নিতাই বাবু এর সকল পোস্ট

নিতাই বাবু সম্পর্কে

নিতাই বাবু ২০১৫ সালে তিনি শখের বশে একটা ব্লগে রেজিষ্ট্রেশন করে লেখালেখি শুরু করেন।তিনি লিখতেন নারায়ণগঞ্জ শহরের কথা। লিখতেন নগরবাসীর কথা। একসময় ২০১৭ সালে সেই ব্লগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ব্লগ কর্তৃক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জনাব সাঈদ খোকন সাহেবের হাত থেকে ২০১৬ সালের সেরা লেখক সম্মাননা গ্রহণ করেন। সাথে নগর কথক উপাধিও পেয়ে যান। এরপর সেই ব্লগে লেখালেখির পাশাপাশি ২০১৮ সালের জুলাই মাসে তিনি শব্দনীড় ব্লগে রেজিষ্ট্রেশন করেন। শব্দনীড় ব্লগে উনার প্রথম লেখা "আমি রাত জাগা পাখি" শিরোনামে একটা কবিতা। তিনি চাকরির পাশাপাশি অবসর সময়ে লেখালেখি পছন্দ করেন এবং নিয়মিত শব্দনীড় ব্লগে লিখে যাচ্ছেন।

কান্না সুখের যতিচিহ্ণ

Scre

দুই বান্ধবী। দুজনেই বড়লোকের বেটি। একজনের নাম ঝর্ণা, আরেকজনের নাম বর্ণা। নামের মিল থাকার কারণে হাইস্কুল থেকেই দু’জনের বন্ধুত্বের বন্ধন শুরু। দুজন একইসাথে হাইস্কুল শেষ করে একই কলেজে ভর্তি হয়। লেখাপড়ার জীবনে আনন্দের সময়ই নাকি কলেজ জীবন। এই সময়টা খুবই ভাবনা চিন্তার সময়ও বটে। কারণ এই সময়টাতেই যার যার ভাগ্য নির্ধারণ করতে হয়। কে কী হবে! কে কোনটা নিয়ে পড়বে! কে ডাক্তার হবে আর কে ইঞ্জিনিয়ার হবে, এসব নিয়েই থাকে বেশি চিন্তায়!
আবার ধনীর ছেলে-মেয়েদের মধ্যে কেউ কেউ ওইসব চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে ভাবে অন্যটা। যেমন– কাকে ভালোবাসবে। কাকে ভালোবাসলে জীবনে বেশি সুখশান্তি ভোগ করা যাবে, ইত্যাদি ইত্যাদি।

তো ঝর্ণা আর বর্ণা তারা দুজনেই ছিলো ধনীর দুলারি। কাজেই তাদের চিন্তা-ভাবনাও কোন ধরনের ছেলেকে বিয়ে করলে সারাজীবন সুখে-শান্তিতে থাকতে পারবে। দুই বান্ধবীর মধ্যে ঝর্ণা একটু অহংকারী, আর বর্ণা বড়লোকের মেয়ে হলেও ও ছিলো খুবই বিনয়ী ও শান্ত! এই দুই বান্ধবী প্রায় দিনই কলেজের ক্লাস শেষে নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়েই আলাপচারিতায় মেতে ওঠে।

একদিন কলেজ চলাকালীন সময়ে দুপুরের টিফিনের সময় ঘনিয়ে এলো। টিফিনের সময় সবাই বের হয়ে যার যার মতো খাবার খেতে চলে গেলো। ঝর্ণা ও বর্ণা টিফিন করার এক ফাঁকে শুরু হয় তাদের ভবিষ্যৎ ভাবনার আলাপ।
ঝর্ণা–কিরে লেখাপড়া শেষ করার পর তুই কেমন ছেলেকে বিয়ে করবি?
বর্ণা–তুই আগে বল, কেমন ছেলেকে বিয়ে করবি?
ঝর্ণা–আমি? আমি একজন হ্যান্ডসাম সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ইঞ্জিনিয়ার অথবা বড় ব্যবসায়ী ছেলেকে বিয়ে করবো। যাতে সারাটা জীবন সুখে-শান্তিতে সংসার করে যেতে পারি। আমার সংসারে চাকরবাকর থাকবে। নিজস্ব বাড়ি থাকবে। গাড়িও থাকতে হবে। এবার বল তুই কেমন ছেলেকে বিয়ে করবি?’
বর্ণা–আমার বাড়ি-গাড়ির প্রতি লোভ লালসা নেই। শুধু একজন মনের মত মানুষ হলেই হবে।
ঝর্ণা–বলিস কি? টাকা-পয়সা ছাড়া শুধু মন দিয়ে কী করবি?
বর্ণা–আরে শোন, আমি যেই ছেলেকে বিয়ে করবো ওর মন আর আমার মন একসাথে বেঁধে মিলেমিশে সংসার করবো। টাকা-পয়সা যদি হয় হবে। নাহয় তো নেই। মনের মানুষ তো সবসময় কাছে থাকবে! তাতেই আমি খুশি থাকবো।
–আচ্ছা, যাদের টাকা-পয়সা প্রচুর আছে, তাদের কি মন নেই?
–অনেক আছে। আবার অনেকেরই থাকে না। তো যাদের মন থাকে না, তাদের থাকে ধনসম্পদ আর অর্থবিত্তের প্রতি খুবই নেশা। সেই নেশায় আসক্ত হয়ে তারা সময়তে নিজের স্ত্রী সন্তানকেও দূরে ফেলে দেয়। এমনকি নিজের জন্মদাতা পিতা গর্ভধারিণী মাকেও দূরে রাখে। আবার কেউ কেউ তো মা বাবার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বৃদ্ধাশ্রমেই রাখে। আমি বাবা এমনটা চাই না। আমি একটা গরিব মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে চাই। আর এরকম একটা ছেলে আমি নিজেই পছন্দ করে রেখেছি। সময় হলে তোকে বলবো।
–ওহ্ আচ্ছা, তা বল! কে তোর মনের মানুষটি? আমি কি তাকে চিনবো? বল না!
–হ্যাঁ, অবশ্যই চিনবি! ও-ই যে, সেদিন যে ছেলেটার সাথে আমি কথা বললাম, সেই ছেলেটা।
–আরে, ও-ই লোকটা তো নেহাৎ গরিব! কিছুদিন আগে ওর বেতন মওকুফ করার জন্য প্রিন্সিপালের কাছে আবেদনপত্র জমা দিয়েছিল। সেটা কি তুই জানিস?
–জানি! আরও জানি, ওর বেতন মওকুফের আবেদন পত্রটি মঞ্জুর হয়নি। তবে বেতন পরিশোধ ঠিকই হয়েছে।
–তা কীভাবে? আমি নিজেই দিয়েছি, ওর বকেয়া বেতনের টাকা। সেই টাকা দিয়েই ও বকেয়া বেতন পরিশোধ করেছে।
–তুই কিন্তু ভুল করছিস! ভুল করছিস এই কারণে যে, তুই একজন বিত্তশালীর মেয়ে। তোর বাবার অঢেল সম্পত্তি। শহরে নিজেদের ব্যবসা। গাড়ি আছে। তোর বাবার ব্যাংক ভর্তি টাকাও আছে। ও-ই ছেলেটার কী আছে?
–ও-ই ছেলেটার একটা সুন্দর মন আছে। এমন সুন্দর মন আর দশজনেরও নেই।
–আচ্ছা, নিজেদের তো একটা বাড়িও থাকা চা-ই-ই। সেটা কি আছে?
–আছে। তবে ওদের বাড়িঘরে কোনও সময় যাওয়া হয়নি আমার। তো তাও না থাকুক, সমস্যা নেই। একসময় হয়তো হয়েও যেতে পারে। তাতেও কোনও সন্দেহ নেই। কারণ আমিও শিক্ষিত। ছেলেটা গরিব হলেও শিক্ষিত। বিয়ের পর ভেবেচিন্তে একটাকিছু করা যাবে।
–নিজের ঘরদোর না থাকলে থাকবি কই?
–ছেলেটার মনটাই একটা বিশাল বাড়ি। আর সেই বাড়ির ঘরগুলো হলো ছেলেটার মনের ভেতরে থাকা মনিকোঠা। সেই কোঠাতেই দুজন খুব সুন্দরভাবে থাকতে পারবো। তাছাড়া আমার বাবার তো আছে। আমার বাবা কি আমাদের জন্য কিছুই করবে না।
–মনে কর যদি না-ই-বা করলো?
–তাতেও সমস্যা নেই। ও যদি একটা চাকরি করে, তাহলে আর সমস্যা কোথায়, বল? আর আমিতো শিক্ষিত। আমিও কি বসে থাকবো? দুজনের ভালোবাসা আর দুজনের দুই মন একসাথে বেঁধে নিজেদের ঘর বাঁধার কাজে গেলে যাবো। তার জন্য তুই আমার জন্য চিন্তা করবি না। আমি দোয়া করি তুই তোর স্বামীর সংসারে সবসময় সুখে থাকিস।
এই বলেই সেদিনের মতো দুই বান্ধবীর আলাপচারিতা শেষ করে যার যার গন্তব্যে চলে যায়।

একসময় ঝর্ণার বিয়ে হয় এক আমেরিকা প্রবাসী ছেলের সাথে। ঝর্ণার বিয়ের দাওয়াত বর্ণা পেয়েছিল। বিয়ের দিন বর্ণা একটা উপহারের বাক্স হাতে নিয়ে ঝর্ণার বিয়ের দাওয়াতে যায়। খাওয়া-দাওয়ার পর বর্ণা ঝর্ণার সাথে দেখা করতে গেলে, ঝর্ণা হাসিমুখে বর্ণাকে কাছে ডাকে। বর্ণা ঝর্ণার কাছে গিয়ে এতোদিনের বন্ধুত্বের শেষ হাসি বিনিময় করে পাশে বসে।

ঝর্ণা বর্ণার কাঁধে হাত রেখে বললো, ‘আমিতো এখানে বেশিদিন থাকছি না। বরের সাথেই আমেরিকা চলে যাবো। তোর সাথে তো আর শীঘ্রই যোগাযোগ হবে না। কিন্তু আমার মন, ভালোবাসা সবসময়ই তোর সাথে থাকবে। আর হ্যাঁ, যদি পারিস, তাহলে তোর ভবিষ্যৎ বিয়ের ভাবনাটা পরিবর্তন করে, ভালো ব্যবসায়ী অথবা ভালো একজন প্রবাসী ছেলের দিকে দৃষ্টি দিবি। গাঁও গেরামের ছেলে-পুলেরা তোর মতন মেয়ের মনের ইচ্ছা পূরণ করতে পারবে না, তা আমি শতভাগ নিশ্চিত! তো আর কিছুই আমার বলার নেই, আমার কথাগুলো সময়মতো ভেবে দেখবি’।

ঝর্ণার কথাগুলো বর্ণা শুধু শুনেই গেল, প্রত্যুত্তর কিছুই দেয়নি। শুধু ঘাড় কাত করে হ্যা ভাব প্রকাশ করলো। এরপর ঝর্ণাদের বাড়ি থেকে নিজের বাড়ি ফিরে এলো।

এদিকে বর্ণা বিএ পাস করে বাপের ঘরে। আর বর্ণার সেই মনের মানিক ছেলেটিও একই সময়ে বিএ পাস করে, লেখাপড়ার ইতি টানে। বিএ ফাইনাল পরীক্ষা শেষে ছেলেটা নিজেদের গ্রামের বাড়িতে চলে যায়। ছেলেটার গ্রামের বাড়িতে মা-বাবা আছে, কিন্তু বসতভিটা ছাড়া আর কোনও জায়গাজমি বর্তমানে নেই। যা ছিলো, তা বাড়ির মুরুব্বি একমাত্র ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পরের জমিতে দিন মজুরের খেটে খায়। তবুও ছেলেটার বাবার মনে কোনও দুঃখ নেই, আছে শুধু আশা! আশা হলো, ছেলেটা যদি ভালো একটা চাকরিবাকরি পায়, তাহলে জীবনের কষ্ট স্বার্থক হবে। এই আশা নিয়েই একমাত্র ছেলের মুখপানে চেয়ে আছে।

ছেলেটা বাড়ি গিয়ে বাবার এতো কষ্ট দেখে আর ভালো লাগছিল না। দুই-তিনদিন বাড়িতে থেকে আবার সে তার আগের গন্তব্যে পৌঁছে। গন্তব্য ছিলো কলেজের পাশে থাকা এক বাড়ির ব্যাচেলর বাসা। একটা ব্যাচেলর বাসায় তিন-চারজন মিলে থাকতো। খাওয়া-দাওয়া হতো মেসে। শহরে এসে ছেলেটা একটা চাকরির জন্য এখানে সেখানে আবেদন করার পাশাপাশি কলেজ বান্ধবী বর্ণার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে। এভাবে ক’দিন যেতে-না-যেতেই ভালো একটা রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানে ভালো বেতনে ছেলেটা চাকরি পেয়ে যায়। চাকরিটা ব্যাচেলর বাসায় আর মেসে খেয়ে ছেলেটা যখন মনোযোগ সহকারে করতে ছিলো, কলেজ পড়ুয়া বর্ণা নামের মেয়েটির আকুতি-মিনতি শুরু হয়।

বর্ণার আকুতি আর মিনতির কারণও ছিলো। কারণ হলো, বর্ণার বাবা। বর্ণার বাবা মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগে যায়। এই ঘটক, সেই ঘটক, এই পাত্র, সেই পাত্র করতে করতে একরকম মাথা নষ্টের পালা। যত পাত্রই দেখাক, বর্ণার প্রাত্র পছন্দ হয় না। বর্ণার মনের এরকম ভাব দেখে বর্ণার বাবা জিজ্ঞেস করে কোথাও কারো মন দিয়েছে কিনা! প্রত্যুত্তরে বর্ণা তার পছন্দের কথা জানালে, বর্ণার বাবা একরকম ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। বাবার এরকম অবস্থা দেখেই বর্ণা ছেলেটাকে তাড়াতাড়ি বিয়ে করার জন্য চাপ সৃষ্টি করে।

কিন্তু ছেলেটা একরকম নিরুপায়! নতুন চাকরি। বাড়িতে বাবার ঋণের টাকা। তার উপর আবার বাড়িতে ভালো ঘরদোর নেই। এমতাবস্থায় যদি ছেলেটা মা-বাবার অনুমতি ছাড়া বিয়ে করে নতুন বউ নিয়ে বাড়িতে ওঠে, তাহলে মা-বাবার মনে যদি কষ্ট পায়? ছেলেটা এরকম মনোভাব বর্ণাকে জানালে, বর্ণা বলে, ‘আমিই সবকিছু ম্যানেজ করে নিবো, তাতে কোনও সমস্যা হবে না। বর্ণার মুখে একথা শুনে ছেলেটা মা-বাবাকে না জানিয়ে একদিন কোর্ট ম্যারেজ করে ফেলে।

কোর্ট ম্যারেজ করে বর্ণাকে নিয়ে সোজা নিজের বাড়িতে চলে যায়। ছেলের সাথে এক যুবতী মেয়ে দেখে ছেলেটার মা-বাবা কাঁদতে শুরু করে। তখন ছেলেটার আগেই নতুন বধু বর্ণা নতুন শ্বশুর-শ্বাশুড়ির পায়ে ধরে ক্ষমা প্রার্থনা করে। এতে ছেলেটার মা-বাবার মনটা অনেক হালকা হয়ে যায়। তারপর তাদের চোখের জল মুছে নতুন বউকে সমাদরে ঘরে তুলে। ছেলেটা বর্ণাকে মা-বাবার কাছে সঁপে দিয়ে একদিন পরই আবার শহরের চলে যায়, নিজের নতুন চাকরি বাঁচানোর জন্য।

এর ক’দিন পরই বর্ণার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি বুঝতে পারছে যে, নতুন বউ ভাঙাচোরা ঘরে ওঠার পর থেকে গরিবের অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘর যেন দিনে দিনে আলোকিত হচ্ছে। শত অভাবের মাঝেও যেন অভাব নেই! ঘরে কিছু না থাকলেও কোনও হাহাকার নেই! সবদিক যেন পরিপূর্ণ! এছাড়াও ছেলের বউয়ের আচার-ব্যবহারে শ্বশুর শ্বাশুড়ি দুইজনই মহাখুশি! এভাবেই বর্ণা খেয়ে-না-খেয়ে শ্বশুর শ্বাশুড়ির খেদমত করে সংসার পরিচালনা করার ফাঁকে গ্রামের দু’একটা ছেলে-মেয়েদের প্রাইভেট পড়ানো শুরু করে। এতে যেই টাকা পায়, সব টাকাই বৃদ্ধ শ্বশুরের কাছে দিয়ে দেয়। বর্ণার স্বামীও শহর থেকে মাসে একবার বাড়িতে এসে চাকরি বেতনের অবশিষ্ট টাকা বৃদ্ধ মা-বাবার কাছে বুঝিয়ে দেয়। এভাবেই চলতে থাকে বর্ণার সংসার।

এদিকে বর্ণার বান্ধবী ঝর্ণা স্বামীর সাথে আমেরিকা গিয়ে সংসার শুরু করলেও, ঝর্ণার সেই সংসার বেশিদিন টিকেনি। বছর খানেক ঝগড়া-ঝাটির মধ্যে সংসার করে অবশেষে প্রবাসী স্বামীকে ছেড়ে দেশে ফিরে আসে। ঝর্ণা দেশে ফিরে এসেই সবার আগে বান্ধবী বর্ণার খবর জানতে বর্ণার বাবার বাড়িতে যায়। ঝর্ণা বর্ণার বাবার বাড়িতে গিয়ে দেখে বর্ণার মা-বাবা দুজনই গুরুতর অসুস্থ! বর্ণা মা-বাবা একমাত্র মেয়ে। বর্ণা ছাড়া বর্ণার মা-বাবার আর কোনও সন্তান নেই, বর্ণাই একমাত্র সন্তান। কিন্তু বর্ণা নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করাতে তার বাবা বর্ণাকে তাদের অসুস্থতার কথা জানায়নি। না জানালেও বর্ণার মা-বাবা মনে মনে সবসময়ই বর্ণা বর্ণা কাঁদে। কিন্তু প্রকাশ করে না। ঝর্ণাকে দেখে বর্ণার মা-বাবা জানতে চায়, ‘আমাদের বর্ণা কেমন আছে’?

প্রত্যুত্তরে ঝর্ণা বলে, ‘আমিতো এই ক’দিন হয় আমেরিকা থেকে এসেছি, খালু। আমি আপনাদের বাড়ি এসেছি বর্ণার সাথে দেখা করতে। তো ও এখন কোথায়’?

বর্ণার বাবা বিষ্মিত চোখে ঝর্ণার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘কী আশ্চর্য! তুমি কি কিছুই জানো না? ও-তো ওর কলেজ বন্ধু ছেলেকে বিয়ে করে তাদের গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে। ওখানেই নাকি স্থায়ীভাবে থাকবে। তুমি কি ওদের গ্রামের বাড়ি চেনো? যদি চেনো, তাহলে গিয়ে বলো, আমাদের দেখে যেতে আর আমার স্থাবর অস্থাবর সবকিছু বুঝে নিতে। ও ছাড়াতো আমাদের আর কেউ নেই’।

বর্ণার মা-বাবার কথা শুনে ঝর্ণা বুঝতে পেরেছে যে, ‘বর্ণা হয়তো স্বামীর সংসারে খুব ভালো আছে। যার কারণে ও-ই গ্রামের ছেলেটার হাত ধরে চলে যাবার পর ও এখানে আর আসেনি। তা-ই যদি হয়, তাহলে বর্ণার ভবিষ্যৎ চিন্তাই কি ঠিক ছিলো’?

এসব ভেবেচিন্তে ঝর্ণা কলেজ পড়ুয়া আরও সহপাঠীদের কাছ থেকে ছেলেটার গ্রামের বাড়ির ঠিকানা যোগাড় করে একদিন ছেলেটার গ্রামের বাড়ি রওনা দিলো। সংগ্রহ করা ঠিকানামতো ঝর্ণা ঠিকঠাক পৌঁছে গেলো, বর্ণাদের বাড়িতে। গিয়ে দেখে বাড়ির ঘরের বারান্দায় এক বৃদ্ধ বসে বসে হুক্কা ফুঁকছে। ঝর্ণাকে দেখামাত্র বারান্দায় বসা বৃদ্ধ লোকটা বউমা বউমা বলে ডাক দেয়ার সাথে সাথে বর্ণা ঘর থেকে বের হয়ে বললো, ‘আব্বা ডাকলেন’?
বর্ণনা শ্বশুর বললো, ‘হ্যাঁ বউমা, দেখতো মেয়েটি কাকে খুঁজছে’?

শ্বশুরের কথা কানে যেতেই বর্ণা ঘাড় ফিরিয়ে দেখে, এ যে ঝর্ণা! বর্ণা আর দেরি না করে দৌড়ে ঝর্ণার কাছে এসে বললো, ‘আমেরিকা থেকে কবে এলি, বল? কেমন-ই-বা আছিস’? ভালো আছিস তো? তোর স্বামীকে সঙ্গে আনিসনি কেন? লোকটা কোথায়? তোর সাথে এসেছে’?
ঝর্ণা বললো, ‘না, ও সাথে আসেনি। আমি একাই এসেছি, ক’দিন হলো মাত্র’।
‘কেন আসেনি’? জানতে চাইল বর্ণা। কিন্তু ঝর্ণা বর্ণাকে সদুত্তর কিছুই দেয়নি, শুধু এড়িয়ে গেল। এসব কথা বলাবলির মাঝেই বর্ণা ঝর্ণাকে ঘরে নিয়ে বসতে দিলো। খাবার দিলো। খাবার খাওয়ার মাঝেই ঝর্ণা বর্ণাকে তার স্বামীর কথা জিজ্ঞেস করলো, ‘তোর স্বামী কোথায়’?

বর্ণা বললো, ‘ও-তো শহরে চাকরি করে। মাসে একবার আসে। মাঝেমধ্যে প্রতিষ্ঠান থেকে কোনও বন্ধ পেলে চলে আসে’। ছুটি শেষে আবার চলে যায়। আমি আমার বৃদ্ধ শ্বশুর শ্বাশুড়ি নিয়ে বাড়িতেই থাকি। ঝর্ণা জিজ্ঞেস করলো, ‘তোর বাবার বাড়িতে যাসনে কেন? তোর বাবা-মা তো অসুস্থ। আমি আমেরিকা থেকে এসেই তোর খোঁজে তোদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। তোর মা-বাবা তোকে যেতে বলেছে। তাদের সমস্ত স্থাবর অস্থাবর হয়তো তোর নামেই দিয়ে দিবে। তুই সময় করে তোর স্বামীকে নিয়ে বাবার বাড়িতে যাবি। তোর মা-বাবা হয়তো রাগ-গোস্বা ভুলে গিয়ে তোকে বুকে টেনে নিবে’।

ঝর্ণার কথা শুনে বর্ণা কিছুক্ষণ চুপ করে বললো, ‘আচ্ছা ঠিক আছে, আমার মা-বাবাকে দেখতে যাবো। তবে তাদের ধন সম্পত্তির লোভে নয়। গর্ভধারিণী মা ও জন্মদাতা পিতার শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আর তাদের ভালোবাসার টানেই যাবো।

এখন বল, তুই কী সুখে আছিস’?
বর্ণার কথার জবাব দিতে গিয়ে ঝর্ণার দুচোখ বেয়ে জল ঝরতে লাগলো! একরকম কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো, ‘না বর্ণা, আমি ভালো নেই। কলেজ জীবনে আমার ভবিষ্যৎ ভাবনা ছিলো ভুল! তাই আমি প্রবাসী স্বামী পেয়েও সুখী হতে পারিনি, যতটা তুই গ্রামের ছেলেকে বিয়ে করে সুখী হয়েছিস। আমি সুখী হতে পারিনি এই কারণে যে, আমি একটু বেশি সুখী হতে চেয়েছিলাম। তাই আমি আজ দুখী! বর্ণা তুইই সুখী!

বাংলার পাট শ্রমিক

280

তারা বাংলার পাট শ্রমিক,
শ্রম দিয়ে পায় পারিশ্রমিক,
শরীরের ঘাম ঝরায় দৈনিক,
তারা জীবন যোদ্ধা সৈনিক।

তাদের শ্রমের মূল্য যতসামান্য,
তবুও যা পায় তাতেই হয় ধন্য,
বেশি পাবার আশা খুব সামান্য,
আশায় থাকেও না বেশির জন্য।

শ্রমজীবীরা পারিশ্রমিক পেলেই খুশি,
সবসময়ই থাকে মুখে হাসি,
যদিও খায় পান্তা পচা বাসি,
তবুও অল্পতেই হয় মহাখুশি।

.
ছবি: বাংলাদেশ সমবায় শিল্প সংস্থা জুট প্রেস থেকে তোলা।

বয়স বাড়ছে

28074

দিন যাচ্ছে তো হুহু করে বয়স বেড়ে যাচ্ছে
মাথার কালো চুলগুলো সাদা হয়ে যাচ্ছে
কিন্তু বয়স বাড়ছে তো বাড়ছেই।

দেখেছিলাম দুধদাঁত পড়ে নতুন গজাচ্ছে
বয়স বাড়ার সাথে এগুলোও পড়ে যাচ্ছে
কিন্তু বয়স বাড়ছে তো বাড়ছেই।

যৌবন কালের শারীরিক শক্তি কমে যাচ্ছে
ভালো খাবার খেলেও নিঃশক্তি মনে হচ্ছে।
কিন্তু বয়স বাড়ছে তো বাড়ছেই।

শরীরের টানটান চামড়ায় চর পড়ে যাচ্ছে
চোখের দৃষ্টিও দিনদিন যেন কমে যাচ্ছে
কিন্তু বয়স বাড়ছে তো বাড়ছেই।

শরীরের পশমগুলো সাদা হয়ে যাচ্ছে
পশমের সাথে ভ্রূ গুলোও সাদা হচ্ছে
কিন্তু বয়স বাড়ছে তো বাড়ছেই।

খাবারের তালিকা থেকে কিছু বাদ হচ্ছে
পেটের ক্ষুধাও দিনদিন যেন কমেই যাচ্ছে
কিন্তু বয়স বাড়ছে তো বাড়ছেই।

আত্মীয় স্বজনদেরর ডাকাডাকি কমে যাচ্ছে
সহধর্মিণীও দিনদিন অবহেলার ভাব দেখাচ্ছে
কিন্তু বয়স বাড়ছে তো বাড়ছেই।

.
ছবি: নারায়ণগঞ্জ পৌর শ্মশান ও পৌর গোরস্থান।

বৈশাখ থাকুক অন্তরে

28019

চৈত্রের শেষে বৈশাখের যখন ঘটে আগমন,
খুশিতে হয় দিশেহারা দেশের আপামর জনগণ।
ধুমধাম বাদ্য বাজে দেশের আনাচে কানাচে,
পহেলা বৈশাখে নতুন সাজে শিশুরাও নাচে।

বৈশাখের আগমনে শুরু হয় মেঘের ঘনঘটা,
শুভেচ্ছা জানায় বৈশাখ দিয়ে বৃষ্টির ফোটা।
বছরের বৈশাখ মাসে আকাশ থাকে মেঘলা,
সাদা মেঘগুলো হয় কালো বাঁধে জটলা।

তারপর সময় অসময়ে ঝরে ঝর ঝর,
হঠাৎ আসে তুফান উড়িয়ে নেয় বাড়িঘর।
ঝরো হাওয়ার সংকেত আসে নম্বরে নম্বরে,
মহাবিপদ সংকেত উঠে তখন দশের উপরে।

প্লাবিত হয় নিচু জমি জলোচ্ছ্বাস সাগরে,
তচনচ কাঁচা ঘর ফসলের ক্ষতি হয় হাওরে।
কৃষকের পাকা ধান ডুবে যায় পানিতে,
ফসল হারিয়ে কৃষক মরে কাঁদিতে কাঁদিতে।

তবুও আসুক বৈশাখ আসুক বছরে একবার,
হোক সে কালবৈশাখী তবুও থাকুক অন্তরে সবার।

.
ছবি সৌজন্য: প্রখ্যাত সাংবাদিক সাজেদ রহমান।

ম্যাচের কাঠি মানব কাঠি

2807

ছোট্ট একটা ম্যাচের কাঠি
সামান্যই হয় তার কাঠ,
এক ঘষাতেই জ্বলে আগুন
পুড়ে যায় বাজার হাট।

একবার যদি ধরে আগুন
নিভানোর আর সাধ্য নাই,
পুড়ো বাড়ি পুড়ে ঘর
পুড়ে হয় সব ছাই।

তেমনই হয় মানব কাঠি
বারুদ থাকে মানবের মনে,
যদি একবার জ্বলে উঠে
জ্বলে আগুন রাজার সিংহাসনে।

ঘষা হলো মনের যন্ত্রণা
আগুন হলো অবিচার অত্যাচার,
সইতে না পাড়লে লাগে আগুন
নিভানোর সাধ্য আছে কার?

শহরবাসীর দিনরাত

280

সকাল থেকেই শহরে উত্তাপ,
বহিরাগত মানুষের পদচারণায় মুখরিত সবসময়
আবার স্থানীয় মানুষের দৌড়ঝাঁপ।

কেউ কর্মে ব্যস্ত কেউ ধর্মে,
কেউ থাকে ধান্ধাবাজিতে কেউ মরে খেটে
সবাই ব্যস্ত স্বার্থের মর্মে।

দিনে রাস্তাগুলো খুবই ব্যস্ত,
শোঁ-শোঁ গাড়ির কানফাটা শব্দে অস্থির মানুষ
তবুও কর্মতেই থাকে ন্যস্ত।

সকাল-দুপুর পেরিয়ে সন্ধ্যা,
তারপর রাতের আগমণে ঘরে ফেরার পালা
কারোর ভালো কারোর মন্দা।

সন্ধ্যা পেরিয়ে গভীর রাত,
মহল্লার লাইটপোস্টে জ্বলে রয় বৈদ্যুতিক বাতি
যেন ভরা পূর্ণিমার রাত।

কোথাও তো নেই অন্ধকার,
চারদিক দিনের আলোয় আলোকিত এই শহর
তবুও নৈশপ্রহরী হাঁকছে হুশিয়ার!

সেইসাথে কুকুর করে ঘেউঘেউ,
নৈশপ্রহরীর মতো এদিক-ওদিক করে ছোটাছুটি
দেখে আসে নাকি কেউ।

যখন কুকুরগুলো ঘুমিয়ে পড়ে,
নৈশপ্রহরীর হয়ে পড়ে একা, বেড়ে যায় পায়চারি
হুশিয়ার হাঁকে জোরে জোরে।

চোর-ডাকাত নেই কোথাও,
আগেকার মতো নেই সিঁদকাটা চোরের সরদারও
শহরবাসীর ঘুম নেই তবুও।

ভাবনা কখন যে কি হয়,
না-জানি বাড়ির কোণায় কে যেন আছে লুকিয়ে
এমনই অযথা মনের ভয়!

রাত-বিরেতে বিকট শব্দ,
মুহূর্তেই ঘুম ভেঙে যায় অগণিত ঘুমন্ত শহরবাসীর
আবার এমনিতেই হয় নিস্তব্ধ।

এভাবেই কেটে যায় সারারাত,
ঘুম আর নির্ঘুমে, ভয় আর নির্ভয়ে পাড় করে-
শহরবাসী সারা বছর দিনরাত।

নিতাই বাবু
১০/০৫/২০২২ইং।

মা থাকুক মনের মণিকোঠায়

2800

মণিকোঠা শুধুই মণিকোঠা নয়। মনের এই মণিকোঠার আরও নাম আছে। যেমন: মনের মণিকোঠা, অন্তরের অন্তস্তল ও মানমন্দির।

তো যাই হোক, মনের মণিকোঠা বলতে আমরা যা বুঝি তা হলো, প্রত্যেক মানুষের মনের ভেতরে থাকা একটা কোঠা। এই কোঠার নামই ‘মণিকোঠা’ বা ‘অন্তস্তল’ বা ‘মানমন্দির’।

এই কোঠা ছোট্ট একটা চিলেকোঠাসম নয়। এই কোঠা বাড়ির ঘরের ভেতরে থাকা একটা কোঠাও নয়। এটা একটা বিশাল কোঠা! প্রত্যেক মানুষের মনের ভেতরে থাকা এই সুবিশাল কোঠায় ছোটবেলা থেকে এই মণিকোঠায় সর্বপ্রথম গর্ভধারিণী মা-ই স্থান পেয়ে থাকে। আর যদি ভূমিষ্ট হবার সাথে সাথে গর্ভধারিণী মা মারা যায়, তা হলে যিনি মায়ের আদর দিয়ে ছোট্ট শিশুটিকে লালনপালন করে, তিনিই প্রথমে ছোট্ট শিশুটির মনের মণিকোঠায় স্থান পায়।

তারপর এই মণিকোঠায় স্থান পায় বাবা-সহ নিজের সংসারে থাকা ঘনিষ্ঠজনেরা।

তারপর একটু একটু করে যখন হাঁটি হাঁটি পা পা করে বড় হতে থাকে, তখন এই মণিকোঠায় স্থান দেয়া হয় নিজ গোষ্ঠীর আত্মীয়স্বজনদের। পাশাপাশি স্থান পায় সহপাঠী বন্ধুবান্ধব ও পাড়া প্রতিবেশীর অনেকেই। তাই এই মণিকোঠাকে অন্তরের অন্তস্তল বা মানমন্দিরও বলা হয়।

প্রশ্ন করতে পারেন, তবে কি এই মণিকোঠায় আত্মীয়স্বজন, সহপাঠী বন্ধুবান্ধব ও পাড়া প্রতিবেশী সবাই স্থান পায়? উত্তর হ্যাঁ এবং না দুটোই আসে। যেসমস্ত মানুষ আত্মীয়স্বজন, সহপাঠী, বন্ধুবান্ধব ও পাড়া প্রতিবেশীদের স্থান দিতে পেরেছেন, সে সমস্ত লোকদের বলা হয় মহৎ প্রাণের মানুষ বা মহামানব। আর যারা সবাইকে স্থান দিতে পারে না, তারা নামমাত্র মানুষ বা মানব। এরমধ্যে আমিও কিন্তু একজন। তবে আমি আমার মা-বাবা,ভাই-বোনদের তো মনের মণিকোঠায় স্থান দিয়েই ছিলাম। এদের সাথে আত্মীয়স্বজন, ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব, সহপাঠী ও পাড়া প্রতিবেশীদের মধ্যে অনেকেরই স্বইচ্ছায় স্থান দিয়েছি এবং দেবার চেষ্টাও করেছি। এখন আমার মা নেই, বাবা নেই, ভাই নেই, চার বোনের মধ্যে দু’জনেই নেই। আমিও প্রায় শেষ বয়সে আসে যাবো যাবো বলে ভাবছি! তাই আমার এই মনের মণিকোঠা বা অন্তরের অন্তস্তল বা মানমন্দিরে স্থান দেয়া বা স্থান পাবার সময়-সুযোগ নেই।

কিন্তু আমার মতো মানুষ বা মানবের মধ্যে অনেকেই আছে, তাদের মনের মণিকোঠা একেবারেই সবসময়ের জন্যই খালি। এর কারণ হলো, এ সমস্ত মানুষেরা তাদের মনের মণিকোঠায় বা অন্তরের অন্তস্তল বা মানমন্দিরে কাউকে স্থান দিতে পারেনি। অর্থাৎ তারা কাউকে বিশ্বাসই করে না। পৃথিবীর সবাইকে এ সমস্ত মানুষেরা অবিশ্বাসের চোখেই দেখে থাকে। এমনকি তারা বিখ্যাত ধর্মগুরু বা বিখ্যাত আলেম বা খ্যাতিমান জ্ঞানী গুণীদেরও বিশ্বাস করতে পারে না। পারে না মানে একেবারে বিশ্বাস করেই না। তা হলে তারা নিজের মনের মণিকোঠায় আরেকজনকে স্থান দিবে কীভাবে? পারে না।

এ সমস্ত মানুষেরা শুধু নিজের সন্তানদেরই স্থান দিয়ে থাকে। নিজের সন্তানাদি ছাড়া অন্য কাউকে মনের মণিকোঠায় বা অন্তরের অন্তস্তল বা মানমন্দিরে স্থান বা বসাতে পারে না। তাই তাদের মনের মণিকোঠা বা অন্তরের অন্তস্তল বা মানমন্দিরে থাকা সুবিশাল জায়গা সবসময়ের জন্যই খালি পড়ে থাকে। এর বিনিময়ে কিন্তু তারাও কারোর মনের মণিকোঠায় বা অন্তরের অন্তস্তল বা মানমন্দিরে জায়গা পায় না।

কিন্তু এরা মনে করে থাকে যে, আমি সবার প্রিয় মানুষ! সবাই আমাকে সালাম দেয়, সম্মানও করে। আসলে কি এই অবিশ্বাসী মানুষদের মন থেকে ভালোবেসে সালাম দেয়? মানুষের মনের মণিকোঠায় স্থান দিয়ে কি সম্মান করে? মোটেই না। হয়তো সালাম দেয় অতি ভয়ে। আর নাহয় সম্মান করে কিছু সুবিধা ভোগের জন্য।

এখন আসি আসল কথায়। আসল কথা হলো, লেখাটা লিখলাম এই কারণে যে, বিশ্ব মা দিবসে বিশ্ববিখ্যাত সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেসবুকে দেখি মা-কে নিয়ে কত সম্মানজনক কথা। অনেকেই লিখছে, “আমার পৃথিবী আমার মা”। বাহ্, দারুণ কথা! আসলে কি সত্যি? এমনও-তো হতে পারে যারা এ সমস্ত লেখা বা স্ট্যাটাস দিচ্ছে, তাদের মধ্যে কারো কারোর গর্ভধারিণী মা বৃদ্ধাশ্রমে বসে বসে খোকা খোকা বলে ডাকছে আর কাঁদছে! অথচ মায়ের জন্য ফেসবুকে কত-না মায়াকান্না ভাব দেখাচ্ছে। এমন ভাব দেখানো লাভ কী?

আবার অনেকেই বিশ্ববিখ্যাত সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেসবুকে লিখে থাকে, “তোমাকে আমার মনের মণিকোঠায় স্থান দিয়েছি”। আসলে কি সত্যি? জানি না! সত্যিই জানি না! সত্যি হতেও পারে, মিথ্যাও হতে পারে।

তো যাই হোক, যে যেভাবে পারুন লিখতে থাকুন। আর যদি পারেন নিজের মনের মণিকোঠায় বা অন্তরের অন্তস্তল বা মানমন্দিরে নিজের মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী, সহপাঠী, ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধবদের বিশ্বাস করে ভালোবেসে স্থায়ীভাবে স্থান দেয়ার চেষ্টা করবেন। কারণ মনের মণিকোঠা বা অন্তরের অন্তস্তল বা মানমন্দিরে ছোট্ট খানি জায়গা নয়। সুবিশাল জায়গা! এতো বড় জায়গায় যেকেউ ইচ্ছে করলে এই পৃথিবীর সবাইকে স্থান বা জায়গা দিতে পারে। যদি স্থান বা জায়গা দেয়ার মতো মন থাকে।

বি:দ্র: লেখাটা পড়ে কেউ মনে কষ্ট নিবেন না। যদি আপনার মানমন্দিরে আঘাত লেগে থাকে, তা হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে ক্ষমা করে দিবেন।

বিশ্ব মা দিবসের শুভেচ্ছান্তে: নিতাই বাবু।

সয়াবিন কি আয়ুর্বেদীয় জাফরান?

28

তেল দিয়ে ভাজে আলু পটল বেগুন
তাই তেলের বাজারে লাগলো আগুন,
শুনেছি তেলের দামও বেড়েছে দ্বিগুণ
দামে সরিষার চেয়ে সয়াবিন বহুগুণ!

সয়াবিন তেল দিয়ে চলে রান্নার কাজ
তাইতো সয়াবিন তেলের সংকট আজ,
হটাৎ সয়াবিনের তেলের বেড়েছে ঝাঁজ
দেশের মানুষের মাথায় যেন পড়েছে বাজ।

আচ্ছা, সয়াবিন কি আয়ুর্বেদীয় জাফরান?
যদি নাহয় জাফরান, সয়াবিনের ব্যবহার কমান!,
বাংলার বাজার সিন্ডিকেট গুলোকে দমান
বেশি ব্যবহার বেশি কেনার অভ্যাস সামলান!

সয়াবিন তেল নয় জীবন বাঁচানোর মহৌষধ
যেমন- দিনে সেবন করতে হবে তিন চামচ ঔষধ,
সেবনে গড়মিল হলেই মনে হয় যমে করবে বধ
আসলে কিন্তু নয়, আসুন সয়াবিনকে করবো রধ।

বিশ্বাসে বিশ্বাস আনে

2801

বিশ্বাসে নাকি বিশ্বাস আনে
অবিশ্বাসে বেড়ে যায় দূরত্ব,
চোরকে যে করে বিশ্বাস
চোরও দেয় বিশ্বাসের গুরুত্ব।

বিশ্বাসে যায় মক্কা-মদিনায়
করে হজ্ব দেয় জাকাত,
বিশ্বাসে যায় গয়া-কাশি
মাগে মুক্তি করজোড়ে হাত।

বিশ্বাসে করে মূর্তি পূজা
যায় মন্দিরে করে ভক্তি,
বিশ্বাসে করে নামাজ রোজা
অবিশ্বাসে মেলে না মুক্তি।

বিশ্বাসে হয় কেনা বেচা
দলিলপত্র আরও কতো কারবার,
বিশ্বাসে হয় লোকের লেনাদেনা
অবিশ্বাসে বাড়ে মনের হাহাকার।

বিশ্বাসে ঘুরে সাধু-সন্ন্যাসী
ধ্যানে বসে করে সাধনা,
বিশ্বাসে ঘুরে ফকির মাস্তান
অবিশ্বাসে মিটে না মনের বাসনা।

বিশ্বাসে হয় প্রেম পিরিতি
হয় ভালোবাসা শুভ পরিণয়,
বিশ্বাসে হয় ঘর সংসার
অবিশ্বাসে তো কিছুই সম্ভব নয়!

পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের শুভেচ্ছা

Eid Mubarak

ঈদ ঈদ ঈদ, রাত পোহালেই ঈদ! মানে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। সারা বিশ্বে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের বছরে দুটি পবিত্র ঈদ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে সুখ। ঈদ মানে খুশি।

ঈদ-উল-ফিতর ও ঈদ-উল-আযহা দুটি ঈদ’ই শান্তি, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের শিক্ষা দেয় বলে আমি বিশ্বাস করি। এ-ও বিশ্বাস করি যে, প্রতিটি ঈদ-এ হিংসা-বিদ্বেষ ও হানাহানি ভুলে মানুষ মানুষের প্রতি সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। প্রতিটি ঈদ’ই ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকলের জীবনে আনন্দের বার্তা বয়ে আনে এবং ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই ঈদের আনন্দে মেতে ওঠে।

বলে রাখা ভালো যে, “আমি একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী (হিন্দু)। তাই বলে কী? এদেশের প্রতিটি ঈদ উৎসব’ই আমার উৎসব! সকলের মতো আমিও ঈদ’র আনন্দে মেতে উঠি। প্রতিটি পবিত্র ঈদ’র বন্ধ খুবই দারুণভাবে হেসে-খেলে উপভোগ করতে পারি। কারণ, সরকার আমাদের কিছুকিছু পূজা-পার্বণের বন্ধ দিলেও, আমি আমার কর্মস্থল থেকে কোনও পূজোর বন্ধ বা ছুটি পাই না। কাজেই বছরে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের দুটি পবিত্র ঈদ’ই আমি খুব আনন্দে উপভোগ করি। তাই প্রতিটি ঈদ উৎসব’ই আমার উৎসব মনে করি”।

আসুন আমরা এই পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে হিংসা, অহংকার, বৈষম্য ও ধর্মীয় বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে সবাই পবিত্র ঈদ’র আনন্দটা ভাগাভাগি করে নিই! সবাই মিলে মেতে উঠি পবিত্র এই ঈদ’র আনন্দে! মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি, ঈদ সকলের জীবনে বয়ে আনুক সুখ সমৃদ্ধি ও অনাবিল আনন্দ।

পরিশেষে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে আমার সকল মুসলমান বন্ধুবান্ধব ও দেশের সকল ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও “ঈদ মোবারক”!

ঈদ-উল-ফিতরের শুভেচ্ছান্তে: নিতাই বাবু।
৩০শে রমজান, ২ই মে-২০২২ইং।

ভূমিহীন ছিলাম না, বর্তমানে ভূমিহীন

27924-1 আমি ভূমিহীন ছিলাম না। এদেশের আরও দশজনের মতো আমারও বাপ-দাদার ভিটেমাটি ছিলো। বাড়ি ছিলো। সুন্দর পরিপাটি উঠোন ছিলো। থাকার মতো ঘর ছিলো। কিন্তু আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর ধরে আমরা এদেশে ভূমিহীন নাগরিক হয়ে বসবাস করছি। বর্তমানে আমার বাবা, মা, বড় দাদা, বেঁচে নেই। আমার বাবার পুরিতে পুরুষ বলতে আমিই একমাত্র পুরুষ। আমরা ছিলাম দুই ভাই, চার বোন। দু বোনের মধ্যে দুইজন পরলোকে, আর দুই বোন এখনো বেঁচে আছে। আমি ছিলাম আমাদের সংসারে সবার ছোট। আমি ভূমিহীন বাস্তুহারা হয়ে পরের বাড়িতে ভাড়া থেকে কোনোরকমভাবে বেঁচে আছি।

ভূমিহীন হওয়ার ইতিহাস:
আমার নাম শ্রী নিতাই চন্দ্র পাল। তবে সবাই আমাকে “নিতাই বাবু” বলেই ডাকে। তাই আমি নিতাই বাবু নামে সবার কাছে, আর সবখানে এই নামে পরিচিত। আমার বাপ-দাদার ভিটেমাটি ছিলো নোয়াখালী জেলার বজরা রেলস্টেশনের পশ্চিমে মাহাতাবপুর গ্রামে। আমার জন্ম ১৯৬৩ সালের ৮ জুন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা সপরিবারে গ্রামের বাড়িতেই ছিলাম। আমি তখন তৃতীয় শ্রেণি পাস করে সবেমাত্র চতুর্থ শ্রেণিতে ক্লাস শুরু করেছিলাম। তখনই লেগে যায় স্বাধীনতার দাবিতে তুমুল যুদ্ধ। তখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান’র (বর্তমান বাংলাদেশ) আপামর জনতা ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর উপর।

চলতে থাকে যুদ্ধ আর যুদ্ধ। চারদিকে জ্বলতে থাকে আগুন, আর পাক বাহিনীদের গুলিতে মরতে থাকে অসংখ্য নিরীহ মানুষ। আমার বাবা তখন চাকরি করতেন নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন চিত্তরঞ্জন কটন মিলে। আর বড়দা চাকরি করতেন নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানাধীন আদর্শ কটন মিলে। কিন্তু যুদ্ধের কারণে দু’জনেই বাড়িতে আসতে পারছিলেন না। এরমধ্যে বাবাকে না জানিয়ে আমার বড়দা চলে যায় ভারতে। ভারতে গিয়ে বড়দা নাম লেখায় কোনোএক শরণার্থী শিবিরে। এর একমাস পর বাবা অতি কষ্টে সহকর্মীদের কাছ থেকে ধারদেনা খালি হাতে বাড়িতে আসে। বাড়িতে এসে ধারদেনা করে মুড়ির ব্যবসা শুরু করে।

মনে পড়ে, একদিন বাবার সাথে আমিও বাজারে যেতে বায়না ধরলাম। বাজারটা ছিলো আমাদের বাড়ির পশ্চিমে আমিষারা বাজার। আমার মর্জিতে বাবা আর আমাকে সাথে না নিয়ে পারলেন না। খুব খুশি মনে বাবার সাথে চলে গেলাম আমিষারা বাজারে। বাজারে আরও আরও মুড়ির ব্যবসায়ীদের সাথে আমার বাবাও মুড়ির বস্তা খুলে দাঁড়িপাল্লা রেডি করে মুড়ি বিক্রি করার জন্য দাড়িয়ে আছে। আমিও দাড়িয়ে আছি বাবার সাথেই। আরও আরও মুড়ির ব্যবসায়ীদের মতো আমার বাবাও মাত্র কয়েক সের(কেজি) মুড়ি বিক্রি করেছে মাত্র। এমন সময়ই বাজারে লেগে যায় হুলুস্থুল, আর দৌড়াদৌড়ি!

কী হলো? লোকজন দৌড়াদৌড়ি করছে, আর বলছে, ‘পাকবাহিনী বাজারে হানা দিয়েছে’। আমার বাবা তাড়াতাড়ি করে মুড়ির বস্তা বেঁধে ফেললো। কিন্তু মুড়ির বস্তা মাথায় উঠিয়ে দেয়ার মতো কোনও লোক এগিয়ে আসছিল না। আমি বাবার জামা চেপে ধরে দাড়িয়ে আছি। এমন সময়ই দুই-তিন জন পাকবাহিনী এসে তাদের হাতে থাকা রাইফেল দিয়ে আমার বাবার বুকে পিঠে তিন-চারটা বাড়ি মারল। তখন আমি হাউমাউ করে কাঁদছিলাম। আমি তখন ভেবেছিলাম ওরা পাকবাহিনীরা হয়তো আমার বাবাকে মেরেই ফেলবে। এই ভেবে আমি কাঁদতে কাঁদতে যিনি (পাকবাহিনী) আমার বাবাকে রাইফেল দিয়ে মারছিল, তার পায়ে জড়িয়ে ধরে বাবাকে না মারার জন্য আকুতি মিনতি করতে লাগলাম।পাকবাহিনী যিনি বাবাকে মারছিলেন, তিনি আমার কান্না দেখে বাবাকে আর না মেরে চলে যায়।

পাকবাহিনীরা চলে যাবার পর দেখি, আমার বাবা তখনও মুড়ির বস্তার পাশে মাটিতে শুয়ে আছে। আমি কাঁদতে কাঁদতে বাবার হাত ধরে টানতে লাগলাম। বাবা তখন আমাকে ধরে আস্তেধীরে উঠে বসলো, কিন্তু দাঁড়াতে পারছিলেন না। বাবার দু’চোখ বেয়ে তখন জল ঝরছিল। মুহুর্তের মধ্যেই পুরো বাজারের চারদিক তখন মানুষ শূন্য হয়ে গেলো। মুড়ির বস্তা মাথায় উঠিয়ে দেয়ার মতো কোনও লোক ধারেকাছেও নেই। অনেকক্ষণ পর একজন মহৎ মানুষ আমাদের সামনে দিয়ে তাড়াহুড়ো করে হেঁটে যাচ্ছিল। আমি তখন কেঁদে কেঁদে ও-ই লোকটাকে আমাদের মুড়ির বস্তাটা বাবার মাথায় উঠিয়ে দেয়ার জন্য মিনতি করলাম। আমার কান্না আর আমার বাবার অবস্থা দেখে লোকটার দয়া হলো। লোকটা ধরাধরি করে বাবার মাথায় মুড়ির বস্তাটা উঠিয়ে দিলে। তারপর আমি আর আমার বাবা সেদিন খুব কষ্ট করে বাড়িতে ফিরে আসি।

বাড়িতে আসার পর আমার বাবা পুরোপুরিভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লো। বাবার সেই অসুস্থ শরীর সুস্থ হয় প্রায় একমাস পরে। একমাস পর বাবা আবারও অন্যের কাছ থেকে ধারদেনা করে এক মণ মুড়ির ধান কিনে আনে। সেই ধান সিদ্ধ করে শুকিয়ে নিজেদের ঢেকিতে ধান ভাঙে। সেই ধান ভাঙানো চাল দিয়ে আবার মুড়ি তৈরি করে ভয়ে ভয়ে গ্রামের আশেপাশে থাকা বাজার গুলোতে গিয়ে মুড়ি বিক্রি শুরু করে। এরপর থেকে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পুরোটা সময় আমাদের সংসার এভাবেই কষ্টেসৃষ্টে চলতে থাকে।

১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে এদেশের নিরস্ত্র মুক্তিবাহিনী পাক বাহিনীদের পরাস্ত করে বিজয়ের নতুন পতাকা উত্তোলন করে। দেশ পরাধীন মুক্ত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ নামে বিশ্ব মানচিত্রে স্থান পায়। এর দিনেক পনেরো দিন পর আমার বাবা গ্রামের বাড়ি থেকে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হয় এবং নিজের কর্মস্থলে যোগদান করে। আমার বড় দাদাও ভারত থেকে এসে নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানাধীন আদর্শ কটন মিলে নিজের কর্মস্থলে যোগদান করে।

মাসেকখানি পর আমার বাবা ও বড়দা যুদ্ধ চলাকালীন নয় মাসের বেতন একসাথে পেয়ে যায়। আর সেই টাকা থেকে কিছু টাকা তাঁরা হাতে রেখে বাদবাকি টাকা বাড়িতে পাঠায়। সেই টাকা হাতে পেয়ে আমার মা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ধারদেনা করা মানুষের দেনা পরিশোধ করে কোনরকমভাবে সংসার চালাতে থাকে। এভাবে কেটে গেলো আরও কয়েকটি মাস।

এরমধ্যে গ্রামে দেখা দেয় চোর-ডাকাতের উৎপাত। সেই উৎপাত আমাদের বাড়িতেই বেশি দেখা দিলো। কারণ, যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমাদের বাড়িতে প্রতিদিন সন্ধ্যায় থেকে গভীর রাত পর্যন্ত স্থানীয় মুক্তিবাহিনীরা আড্ডা দিতো। এই আড্ডাকে অনেকেই মনে মনে ভাবতো, আমাদের বাড়িতে মুক্তিবাহিনীরা ক্যাম্প বসিয়েছে। আসলে কিন্তু তা নয়! মূলত মুক্তিবাহিনীরা সন্ধ্যাকালীন সময়টাই শুধু আমাদের বাড়িতে বসে আমার বড় জেঠার সাথে সময় কাটাতেন।

যুদ্ধকালীন সময়ে আমাদের বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের আড্ডার মূলকারণ ছিলো আমার বড় জেঠা। আমার বড় জেঠামশয় একসময় তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান সরকারের পুলিশে চাকরি করতেন। তিনি উর্দু ও হিন্দি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারতেন। আবার তিনি ছিলেন খুবই রসিক মানুষ। রসিকতা ছিলো আমার জেঠার নিত্যসঙ্গী। সেই কারণে স্থানীয় মুক্তিবাহিনীরা প্রায় প্রতিদিনই সন্ধ্যার পরপর আমাদের বাড়িতে এসে বাড়ির উঠোনে বসে গল্পগুজব করতো। তাদের সেই গল্পের ফাঁকে আমার মা, নাহয় আমার জেঠিমা চা’র আয়োজন করে সবাইকে চা দিতো। চা পান করার সাথে চলতো হুক্কা টানার ব্যবস্থা। এভাবে রাত গভীর পর্যন্ত চলতো সেই আড্ডা।

সেই আড্ডাই কাল হয়ে দাঁড়ায় দেশ স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে। স্থানীয় রাজাকার বাহিনীরা মনে করতো আমাদের বাড়িতেই ছিলো মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প। এরকম মনে করা থেকেই স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে গ্রামের আরও আরও বাড়ি থেকে আমাদের বাড়িতেই ছিলো ডাকাতদের সবচেয়ে বেশি হানা।

একপর্যায়ে চোর-ডাকাতের উৎপাত থেকে বাঁচতে আমার জেঠা-সহ আমার বাবা কাকারাও পুরো বাড়ি স্থানীয় বাদশা মিয়া নামে এক কন্ট্রাক্টরের কাছে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দেয়। আমার দুই জেটা চলে যায় ভারতে, দুই কাকার মধ্যে ছোট কাকা চলে যায় পার্বত্য চট্টগ্রাম গুঁইমারা বাজার। মেজো কাকা পারি জমায় চাঁদপুর। আমরা মনে হয় ১৯৭৩ সালের মাঝামাঝি সপরিবারে চলে আসি নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানাধীন লক্ষ্মণ খোলা গ্রাম সংলগ্ন আদর্শ কটন মিলে। সেই থেকে আমরা হয়ে যাই ভূমিহীন।

বড়দা’র চাকরির সুবাদে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করি আদর্শ কটন মিলের শ্রমিক কলোনিতে। ১৯৭৪ সালে আমি লক্ষ্মণ খোলা ফ্রি প্রাইমারি স্কুল চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হলাম। লেখাপড়া অতি কষ্টে ঠিকঠাকমতো চলছিলো। প্রাইমারি পাস করে ঢাকেশ্বরী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়েও ভর্তি হয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ আদর্শ কটন মিলের শ্রমিক কলোনিতে থাকা অবস্থায় আমার বাবা পরলোকগমন করেন। শেষ হয়ে যায় আমার লেখাপড়া!নতুন করে শুরু হয় বড়দা’র পাশাপাশি সংসারের আহার যোগাড়ের ধান্দা।

লেখাপড়ার পাশাপাশি আদর্শ কটন মিলের গেইটে বাদাম বিক্রি-সহ আরে অন্যান্য কাজ করতে থাকি। সময়তে রাজ জোগালির কাজ, আবার সময়তে আদর্শ কটন মিলে দৈনিক ১২ টাকা হাজিরায় কাজও করেছি অনেকদিন। কিন্তু কয়েক মাস পর হঠাৎ আদর্শ কটন মিলস সরকার কর্তৃক যখন বিক্রি হয়ে গেলে, আমরা সপরিবারে নিঃস্ব হয়ে পড়ি।

তখন আমার লেখাপড়ার ইতি টেনে সপরিবারে চলে যাই শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম পাড় নগর খাঁনপুর। নগর খাঁনপুর ছোট একটা ঘর ভাড়া করে থাকতে থাকি। এই ভাড়া থাকাকালীন অবস্থাতেই অবিবাহিত দুই বোনের বিয়ে দিই, মানুষের কাছে হাত পেতে সাহায্য তুলে। তখন আমার বড়দা কিল্লার পুল ফাইন টেক্সটাইল মিলে তাঁতের কাজ করে। আমি চালাতাম নারায়ণগঞ্জ শহরে রিকশা। রিকশা চালানো বড় পরিশ্রম! প্রতিদিন রিকশা চালানো যেতো না। যেদিন রিকশা না চালাতাম, সেদিন কিল্লার পুল ফাইন টেক্সটাইল মিলে গিয়ে বড়দা’র সাথে তাঁতের কাজ শিখতাম। একসময় আমি তাঁতের কাজ শিখে রিকশা চালানো বাদ দিয়ে টেক্সটাইল মিলে কাজ করতে থাকি।

এরপর ১৯৮৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে আমি বিক্রমপুর সুবচনী নয়াবাড়ি গ্রামের এক দরিদ্র হিন্দু পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করি। শুরু করি নতুন জীবন নতুনভাবে আবিষ্কার করার চেষ্টা। কিন্তু না, ভাগ্য আমার অনুকূলে ছিলো না। আমার এক মেয়ে এক ছেলে। দশ দুয়ারে হাত পেতে মানুষের সাহায্য সহযোগিতায় মেয়ে বিয়ে দিয়েছি, ২০০৭ সালে গোপালগঞ্জ সদর থানার এক গ্রামে। ২০১১ সালের মে মাসে আমার একমাত্র ছেলে হঠাৎ মারা যায়।তখন আমরা স্বামী-স্ত্রী হয়ে যাই নিঃস্ব এতিম। আমাদের সমাধিতে প্রদীপ জ্বালানোর মতো আর কেউ রইল না।

আমার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ভাবনা:
বর্তমানে দুঃখ-কষ্টের মাঝেই পরের বাড়িতে ভাড়া থেকে দিনাতিপাত করছি। বয়স হয়েছে ৬০ এর কাছাকাছি। চাকরি করি ছোটখাটো একটা সমবায় সমিতিতে। বেতন নামমাত্র বললেই চলে। নিজের সহধর্মিণীও ছোটখাটো একটা গার্মেন্টসে চাকরি করছে। সহধর্মিণীর শারীরিক অবস্থাও ভালো নয়! ক’দিন পর পরই অসুস্থ হয়ে পড়ে। দু’জনেরই জীবনের পথচলা হয়তো শেষ হতে চলছে। কিন্তু ভবিষ্যত কী? যদি এরই মধ্যে সহধর্মিণী দুনিয়ার মায়া ছেড়ে চলে যায়? তা হলে তো এই বুড়ো বয়সে আমি পথের কাঙাল। আর যদি আমার কালকেই চাকরিটা চলে যায়, তা হলে আমার আবার রিকশা নিয়ে শহরে ঘুরতে হবে। আর নাহয় ভিক্ষার ঝুলি কাঁধে নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে, তা একশো-তে-একশো। আর যদি আমি দুনিয়ার মায়া ছেড়ে চলে যাই, তা হলে আমার সহধর্মিণী বুড়ো বয়সে হবে ভিখারিণী। এছাড়া আর কোনও উপায় নেই। তাই আমি মনে করি উপায় শুধু একটাই। আর তা হলো মমতাময়ী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করা।

আমার বর্তমান মনোবাসনা:
বর্তমানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। তিনি আমার মতো এদেশের হাজার হাজার অসহায় গরীব ভূমিহীন মানুষকে ঘর উপহার দিয়েছেন। হয়তো আরও দিবেন। মমতাময়ী জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, “এদেশে কেউ গৃহহীন ভূমিহীন থাকবে না”৷ তা হলে এদেশের আরও আরও অসংখ্য ভূমিহীনদের মধ্যে আমিও একজন ভূমিহীন নাগরিক। আমিও তো একটা ঘর পাওনা।

যদি আমি অধম মমতাময়ী জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের একটা ঘর পেতাম, তা হলে ভবিষ্যতে ভিক্ষা করা থেকে বাঁচতাম। আর জীবনের অবশিষ্ট সময়টুকু নিশ্চিন্তে কাটাতে পারতাম। খেয়ে থাকি আর না খেয়ে থাকি প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘরে তো প্রাণ ভরে শ্বাস নিয়ে ঘুমাতে পারতাম। কিন্তু আমার এই আর্জি এই বাসনা কি কখনো পূর্ণ হবে। আমার এই আর্জি কি মমতাময়ী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হবে? এজন্য কেউ কি আমাকে সাহায্য সহযোগিতা করবে?

নিতাই বাবু
০১/০৫/২০২২ইং।

প্রতি বছর পবিত্র ঈদ কেন ১০-১১ দিন আগে হয়?

27924 আচ্ছা, প্রতিটি ঈদ কেন প্রতিবছর ১০-১১ দিন আগে হয়? যেমন: গত হয়ে যাওয়া ঈদ-উল-ফিতর অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৪ই মে ২০২১ইং। একবছর পরপর যদি ঈদ হয়, তা হলে তো এ বছর ১৪ ই মে অথবা মে মাসের ১৫ তারিখ পবিত্র ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তা-ই নয় কি? কিন্তু সেটা না হয়ে এবার কেন ২ বা ৩ মে ২০২২ ইং ঈদ-উল- ফিতর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এটা একটু ভাবার বিষয় নয় কি?

তবে হ্যাঁ, এবিষয়ে ভাবনা-চিন্তার কিছুই নেই! কারণ, এখানে সবকিছুই চাঁদের হিসাবে অর্থাৎ চান্দ্র মাসের হিসাবেই হচ্ছে। তাই প্রতিবছর গত বছরের ১০-১১ দিন আগেই পবিত্র মাহে রমজান-সহ ঈদ-উল-ফিতর অথবা ঈদ-উল-আযহা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কোনো-কোনো বছর মাহে রমজান শীতকালে আরম্ভ হয়। আবার কোনও বছর প্রচন্ড রোদে ঝড়-বৃষ্টি আর বান-তুফানেও মাহে রমজান আরম্ভ হয়ে থাকে। কিন্তু ইংরেজি অথবা বাংলা সনের কোনও নির্দিষ্ট সময়ে হচ্ছে না। এর কারণ শুধু একটাই। আর তা হলো চন্দ্র মাসের হিসাব।

আমরা জানি ইংরেজি ৩৬৫ দিনে একবছর। আবার কোনো-কোনো বছর ৩৬৬ দিনেও হয়ে থাকে। আর তা হয় প্রতি চার বছর পরপর। আরও সহজভাবে বললে বলতে হয়, যেকোনো ইংরেজি সালকে অর্থাৎ ২০২০ সালকে ৪ দিয়ে ভাগ করলে যদি ভাগফল শেষে অবশিষ্ট কোনও সংখ্যা না থাকে, তা হলে সে বছর বা সেই ইংরেজি সালই হবে ৩৬৬ দিনে। যাকে বলে লিপ ইয়ার। ঐ বছরই ফেব্রুয়ারি মাস ২৮দিনের পরিবর্তে ২৯ দিন হবে। যেমন: ২০২৪÷৪= ৫০৬ এখানে ভাগফলের শেষে কোনও অবশিষ্ট সংখ্যা নেই। তার মানে হলো, ২০২৪ ইংরেজি সাল হবে ৩৬৬ দিনে, আর ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস হবে ২৯দিনে। সোজা কথায় ২০২৪ ইংরেজি সাল হবে লিপ ইয়ার।

এবার আসি আমাদের বাংলা সন নিয়ে আলোচনায় : জানা যায় ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে বাংলা একাডেমি ইংরেজি বর্ষের সাথে মিল রেখে বাংলা বর্ষপঞ্জি সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বাংলা সনের হিসাব সংস্কারের একটি সুপারিশও প্রণয়ন করেছে। পত্রিকার খবরের মাধ্যমে জানা যায় যে, বাংলা সনের প্রস্তাবিত সংস্কারে বৈশাখ থেকে আশ্বিন ৬ মাস ৩১ দিনে গণনা করা হবে। ফাল্গুন ব্যতীত কার্তিক থেকে চৈত্র ৫ মাস হবে ৩০ দিনের। ২৯ দিনে ফাল্গুন ধরা হবে। বছরে দিনের সংখ্যা ৩১x৬ (১৮৬) + ৩০ x ৫ (১৫০) +২৯= ৩৬৫ ঠিক রাখা হয়। বাংলা একাডেমির ভাবনা মতে এ প্রস্তাবের ফায়দা হল ৮ ফাল্গুন ও ২১ ফেব্রুয়ারি, ১২ চৈত্রে ২৬ মার্চ, ২৫ বৈশাখে ৮ মে, ১১ জ্যৈষ্ঠে ২৫ মে এবং ১ পৌষে ১৬ ডিসেম্বর প্রাতিষঙ্গিক হবে। কিন্তু একসময় বাংলা বর্ষেও কোনো-কোনো মাস ৩২ ও ২৯দিনেও হতো। তবে এখন আর সেটা নেই। তবু্ও কিছুকিছু হিন্দুরা সেই আগেকার বাংলা বর্ষপঞ্জিই অনুসরণ করে আসছে। এর পেছনে আবার একটা কারণও আছে। কারণ হলো, ইংরেজি তারিখ গণনা শুরু হয় রাত ১২টার পর সময় ০০ থেকে। আর বাংলা তারিখ গণনা শুরু সূর্যোদয়ের সাথে। তাই অনেক হিন্দুরা ক্যালেন্ডারের ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ উদযাপন না করে এর পরদিন তাদের ধর্মীয় আচার-আচরণ সবই পালন করে থাকে।

তা করুক, সেটা যার যার ব্যক্তিগত ভাবমূর্তির আওতায় পরে। তা হলে বুঝাই গেলো যে বাংলা এবং আন্তর্জাতিক ইংরেজি সাল হুবহু একই নিয়মে চলছে। ব্যতিক্রম শুধু ইংরেজি চার বছর পরপর লিপ ইয়ার। যা হয় ৩৬৬ দিনে।

এবার হিজরি সন নিয়ে আলোচনা : হিজরি সন হল চাঁদের হিসাবে। যাকে বলা হয় ইসলামি চন্দ্রমাস। এই হিজরি সাল হলো ইসলামী চন্দ্র পঞ্জিকায় ব্যবহৃত পঞ্জিকা। জানা যায় যার প্রথম বছর শুরু হয়েছিল ৬২২ খ্রিস্টাব্দ থেকে। সেই থেকে হিজরি মুহররম মাসকে ইসলামি নববর্ষের প্রথম মাস ধরা হয়।

জানা যায় হিজরি সালের এই প্রথম বছরে মহানবী ও তার সাহাবীরা মক্কা থেকে ইয়াসরিবে (বর্তমানে মদিনা) দেশান্তরিত হন। এই ঘটনাটি ইসলামি পরিভাষায় হিজরত নামে পরিচিত যা ইসলামে প্রথম মুসলিম সম্প্রদায় (উম্মাহ) সৃষ্টির পেছনে ভূমিকা রাখার জন্য স্মরণীয়। তাই মনে হয় এই হিজরত থেকেই হিজরি নামকরণ করা হয়েছে।

তো যাই হোক, বাংলা এবং ইংরেজি সালের সাথে ব্যতিক্রম হলো, মাস এবং বছরের দিন। হিজরি মাস চাঁদের হিসাবে হওয়াতে বছরের প্রতিটি মাসই ২৯.৫০ মানে সাড়ে ঊনত্রিশ দিনে হয়ে থাকে। যেমন: ৩৫৪÷১২=২৯.৫, আবার ৩৫৫÷১২=২৯.৫৮৩৩৩৩। সে হিসাবে হিজরি চন্দ্র পঞ্জিকায় একবছর গণনা করা হয়, ৩৫৪ বা ৩৫৫ দিনে। তা হলে দেখা যায় ইংরেজি সাল ৩৬৫দিন—হিজরি চন্দ্র পঞ্জিকা ৩৫৪দিন হলে ইংরেজি থেকে হিজরি ১১ দিন কম হয়। এই ১১দিন কম থাকার কারণে প্রতিবছর ইংরেজি বাংলা সালের নির্দিষ্ট কোনো তারিখে ঈদুল ফিতর অথবা ঈদ-উল-আযহা উদযাপন হয় না। প্রতিবছরই গত বছরের চেয়ে অন্তত ১০ বা ১১ দিন আগেই মাহে রমজান-শ ঈদুল ফিতর ও ঈদ-উল- আযহা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। কিন্তু হিজরি ইসলামি চন্দ্র পঞ্জিকা ঠিক তারিখেই হচ্ছে। উল্লেখ করা যেতে পারে গতবছর, মানে ২০২১ সালে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৪ মে ২০২১ ইং। আর এবার পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে হয়তো ৩ মে ২০২২ইং অথবা একদিন আগে। তা হবে চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে।

শুভেচ্ছান্তে: নিতাই বাবু। আমি একজন হিন্দু। লেখায় ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল। পরিশেষে সবাই পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানবেন।

পবিত্র মাহে রমজান মাসে করণীয় কী?

27924 রমজান মাসে কি শুধুই রোজা রাখা? রমজান মাসে কি শুধু সময়মতো সেহরি খাওয়া আর সূর্যাস্তের সময় ইফতার কারা? এসব প্রশ্নগুলো শুধু আমাকে ভাবিয়ে তোলে। আমার মনে হয় সেহরি খাওয়া, রোজা রাখা আর ইফতার করার পাশাপাশি প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানের করণীয় অনেক কিছু আছে।

আমার বিশ্বাস : বিশ্বনবী যখন পানাহার করতেন, তখন তিনি তাঁরই আশেপাশে থাকা গরীব মানুষের কথা ভাবতেন! খুব ভাবতেন! তিনি ভাবতেন, “আমার আরও আরও গরীব উম্মতদের মাঝে কেউ-না-কেউ হয়তো না খেয়ে আছে”। না খেয়ে থাকা যে কতো কষ্ট, তা মহানবী খুব ভালো করে বুঝতে পারতেন। এই ভাবনা থেকেই হয়তো বছরে বারো মাসের মধ্যে শুধু এক মাস প্রতিদিন একবেলা করে পানাহার বর্জন করার আদেশ করার জন্য মহান সৃষ্টিকর্তা’ ( আল্লাহতালা) কাছে আবেদন করলেন। আর মহানবীর সেই উপলব্ধি, সেই ভাবনা, সেই আদেশ সেই আবেদন তখনই মহান সৃষ্টিকর্তা ( আল্লাহতালা) সম্মতি প্রধান করে মুসলিম জাহানের সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য ধর্মীয় আইনে পরিণত করে মাহে রমজান মাস সিয়াম সাধনার (রোজা) মাস হিসেবে পবিত্র ‘কুরআন’ এ নাজিল করেন।

মহানবীর উপলব্ধি ও ভাবনা : নবীজি প্রতিদিন যখনই যেকোনো কিছু পানাহার করতেন, তখনই তিনি আশেপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা গরীব ক্ষুধার্ত মানুষের কথা ভাবতেন! তিনি ভাবতেন, হয়তো আমার উম্মত কেউ-না-কেউ না খেয়ে ক্ষুধার জ্বালায় ছটফট করছে। হয়তো আমার উম্মতদের মধ্যে কারোর-না-কারোর পুরো পরিবারই না খেয়ে আছে। যারা না খেয়ে আছে তাদের মুখে খাবার তুলে দেয়াটাও তো আমাদের মধ্যে যাদের অনেক আছে, তাদের সকলের কর্তব্য দায়িত্ব। কিন্তু শুধু মুখে মুখে বললে কেউ-না-কেউ হয়তো এর গুরুত্ব দিবে না। তাই তিনি মহানবী মহান সৃষ্টিকর্তা’র ( আল্লাহতালা) কাছে বলে-কয়ে এই হিজরি বারোমেসে মধ্যে একটা মাস সকল উম্মতের জন্য সিয়াম সাধনা’র (রোজা) পাশাপাশি দানখয়রাতের মাস হিসেবে ধর্মীয় আইনে পরিণত করেন। যাতে প্রতিদিন মাত্র একবেলা পানাহার না করে তিনবেলা যারা পানাহার করতে পারছে না, তাদের কষ্টটা অনুভব করতে পারে। ক্ষুধার জ্বালা যে কী, তা যেন মহানবী’র সকল উম্মতগণ বুঝতে পারে।

কিন্তু সেই বুঝ কি কেউ বুঝতে পারছে? নবীজির সেই অনুভব কি কে অনুভবে আনতে পারছে? অনেকেই পুরো রমজান মাসে সিয়াম সাধনা (রোজা) করে থাকে। নিয়মিত সেহরি খাচ্ছে বা করছে। নিয়মিত পাচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করছে। সূর্যাস্তের সময় বা ইফতারের সময় নিয়মিত ইফতার করছে। ইফতার পার্টির আয়োজন করছে। নিয়মিত তারাবীহ নামাজ আদায় করছে।

কিন্তু তারা কি একবার ভাবছে যে, অনেকে রোজা রেখেও সূর্যাস্তের সময় ইফতার করতে পারছে না, তাদের জন্য যতসামান্য ইফতার সময়মতো পাঠিয়ে দেই? কেউ কি ভাবছে যে, আমাদের চারপাশে অনেক অসহায় মানুষেরা দিনকেদিন না খেয়ে দিন-রাত পার করছে, তাদের জন্য কিছু একটা করি? আমাদেরই পাশের বস্তির শিশুরা ঈদের দিন টাকার অভাবে নতুন জামা-কাপড় পরতে পারবেন না, তাদের জন্য সমমূল্যে কিছু জামা-কাপড় কিনে পাঠিয়ে দেই?

তাই আমি মহানবী বিশ্বনবী’র চিন্তা-চেতনা, সঠিক ভাবনা, সঠিক উপলব্ধি নিয়ে ভাবি! অনেককে দেখি মহানবী’র মুখমণ্ডলে থাকা পবিত্র দাঁড়ি অনুসরণ করে নিজেও দাঁড়ি রাখে। মহানবী’র পবিত্র পোশাকপরিচ্ছদ অনুসরণ করে নিজেও সেইরকম পোশাকপরিচ্ছদ ব্যবহার করে। এতে নাকি ধর্মীয় সুন্নত। পবিত্র কুরআন শরীফ বুকে রেখে মহানবী’র খাস উম্মত মনে করে করে মজলিশে ময়দানে গলা ফাটিয়ে নবীজি’র আদেশ-উপদেশ প্রচার করে। তাঁরাও কি তাঁদের গরীব আত্মীয়স্বজন ও না খেয়ে থাকা মানুষের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ কিছু করে থাকে? সিয়াম সাধনা রোজার মাস তো শুধু বছরের একটা মাস মাত্র। আরও তো এগারোটা মাস আছে। সেসব মাসেও তো আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য দরিদ্র অসহায় গরীব মানুষ। যদি ধর্মপ্রাণ মুসলমান আর মহানবী’র উম্মত হয়ে থাকেন, তা হলে শুধু মাহে রমজান মাসই নয় বরং বছরের পুরো বারোমাসই সমাজের অসহায় দরিদ্র গরীব মানুষের পাশে দাঁড়ানোটা কি আপনার দায়িত্ব কর্তব্য নয়?

রমজান মাসে কি শুধুই রোজা রাখা? রমজান মাসে কি শুধু সময়মতো সেহরি খাওয়া আর সূর্যাস্তের সময় ইফতার কারা? হ্যাঁ, তা ঠিক আছে। কিন্তু সিয়াম সাধনা’র পাশাপাশি আপনার চারপাশে থাকা দরিদ্র গরীব মানুষগুলোর কথাও ভাবা উচিৎ বলে মনে করি। আপনার যা আছে তা থেকে কিঞ্চিৎ পরিমাণ কিছু আপনার গরীব আত্মীয়স্বজনদের দিয়ে সাহায্য করুন। যদি আপনি সম্পদশালী হয়ে থাকেন, তাহলে তো দয়াল নবী’র আদেশ আপনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন, এমনটাই আশা রাখি।

মনে রাখা ভালো যে, এই মাহে রমজান মাস হলো বরকতের মাস। এই বরকতের মাসে যত দান করা যায়, ততই সওয়াব। যতই বেশি দানখয়রাত করা যায়, ততই নাকি আখেরাতে এবং এই দুনিয়ায় জীবদ্দশায় সুখশান্তি ভোগ করা যায়।

বি:দ্র: আমি একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী। আমি হিন্দু। আমার এই লেখায় যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে, তা হলে অপমান অপদস্ত না করে ক্ষমা করে দিবেন।

এই যুগে

27879

আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা
স্কুল কলেজে যাই,
স্কুল কলেজে গিয়ে মোরা
অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল চালাই।

ক্লাসে না হোক লেখা পড়া
না হোক পরীক্ষা,
ফেসবুক টিকটকে দিবে মোদের
যুগোপযোগী শিক্ষা।

ফেসবুকে পাবো প্রাণের বন্ধু
টিকটকে গাইবো গান,
গুগলকে মোরা প্রশ্ন করবো
তথ্য কোথায় পান?

ইউটিউবে গুজবের ভিডিও দেখে
গ্রাম-গঞ্জ সংঘর্ষ বাঁধাবো,
ফেসবুকে গুজবের স্ট্যাটাস দেখে
অসহায় মানুষদের কাঁদাবো।

গুজব ছড়িয়ে পুড়িয়ে দিবো
প্রতিপক্ষের ঘর-বাড়ি,
ভাংচুর লুটপাট লাঠিপেটা করে
সহায়সম্বল নিবো কাড়ি।

অসহায় মানুষের আহাজারি

27862

যে দেশের অগণিত মানুষের
নেই যে বাসস্থান,
সে দেশে ভিনদেশি মানুষেরা
পেয়ে যায় স্থান।

যে দেশের নাগরিক ভোটার জনগণ
রাত কাটায় বস্তিতে,
ভিনদেশ থেকে আসা মানুষগুলো
রাত কাটায় স্বস্তিতে।

রাজধানী সহ বড় বড় শহরের বস্তিগুলোতে
আচমকা আগুন জ্বলে,
তখন ভিনদেশি শরণার্থীরা বাসস্থান চেয়ে
মিছিল করে দলেদলে।

যে দেশের নাগরিক থাকে রেললাইনের পাশে
অযত্নে আর অবহেলায়,
ভিনদেশি শরণার্থীরা এদেশে করে খুনখারাপি
তারাই ফুর্তিতে দিন কাটায়।

যে দেশের সিংহভাগ মানুষ ভূমিহীন অসহায়
তারাই হয় উচ্ছেদের শিকার,
ভিনদেশ থেকে এসে করে সন্ত্রাসী চুরি বাটপারি
তাদেরই দেয় বিশ্ব পুরস্কার।