রিয়া রিয়া এর সকল পোস্ট

সেই মেয়েটা তারারকুচি

সেই মেয়েটা রোজই আসে
সবুজ ঘাসের স্বপ্ন বুনে,
নীলচে আলোর পরত গুনে
লুকিয়ে মাখে মেঘের ফেনা।
রাতের তারার আকাশ দেখে
হাত ছড়িয়ে হাওয়ায় ভেসে,
থমকে দাঁড়ায় ঝড়ের কাছে
পকেট ভরা তারার কুচি।

খুব গরমে রোদকে বকে
বৃষ্টিকে কে যে আগলে রেখে।
ওই মেয়েটা যখন আসে
চাঁদের আলোয় আকাশ ভাসে।
গপ্প বলে কথার ফাঁকে
মেঘ পরীদের সঙ্গে ডাকে
তুমিই জানো সেই মেয়েটা
একটু খানি পাগল কিনা!

আমিও তাকে লুকিয়ে দেখি
ছাদের মাঝে ঘুরতে থাকি
চোখের তারার মাঝে কি সে
রামধনুকে লুকিয়ে রাখে?
মাঝে মাঝে ভুল করে সে
আবোল তাবোল বকবকমে
মনটাকে তার লুকিয়ে রেখে
ছড়িয়ে পড়ে পরাগ মেখে।

রোজ সকালে চুপটি করে
পুব আকাশের জানলা খোলে,
চলতে গিয়ে পথের বাঁকে
থমকে গিয়ে তোমায় খোঁজে।
মেয়েটা বুঝি বড্ড সরল
একটু দস্যি নেইত গরল,
বৃষ্টি হলেই ভিজতে দেখি
ময়না, শালিক সঙ্গে রেখে।

আমি জানি কোথায় থাকে
আমার মনের ঠিক কিনারে
ফুল পরীদের কাপড় পড়ে
আমায় ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে কাছে।
অবাক হয়ে আকাশ দেখে
মনে মনে গুনগুনিয়ে
হাজার তারার আলোর মাঝে
চাঁদের আলোয় স্নান করে সে।

চু চেন তাং

চু চেন তাং

চু চেন তাং! কার নাম চু চেন তাং ? এতো আমাদের দেশীয় নাম নয়। খাস চীন দেশীয় নাম। আরও অবাক লাগবে যে, চু চেন তাং রবীন্দ্রনাথেরই আর এক নাম। কবি সবেমাত্র নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন গীতাঞ্জলী লিখে। সমস্ত বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে ভারত-রবির খ্যাতি। দেশ দেশান্তর থেকে প্রচুর আমন্ত্রণ আসছে তাঁর কাছে। তিনি যে রবীন্দ্রনাথ, বিশ্বকবি, তাই বিশ্বের ডাকে সাড়া না দিয়ে তাকে বিমুখ করবেন কি করে ? তাই পূর্ব এশিয়া থেকে শুরু করে বিলেত, আমেরিকা, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, জাপান এবং আরও নানান দেশ তিনি ঘুরলেন। তারপর ডাক এলো মহাচীন থেকে। পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে আমন্ত্রণ জানালো।

ভারতের যুগ যুগান্তের বন্ধু, কৃষ্টি ও সভ্যতার সহযাত্রী মহাচীনের আমন্ত্রণ পেয়ে কবির অন্তরাত্মা আনন্দে নেচে উঠলো। ভারত ঋষি, কবি, আসছেন চীন ভ্রমণে। কিভাবে তাঁকে সম্বর্ধনা জানানো হবে ? আর কি ভাবে করা হবে তাঁর আদর আপ্যায়ন? তাই নিয়ে সকলেই মহাব্যস্ত। দেশের ছোট-বড়-যুবক-ছাত্র সবার পক্ষ থেকে চীন সম্রাটের কাছে আবেদন গেল মহামান্য অতিথি কবীন্দ্র রবীন্দ্রনাথ কে যেন চীন সম্রাটেরই প্রাসাদে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। এ যে সম্রাটেরও সৌভাগ্য, তাই অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে দেশবাসীর আবেদনে সাড়া দিলেন চীন সম্রাট। ১৯২৪ সালে রবীন্দ্রনাথ পা রাখলেন ঐতিহাসিক পিকিং শহরে, এখন যার নাম বেজিং বা পেইচিং। সমগ্র দেশের লোক জড়ো হলো কবিকে দেখার জন্য। তিল ধারণের জায়গা নেই। কবিকে দেখেতো সবাই অবাক। কবি কই ? এ যে শান্ত সমাহিত সর্বসুন্দর এক ঋষি, যাঁর চোখে মুখে দীপ্ত অপূর্ব সুন্দর জ্যোতি। ভূতপূর্ব চীন সম্রাট হু য়ান তাং কবিকে অভ্যর্থনা জানালেন। দেশবাসীর পক্ষ থেকে তিনি কবিকে উপহার দিলেন ৪০০ বছরের পুরনো একটি ছবি। ভারত-চীনের অতীত দিনের মধুর সম্পর্কের স্মারক। সেই প্রতীক উপহার পেয়ে আনন্দ উপচে পড়ে বিশ্বকবির।

এই আনন্দের ঢেউ যেতে না যেতেই সেখানেই আরেক আনন্দের বান এলো, কবির জন্মদিন – ২৫শে বৈশাখ। রাত্রির অন্ধকার মন্থন করে সূর্যশঙ্খ বেজে উঠলো। পরম সৌভাগ্যে মেতে উঠলেন চীনবাসী। বিশ্বকবির জন্মোৎসব পালন করবেন তাঁরা কবিকে সঙ্গে নিয়েই। কবি হয়তো সেই সময় ভেবেছিলেন, “পরবাসী আমি যে দুয়ারে চাই, তারি মাঝে মোর আছে যেন ঠাঁই”। তিনি এখানেও পরমাত্মীয়দের খোঁজ পেলেন। চীন দেশীয় রীতিতেই পালন করা হলো তাঁর জন্মদিন। সারা দেশ থেকে এলো শত শত উপঢৌকন। নীল পাজামা, কমলা রঙের আলখাল্লা আর মাথায় বেগুনি টুপি দিয়ে সাজানো হলো কবিকে। সবার সামনে কবি বক্তৃতা দিলেন আবেগভরা কণ্ঠে। চীনের মানুষও তাঁদের প্রাণের ভাষায় শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন বরেণ্য কবির জন্মোৎসবে। শুধু শ্রদ্ধা জানিয়েই চীনবাসী ক্ষান্ত হলেন না, তাঁরা তাঁদের প্রিয় কবিকে নিজস্ব ভাষায় নতুন নামকরণ করে তাঁকে একান্ত আপনার পরমাত্মীয় করে নিলেন। কবির নতুন নাম দিলেন তাঁরা – “চু চেন তাং”, যার অর্থ “বজ্রের ন্যায় পরাক্রান্ত ভারতসূর্য”। পরম তৃপ্তিতে কবি হাসলেন। হাসলেন ভারতসূর্য।

তোর জন্য ২

তোর জন্য

ইথার তরঙ্গে রেখে গেলি তোর ফিসফিস।
মনের আয়নায় তোরই প্রতিচ্ছবি।
তোর জন্যই ধূপ-জ্বেলে-রাখি মন্দিরে।

আমি বরাবরই আগুন মুখী,
নায়াগ্রাকে বেঁধে রাখি চোখে।
এই যে তুই মেপে নিচ্ছিস সময়
প্রতি পদক্ষেপে অজানা ঠিকানা।
বৃত্তবন্দি বিন্দুতে ভাবছি বসে
কোন পথে যাবো? স্বর্গে,
না কি পাতাল মুখে!

প্রত্যাখ্যানের কিছু রং থাকে নিজস্ব।
পুড়িয়ে দেয় চোখ, আত্মা, মন।
তবু সন্ধ্যা হলেই আলো জ্বেলে রাখি,
এক পরিব্রাজকের মঙ্গলকামনায়।

তোর জন্য

তোর জন্য

তোর জন্য বনপলাশী
আমার জন্য কাঁটা
তোর জন্য ইচ্ছে কুসুম
অনেকটা পথ হাঁটা।
তোর জন্য চাঁদের রং
সুর্য্যি ডোবা আলো,
তোর জন্য মেঘলা মন
শব্দেরা জমকালো।

তোর জন্য জ্যোৎস্না নদী
স্বপ্নবিলাস হাওয়া,
তোর জন্য লালরঙা টিপ
ভাটিয়ালি গান গাওয়া।
তোর জন্য পাখির ডাক
অানন্দময় ঢেউ,
তোর জন্য আমি আছি
আমার তো নেই কেউ।

রূপকথা চুপকথা

রূপকথা চুপকথা

গত কয়েকটা দিন যুদ্ধ ছিল নিজের সাথে নিজের। যুদ্ধ ছিলো নিজেকে চেনার নিজেকে ভোলার। গত রাতে স্বপ্ন এলো ইচ্ছে পূরণের, স্বপ্ন সত্যির চিরকালই আমার আলোয় ভরিয়ে যায়। তাই অনেক খানি আলো মেখে ঘুমিয়েছি কাল।

তারপর আজ সকাল আলতো ভাবে এসে ঘুম ভাঙিয়েছে। যদিও ঘুম আমাকে আঁকড়েছিলো, নরম-গরম তুলতুলে কম্বলের ওম হয়ে। তবু উঠতে হল, ভাগ্যিস উঠেছিলাম। তাই বুঝি আজ রূপকথা হল। ঘুম ঘুম মন নিয়ে আনমনে পুবের জানলা খুলে দিলাম, একরাশ ঠান্ডা হাওয়া এসে আমায় ছুঁয়ে গেলো। আকাশের দিকে তাকিয়ে চমকে গেলাম। আমার বাড়ির থেকে যতদূর চোখ যায় ঠিক যেনো রূপকথা আঁকা হয়ে আছে। ঠিক যেন ঢেউ ঢেউ সমুদ্দুরের মাঝে একা এক জাহাজ পাল তুলে ভেসে যাচ্ছে নতুন দেশের খোঁজে। কুয়াশারা ধোঁয়া হয়ে ছবি আঁকছে ইচ্ছে দ্বীপের। আর সেই কুয়াশা চিরে হিম মেখে এগিয়ে আসছে নার্নিয়ার সেই সিংহ আসলান। একবার দেখলাম আবছা মতন আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে। যেদিন প্রথম পড়েছিলাম Chronicle of Narnia, যখন মেয়েকে পড়ে শোনাচ্ছিলাম ( সিনেমা দেখিনি আমি) তখনই আসলানের প্রেমে পড়েছিলাম। এই আমার এক দোষ বড্ডো তাড়াতাড়ি গল্প, উপন্যাসের প্রেমে পড়ি।

আবার ফিরে আসি ভোরের গল্পে। আকাশের এক কোণ ঘেঁষে নদরদাম গির্জার সেই কুঁজো ছেলেটা যেন মনে হল আলসেতে হাতের তালুতে গাল পেতে আমাকে দেখছে। মনে হল অভিশপ্ত এক রাজপুত্তুর অভিশপ্ত রাজকন্যের দিকে তাকিয়ে আছে। গোলাপ গাছটার সদ্য ফোটা লাল রঙা গোলাপ ফুলের পাপড়িতে হাত বুলিয়ে গুনগুনিয়ে উঠেছে মন।

খানিকটা মেঘ যেন কি করে জমে ছিল পাশের মাঠের জাম গাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে। এখন দেখি সে মেঘ গুঁড়ো করে পেগাসাস উড়ে নামল এই আমার ঠিক পায়ের কাছে। আসলান আর সেই অভিশপ্ত রাজপুত্তুর দেখছিল কি এসব? তবে তারা গুম-গুমে স্বরে কি বলছিল আমায়? আর কেউ কি এসেছিল কি আজ কুয়াশার ঘুম মেখে? পেগাসাসরা আজকে আমার সঙ্গে গা ঘেঁষে ডানা ঝটাপটি করে যাচ্ছিল খালি খালি। আমি তাই চুপচাপ তাকিয়ে ছিলাম।

আরো আরো কত জনা যেন মনে হল কুয়াশার জামা পড়ে দূরে দূরে ঘুরে উড়ে ভেসে গেল। কানে কত কত ফিসফিসে স্বরে অচেনা ভাষার অজানা ডাক পেয়ে সাতটা সমুদ্র ঘুড়ে উড়ে গেছে। কুয়াশা চুলের সিঁথির মতন সহস্র নদী এঁকে বয়ে গেল এ মেঘ থেকে ও মেঘ। তবু আমি ঘরে ফিরিনি, একা একা একরাশ ভালোলাগা নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকেছি।

কুয়াশারা আশপাশ ভরেছে আলভোলা আতরে, চোখ বুজে নিঃশ্বাসে টেনে নিয়ে ফুসফুসের কুঠুরিতে কুঠুরিতে ভরে নিয়েছি নীল নদের ধারের ভিজে সে ঘাসের গন্ধ। মেঘেরা সরে গেছে অনেক অনেক দূরে। আজকের দিন বুনেছে রূপকথা চুপকথা হয়ে। কুয়াশাঘন এ সকাল তাই অনেক আলোর। শান্ত এ সকাল মন ভালো করার।

গাছ

গাছ

একদিন পৃথিবী জন্মদিলো গাছেদের।
একটিই মাত্র রং দিলো সবুজ।
বিষ্ণুর নাভীপদ্মে জন্মেছিলো শব্দটা।
চারিদিকে ছায়া দেওয়া, শান্ত গাছেরা।
সূর্য পর্যন্ত একটা সুন্দর পথ করে নিয়েছে।
সবুজ গাছেদের আড়ালে, কখনো আবার
সোনালী শস্যের ভেতর দিয়ে প্রকৃতির হৃদয়ে।
প্রসারিত করা ডালপালা,
একটিই মাত্র রং সবুজ।
যার জন্য হল জল
মাটি
নারী।।

_________
রিয়া চক্রবর্তী।

ঘুম

ঘুম

কতকাল হয়ে গেল ঘুমোইনি। একটা শান্তির ঘুম। মাথায় বড় যন্ত্রণা আজকাল। তাই আমি যখন তখন দূরে চলে যাই; মনে মনে। এই একটা কাজ খুব ভালো পারি। এই আছি, এই নেই হয়ে যেতে পারি এক্ষুনি-তক্ষুনি। তবে ফিরে আসতেই হয়, সময় যে ধরে আনে বার বার। আর ওমনি যন্ত্রণাগুলোও ছড়িয়ে পড়ে শিরায় শিরায় স্নায়ুতে স্নায়ুতে। মুক্তি কথাটার মানে এখন ঠিকঠাক বুঝি। তাই মাঝে মাঝে কার্ণিশে পা দিয়ে দাঁড়াই। কি সুন্দর হাওয়া খেলে পায়ের নিচে, লোভ হয় খুব। লোভ আরও অনেক কিছুর প্রতি জাগে। এই যে এই সময়, এই নির্মেদ সময়, মনে হয় নেশার মতন ঘোর লাগা। এই সময়ের বড় বেশি লোভ, অনেক অনেক চাঁদ এনে দেওয়া প্রতিশ্রুতিময় ভালোবাসার চেয়েও।

ভালোবাসা!

ভালোবাসা ঠিক কি বোঝাই হলো না ভালো করে। মাঝেমধ্যে খুব ইচ্ছে হয় ভালোবাসতে, ভালোবাসা পেতে, শান্ত-নরম-গভীর-আস্ফালনহীন-নিস্তব্ধ অথচ দৃঢ়। আমি কিন্তু আমাকে খুব ভালোবাসি। এই চারপাশের গাছ, পাখি, আলো, অন্ধকার, আর যা যা কিছু আছে খানিকটা দূরে সেখানেও ভালোবাসা আছে। ভালোবাসি তাদেরকেও।

দূর!

দূর বলতে কতদূরে বলত? ঠিক কতদূরে, অনেকটা দূরে কি? স্বপ্নের সেই গাছটা, যেখানটাতে আকাশ চিরে দেয়, তার থেকেও কি দূরে? মাঝে মাঝে স্বপ্নে চুপচাপ শুয়ে থাকি সে গাছের ওমের ভেতরে, তাকিয়ে দেখি ঝিরঝিরে হাওয়ায় আলো আঁকে আবছা ছবি। ঠিক তক্ষুণি সে গাছটাকেও ভালোবেসে ফেলি। স্বপ্ন পেরিয়ে আসার পরেও বুকের কুঠুরিগুলোতে চুপ করে থাকে বেঁচে থাকা। কিংবা সে নদীটা, যাকে খুঁজেছি গতজন্মের স্বপ্নে, অথচ এখনও পাইনি, তাকেও তো ভালোবাসি। কখনও কখনও এইসব কিছু অসহ্য হয়ে ওঠে, মনে হয় আগুন জ্বেলে ছাই হয়ে যাই।

আগুন!

আগুনেতো শুধু নিজেকেই পোড়াতে চেয়েছি। তবু কেন আমারই এই সব কিছু অসহ্য ? দাদু বলতেন, “আত্মাকে কষ্ট দিওনা কখনও”। আত্মা কে তা জানি না,তবে আত্মাকে কি ভালোবাসতে ভুল হয়ে গেল? একটু একটু করে মুছে গেছে চাওয়া,সব স্বপ্ন। তিল তিল করে জমানো অভিমান জমে আজ পাহাড়। একদিন ভোর এসে রেখে গেছে একটুকরো মেঘ। মুখ ঘুরিয়ে আবার প্রাণপণে স্বপ্নের কাছে গেছি, যদি স্বপ্নগুলো ভুল করেও ডানা মেলে দেয় । নাহ, সে আর হবার নয়। আমি তাই চুপ থেকে আরো বেশি নিস্তব্ধতায় ডুবি। আলো চেয়েছিলাম, যাতে ভুলে থাকি আমার আঁধার। বেশ তবে, অন্ধকার গাঢ় হয়ে আসুক।

আজকের দিনটি পৃথিবীর জন্য

আজকের দিনটি পৃথিবীর জন্য

আর্থ ডে মানে বিশ্ব দিবস। বিশ্বব্যাপী কতো দিনই না আমরা উদযাপন করে আসছি বিশেষ বিশেষ দিনে আর আজকে কিনা এই বিশ্বেরই বিশ্ব দিবস! প্রতি বছর এপ্রিলের ২২ তারিখ বিশ্বের মোটামুটি সব দেশেই এই বিশেষ দিনটি উদযাপন করা হয় বিশ্বের ভালো কিছু করার লক্ষ্যে, উন্নয়নের লক্ষ্যে।

বিলিয়ন বিলিয়ন গ্যালাক্সির মধ্যে মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সি চোখে পড়ার মত কিছু না, আর এই গ্যালাক্সির এক কোনে মাঝারি আকারের একটা তারা, যাকে ভালোবেসে আমরা সুর্য বলে ডাকি, সেও এমন কোন বিশেষ কোন তারাও নয়। তবুও একে অসাধারন করেছে এর চারপাশে ঘোরা একটি গ্রহ, পৃথিবী, আমাদের একমাত্র ঠিকানা। প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছরের প্রাচীন এই পৃথিবী আজ প্রায় সাত বিলিয়ন মানুষের বাসভূমি। মানুষ ছাড়াও এই পৃথিবী আরো অগনিত প্রজাতির প্রাণী আর উদ্ভিদের ঠিকানা। মানুষ ছাড়া প্রকৃতিকে আর কোন প্রাণী এতোটা অপব্যবহার করেনি। আর মানুষই পারবে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটা বাসযোগ্য পৃথিবী নিশ্চিৎ করতে।

এই দিনটির প্রতীক হিসেবে মানুষ বিভিন্ন প্রতীকী চিহ্ন ব্যবহার করে থাকে যেমনঃ ইমেজ বা ড্রইং যা পৃথিবীকে বোঝায়, এছাড়াও গাছ, ফুল বা পাতা যা পরিবেশের পরিচিতি বহন করে। এই দিনের বিশেষ রং হলো বিভিন্ন প্রাকৃতিক রং যেমন- নীল, সবুজ বা ধূসর রং।

এই পৃথিবীটা আমাদের, একে বাঁচিয়েও রাখতে হবে আমাদের জন্য, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এবং বাঁচাতে হবে আমাদেরই হাত থেকে। অন্তত এই একটা দিন আমরা নিজেদের এই পৃথিবীটার জন্য কিছু করি… পরিবেশ রক্ষায় গাছ লাগাই, রিসাইক্লিং করি, গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের হাত থেকে মুক্ত করি বিশ্বকে। পৃথিবীকে প্লাস্টিকের হাত থেকে মুক্ত করি। নিজেকে ঋণমুক্ত করার এর চেয়ে ভালো উপায় আর কি-ই বা হতে পারে!

আমাদের নিজেদের কাজের মাধ্যমে নতুন উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে এবং তা করতে হবে এখন থেকেই। এ চেতনা শুধু একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সবার মধ্যে এমনভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে, যাতে তা আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে; যাতে করে পরিবেশ, সরকারের নীতি আর সাধারণ মানুষের জীবন—এই বিষয়গুলো এক সুতায় গাঁথা থাকে। আমরা চাই বা না চাই, বাস্তবতা মাথায় রেখে এই শতকে পরিবেশকে আমাদের প্রাধান্য দিতেই হবে।

টুকরো আমি

ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকতে ভালবাসতাম, সাদা খাতার পাতায় রং পেন্সিল আর তুলি নিয়ে যা ভালো লাগত তাই আঁকতাম, নিজের ইচ্ছে মতো পছন্দ মতো। প্রকৃতির সব রং গুলোকে ছুঁতে ইচ্ছে করত, ইচ্ছে করত সব রং গুলোকে নামিয়ে আনি আমার খাতার পাতায়। নীল আকাশে ভেসে যাওয়া সাদা মেঘগুলোকে মনে মনে কল্পনা করতাম কোন এক পরীর ডানায় ভেসে যাওয়া এক ঝাঁক সাদা পায়রা, কখনো বা মনে হতো মেঘের রাজ্যে ভেসে বেড়ানো আমার স্বপ্নের আসা নীল পরী, লাল পরী অথবা স্বপ্নে দেখা অচিন দেশের কোন এক রাজপুত্র।

লাল রং চিনেছি মায়ের কপালে পড়া বড় ওই সিঁদুরের টিপ দেখে, সবুজকে চিনেছি প্রকৃতি থেকে, কখনো আবার বৃষ্টির পরে যখন আকাশে রংধনু দেখতাম মনে প্রাণে রংগুলোকে একটা একটা করে আলাদা চিনতে চাইতাম। এই ভাবে নিজের স্বপ্নের দেশ থেকে কখন যে বাস্তবের মাটিতে পা রাখলাম, কখন যে বড় হয়ে গেলাম, আজও বুঝে উঠতে পারিনি। কঠিন বাস্তবে আছড়ে পড়তে গিয়ে কত যে টুকরো হয়েছি! তাই জানি সব জিনিস আমার জীবনে ক্ষণস্থায়ী। তাইতো হাতের মুঠি খোলাই রাখি, আঁকড়ে ধরিনা কোনকিছুই। যেসব সম্পর্ক বালির মতোই ঝড়ে গেছে, যেতে দিয়েছি। আর যারা থেকেছে আমাকে জেনে, চিনে, ভালবেসে, তাদের হৃদয়ের মণিকোঠায় যত্নে রেখেছি। তবুও জানি দিনের শেষে পরাজয় আমারই। সবকিছুই মেনে নিতে নিতে আজকাল পরাজয়ও মেনে নিই।

এতো কঠিন, এতো টুকরো হবার পরেও, কোথাও সেই ছোট্ট মেয়েটি আজও আমার মধ্যে বেঁচে আছে। তাই আজও আমি বৃষ্টিতে ভিজতে ভালোবাসি, আজও আমি পূর্ণিমার রাতে চাঁদের সাথে নিজেকে ভিজিয়ে নিতে ভালোবাসি।আজও আমি পায়রাদের সাথে বকম বকম করি। আজও আমি ঝড়ের সময়ে দুহাত ছড়িয়ে ছাদে গিয়ে দাঁড়াই। অনুভব করি ঝড়। আমার মধ্যে আজও একটি দস্যি আমি লুকিয়ে থাকে। যা শুধু আমিই জানি, আর জানে, যে আমাকে আমার থেকেও বেশি চেনে, ভালোবাসে।

সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স …

সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স এ ভোগা এক ধরনের রোগ

নিজেকে everything ভাবাটা একটা সাইকোলজিকাল সমস্যা। সবকিছুতে নিজের পান্ডিত্য জাহির করা, নিজেকে মনে করা আমিই সেরা, আমার ধারের কাছে কেউ নেই, এটাই হচ্ছে সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স। সমস্যা হচ্ছে নিজেকে এভ্রিথিং ভাবা এই মানুষ গুলো বাস্তব জীবন এ হয়ত কিছু সম্মান পায় নিজের ঢাক নিজেই পিটিয়ে, কিংবা তাদের যোগ্যতার কারণে। কিন্তু এই মানুষ গুলো কখনওই আরেকটা মানুষ এর ভালোবাসা পায় না এই সমস্যা অনেকের মধ্যেই দেখা যায়।

আবার এভাবেও বলা যায়, সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স হচ্ছে যখন কেউ নিজেকে আশেপাশের সবার থেকে বড় ও সুন্দর মনে করে। যদি আপনার এই সমস্যা থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই এই মানসিকতা পরিবর্তন করুন। এই পৃথিবীর কেউই পারফেক্ট নয়। অনেক বড় বড় মানুষেরও বিভিন্ন খুঁত বা সমস্যা থেকে থাকে। তাছাড়া এই সমস্যা থেকে অহংকার ও হিংসার সৃষ্টি হয় একটি কথা মাথায় রাখবেন, এই পৃথিবীর সবাই তাদের নিজস্ব ভঙ্গিতে সুন্দর। নিজেকে ভালোবাসতে শিখুন। এটা কেবলই মনের ব্যাপার।

কিছু সমাধানের চেষ্টা :

১. নিজেকে প্রকাশ করুনঃ-

আপনি যা তাই প্রকাশ করুন বা দেখান। অন্যের কাছে ভালো হওয়ার জন্য বা নিজেকে পছন্দ করানোর জন্য আপনি যা নয় তা হওয়ার বা দেখানোর চেষ্টা করবেন না। এতে করে মন থেকে কখনোই শান্তি পাবেন না। নিজের মত থাকুন, আপনি যেমন তেমনটাই প্রকাশ করুন। এতে করে কমপক্ষে দিন শেষে একটা শান্তির ঘুম দিতে পারবেন এই ভেবে যে কিছু মানুষ অন্তত আপনি যা তার জন্যই আপনাকে ভালোবাসে।

২. অন্যদের সম্মান দিনঃ-

এই পৃথিবীতে নানান রকমের মানুষ রয়েছে। কারো সাথে কারোর মিল নেই। আপনি যেভাবে চিন্তা করবেন অন্যরা সেভাবে চিন্তা নাও করতে পারে। কারো সাথে আপনার মনোভাব না মিললেও তাদের হেয় করবেন না। সবসময় অন্যের ব্যক্তিত্বকে সম্মান দিন। তাহলেই আপনি সম্মান পাবেন।

৩. নিজের বুদ্ধিমত্তা বাড়িয়ে তুলুনঃ-

সময়ের সাথে সাথে চেহারার সৌন্দর্য হারিয়ে যাবে কিন্তু এই বুদ্ধিমত্তা সবসময় থাকবে আপনার সাথে। এই ইন্টারনেটের যুগে যেখানে সবকিছুই আপনার হাতের নাগালে সেখানে পুরো বিশ্বের ব্যাপারে নিজেকে আপডেটেড না রাখা একেবারেই বোকামি। সারাদিন ঘরে শুধু শুধু বসে না থেকে অবসরে পছন্দের লেখকের বই পড়ুন, খবর দেখুন, বিভিন্ন দেশের ইতিহাস সম্পর্কে জানুন, নতুন নতুন রান্না করুন, গান শুনুন। যেসব কাজ করে আপনি আনন্দ পাবেন সেগুলো করুন। বিভিন্ন সৃজনশীল কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখুন। এতে করে আপনার সময় যেমন খুব ভালো মতো কেটে যাবে সাথে সাথে জ্ঞানও বাড়বে।

৪. মন খুলে হাসুনঃ-

হাসির ব্যাপারে কখনোই কৃপণতা করবেন না। সবসময় মন খুলে হাসুন। এতে করে আপনার চেহারায় যেমন উজ্জ্বলতা ছড়িয়ে পড়বে ঠিক তেমনি অন্যরাও আপনার হাসিতে মুগ্ধ হবে।

৫. ঈর্ষাপরায়ণতা/ হিংসা থেকে দুরে থাকুনঃ-

মনের অনেক বড় বড় কিছু সমস্যার মধ্যে এটি হল একটি। মুখে যতই অস্বীকার করি না কেন ভিতরে সবাই কমবেশি ঈর্ষা পোষণ করে থাকি। এটি আমাদের ভিতরের সৌন্দর্যকে তিলে তিলে নষ্ট করে ফেলে। আপনার থেকে সুন্দর বা ধনী কাউকে দেখে আপনার মনে হতাশা থেকেই শুরু হয় ঈর্ষা। এটিকে একদম প্রশ্রয় দিবেন না। সৃষ্টিকর্তা সবাইকে সবকিছু দেন না। হয়তো দেখা যাবে আপনার যা আছে অন্যদের সেটা নেই এবং তারা সেটা দেখে আফসোস করে। আসলে দুনিয়ার নিয়মই হল এমন, নদীর ওপারের ঘাস সবসময়ই বেশি সবুজ মনে হয়। নিজের যা আছে তাই নিয়ে খুশি থাকুন, আপনার আশে পাশের মানুষদের যা আছে তা ভিতর থেকে মেনে নিতে শিখুন এবং খুশি থাকুন। ঈর্ষান্বিত হয়ে অন্যের ক্ষতি করার জন্য উঠেপড়ে লাগবেন না। নিজের মনকে কন্ট্রোল করা শিখুন। আপনার যা ই থাকুক না কেন তার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞ থাকুন এবং বিনিময়ে আপনি আরও অনেক কিছুই পেতে পারেন। নিজেকে ঈর্ষার হাত থেকে বাঁচান, দেখবেন আপনি নিজেই ভিতর থেকে শান্তি অনুভব করবেন যার সৌন্দর্য বাইরে থেকে ফুটে উঠবে আপনার চেহারায়।

** একটি ঘটনা বলি :-
_______________

১. এক বন্ধু কাম দিদির সাথে সেদিন আড্ডা হচ্ছিলো। উনি খুব সিনিয়র একজন ডাক্তার। ব্যস্ততা সাঙ্ঘাতিক।সেইদিন রাত্রেই হঠাৎই আমার অন্য এক বন্ধুর স্বামীর পেটে প্রচণ্ড ব্যাথা। বিছানা থেকে উঠতে পারছেন না এরকম অবস্থা। অনেক রাত তখন, ডাক্তার পাওয়া পাওয়া দূরূহ। বন্ধুর পরিচিত একজন ডাক্তার ছিলো। কোন উপায় না দেখে, বন্ধুটি সেই ডাক্তার ফোন করলো এবং শুধু জানতে চাইলো, এ মূহুর্তে কি করবে?সেই ডাক্তার উত্তর দিলো, সে এখন কিছু বলতে পারবে না, তার পক্ষে আসা সম্ভব না।এইভাবে রাত দুপরে তাকে যেনো ফোন না করে। বন্ধু তার এহেন আচরণে বেশ দুঃখ পেলো।কারণ পারিবারিক ডাক্তার সে। তারপর আমায় ফোন করলে আমি আমার ডাক্তার বন্ধুটির নম্বর দিই। উপায়ন্তর না দেখে বন্ধু, সেই ডাক্তার বন্ধুকে ফোন করলো। রাত তখন অনেক। সিনিয়র ডাক্তার। যদিও আমি তাকে দিদি বলেই ডাকি। প্রথমে ফোন ধরতে পারেননি। পরে ফোন দেখে সেই রাত কল ব্যাক করেন। এবং সব সমস্যা শুনে, তিনি সেই রাতে আমার বন্ধুর স্বামীকে দেখতে যান।

এই গল্প এজন্যই বললাম, আমার বন্ধু কাম দিদির জন্য সেদিন আমার গর্ব হয়েছিল, আজ এতদিন পরেও আমি এর কথা আমি তার কথা বলছি, যে তিনি কতটা ভালো মানুষ। কিন্তু সেই ডাক্তার ,যিনি আমার সেই অসুস্থ বন্ধুর পারিবারিক ডাক্তার ছিলেন। যার সাথে এত ভালো সম্পর্ক কিন্তু যখন অসুস্থ হলো বন্ধুর স্বামী, তখন এমনভাব দেখালো, যে সে তাদের চেনেই না। এবং তিনি নিজের প্রশংসা নিজে করতে পারদর্শী। নিজের ঢাক নিজেই পেটায়। মানে সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স এ ভোগা একজন মানুষ। এইসব মানুষরা নিজের ঢাক নিজে পেটানোর জন্য হয়তো সম্মান পায়, কিন্তু রিয়েল ভালোবাসা পাওয়াটা মনে হয় অর্জন এর বিষয়। এদের সেই ক্ষমতা থাকে না।

সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স অনেকের ভেতর আছে তবে যারা বিজ্ঞান নিয়ে থাকে বা ফ্যাসিনেশান আছে তাদের ভেতর এটা কম দেখা যায় আমার মতে। কারণ বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত তাদের দেখিয়ে দেয় যে তুমি কত কম জানো। আর সেজন্য তারা নিজেরা যা জানে, তা সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার প্রবণতা থাকে, আর তার জন্য, তাকে এসব ব্যাপার সবার বোঝার উপযুক্ত করে তুলতে হয় আর তা শুধুমাত্র সহজ উপায়েই করা সম্ভব। কিন্তু তাদেরকে দল থেকে বাদ দিলে যারা থাকে,তারা প্রত্যেকে মনে করে একটা বিশাল কিছু তারা জানে বা বোঝে বা তারা আলাদা কিছু, কেউ কেউ ভাবে,”আমি নিজে কষ্ট করে এতটা পথ এসেছি, আর তুমি এতো সহজে এসে যাবে! এভাবে বিভিন্ন জটিলতা বা কুটিলতা থেকেই এই সুপিরিয়র কমপ্লেক্সিটির জন্ম হয় এবং তা তাদের আচ্ছন্ন করে ফেলে।

** পরিশেষে একটা কথাই বলি :-

আমাদের মুখ হল মনের আয়না। মন জটিল হলে তা মুখেই ফুটে ওঠে। আর চোখ হল মনের জানলা। আপনার চাহনিই বলে দেবে আপনার মন স্বচ্ছ নাকি কলুষিত। বাইরে থেকে সুন্দর দেখানোর জন্য কত কিছু প্রসাধনসামগ্রী ব্যবহার করা হয়।বাইরের নয়, মনের সৌন্দর্যও বাড়িয়ে তুলুন। তবেই আপনি হয়ে উঠবেন সবচেয়ে সুন্দর, সর্বোপরি একজন সুন্দর মনের মানুষ। সুন্দর মনের মানুষ হতে চেষ্টা করুন।

শুভ নববর্ষ ১৪২৬

শুভ নববর্ষ ১৪২৬

রবীন্দ্রনাথের বৈশাখ মানেই বাংলার বৈশাখ, বাঙালির বৈশাখ। ‘এসো হে বৈশাখ’ এর লালিত্য উচ্চারণে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলার নববর্ষকে এক ভিন্ন মাত্রা দান করেছেন, উৎসবে আনন্দে প্রাণের বন্যায় আমাদের হৃদয়ে ঝড় তোলে তাঁর কবিতা। তিনি বলেন:

“হে ভৈরব হে রূদ্র বৈশাখে,
ধুলায় ধুসর রুক্ষ্ম উজ্জীন পিচ্ছল জটাজাল,
তপঃকিষ্ট তপ্ত তনু, মুখে তুলি বিষান ভয়াল
কারে দাও ডাক
হে ভৈরব, হে রুদ্র বৈশাখ?’…
‘দুঃখ সুখ আশা ও নৈরাশ
তোমার ফুৎকার ক্ষুব্ধ ধুলাসম উড়ুক গগনে
ভরে দিক নিকুঞ্চের স্বলিত ফুলের গন্ধ সনে।
আকুল আকাশ
দুঃখ সুখ আশা ও নৈরাশ.”

বৈশাখ আসতে না আসতেই বিরূপ প্রকৃতি এসে হানা দেয় বাংলার আঙিনায়। রোদের তীব্র তেজে ঝলসে ওঠে মাঠ, ঘাট, প্রান্তর, ছাদ, আঙিনা, ফুলের বাগান। নদীনালা শুকিয়ে জলের তীব্র সংকট শুরু হয়। মাটি ফেটে চৌঁচির। রুদ্রের বাঁশি বাজিয়ে মাটিকে ভিজিয়ে দেত আকাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি, প্রলয়ংকারী ঝড়কে সাথে নিয়ে আসে কাল বৈশাখী ঝড়। ধ্বংসের বিজয় কেতন ওড়ে। কবির কণ্ঠে বাজে আত্মপ্রত্যয়ের সুর-

“তোরা সব জয়ধ্বনি কর,
ঐ নতুনের কেতন ওড়ে-
কাল বৈশাখীর ঝড়”।

রুদ্রের কাছে কাঠিন্যের দীক্ষা নিয়েই শুরু হয় বর্ষবরণ। সত্য যে কঠিন, তাই কঠিনেরে ভালোবাসিলাম- এই কঠিনকে ঘিরেই চলে আমাদের জীবন সাধনা। নিষ্ঠুর প্রকৃতির বৈরিতাকে উপেক্ষা করে ফুল ফল ফসলের ডালি সাজিয়ে সুন্দর পৃথিবী গড়ার অঙ্গীকার। তাই বৈশাখ বরণের ।

আমরা এক কঠিন সময় পার করছি। তবু সব বাঁধা কাটিয়ে আলো ফুটিয়ে ম্যাজিকের মত জনজীবনে শান্তি নেমে আসুক-স্বস্তি স্থায়ী হোক, নতুন বছরে আমরা এতটুকু আশা করতেই পারি। আশাহত স্বপ্নাহত মানুষগুলো আশাবাদী ও স্বপ্নচারী হোক, পৃথিবীকে কলুষমুক্ত করুক, জয় হোক মানবের, জয় হোক মানবতার, জয় হোক সমগ্র অনিয়মের উপর নিয়মের-সবলের উপর দুর্বলের- অশিক্ষার উপর শিক্ষার-নিরানন্দের উপর আনন্দের।

এই নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার সাথে সাথে জানাই বড়দের প্রণাম, বন্ধুদের প্রীতি ও শুভেচ্ছা আর ছোটদের জানাই স্নেহাশিস।

তারপর? বল তারপর

তারপর? বল তারপর

মাঝে মাঝে একলা সময়ে
মেঘের আড়ালে লুকোয় চাঁদ।
বেঁচে থাকার তাগিদে বুঝে নিই
হাওয়াদের এলোমেলো হাত।

তারপর?

পায়ের নিচের নোনা জল
ধুয়ে দেয় তারাখসা রঙ।
অনেকটা ক্লান্ত হয় ভোর
শ্রান্ত হয় মিঞা কি সারং।

তারপর?

সবুজ যত গাছ জল ছাঁচে
পাড় ভাঙে মনের উঠোন
আজও নির্ঘুম একলা রাত
সাথে নিয়ে বাখ, বেঠোফেন।

তারপর?

ধীর ধীরে অশান্ত হয় মন
চোখের কোলে টলটলে নদী।
অভিমানে বে-আব্রু সঙ্কোচ।
সাগর হতে পারতাম যদি!

তারপর?

কুয়াশায় ঢেকেছে আকাশ
লুকিয়ে রাখে ঘর ছাড়ার গল্প
রোদের সুরে অবিশ্বাসের রেশ
মেঘ মল্লার শুনছি অল্প অল্প।

_________
রিয়া চক্রবর্তী।

জীবন

জীবন

ঘাসের উপর শিশির হবো
যদি দাও নির্মল শৈশব।
অথবা ভোরের স্নিগ্ধতা হব
অস্তিত্বে আহির ভৈরব।

হব ভীষণ অভিমানে
দহনের আগুন রং।
অথবা নির্জন দুপুরে
মৌন মুখর গৌর সারং।

দিন অবসানে সান্ধ্য আজানে
হব পবিত্র শান্ত মন।
বেদনায় ভালবাসা মিশিয়ে
হয়ে উঠবো বেহাগ বা ইমন।

রূপকথা

রূপকথা

ভেঙে যাওয়া, পচে যাওয়া, পঙ্গু হয়ে যাওয়া ইচ্ছে, স্বপ্নগুলোকে আজ টুকরো করবো।

….. তারপর কি করবি ওগুলো দিয়ে?
….. একটু ভাবি, ভেবে বলছি।
….. আচ্ছা বেশ ভাব।
….. ভেবেছি ভেবেছি, ওই টুকরো টুকরো ইচ্ছে, স্বপ্নগুলোকে রঙের বিন্যাসে ভাগ করবো।

….. তারপর।
….. তারপর আমার মনের বিভিন্ন কুলুঙ্গীতে সাজিয়ে রাখবো তাদের।
…… তারপর!
… তারপর যে রং টা আমার সবথেকে প্রিয়, সেই রঙের স্বপ্নটাকে উড়িয়ে দেবো নীল আকাশে। তাকে কিছুতেই পঙ্গু হতে দেবো না।

…. হলো না একেবারে মিলল না কিছু
…. নাইবা মিলল। আচ্ছা সব অঙ্কই কি মেলে? সব হিসেবে কি শেষে মিলে যায়?
…. বুঝেছি তারপর বল
…. তারপর স্কেল, কম্পাস, দিয়ে মেপে আমার জন্য একটা গর্ত বানাবো। যেখানে আমার আমি খুঁজে নেবে শান্তির ঘুম।

_________
রিয়া চক্রবর্তী।

ভালোবাসা

ভালোবাসা

আমি চিরকাল গান পাগল মানুষ। teenage বয়সে কোনও কোনও সুর চোখ ভেজাতো। তারপর নদী দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে, পলি পড়েছে। নাব্যতা কমেছে। অনেক ওঠা পড়ার পর এপিঠ ওপিঠ বদল হয়েও কোন এক ভোরে সেই এক সুর যখন একই রকম ভিজিয়ে দেয় চোখ মন, তখন মনে হয় কোথাও কোনোখানে লুকিয়ে থেকে গেছে এক চিলতে আমার না বদলে যাওয়া আকাশ। চোখ বন্ধ করলেই ফিরে আসে না-ফেরত আসা সময়। অন্য রকম হয়ে যায় দিন।

এইসব দিনের জন্য, এইসব সুরের জন্য বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে। বেঁচে থাকাকে ভালোবাসতে ইচ্ছে করে আবার নতুন করে। এইভাবে ফিরে আসে ভালোবাসা এ শহরের আনাচে কানাচ ধরে, পাখির ডানায় ভর করে, অযত্নে বেড়ে ওঠা জংলা চারাদের পাতায় পাতায় ফুলে ফুলে।

ভালো থেকো ভালোবাসা।

একটা বাড়ি ছিলো মনের অলিন্দে। সে বাড়িটার কোনো ছবি ছিলো না আজও নেই। শুধু অনেক ভালোবাসার খনি নিয়ে আঁকড়ে জড়িয়ে আছে সেই বাড়িটার সব খানে। উঠোন, ছাদ, বাগান, জানলায়, চিলেকোঠায়, জমে আছে পরতে পরতে ভালোবাসা, রোদ্দুরে শুকোতে দেওয়া ঠাম্মার মিঠে মিঠে আচারের মতন। সেই বাড়িটা বড় ভালো। সেই বাড়িটা যত্ন করে রেখে দিই মনের গোপন দেরাজে। আমি কিন্তু দেখতে পাই রোজ, রোজ রাতে সেই বাড়িটা সব ফেলে ঝলমলিয়ে ওঠে আমার স্বপ্নের আবাসে।

সেই বাড়িরটার বড্ড মন কেমন কেমন গন্ধ। ঠিক যেনো ঠাম্মার হাতের গয়না বড়ি বা দাদুর তৈরি মিঠে পানের মতোই মন কেমন গন্ধ। কোন কোন শীতের দুপুর সেই সব ভালোবাসার টানে এ শহরে উড়িয়ে আনে শীতের পরিযায়ী পাখি, ঘুম ভেঙে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে আনমনা মন।

ভালোবেসো ভালো বাসা।