আঙিনায়,
সাদা বক পাখা মেলি নদীপানে ধায়।

সবুজ ধানের খেত ভরা জল কাদা,
অজয়ের দুই ধার কাশ ফুলে সাদা।
বিলের জলেতে কত ফুটেছে শাপলা,
মাদলের তালে তালে কান ঝালাপালা।

মহুলের বনে কারা মাদল বাজায়,
রাখাল বাজায় বাঁশি সুর শোনা যায়।
শরতের সোনা রোদে ভরে ওঠে মন,
গুঞ্জরিয়া আসে অলি কমল কানন।

সরোবরে শতদল প্রস্ফুটিত হয়,
শিউলিরা পড়ে ঝরে বিদীর্ণ হৃদয়।

পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (প্রথম পর্ব)

পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (প্রথম পর্ব)
তথ্যসংগ্রহ ও প্রবন্ধ রচনা- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮২০ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ সেপ্টেম্বর (১২ আশ্বিন, ১২২৭ বঙ্গাব্দ), মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের তদানীন্তন হুগলি জেলার (অধুনা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা) বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আমরা এমন এক অন্ধকার সময় যাপন করছি, এই নিশিযাপনকালে পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতোন মেরুদণ্ড সম্পন্ন মানুষদের, জীবন দার্শনিকদের উপস্থিতি প্রয়োজনীয়তা খুব বেশি তীব্রভাবেই অনুভব করছি। কঠিন সত্যকে যুক্তিবাদে-বিবাদে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান নি:সন্দেহে স্মরণীয়।

পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রাতঃস্মরণীয় মনীষী। ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশে অনেক যুগ প্রবর্তক মহাপুরুষের জন্ম হয়েছিল; ঈশবরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশের শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অসামান্য। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্ম ও মহাপ্রয়াণের পর দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হচ্ছে। এই দীর্ঘ সময়ে কালের ধুলোয় বহু ব্যক্তিত্ব, বহু ঘটনা ঢাকা পড়েছে। কিন্তু বিদ্যাসাগর আজও আমাদের জীবনে ধ্রুবতারার মতো উজ্জ্বল। বাঙালির জীবনলোক ও মননলোক জুড়ে তাঁর সজীব, আলোকিত উপস্থিতি। বাঙালির শিক্ষা, নারী জাগরণ, ভাষা ও সাহিত্যের নিরলস সাধক এই মানুষটি আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন যুক্তিবাদী মন নিয়ে। সময়ের এই দীর্ঘ ব্যবধান সত্ত্বেও বিদ্যাসাগরকে নিয়ে তাই আজো আমাদের ভাবনা-চিন্তায় ছেদ পড়েনি। প্রতিটি বাঙালির উচিত বিদ্যাসাগরের জন্ম ও প্রয়াণ দিবসকে স্মরণ করে তাঁর মননশীল মানবিক যুক্তিবাদী চেতনাকে সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে অন্ধকারের সমাজকে আলোকিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা। বিদ্যাসাগরের জন্মদিনে তাই কেবলি মনে পড়ছে কবিগুরুর মহান বাণী – ‘রেখেছো বাঙালি করে মানুষ করোনি’।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সহজ সরল জীবনযাপন করতেন। সাদাসিদে পোশাকে গায়ে মোটা চাদর এবং চটিজুতা ছিল তাঁর একমাত্র পরিচ্ছদ। বিরল গুণের অধিকারী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, ‘আমি যে দরিদ্র বাঙ্গালী ব্রাহ্মণকে শ্রদ্ধা করি তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।’ বিদ্যাসাগর ছিলেন পরের দুঃখে অতি কাতর। মহকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তকে তিনি বিভিন্ন সময়ে প্রচুর অর্থ সাহায্য করেন। কবি নবীনচন্দ্র সেনও যৌবনে বিদ্যাসাগরের অর্থে লেখাপড়া করেছিলেন।

বিদ্যাসাগরের একটি উল্লেখযোগ্য কীর্তি হল সমাজ সংস্কারমূলক কাজ। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। তিনি দুঃস্থমহিলাদের সেবা সহায়তা দিয়ে বাঁচানোর জন্য জন্য “হিন্দু ফ্যামিলি গ্রাচুয়িটি ফাণ্ড” গঠন করেন। তিনি চিরদিন কুসংস্কার, গোড়ামি আর ধর্মন্ধতার বিরুদ্ধে আপোষহীনভাবে লড়াই করে গেছেন। বাঙালি জাতি সর্বপ্রথম বড় হবার, যোগ্য হবার, মানবিক হবার, আধুনিক প্রগতিশীল ও বিশ্বজনীন হবার সর্বপ্রথম দৃষ্টান্ত খুঁজে পেয়েছিল বিদ্যাসাগরের মধ্যে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর সম্বন্ধে বলেছেন তিনি হিন্দু ছিলেন না, বাঙ্গালী বা ব্রাহ্মণ ছিলেন না, ছিলেন ‘মানুষ’। এই মন্তব্যের তাৎপর্য অতলস্পর্শী। কারণ কারো যথার্থ “মানুষ” হওয়া অত সহজ কথা নয়। তিনি আরো বলেছেন, ‘তাহার মহৎ চরিত্রের যে অক্ষয় বট তিনি বঙ্গভূমিতে রোপণ করিয়া গিয়াছেন, তাহার তলদেশে জাতির তীর্থস্থান হইয়াছে।’

https://trshow.info/watch/Hc8MfqGxZF8/i-baracandra-bidy-s-gar-ra-j-ban-biography-of-Ishwar-chandra-vidyasagar-In-bangla.html

শারদ সংকলন-১৪২৭ কবিতা মালা আগমনী গীতি কবিতা (সপ্তম পর্ব)

শারদ সংকলন-১৪২৭ কবিতা মালা
আগমনী গীতি কবিতা (সপ্তম পর্ব)

কলমে-কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

শরতের আকাশেতে সাদা মেঘ ভাসে,
নিশির শিশির ঝরে কচি দূর্বা ঘাসে।
পূরব গগনে রবি রক্তিম আভায়,
চারিদিকে সোনা ঝরা কিরণ ছড়ায়।

আসিল শরত্কাল বরষার শেষে,
শরতের আগমনী গীত আসে ভেসে।
সবুজ ধানের ক্ষেত জলে আছে ভরা,
সেজেছে প্রকৃতি রূপে অতি মনোহরা।

আঙিনায় পড়ে ঝরে শিউলির ফুল,
বেলি ফুল, জুঁই ফুল, টগর বকুল।
শিউলি ফুলের গন্ধে প্রফুল্লিত মন,
অজয়ের ধারে ধারে শোভে কাশবন।

শরতের সোনা রোদ অজয়ের চরে,
দূরে কোথা বাজে বাঁশি শুনে মন ভরে।

শরতের ঝরা ফুলের গল্প

শরতের ঝরা ফুলের গল্প
তথ্য সংগ্রহ ও কলমে-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

শরতের আগমনে আমরা শিউলির কথা বলি। খ্যাতিতে, সৌরভে এই ফুলের তুলনা মেলা ভার। হয়তো এ জন্যই শিউলি নিয়ে রচিত হয়েছে কত গাথা, কবিতা, গান, আখ্যান, রূপকথা। অসাধারণ কয়েকটি রূপকথার গল্প আছে এই ফুল নিয়ে।

রূপকথার এই গল্প এক রাজকন্যাকে নিয়ে। অসাধারণ তার রূপলাবণ্য। সে ভালোবাসে উজ্জ্বল দীপ্তিমান সূর্যকে। সূর্যের প্রেমে রাজকন্যা মাতোয়ারা। কিন্তু এমন প্রণয়িনীকে ত্যাগ করল সূর্য। বঞ্চিত-লাঞ্ছিত রাজকন্যা অপমানে আত্মহত্যা করল।

রাজকন্যার চিতার ছাই থেকে একদিন জন্ম নিল একটি গাছ। ছোট আকারের ওই গাছের শাখায় শাখায় ফুটল অপরূপ অসংখ্য ফুল। যেন রাজকন্যারই প্রতিরূপ। আর তার হৃদয়ের সব সৌন্দর্য উদ্ভাসিত হলো এই ফুলের বর্ণে-গন্ধে-লাবণ্যে। কিন্তু ফুটল রাতের আঁধারে, সবার অগোচরে। কারণ সূর্যের প্রতি তার প্রবল অভিমান আর ঘৃণা। ভোরে সূর্য পুবাকাশে দেখা দিতে না দিতেই সে ঝরে পড়ল। লজ্জা আর অভিমানে মুখ লুকাল মা ধরণীর কোলে। এই আমাদের শরতের শিউলি।

ইট-পাথরের এই ভারতের রাজধানী দিল্লিতে শিউলির দেখা মেলা ভার। অনেকে অবশ্য ভবনের ছাদে বা বারান্দায় শিউলি ফুলের গাছ লাগান। তাতে ফুলও ফোটে। কিন্তু প্রকৃতি যেন সেভাবে ধরা দেয় না। আর বিশ্বকবির লেখনীতে যে শিউলি বনের চিত্র উঠে এসেছে, তেমন শিউলি বনের দেখা আজ আর মেলে না। তবে গ্রামাঞ্চলে শিউলির অস্তিত্ব বেশ শেকড় ছড়িয়েই আছে। অনেক বাড়ির উঠানে কিংবা ঘরের পাশে জানালার ধারে দেখা যায় শিউলি গাছ। শারদ-সন্ধ্যায় স্বর্গীয় মৌতাত নিয়ে প্রস্ফুটিত হয় শিউলি ফুল। আর ভোরের আলো ফোটার আগেই তা ঝরে পড়ে।

কমলা রঙের বোঁটায় তুষারধবল মাখনের মতো নরম পাপড়িময় এই ফুল শরতের সকালে ছড়িয়ে থাকে গাছের তলায়। তখন কেউ কেউ কুড়িয়ে নেয় মালা গাঁথার জন্য। নিশিপুষ্প বলে এর প্রকৃত রূপের ঐশ্বর্য আমরা পুরোপুরি উপভোগ করতে পারি না। তবে গন্ধে মাতোয়ারা হই।

চঞ্চল কিশোরী শিউলি ফুল কুড়িয়ে জামার কোঁচড়ে নিয়ে ছুট দিচ্ছে। শিউলিগাছের নিচে বসে নূপুর পায়ে পুষ্পপ্রেমী গৃহবধূ একটি একটি করে শিউলি ফুল কুড়াচ্ছেন। এ দৃশ্য সিনেমায় নয়, শরতে এই বাংলায় আজও দেখা যায়।

শরতের মাঝামাঝিতে পৌঁছে এখন সর্বত্র দেখা মিলছে শিউলির। শারদীয় দুর্গাপূজার অঞ্জলিতে শরতের শিউলি যে থাকতেই হবে। শিউলি এ উপমহাদেশেরই নিজস্ব উদ্ভিদ। আদি নিবাস মধ্য ও উত্তর ভারত। শিউলি ফুল শেফালি ও পারিজাতাকা নামেও পরিচিত। পারিজাতাকা বলি, শিউলি বলি আর শেফালি বলি- এই ফুল আসলে রাতের রাণী।

এই ফুলের রঙ সাদা। আর ফুলের বোঁটা নলের মতো জাফরান রঙের। বীজ থেকে এর চারা গজায়। শিউলির গুণের শেষ নেই। এর পাতা জ্বর ও বাতের ব্যথার জন্য উপকারী। পাতা কৃমিনাশক।

বরেণ্য কথাসাহিত্যিক ও নিসর্গবিদ বিপ্রদাশ বড়ুয়া বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রায় সবখানে এ গাছ জন্মে। বাগানের শোভার জন্যও এটা আদর্শ ফুল। অল্প জায়গায়, দেয়ালের পাশে, উঠানের কোণে, বেড়ার পাশে এক চিলতে জায়গায় অনায়াসে বেড়ে ওঠে। শিউলি মাঝারি আকারের গাছ। ১০ থেকে ১৫ ফুট পর্যন্ত বড় হতে দেখা যায়। মোটামুটি অনেক দিন বাঁচে। তবে গাছের গোড়ায় জল জমলে মরে যায়।’ শীত ও বসন্তে পাতা ঝরে যায়। তখন হতশ্রী হয়ে পড়ে শিউলি গাছ।

শরৎ এই ফুল ফোটার প্রকৃত ঋতু। শরৎরাত্রি শিউলির গন্ধে ভরে ওঠে চারদিক। আর সকালে গাছতলায় ঝরে পড়ে বিষাদের শুভ্র শেফালি।

শারদ সংকলন-১৪২৭ কবিতা মালা আগমনী গীতি কবিতা (ষষ্ঠ পর্ব)

শারদ সংকলন-১৪২৭ কবিতা মালা
আগমনী গীতি কবিতা (ষষ্ঠ পর্ব)
কলমে-কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

শরতের মেঘমালা গগনে ভাসিয়ে ভেলা
পুঞ্জে পুঞ্জে ভেসে ভেসে চলে,
পূবের গগনে রবি আঁকে রাঙা জলছবি
সোনা রোদ ঝরে ধরাতলে।

ফুলবনে ফুল ফোটে গরুপাল চরে গোঠে
রাখালের বাঁশি বাজে দূরে,
গাঁয়ের মন্দির মাঝে ঢাক বাজে কাঁসি বাজে
আগমনী গীত বাজে সুরে।

সবুজ ধানের খেতে মেঠো পথে যেতে যেতে
তরুশাখে পাখি সব গায়,
সরোবরে প্রস্ফুটিত শালুক, কমল কত
জলে অপরূপ শোভা পায়।

শরতের আগমনে কেয়াফুল ফুটে বনে
ফুটেছে টগর জুঁই ফুল,
শিউলিরা পড়ে ঝরে মোর আঙিনার পরে
ফুটে আছে চামেলি বকুল।

অজয়ের দুইপারে কাশফুল ধারে ধারে
দূরে শাল পিয়ালের বন,
মাদল বাজায় কারা প্রাণ মন দিশেহারা
শরতের হয় আগমন।

শুভ জন্মদিনে একটি পত্র ও একটি কবিতা

শুভ জন্মদিনে পুত্রের প্রতি
পিতা-মাতার পত্র

প্রিয় পুত্র,
সূর্যশেখর, আজ তোমার শুভ জন্মদিন।

আজকের দিন তাই সূর্যের রশ্মিতে ভরা, আজকের পৃথিবী তোমার জন্য
মুখরিত হবে সারাদিন গানে গানে, তুমি এই দিনে পৃথিবীতে এসেছ
তাই আজকের এই দিনটা হোক আরও অধিক সুন্দর
উচ্ছল ও উজ্জ্বল শুভ কামনায়।

তোমার জন্য আজকের এই সোনা ঝরা রোদ আর স্বপ্ন ঝরা সকাল
তোমার জন্য হাসে অবিরল অলস সুনিবিড় দুপুর, ও স্নিগ্ধ বিকাল,
আমাদের ভালবাসা নিয়ে নিজে তুমি, ভালবাস সব সৃষ্টিকে।
সব মানুষকে ভালবাস। ভালবাস প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজনদের।
মানুষকে ভালবেসে আপন করে নিতে পারলেই জীবনে
পার্থিব সুখ, শান্তি আর ভালবাসা সবই পাওয়া যায়।

তুমি এই দিনে পৃথিবীতে এসেছ, তাই শুভেচ্ছা তোমায়,
তোমার জন্য আজ ফুটেছে পৃথিবীর সব শিশিরে ভেজা শিউলি,
তোমার জন্য আজ আমার এই কবিতা যেন প্রস্ফুটিত ফুলকলি।

সূর্যশেখর নাম তব, সূর্য সম আলোকিত হয়ে নিজে তুমি,
আলোকিত কর পৃথিবীকে। অন্ধকারে পথ দেখাও সবাকারে।
আপনারে ভালবেসে ভালবাস সকলেরে। সবার মঙ্গল কর।
এই হোক তোমার পবিত্র পূণ্যব্রত।
ভালো থেকো। বড় হও।
শুভেচ্ছা রইলো।
ইতি
তোমার শুভাকাঙ্খী,
জনক ও জননী (লক্ষ্মণ ও শেফালি)

শুভ জন্মদিন
কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

শরতের নীলাকাশ আজিকে রঙিন,
আজি মোর সন্তানের শুভ জন্মদিন।
তরুশাখে পাখি সব করিছে কূজন,
সোনালী রোদ্দুর তাই খুশিতে মগন।

২২শে সেপ্টেম্বর ২০০৩, শনিবার,
শুভক্ষণে জন্ম নিল সন্তান আমার।
শুভ দিনে পুত্র মোর আসিল ধরায়,
শুভ জন্মদিনে সবে শুভেচ্ছা জানায়।

নয়নের মণি পুত্র! অমূল্য রতন,
সকলের আশীর্বাদ করিবে গ্রহণ।
পিতায় ভকতি আর মায়ে যার টান,
সেইছেলে সর্বোত্তম, হয় পূণ্যবান।

সূর্যশেখর নামে সে কবির তনয়,
জন্মদিন কাব্যে কবি কবিতায় কয়।

শারদ সংকলন-১৪২৭ কবিতা মালা আগমনী গীতি কবিতা (পঞ্চম পর্ব)

শারদ সংকলন-১৪২৭ কবিতা মালা
আগমনী গীতি কবিতা (পঞ্চম পর্ব)

কলমে-কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

সুনীল আকাশে সাদামেঘ ভাসে
শরতের আগমনে,
শিউলি, বকুল টগরের ফুল
ফুটিল ফুলের বনে।

সূর্যের কিরণে বিষন্ন বদনে
শিউলিরা পড়ে ঝরে,
নিশির শিশির পড়ে ঝির ঝির
সবুজ ঘাসের পরে।

নয়ন দিঘিতে শালুক ফুটেছে
বক বসে থাকে পাড়ে,
পানকৌড়ি আসে কভু জলে ভাসে
কচুরি পানার আড়ে।

বরষার শেষে শরত্ এসেছে
আঙিনায় রোদ হাসে,
মন্দিরের মাঝে ঢাকঢোল বাজে
কাঁসরের শব্দ ভাসে।

দিবসের খেলা পড়ে আসে বেলা
সাঁঝের আঁধার নামে,
জোছনার রাতে চাঁদ তারা সাথে
হাসে খেলে আশমানে।

শারদ সংকলন-১৪২৭ কবিতা মালা আগমনী গীতি কবিতা (চতুর্থ পর্ব)

শারদ সংকলন-১৪২৭ কবিতা মালা
আগমনী গীতি কবিতা (চতুর্থ পর্ব)

কলমে-কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

শরৎ এসেছে তপন হেসেছে
পূব আকাশের গায়,
সোনা রোদ ঝরে আঙিনার পরে
তরুশাখে পাখি গায়।

ফুটিল শিউলি টগরের কলি
ফুল ফুটে ফুল বনে,
ফুটিল চামেলি কেয়া আর বেলি
কনক চাঁপার সনে।

মাধবী মালতী বকুল ও যুঁথী
ফুটে আছে রাশি রাশি,
তুষার ধবল মেঘেদের দল
আকাশে উড়িছে ভাসি।

অজয়ের পারে কাশফুল ধারে
মাঝি তরী বেয়ে চলে,
শালিকের দল করে কোলাহল
সোনারোদ ঝরে জলে।

মহালয়া গেল পূজা নাহি এল
আর এক মাস বাকি,
করোনা আবহে চোখে জল বহে
ঢাক বাজায় না ঢাকী।

মহালয়া-২০২০ স্তোত্রপাঠ ও মায়ের আগমনী গীতিকবিতা

মহালয়া-২০২০ স্তোত্রপাঠ ও মায়ের আগমনী গীতিকবিতা
তথ্যসূত্র ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

(শংখধ্বনি)
সঙ্গীতের মূর্ছনা…..

(ভাষ্যপাঠ)

পিতৃপক্ষের অবসানে পর শুরু হয়
দেবীপক্ষের সূচনা। আর তাই এই আগমনে
কোথাও যেন খুশির ঝিলিক মানুষের মনে।
উমা আসলেই দূর হবে সব রকমের দুঃখ, হতাশা।

(স্ত্রোত্রপাঠ)

ইচ্ছং যদা যদা বাধা দানবোত্থা ভবিষ্যতি।
তদা তদা অবতীর্যাহং করিষ্যাম্যরিসংক্ষয়ম্॥

(ভাষ্যপাঠ)

পূর্বকল্প অবসানের পর
প্রলয়কালে সমস্ত জগত যখন
কারণ সলিলে পরিণত হল, ভগবান বিষ্ণু
অখিল প্রভাব সংহত করে সেই কারণসমুদ্রে
রচিত যোগ নিদ্রায় হলেন অভিভূত।
যোগনিদ্রার অবসানকালে তাঁর নাভিপদ্ম থেকে
জেগে উঠলেন আদিকল্পের সৃষ্টি বিধাতা ব্রহ্মা।
শ্যামশক্তিমান বিশ্বত্রাতা বিষ্ণুকে জাগরিত
করবার জন্যে কমলযোনি বিধাতাকে মুখপাত্র
করে বৈকুণ্ঠে গিয়ে দেখলেন হরিহর আলাপনে রত।
ব্রহ্মার সম্মুখে নিবেদন করলেন মহিষাসুরের
দুর্বিসহ অত্যাচারের কাহিনী। স্বর্গভ্রষ্ট দেবতাকুলের
এই বার্তা শুনলেন তারা। শান্ত যোগীবর
মহাদেবের সুগৌর মুখমণ্ডল ক্রোধে রক্তজবার
মত রাঙাবরণ ধারণ করল। আর শঙ্খচক্রগদাপদ্মধারী
নারায়ণের আনন ভ্রুকূটিকুটিল হয়ে উঠল।
তখন মহাশক্তির আহ্বানে গগনে গগনে নিনাদিত হল
মহাশঙ্খ। বিশ্বজ্যোতি রুদ্রের বদন থেকে অপূর্ব
তেজরশ্মি বিচ্ছুরিত করে ধরাধামে নেমে এলেন
আদিশক্তি মহামায়া দেবী দুর্গা।

(স্ত্রোত্রপাঠ)

ত্বং স্বাহা ত্বং স্বধা ত্বং হি বষটকার স্মরাত্মিকা।
সুধা ত্বমক্ষরে নিত্যা ত্রিধা মাত্রাত্মিকা স্থিতা॥
অর্ধমাত্রা স্থিতা নিত্যা যানুচর্যা বিশেষতঃ
ত্বমেব সন্ধ্যা সাবিত্রী ত্বং দেবী জননী পরা॥
ত্বয়েধার্যতে বিশ্বং ত্বয়েত্সৃজ্যতে জগত।
ত্বয়েত পাল্যতে দেবী ত্বমস্যন্তে চ সর্বদা॥

সর্বভূতা যদা দেবী স্বর্গমুক্তি প্রদায়িনী।
ত্বং স্তুতি স্তুতয়ে কা বা ভবন্তি পরমোক্তয়॥
সর্বস্য বুদ্ধি রূপেন জনস্য হৃদি সংস্থিতে।
স্বর্গাপবর্গদে দেবী নারায়ণি নমোহস্তুতে॥

যা দেবী সর্বভূতেষু বিষ্ণুমায়েতি শব্দিতা।
নমস্তসৈঃ নমস্তসৈঃ নমস্তসৈঃ নমো নমঃ॥
যা দেবী সর্বভূতেষু চেতন অভ্যিধীয়তে।
নমস্তসৈঃ নমস্তসৈঃ নমস্তসৈঃ নমো নমঃ॥
সর্বমঙ্গল মঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থ সাধিকে।
শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরি নারায়ণি নমোহস্তুতে।
শরণাগত দীনার্ত পরিত্রাণ পরায়ণে।
সর্বসার্ত্তি হরে দেবি নারায়ণি নমোহস্তুতে॥
যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেন সংস্থিতা।
নমস্তসৈঃ নমস্তসৈঃ নমস্তসৈঃ নমো নমঃ॥
যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেন সংস্থিতা।
নমস্তসৈঃ নমস্তসৈঃ নমস্তসৈঃ নমো নমঃ॥

মায়ের আগমনী (গীতিকবিতা)
কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

এ শারদ প্রাতে
আজি প্রভাতে
মায়ের বন্দনা গান গাই,

মায়ের আশীষে
আজি প্রত্যুষে
কবিতা লিখিতে চাই।

কবিতার পাতায়
কবিতার খাতায়
লিখেছি কবিতা কত,

কবিতার গাছে
কবিতায় আছে
কবিতা ফুলেরই মত।

কবিতার খাতায়
কবিতার পাতায়
কবিতারা কথা কয়,

কবিতার আসরে
কালোর অক্ষরে
চির বন্দিনী হয়ে রয়।

কবিতার দেশে
কবিতারা এসে
আসরে কবিতা বলে,

আমার কবিতা
তটিনী হইয়ে
আপনবেগেতে চলে।

আমার কবিতা
ব্যথাভরা যত
ব্যথিতের অশ্রুজল,

আমার কবিতা
সরোবরে ফোটা
শত সহস্র শতদল।

আমার কবিতা
বৈশাখ মাসের
নিদাঘ দগ্ধ দুপুর,

আমার কবিতা
শারদ প্রভাতে
মায়ের আগমনী সুর।

আমার কবিতা
শুভ্র মেঘ হয়ে
ভ্রমিয়া ফিরে গগনে,

আমার কবিতা
ফুল হয়ে ফোটা
সাদা কাশফুলের বনে।

কবিতার গাছে
কবিতার পাতা
কবিতারা আশার মুকুল,

চেয়ে দেখো ঐ
কবিতার গাছে
ধরেছে কত শত ফুল।

মায়ের পূজিতে
কিছু নাই দিতে
আমি যে অধম দাস,

মায়ের আশীষে
ভাষা আসে ভেসে
কবিতায় তার প্রকাশ।

এ শারদ প্রাতে
মায়েরে পূজিতে
মায়ের চরণ কমলে,

নিবেদিব আজ
কবি সভামাঝ
কবিতা তরুর মূলে।

বাজুক জয় ঢাক,
শংখ বেজে উঠুক
আজিকে মায়ের আগমনী ।

শারদ প্রভাতে
শুনি দিকে দিকে
দেবীর আগমনে শঙ্খধ্বনি।