নিতাই বাবু এর সকল পোস্ট

নিতাই বাবু সম্পর্কে

নিতাই বাবু ২০১৫ সালে তিনি শখের বশে একটা ব্লগে রেজিষ্ট্রেশন করে লেখালেখি শুরু করেন।তিনি লিখতেন নারায়ণগঞ্জ শহরের কথা। লিখতেন নগরবাসীর কথা। একসময় ২০১৭ সালে সেই ব্লগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ব্লগ কর্তৃক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জনাব সাঈদ খোকন সাহেবের হাত থেকে ২০১৬ সালের সেরা লেখক সম্মাননা গ্রহণ করেন। সাথে নগর কথক উপাধিও পেয়ে যান। এরপর সেই ব্লগে লেখালেখির পাশাপাশি ২০১৮ সালের জুলাই মাসে তিনি শব্দনীড় ব্লগে রেজিষ্ট্রেশন করেন। শব্দনীড় ব্লগে উনার প্রথম লেখা "আমি রাত জাগা পাখি" শিরোনামে একটা কবিতা। তিনি চাকরির পাশাপাশি অবসর সময়ে লেখালেখি পছন্দ করেন এবং নিয়মিত শব্দনীড় ব্লগে লিখে যাচ্ছেন।

বৈশাখ আসে বৈশাখ যায়

2722

বৈশাখ আসে বৈশাখ চলে যায়
ভালো-মন্দ ফলফলাদি কতো খায়,
কেউ খায় বিরিয়ানি কেউ হায় হায়
কেউ আবার কাঁচা লঙ্কা শাক-ভাত খায়।

তবুও দিন থেমে থাকেনা বেলা শেষে
দিন চলে যায় রাত নেমে আসে,
যায় দিন যায় মাস বছর বারোমেসে
আসে বৈশাখ মেতে উঠে আনন্দ-উল্লাসে।

হাতের তর্জনী আঙুলের কিছু গুণাবলী

2788

আমাদের হাতে পাঁচটি করে আংগুল আছে। প্রতিটি আংগুলের আবার নির্দিষ্ট করে নামও আছে। এই আংগুল গুলো আবার জ্যোতিষ শাস্ত্রের সাথেও সম্পর্কিত। আসুন জেনে নিই আপনার আংগুল গুলোর নাম এবং এ সম্পর্কিত কিছু কার্যাবলী।

প্রথমতঃ আঙ্গুলের নাম ও আঙ্গুলগুলির পরিচয় করে দেওয়া যাক।
ত- তর্জনী, বৃহস্পতির আঙ্গুল
ম- মধ্যমা, শনির আঙ্গুল
অ- অনামিকা, রবির আঙ্গুল
ক- কনিষ্ঠা, বুধের আঙ্গুল
বৃ- বৃদ্ধা বা বুড়ো আঙ্গুল

বৃদ্ধাঙ্গুলি ছাড়া তর্জনী, মধ্যমা, অনামিকা, কনিষ্ঠার প্রত্যেকটির তিনটি করে পর্ব আছে। অর্থাৎ আঙ্গুলগুলি তিনভাগে ভাগ করলে এক এক ভাগকে এক একটি পর্ব বলে।
প্রথম পর্ব- প্রকৃত জ্ঞান ও ধর্মবোধ, আধ্যাত্মিক জগৎ
দ্বিতীয় পর্ব- প্রেম-প্রীতি ও উচ্চাকাঙ্খা, মানসিক জগৎ
তৃতীয় পর্ব- হঠকারিতা, জেদ ও প্রভুত্ব, বৈষয়িক জগৎ

তর্জনী বিচারঃ দেবগুরু বৃহস্পতি এই আঙ্গুলের অধিপতি। এই আঙ্গুল কীভাবে আপনার ওপর কিরূপ প্রভাব বিস্তার করছে তা দেখে নিন, মিলিয়ে নিনঃ—

১। তর্জনীর প্রথম পর্ব অন্য পর্বের চেয়ে লম্বা হলে আত্মাভিমানী, দাম্ভিক, পণ্ডিত ব্যক্তি ও কুসংস্কার গ্রস্ত হয়।

২। এই আঙ্গুল যতটা লম্বা হওয়ার কথা তার থেকে ছোট হলে বিচার-বিবেচনা ও চিন্তার গভীরতা থাকে না। অপরে সহজে তার ওপর প্রভাব বিস্তার করে।

৩। এই আঙ্গুল অন্য সব আঙ্গুলের চেয়ে বড় হলে সে অত্যাচারী, ক্ষমতালিপ্সু, দাম্ভিক ও বাস্তব জ্ঞানশূন্য হয়।৪। এই আঙ্গুল স্বাভাবিক হলে আদর্শবান, চরিত্র বাদী, বিদ্বান, ভাবুক ও ব্যক্তিত্ব শীল হয়।

৫। এই আঙ্গুল লম্বায় অনামিকার সমান হলে সে চাটুকার ও ধনাকাঙ্খী হয়।

৬। এই আঙ্গুল খুব লম্বা অহঙ্কারী, প্রভুত্বকামী ও ভাল জননেতা হয়।

৭। আঙ্গুলটি বাঁকা হলে মান-যশ-গৌরব যতটা পাওয়ার কথা ততটা পাবে না। নানা বাঁধা-বিঘ্ন বার বার আসবে। অন্যের কাছে অপদস্থ হতে হবে। আত্নীয়-স্বজন উপকার নিয়ে পরে ভুলে যাবে। স্বীকার করবে না।

লেখাটি “বাংলা পঞ্জিকা” অ্যাপ থেকে সংগৃহীত।

মন মহাজন

1042

মন আমার মন মহাজন
অযথা ঘোরাঘুরি সারাক্ষণ
কতো যে চিন্তা-ভাবনা অকারণ
ভালো-মন্দ সবই ভাবে এই মন।

ভাবে সে কাউকে করে অপমান
সে হতে চায় পাহাড় সমান
কীভাবে পাবে সে সর্বোচ্চ সম্মান
সুখ্যাতি ধনসম্পদ রাখতে চায় সমানসমান।

দিতে চায় সে ঘোড়া দৌড়
তাই সে অনিদ্রায় করে রাত ভোর
পরের ধন নিজের করতে খাটায় জোর
একসময় থেমে যায় রঙের ঘোড়া দৌড়।

শৈশব থেকে বার্ধক্য

27745


স্মৃতিময় শৈশব
সকাল-বিকাল হৈচৈ কলরব
লাফালাফি দুষ্টুমিও করে সব
চাওয়ারও কমতি নেই যত্তসব।

হাত-খড়ি সবে শুরু
অ আ ই ঈ শেখায় শিক্ষাগুরু
পাঠশালায় গমন মন করে দুরুদুরু
এভাবেই প্রাইমারি শেষে হাইস্কুল শুরু।


দুরন্ত কিশোর
যখনই হয় রাত ভোর
দে দৌড় হৈ-হুল্লোড়
ছুটে চলে দূর থেকে বহুদূর!

পড়ালেখা খেলাধুলা
সমানতালে কাটে বেলা
কখনো পড়া কখনো হেলা
এভাবেই কাটে যায় কিশোরবেলা।


মধুময় যৌবন
করে হনহন ঘুরে বনবন
কী করবে কখন অশান্ত মন
কখনো ভ্রমণ কখনো বনভোজন।

সাত পাকে পড়ে বাঁধা
জীবনসঙ্গী হয় প্রিয়তমা রাধা
হয় সংসারি বনে যায় গাধা
বাড়ে খাটুনি জীবন হয় আধা।


দুশ্চিন্তায় বার্ধক্য
ভাবে বসে শুনিনি তো গুরুবাক্য
তাই বার্ধক্যে শোন না কেউ তার বাক্য
অসহায় বৃদ্ধ সময়টা বার্ধক্য।

বার্ধক্যে আহার নিদ্রা সীমিত
শরীরে রোগ-ব্যধি থাকে নিয়মিত
কখন যে আসে ডাক থাকে চিন্তিত
যখন আসে ডাক সব হয়ে যায় স্তম্ভিত।

দিনমজুর

indi

শুনুন মহাজন, ‘আমিতো দিনমজুর
সদা গায়ে খেটে মরি,
কাজ শেষে মোর পাওনা
বুঝিয়ে দিবেন খুব তাড়াতাড়ি।’

মহাজন বললো, ‘আচ্ছা আচ্ছা তা হবে
এখন কাজ করো গিয়ে,
দেখো কাজে দিও না ফাঁকি
মজুরি নিও কাজ ষোলআনা বুঝিয়ে দিয়ে।’

দিনমজুর, ‘আচ্ছা মহাজন ঠিক আছে
আপনার কাজ হবে ষোলআনা,
কাজে আমি দিব না ফাঁকি
যদিও পেটে না থাকে মোর দানা।’

‘বেশ! বেশ! বেশ! খুশি হলাম শুনে
এখন যাও।’ বললো মহাজন,
দিনমজুর দিলো দৌড়, শুরু করল কাজ
সে যে হায় দিনে আনে দিনে খান।

হলো দুপুর শেষ হলো বেলা
মজুরের বাড়ি ফেরার পালা,
মজুরি পেতে গেল মহাজনের বাড়ি
দেখামাত্রই মহাজন মুখটা করলো কালা!

‘হায়রে, কী জ্বালা কী জ্বালা’
মহাজন বললো রেগেমেগে,
আজ নেই তো টাকা-কড়ি
কালকে তোকে দিবো সবার আগে।’

হায়! হায়! হায়!, এখন কী উপায়?
ঘরে তো তার নেই দানা,
অবলা নারী পথ চেয়ে আছে
ভাবছে, ‘ফিরবে স্বামী সাথে নিবে খানা।’

কী আর করা নিরুপায় হয়ে দিনমজুর
ধীরে ধীরে চললো পায়ে হেঁটে,
বাড়ির সামনেই পুকুরে স্বচ্ছ পানি
ইচ্ছেমতো সে ভরে নিলো পেটে।

অপেক্ষায় থাকা দিনমজুরের সহধর্মিণী
জিজ্ঞেস করলো, ‘সে কি গো,
এসেছো খালি হাতে বুঝি?
তা হলে এখন খাবো কী গো?’

দিনমজুর বলল, ‘আমি গিলেছি পানি
তুমিও গিলবে তা-ই জানি,
করার তো কিছুই নেই যে গিন্নি
যাও পুকুরে গিলে নাও পানি।’

‘আমরা তো গরিব দিনমজুর
মালিক মোদের হুজুর মহাজন,
কেউ দেয় না ঘাম না শুকোতে মজুরি
এখন সবাই এমন, চলছেই এমন!’

ওরা নতুন ওরা কুড়ি

IMG00

ওরা নতুন ওরা কুড়ি ওদের ছোটবেলা
ওরাই তো খেলবে খেলা,
বাঁধন হারা খোলাসা মনে
খেলবে সকল খেলা।

কিসের সকাল কিসের বিকাল
কিসের রাত্রিবেলা,
সকাল দুপুর সন্ধ্যা রাত্র
শুধু খেলা আর খেলা!

কখনো বা কানামাছি কখনো লাটিম
কখনো আবার ফুটবল,
ডাংগুলি আর মারবেল ক্রিকেট
সব খেলাতেই ওরা সফল।

কখনো বা সাঁতার কাটে মাঝ পুকুরে ভেসে
কখনো আবার দোলখেলা,
গোল্লাছুট হাডুডু লংজাম্প ভলিবল
খেলাতেই শেষ সারাবেলা।

নিতাই বাবু
০৯/০৪/২০২২ইং।

নরক যন্ত্রণা

IMG_20

দুঃখ থেকে কান্না আসে
সুখ থেকে হাসি,
বেশি দুঃখে বুক ছাপড়ায়
আনন্দে বাজায় বাঁশি!

খাবার যদি না থাকে ঘরে
ক্ষুধা বাড়ে অকারণ,
পকেটে যদি না থাকে কড়ি
জীবন থাকতেও হয় মরণ।

সংসারের অশান্তি নরক যন্ত্রণা
থাকুক যতই ধনসম্পত্তি,
টাকা-পয়সায় বাড়ায় বিলাসিতা
অশান্তিতে ভুগে দম্পতি।

দুনিয়াতে দুঃখ-কষ্ট নরক যন্ত্রণা
ধনসম্পত্তিতে শান্তি হয়না,
জীবদ্দশায় যদি না পায় শান্তি
স্বর্গেও শান্তি মেলেনা।

কোথায় নিয়ন্ত্রণ?

image-15

সবকিছু আজ চলে গেছে
নিয়ন্ত্রণের বাইরে,
নিয়ন্ত্রণ তো নেই এখন
নিজের ঘর সংসারে।

নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে
খোদ দেশের সরকার,
সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে
দেশের হাট বাজার।

নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখছে এখন
নেতা-নেত্রীর ক্যাডার বাহিনী,
তাদের দমাতে হিমশিম খায়
দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

টেন্ডারবাজি চাঁদাবাজি দূর্নীতি
সব ক্যাডারদের নিয়ন্ত্রণে,
তবুও সভা মিটিং ডাকা হয়
কুখ্যাত সন্ত্রাসীদের আহ্বানে।

দ্রুতগতির গাড়ি যখন-তখন
রাস্তায় নিয়ন্ত্রণ হারায়,
মরে মানুষ কাঁদে স্বজন
ড্রাইভার-হেলপার পালায়!

নদীতে মালবাহী জাহাজগুলো
চলে নিয়ন্ত্রণের বাইরে,
তাইতো দেখা যায় আচমকা
ধাক্কা লাগে লঞ্চ-স্টিমারে।

দেশের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ রাখে
দেশের ব্যবসায়ী সংগঠন
সেটাও নিয়ন্ত্রণ হারা এখন
সাধারণ মানুষের হয়েছে মরণ।

স্বাস্থ্য সেবার নিয়ন্ত্রণ রাখে
দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়,
করোনা কালে এখানেও হয়েছিল
বছরের সেরা মহাপ্রলয়।

ত্রাণসামগ্রী বিতরণের নিয়ন্ত্রণ থাকে
জনপ্রতিনিধিদের হাতে
সেই ত্রাণ নিয়েও খেলেছিল খেলা
ধরাও পড়েছিল হাতেনাতে।

নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়েছিল
প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার,
কেউ পেয়েছিল কেউ পায়নি
তাতে যায় আসে কার?

পুরনো রেললাইন এখন বেগম নাগিনা জোহা সড়ক

অনেকদিন ধরে শোনা যাচ্ছিল পুরোনো রেলপথ নতুন করে মহাসড়ক হওয়ার কথা। কথাটি কারোর মুখের কথা নয়, খোদ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশ করা। জারিকৃত প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয় গত ২৫ মে (মঙ্গলবার) ২০২১ইং। এদিন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, নারায়ণগঞ্জ জেলার খানপুর হতে হাজীগঞ্জ গোদনাইল হয়ে ইপিজেড পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়কটি ভাষা সৈনিক “বেগম নাগিনা জোহা সড়ক” নামকরণ করা হয়েছে।

IMG0504

এই সড়কটি আগে ছিলো রেলপথ বা রেললাইন। রেললাইনটি দেশ স্বাধীন হবার আগে শুধু নারায়ণগঞ্জ গোদনাইলস্থ বর্তমান নাম বাংলাদেশ সমবায় শিল্প সংস্থা (সী.) বা সংক্ষেপে “কো-অপারেটিভ” জুট প্রেসের জন্যই রেললাইন স্থাপন করা হয়েছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে এখানে সরকারের খাদ্যসামগ্রী মজুদ রাখার কাকগুলো গোডাউন ছিলো। কোনও দুর্যোগের কারণে দেশে খাদ্যসংকট দেখা দিলে এখানকার গোডাউন থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা-শহরে জরুরি খাদ্য সরবরাহ করা হতো।

IMG0504M
ছবিটি গোদনাইল চৌধুরীবাড়ি আদর্শ বাজারের একাংশ।

বলে রাখা ভালো যে, “বাংলাদেশ সমবায় শিল্প সংস্থা (সী.) জুট প্রেসে বর্তমানে সরকারের কোনও খাদ্য মজুদ রাখার গোডাউন নেই। এখন এখানে পাট মজুদ রাখার অনেকগুলো গোডাউন আছে এবং পাট বেলিং করার জুট প্রেস আছে। তবে এমন সরকারি মালামাল মজুদ রাখার গোডাউন শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব পাড়ে আরও দুটি আছে। একটি সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় ‘বিশ্ব গোডাউন’ নামে পরিচিত। কেউ কেউ বলে ‘সাইলো’। আরেকটি নারায়ণগঞ্জ নগর খানপুর সংলগ্ন বরফকল নামক স্থানে।”

তো যাইহোক, মূল কথায় ফিরে আসি!
তখনকার সময়ে এখানে (কো-অপারেটিভ বা বাংলাদেশ সমবায় শিল্প সংস্থা (সী.)-এ থাকা গোডাউনে মজুদ থাকা খাদ্যসামগ্রীও আনা হতো দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে। সেসময়ে এখানে থাকা গোডাউন গুলোতে খাদ্য ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী আনা-নেওয়া করার একমাত্র উপায় ছিলো নৌপথ। নৌপথ ছাড়া আর অন্য কোনও পথে এখানকার এসব গোডাউন থেকে কোনও মালামাল আনা যেতো না, মালামাল নেওয়াও যেতো না।

এতে সরকারের খরচ হতো অনেক এবং মালামাল সরবরাহের কাজেও লেগে যেতো দীর্ঘ সময়। তাই তৎকালীন সরকার সময় ও খরচ বাঁচতে এখানে খাদ্যসামগ্রী মজুদ রাখা ও দ্রুত সময়ে ডেলিভারি দেয়ার জন্য নারায়ণগঞ্জ চাষাঢ়া রেলস্টেশন থেকে খানপুর, তল্লা, হাজীগঞ্জ, পাঠানটুলির ভেতর দিয়ে “বাংলাদেশ সমবায় শিল্প সংস্থা (সী.)” পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন করে রেলপথে খাদ্যসামগ্রী-সহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী আনা-নেওয়া শুরু করে।

তারপর এই সংস্থার সন্নিকটে থাকা গোদনাইলস্থ “বিজেএমসি” জুট প্রেস কর্তৃপক্ষও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দ্রুত সময়ে কম খরচে পাট আনা-নেওয়ার জন্য রেল সংযোগ স্থাপন করে। পরবর্তীতে এশিয়ার সেরা আদমজী জুট মিলস কর্তৃপক্ষও তাদের সুবিধা মাথায় রেখে রেল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলে, রেল কর্তৃপক্ষ আদমজী জুট মিলেও রেল সংযোগ দিয়ে দেয়।

তারপর স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার “সাইলো” বা “সেলো” বা ‘বিশ্ব গোডাউনে’র জন্যও রেল সংযোগ স্থাপন করা হয়। এরপর থেকে অনেক বছর পর্যন্ত ‘বাংলাদেশ সমবায় শিল্প সংস্থা (সী.), বিজেএমসি, আদমজী জুট মিলস ও সাইলো বা সেলো বা বিশ্ব গোডাউন’এ পণ্যবাহী রেল নিয়মিত যাতায়াত করতো।

দেশ স্বাধীন হবার পরও ১৯৮৬-৮৭ সাল পর্যন্ত এই রেলপথে পণ্যবাহী রেল চলাচল করতে নিজেও দেখেছি। ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যার পর আর এই রেলপথে পণ্যবাহী রেল চলাচল করতে আর দেখা যায়নি। কিন্তু রেললাইন ঠিকই থেকে যায়।

তারপর আস্তে আস্তে যখন দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে আর নারায়ণগঞ্জ শহরে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান হুহু করে বাড়তে থাকে, তখনই দেশের বিভিন্ন জেলা-শহর থেকে কর্মজীবী মানুষ কাজের সন্ধানে নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন জায়গায় আসতে শুরু করে। আসতে থাকা কিছু মানুষ থাকতে শুরু করে ভাড়া বাসায়, কিছু মানুষ থাকতে থাকে রেল লাইনের পাশে বস্তি বানিয়ে।

বিভিন্ন জেলা-শহর থেকে আসা মানুষের সাথে কিছু স্থানীয় বাসিন্দারাও যার যার বাড়ির সামনে রেল লাইনের পাশে পরিত্যক্ত জায়গা ও জলাশয় দখলে নিয়ে যারযার মতো করে ঘরবাড়ি দোকানপাট গড়ে তুলতে শুরু করে। এভাবে একসময় নারায়ণগঞ্জ চাষাঢ়া হতে সিদ্ধিরগঞ্জ বিশ্ব গোডাউন পর্যন্ত পুরো রেললাইনের দুই পাশ বেদখল হয়ে পড়ে এবং রেল লাইনের পাশে গড়ে ওঠা ঐসব বস্তি ঘরগুলো পরিনত হয় একেক জনের একেকটা বাড়িতে। সেসব ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট নিজেদেরই মনে করে থাকতে থাকে বছরের পর বছর।

এতো বছর পর যখন গত ২৫ মে (মঙ্গলবার) ২০২১ইং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে নতুন সড়কের নামকরণ-সহ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়, তখনই রেল লাইনের জায়গা দখল করা ব্যক্তি মালিকদের মাথায় পড়ে বজ্রপাত। কারো কারোর আগামী দিনের সমস্ত স্বপ্ন মুহূর্তে হয়ে যায় ধূলিস্যাৎ। কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়ে। কাউকে আবার বলতে শোনা যায়, “এ দেশে ভিনদেশ থেকে আসা মানুষেরা বাসস্থান পায়, অথচ আমরা দেশের ভূমিহীন নাগরিকরা হচ্ছি উচ্ছেদের শিকার। যেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভূমিহীনদের মাঝে শতশত বাড়ি বিতরণ করছে, সেখানে আমাদের উচ্ছেদ করে ভাসিয়ে দেয়া হচ্ছে সাগরে।”

তো যে যা-ই বলুক, এতে কারোর তো কিছুই করার নেই। কারণ, গতবছর থেকে অর্থাৎ ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় থেকেই রেল কর্তৃপক্ষ চাষাঢ়া হতে সিদ্ধিরগঞ্জ আদমজী ইপিজেড পর্যন্ত রেললাইনের দুপাশ মাপ-জোপ করে লাল চিহ্ন দিয়ে দেয়। তারপর মাইকিং করে লাল চিহ্নিত জায়গা ও জলাশয় খালি করতে বলা হয়। এর কিছুদিন পরপরই খানপুর সংলগ্ন চাষাঢ়া চাঁনমারি থেকে হাজীগঞ্জ পর্যন্ত শুরু হয় উচ্ছেদ। অপরদিকে আদমজী ইপিজেড থেকে ২নং ঢাকেশ্বরী বাজার সংলগ্ন পর্যন্তও শুরু হয় উচ্ছেদ। উচ্ছেদের পরপরই দুই সাইটে দ্রুতগতিতে চলতে থাকে নতুন সড়কের নির্মাণ কাজ। বাদ থেকে যায় গোদনাইল চৌধুরীবাড়ি, পাঠানটুলি, রসূলবাগ পর্যন্ত।

নতুন সড়কটির নির্মাণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে প্রথমে করা হয় মাইকিং। তারপর হাতে হাতে বিলি করা হয় নোটিশ। বেঁধে দেয়া হয় ২২/০৩/২০২২ইং তারিখ পর্যন্ত সময়সীমা। গত ২৩/০৩/২০২২ ইং তারিখ উচ্ছেদ অভিযান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও উচ্ছেদ করতে পারেননি। আবার দেয়া হয় ৭দিনের সময়। তারপরও অনেকেই যার যার দখল করা জায়গার মায়া ছাড়তে পারছিলেন না।এরপর গত ০১/০৪/২০২২ইং তারিখ বেলা তিনটা থেকে শুরু হয় উচ্ছেদ অভিযান। এখন পুরো রেল লাইনের দুপাশে বসবাস করা অনেকেই বলছে, “কী আর করা! সরকারের জায়গা তো সরকার নিবেই, এটাই তো নিয়ম!”

আর সেই নিয়মেই চলছে দ্রুতগতিতে উচ্ছেদ অভিযান ও ভাষা সৈনিক “বেগম নাগিনা জোহা সড়ক” এর নির্মাণ কাজ। আশা করা যায় আগামী বছরই এই সড়ক দিয়ে দিন-রাত যানবাহন চলাচল করতে পারবে বলে মনে হয়।

উল্লেখ্য, ভাষা সৈনিক “বেগম নাগিনা জোহা” ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং প্রাক্তন গণপরিষদ ও সংসদ সদস্য, স্বাধীনতা (মরণোত্তর) পদকপ্রাপ্ত এ কে এম শামসুজ্জোহার সহধর্মিণী এবং নারায়ণগঞ্জের গণমানুষের প্রাণপ্রিয় নেতা এ কে এম শামীম ওসমান’র মা।

দুখী আমি

Village

দুখী আমি অভাগা আমি
লোকে বলে আমি ভিখারি,
ভিক্ষুক চাইলে দেয়না ভিক্ষা
তারাই নাকি এই সমাজে হাজারী।

দিনমজুর আমি অভাবী আমি
লোকে বলে আমি নাকি দুখী,
পরের ধন খায় লুটেপুটে
তারাই নাকি এই সমাজে চিরসুখী।

কাঙাল আমি জঞ্জাল আমি
এই সমাজের মানুষের কাছে,
কাঙালিদের খাবার কেড়ে খায়
তারাই নাকি থাকে ক্ষমতার আগে-পাছে।

রাক্ষস আর শয়তান

27744

ছোডবেলা সইন্ধ্যার পর বুড়া-বুড়িগো সামনে বইয়া হেগো মুহে শোলক(কিচ্ছা) হুনতাম। শোলক হুনতে খুব ভালা লাগত। হুনলে খালি হুনতেই মন চাইত। হুনতাম রাইক্ষস’র শোলক। হুনতাম শয়তানের শোলক। হুনতাম রাজা-প্রজা আর ধনী-গরিবগো শোলক। হেসুম খালি হুনতামই। কিন্তু তরজমা বা বিশ্লেষণ করনের মতন বয়স তহন অয় নাই দেইখ্যা হেগো মুহে শোলক হুইনাই খালি খালি চিন্তা করতাম, আর রাইক্ষসের ডর মনের মধ্যে পুইষা রাখতাম।

হেই ডরে সইন্ধ্যার পর আর ঘরেই তুনে বাইর অইতাম না। বেশি রাইতে যদি মুতায় ধরতো, তহন শয়তান আর রাইক্ষসের ডরে মা’রে ডাইক্যা উঠাইতাম। মা’র লগে বাইরে যাইয়া মুইতা দুই চোক বন্ধ কইরা দৌড় দিয়া ঘরে আইতাম। হের পরও বাইর অইলেই মনে অইতো এই বুঝি রাইক্ষসে আমারে খাইলো, আর শয়তানে ধরলো!

অহনে বড় অইছি। বুজের অইছি। হগল কিছু বুঝি, জানি। হিল্লাইগা অহনে আর হেসব শোলক কিচ্ছা হুনি না। কারোর মুহে হুনলেও আঁইস উডে। হুইন্না একলা একলাই আঁসতে থাহি, আর ভাবতে থাহি। অহনে বুঝি ঐ রাইক্ষস-টাইক্ষস হাছা বইলতে কিচ্ছু নাই। মাইনষের তুনে বড় রাইক্ষস এই দুইন্নাত নাই। আর ঐ যে শয়তান? মাইনষের তুনে বড় কুনো শয়তানও নাই।

কাজেই কথার কথা অইলো, মানুষই রাইক্ষস, মানুষই শয়তান।

দেশী ভাষায়,
নিতাই বাবু
৩০/০৩/২০২২ইং।

এর নাম বাঁশ

2771693

রণে বনে জলে জঙ্গলে
মঙ্গলে অমঙ্গলে সবখানে বাঁশ
জন্মায়ও তা সর্বত্র বারোমাস,
বাঁশ, এর নাম বাঁশ।

এই বাঁশ কেউ ধরে কেউ ভরে
কেউ গাড়ে কেউ রোপণ করে
কেউ আবার ঘটায় সর্বনাশ,
বাঁশ, এর নাম বাঁশ।

রাজার থাকে কতো দাস
দাসের হাতে থাকে বাঁশ
বাঁশের আছে বহু ইতিহাস,
বাঁশ, এর নাম বাঁশ।

যদি কেউ পেতে চায় ক্ষমতা
বাঁশই দিতে পারে ১০০℅ নিশ্চয়তা
রণক্ষেত্রেও পাবে নাতো হ্রাস,
বাঁশ, এর নাম বাঁশ।

লগি-বইঠা লাঙল টানা
টং মাচা আর রান্না-বান্না
সব কাজে ব্যবহৃত এই বাঁশ,
বাঁশ, এর নাম বাঁশ।

হাত ও পায়ের ব্যবহার নিয়ে নানা কথা

p2018

আমরা মানুষ, স্রষ্টার প্রেরিত শ্রেষ্ঠ জীব। আমরা মাতৃগর্ভ থেকেই দু্ই হাত, দুই পা নিয়ে জন্মেছি। আমরা মরণশীল। মৃত্যু আমাদের দৈনন্দিন জীবন চলার মাঝে যেকোনো সময়। জন্মের পর থেকেই আমরা নানারকম কুমন্ত্রণায় জর্জরিত হয়ে পড়ি। আবার কেউ কুমন্ত্রণাকে বধ করে স্রষ্টার ধ্যানেই মত্ত থাকে। কেউ জপে হরি নাম, কেউ করে জিকির-আজকার। স্রষ্টাকে সন্তুষ্ট করার জন্য কেউ করে মূর্তিপূজা, কেউ আবার মসজিদে গিয়ে পড়ে নামাজ। আবার কেউ যায় গির্জায়, কেউ যায় বুদ্ধুদেবের মঠে।

আমাদের সমাজে আছে অবিচার, অত্যাচার কুসংস্কার। আছে সুবিচার, সুবিচারক ও সুন্দরভাবে জীবন গড়ার কৌশল। আগেকার সময়ে মানুষের শিক্ষার হার ছিল কম, কুসংস্কারে মানুষ ছিল বেশি বিশ্বাসী। মনগড়া কথা একবার প্রচার করতে পারলেই হলো। সেটা বিধান মনে করে অনেকেই পালন করতো। এখনও অনেক অনেক মানুষেই, কুসংস্কারকে ধর্ম বাক্য মনে করে। যা গোটা ভারতবর্ষ জুড়ে যেখানে সেখানে এরকম দেখা যায়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও অনেকরকম কুসংস্কার আছে। তবে আমাদের দেশেই কুসংস্কার কথাগুলো বেশি পালন করে থাকে। বলছিলাম, আমাদের দুই হাত আর দুই পা নিয়ে কিছু কথা।

কিছুদিন আগে সকালবেলা এক চা-দোকানে বসে চা পান করছিলাম। এমন সময় এক লোক দোকানদারকে চা এর মূল্য দিচ্ছে। লোকটার ডানহাতে চা-এর কাপ। বামহাতে ৫ টাকার একটা কয়েন। দোকানদারকে বলছে, ‘চায়ের দামটা রাখেন।’ লোকটা বামহাতেই ৫ টাকার একটা কয়েন দোকানদারকে দিতে চাচ্ছে। কিন্তু দোকানদার ওই লোকের দেওয়া ৫ টাকার কয়েনটা আর নিচ্ছে না। কাস্টমার লোকটা যতবার ৫ টাকার কয়েনটা দিতে চাচ্ছে ততবারই দোকানদার না দেখার ভ্যান করছে। একপর্যায়ে কাস্টমার কয়েনটা দোকানদারের সামনে ফেললো। মুহূর্তেই লেগে গেল হট্টগোল, রাগারাগি, গালাগালি।

কারণ, বাম হাত বলে যতো কথা। বাম হাত মানেই হচ্ছে অশুচি আর অপবিত্র বা নাপাক। বামহাতে দেওয়া কোনকিছু নাকি গ্রহণ করতে নেই। গ্রহণ করলেই ভাগ্যের উপড় অলক্ষ্মী ভর করে বসবে। তাই দোকানদার কাস্টমারকে বলেই ফেললো, ‘এই মিয়া, আপনের কি ডান হাত নাই? বা’হাতে টেকা দিলেন কেন? টেকাডা উডান কইতাছি? সকালবেলাই কুফা লাইগা গেলগা।’

লোকটা মুহূর্তেই থ’ বনে গেল। দোকানদারের কথা শুনে, লজ্জায়, পড়ে লোকটা আবার কয়েনটা উঠায়। তারপর ডানহাতে কয়েনটা দোকানদারকে দেয়। ডানহাতের টাকা পাবার পরও দোকানদার বকবক করতে করতে বলছে, ‘লেহাপড়া হিগছে? আচার-বিচার কিচ্ছু জানে না। মাইনষের কাছে কয়, আমি শিক্ষিত!’

দোকানদারের এসব কথা শুনে আমিও অক্কার মা ঠক্কা হয়ে গেলাম। কিন্তু লোকটির পক্ষ নিয়ে কিছুই বলতে পারিনি। কারণ, দোকানদারকে এসব বুঝানো বড় মুশকিল হবে, তাই কিছু বলিনি।

এসব কুসংস্কার কথা বহু আগে থেকেই আমাদের সমাজে প্রচলিত। যা অহরহ, নিত্যদিনের ঘটনা রটনা। আমাদের এই বঙ্গদেশে বাম হাতটা যেন একটা অভিশাপ। বামহাত দিয়ে আমাদের মলদ্বার পরিষ্কার করি বা ধোয়ামোছা করি। এজন্যই আদি যুগ থেকেই আগেকার বুড়োরা আমাদের নানান কথা শিখিয়ে গেছেন। বামহাত দিয়ে এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না ইত্যাদি ইত্যাদি। যা আমরা এখনও সেসব কথা ঘরে বাইরে সবাই মেনে চলি। কিন্তু কেউ এর সত্য মিথ্যা যাচাই করে দেখে না। যেমন কথায় আছে, ‘চাঁদে একটা বটগাছ আছে। সেই বটগাছের নিচে এক বুড়িমা বসে বসে সূতো কাটছে।’ আবার অনেকেই বিশ্বাস করছে, ‘পৃথিবীটা একটা গরুর শিঙের উপরে আছে। কিছুদিন পরপর, এক শিং থেকে আরেক শিঙে অদলবদলও করে থাকে। এই অদলবদল করার সময়ই নাকি পৃথিবীতে ভূমিকম্প অনুভূত হয়।’ আরও অনেক বানানো কথা আমাদের সমাজের মানুষ এখনও বিশ্বাস করে বসে আছে।

এখন কথা হলো, ডানহাত কার, আর বামহাতটাই-বা কার? আমাদের সমাজে অনেক মানুষ আছে, তারা বামহাতি। পবিত্র ডানহাত থাকতেও তারা বামহাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। খাদ্য খাওয়া থেকে আরম্ভ করে দৈনন্দিন জীবনের সব কাজই বামহাতেই করে থাকে। আবার ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের কবলে কারোর অঙ্গহানিও হয়ে যায়। তখন বামহাতই তার জীবন চলার একমাত্র হাতিয়ার হিসেবে সঙ্গী হয়ে থাকে। যা-ই করুক, এই বামহাত দিয়েই তাকে করতে হয়। এ ছাড়া আর তার কোনও উপায় নেই বলে আমার বিশ্বাস। যা-ই হোক, এবার আসল কথায় আসি।

আসল কথা হলো আমি একজন মানুষ। ডানহাত বামহাত নিয়েই আমি জন্মেছি। কোনও পবিত্র কাজে যেমন দু’হাত ব্যবহার করি, তেমনি অপবিত্র কাজেও দু’হাতই ব্যবহার করি। যেমন: আমি যদি কোনও মন্দিরে গিয়ে জোড়হাত করে প্রণাম করি, তাহলে কি আমার সেই প্রণাম করা বিফলে যাবে? সম্মানিত মুসলমান ভাইয়েরা দু’হাত তুলে মোনাজাতে অংশগ্রহণ করে। তাহলে এখানে বামহাত ছাড়া কি মোনাজাত হবে? যার একহাত নেই বা বামহাত নেই তার হবে। আর যার দু’হাতই আছে, তাদের কি হবে? তখন কেন এই অপবিত্র বামহাত নিয়ে কথা ওঠে না? আমি যখন আমাদের পুরোহিত বা গুরু-মহাগুরুদের প্রণাম করি, তখন কেন তারা আমার প্রণাম গ্রহণ করে? তারা তখন বলতে পারে না, বামহাত নামিয়ে প্রণাম করো? যখন আমি মন্দিরে দেবতার বিগ্রহে দু’হাত ভরে ফুল দেই, তখন মন্দিরে থাকা পুরোহিত বাধা দেয় না কেন? এসব প্রশ্ন শুধু করেই গেলাম, সদুত্তর পেলাম না। পাইনি এর কোনও লিখিত শাস্ত্র বিধান। অথচ এইরূপ কুসংস্কারাচ্ছন্ন নিয়ম-কানুন নিয়ে ঘটে যায় কত অঘটন!

আবার ডান পা, আর বাম পা নিয়েও আমাদের সমাজে বহু নিয়ম বলবত আছে। এই রীতি দেখা যায়, একজন পিতা তার ছেলের জন্য পাত্রী দেখতে গেলে। ছেলের সাথে থাকা সবাই প্রথমে মেয়ের পায়ের দিকেই তাকায়। মেয়ের ডান পা, না বাম পা আগে চলে, সেটা সবাই ফলো করে। পায়ের ঘটন মোটা না চিকন, সেটাও দেখে। এই পায়ের সাথে নাকি লক্ষ্মীশ্রী সংযুক্ত? মেয়েদের বেলা বাম পা নাকি লক্ষ্মীবান? ছেলেদের বেলায় ডান পা হলো লক্ষ্মীবান। মেয়েদের পায়ের গোড়ালি (গোছা) মোটা হলেও মহা বিপদের আশংকা আছে। সেই মেয়ে নাকি অলক্ষ্মী। আসলে এসব কিছুই না, সবই আগের দিনের মানুষের মনগড়া কথা। যা আমরা এখনও অক্ষরে-অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করি। কিন্তু বর্তমান তথ্য-প্রযুক্তির দুনিয়ায়, একটু সত্য-মিথ্যা যাচাই করে দেখি না। কুসংস্কার কথার নিয়মের একটু হেরফের হলেই, লেগে যায় খটকা। হয়ে যায় মারামারি, হাতাহাতি। ভেঙ্গে যায় একজন অসহায় পিতার মেয়ের বিয়ে, ভেঙ্গে যায় স্বপ্ন।

p2018i

অনেক সময় হাত ও পায়ের আঙুল নিয়েও নানান কথা শোনা যায়। কারোর হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলের সাথে ছোট একটা আঙুল থাকলেই, সে ভাগ্যবান। তাকে বলে, ‘একুশ আঙুলা’। দু’হাতে দুটো আঙুল বেশি থাকলে বলে, ‘বাইশ আঙুলা’। যার এরকম আঙুল আছে, তিনি নাকি মহা-ভাগ্যবান ব্যক্তি। মেয়েদের বেলায় থাকলে তো আর কথাই নেই। ওই মেয়ে পরের ঘরে গিয়ে নাকি মহা-লক্ষ্মী বনে যাবে। কাউকে আবার রাগ করে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখালেই সর্বনাশ! সাথে সাথেই একশন, রিঅ্যাকশন। হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল নাকি ঝগড়া বাঁধায়? আবার দেখা যায়, হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে মানুষকে সন্তুষ্টিও করে। কেউ আবার বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে, সঠিক বলে মনের ভাবও প্রকাশ করে। তাহলে আমরা এখন কোনটা বিশ্বাস করবো? আর কোনটা অবিশ্বাস করবো? কোনটা মানবো, আর কোনটা মানবো না? প্রশ্ন শুধু প্রিয় পাঠকের কাছেই রেখে গেলাম।

ফরমালিন মুক্ত মটরশুঁটির ভিন্ন স্বাদ

p20180311-192059

ফরমালিন মুক্ত টাটকা মটরশুঁটি। ছবিটি নিজের বাসায় তোলা।

স্রষ্টা মানুষ সৃষ্টির অনেক আগে থেকে নাকি গাছ সৃষ্টি করেছেন। তাই গাছ ছাড়া এই সুন্দর পৃথিবীতে আমাদের বেঁচে থাকা মুশকিল। গাছ শুধু দুর্যোগ মোকাবেলাই করে না, গাছ আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেনও তৈরি করে। গাছ আমাদের ফল দেয়, ফুল দেয়, জ্বালানি দেয়, দুর্যোগ হতে রক্ষা করে। আবার বাসস্থান তৈরি করার উপযোগী কাঠও দেয়। গাছ থেকেই ফুল, ফুল থেকে ফল। সব গাছ থেকেই আমরা শতভাগ খাঁটি ফল ও খাদ্যশস্য পেয়ে থাকি।

কিন্তু কিছু অসাধু মানুষের কারণে গাছ থেকে পাওয়া খাদ্যশস্য শতভাগ খাঁটি থাকে না। শতভাগ খাঁটি খাদ্য শস্যগুলো বিষ মিশিয়ে করে ফেলে বিষাক্ত। বর্তমানে সবকিছুর মধ্যেই ফরমালিন নামের একপ্রকার বিষ মেশানো। কি ফল, আর কি তরিতরকারি, বাদ নেই কোনোটাই। এমনকি বাজারে গুড়া মাছের মধ্যেও ফরমালিন মেশানো থাকে। যেই ফরমালিনের সাহায্যে কচিকলাও পাকিয়ে ফেলে, সেই ফরমালিন সবকিছুতেই। বর্তমানে এমন কোনও খাদ্যশস্য নেই যে, ফরমালিন ছাড়া। বিক্রেতারা যতই বলুক না কেন, যে এটা ফরমালিন ছাড়া। তবু কোনো নিশ্চয়তা নেই। এ ব্যাপারে কাউকে বিশ্বাস করা যায় না।

আমার মতে বাজারে তরিতরকারি, শাকসবজি, ফলফলারি আর খাদ্যশস্যের মধ্যে অনেককিছুই ফরমালিন মুক্ত আছে। তারমধ্যে একমাত্র ফরমালিন মুক্ত হলো ‘মটরশুঁটি’। এই মটরশুঁটি একশোতে একশো পার্সেন্ট খাঁটি এবং ফরমালিন মুক্ত। এই মটরশুঁটি বিভিন্নরকম তরকারিতে ব্যবহার করা হয়। কেউ মাছে, কেউ খিচুড়ীতে, কেউ পোলাউ-বিরিয়ানিতেও ব্যবহার করে। এই মটরশুঁটি যখন নতুন বাজারে আসে, তখন দামও থাকে খুব চড়া। তখন প্রতি কেজি মটরশুঁটি ১২০ টাকা থেকে শুরু করে ১৩০/৪০ টাকায়ও বিক্রি হয়। তবু মানুষে কিনে নেয়, খায়। তবে খুব কম মানুষেই জানে তরকারি ছাড়া মটরশুঁটি কীভাবে খাওয়া যায়।

আগে অনেক মানুষকে মটরশুঁটি ভেজে খেতে দেখেছি, সেদ্ধ করে খেতে দেখেছি। ছোটবেলা অনেকভাবে নিজেও খেয়েছি এই মটরশুঁটি। এখনো বাজারে গেলে অন্তত আধা কেজি মটরশুঁটি আগেই কিনতে হবে, তারপর অন্যকিছু।

আগেকার সময়ে মটরশুঁটি হাট-বাজারে বিক্রি হতো না। যা হতো তা শুধু গৃহস্থরা ক্ষেতেই পাকিয়ে ঘরে আনতো। কাঁচা বা কচি মটরশুঁটি ক্ষেত থেকে নিজেদের জন্য কিছু তুলে আনতো। এখন সেই মটরশুঁটি স্বাদের তরকারির মধ্যে যেন প্রথম স্থান অর্জন করে নিয়েছে। কেউ সংসারের বাজার সদাই করলে, আগে কিনে থাকে মটরশুঁটি। এই মটরশুঁটির ভিন্ন স্বাদ ভিন্নভাবে কেউ গ্রহণ করেছে কিনা তা আমার জানা নেই। এই মটরশুঁটি সেদ্ধ করে খাওয়া মানে দুনিয়ার সবচাইতে সুস্বাদু খাবার খাওয়া। কীভাবে খাবেন তা জানিয়ে দিচ্ছি।

p20180311-192115

সেদ্ধ করা মটরশুঁটি। একটা একটা করে ধরুন, আর হালকা চাপ দিন। দেখবেন মটরগুলো বেরিয়ে আসছে। এরপর আরামে বসে বসে খেতে থাকুন।

প্রথমে আধা কেজি মটরশুঁটি ভালো করে বেছে নিন। সময় সময় এই মটরশুঁটিতে অনেকপ্রকার পোকামাকড় থাকে। সেগুলো ভালো করে দেখে নিন। এবার মটরশুঁটিগুলো ধুয়ে পরিষ্কার করুন। পরিমাণ মতো পানি দিন, যাতে ভালো করে সেদ্ধ হতে পারে। চুলায় বাসানোর আগে পরিমাণ মতো লবণ দিন, স্বাদ বাড়বে। চুলায় বসানোর পর আধাঘণ্টা অপেক্ষা করুন। দেখবেন ভাত রান্না করার সময় যেভাবে টগবগ করে উতলায়, ঠিক সেভাবেই উতলাচ্ছে। আধাঘণ্টা পর চুলা থেকে পাত্র সহকারে নামিয়ে ফেলুন। এবার গরম পানি থেকে মটরশুঁটিগুলো ছেঁকে নিন। ঠাণ্ডা হতে সময় লাগতে পারে, তাই একটু অপেক্ষা করতে হবে। ঠাণ্ডা হয়ে গেলে তৈরি হয়ে গেল বিকালবেলার একটা সুন্দর টিফিন। এবার ছিলুন আর খেতে থাকুন আরামে। কেউ খেতে চাইলে তাকেও দিন। ভালো লাগলে আরও মানুষকে শেখান। প্রচার করুন ফরমালিন মুক্ত সেদ্ধ মটরশুঁটির ভিন্ন স্বাদ।

প্রিয় ফেসবুক বন্ধুরা সাবধান!

23674

সকালে ঘুম থেকে ওঠে মোবাইলটা অন করে প্রথমেই ফেসবুকে টু মারা হলো, অনেকেরই দিনের প্রথম কাজ। তারপরই অনলাইনে থাকা আরও আরও সামাজিক সাইটে আনাগোনা-সহ নিজের দৈনন্দিন কাজ শুরু করেন অনেকেই।

কিন্তু নিজের দৈনন্দিন কাজ কোনদিন গোল্লায় গেলেও ফেসবুকটাকে কেউ গোল্লায় যেতে দেয় না। কারণ বর্তমান সময়ে ফেসবুকটা ফেসবুক ব্যবহারকারীদের বুকের মধ্যিখানে কাঁঠালের আঠার মতো সবসময়ের জন্য লেগেই আছে।

তাই অনলাইনে বিভিন্ন সাইটে সপ্তাহে দু-একদিন প্রবেশ করলেও কারোর কোনও সমস্যা হয় না। কিন্তু মোবাইলে এমবি নামের ইন্টারনেট অথবা ওয়াইফাই সংযোগ থাকলেই ফেসবুক দর্শন করতে হয় খুব সকাল থেকেই।
এর কারণ বর্তমান সময়ে ফেসবুক হলো বিশ্বের জনপ্রিয় এক যোগাযোগমাধ্যম। তা-ও আবার একেবারে সস্তা দরে। যেমন সস্তা আনন্দের বিনোদন। তেমনই সস্তা একে অপরের সাথে খুবই শর্টকাটে যোগাযোগ করার সুযোগ। তা হোক কলে বা মেসেঞ্জারে বা ভিডিও কলে।

তাই বর্তমান সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় যোগাযোগমাধ্যম হলো এই ফেসবুক। এই ফেসবুক যোগাযোগ মাধ্যমে আছে অনেককিছু। আছে আনন্দ, নিরানন্দ, হাসি-কান্না, জয় এবং ভয়-সহ সবকিছুই।

আনন্দের কারণ হলো, একজন মানুষ নতুন একটা অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল বাজার থেকে কিনে প্রথমেই ফেসবুকে সাইন আপ করে ফেলে। তারপর লগইন। লগইন করা সম্পন্ন হলেই ফেসবুক নিজে থেকে কিছুসংখ্যক ফেসবুক ব্যবহারকারীর তালিকা দেখায়। সেই তালিকায় বেশিরভাগ ব্যবহারকারীই থাকে নিজ এলাকার এবং ঘনিষ্ঠ পরিচিত ব্যক্তিবর্গ। তখন নতুন লগইন করা ফেসবুকার নিজ এলাকার মানুষের তালিকা দেখে খুশিতে টগবগিয়ে বেছে বেছে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্টে টাচ্ করে। কিছুক্ষণ পর রিকুয়েষ্ট পাওয়া ব্যক্তিও স্বাচ্ছন্দ্যে রিকুয়েষ্ট গ্রহণ করে। হয়ে গেলো বাল্যবন্ধু বা চিরবন্ধু বা ফেসবুক বন্ধু।

তারপর নতুন ব্যবহারকারী নিজের প্রোফাইলে একটা ছবি আপলোড করে। সেই ছবিটা হোক নিজের, নাহয় হোক গাছপালা বা তরুলতার। ছবি যেটা বা যে রকমই হোক না কেন, ছবিটা আপলোড করার সাথে সাথে ছবিতে কেউ-না-কেউ লাইক দেয়, কমেন্ট বা মন্তব্য লিখে। যেমন: Nice, Good, Beautiful এরকম।

সেই লাইক-কমেন্ট দেখে নতুন ব্যবহারকারী আনন্দের জোয়ারে ভাসে। সেই আনন্দ থেকেই মহানন্দে দিন শেষে রাত জেগে ফেসবুকে একের-পর-এক ছবি আপলোড করা-সহ সারাক্ষণ ঢুঁ মারতেই থাকে। সাথে মাঝেমধ্যে দু’একটা শব্দ লিখে ছোট বড় আকারের স্ট্যাটাসও দিতে থাকে। যাকে বলে পোস্ট। সেই পোস্টে পড়তে থাকে লাইক-কমেন্ট। ব্যবহারকারীও পেতে থাকে ভীষণ আনন্দ। একসময় নিরানন্দেও কাঁদতে থাকে, যেকোনো একটা স্ট্যাটাস বা যেকোনো মন্তব্য করাকে কেন্দ্র করে। তখন আনন্দের জায়গায় নেমে আসে নিরানন্দ!

নিরানন্দের কারণ হলো, আপত্তিকর ছবি বা বিপত্তিকর স্ট্যাটাস বা পোস্ট। যদি হয় কোনও ধর্মগুরু বা কোনো দেবদেবী বা কোনও মহাপুরুষের বিকৃত ছবি, আর যদি হয় ধর্ম অবমাননাকর কোনও স্ট্যাটাস; তাহলেই বাঁধলো বিপত্তি ক্যাঁচাল। সেই ক্যাঁচালে ক্যাঁচালে মনের আনন্দ হারাম হয়ে নিরানন্দে রূপ নেয়। রূপ নেয়া নিরানন্দে পোস্ট দাতা নিজেও কাঁদে, তার সাথে তার কিছু শুভাকাঙ্ক্ষীরা কাঁদে। কেউ আবার মনের আনন্দে শেয়ারের পর শেয়ার করে হাসতে থাকে।

হাসা হাসির কারণও আছে। সেগুলো হলো, ছবি বা কোনও মজার হাসির লেখা পোস্ট। কেউ যদি একটু অঙ্গি-ভঙ্গি করে একটা সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে, তার ফ্রেন্ড লিস্টে থাকা বন্ধুরা হাহা হিহিহি করে হেসে হেসে মন্তব্য লিখে। কেউ আবার মন্তব্যের ছোট বক্সে হাসির ইমোজি স্টিকারও সেটে দেয়। আবার কেউ যদি একটা মজার কৌতুক লিখে পোস্ট করে, তাহলেও তার ফ্রেন্ড বা বন্ধুরা হাসাহাসি করেই লাইক-কমেন্ট করে লিখে, ‘দারুণ লিখেছেন বন্ধু! আপনার লেখা পড়ে হাসতে হাসতে জীবন যায় যায় অবস্থা।’

এই হাসির মাঝেও দুঃখকষ্ট ও কান্নার উত্তাল ঢেউ লক্ষণীয়। তা হলো, কারো কারোর পোস্টে মৃত্যুর খবরে কেউ কেউ মহান সৃষ্টিকর্তার দরবারে মৃতব্যক্তির বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে শোক প্রকাশ করে। আবার কারো কারোর পোস্টে দুঃখের খবর শুনে ব্যতীত হয়। কেউ আবার কেঁদে কেঁদে মন্তব্যের ছোট বক্সে লিখে, “আপনার পোস্ট করা লেখা বা ছবি দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না।”

কারো কারোর পোস্ট আবার ভাইরাল হতে হতে ভাইরাসও হয়ে যায়। শেষাবধি সেই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে দেশ-বিদেশের শহর-বন্দর গ্রাম-গঞ্জের পাড়া-মহল্লায়। আর সেই ভাইরাল থেকে রূপ নেয়া ভাইরাস কেউ-না-কেউ জয় করে ফেসবুকে রাতারাতি হিরো বনে যায়।

কারোর আবার ক্ষয়ও হয়। তা হয়, যদি আপত্তিকর পোস্ট কোনও অশ্লীল পোস্ট একবার ভাইরাস হয়। তখনই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। সেই আতঙ্কে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পোস্টদাতার মনে লাগে ভয়! ভয় মানে ভীষণ ভয়!
এই ভয়ের কারণ হলো, কারও কারও ব্যতিক্রমী কিছু পোস্ট ও বন্ধুত্বের ভালোবাসার আবেগে নিজের অসতর্কতাবশত কিছু মন্তব্য। আরও দশজন ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মতো সবারই ফ্রেন্ড লিস্টে কিছু বন্ধু থাকতে পারে, যারা সময় আর সুযোগ বুঝে আপত্তিকর একটা পোস্ট দিয়ে বিপত্তিকর কিছু তেলেসমাতি কাণ্ড ঘটাতে পারে।

আর সেই ঘটা থেকে তেলেসমাতি ঘটনার সূত্রপাতও হতে পারে নিঃসন্দেহে। যদি কিছু ঘটেই যায়, তাহলেই ভীষণ ভয়ের কারণ হতে পারে। আমি ঠিক সেই ভয়ের কথাই বলছি। আর ফেসবুক ফ্রেন্ড লিস্টে এতএত ফ্রেণ্ডের মধ্যে ওইরকম দু-এক জন সুযোগসন্ধানী ফ্রেন্ড যে থাকবে না তা-ও কিন্তু নয়! থাকাটাও স্বাভাবিক!

কারণ বর্তমানে ফেসবুকে যেমন সুস্থ স্বাভাবিক সুন্দর মনের মানুষ আছে, তারচেয়ে বেশি আছে অসাধু হীনম্মন্যতা মানুষিক প্রতিবন্ধী ব্যবহারকারীও। সুন্দর মনের মানুষগুলো থাকে জ্ঞানচর্চার সাধনায়, আর অসাধু অমানুষিক প্রতিবন্ধী ব্যবহারকারীরা থাকে গুজব রটানোর সুযোগে আর নিজের স্বার্থ হাসিলের ধান্দায়!

এসব অসাধু অমানুষিক প্রতিবন্ধী ব্যবহারকারীরা ফেসবুকে ঘুপটি মেরে বসে থাকে। এদের নাম ঠিকানা-সহ নিজের প্রোফাইল ছবিটিও থাকে দুই নম্বরি। এরা সহজে ফেসবুকে কোনও পোস্ট করে না। যদিও মাঝেমধ্যে দু’একটা পোস্ট করে, সেটা থাকবে অশ্লীল বা ধর্ম অবমাননাকর পোস্ট। সেই পোস্ট এরা আরও দশ থেকে পঞ্চাশ জনকে ট্যাগ করে বিপদে বা ফাঁসানোর চেষ্টা করে। তা-ও যদি না করে, তাহলে তারা সবসময়ই ওদের ফ্রেন্ড লিস্টে থাকা বন্ধুদের পোস্টের উপর রাখে বাজপাখির দৃষ্টি। সেই দৃষ্টি মোটেও সু-দৃষ্টি নয়! সেই দৃষ্টি একেবারে শয়তানের কু-দৃষ্টি!

তাদের সেই কুদৃষ্টির আড়ালে থাকে তেলেসমাতি রটানোর সুযোগ। মানে গুজব যাকে বলে। তাদের সেই সুযোগটা কাজে লাগায় পোস্টদাতার অসাবধানতাবশত ধর্মের নামে আপত্তিকর পোস্ট বা স্ট্যাটাস শেয়ার করার মাধ্যমে। তাদের টার্গেট থাকে নিজ এলাকার একজন সম্মানিত ব্যক্তি, আর নাহয় একজন নিরীহ ব্যক্তি; আর নাহয় তাদের নিজ স্বার্থসিদ্ধি বাস্তবায়ন করার লক্ষ্য।

এসব লক্ষ্য নিয়েই কিছু-কিছু ফেসবুকার ইদানীংকালে আমাদের দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নভাবে ফেসবুকের একটা স্ট্যাটাস শেয়ার করে অথবা একের-পর-এক ফেসবুক মেসেঞ্জারে মেসেজ পাঠিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। অথচ নিজের ফ্রেন্ড লিস্টে থাকা প্রিয় বন্ধুটির ভুলবশত করা পোস্ট সংশোধন করার জন্য পোস্টদাতাকে একটিবারও মেসেজ দিয়ে সাবধানতা অবলম্বন করার উপদেশ দেয় না। বরং আরও আরও শখানেক বন্ধুদের মাঝে বিপত্তিকর স্ট্যাটাস বা পোস্টখানা শেয়ার করে হুলুস্থুল সৃষ্টি করে।

এসবের কারণে যেমন ধর্মকে টানতে হচ্ছে গ্লানি, তারচেয়ে বেশি টানতে হচ্ছে সমাজের বেশকিছু অসহায় মানুষকে কষ্টের বোজা! এই কষ্টের বোজা টানতে টানতে অনেক সুখের সংসার দিন-দিন দুখের সাগরের তলদেশে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সাথে আপত্তিকর পোস্টদাতার পোস্টের কারণে তার নিজ এলাকাটা মুহূর্তে পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। তা হচ্ছে কেবল ফেসবুকে থাকা কিছু অসাধু অমানুষিক প্রতিবন্ধী ব্যবহারকারীদের জন্য। তাই নিজে ভয়ে থেকেও অন্যকে সাবধানে থাকার অনুরোধ করতে হচ্ছে।

অনুরোধ করছি এই কারণে যে, এসব হীনম্মন্যতা অসাধু পরিচয়হীন বন্ধুরা কোনও সময়ই আপনার ভালো চাইবে না। বরং বর্তমান যুগের সেরা সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেসবুকে আপনার ভুলবশত করা একটা স্ট্যাটাস বা একটা পোস্টকে কেন্দ্র করে আপনার নিজ এলাকায় তেলেসমাতি ঘটিয়ে দিবে। এতে এদের একটু বিবেকে বাঁধবে না বরং এরা দূর থেকে আনন্দই পাবে।

তাই সাবধানে থাকুন! এদের থেকে দূরে থাকুন! ভয়কে জয় করুন এবং এদের চিহ্নিত করে আপনার ফ্রেন্ড লিস্ট থেকে এদের বিদায় করুন। নিজে নিরাপদে থাকুন। নিজে ভয়মুক্ত থাকুন। অন্যকেও শান্তিতে থাকতে দিন এবং সুন্দরভাবে বর্তমান বিশ্বের জনপ্রিয় যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করুন, অন্যকেও সুন্দরভাবে ব্যবহার করতে দিন।