রত্না রশীদ ব্যানার্জী এর সকল পোস্ট

অপাচ্য

থুতু গেলা হর হামেশা-
ঘেন্না ধরে যায় এই
লোক-দেখানি রঙিন চেহারা –

থুতু ফেলে দিতে গেলে নিচের মাটিতে
সমস্ত সংসার হাসে মুখের ওপরে,
মাগনায় জ্ঞান মেলে যত্রতত্র বিগশপার ভরে –

– একহাতে কি করতালি বাজে?
এক মুখে শুনে কিন্তু কোরোনা বিচার।
খোঁজ নাও, হয়তো মনোবিকারই বা হবে! –

নিচে নইলে, থুতু যদি ওপরে ছেটাই,
মাথা- মুখ – চোখ – কান- গলা-
অন্ধতায় বন্ধ হবে সম্পর্কে সবাই।

প্রতাপ

মুক্তি ছিল চাঁদমারি,
তেজ ছিল আঙুলের টিপে

যখন যেমন পেতো
পেতলের আঙরাখায়
সাবেক কালের চুলো
অথবা প্রদীপে
সলতে পেতে পুইয়েছে তাপ

বন্ধতায় মুক্তি পেতে আপন প্রতাপে।

ফুলফুল খেলা

কোনো তর্কে আমার আর মন নেই।
নিজের রক্তের লালে ফুলকারির
আত্মঘাতী শখও এই সেদিন জুড়ালো।

কতোখানি শৌখিন আর সুন্দরের চ্যালা বুঝে দ্যাখো!
একহাতে তালি দিতে মহাযুদ্ধী সেমিনার
ফুলের আড়াল দিয়ে নির্লজ্জ টেবিল সাজায়।

বুক তো পোড়ে প্রদীপেরই, একা-
তাই, ফুল নয় পাখি নয়,
বয়ে যাওয়া অগ্নিস্রোতে
আতান্তরে ভবিষ্য সাজাই।

অন্যথা

আকাশ বলে তো সত্যি কিছু নেই,
তবু তাকে অনন্তের শিরোপা চড়াবে যদি তুমি,
একবুক ফাঁকা ফুঁয়ে
চুমকি মাখা নক্ষত্রের বাজার বসাতে যদি চাও,
যদি শুন্যতা ছাড়াতে চেয়ে
মহাশূন্যে সিঁদকাঠি নাড়াবার ঝুঁকি নাও,
তবে তোমার হাতেগড়া বিপন্নতা ঘিরে
বিকল আমার আর কি’বা করার বাকি থাকে-

ভাঙচুর পৃথিবীর সর্বদা- সর্বথা
ঝাড়বাতি – ইমারত
ঝড়ে জলে জঞ্জালেতে ওড়ে।

আরণ্যক

mqdefault

গান গাইতাম বলে
আমাকে কোয়েলের মতো নরম ভেবেছিলো,
ছবি লিখতাম বলে
ভেবেছিলো দিগন্তের মতো খোলামেলা,
টুকরো টাকরা ডালপালা জুড়ে
রক্ষিনী- যক্ষিণী ছাঁচ গড়ে দিতাম বলে
সে তার আদিম অরণ্যে
হাত ধরে টেনে নিতে
এক ফোঁটা অপেক্ষা রাখেনি—

তারপর, শিকারের চেরা রাতে
ভেষজ এরোমা মাখা
জ্যোৎস্নার আয়নায়
পোড়াগাছ–টেরাকোটা বলিরেখা
নষ্টচাঁদ কালপুরুষে
মাখামাখি — কান্নাহাসি– বানভাসি জল চালাচালি

ফের আবার ফিকে ভোর
ফের সেই ঠা ঠা তামাসা রোদ্দুর…।

অথচ, এতো কিছুর পরেও
আমার রুক্ষ পাথর শতচ্ছিন্ন করতল ভ’রে
যখন সত্যি সত্যিই আকাঙ্খা আদলে
ঝকঝকে আগুন বুকে
শুধুমাত্র প্রদীপই ফললো—
সে, ভর্ৎসনা হিমভাস্যে
বুলি ছুঁড়ে ছিলো —-

বাঘ মারার প্রস্তুতি না নিয়ে
কেন তুমি নীলবর্ণ শেয়ালের
সহজ খোরাক হতে গেলে!

আংশিক গৃহবধূ

হে নিমগ্ন মন জীবন,অক্টোপাসে জড়িয়ে তোমার দেনা,
বন্ধকীতে ওড়ার খোয়াব, বন্ধকীতে ডানা

বিপর্যস্ত নতমুখী, আগার থেকে মুড়ো
সিন্ধুকেতে বন্ধ থেকে হয়ে যাচ্ছে বুড়ো

টুকুস্ রাগতে পারলে বেশটি হতো, মুরোদে আসেনা,
আসলে ভাই অতোখানি নাগালই পাইনা

কাক ভোরেতে উড়তে গেছি, দানাও নেই ঠোঁটে,
চোখ টিপেছে জা-ভাজেরা–অতোটা কেউ ওঠে!

ওদের পাতে নবান্ন ভাত,থাকুক ওরা সুখে
উড়ান সেরে ফিরলে ঘরে তাকায় না কেউ মুখে

সব ব্যাপারে নিখুঁত হিসেব, তবু্ও আমার পাতে
একচিমটি প্রতীকী ছাই থাকে প্রতীক্ষাতে

দুদ্দাড়িয়ে সাইবার ঝড়- ধামাকা- পাইরেসি
চরিত্রহীন ভাত- হেঁসেলে বুভুক্ষু বানভাসি

বেনোজলের চোরাটানে অন্তর্জলী বাণী
মারীর কোপে তেত্রিশভাগ সংরক্ষিতা প্রাণী।

দুই এবং দুই

তবেতো এই-ই বেশ হলো—
উপযোগী কাজীর মাপাজোপা নিখুঁত মুদ্রায়
নিরুপায়ে নেমে এলো একাজাগা স্তম্ভ বাতি।
সুকৌশলে অভিযোগী পেঁচাকে বাঁচিয়ে
কৌটিল্যের সাঙ্গ পাঙ্গ চ্যালা
যে যার কুটিল সাজে নিপাট নিখুঁত
পক্ষপাতহীনতার ভেকে
দিব্যি সব হেঁটে গেল সূর্য বিপরীতে —-
কারণ —-
শুধুমাত্র অন্ধকারেই
দু-য়ে দু-য়ে পাঁচই সঠিক।

রূপকথা নয়

একটা গল্প বলার কথা ছিল কবের থেকে
আজকে সেটাই বলার ফুরসৎ —
মোগলমারী গ্রামের আমার বিপদবারণ মিতার
দুহাত ঠেলে কাল পেরোবার সার্কাসী কসরৎ।

ছালছাড়ানো শতাব্দীটার অঙ্গজোড়া ব্যাধি
উবে গেছে বছর থেকে অঘ্রাণী ধান ঘ্রাণ
হাতেপায়ে বুক রগড়ে ধুলোর পাহাড় ছেনেও
পায়নি কোথাও আদিম জ্বালার নিকষ পরিত্রাণ —

মিতার থেকে হাত বাড়ালেই মিল পেয়ে যায় চিতা,
দখিন দামোদরে সেদিন দাহন- খান্ডব
আগুন পোড়ায় ধূ ধূ উধাও আজন্ম লাঞ্ছনা
চরাচরে গৃধিনীদের বিশুদ্ধ তান্ডব।

ফাঁদ

সৃজিত অরণ্য মাঝে চিহ্ন দেওয়া মহানিম গাছ
সেই তার আশ্রয় ছিল, বহু বছরের ঝড়ে জলে
তার তেতোবুকে মধুরস চেটেপুটে বেঁচে থেকেছে,
তার নিমগন্ধী নিঃশ্বাসের কাছে বসে রাতচেরা আলো চিনেছে —

তবু্ও সে কোন একদিন
পাতার ঝালর ঘেরা মোমরঙা শ্বেত পাথরের গড়া
বাঁধানো ঘাটের ছবি দেখে
একেবারে স্তব্ধ হয়ে যায়—-
মোমরঙা ঘাটে নেমে আবারও একবার সে দারুণ রকম চমকায়—-
বেঁধে রাখা পচা জলো নিষ্করুণ দুর্গন্ধে তোলপাড় এদিক ওদিক দশদিক —
পাগলা পাওয়া ঠোঁট বিড়বিড় করে —

আমারই বোঝার ভুল ছিল,
ভুল টা আমারই নিজেরই নিশ্চিত —
জন্মাবধি শকুনকে দেখেও বুঝিনি,
ঊর্ধ্বাচারী হলেই যে
শুদ্ধাচারী হতে হবে,
এমন কথাতো কেউ কাউকে দেয়নি।

হঠযোগ

হাওয়ার কুন্ড থেকে উঠে এসে
ফের হাওয়াতেই গা-ভাসানো ক্রিয়া- সমবায়ে,
কঙ্কাল – কোটরে ফের জেগে ওঠার
চিহ্নকামী হঠযোগ ধূম – প্রত্যয়ে,
মূহুর্ত- চুর্ণাংশ- ক্ষনের ভিতরকণিকায়
ঘাইতোলা তিলভোর অঙ্কুরিত দানা,
মাটির বালিশ গালে চেপে
খটাখট আজনা বাজনা
শুকনো হাড়ে ভেল্কি জোড়ে ফের,
এ ফোঁড় – ও ফোঁড় চষা
কবরিত হাড়- হিম হাত
নড়ে, আর ইশারায় হাঁকে ঃ
কবর- বাসরে একা শুয়ে আছি,
আয় শুতে চলে আয়, উথালি আমিনা —-

দন্ডসেবা

নাচতে নেমেছো যখন
ও ময়ুর, পেখম মুড়োনা—
জানি, এই নীলাকাশ মুজরো নাচ উস্কে দেবেনা,
শেকল পায়েতে বেঁধে
খুব কিছু নাচাও ঘটেনা —

তবু, দন্ডসেবা দেখেছো তো চেয়ে?
জ্বলন্ত আগুন দিন
বুক পেট মাথা কসরতে
আঁক কেটে মানসিক শোধা?
তবে, ময়ূরী পেখমহীনা,
দন্ডমেপে দেবে ঠিক
মাপে মাপে দন্ডকাঠি ধরে…

শেষ দেখা না দেখে
ও ময়ূর, পেখম মুড়োনা—
নাচাই মনস্থ করে এতখানি নেমেছো যখন….

মোর মালঞ্চে বসন্ত …

প্রোমোটারি দৌরাত্ম্যে
দখিনা দুয়ার ঝেঁপে
সোকপিট স্থান সংকোচ,

অথচ অব্যয়ী সর্বনাশ
মাতমে মেতেছে আজ
পলাশের শিমুলের বেশে,

ধুন্ধুমার জ্বালা বুকে
গনগনিয়ে পুড়তে থাকি
প্রতিদিন, প্রতিটি প্রহর —-

অগত্যার উসকাঠিতে
হা- বসন্তের দিনে উপদিনে
অব্যর্থে আগুন দিই
বর্ণচোরা সংস্কারের আগল- বেড়াতে।

সসেমিরা

নিরস্ত্রীকরণ শব্দের চাতুর্য ধরতেই
বদলে গেছে যুদ্ধের প্রহর —–

এখন যুদ্ধের জন্যে
হন্যে হওয়া অস্ত্র লাগেনা,
সসাগরা যুদ্ধক্ষেত্র জুড়ে
যুদ্ধমগ্ন শেষের দশকে
প্রতিকোন অস্ত্রলিপ্ত
শোক ও সন্তাপে।

শিলমোহর

শিলমোহর

ক্যাওটের জাল ফালি- কুচি হল, বোষ্টমের কি-বা এলো গেলো?
নিশ্চিন্ত আশ্রয় ছেড়ে বরণ করেছে যে অপমানী বহুতর ঋণ
স্রেফ কথারই ফানুসে বিন্দাস উড়ে যায় দিন- প্রতিদিন
অতীব নিশ্চিন্তে তার চেঁছেপুঁছে ডোবে সব আলো।

#
দুটো দিন বাছা কথা – ছবি – টবি শুনে দিব্য উড়ে যায়
মাঝগাঙে নৌকোটি উল্টিয়ে দিলে তারপর
দমবন্ধ নাকানি – চোবানি – মাদারীর খেল্ – এ হাবুডুবু খেলে
জান্ বাঁচানো ভুলে মান নিয়ে প্রাণপন দৌড়ে পালায়।

#
‘শিলমোহর’ বাস্তবিকে দামী এক লব্জ
শ্মশানবৈরাগ্যের শৌখিনতা স্বত্বেও মর্জিমতো ঘরে ঢুকে যাওয়া চলে,
ইচ্ছেমতো সংযমের ভেক ধরে, ইচ্ছে মতো ডাবল্ গেম খেলে।
বিশ্বাসীরই ভাঙে বুক, যেন সঠিক কারণে বড়ো জব্দ।

#
একের মোচ্ছবে হয় অন্য আর একের আরাঁধ,
বেকুবি মেয়েরা তবু কোনো খানে তোলে নাকো বাঁধ।
__________________________________

স্মৃতিময়

স্মৃতিময়

কে কাকে স্মৃতিতে জমিয়ে
নষ্ট করে দুর্মূল্য প্রহর!

সেদিন কবেই চলে গেছে
যখন কাঙালের মতো
হারাই- হারাই চোখে
পৃথিবী ঢুঁড়েছি হুটপাট!

তবুও তাঁকে আমি ভুলতে যাবো কেন?

দুকুল ভাসানো আমার সম্পদ- আবেগ
এই বয়েসেও যে বেঁচে বর্তে আছে,
ও-ই যে তার একমাত্র বিশল্যকরণী!

নতুবা
কে-ই বা কাকে
স্মৃতিতে আগলে রেখে
ফুঁকে দেয় পুরোটা জীবন!