সাইদুর রহমান এর সকল পোস্ট

সাইদুর রহমান সম্পর্কে

এ যাবত ২টি কাব্যগ্রন্থ (একক) এবং যৌথ ১৬টি কবিতা ও গল্পের বই প্রকাশিত হয়েছে।

কে জানতো

কে জানতো তুমি হবে একদিন বাংলার স্থপতি
জন্ম তোমার গোপালগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে
টুঙ্গিপাড়া সুনিবিড় ছোট্ট গ্রামের ছায়াতলে
যার কোল বেয়ে অবিরাম চলছে নদী মুধুমতী।

কে জানতো ঐ খোকা একদিন হবে বড় নেতা
মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা বাংলার
করবে দূর দরিদ্র মানুষের কান্না, হাহাকার
এনে দেবে মুক্তি এনে দেবে বাংলার স্বাধীনতা।

কে জানতো বজ্র কণ্ঠ তোমার, আকাশে বাতাসে
ভাসবে, প্রেরণা যোগাবে আবালবৃদ্ধবনিতার
একদিন তুমি হবে গর্ব শস্য শ্যামল বাংলার
হবে সকলের প্রিয় হবে শ্রেষ্ঠ নেতা সমগ্র বিশ্বে।

কে জানতো তুমি হবে প্রধান মন্ত্রী হবে রাষ্ট্রপতি
কে জানতো আসবে একদিন নির্মম রাত
আসবে একদিন একটি সে নিষ্ঠুর প্রভাত
তবু সকল হৃদয়ে সেই তুমি এক মোহন জ্যোতি।

শোকাবহ ১৫ই আগষ্ট

মুজিবের ঐ ভরাট কণ্ঠে সারা বাংলা মুখরিত
বিশাল সে জনসমুদ্র সেদিন হয়েছিল উদ্দীপ্ত;
তাঁর বজ্র কণ্ঠ রক্ত যখন দিয়েছি আরো দেব
এদেশকে মুক্ত করেই ছাড়বো …..
অগ্নিস্ফুলিঙ্গ যেন ছড়িয়ে পড়লো বাতাসে
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ও বাংলার আকাশে।

এ বাংলার বুকে সে কি আকাশ ফাটা গর্জন
মুহূর্তে যেন জ্বলে উঠে বাংলার লক্ষ জনগণ;
জেগে উঠলো বাংলার পশুপাখি সকল জীব
আমাদের নেতা শেখ মুজিব
বাংলা তোমার বাংলা আমার শত মুখে মুখে
হয়ে উঠে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সারা বিশ্বের চোখে।

এতই তেজোদৃপ্ত ভাষণখানি প্রেরণার উৎস
স্তম্ভিত বাংলার আকাশ বাতাস, সমগ্র বিশ্ব;
মুজিবই ভাবতেন শোষিত ও বঞ্চিতের কথা
তাই বাংলার বন্ধু, বিশ্বনেতা
ছাত্র কৃষক শ্রমিক সকল শ্রেণীর অনুপ্রেরণা
মাটি ও মানুষের কাছাকাছি, যেন কত চেনা।

শোকাবহ ১৫ই আগষ্ট যেই আসে ঘুরেফিরে
হৃদয়বিদারক স্মৃতি যেন হৃদয় রক্তাক্ত করে;
ছিলেন তিনি মহান ব্যক্তিত্ব, বাংলার স্থপতি
ভালোবেসেছিল বাঙালি জাতি
সপরিবারে হন নিহত পিশাচ পশুদের হাতে
তবুও পারেনি ওরা, তাঁর স্বপ্নের মৃত্যু ঘটাতে।

এবারের ঈদুল আজহা

শহরে যেন আজ কেউ নেই
রাস্তাঘাট শূন্য করে ধূ ধূ
শুনি পশুপাখির শব্দ শুধু
হেন চিত্র কোন উৎসব যেই।

ভোগান্তি কত ফিরবেই গ্রামে
প্রিয়জনদের এ পুনর্মিলন
একেই কয় নাড়ির বন্ধন
প্রেম ছাড়া কি আছে ধামে ?

ঈদুল আজহা ত্যাগের চেতনা
মনের লোভ হিংসা-দ্বেষ
ক্রোধ পশুত্ব করো শেষ
দূর করো সে বৈষম্য ভাবনা।

এবারের উৎসব বড্ড ফিকে
বান ডেঙ্গু গণপিটুনী হত্যা
ধর্ষণ, বেঁচে নেই মানবতা
কার সাধ্য বাঁচায় প্রশান্তিকে।

রক্ত মাংস কই চায় বিধাতা
চায় জবাই করি নিজ-পাপ
করি ভুল কর্মের অনুতাপ
হই সে মানুষ সত্য মূলকথা।

এক ঝাঁক হাইকু ১৬

(জাপানে প্রচলিত ‘হাইকু’ 
জাপানি কবিতা)

এক
তোমার মন
অজানা সততই
গহীন বন।

দুই
সময় কম
তাই তো চলা ধেয়ে
সে হরদম।

তিন
কত না লড়ি
জীবন খেলা ঘরে
সর্বদা হারি।

চার
কৃষক হাসে
নাচে ধানের শীষ
মৃদু বাতাসে।

পাঁচ
বারুদ ঘ্রাণ
জনতাও নির্বাক
হারাবে প্রাণ।

ছয়
এ ভালোবাসা
পেতে কত কি করি
শুধু প্রত্যাশা।

মাত্রা:৫-৭-৫

তোর নাম নাকি এডিস

চোখেই দ্যাখি না তোকে
তোর নাম নাকি এডিস;
সবাই যে ভয়ে ভয়ে থাকে
তুই বাবা কতই পারিস্।

জন্ম তোর পরিস্কার জলে
মুখে তবু শুধু যেন বিষ;
শিশু, বুড়ো যাকেই পেলে
তাকেই কামড়ে দিস।

চতুর্পাশে কত বোমা ফাটে
মানুষ তো পায় না ভয়;
মুখে কিছু বলিস না মোটে
তবু যে তোকে ভয় হয়।

সব্বাই বলে তুই নাকি ভদ্র
শুনিস না মন্ত্রীদের কথা;
হঠাৎই তুই হয়ে যাস রুদ্র
দিস জ্বর, সর্বাঙ্গে ব্যথা।

কেড়েও নিস মা বাবা ভাই
কারো বোন, কত কচি;
করিস কত যে সংসার ছাই
ভদ্রের এ কেমন রুচি ?

বাবা তুমি ছিলে কেমন

(বাবাকে উৎসর্গ – পিতৃ দিবসে)

এলাম তো এলাম, সেই বৃত্তি পেয়ে
সোনার দেশ ছেড়ে আজ বহুদিন;
স্বপ্ন দেখি, বসে আছ সে পথ চেয়ে
বার্ধক্যে তোমাকে দেখিনি কোনদিন।

মনে পড়ে, তোমার হাতখানি ধরে
গিয়েছিলাম,সেই যে প্রথম স্কুলে;
আমার ব্যাগ তোমার কাঁধের ‘পরে
পথে হলো বায়না,বাঁশী দেবে বলে।

কত বার হয়েছিল আমার জ্বর
অসুস্থ সে আমি, দেখেছি ক্লান্ত তুমি;
জল দিয়েছিলে মাথায় রাত ভর
আর বড়ো স্বস্তিতে ঘুমিয়েছি আমি।

বিদায় বেলায় সে বিমান বন্দরে
দেখেছিলাম তব অশ্রু ভেজা চোখ;
সবই পেয়েছি তবু কাঁদি অঝোরে
পারিনি দিতে তোমাকে একটু সুখ।

হয়েছি বড় তুমি চেয়েছিলে যত
না দেখে তা, অভিমানে লুকিয়ে গেলে;
কপালে চুমু, তোমার আশীষ শত
পারিনি নিতে ভাসি তাই অশ্রুজলে।

দেখ আজ তোমার শিয়রের পাশে
সে আসামীর মত কাঁপছি দাঁড়িয়ে;
মানে মুখখানিও দেখালে না শেষে
কত না প্রতীক্ষা শেষে গেলে ঘুমিয়ে।

        তুমি ছিলে কেমন:
এতই মমতা, এতই নির্ভরতা
এ পৃথিবী জুড়ে মিলে নাক এমন;
পিতৃ প্রেমে নেই যে কোন কুটিলতা
শুধু নির্মলতা, এ মৃত্তিকা যেমন। 

লিমেরিক – ১৩

অদৃশ্য খুনী
তামাক আর ধূমপান এরা অদৃশ্য খুনী
যারা রয় চারিপাশে তাদেরও হয় হানি
দেয় না কখনো কোন ছাড়
জীবন চুরিই তার কারবার
পরে গলা টিপে ধরে পালায় শ্বাসখানি।

ঈদের খুশি

উপচে পড়া ভিড়ে
যাচ্ছে নাড়ির টানে ঘরে ফিরে
শত শত শহরবাসী;

আসে একবার বছরে
হেন মহা উৎসব ঈদুল ফিতরে
ঘরে ফিরে কত হাসি।

কেনাকাটারও ধুমধাম
গরমে পায়ে ফেলে মাথার গাম
সবাই কিনছে পোষাক;

ভাবে না কেহ কতদাম
দোকানেও নেই দামের লাগাম
তবু ইচ্ছে সবাই পাক।

কতজনে নেই অর্থকড়ি
মনেও নেই খুশি সে বছর জুড়ি
তারাও তো করবে ঈদ;

কতজন আছে কৃপা করি
বিলায় কাপড় চোপড় ভুরি ভুরি
উবে তাই কচিদের নীদ।

আত্মশুদ্ধির এ মাসখানি
চলো তবে শুদ্ধ করি মনখানি
ছাড়ি সব হিংসা বিদ্ধেষ;

কত সংযমী ঐ জ্ঞানীগুণী
কখনোও করে না কারো হানি
তেমন হই বাঁচুক দেশ।

নিজেকে বড় ভেবে মরি
না ভেবে তা, করি কোলাকুলি
এই তো ঈদের খুশি;

সংযমী হই আত্মশুদ্ধি করি
যতো পাপ, দুষ্টু কর্ম দিই বলী
মর্ত্যে ফুটুক স্বর্গ হাসি।

ঠিকানা

ভয়ঙ্কর আর্তনাদ, মানুষের কাতর মুখ
দ্যাখি, সততই খাই ভ্যাবাচেকা;
ধ্বংস বহুরূপী যেন তারা বড়ই উন্মুখ
ধরিত্রী বুকে উড়ায় পতাকা।

রঙ বেরঙের মুখে কত ডঙের মুখোশ
চোখে ভালোবাসা, অন্তরে শূল;
ঝাপসা হাতছানিতে পাগল তবু মানুষ
করে নিক্ষিপ্ত হৃদয়ে বিষ হুল।

প্রাণ স্পন্দন চাবি আছে যেন পকেটে
সুখের তালা খুলে সাধ্য কার;
ব্যর্থ ব্যথিত ভাবে লিপিবদ্ধ এ ললাটে
স্বার্থকেরা করে জয় জয়কার।

কষ্ট পথেরও আছে যেন সীমা সীমান্ত
জীবন একদা বলে বিদায়;
জল্লাদ মুখোশধারীরাও করে মাথানত
লুটিয়ে পড়ে মৃত্যুরই পায়।

জ্বালা কষ্ট সব, সুখ স্বর্গ পালায় দিগন্তে
কে হাসে কে কাঁদে, অজানা;
তবু ভাবে মানুষ, সুখ স্তূপ অপর প্রান্তে
কেউ না পায় তার ঠিকানা।

মিছিমিছি হাসি মেখে

বুকে আর মুখে
মিছিমিছি হাসি মেখে
যায় না ভুলা জীবনের দুখ;

বেদনার সাগরে
যত বেড়াই সাঁতরে
তবু কি শুকায় সজল চোখ ?

সুখ বড়ো চতুর
হাসিখানি যার সুমধুর
হাতছানিতে পড়ি খপ্পরে;

করায় স্বপ্ন স্নান
হেন তার ভণিতা ভান
উধাও সহসা সবই ছেড়ে।

কষ্ট হাসে আড়ালে
ফাঁসতেই বেড়াজালে
কেউ তখন রয় না পাশে;

জীবনে এই খেলা
প্রাণীর তথাপি পথ চলা
কাড়ে খোলসটি মৃত্যু শেষে।

মরুতে বেড়াতে এসে

মরুতে বেড়াতে এসে

মরুতে বেড়াতে এসে হই হতবাক
কোথায় তবে ঐ সিডনী আর লন্ডন
মনে হলো যেন, এখানে সকল ধন
চোখে পড়েনি বালি তাক, উটের ঝাঁক।

শূন্য সকল রাস্তা ঘাট, কই মানুষ
চলে গাড়ি ঘোড়া অবিরত ফিস্ ফিস্;
আইন কানুনেও নেই উনিশ বিশ
এতো সুন্দর এই মরু, হারাই হুশ।

রাতে এই ভুমি, সে যে কত ঝলমলে
তুলিতে আঁকা একটি ছবির মতন
কই ধূলি কই দাহ, আবাস রতন
বিদায় ছিল সিক্ত, স্বজন অশ্রুজলে।

নির্বাক অভিমানী নজরুল


‘আমি চিরতরে দূরে চলে যাবো তবু
আমারে দেব না ভুলিতে’ কথাটি যার;
দ্রোহে আর প্রেমে তাই কখনো সে কভু
সরে নি এক পা, মূর্ত প্রতীক নিষ্ঠার।
ধুমকেতুর মতই অগ্নিবীণা হাতে
সংগ্রামে কাটে তাঁর সারাটি জীবন;
দুঃশাসন ও শোষণ থেকে মুক্তি দিতে
ছিলে নির্ভীক, সহেও শত নির্যাতন।

জীবিকার দায়ে লেটো দলের বাদক
সাহিত্য ভুবনে তবু শত অবদান;
রুটির দোকানেরও শ্রমিক নায়ক;
মানব কল্যানে এক নিবেদিত প্রাণ।
শৈশব কৈশোর কাটে শত দুঃখ মাঝে
শেষে নির্বাক অভিমানী জীবন সাঁঝে।

চতুর্দশপদী কবিতা

কৃষাণ বাঁচলেই দেশ বাঁচে

কতটুকু দুঃখ পেলে পুড়ে ফেলে
তার স্বপ্ন ফসল
কৃষাণ বাঁচলেই দেশ বাঁচে কৃষাণ
সে জাতির বল;

ন্যায্য মূল্য না পেয়ে কৃষাণদের
মুখখানি কি করুণ
সরকার নয় পাশে দাঁড়িয়ে তবে
আজ কত তরুণ।

ফণী

ফণী তুমি যেন সাপের ফণা হয়ে এলে
কে জানে কাকে হারাবো তোমার ছোবলে;
কতই না প্রস্তুতি তবে বাঁচার, মানুষের
তুমি যে মারাত্মক এক আতন্ক সে ভয়ের।

সাপ যেমনটি ফণা তুলে আসে ধেয়ে
তুমিও তেমনটি যেন আসছো সাগর বেয়ে;
অস্থির উপকুল-বাসী ভারত বাংলাদেশ
যেই মাতাল তুফান, ভাবি এই বুঝি শেষ।

বৈশাখ এলেই কেন হও নিষ্ঠুর মাতাল
অথচ মানুষ বুনে স্বপ্ন গজাবে জীবনে ডাল;
ভয়ে গরিবেরা ছেড়েছে ছোট্র জীর্ণঘর
গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগীর মনেও কত ডর।

3rd May, 2019

কই আলাদা

মার নাড়ি কেটে
উষ্ণ জঠর ফেলে আলাাদা সেই কবে
আবারো বাঁধা পড়েছি মায়ার বন্ধনে;

কত সে ঘষাঘষি
শীল-পাটার ভেতরে ঐ লঙ্কার মতো
কত রক্ত ঝরাঝরি নিঠুর নিষ্পেষণে।

পেরিয়ে এসেছি
শত বনভূমি স্বপ্নের কোলাহল সীমা
বিস্তীর্ণ মাঠ কত নদ নদী কত সমুদ্র;

কাদা আর ধূলি স্তূপে
আটকে গেছি কখনো, অজানা কৃত্রিম
নিয়তির হাসিতে মন যার বড্ড রুদ্র।

লোকালয় পেয়েছি
যেথা মমতার গন্ধ ছড়িয়ে চারিপাশে
জড়িয়ে ধরে যেন আমি নই আলাদা;

পাশের বন্ধু স্বজন
তাদের হাসিকান্না অশ্রুজলের ভাষা
বুঝতে শিখিনি ভেবেছি এহি বসুধা।

একদিন চিরশায়িত
জেগে দ্যাখি মৃত্তিকার কোলে আমি
পারিনি কখনো যেন আলাদা হতে;

বড্ড আঁধার ঘর
ভাবলাম আমি এবার মুক্ত আলাদা
পোকা, বিচ্ছুরা এসেছে সঙ্গ দিতে।

আবারো কারা যেন
তাজা তাজা ফুল রাখে আমার বুকে
শুনি কোলাহল কত সে কলকাকুলি;

হলেম কই আলাদা
যদিও নেই সে কাটাকুটি যুদ্ধ লড়াই
তবু কেহ দেয় গালি, দেয় শ্রদ্ধাঞ্জলি।