সাইদুর রহমান এর সকল পোস্ট

সাইদুর রহমান সম্পর্কে

এ যাবত ২টি কাব্যগ্রন্থ (একক) এবং যৌথ ১৬টি কবিতা ও গল্পের বই প্রকাশিত হয়েছে।

ইচ্ছে হয় তাকে চুমি

এবার সুন্দর হয়েছে ফলন
তাই কৃষাণেরা হাসে;
সবুজ ধান গাছগুলো যখন
নাচে দোলে বাতাসে।

মনকোণে কত স্বপ্ন জাগে
হবে খোকার পড়াশোনা;
স্কুল যাওয়া যাবে না থেমে
দেখবো ওর হাসিখানা।

যদি দুরন্ত বন্যা, না আসে
গোলা ভরবে ধানে;
আসবে সুখ পুড়া সংসারে
রবো না আর অনটনে।

আসি আমরা কৃষাণ-কৃষাণী
দেখতে ধানের জমি;
ভুলে যাই হৃদয়ের কষ্টখানি
ইচ্ছে হয় তাকে চুমি।

June 30, 2020

কখনো থামে না জীবন

করোনার এই দুঃসময়ে
নানামুখী সংকটে মানুষ;
ভাটা সবার আয় ব্যয়ে
দিন মজুরের নেই হুশ।

শুধু নয়, শহর ও বন্দর
কাবু গ্রামীণ অর্থ নীতি;
সবার চোখে মুখে যেন
চাপা আতঙ্ক ভয়ভীতি।

গ্রাম এমনিতেই নির্জন
সবুজ প্রকৃতির ছোঁয়ায়;
এ নির্জনতা যেন এখন
আরও মূর্ত, করোনায়।

তবু জীবিকার সন্ধানেই
মানুষের চলছে ছুটাছুটি;
কখনো থামে না জীবন
খুঁজেই নেয় তার পথটি।

June 28, 2020

আমি তুমি সে

আগে যেমন বৃষ্টি অথবা রোদে
ছাতা নিয়ে বের হতে;
এখন মুখে পরো মাস্ক, গ্লাবস্
পরে নিয়ো দুই হাতে।

হাঁচি কাশি, দিয়ো না কখনো
মুখেতে রুমাল ছাড়া;
তুমিও বাঁচাতে পারবে মানুষ
তোমার পাশে যারা।

পরস্পরে দূরত্ব রাখো বজায়
খুবই এখন জরুরী;
না হয় কটা দিন রহিলে দূরে
চলছে যে মহামারি।

কর্ম শেষে বাড়ি ফিরবে যখন
সাবানে হাত ধোবে;
মানলে স্বাস্থ্যবিধি, তুমি আমি
সে, সবাই বাঁচবে।

(সঙ্গনিরোধ কালের স্বাস্থ্যবিধি)
June 23,2020

রোদনভরা ঈদ

দেখো দেখো ঐ আকাশের বুকে
এক ফালি চাঁদের মুখ;
মাহে রমজানের ঐ রোজা শেষে
দিতে এলো ঈদের সুখ।

এবারের ঈদখানি একটু যে ভিন্ন
এখন তো করোনাকাল;
আম্পানেও আবার সব লণ্ড ভণ্ড
হৃদয় সবার টালমাটাল।

হবে না এবার, কোনো করমর্দন
হবে না এবার কোলাকুলি;
আসবে না কাছে, আত্মীয় স্বজন
হবে না রসালাপ প্রাণখুলি।

না কোথাও আড্ডা বা ঘোরাঘুরি
বাড়িতে সবে সারাদিন;
না ছুটাছুটি. না আনন্দ আহামরি
এ ঈদখানি যেন ছন্দহীন।

ঈদের খুশি কখনো হয় না বেশি
যদি না বেঁচে রয় প্রাণ;
করোনা নিয়ে গেছে সকল হাসি
ঘরবাড়ি ভাঙ্গলো আম্পান।

এমনি ঈদ আসবে চলেও যাবে
যেন সময়ের এক বিধান;
হয়ত: কাল ক্ষুব্দ পৃথিবী হাসবে
হবে আমোদ হবে জয়গান।

May 22, 2020

এসে গেলো মাহে রমজান

এসে গেলো মাহে রমজান
সংযম শিক্ষার মাস;
শিখি পরিশুদ্ধির মন্ত্রবিধান
অন্তরে যে অহং বাস।

ঝেড়ে ফেলি অশুভ অনাচার
গড়ি আদর্শ জীবন;
সংযম সাধনায় সৃষ্টিকর্তার
কাছে করি সমর্পণ।

ক্ষুধা তৃষ্ণার কি কষ্ট জ্বালা
গরীবেরা সহ্য করে;
ধনীরা না খেলে সারাবেলা
কষ্টটা বুঝতে পারে।

দরিদ্রে করো সততই দান
ওরা ক্ষুধার্ত অনাহারী;
বিনিময়ে দিবে প্রভু মহান
সর্বসুখে জীবন ভরি।

সারা মাসের সংযম সাধন
হোক সকলের পাথেয়;
যদি রপ্ত করি সারা জীবন
রবে না কিছুই অজেয়।

এ রমজানে পাপ পঙ্কিলতা
উপবাসে হই পরিমল;
নামুবে মানুষ মানুষে মমতা
স্নেহ ভালোবাসার ঢল।

Sunday, April 26, 2020

বৈশাখ তুমি দুঃসময়ে এলে

আবারো এসেছে ফিরে ‘নববর্ষ’ ঘুরে ফিরে
হাজারো স্বপ্ন সকল হৃদয় বুকে
যত দুঃখ কষ্ট ব্যর্থতা গ্লানি
চলো ধুয়ে মুছে তাকে
নতুন কেতন উড়িয়ে, নিই সবে বরণ করে।

এ বৈশাখে সড়কে প্রান্তরে নেই সে উৎসব
তবু এসেছো মুমূর্ষকে জাগাবে বলে
এবার পণ্য মেলা, প্রভাতী গান
হয়নি ঐ রমনার বটমূলে
আতঙ্কে মানুষ, করোনার ভয়ে সুনসান সব।

বৈশাখ তুমি দুঃসময়ে এলে তবু করব বরণ
নাই বা খেলাম এবার ঐ পান্তা ইলিশ
নাই বা জুটলো গরীবের নুন পান্তা
পুড়া-মরিচ আলুভর্তা নিরামিষ
গৃহে বন্দী তবু করব নতুন বছর উদযাপন।

যদিও আমরা এখন বন্দী ঘরে, হয়তঃ পরে
তোমায় পারবো দিতে উষ্ণ সম্ভাষণ
আবার হবে জ্বলজ্বল ভর্তা দুপুর
দল বেঁধে সবে গাইবো গান
ফিরবে প্রাণে উত্তাপ, আবার আসিলে ফিরে।

এসেছো শুধু তুমি, আসেনি তো বৈশাখী ঝড়
তবু গোটা বিশ্বটাই ল্ন্ডভন্ড যেন
ক্ষুদ্র এক করোনা ভাইরাসে
যাকে দেখি নি কখনো
তাই তো জনবিরল গ্রাম শহর, মনে ভয় ডর।

সকল জীবন ঢের আনন্দ খুশিতে ভরে উঠুক
সকল পাপ আবর্জনা উপড়ে ফেলে
অশ্রুবাস্প হুতাশা দূরে ঠেলে
সকল নিগড় ভেঙ্গে ফেলে
আলোক বর্তিকা হয়েই, ১লা বৈশাখ ফিরুক।

১লা বৈশাখ, ১৪২৭ / April 14,2020

নেই সে বারুদের গন্ধ

যুদ্ধ দেখেছি মানুষে মানুষে
যুদ্ধ হয়েছে দেশে ও দেশে
এ বিশ্বযুদ্ধ মানুষে অদৃশ্যে;

নেই সে বারুদের উগ্র গন্ধ
তবু গোটা পৃথিবী যেন স্তব্দ
মানুষ ঘর বন্দী, কারারুদ্ধ।

আকাশেও উড়ছে না বিমান
অদৃষ্ট বোমায় নিঃশেষ প্রাণ
অস্থির মানুষ চোখ মুখ ম্লান;

পৃথিবীর সব শক্তিধর দেশ
মারণাস্ত্রের যেথা নেই শেষ
সব বিকল নেই আর লেশ।

ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র এক ভাইরাস
বিঞ্জানের সে অর্জন উচ্ছ্বাস
গলা টিপেই করছে বিনাশ;

প্রকৃতির মগজে জ্ঞান সুপ্ত
মুহূর্তেই কাবু বিশ্ব, কম্পিত
এত দক্ষ তার সৈন্য সামন্ত।

নিরর্থক সকল দম্ভ, বড়াই
জীবনের যত চরাই উৎরাই
প্রাপ্তি শুধু ঐ মাটির ঘরটাই।

কেটে যাবে বিপদ

কেটে যাবে বিপদ খুব শীঘঘির
থাকি না হয় কিছুদিন ঘরে;
কেহ যদি যাও, যেথা তবে ভিড়
সংক্রমণ যেন ততটা বাড়ে।

নিত্যই চলছে করোনার কামান
শঙ্কিত আমরা বিশ্ববাসী;
অস্ত্র এখন থাকি সবাই সাবধান
তবেই মুখে ফুটবে হাসি।

দৃশ্যত: সকলে দূরে দূরে থাকি
রহিব হৃদয়ের কাছাকাছি;
দেশটাকে যেন খুব ভালো রাখি
আমরা, যে যেথায় আছি।

কত কষ্ট খেটে খাওয়া মানুষের
ঘরে কিছু নেই, হাহাকার;
এক নিদারুণ বাস্তবতা সময়ের
এহি ক্ষণ পাশে দাঁড়াবার।

এক ঝাঁক হাইকু ৪৩

(জাপানে প্রচলিত ‘হাইকু’ জাপানি কবিতা)
বিষয়: করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯

এক
ভয় পেয়ো না
সতর্ক থেকো; উবে
যাবে করোনা।

দুই
আমরা ঘরে
কোভিড-১৯ তাই
জ্বালায় মরে।

তিন
আর গুজব
নয়। ভালোই আছি
আমরা সব।

চার
মৃত্যু মিছিল
গৃহে বন্দী মানুষ
স্তব্ধ নিখিল।

পাঁচ
সতত হাঁচি
মুখ ঢেকে। আমরা
সবাই বাঁচি।

ছয়
থুথু ও কাশি
ফেল না যথা তথা
বালাই বেশী।

আমরা হারবো না

আবারো যুদ্ধ আমরা হারবো না
প্রতিপক্ষ কোভিড-উনিশ
তোরা সব্বাই ঘরে থাকিস
পালাতে বাধ্য ভয়াবহ করোনা।

আমরা বাঙালী হারতে জানি না
আসুক না কোভিড-উনিশ
কিছু ছুঁলেই হাত ধুয়ে নিস
দেখিস, পালাতে বাধ্য করোনা।

বাঙালীরা কিছুতেই পায় না ভয়
জানিস এ কোভিড-উনিশ
মুখে যার গাদা গাদা বিষ
সামাজিক দূরত্ব ওর পছন্দ নয়।

তোরা তাই দূরে দূরেই থাকিস
হৃদয়খানি হবে লাগালাগি
কষ্টগুলো করিস ভাগাভাগি
দেখবে, উধাও কোভিড-উনিশ।

যারা তবে দিন আনে দিনে খায়
ওদের ঘরে নেই ভাত
যারা পারিস বাড়াস হাত
দেখিস করোনা কি দ্রুত পালায়।

সময়ও আর মানুষের পক্ষে নয়

(করোনা – কোভিড ১৯)
-সাইদুর রহমান

যাকে চোখে দেখি না চিনি না
নামটি তার আজ কারো নেই অজানা;
সারা বিশ্বকে তুলেছে কাঁপিয়ে
ছোট বড় সবাই কত না আতঙ্ক ভয়ে।

কোথাও নেই যুদ্ধ বোমাবাজি
তবুও পৃথিবীর সকল মানুষেরা আজি;
অবরুদ্ধ ঘরে, যায় না বাহিরে
কেহ নয় কারো পাশে রয় দূরে দূরে।

একে অপরে মিলায় না হাত
অভিমানী প্রকৃতির কি নির্মম পদাঘাত;
এতো মৃত্যু দেখিনি একদিনে
কি নির্দয় আগ্রাসন সে করোনার মনে।

আজ বিরাট ঝুঁকি জন সমাবেশ
মানুষ মানুষে সৌহার্দ্য মানবতাও শেষ;
প্রকৃতি এতই ক্ষুব্ধ অবাক হই
যেন পাপ-স্তূপ বিশ্বে একদম ছুঁই ছুঁই।

হাতদু’টি ধোও সাবান দিয়ে
হাঁচি দাও সাবধানে অতিশয় ভদ্র হয়ে;
কে জানে কখন কার কি হয়
আজ সময়ও আর মানুষের পক্ষে নয়।

বঙ্গবন্ধু স্মরণে

কে তুমি বার বার বল যেন লিখি
বাংলার ঐ রক্ত ইতিহাস;
কাঁপে হাত সজল হয় দু’টি আঁখি
হই নির্বাক থেমে যায় শ্বাস।

৭ই মার্চে দিলেন বজ্র ডাক যিনি
উদ্বুদ্ধ হলো সারা দেশ;
হৃদে সব, জ্বলে উঠে বারুদ অগ্নি
হায়েনা পুড়ে হয় শেষ।

যেন তোমার যাদু মন্ত্রে হৃদয় ভরি
সবাই ছুটে গেল মাঠে;
মুক্ত করে দেশ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করি
মৃত্যু পরোয়া করেনি মোটে।

তুমিই তো বাংলার, জাতির জনক
মোরা পুত্রসম বিশ্বাসভাজন;
অতুর্কিতে তবু পিশাচ পিতৃঘাতক
করে নিধন বাংলার রতন।

এমন ঘোর পাপে কি যে অভিশাপ
আমরা পাবো নিরবধি;
ফুটতো হাসি মুছে যেত কালিছাপ
তুমি ফিরে আসতে যদি।

জাতীয় কবি নজরুল

তুমি কবি লিখেছিলে
‘আমি চিরতরে দূরে চলে যাব
তবু আমারে দেব না ভুলিতে’
সাহিত্যের নব দিগন্ত যে হাতে
কার তবে সাধ্য তোমায় ভুলে।

তোমার সুর নেশায়
শিশু কিশোর যুবা বৃদ্ধ সকলে
আজো মনে করে অশ্রু ফেলে
লিখতে যে রক্তে কালির বদলে
ডুবে থাকে তোমার কবিতায়।

অনাচার আর শোষণে
ছিলে সততই সোচ্চার প্রতিবাদী
দাঁড়িয়ে যেতে শোষিতের সাথে
ছিলে সাম্য-শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে
তুমি তাই সকলের হৃদয়কোণে।

তোমাকে পেলাম বাংলায়
‘চির উন্নত মম শির’ তব কন্ঠে
শুনার সৌভাগ্য হয়নি আমাদের
কাব্য-গান যত, প্রেরণা নিঃস্বের
গরিবের দুর্ভোগ ঘুচল কই হায়।

জাতীয় কবি তুমি
যখন ফিরে এলে তবে বাংলায়
পেলাম তোমাকে দুর্বল নির্বাক
নিঃশব্দ আকাশে খুঁজে হতবাক
আলো নেই, শুধু অন্ধকার ভূমি।

লেখে না কেহ তোমার মত
‘যবে উতপীড়িতের ক্রন্দনরোল
…আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না
কৃপাণ ভীম রণ ভূমে রণিবে না
……..আমি সেইদিন হব শান্ত’।

ওরা কার অংশ

এক অদ্ভুত রহস্যের টানে
দ্যাখি ওদের একসাথে;
প্রান্তিকে, এখানে, সেখানে
অহরহ শহুরে রাজপথে।

হেসে খেলে কাটায় জীবন
পাঁচ দশ টাকা উপার্জন;
কষ্টেই করে জীবন যাপন
নেই অভিলাষ নেই স্বপন।

কার জন্যে করবে সঞ্চয়
নেই বাবা মা ভাই বোন;
তাই যখন যা ইচ্ছে হয়
খায় যাই জুটে ভাত নুন।

এ বয়সে তো শিশুরা রয়
মায়েদেরই আঁচল তলে;
শিশুকাল লোকে স্বর্গ কয়
বাবার সাথে যায় স্কুলে।

না ঘুম করে এপাশ ওপাশ
ভাসে চোখে মায়ের মুখ;
হৃদয়ে জমে উষ্ণ দীর্ঘশ্বাস
না পেয়ে মার আদর-সুখ।

হয়ত ভাসে শিশুর চোখে
মুখখানি তাদের বাবার;
সিক্ত হয় মনখানি শোকে
অজানা কত না শিলার।

উত্তর দাও প্রতারক নিয়তি
বলো, ওরা কার অংশ ?
হতে হলো দুর্ভাগা অতিথি
কি পাপে করেছো নিঃস্ব ?

দুঃখ তো আজন্ম এ জীবনের সাথী

দুঃখ তো আজন্ম এ জীবনের সাথী
কারো জীবনে নেই শৈশব
কৈশোরও করে না অনুভব
বিষাদ গহীন অরণ্যেই তার বীথি।

দিন কাটে তো কখনও কাটে না রাত
রাত দেখেও দেখে না ভোর
প্রাণ আছে কৈ জীবন সুর
চলে অতো পথ কষ্ট রয় সাথ সাথ।

জন্মাবধি ভেতরে ভেতরে শুধু কাঁদে
শুনে না সে কারো স্নেহ ডাক
মনাকাশে উড়ে শুধু কাক
পথখানি ভরা মৃত্যু গহব্বর ফাঁদে।

ডাকে না কেউ, বলে না কেউ ‘ভালোবাসি’
লন্ডভন্ড তার স্বপ্ন যত
বুকে জ্বলে অগ্নি অবিরত
রোদে পারে না জিরুতে বৃক্ষতলে বসি।