সাইদুর রহমান এর সকল পোস্ট

সাইদুর রহমান সম্পর্কে

এ যাবত ২টি কাব্যগ্রন্থ (একক) এবং যৌথ ১৬টি কবিতা ও গল্পের বই প্রকাশিত হয়েছে।

এ জগত সমুদ্রের সৈকতে

এ জগত সমুদ্রের সৈকতে
অস্তিত্বের প্রকাশ যেন চমকাতে চমকাতে;
অন্তরে স্বপ্ন জাগে সন্তর্পণে
ভরে উঠে জীবন অলংকারে, গানে গানে।

হাজারো বন্ধন বাঁধনে জড়ায়
লাগে কই মুহূর্ত সময়ে সবই হারিয়ে যায়;
শত বিচিত্র বৈচিত্র্যে ধাবমান
আয়োজন প্রচেষ্ঠা হৈহুল্লোড় শেষে প্রস্থান।

মাথায় বিশাল মুক্ত আকাশ
শেষে আনকা দুর্বিপাক, পতন, দীর্ঘশ্বাস;
গগনের পেট চিড়ে বজ্রাঘাত
বৃক্ষ উঁচু উঁচু, খিলখিল হাসি দৈবাৎ কাত।

হৃদয় বুকে যত শত আঁকিবুঁকি
প্রেমপত্র স্বপ্ন ছবি সবই যেন তবে ফাঁকি।
ডুবে বিকেলে সোনার লাল বল
বাহুবল ঔদ্ধত্য গর্ব সবই ছিল নিছক ছল।

বেড়ে উঠলে মায়ের কোলে পিঠে
আবারও আটকা চিরতরে বদ্ধ প্রকোষ্ঠে।
যতই পথ অতিক্রান্ত, দূর বহুদূর
হতেই হবে বন্দী, যেথা আঁধার ঘন ঘোর।

সময়ের রং

দূর থেকে আসছে যে ভেসে
বুনো শিয়ালের হাঁক;
অলিগলির ঐ মোড়ে মোড়ে
শুনি কত কুকুরের ডাক।

কয়জনেরই বা থাকে তবে
রুটি রুজির আয়োজন ?
দোকানির হিসেব খাতায়
দেনার অঙ্ক থাকেই লিখন।

দুশ্চিন্তা ঘুরপাক খায় মগজে
কবে ধারদেনা মিটিয়ে দেব;
প্রতিদিন মনে জাগে আশা
কাল হয়ত একটা কাজ পাব।

ওষধের দোকানির প্রশ্ন
কি মশাই, আছেন ভালো ?
শুনি, রাতে প্রহরীর বাঁশি
যদিও সেথা আলোয় আলো।

সময় কখনো নেই থেমে
কেউ নিশ্চিন্ত কেউ শান্তি শয়নে;
তবে কেউ আর তুমি আমি
শুধু যে রত স্বপ্ন জাল বুননে।

নিদ্রার ভান করি প্রতিদিন
শুইয়ে শুইয়ে দেখি আড়চোখে;
ঘর্মাক্ত মুখে মালতির ফেরা
বাবুকে স্কুলে রেখে অশ্রুচোখে।

পবিত্র এ রোজার মাস

পবিত্র এ রোজার মাস

বছর ঘুরে এলো সবার দ্বারে
পবিত্র এ রোজার মাস;
বরণ করে নাও গো শ্রদ্ধাভরে
কর সংযম অভ্যাস।

সৎ চিন্তায় তবে হোক প্লাবিত
আমাদের হৃদয়খানি;
কটূক্তি নয় বলো শুধু মার্জিত
হাসিমাখা এ মুখখানি।

কর্ণ কুহরে শুন মধুর বাণী
গাও ভালোবাসার গীত;
হয়ো না অত্যাচারী শোষক শ্রেণী
হও গরীবের উম্মীদ।

মুখে সততা আর হৃদয়ে মমতা
দাও প্রেম ভালোবাসা;
এ অভুক্ত গরীবে দিও না ব্যথা
এমনই হোক প্রত্যাশা।

গর্হিত কাজে রাখ এ উপবাস
এ নয় শুধু ভোজনে;
রমজানের এই মূল নির্যাস
রাখি যেন সর্বদা ধ্যানে।

কবি নজরুল

কবি নজরুল

হে জাতীয় কবি হে বিদ্রোহী নজরুল
যতই করি প্রশংসা, তা অপ্রতুল;
দুঃখ পাই, তোমার জীবনের শেষে
তুমি এলে স্বাধীন ভূমি বাংলাদেশে।

মাত্র বাইশ বছরে করেছো অবাক
পেলাম তোমায় তুমি হলে নির্বাক;
শুনিনি তোমার কণ্ঠ, দেখিনি সে হাসি
শুনিনি তোমার সুর গান বাদ্য বাঁশি।

হৃদয়ে যখন সে কাব্য ছন্দ স্পন্দিত
শুনিনি তোমার বজ্র কণ্ঠ উচ্চারিত;
তব কবিতায় গানে কত যে বৈচিত্র্য
ছিলে বহুরূপী তুমি অবাক সে চিত্র।

ছিলে তুমি ছায়ানট, হিন্দোল ও বীর
ছিলে প্রেমিক তুমি উষ্ণ চির-অধীর;
যখন শুনি ‘বল বীর,চির উন্নত শির!’
মনে হয় ডাকছো তুমি, হই অস্থির।

তুমি যে সত্যি মৃণ্ময় চিন্ময় অজয়
তুমি সে বিস্ময় তুমি অমর অক্ষয়।

লিমেরিক গুচ্ছ ০৩

লিমেরিক গুচ্ছ ০৩

এক
(ঐ সাড়ে তিন হাত)

পিটিয়ে কুপিয়ে মার, আর কত চাও ভাত
পৃথিবীতে তবে চলো বাঁচি, হাতে রেখে হাত;
আমরাই তো সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ
আছি কয়দিন হেথা, নেই হুঁশ
পাবো তবে শেষে ভূমি ঐ সাড়ে তিন হাত।

দুই
(যার আছে বেশী)

উপরি অসৎ রোজগারে মুখে তোমার হাসি
পেয়েছ অঢেল সম্পদ বাড়ি গাড়ী ধনরাশি;
সবই তবে করেছো কুক্ষিগত
দাস দাসী, কত আরো,অনুগত
এ জগতে সেই চায় আরো,যার আছে বেশী।

লিমেরিক ছন্দ: ক ক খ খ ক

মেনে চলি

মেনে চলি

মাগো, মেনে চলি তোমার সকল কথা
যারা বয়সে বড়,করি তাদের মান্য;
ছোট বড় সবার সনে রাখি সখ্যতা
দিই যতটা পারি যাদের আছে দৈন্য।
পড়াশোনায় দিই অশেষ মনোযোগ
সময়ে সদাই করি কত খেলাধুলা;
দিই আর্ত পীড়িতেও সেবা সহযোগ
বলেছো যে দিতে প্রেম নয় অবহেলা।

সারাদিন চলি সে তোমার কথামত
ঈদ পুজোতে যত গরীব আশে পাশে;
দিই খাবার কাপড় আরো খুশী যত
তোমার মতই কাছে টানি ভালোবেসে।
বলেছিলে শেষে, যেন গো মানুষ হই
ভালোবাসি মানুষ, এ মানুষেই রই।

চতুর্দশপদী কবিতা।

এক ঝাঁক হাইকু ০৪

এক ঝাঁক হাইকু ০৪

এক
দুঃখার্ত হলে
এমনই তো হয়
রোদ্দুর গেলে।

দুই
কি দাবদাহ
অস্থির গরীবেরা
এ তো প্রত্যহ।

তিন
শীতেই বৃষ্টি
মরু অঞ্চলে শুনি
ঋতুর ফষ্টি।

চার
এই জীবন
কচু পাতার পানি
দণ্ডে মরণ।

পাঁচ
মেঘ আকাশে
যদি হয় তুফান
কি লাভ হেসে ?

ছয়
এলো বসন্ত
ভ্রমরের গুন গুন
খুশী অনন্ত।
________________

(জাপানে প্রচলিত ‘হাইকু’ জাপানি কবিতা)

সংশয়

সংশয়

জেগেছে মনে অতিশয় সংশয়
তারাগুলো কেন মুখটিপে হাসে;
শুধু সে তমস কারো ঘরময়
কারো ঘরে আলো খিলখিল হাসে।

জেগেছে মনে অতিশয় সংশয়
নিভি নিভি আলোতে কেন জোনাকি;
খুঁজে কাশবন,কখনো জলাশয়
পেলো শশী আলো,তাকে তবে ফাঁকি।

জেগেছে মনে অতিশয় সংশয়
অভ্রের কেন এ গুরু গুরু গর্জন
গা ভাসিয়ে বেড়াতো গগনময়
মাটিতেই মৃত্যু, হয়ে বরিষণ।

জেগেছে মনে অতিশয় সংশয়
কেন আগ্নেয়গিরির এ রক্ত বমন;
মাটির পেট চিঁড়ে মোতি কাড়ে কতিপয়
তুমি স্নেহময়ী, এ কার চাল চলন ?

কবি গুরুর জনম দিনে

কবি গুরুর জনম দিনে

কবি গুরুর জনম পঁচিশে বৈশাখে
শ্রদ্ধাভরে স্মরি যিনি এক কিংবদন্তী;
কমল ফুটে হৃদয়ে, যার সুর রাগে
জ্ঞাত যেন মানুষের যত অনুভুতি।
ডুবুডুবু যানে বসে লিখেছেন তিনি
প্রলয় গান,দুর্দশা গ্রাসে দৈন্য দুঃখে;
ঝড় কবলে বাঁচার সে আশার বাণী
লিখতেন শিল্প কলা ভালোবাসা মেখে।

বিশ্ব দরবারে, বাংলা ভাষা মার বুলি
পেয়েছে স্থান তাঁরই সাহিত্য সম্ভারে;
যেন হাতে সততই যাদু রঙ তুলি
আঁকতেন কাব্য গীতি অন্তর গভীরে।
সাহিত্য জগতে তিনি শুকতারা চন্দ্র
আঁধার পতিত হৃদে আলো রেখা রন্ধ্র।

চতুর্দশপদী কবিতা
বিন্যাস: ৮ + ৬।
অন্ত্যমিল: কখকখ, গঘগঘ, ঙচঙচ, ছছ
বৈশাখ ২৫, ১৪২২

আড়াল

আড়াল

রাত যেই শেষ, দিন আসে
পৃথিবীটা হাসে;
মানুষ আর সকল পশুপাখি
মেলে তার আঁখি।

আবারো শুরু তবে পথচলা
কান্না-হাসি খেলা;
ঘুরেফিরে ঐ কৃষ্ণ মুখোশে
রাত ডাকে পাশে।

সোনা রবির বুকখানি চিরে
আলো নেয় কেড়ে;
শশী মুখে সে ঐ স্নিগ্ধ হাসি
অমা দেয় যে পিষি।

মরুতে ঝরে কত বৃষ্টি অগ্নি
বেসুরা রিনিঝিনি;
সততই বহে যেন লু-হাওয়া
নেই মমতার ছোঁয়া।

দ্যাখি সমুদ্র, উচ্ছ্বাসে উত্তাল
যেন সুখে মাতাল;
কেন তবে, যেই পৌঁছে তীরে
ব্যথায় নুয়ে পড়ে।

প্রকৃতির মুখোশে, কে বা সে
বাঁকা হাসি হাসে;
খেলা খেলে, ধাঁধার ধূম্রজালে
ধুতুরা শিলার কোলে।

অভিযোগ

অভিযোগ

সতত যেন তোমার অভিযোগ
আছি আমি বড় একা;
বছর গড়ায় রাখি না সংযোগ
কি সেই প্রহেলিকা ?

মা বলেন কেমন আছিস তুই
কি বা খাস্ কি পরিস্ ?
মা, এরই নাম বিদেশ বিভূঁই
গিলি কৈ আদর আশিস।

কিন্তু কৈ আমি তো একা নই
মন চোখে সবি দেখি;
তুমি আর মা আর আছে বই
সাথে ঐ একটি পাখি।

তপ্ত ঐ রোদে যখন পথ চলি
ছায়া থাকেই পাশে;
রাতে দেখি তারাদের হোলি
সাথে শশীও হাসে।

ব্যথা হৃদয়ে কোথায় শূন্যতা
দুখগুলো করে নৃত্য;
পাশে আছে হরদম অস্থিরতা
একা নই, ভাব যত।

তবু তোমাদের ঐ অভিযোগ
উঠা বসা একা একা;
যন্ত্রণা জ্বালা করে যোগাযোগ
জাগায়, দিয়ে ধাক্কা।

কবি গুরুকে শ্রদ্ধাঞ্জলি

কবি গুরুকে শ্রদ্ধাঞ্জলি

কেউ কি তবে জানো, বলতে পারো
সবচে’ মিষ্টি ভাষা পৃথিবীতে কোনটি ?
বিশ্ববাসী আমোদিত; বিমোহিত আরো
তব শিল্প সৌন্দর্য কলি আছে যে ফুটি।

২৫শে বৈশাখে ধরায় নিলে পদার্পন
কলমের আচরে দিলে শিল্প সম্ভার;
হলে গো তুমি বাংলার সাহিত্য দর্পন
পেলে বিশ্ববাসীর স্বীকৃতি উপহার।

তুমি নও শুধু কবি সাহিত্য জগতে
কম হবে যদি বলি, ‘তুমি শুকতারা’;
ভালোবাসা প্রেম সদা তব লেখনীতে
ধর্ম দর্শন গান সবি তো মনকাড়া।

‘অভিলাষ’ প্রকাশিত বয়স বার’তে
কোথা পাবো এমন দীপ বিশ্বজুড়ে ?
দু’দেশ গর্বিত তোমার রাষ্ট্রীয় গীতে
লোকে বলে, এমন তো রবীন্দ্রই পারে।

এঁকেছো এমনই শিল্প সাহিত্য কলি
বিশ্ব হতবাক, রচিলে যেন বিস্ময়;
করলে সমৃদ্ধ বাংলাকে প্রাণ খুলি
হলো মুগ্ধ সবি আরো এ বিশ্ব বলয়।

খুশিতে সজল

খুশিতে সজল

জানি, প্রতিবাদী তুমি বুকে প্রচণ্ড ঘা
কলম তোমার তাই যে জ্বলে উঠে তা;
কত মিসিল স্লোগান সবি হয় সার
হৃদয়ে ব্যাথার ঢেউ জাগে বার বার।
রাজপথ শূন্য তুমি চলছো একাকী
স্বার্থান্ধ সুযোগ বুঝে শুধু মারে উঁকি;
তবেই বিপ্লব যেন স্বার্থক, সফল
জনতাও সাথে, সাথি কলমের বল।

বিফলে ভাবছো তুমি, এ শনির দশা
জগত মেলার খেলা অবিকল পাশা;
বিপ্লব কখনো তবে কই যায় বৃথা
তুমি পেলে কতটুকু ভেবো না অযথা।
তোমার কলম জন্ম দিবেই ফসল
সেহি পাওয়া, মানুষ খুশিতে সজল।

চতুর্দশপদী কবিতা

অনুবাদ কবিতা : যখন তুমি বুড়ো

যখন তুমি বুড়ো
অনুবাদ কবিতা : When You Are Old :

হলে যেই পুরাতন ধূসর
নিদ্রায় কাটে সকল অবসর;
স্বপ্ন যত তখন তুলতুলে
বইপাতার মত হেলে দুলে।

নেতিয়ে তনু মন ঝিমায়
পথ অগ্নি লেলিহান শিখায়;
স্বপ্নপথে ধারালো পাথর
স্লথ গতি অন্তে যেন সাগর।

কত ঐ সুখ মধু মুহূর্তে
প্রেমে সিক্ত চোখের ছায়াতে;
কেউ আবার মিছিমিছি
বড় কাছাকাছি দুধের মাছি।

তবে ছিল সে একজন
শোকে ও দূঃখে তারই নয়ন;
যেন চির সঙ্গী তীর্থযাত্রী
ছিল সেতো জীবন জ্যোতি।

প্রেম তার কত অবিচল
স্রোতস্বিনী সুরগান কলকল;
গোপন পর্বত পাহাড়ে
লুকিয়ে গেছে তারার ভিড়ে।

মূল : William Butler Yeats

তোমার চোখদু’টি সতত

তোমার চোখদু’টি সতত

তোমার চোখদু’টি সতত
বলে মনের কথা;
পাহাড় দেখে যা চাও সেতো
তার সে বিশালতা।

দেখি যত জল্পনা ঐ চোখে
যেন হৃদয় জুড়ে;
স্বপ্নও তখনি শেষ এঁকে
যাবে পাহাড় চূড়ে।

দেখেছি এক জোছনা রাতে
পশ্চিম বারান্দাতে;
গালেতে হাত তন্ময় চিত্তে
মগ্ন ঐ চন্দ্রিমাতে।

আজ তবে চোখ ছল ছল
তাও বুঝি কি পেতে;
হতে চাও চাঁদ পরিমল
আকাশটাও ছুঁতে।

বিন্দু বিন্দু তারপর সিন্ধু
প্রয়াস আর ইচ্ছে;
হয় তারাই ভাস্কর ইন্দু
কখনো নয় মিছে।